![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দুনিয়ার জীবন হলো ক্ষণস্থায়ী আর আখেরাতে জীবন হলো চিরস্থায়ী। নির্দিষ্ট সময় শেষে তাকে পাড়ি জমাতে হয় পরকালের অনন্ত জীবনে। ক্ষণিকের এই আসা-যাওয়ার মাঝখানে মানুষ যে সামান্য সময়টুকু পায়, তাতেই তারা একে অপরের আপন হয়ে ওঠে। পার্থিব দুনিয়ায় মানুষ মানুষের সহযোগী। সামাজিক হতে হলে পরোপকারী হতে হবে। বিপদে-আপদে একে অন্যের পাশে দাঁড়াবে এমনটাই দাবি মানবতার। একজন অন্যজনের বিপদে এগিয়ে আসা, পাশে দাঁড়ানো, সহমর্মী হওয়া, শুধু নিজের সুখের জন্য ব্যস্ত না হয়ে অন্যের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করাই মনুষ্যত্ব। আসলে মহান আল্লাহ মানুষকে এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানুষকে দিয়েছেন বিবেক, বুদ্ধি, নৈতিকতা আর অপরের প্রতি সহানুভূতির মতো অমূল্য সম্পদ। সেজন্য মানুষ যেমন সামাজিক, তেমনি পরোপকারীও। আর পরোপকারের মনোভাব মানুষের শ্রেষ্ঠত্বের অলংকার।পরোপকার না থাকলে সমাজের স্থিতিশীলতা থাকে না। সমাজে একের পর এক অন্যায়, অত্যাচার, প্রবঞ্চনা আর খুন-খারাবির মতো মন্দ কাজগুলো বৃদ্ধি পেতে থাকে। এর ফলে যেমনিভাবে সামাজিক বিশৃঙ্খলা মারাত্মক আকার ধারণ করে, তেমনি বৃদ্ধি পেতে থাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যারা মানুষকে সাহায্য করে, আল্লাহও তাদের সাহায্য করেন। একে অপরের সহযোগিতা ছাড়া জীবন যাপন করা কঠিন। যখন কোনো সমাজে একে অপরের প্রতি সহযোগিতা হ্রাস পায়, সে সমাজের মানুষ সব দিক দিয়েই পিছিয়ে পড়ে। সে সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়, শান্তি বিলুপ্ত হয়, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও ভালোবাসা তিরোহিত হয়। রাসূলে কারিম (সাঃ) বলেছেন, সমগ্র সৃষ্টি আল্লাহর পরিবার। তাই পরোপকারের চেতনায় কোনো শ্রেণিভেদ নেই। বড়-ছোট, ধনী-গরিব, আত্মীয়-অনাত্মীয়, স্বজাতি-বিজাতি, মুসলিম-অমুসলিম এসব ব্যবধানের ঊর্ধ্বে উঠে ইসলামের শান্তি ও সৌহার্দ্যের সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার কথা বলে।
পরোপকারী হতে হলে অনেক ধনসম্পদের মালিক হতে হবে এমন নয়। প্রত্যেক মানুষই তার নিজ নিজ অবস্থানে থেকে পরোপকারী হতে পারে। পরোপকার নির্দিষ্ট সীমারেখায় আবদ্ধ নয়; ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং শারীরিক, আর্থিক ও মানসিক কর্মকাণ্ডে এর পরিধি পরিব্যাপ্ত ও বিস্তৃত। পরোপকার মানুষকে মর্যাদার আসনে সমাসীন করে। পৃথিবীর ইতিহাসে যেসব মনীষী স্মরণীয়–বরণীয় হয়ে আছেন, তাঁদের প্রত্যেকেই ছিলেন পরহিতৈষী।
অনাথ-অসহায় ও অনাহারির কষ্টে সমব্যথী হতে আল্লাহ তা’আলা রমজান মাসে রোজা ফরজ করেছেন। নিঃস্ব ও অভাবীর অভাব মোচনে জাকাত ফরজ ও সাদাকুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। দান আদর্শ সমাজ বিনির্মাণে পরোপকারের জুড়ি নেই। তাই রাসূল (সাঃ) পরোপকারের ব্যাপারে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। মানুষের উপকার করা যায় বিভিন্নভাবে। অর্থ দিয়ে, শক্তি দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে এবং বিদ্যা দিয়ে। আল্লাহ তা‘আলা একেকজনকে একেকরকম যোগ্যতা দিয়েছেন। যার যেই যোগ্যতা আছে, সে যদি তার সেই যোগ্যতাকে সৃষ্টির সেবায় নিয়োজিত করে, তবেই তার সেই যোগ্যতা সার্থক হয়। এর দ্বারা সে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহানে সাফল্যমন্ডিত হয়। বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে যে-কোনও যোগ্যতা দেনই এজন্যে যে, সে তা মানব-সেবায় নিয়োজিত করে নিজ জীবনকে সফল করে তুলবে।
মু’মিন তো এই ভেবে নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করবে যে, আল্লাহর দেওয়া জান-মাল ও আল্লাহর দেওয়া জ্ঞান-বুদ্ধিকে সে আল্লাহর বান্দার সেবায় ব্যয় করতে পারছে। এ ব্যয়ের লাভ তো শেষটায় নিজের ভাগেই আসবে। কেননা আল্লাহ তা‘আলা তো মেহেরবানী করে তার প্রদত্ত জান-মাল জান্নাতের বিনিময়ে তার কাছ থেকে কিনে নিয়েছেন। তবে কারো উপকার শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই করা উচিত, পার্থিব স্বার্থে নয়। কখনো এদিকে লক্ষ করা উচিত নয় যে যার উপকার করা হয়েছে তার পক্ষ থেকে কী ধরনের আচরণ আসছে। খোঁটা দেওয়ার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। কেননা পরোপকার যে পন্থায়ই করা হোক, আল্লাহ তা‘আলার কাছে তা কবুল হওয়া এবং একটি মর্যাদাপূর্ণ কাজরূপে গণ্য হওয়ার জন্য শর্ত হল- ইখলাস থাকা। অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে করা এবং পার্থিব কোনও উদ্দেশ্য না থাকা। যে দিনের পর দিন নবীজির চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে দিত। যেন তিনি কষ্ট পান। দয়ার সাগর নবীজির এ নিয়ে কোনো দুঃখ ছিল না। বরং নিজ হাতে তা সরিয়ে দিতেন আর মুচকি হাসতেন। তারপর একদিন পথে কাঁটা না দেখে নবীজি ভাবনায় পড়ে গেলেন। খবর নিয়ে যখন জানতে পারলেন বুড়ি অসুস্থ, তখন তিনি নিজে গিয়ে বুড়ির সেবা-শুশ্রুষা করলেন। এমন অসংখ্য ঘটনা ইতিহাসের পাতায় সোনার হরফে লেখা আছে আজও।
আল্লাহর পথে কৃত ব্যয়ের সুফল লাভের জন্যে শর্ত হল, পরবর্তীকালে সেই দানের জন্য কোনওরূপ খোঁটা না দেওয়া এবং কোনও কষ্ট না দেওয়া। বলা বাহুল্য, কোনও দান আল্লাহর পথে হয় তখনই, যখন তাতে ইখলাস থাকে। কেবল দানকালীন ইখলাসই যথেষ্ট নয়, বরং দানের পরও ইখলাস রক্ষা করা জরুরি। খোঁটা দেওয়া ইখলাসের পরিপন্থী। খোঁটা দ্বারা কেবল দান-খয়রাত ও পরোপকারের সওয়াবই নষ্ট হয় না; বরং এটা একটা কঠিন পাপও বটে। কেননা এর দ্বারা উপকৃত ব্যক্তির অন্তরে আঘাত দেওয়া হয়। মানুষের মনে আঘাত দেওয়া কবীরা গুনাহ। সুতরাং খোঁটা দেওয়া ইসলাম ও ঈমানের সংগে সংগতিপূর্ণ নয়।
ইসলামে পরোপকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটা ঈমানের দাবি এবং আল্লাহ তা‘আলার অত্যন্ত পসন্দনীয় কাজ।
পরোপকারের ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্যঃ
১. মহান আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরাই শ্রেষ্ঠ জাতি। মানবজাতির কল্যাণের জন্যই তোমাদের উদ্ভব ঘটানো হয়েছে। তোমরা ভালো কাজের নির্দেশ দেবে এবং মন্দ কাজে বাধা দেবে।’ (ইমরান : ১১০)।
২. কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও তাদের মাল খরিদ করে নিয়েছেন, তাদের জন্য জান্নাত আছে, এর বিনিময়ে।’ (তাওবা : ১১১)
৩. আল–কোরআনে রয়েছে, ‘কে আছে যে আল্লাহকে কর্জে হাসানা উত্তম ঋণ দেবে, তাহলে তিনি তার জন্য একে বর্ধিত করে দেবেন এবং তার জন্য সম্মানজনক প্রতিদানও রয়েছে।’ (হাদীদ : ১১)।
৪. কোরআন কারিমে রয়েছে, ‘আমরা তো তোমাদেরকে খাওয়াই কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষে। আমরা তোমাদের কাছে কোনও প্রতিদান চাই না এবং কৃতজ্ঞতাও না।’( দাহ্র : ৯)
৫. আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ‘যারা নিজ সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে আর ব্যয় করার পর খোঁটা দেয় না এবং কোনও কষ্টও দেয় না, তারা নিজ প্রতিপালকের কাছে তাদের প্রতিদান পাবে। তাদের কোনও ভয় থাকবে না এবং তারা দুঃখিতও হবে না।’(বাকারা : ২৬২)
৬. কুরআন মাজীদে রয়েছে, ‘উত্তম কথা বলে দেওয়া ও ক্ষমা করা সেই দান-সদকা অপেক্ষা শ্রেয়, যার পর কোনও কষ্ট দেওয়া হয়। আল্লাহ অতি বেনিয়ায ও সহনশীল।’ (বাকারা : ২৬৩)
৭. আল্লাহতা’আলা বলেন, ‘হে মু’মিনগণ! খোঁটা দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-সদকাকে সেই ব্যক্তির মত নষ্ট করো না, যে নিজের সম্পদ ব্যয় করে মানুষকে দেখানোর জন্য এবং আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস রাখে না। সুতরাং তার দৃষ্টান্ত এরকম, যেমন এক মসৃণ পাথরের উপরে মাটি জমে আছে, অতঃপর তাতে প্রবল বৃষ্টি পড়ে এবং তা সেই মাটিকে ধুয়ে নিয়ে যায় এবং সেটিকে পুনরায় মসৃণ পাথর বানিয়ে দেয়। এরূপ লোক যা উপার্জন করে, তার কিছুমাত্র তারা হস্তগত করতে পারে না। আর আল্লাহ এরূপ কাফেরদেরকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেন না।’ (বাকারা : ২৬৪)
৮. আল্লাহতা’আলা বলেন, ‘জুলুমবাজরা তাদের অত্যাচারের পরিণতি অচিরেই জানতে পারবে। ’(শুরা : ২২৭)
৯. কুরআন মাজীদে রয়েছে, ‘ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দের জবাব দাও ভালোর দ্বারা। তাহলে যার ও তোমার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সহসাই সে হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (ফুস্সিলাত : ৩৪
১০. আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘যদি মুমিনদের দুই দল নিজেদের মধ্যে যুদ্ধ কিংবা ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর অত্যাচার করে তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে; যে পর্যন্ত না তারা (অত্যাচারী দলটি) আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দেবে এবং ইনসাফ করবে। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদের ভালোবাসেন।’ (হুজুরাত : ৯)
১১. আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা।’ (মায়েদা : ২)
১২.আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘মুমিনরা তো পরস্পর ভাই-ভাই। অতএব, তোমরা তোমাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে মীমাংসা করবে এবং আল্লাহকে ভয় করবে; যাতে তোমরা অনুগ্রহপ্রাপ্ত হও।’ (হুজরাত : ১০)
১৩. আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা ঈমান এনেছে এবং সৎকাজ করেছে, তারাই জান্নাতের অধিবাসী। তারা সেখানেই চিরকাল থাকবে।’ (বাকারা : ৮২)
১৪. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন, ‘‘আর আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য অনুগ্রহস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’(আম্বিয়া : ১০৭)
১৫. আল্লাহ তা’আলা বলেন,.‘যারা নিজেদের ধন-সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত সেই বীজের মত যা থেকে সাতটি শীষ উৎপন্ন হল (এবং) প্রত্যেক শীষে একশ করে দানা হল, এবং আল্লাহ যার জন্য ইচ্ছা করেন আরও বৃদ্ধি করে দেন। এবং আল্লাহ অতিশয় প্রাচুর্যদাতা, সর্বজ্ঞানী।’ (বাকারা : ২৬১)
১৬. আল্লাহ তা’আলা বলেন,.‘.‘নিশ্চয় দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, যেক্ষেত্রে তারা (বিশুদ্ধ অভিপ্রায়ে) আল্লাহকে উত্তম ঋণ দান করে তাদের প্রতিদান বর্ধিত করা হবে এবং তাদের জন্য রয়েছে সম্মানজনক প্রতিদান।’ (হাদীদ : ১৮)
১৭. কুরআন মাজীদে রয়েছে, ‘সুতরাং তোমরা আল্লাহকে যথাসাধ্য ভয় কর এবং (তাঁর কথা) শ্রবণ কর ও (তাঁর) আনুগত্য কর এবং (তাঁর পথে) ব্যয় কর; এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। যারা তাদের আত্মার কৃপণতা (স্বার্থপরতা ও লোভ) হতে মুক্ত, তারাই সফলকাম। যদি তোমরা আল্লাহকে উত্তম ঋণদান কর তবে তিনি তোমাদের জন্য তা বৃদ্ধি করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন; আর আল্লাহ অতিশয় গুণগ্রাহী, পরম সহনশীল’ (তাগাবুন : ১৬-১৭)
১৮. কুরআন মাজীদে রয়েছে, ‘আর নামায প্রতিষ্ঠা কর এবং যাকাত প্রদান কর, আর আল্লাহকে উত্তম ঋণ দাও। তোমরা তোমাদের আত্মার জন্য যা কিছু কল্যাণ পূর্বে প্রেরণ করবে কেবল তাই তোমরা আল্লাহর নিকট উৎকৃষ্টতর রূপে এবং (তার) প্রতিদান মহত্তররূপে পাবে।’ (মুযযাম্মিল : ২০)
পরোপকারের ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্যঃ
প্রখ্যাত সাহাবী জাবির ইবন আবদুল্লাহ রাদিআল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কখনো কাউকে ‘না’ বলেননি। তাঁর বদান্যতা, পরোপকার, মানবসেবা ও সমাজকল্যাণে অবদানের অসংখ্য দৃষ্টান্ত ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থসমূহে লিপিবদ্ধ হয়েছে। মানব সেবায় গুরুত্বারোপ এবং এতে উদ্বুদ্ধ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অসংখ্য বাণী উচ্চারণ করেছেন, নিম্নে স্বল্প পরিসরে তার কয়েকটি দৃষ্টান্ত তুলে ধরা হল।
১. মুহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন মিলেমিশে থাকে। তার মধ্যে ভালো কিছু নেই, যে মিলেমিশে থাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মানুষের বেশি উপকার করে, সেই শ্রেষ্ঠ মানুষ।’ (আল মুজামতুল আউসাত : ৫৭৮৭)
২. বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন, ‘তোমরা জগদ্বাসীর প্রতি সদয় হও, তাহলে আসমানের মালিক আল্লাহ তা’আলা তোমাদের প্রতি সদয় হবেন।’ (তিরমিজি : ১৮৪৭)।
৩. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) প্রথম ওহি প্রাপ্তির পর ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বাড়ি ফিরে খাদিজা (রাঃ)-কে বললেন, ‘আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে দাও, আমি আমার জীবনের আশঙ্কা করছি।’ তখন খাদিজা (রাঃ) নবীজি (সাঃ)-কে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘আল্লাহ কখনোই আপনার অমঙ্গল করবেন না। কারণ, আপনি আল্লাহর সৃষ্টির সেবা করেন, গরিব-দুঃখীর জন্য কাজ করেন, অসহায়-এতিমের ভার বহন করেন, তাদের কল্যাণের জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখেন।’ (বুখারী : ৪৫৭)।
৪. হাদীস শরিফে এসেছে, ‘অবশ্যই দান-সদকা মানুষের হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায় এবং অহমিকা দূর করে।’ (আল-মুজামুল কাবীর : ১৩৫০৮)।
৫. প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনও মু’মিনের দুনিয়াবী সংকটসমূহ থেকে একটা সংকট মোচন করে দেয়, আল্লাহ তা‘আলা তার আখিরাতের সংকটসমূহের একটা সংকট মোচন করবেন। যে ব্যক্তি কোনও অভাবগ্রস্তের অভাব মোচনে সাহায্য করবে, আল্লাহ তা‘আলা তার দুনিয়া ও আখিরাতে স্বাচ্ছন্দ্য দান করবেন। যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমের দোষ-গুণ গোপন করবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন করবেন। আল্লাহ বান্দার সাহায্যে থাকেন, যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্যে নিয়োজিত থাকে।’-সহীহ মুসলিম : ২৬৯৯; সুনানে আবু দাউদ : ৪৯৪৬; জামে তিরমিযী : ১৪২৫; মুসনাদে আহমাদ : ৭৪২৭)
৬. হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘যে লোক মানুষের প্রতি দয়া-অনুগ্রহ প্রদর্শন করে না, তাকে আল্লাহ তা’আলাও দয়া করেন না।’ (তিরমিজি : ১৯২২)
৭. হযরত আবদুল্লাহ ইবনু আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা’আলা দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রাহমান হতে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন। যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তা’আলাও তার সাথে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন।’ (তিরমিজি: ১৯২৪)
৮. হাদীসে কুদসিতে উল্লেখ রয়েছে, রাসূলে কারিম (সাঃ) ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামত দিবসে নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা বলবেন, ‘হে আদম সন্তান, আমি অসুস্থ হয়েছিলাম, কিন্তু তুমি আমার শুশ্রুষা করোনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক, আপনি তো বিশ্ব পালনকর্তা, কিভাবে আমি আপনার শুশ্রুষা করব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানতে না যে, আমার অমুক বান্দা অসুস্থ হয়েছিল, অথচ তাকে তুমি দেখতে যাওনি। তুমি কি জানো না, যদি তুমি তার শুশ্রুষা করতে, তবে তুমি তার কাছেই আমাকে পেতে?’ ‘হে আদম সন্তান, আমি তোমার কাছে আহার চেয়েছিলাম; কিন্তু তুমি আমাকে আহার করাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার রব, আপনি হলেন বিশ্ব পালনকর্তা, আপনাকে আমি কিভাবে আহার করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তুমি কি জানো না যে, আমার অমুক বান্দা তোমার কাছে খাদ্য চেয়েছিল; কিন্তু তাকে তুমি খাদ্য দাওনি।’ ‘হে আদম সন্তান, তোমার কাছে আমি পানীয় চেয়েছিলাম, অথচ তুমি আমাকে পানীয় দাওনি।’ বান্দা বলবে, ‘হে আমার প্রভু, আপনি তো রাব্বুল আলামিন, আপনাকে আমি কিভাবে পান করাব?’ তিনি বলবেন, ‘তোমার কাছে আমার অমুক বান্দা পানি চেয়েছিল; কিন্তু তাকে তুমি পান করাওনি। তাকে যদি পান করাতে, তবে নিশ্চয় আজ তা প্রাপ্ত হতে।’ ইতিহাসের পাতা আজো জ্বলজ্বল করছে সেসব সোনালি মানুষের স্মৃতিতে। অর্ধ জাহানের বাদশাহ হযরত ওমর (রাঃ) রাতের বেলা চলতে চলতে রাজধানীর বাইরে তাঁবুতে একটি লোক দেখলেন। বিষন্ন অবস্থায় বসে আছে। ভেতরে একটি মেয়েলোকের কাতরানোর শব্দ শুনতে পেয়ে কারণ জিজ্ঞাসা করলে লোকটি ধমকের সুরে বলল, ‘যাও যাও, নিজের কাজে যাও। আমাকে জ্বালাতন করো না।’ হযরত ওমর (রাঃ) পীড়াপীড়ি করাতে লোকটি বলল, তার স্ত্রী ব্যথায় কাতরাচ্ছে। ওমর (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, ‘সাথে কোনো স্ত্রীলোক আছে কি?’ উত্তরে লোকটি বলল, ‘নেই’। হযরত ওমর (রাঃ) দ্রুত নিজের ঘরে গিয়ে বিবিকে বললেন, ‘আজ পুণ্য অর্জনে এক বিরাট সুযোগ আল্লাহ দিয়েছেন। একটি অচেনা মেয়েলোক প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, প্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় নাও এবং আমি কিছু খাবার নিচ্ছি।’ এই বলে উভয়ে খুব তাড়াতাড়ি সেই তাঁবুর কাছে পৌঁছে বিবিকে তাঁবুর ভেতর পাঠিয়ে দিলেন এবং নিজে খাবার তৈরি করতে বসে গেলেন। কিছুক্ষণ পর তাঁবুর ভেতর থেকে আওয়াজ এলো, ‘আমিরুল মুমিনিন, আপনার বন্ধুকে পুত্রসন্তান হওয়ার সুখবর দিন।’ আমিরুল মুমিনিন শব্দ শুনতেই লোকটি ঘাবড়ে গেল। হযরত ওমর (রাঃ) তাকে সান্তনা দিলেন। প্রস্তুত খাবার প্রসূতিকে খাইয়ে বাকি খাবার তাদের হাতে দিয়ে বিবিকে নিয়ে চলে এলেন। (তারিখে ত্বাবারি : ৩-২৭৪)
৯. মুসলিম বলাই হয় তাকে, যার হাত ও মুখ থেকে সকল মুসলিম নিরাপদ থাকে (সহীহ বুখারী : ১০; সহীহ মুসলিম : ৪১)।
১০.আর মু’মিন সেই, যার ক্ষতি থেকে সকল মানুষ নিরাপদ থাকে। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৫৬১)
১১. হাদীসে ইরশাদ হয়েছে, “হাশরের দিন আল্লাহ তা‘আলা এরূপ ব্যক্তিকে বলবেন- তোমাকে আমি যে অর্থ-সম্পদ দিয়েছিলাম, তা দ্বারা তুমি আমার জন্য কী করেছ? সে বলবে, হে আল্লাহ! আমি তা তোমার পথে ব্যয় করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলছ। তুমি তো এজন্য করেছিলে যে, লোকে তোমাকে দাতা বলবে। তা বলাও হয়েছে। অর্থাৎ যে উদ্দেশ্যে দান করেছিলে তা পেয়ে গেছ। আজ আমার কাছে তোমার কোনও বদলা নেই। অতঃপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।”(মুসতাদরাকে হাকেম : ২৫২৮)
১২. হযরত আবূ যর (রাঃ)-এর একটি হাদীস দ্বারা তা অনুমান করা যায়। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘তিন ব্যক্তি এমন, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা যাদের সংগে কথা বলবেন না, তাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। আবূ যর (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ কথাটি তিন-তিনবার বললেন। আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! তারা কারা, তারা তো সর্বস্বান্ত ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেল? তিনি বললেন, (ক) যে ব্যক্তি পরিধেয় কাপড় টাখনুর নিচে ঝুলিয়ে রাখে; (খ) যে ব্যক্তি উপকার করার পর খোঁটা দেয় এবং (গ) যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথের মাধ্যমে পণ্য চালায়।’ (সহীহ মুসলিম : ১০৬)
১৩. হযরত আব্দুল্লাহ ইবন ‘আব্বাস (রাঃ) বলেন, “আমি যে-কোনও ব্যক্তির উপকার করেছি। পরে দেখা গেছে তার ও আমার মধ্যে এক স্নিগ্ধময় সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে গেছে। আর যার প্রতি কখনও আমার দ্বারা মন্দ ব্যবহার হয়ে গেছে, পরে দেখতে পেয়েছি- তার ও আমার মধ্যে সম্পর্কে মলিনতা সৃষ্টি হয়েছে।”(উয়ূনুল-আখবার খ. ২, পৃ. ১৭৭)
১৪. হাদীসে এসেছে, ‘অবশ্যই একজন মুসলমানের সদকা তার হায়াত বৃদ্ধি করে। অপমৃত্যু থেকে বাঁচায়। তার থেকে অহংকার ও অহমিকা দূর করে দেয়।’ (মুজামুল কাবির : ১৩৫০৮)
১৫. হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সাঃ) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের পার্থিব কষ্টসমূহের মধ্যে থেকে একটি কষ্ট দূর করে দেয়, আল্লাহতা’আলা কিয়ামতের দিন তার একটি বড় কষ্ট দূর করে দিবেন। যে ব্যক্তি কোন অভাবীর অভাবের কষ্ট লাঘব করে দেয়, আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখিরাতে তার অভাবের কষ্ট লাঘব করবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুসলিমের দোষ গোপন রাখে, আল্লাহতা’আলা দুনিয়া ও আখেরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। বান্দা যতক্ষণ তার অপর মুসলিম ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, আল্লাহও ততক্ষণ তার সাহায্য-সহায়তা করতে থাকেন। ’ (মুসলিম : ২৪৫) (সংক্ষেপিত) মুসলিম শরীফের উল্লিখিত হাদিসটির প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মুসলমানদের এমন কতগুলো কাজের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, যা জীবন চলার পথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখানে মাত্র ৪টি কাজের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ১. কষ্ট দূর করে দেয়া, ২. অভাব লাঘব করা, ৩. দোষ গোপন করা ও ৪. সাহায্য করা।
১৬. হযরত আবু মাসউদ (রাঃ) বলেন, আমি একজন ভৃত্যকে লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছিলাম। এ সময় আমার পশ্চাতে একটা শব্দ শুনলাম, ‘জেনে রেখো, হে আবু মাসউদ! আল্লাহ তা’আলাই তোমাকে এ ভৃত্যের ওপর কর্তৃত্ব দিয়েছেন। ’ আমি বললাম, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি আর কখনো দাস-দাসী ও চাকর-চাকরানীকে প্রহার করবো না। আমি ওকে স্বাধীন করে দিলাম। রাসূলে কারিম (সাঃ) বললেন, এ কাজটি না করলে আগুন তোমাকে কিয়ামতের দিন ভস্মীভূত করে দিতভ।’ (সহিহ মুসলিম)
১৭. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মানবতার মুক্তির জন্য কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন অসহায়, দুর্বল ও নির্যাতিতদের বিশ্বস্ত অভিভাবক, অধীনস্থদের প্রতি দয়াশীল ও প্রতিবেশীদের আপনজন। জীবন সায়াহ্নে এসেও তিনি তাদের কথা ভুলেননি। এদের কথা বলে বলে পৃথিবীবাসীকে বারবার সাবধান করে গেছেন। বলেছেন, ‘নামাজ ও অধীনস্থদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো।’(আবু দাউদ)
১৮. ঐতিহাসিক বিদায় হজের ভাষণেও রাসূল (সাঃ) অধীনস্থ ও দুর্বলদের কথা উল্লেখ করেছেন। বলেছেন, ‘অধীনস্থদের সাথে সদ্ব্যবহার সৌভাগ্যের উৎস আর তাদের সাথে দুর্ব্যবহার দুর্ভাগ্যের উৎস।’ (আবু দাউদ)
১৯. রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘আল্লাহতা’আলা জালেমকে দীর্ঘ সময় দিয়ে থাকেন। অবশেষে যখন পাকড়াও করেন তখন তাকে আর রেহাই দেন না। তারপর তিনি এ আয়াত পাঠ করেন, ‘তোমার প্রভুর পাকড়াও এ রকমই হয়ে থাকে, যখন তিনি জুলুমরত জনপদসমূহকে পাকড়াও করেন, তাঁর পাকড়াও অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, অপ্রতিরোধ্য। ’ (বোখারী ও মুসলিম)
১৯. জনৈক আরব কবি বলেছেন, ‘ক্ষমতা থাকলেই জুলুম করো না, জুলুমের পরিণাম অনুশোচনা ছাড়া আর কিছু নয়। জুলুম করার পর তুমি তো সুখে নিদ্রা যাও, কিন্তু মজলুমের চোখে ঘুম আসে না। সে সারা রাত তোমার জন্য বদ দোয়া করে এবং আল্লাহ তা শোনেন। কেননা তিনিও ঘুমান না।
২০. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের পার্থিব কষ্টসমূহ থেকে কোনো কষ্ট দূর করবে আল্লাহ তার একটি কষ্ট দূর করবেন। যে ব্যক্তি কোনো অভাবীকে দুনিয়াতে ছাড় দেবে আল্লাহ তা‘আলা তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে তাকে ছাড় দেবেন। যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দোষ গোপন রাখবে, আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। আর আল্লাহ তা‘আলা বান্দার সাহায্যে থাকেন যতক্ষণ সে তার ভাইয়ের সাহায্য করে যায়।’ (মুসলিম : ৭০২৮; আবূ দাঊদ : ৪৯৪৮; তিরমিযী : ১৪২৫)
২১. অপর হাদীসে তিনি বলেছেন- ‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’; ‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’; ‘না, আল্লাহর কসম সে ঈমান আনে নি’। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, তারা কারা হে আল্লাহর রাসূল? তিনি বললেন, ‘সেই ব্যক্তি যার হঠকারিতা থেকে প্রতিবেশি নিরাপদ নয়।’ জিজ্ঞেস করা হলো, হঠকারিতা কী? তিনি বললেন, ‘তার অনিষ্ট বা জুলুম’। (মুসনাদ আহমদ : ৮৪১৩)
২২. হযরত আবূ হুরায়রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘হে মুসলিম নারীগণ, এক প্রতিবেশি যেন তার অপর প্রতিবেশির পাঠানো দানকে তুচ্ছজ্ঞান না করে, যদিও তা ছাগলের পায়ের একটি ক্ষুর হয়।’(বুখারী : ২৫৬৬; মুসলিম : ২২৬ )
২৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দারিদ্রক্লিষ্ট বনী আদম এবং অসহায় নারীদের সাহায্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন ব্যাপকভাবে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রসঙ্গে বলেছেন-‘বিধবা ও অসহায়কে সাহায্যকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য।’ (বর্ণনাকারী বলেন,) আমার ধারণা তিনি আরও বলেন, ‘এবং সে ওই সালাত আদায়কারীর ন্যায় যার ক্লান্তি নেই এবং ওই সিয়াম পালনকারীর ন্যায় যার সিয়ামে বিরাম নেই।’ (বুখারী : ৬০০৭; মুসলিম : ৭৬৫৯)
২৪. হযরত আবূ মূসা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,‘অসুস্থ লোকের সেবা করো, ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও এবং বন্দিকে মুক্ত করো।’ (বুখারী : ৫৬৪৯; মুসনাদ আবী ই‘আলা : ৭৩২৫)
২৫. মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি মুসলমানদের স্বার্থ ও বিষয়াদি নিয়ে মোটেও চিন্তা-ভাবনা করে না সে মুসলমানই নয়। আর ঐ ব্যক্তিও মুসলিম নয় যে এক মুসলমান ভাইয়ের সাহায্যের আবেদনে সাড়া দেয় না এবং তাকে সাহায্য করতে অগ্রসর হয় না।” (উসূলুল কাফী, পৃঃ ৩৯০)
২৬. ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) বলেছেন, যদি কোন ব্যক্তির কাছে তার মুমিন ভাই প্রয়োজন ও অভাব মেটানোর জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে আর তার সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে তাকে সাহায্য না করে তাহলে মহান আল্লাহ্ তাকে এমন এক বিপদে জড়িত করবেন যেন সে আমাদের (আহলে বাইতের) কোন শত্রু “কে সাহায্য করেছে বা করছে এবং এ কারণে মহান আল্লাহ্ তার ওপর শাস্তি (আজাব) অবতীর্ণ করবেন।” (উসূলুল কাফী, পৃঃ ৪৭৬।)
২৭. কোন ব্যক্তি যদি বসত বাড়ীর মালিক হয় এবং তার কোন মুমিন ভাইয়ের এ রকম থাকার জায়গার প্রয়োজন হয় আর সে যদি তাকে তা না দেয় তাহলে মহান আল্লাহ্ তাঁর ফেরেশতাদেরকে সম্বোধন করে বলবেন, “হে আমার ফেরেশতাগণ, আমার এ বান্দাটি তার (অতিরিক্ত) বাড়ী বা স্থান আমারই আরেক জন বান্দার বসবাস করার জন্য তার হাতে সোপর্দ করে নি। আমি আমার সম্মান ও মহিমার কসম করে বলছি, আমিও বেহেশতে বসবাস করার জন্য কোন স্থান তাকে দেব না।” (উসূলুল কাফী, পৃঃ ৪৭৬)
২৮. কোন ব্যক্তির কাছে তারই কোন মুমিন ভাই যদি অভাব ও প্রয়োজন পূরণ করার আবেদন জানায় আর তার সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সে তা পূরণ না করে তাহলে মহান আল্লাহ্ কিয়ামত দিবসে তাকে ঘাড়ের সাথে তার দু’হাত বাঁধাবস্থায় পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং সকল মানুষের হিসাব ও বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ অবস্থায় রাখবেন। (বিহারুল আনওয়ার, ১৬শ খণ্ড, পৃঃ ৮০)
২৯. মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “বেহেশতে মহান আল্লাহর এমন সব বান্দা আছে যারা সেখানে কর্তৃত্ব করবে (এবং উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবে)। আর তারা হচ্ছে ঐ সব ব্যক্তি যারা তাদের মুমিন ভাইদের অভাব ও প্রয়োজনাদি দূর করে দেয়।”(ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৩)
৩০. যে ব্যক্তি তার মুসলমান ভাইয়ের অভাব ও প্রয়োজনাদি পূরণ করে সে ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে তার সমগ্র জীবনে মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগী করেছে। (ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৩)
৩১. যে ব্যক্তি মুসলমানদের থেকে বিপদাপদ দূর করবে তা বন্যাই হোক আর অগ্নিকাণ্ডই হোক, মহান আল্লাহ্ তার জন্য বেহেশত অবধারিত করে দেবেন।(উসূলুল কাফী, পৃঃ ৩৯০)
ইমাম বাকের (আঃ) বলেছেন,“যখন কোন ব্যক্তি আমার কাছে অভাব ও প্রয়োজন পূরণ করার আবেদন করে তখন তা পূরণ করার জন্য আমি তাড়াহুড়া করতে থাকি যাতে করে এমন না হয় যে, তার অভাব ও প্রয়োজন শেষ হয়ে যায় (আর আমিও এ ধরনের সৌভাগ্য অর্জন করা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাই)।” (বিহারুল আন্ওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল আশারাহ্, পৃঃ ৮৯)
৩২. একইভাবে ইমাম সাদেক (আঃ) বলেছেন, “যখন কোন মুসলমানের কাছে তার কোন মুসলমান ভাই (সাহায্য লাভের জন্য) আগমন করে এবং সেও তার অভাব মিটিয়ে দেয় তখন সে মহান আল্লাহর পথে মুজাহিদের ন্যায় গণ্য হয়।” (মুস্তাদরাকুল্ ওয়াসাইল, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪০৭)
৩৩. এক মুসলমান অপর কোন মুসলমানের অভাব ও প্রয়োজন পূরণ করার সাথে সাথেই মহান আল্লাহ্ তাকে ডেকে বলবেন, “তোমার এ কাজের পুণ্য আমার কাছে আছে এবং আমি তোমার জন্য জান্নাত ব্যতীত আর অন্য কোন পুরস্কার প্রদানে সন্তুষ্ট হব না।” (ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২০)
৩৪. ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইয়ের অভাব মোচন করবে মহান আল্লাহ্ কিয়ামত দিবসে তার এক লক্ষ প্রয়োজন পূরণ করবেন, যার প্রথমটি হচ্ছে জান্নাত এবং এরপর তিনি তার আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও দীনী ভাইদেরকে বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত এই যে, তারা মূর্তিপূজক (মুশরিক) হবে না।” (ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ২২৩)
৩৫. “যে মুমিন তার কোন দুর্দশাগ্রস্ত মুমিন ভাইয়ের দুঃখ-দুর্দশা দূর ও তার অভাব পূরণ করবে মহান আল্লাহ্ ইহলোক ও পরলোকে তার সমস্ত অভাব পূরণ করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি তার মুমিন ভাইয়ের কোন দোষ, ত্রুটি ও ভেদ যা সে ভয় করে তা গোপন রাখবে মহান আল্লাহ্ তার ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের ৭০টি দোষ ও ভেদ গোপন রাখবেন।” অতঃপর তিনি বললেন, “মুমিন যে পর্যন্ত তার মুমিন ভাইকে সাহায্য করে যাবে সে পর্যন্ত মহান আল্লাহ্ও তাকে সাহায্য করে যাবেন। অতএব, তোমরা মহান আল্লাহর বিরাটত্ব ও মহত্ত্ব থেকে উপকৃত হও এবং কল্যাণ ও মঙ্গল কামনা কর।” (উসূলুল কাফী, পৃঃ ৪১০)
৩৬. সাফওয়ান আল্-জামাল যিনি ইমাম জাফর সাদেক ও ইমাম মূসা কাযেমের অন্যতম ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন তিনি বলেছেন, “আমি ইমাম আবু আব্দিল্লাহ্ জাফর সাদেকের নিকট বসা ছিলাম। এমন সময় পবিত্র মক্কার অধিবাসী মায়মুন নামীয় এক ব্যক্তি তাঁর কাছে এসে মক্কায় প্রত্যাবর্তন করার পথ খরচের যে তার সামর্থ্য নেই তা ইমামকে জানাল। ইমাম সাদেক (আঃ) আমাকে বললেন, “তোমার এ ভাইকে সাহায্য কর।” আমি সেখান থেকে ঐ লোকটিকে সাথে নিয়ে বের হলাম। অতঃপর মহান আল্লাহ্ তার (মক্কায় প্রত্যাবর্তনের) প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যবস্থা করে দিলেন। এরপর আমি পুনরায় আমার বসার স্থানে ফিরে এলাম। ইমাম সাদেক (আঃ) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার ভাইয়ের প্রয়োজন পূরণে তুমি কি করেছো?” আমি তখন তাঁকে বললাম, “আপনার চরণে আমার পিতামাতা উৎসর্গীকৃত হোক, মহান আল্লাহ্ তার প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়েছেন।” অতঃপর ইমাম সাদেক (আঃ) বললেন, “জেনে রাখ, তোমার কোন মুসলমান ভাইকে সাহায্য করা পবিত্র কাবার চতুর্দিকে এক সপ্তাহ তাওয়াফ করার চাইতে উত্তম।” (উসূলুল কাফী, পৃঃ ৪০৯)
৩৭. ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) বলেছেন, “মহান আল্লাহ্ বলেছেন, মানব জাতি আমার কাছ থেকে রিযিকপ্রাপ্ত। তাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয় যে তাদের প্রতি সবচেয়ে বেশী সদয় ও দয়াবান এবং অভাব ও প্রয়োজনাদি পূরণ করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশী চেষ্টা করে।” (সূলুল কাফী, পৃঃ ৪০৯)
৩৮. ইমাম মূসা কাযেম (আঃ) বলেছেন, “এ পৃথিবীতে মহান আল্লাহর এমন সব বান্দা আছে যারা মানুষের অভাব ও প্রয়োজনাদি পূরণ করার জন্য চেষ্টা করে তারাই কিয়ামত দিবসে নিরাপদ থাকবে। আর যে ব্যক্তি কোন মুমিনকে আনন্দিত করবে মহান আল্লাহ্ কিয়ামত দিবসে তার চিত্তকে আনন্দিত ও প্রফুল্ল করবেন।”(ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৪) সংক্ষেপে এ কাজ অর্থাৎ মুমিন মুসলমানদেরকে তথা মানব জাতিকে সাহায্য করা এতই গুরুত্ববহ যে, মহান আল্লাহ্ এ কাজের ইচ্ছা ও নিয়ত করারও সওয়াব দেবেন।
৩৯. ইমাম মুহাম্মদ বাকের (আঃ) বলেছেন, “কখনো কখনো এমন হয় যে, কোন অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি কোন মুমিন ব্যক্তির কাছে অভাব পূরণ করার জন্য আবেদন করে, উক্ত মুমিন ব্যক্তি সদিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও সামর্থ্য না থাকার কারণে তাকে সাহায্য করতে সক্ষম হয় না। এমতাবস্থায় মহান আল্লাহ্ এই সদিচ্ছা পোষণ করার জন্য তাকে বেহেশত প্রদান করবেন।” (ওয়াসায়েলুশ্ শিয়া, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৩)
৪০. আমাদের এ আলোচনার ফলাফল হচ্ছে হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ)-এর ঐ বক্তব্য যাতে তিনি বলেছেন, “তোমাদের কাছে জনগণ তাদের অভাব ও প্রয়োজনাদি পূরণ করার যে আবেদন করে থাকে আসলে তা তোমাদের প্রতি মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অন্যতম নেয়ামত। তাই তোমরা নেয়ামতসমূহকে ওলট-পালট করে দিও না।” (বিহারুল আনওয়ার, ১৫শ খণ্ড, কিতাবুল আশারাহ্, পৃঃ ৯০)
৪১. ইমাম আলী (আঃ) বলেছেন, “আমি সত্যিই ঐ ব্যক্তির ব্যাপারে অবাক হয়ে যাই, যার কাছে তার কোন মুসলমান ভাই কোন প্রয়োজনবশত আসে, অথচ সে তার প্রয়োজন মেটানো ও অভাব দূর করা থেকে বিরত থাকে। সে কি নিজেকে কল্যাণ ও মঙ্গল লাভের যোগ্য মনে করে না?!! ধরে নিই যে, কোন সওয়াবও নেই, কোন শাস্তিও নেই, তারপরও কি তোমরা উত্তম চরিত্র, মহৎ গুণ ও সদাচারণ করা থেকে বিরত থাকবে?” (দুরারুল হিকাম, পৃঃ ৪৯৬)
কারও উপকার করার পরে কোনও অবস্থাতেই যাতে খোঁটাদানের অপরাধ ঘটে না যায়, সেজন্যে কয়েকটি নিয়ম অনুসরণ করা যেতে পারে।
১. উপকার করার সময় এবং তার পরও আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টিলাভের চেতনাকে অন্তরে জাগ্রত রাখা। কিছুতেই পার্থিব কোনও বিনিময়ের আশাবাদী না হওয়া। সে বিনিময় বৈষয়িক হোক বা সুনাম-সুখ্যাতি হোক কিংবা হোক উপকৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা।
২. যার উপকার করা হবে, উপকার করার সময়ও এবং তার পরও তার প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রাখা। মনে করতে হবে প্রকৃতপক্ষে সেই আমার উপকারকারী। কেননা আমার কাছে সাহায্য চেয়ে এবং আমার উপকার গ্রহণ করে সে আমাকে বিশেষ মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। এ ব্যাপারে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আব্বাস (রাঃ)-এর একটি উক্তি প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন, “আমি তিন ব্যক্তির বদলা দিতে সক্ষম নই। (ক) যে আমাকে প্রথম সালাম দেয়; (খ) যে আমাকে মজলিসে বসার সুযোগ করে দেয় এবং (গ) যে সালাম-কালামের ইচ্ছায় আমার কাছে আসার জন্যে নিজ পদযুগলকে ধুলোমলিন করে। আর চতুর্থ এক ব্যক্তি আছে- আমার পক্ষ থেকে এক আল্লাহ ছাড়া আর কেউ তাকে বদলা দিতে পারবে না। জিজ্ঞেস করা হল, সে কে? তিনি বললেন- ওই ব্যক্তি, যে কোনও বিপদের সম্মুখীন হয়েছে, তারপর সারা রাত চিন্তা করেছে সাহায্যের জন্য কার কাছে যাবে। অবশেষে আমাকেই তার উপযুক্ত মনে করল এবং আমার কাছে এসে তার সেই মসিবতের কথা বলল।”(উয়ূনুল-আখবার খ. ২, পৃ. ১৭৭) অর্থাৎ কোনও বিপন্ন ব্যক্তি যদি সাহায্যের আশায় কারও কাছে যায়, তবে এটা তার প্রতি সেই ব্যক্তির বিশেষ আস্থা এবং তাকে বিশেষ মর্যাদা দানেরই পরিচয় বহন করে। এর মাহাত্ম্য অনুধাবন করা উচিত।
৪. উপকারের বিষয়টাকে গোপন রাখা। অর্থাৎ যার যেই উপকার করা হবে, যথাসম্ভব তা গোপন রাখার চেষ্টা করতে হবে। কেননা প্রকাশ করলে যেমন ইখলাস নষ্ট হতে পারে, তেমনি তা একরকম খোঁটায়ও পর্যবসিত হবার আশংকা থাকে। কেননা উপকারের কথা যদি প্রচার করে বেড়ানো হয় আর এভাবে তা তার কানে গিয়ে পৌঁছায়, তবে তা তার জন্যে নিশ্চিত পীড়াদায়ক হবে। এটাও একরকম খোঁটাই বটে। এ ব্যাপারে একটি হাদীস স্মরণ রাখা যেতে পারে। তাতে সাত ব্যক্তি সম্পর্কে বলা হয়েছে; হাশরের ময়দানে তারা আরশের ছায়াতলে জায়গা পাবে। তার মধ্যে এক ব্যক্তি হল- ‘ওই ব্যক্তি, যে কোনও দান-সদকা করে এবং তা গোপন রাখে এমনকি তার বামহাত জানে না ডানহাত কী খরচ করে।’(সহীহ বুখারী : ৬৬০; সহীহ মুসলিম : ১০৩১)
৫. উপকার করার কথা ভুলে যাওয়া। জনৈক ব্যক্তি তার সন্তানদের উপদেশ দিয়েছিল- তোমরা যদি কারও কোনও উপকার করো, তবে তা ভুলে যেয়ো। কেননা তা স্মরণ রাখলে খোঁটা দেওয়ার আশংকা থেকে যায়। আর খোঁটা দিলে উপকার নিষ্ফল হয়ে যায়। প্রশ্ন করা যেতে পারে, উপকৃত ব্যক্তিরও তো কর্তব্য উপকারকারীর কাছে কৃতজ্ঞ থাকা। কেননা হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-‘যে ব্যক্তি তোমাদের কোনও উপকার করে, তোমরা তার বদলা দিও। যদি বদলা দেওয়ার মত কিছু না পাও, তার জন্য দু‘আ করো।’ (সুনানে আবু দাউদ : ১৬৭২; সুনানে নাসাঈ: ২৫৬৭; সহীহ ইবনে হিব্বান : ৩৪০৮) তো কেউ যদি উপকার গ্রহণ করার পরে বদলা না দেয় বা দু‘আ না করে, এককথায় কৃতজ্ঞতা না জানায়, তবে স্বাভাবিকভাবেই খোঁটার ব্যাপারটা এসে যায় না কি? উত্তর হল, এটা সম্পূর্ণই তার ব্যাপার। উপকার লাভের পরে কৃতজ্ঞতা না জানালে সে দ্বীনের শিক্ষা অমান্য করল। এজন্য আল্লাহ তা‘আলার কাছে তার জবাবদিহি করতে হবে। যে ব্যক্তি উপকার করল, তাকে বলা হয়নি যে, তুমি তার কৃতজ্ঞতার অপেক্ষায় থেকো।
নিজের দান-খয়রাত ও উপকারকে ক্ষুদ্র গণ্য করা। অর্থাৎ কল্পনা করতে হবে যে, তার যা প্রয়োজন সে অনুপাতে আমি অতি সামান্যই করতে পারছি এবং আমার যা করণীয় ছিল, সে অনুযায়ী যা করছি তা খুবই নগণ্য। আর খোদা না করুন, যদি এটা কবুল না হয়, তবে তো নিতান্তই তুচ্ছ। মানুষ মানুষের উপকারার্থে কতকিছুই করছে। সে হিসেবে আমি যা করছি তা কোনও ধর্তব্যেই আসে না। কথাটিকে এভাবে বলা যায় যে, দান করার সময় তা করতে হবে বিনয়ের সংগে এবং পরেও সেই বিনয়ভাব বজায় রাখা চাই। সুতরাং আসুন, আমরা পরস্পরে একে অন্যের একটি করে কষ্ট লাঘব করি, উপকার করি, সহযোগিতার হাত বাড়াই; কাল কিয়ামতের দিন আল্লাহতা’আলা আমাদের বড় বড় কষ্টসমূহ দূরকরে দিবেন। আমিন।
২| ০৩ রা জুন, ২০২১ বিকাল ৩:৪২
রাজীব নুর বলেছেন: পরের উপকার করে, বাঁশ খেয়ে এখন বেকার বসে আছি।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুন, ২০২১ সকাল ১০:২৪
রবিন.হুড বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা। সবাইকে আল্লাহ নেক আমল করার সুযোগ দিন।