নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘থিম’

২৪ শে মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৬

‘থিম’



মোবাইলে হাবিজাবি সফট্ওয়ারের ওয়েবসাইট ঘাঁটতে ঘাঁটতে ‘ড্রিমি’ নামে একটা মোবাইল থিমে রাকিবের চোখ আটকে গেলো। টানা চোখের একটি মেয়ের ছায়ামুখ। থিমটির ডিটেইলস-এ বলা আছে ঐ অবয়বে চাইলে যে কারো মুখ কল্পনা করে নেয়া যাবে, তখন ঐ চেহারাটাই এই অবয়বের মাঝে স্পষ্ট হয়ে উঠবে। নিশ্চিতই গাঞ্জুট্টি, তবু নিজের অজান্তেই রাকিবের চোখে ক্যাম্পাসে নতুন আসা রোদেলা নামের মেয়েটির চেহারা ভেসে উঠে।



ক্লাশে তার পাশে বসে বলেছিলো –‘রাকিব আমি তো নতুন আসলাম, খেলোয়াড় কৌটায়। তুমি আমাকে আগের সব ক্লাশের নোটগুলো দিয়ে দিবা।’ অনুরোধ-টনুরোধ নয়, সরাসরি ‘দিয়ে দিবা’! আর এই মেয়ে তার নাম ধাম জানলো কিভাবে। প্রথম কথাতেই এত্ত স্বতস্ফুর্ত!



রাকিব বলতে যাচ্ছিলো- ‘আমিতো ক্লাশ-প্লাসের ধার ধারিনা। কেন যেন শখ জাগলো তাই আজকে আসলাম’। মূলত পলিটিকাল বিভিন্ন প্রোগ্রামে সময় যায় রাকিবের। কিন্তু এসব না বলে সামলে নিলো হলের কারো কাছ থেকে নোট নিয়ে দিবে এই ভরসায়। বললো- ‘ঠিক আছে, দিব।’ মেয়েটাকে আশ্বস্ত করে জিজ্ঞেস করলো- ‘খেলোয়াড় কৌটায় আসছো, তা কি খেলো তুমি?”

- ‘সঅঅব খেলা। হাই জাম্প, লঙজাম্প, চাকতি নিক্ষেপ, বর্ষা নিক্ষেপ, ফুটবল, হাল আমলের খেলা ক্রিকেট, স্কোয়াশ, টেনিস্ …… ’

- ‘এ্যাই থামো থামো, এত্ত্ব কিছু একজনে পারে নাকি!! আর ক্রিকেট টেনিস হাল আমলের খেলা নাকি! কত্ত পুরনো।’

- আমিতো বছরের পর বছর ধরে শিখছি। আর আমি মুলত অনেক পুরোনো মানুষ’ই।

- ‘তা..আ..আ..ই নাকি! তা কত বয়স তোমার?’ মেয়েটার ফাজলামোতে মজা পেলো এমন ভাব নিয়ে বললো রাকিব।

- ‘বয়স আজকাল আর গুনিনা। কয়েক হাজার তো হবেই। সম্রাট আকবরজ্বীর শাষন তো যেন এই সেদিন গেল।’

ভালো ফাজিলতো! মুচকি হাসলো রাকিব। এই রাতে মোবাইলের থিমটাতে ভেসে থাকা নারী অবয়বটার দিকে তাকিয়ে রোদেলার কথা গুলা মনে করে আবারও একটু হেসে উঠলো রাকিব।



মোবাইলে থিমটি এ্যাকটিভ করে ঘুমিয়ে পড়লো সে। তাই দেখতে পেলো না যে আবছায়া মূর্তিটির ঠোঁটের কোনে অস্পষ্ট হলেও একধরনের তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠেছে। এই ধরনের সস্তা এ্যাপসের জন্যে যেটা অসম্ভব ব্যাপার।



রাতে অদ্ভুত এক অস্বস্তিতে ঘুম ভাঙ্গলো রাকিবের। স্পষ্ট মনে হলো অন্ধকারে কেউ একদৃষ্টিতে ওকে দেখছে। দ্রুত অনুভুতিটি তিব্র হতে থাকে। সে লাইট বন্ধ করে ঘুমায়নি, দরজা লাগানো কেউ এসে সুইচ বন্ধ করতে পারবেনা। শালার মধ্যরাতেও লোডশেডিঙ! কিন্তু হাত বাড়িয়ে সুইচ দিতেই লাইট জলে উঠলো। ধাতস্থ হয়ে পানি খেলো, লাইট বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়ার কিছুক্ষনের মাঝেই আবার একই অনুভুতি হয়। রাতটা নির্ঘুম কাটলো তার।



এই যন্ত্রনায় সে রোদেলার ক্লাসে নোট নিতে ভুলে যায়। টানা চোখ টলটলে করে রোদেলা বললো- ‘দ্বিতিয় সুযোগ। আনতে না পারলে তোমার পাঁচ বছরের আয়ু আমি খেয়ে ফেলবো।’ রোদেলার চোখ দুটো এত্ত গভীর যেন রাকিবের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ সব সে পড়ে নিচ্ছে। তার কথাবার্তা অসঙলগ্ন মনে হলেও অসহায় অনুভুতি হলো রাকিবের।



তবে, এভাবে এটা সেটার সূত্রধরে কাছে আসা বাড়তে থাকে তাদের। দিনে দিনে রোদেলাকে আরো অন্যরকম লাগে রাকিবের। বেশির ভাগ কথাই বলে প্রাচীন কালের। আলাদিনের দৈত্যের মত নিজেকে হাজার বছর বয়েসী বলে দাবী করে। আরো কত আজগুবি কথা। বলে- ‘আমি কিন্তু অন্যের আয়ু খেয়েই হাজার বছর বেঁচে আছি।’ তাই দ্রুতই রোদেলার সৌন্দ ের্যর সাথে সাথে সবাই এটাও মেনে নেয় যে মেয়েটার মাথায় ছিটও আছে।



কিন্তু রাকিবের তা মনে হয়না। উদ্ভট কথা গুলাকেও তার কাছে সত্যি মালুম হতে চাইতো।



একদিন নেতা গোছের কয়েক জন সিনিয়র রোদেলাকে কি যেন বললো। বেশ গম্ভীর হয়ে গেলো সে। রাকিবের চোখে চোখ রেখে বললো- ‘শুন, তুমি কখনো কোন মেয়েকে নিয়ে বাজে কিছু বলবেনা, শুনবেনা, বাজে ভাবে দেখবেনা। আমার পিছনেও কাউকে কিছু বলতে দিবানা। বুজতে পারছো?” দুর্ভাগ্য, রাকিব বুজতে পারলো না। কারন ঐ চোখ ‍দুটা দেখলেই রাকিবের মধ্যে রাতের সেই অস্বস্তিটা ফিরে আসে।



কিছু দিনের মাঝে ক্যাম্পাসে এক ধরনের চাপা আতঙ্কের ছায়া নেমে আসে। হঠাৎ করেই নেতা টাইপের বেশ কটা ছেলে একে একে গুম হতে থাকে। নেতাদের বিভিন্ন গ্রুপ গুলা একে অপরকে দোষ দিয়ে পোষ্টারিঙ করতে থাকে। ছোট খাটো কথা কাটাকাটি, মারামারিও হচ্ছে। যে কোন সময় বড় সড় সঙঘর্ষ বাধার আশঙ্কায় আছে সবাই।



রাকিব ব্যাপারটার কি যেন একটা আঁচ করতে থাকে আর তার মেরুদন্ড বেয়ে বয়ে যাওয়া ভয়ের ঠান্ডা স্রোত টের পেতে থাকে।



এক দিন কিছু ছেলেপেলে রাকিবকে বলেছিলো মেয়েদের হলের ভিতরে সব কিছু ক্যামেরায় ভিডিও করে ফেলেছি। দেখলে চল।” গেলো সে। আসরের মাঝে হঠাৎ রাকিব দেখলো ঐ রেকর্ডে রোদেলাও আছে। তখন নেশায় চুর হয়ে থাকা ছেলে গুলাকে সে কিছুই বলতে পারলোনা। ওরা তারই গ্রুপের, তার উপর তখন দলে তার একটা উঁচু পদ পাওয়ার কথা চলতেছিলো।



এর পর তিনটা মেয়ে সুইসাইডের চেষ্টা করলো। এক জন মারাও গেলো। প্রেমের সম্পর্কের টানাপোড়েনে মেয়েটা মারা গেছে বলে প্রচার হলো, এজন্যে ঐ মেয়েটার সাথে সবচেয়ে বেশি ঘুরতো যে ছেলেটা তাকে পুলিশ ধরেও নিয়ে গেলো।



রাকিব খেয়াল করে দেখলো যারা ঐদিন ঐ ভিডিওগুলা দেখার সময় ছিলো তারাই সবাই একে এক নাই হয়ে যাচ্ছে। কিছু একটা আঁচ করতে পেরে নিজের মোবাইল থেকে সব ক্লিপ মুছে দিতে গিয়ে সে আবিষ্কার করলো তার মোবাইলটা দীর্ঘ দিন ধরে চার্জ ছাড়াই চলছে। তখনই হঠাৎ করে সে তার রাতের অস্বস্তিকর সমস্যাটার উৎস কিছুটা ধরতে পারলো।



লাইট জ্বালিয়ে ঘুমালেও ঘুম ভাঙ্গলে দেখে ঘর ঘুটঘুটে অন্ধকার। স্পষ্টতিই শিরশিরে অনুভুতি দিয়ে কেউ তাকে তিব্র মনোযোগে লক্ষ করছে। রাকিব ফিসফিসিয়ে বললো- ‘কে?!’ দুতিন বার জিজ্ঞেস করার পর কে যেন বললো- ‘আমি, আমি, আমি’। ভয়ে মূর্ছা যেতে গিয়ে রাকিবের চোখ গেলো মোবাইলে। অন্ধকারে যেন তীব্রভাবে সেটি তাকে দেখছে। তার কথার জবাব দিচ্ছে ফিস্ ফিসিয়ে। মোবালটা তুলে বাথরুমের পানির বালতিতে চুবিয়ে ঘুমাতে গেলো সে।



একটু পরই পরিচিত রিঙটোনে ঘুম ভাঙলো রাকিবের। বিষ্ময় নিয়ে দেখলো বালতিতে পানির তলায় থেকে মোবাইলটার রিঙ বাজছে। কাঁপা হাতে ফোন ধরে রাকিব। ওপাশ থেকে গম্ভীর স্বরে রোদেলার কন্ঠ বলে উঠলো- ‘রাকিব, তোমাকে আমি এই ভাবেই নির্ঘুম যন্ত্রনায় বাঁচিয়ে রাখবো হাজার হাজার বছর ধরে।’







মোবাইলটা সে বাইরে ছুড়ে ফেলে দিলো। তবু তার মনে হতে থাকে এক জোড়া চোখ তাকে তীব্র ভাবে লক্ষ করে যাচ্ছে। এক্ষুনী তার ঘাড়ে নি:শ্বাস ফেলবে সেই অবাস্তব ছায়া মূর্তী। অপার্থীব আতঙ্কে কাঁপতে থাকে রাকিব।



# Afnan

[email protected]

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ১২:১৭

সুমাইয়া আলো বলেছেন: ভাল গল্প। তবে আমি মনে করেছিলাম এপস মনে হয়। ;)

২| ২৫ শে মে, ২০১৪ রাত ২:১২

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: Ha ha ha. . .
Thanks. . @Sumaya Alo.

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.