![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুরআনে ইরশাদ হয়েছেঃ মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ তা’আলার কাছে তাওবাতুন নাসূহা তথা আন্তরিকভাবে খাঁটি তাওবা কর। আশা করা যায়, তোমাদের পালনকর্তা তোমাদের মন্দ কর্মসমূহ মোচন করে দেবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। (তাহরীম : ৮)
‘নাসূহা’ শব্দটি তাওবা এর সিফাত। যা নুসহুন এবং নসীহত শব্দ থেকে উদগত। যার আসল অর্থ হল ইখলাস বা খুলুসিয়্যাত। নাসূহা এর অর্থ হল, খাঁটি, আন্তরিক, দৃঢ় তাওবা। নাসূহা হল এমন তাওবা, যার পর তাওবাকারী আর গোনাহ করে না। এমন দৃঢ় ও ইখলাসপূর্ণ তাওবার নাম হল তাওবাতুন নাসূহা।
যির ইবনে হুবাইশের মাধ্যমে ইবনে আবী হাতেম কর্তৃক বর্ণিত একটি হাদীসে ৷ যির ইবনে হুবাইশ বলেনঃ আমি উবাই ইবনে কা’বের (রাঃ) কাছে ‘তাওবায়ে নাসূহা’ এর অর্থ জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে একই প্রশ্ন করেছিলাম ৷ তিনি বললেনঃ এর অর্থ হচ্ছে, কখনো তোমার দ্বারা কোন অপরাধ সংঘটিত হলে তুমি নিজের গোনাহর জন্য লজ্জিত হবে ৷ তারপর লজ্জিত হয়ে সে জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং ভবিষ্যতে আর কখনো ঐ কাজ করো না ৷
হযরত উমর (রাঃ) , হযরত আবদুল্লাহ (রাঃ) ইবনে মাসউদ (রাঃ) এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকেও এ অর্থই উদ্ধৃত হয়েছে ৷ অন্য একটি বর্ণনা অনুসারে হযরত উমর ‘তাওবায়ে নাসূহা’র সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবেঃ তাওবার পরে পুনরায় গোনাহ করা তো দূরের কথা তা করার আকাংখা পর্যন্ত করবে না ৷ (ইবনে জারীর) ৷
সাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) লিখেছেনঃ হযরত উমর বিন খাত্তাব (রাঃ) এবং অন্যান্য সাহাবাগণ রাঃ ও তাবেয়ীগণ (রহঃ) বলেন, তাওবাতুন নাসূহা হল, গোনাহ থেকে এমন তাওবা যার পর আর গোনাহ করা হয় না।
হযরত আলী (রাঃ) একবার এক বেদুঈনকে মুখ থেকে ঝটপট করে তাওবা ও ইসতিগফারের শব্দ উচ্চারণ করতে দেখে বললেন, এতো মিথ্যাবাদীদের তাওবা ৷ সে জিজ্ঞেস করলো, তাহলে সত্যিকার তাওবা কি? তিনি বললেন সত্যিকার তাওবার সাথে ছয়টি জিনিস থাকতে হবেঃ
(১) যা কিছু ঘটেছে তার জন্য লজ্জিত হও ৷
(২) নিজের যে কর্তব্য ও করণীয় সম্পর্কে গাফলীতি করছ তা সম্পাদন কর ৷
(৩) যার হক নষ্ট করেছ তা ফিরিয়ে দাও ৷
(৪) যাকে কষ্ট দিয়েছ তার কাছে মাফ চাও ৷
(৫) প্রতিজ্ঞা করো ভবিষ্যতে এ গোনাহ আর করবে না ৷ এবং
(৬) নফসকে এতদিন পর্যন্ত যেভাবে গোনাহর কাজে অভ্যস্ত করেছ ঠিক তেমনি ভাবে আল্লাহর আনুগত্যে নিয়োজিত কর ৷ এতদিন পর্যন্ত নফসকে যেভাবে আল্লাহর অবাধ্যতার মজায় নিয়োজিত রেখেছিলে এখন তাকে তেমনি আল্লাহর আনুগত্যের তিক্ততা আস্বাদন করাও । (কাশশাফ)
মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে। জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা।
তাওবা সম্পর্কিত বিষয়ে আরো কয়েকটি জিনিস ভালভাবে বুঝে নেয়া দরকারঃ
১. প্রকৃতপক্ষে তাওবা হচ্ছে কোন গোনাহের কারণে এ জন্য লজ্জিত হওয়া যে, তা আল্লাহর নাফরমানী ৷ কোন গোনাহের কাজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর অথবা বদনামের কারণ অথবা আর্থিক ক্ষতির কারণ হওয়ায় তা থেকে বিরত থাকার সংকল্প করা তাওবার সংজ্ঞায় পড়ে না ৷
২. যখনই কেউ বুঝতে পারবে যে, তার দ্বারা আল্লাহর নাফরমানী হয়েছে, তার উচিত তৎক্ষনাৎ তাওবা করা, এবং যেভাবেই হোক অবিলম্বে তার ক্ষতিপূরণ করা কর্তব্য, তা এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয় ৷
৩. তাওবা করে বারবার তা ভঙ্গ করা, তাওবাকে খেলার বস্তু বানিয়ে নেয়া এবং যে গোনাহ থেকে তাওবা করা হয়েছে বার বার তা করতে থাকা তাওবা মিথ্যা হওয়ার প্রমাণ ৷ কেননা, তাওবার প্রাণ সত্তা হচ্ছে, কৃত গোনাহ সম্পর্কে লজ্জিত হওয়া কিন্তু বার বার তাওবা ভঙ্গ করা প্রমাণ করে যে, তার মধ্যে লজ্জার অনুভূতি নেই ৷
৪. যে ব্যক্তি সরল মনে তাওবা করে পুনরায় ঐ গোনাহ না করার সংকল্প করেছে মানবিক দুর্বলতার কারণে যদি পুনরায় তার দ্বারা সেই গোনাহর পুনরাবৃত্তি ঘটে তাহলে এ ক্ষেত্রে পূর্বের গোনাহ পুনরুজ্জীবিত হবে না তবে পরবর্তী গোনাহের জন্য তার পুনরায় তাওবা করা উচিত ৷
৫. যখনই গোনাহর কথা মনে পড়বে তখনই নতুন করে তাওবা করা আবশ্যক নয় ৷ কিন্তু তার প্রবৃত্তি যদি পূর্বের পাপময় জীবনের স্মৃতিচারণ করে আনন্দ পায় তাহলে গোনাহের স্মৃতিচারণ তাকে আনন্দ দেয়ার পরিবর্তে লজ্জাবোধ সৃষ্টির কারণ না হওয়া পর্যন্ত তার বার বার তাওবা করা উচিত ৷ কারণ, যে ব্যক্তি সত্যিই আল্লাহর ভয়ে গোনাহ থেকে তাওবা করেছে সে অতীতে আল্লাহর নাফরমানী করেছে এই চিন্তা করে কখনো আনন্দ অনুভব করতে পারে না ৷ তা থেকে মজা পাওয়া ও আনন্দ অনুভব করা প্রমাণ করে যে, তার মনে আল্লাহর ভয় শিকড় গাড়তে পারেনি ৷
খারাপ কাজ তথা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করা। তাদের তাওবাই প্রকৃত তাওবা, যারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আর আল্লাহ এমন মু’মিন বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। মু’মিন বান্দাদের সত্যিকারভাবে সহী নিয়্যাতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে দুনিয়ার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং মাফ করার পর জান্নাতের মাঝে স্থান দেবেন, যাঁর পাদদেশে নহর প্রবাহিত। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তাওবা যেন তিনি কবুল করেন। আমীন।
©somewhere in net ltd.