নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি অসমাপ্ত বিজ্ঞাপন চিত্রের গল্প

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৪:৪১



একটি অসমাপ্ত বিজ্ঞাপন চিত্রের গল্প



রাকিব একটু বেশীই ডানপিটে ছেলে। জন্মের পর থেকেই চিল্লাফাল্লা করে বাবা-মায়ের কান ঝালাপালা করে ফেলছে। স্কুলে ভর্তির পর দূরন্তপনা বাড়লেও সবাই খেয়াল করলো যে সে পড়াশোনায়ও বেশ ভালো করছে। ক্লাশ থ্রি-ফোর’এ উঠার পর সে স্কুলের বিভিন্ন ছোটখাট পোগ্রামে টুকিটাকি অভিনয় করে চমকে দিতে লাগলো। তার দুষ্টামি আর চিল্লাফাল্লায় বাবা-মা অতিষ্ঠ থাকলেও স্কুলের পারফর্মেন্সে তারা মনে মনে বেশ খুশী হলেন। একটু হয়তো গর্বীতও। তবে সেটা মুখে খুব একটা দেখান না। পাছে ছেলে আরো মাথায় ওঠে।



হাই স্কুলে উঠার পর রাকিবের মূল আপত্তি তার মা কেন তার সাথে স্কুলে যায়! মা বলেন –‘‘সবার মা’ইতো স্কুলে যায়, আমি গেলে কি সমস্যা। তুমি আরো বড় হও তার পর যাব না।’’

রাকিব বললো- ‘না, তুমি এখনই যাবে না। সীফাত আর তুহিনের মা স্কুলে যায় না। ওরা তাই ভাব দেখায় যে ওরা আমার থেকে বড় আর আমি এখনো লুতুপুতু। তুমি না গেলে আমিও তখন বড় হয়ে যাবো।

‘- ওদের তো মা নেই বাবা।’ মা রাকিব কে বুজাতে চেষ্টা করেন। সীফাতের মা মূলত মারা গেছেন। আর তুহিনের মা ওর বাবা থেকে আলাদা হয়ে অন্য শহরে চলে গেছে। রাকিবেরতো সৌভাগ্য যে তার মা তার সাথে আছে। রাকিব বিরক্ত হয়- ‘আমার মা আমার সাথে থাকার দরকার নেই। তুমি থাকলেই আমার লজ্জা লাগে। সেবার ফুটবল খেলতে নামলাম, আর তুমি কিনা একটু পর পর আমাকে ডেকে ডেকে তুলে পানি খাওয়াতে লাগলা। সবার সেকি হাসি। সীফাত-তুহিনের মা’ই ভালো। ওদের মা ওদেরকে লজ্জ্বা দেয় না।’

‘- তো তুমি এখন কি চাও? ওদের মায়ের মত আমিও চলে যাই বা মরে যাই।’ মা একটু কঠিন স্বরে জিজ্ঞেস করে বসলেন।

‘-আমি চাই তুমি আমার থেকে দূরে থাকবা। সারাক্ষণ আমাকে কোলে নিয়ে ঘুরতে হবে না। আমি বড় হতে চাই। মা ছাড়া থাকতে চাই।’ রাকিব এক বারে কথা গুলো শেষ করে বল নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। মা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেন, সেটা তার কান পর্যন্ত পৌঁছায় না।



রাতে রাকিবের বাবা বাসায় ফিরে তার মাকে একটা পেপার কাটিং দেয়। কি একটা মোবাইল কোম্পানীর একটা বিজ্ঞাপন তৈরীর জন্যে রাকিবের বয়েসী ছেলে পেলে খুঁজছে। একটু ডানপিটে, অভিনয় টভিনয় পারে এমন ছেলে তারা চাচ্ছে। মা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেন। বিকেলে ছেলের তর্কাতর্কির কথা আর বাবাকে বলেন না। তিনি রাকিব কে বিজ্ঞাপনটা দেখান। সেও আগ্রহী হয় কারন তখনো সে স্কুলে অভিনয়ের জন্যে পুরষ্কার পাচ্ছিলো। বাবা-মা প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র যোগাড় করে আবেদন করেন।



রাকিবকে যখন এক সপ্তাহের মধ্যে ঐ বিজ্ঞাপনের কাজের জন্যে ওয়েষ্টিনে গ্রুমিঙ ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে বলা হয় তখন সে ফুটবল খেলায় পা মচকে বিছানায় শোয়া। মা ব্যাপারটাকে চ্যালেন্জ হিসেবে নেন। এক সপ্তাহের মাঝেই রাকিব নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু যাওয়ার আগে সে যথারীতি বেঁকে বসে। বলে সে একা যাবে ক্যাম্পে। তার মা যেন সাথে না থাকে। সেখানে নিশ্চয়ই তার অনেক নতুন বন্ধু থাকবে। তারা হয়তো সাথে মাকে নিয়ে এসেছে দেখে হাসাহাসি করবে। ব্যাপারটা তাহলে অমুছনীয় লজ্জার হয়ে যাবে তার জন্যে। মাত্র সুস্থ হওয়া ছেলেকে মা’ও একা এই তিন চার দিনের জন্যে ছাড়তে রাজী না। পুর দিন তর্কা-তর্কির পর বাবা মধ্যস্থতা করলেন। উনিই রাকিবকে ক্যাম্পে দিয়ে আসবেন। রাকিব কে এই কয় দিনের জন্যে একটা মোবাইল দেয়া হবে। আর সে অবশ্যই ফোন ধরবে এবং মা-বাবার সাথে নিয়মিত কথা বলবে।



সব গুলো রাউন্ড শেষ করে রাকিব চুড়ান্ত শূটিঙের জন্যে সিলেক্ট হলো। তাকে মোবাইল কোম্পানীর এক ধরনের ভোক্তা ইন্সুরেন্সের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করতে হবে। বাবা-মা ব্যাপারটা জেনে খুবই খুশী হলেন। আত্মীয় স্বজন সবাই বেশ সাদুবাদ জানালো। আশেপাশে যারা থাকে সবাইকে নিয়ে মিষ্টি খাওয়া খাইও হলো বেশ। আর সেদিনই কোম্পানী থেকে বাবা-মায়ের কাছে ফোন এলো – ‘আপনাদের ছেলেতো শেষ মূহুর্তে আর অভিনয় করতে পারছে না। আসলে মনে হচ্ছে সে করতে চাচ্ছে না। অথচ শুরু থেকে সে সব চেয়ে স্বতর্ফূর্ত ছিলো। আপনারা যদি একটু এসে ওকে বুজান তো…।’ অবাক বাবা মা ছুটে গেলেন। রাকিব মাকে দেখেও প্রথমে বেশ চুপচাপ থাকলো।



পুর ঘটনা জানতে গিয়ে দেখা গেলো রাকিব পুর গল্পে অভিনয় ঠিক মতই করে। শুধু শেষ একটা পর্যায়ে তাকে ‘মায়ের কবর ছুঁয়ে বলতে হয় আমি বেশ ভালো আছি মা, যেন তোমার সাথেই আছি’ এই অংশটাতে এসেই রাকিব নিস্প্রভ হয়ে যাচ্ছে। গ্রুমিঙে তাকে বুজানো হয়েছে তার মা সত্যিই আর তার সাথে নেই এনটাই যেন সে মনে করে, তা হলে চেহারায় সেই ভাবটা আসবে। আর সে প্রতিবারই ঐ যায়গায় গিয়ে মুখ শক্ত করে বসে থাকছে। বাবা-মা তাকে বুজিয়ে সুজিয়ে অভিনয়টা শেষ করতে বললেন। আবার শুরু হলো শূটিঙ। এবারও রাকিব ডামি কবরটার সামনে শক্ত হয়ে বসে রইলো। হঠাৎ ছুটে এসে সে মাকে জড়িয়ে ধরে চোখের নদীতে ভাসিয়ে দিলো আর বরতে লাগলো তোমাকে ছাড়া আমি ভালো নেই মা, তোমাকে ছাড়া আমি কক্ষনো ভালো থাকবো না মা। তুমি কখনো ঐ রকম কবরে যেও না। তুমি কখনো সীফাতের মায়ের মত হইও না।….’’



বাবা –মা সহ সবাই একটু অবাকই হলেন। ছেলেটাকে শুরু থেকে বেশ শক্তই মনে হয়ে ছিলো অথচ….। নাহ্, নতুন ছেলে দেখতে হবে এই কাজের জন্যে।



আফনান আব্দুল্লাহ্

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৫:৫২

হরিণা-১৯৭১ বলেছেন: অনেক কস্ট করেছেন, তেমন কিছু ঘটেনি।

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:৩১

রাজিব বলেছেন: হাই স্কুলে উঠার পর রাকিবের মূল আপত্তি তার মা কেন তার সাথে স্কুলে যায়"
হাই স্কুলে কি আসলেই কোন ছেলের মা তার সঙ্গে যায়? হাই স্কুল মানে কি ক্লাস এইট নাইন না?

৩| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:০৮

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: Na, High school mane after class-v. Mane class vi, vii. . .@Razib

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.