নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘রোদ-ক্যামেরা’

০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ১:১২

‘রোদ-ক্যামেরা’



রক্ত জবার মত রাশি রাশি টকটকে লাল ফুলের মাঝে দিয়ে টুকটুকে শিশুটি খিলখিলিয়ে হাসতে হাসতে হেঁটে আসছে। রাকিব হাসান তার ডি.এস.এল.আর এ নিষ্ঠার সাথে ছবি তুলছেন। কিন্তু এল. সি. ডি.তে নিজের তোলা ছবি গুলো দেখে ভিষন চমকে উঠেন তিনি।



পুর শরীর ঘেমে উঠে। পেটে পাক দিয়ে বমি আসে। ওয়াস রুমে ছুটে গিয়ে হড় হড় করে বমি করার পর একটু স্বস্তি লাগলেও মাথাটা দ্বপ দ্বপ করছিলো তখনো। ছবি তোলা বাদ দিয়ে ফিরে আসেন নিজের গড়া শিশু নিকেতনে যা এখন তার একাকিত্ত্বের আবাস।



পুরনো বন্ধু সিফাতের অনেক অনুরোধে দীর্ঘ্য প্রায় আট বছর পর ক্যামেরা হাতে নেয় রাকিব হাসান। কিন্তু বুজতে পারে আট বছর আগের শিশুটি এখনো তার পিছু ছাড়েনি।



নিজের চোখের সামনে দেখা রাশি রাশি রক্ত জবা গুলো এল.সি.ডিতে জীবন্ত হয়ে নড়াচড়া শুরু করলো অজস্র লাল পিঁপড়া হয়ে। প্রানবন্ত শিশুটিকে হঠাৎই দেখা যায় মৃত প্রায়, লাল পিঁপড়ার দল তাকে ঘিরে ধরছে। আর চরম নিষ্ঠার সাথে সব এ্যাঙ্গেল কাভার করে ছবি তুলে চলেছে প্রফেশনাল ফটোগ্রাফার রাকিব হাসান। তার চোখ ভরা খ্যাতির লোলুপ দৃষ্টি। বছর আটেক আগে তার ক্যামেরার একেকটি ফ্ল্যাশ অর্ধমৃত শিশুটির সাথে ঝলসে দিচ্ছিল তার পাশে দাঁড়িয়ে চিৎকার করতে থাকা রোদেলার সাথে তার আত্মিক সম্পর্কটাকেও!



তার হাতের ক্যামেরাটার নাম তারা দিয়েছিলো ‘রোদ-ক্যামেরা’, মানে রোদেলার ক্যামেরা। আর তারা মানে রাকিব আর রোদেলা।



ক্যামেরটা কিনে রাকিব প্রথম রোদেলারই ছবি তুলেছিলো। ধানমন্ডি লেকের পাড়ে ফুলওয়ালির যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে রোদেলা সব ফুল কিনে ফুলওয়ালির গালে দু হাতে ডলে দিচ্ছে, এমন একটা ছবি। রোদেলা পরে মুগ্ধ হয়ে বলেছিলো- ‘ওয়াও! এটা আমার ছবি! এত্ত সুন্দর!’

রাকিব বলেছিলো –‘ আরে না বোকা, ঐটাতো ফুলওয়ালি, তুমিতো পাশেরটা।’

-‘ফাজলামি না, তোমার ক্যামেরাটাতো বেশ ভালো ছবি তুলে’

- ‘তোমার ছবি ক্যামেরা দিয়ে না তুলে যদি তৈল রঙ দিয়েও আঁকি তবুও অসাধরন হবে।’

- ‘বাহ্, তুমি তৈল চিত্রও আঁকতে পার?

- ‘আরে নাহ্। তবে তেল দিতে পারি। শুন এই এই ক্যামেরাটার পৃথিবী হবে শুধু তুমি। ঠিক যেমন আমার পৃথিবী তুমি।’

‘-মানে!’

‘- মানে, এটা দিয়ে এখন থেকে শুধু তোমার ছবিই তুলবো। তার ল্যান্সের চোখ দিয়ে সে শুধু তোমাকেই দেখবে’। পুরোপুরি পেশোদার ফটোগ্রাফার হওয়ার নেশায় বুঁদ রাকিবের মুখে এমন কথা শুনে আফ্লুত হয় রোদেলা। তারা দুজনে তখন ক্যামেরাটার একটা নামও দেয় –‘রোদ ক্যামেরা।’



কিন্তু রোদ-ক্যামেরার পৃথিবী শুধু রোদেলায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। তার ল্যান্সের চোখ দিয়ে সে সেই দিন ঐ শিশুটিকেও দেখেছিলো যে দিন থেকে রোদেলা আর রাকিবের জীবন পুরোপুরি বদলে গিয়েছিলো।



ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্টে পড়লেও ইউনিভার্সিটির ফটোগ্রাফি সোসাইটির সুবাদে তাদের কাছে আসা। বেশ লম্বাচওড়া, সুদর্শন রাকিবকে দেখেই আনেকের ভালো লেগে যায়। কিন্তু ওকে রোদেলার ভালো লাগে ওর পেশাদারিত্ত্ব দেখে। সব কিছুতেই রাকিবের ছিলো অখন্ড মনোযোগ। নিতান্ত দুষ্টামি করে তোলা ছবিটাও সে নেয় পরম যত্ন নিয়ে।



তাই শুরু থেকেই এই টগবগে তরুণটিকে দারুন পছন্দ হয় রোদেলার। কিন্তু ক্যামেরা ছাড়া আর কিছুতেই রাকিবের মনোযোগ নেই। ছোট্ট একটা কৌশল খাটালো রোদেলা। ক্লাসে মজা করতে গিয়ে যতগুলা ছবি রাকিব তোলে রোদেলা চাইতো সব গুলাতেই নিজেকে রাখতে। কাজও দিলো টেকনিকটা। রুমি একদিন বলেই বসলো- ‘কিরে রাকিব, এত্ত লোক থাকতে তুই শুধু রোদেলার ছবি তুলিস কেন!! ঘটনা কি, হু?’ রাকিবও সেদিনই ব্যাপারটা খেয়াল করে দেখে যে তার সব ছবিতেই রোদেলা বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে। এর পর থেকেই তাদেরকে এক ফ্রেমেই দেখতে পেত সবাই।



প্রতি দিন ভোর বেলা দৌড়ানোর সময়টাই ছিলো মূলত তাদের অফিসিয়াল ডেটিং টাইম। তখনও রাকিবের সাথে থাকতো তাদের বিখ্যাত রোদ-ক্যামেরা।

‘- তোমার জীবনের উদ্দেশ্য কি বলতো?’

‘-তোমার জামাই হওয়া’ ক্যামেরার আই পিসে ভোরের আলোয় রোদেলার ঘামে ভেজা মুখ দেখতে দেখতে বলে রাকিব।

‘-ধ্যাত, এইম! এইম!! এইম ইন লাইফটা কি শুনি?’

‘-ওহ্, সেটা হলো তোমার বর হওয়া।’

‘-উফ্, বর হয়ে কি করবা?’

‘- আরে মেয়েটারতো দেখি লাজ শরমও নাই! বর হওয়ার পর বাপ হবো।’

‘-ধ্যাত্তরি! ক্যামরাটা সরাও সামনে থেকে। বর হয়ে এর পর চলবে কিভাবে?’

‘- আমার ক্যামেরা চালাবে।’ এবার রাকিবকে সিরিয়াস দেখায়। ‘এক দিন দেখবে আমি রয়টার্সে কাজ করতেছি, সারা দূনিয়া আমাক চিনবে। এর ল্যান্স দিয়ে আমি যা দেখি সারা দূনিয়া তাই দেখবে। আমি যেভাবে দেখাবো সেভাবেই দেখবে। চিন্তা কর, যদি একটা আই.পি.এ (ইন্টারনেশানাল ফটোগ্রাফি এ্যাওয়ার্ড) পেয়ে যাই তাহলে কি হবে! কোথায় চলে যাবো আমি!’ স্বপ্নাতুর হয়ে উঠে রাকিবের চোখ।

‘- স্বপ্ন একটু রয়ে সয়ে দেখনা। আগে দেশে কাজ জুটাও, জামাই হও। নিজে বাঁচো, আমাকেও বাঁচাও।’

‘-স্বপ্ন নয় রোদ। আমাদের দেশে সাবজেক্টের অভাব নেই। দেখ, ঝড়, বন্যা, খুন, দারিদ্রতা, রাস্তাঘাটের দুর্ঘটনা, কি নেই এখানে!’ রাকিব যখন রোদ বলে ডাকে রোদেলার অসম্ভব মিষ্টি লাগে তখন। ভালোলাগার আবেসে তাই সে রাকিবের কথা থেকে সব চেয়ে জরুরি ব্যাপারটাই ধরতে পারলো না। তাই বুজলোনা নিজ দেশের এই বিষয় গুলো যার কাছে বিখ্যাত হওয়ার সাবজেক্ট, তার আশেপাশে থাকা আসলে নিরাপদ না।



খুব দ্রুতই কাজ জুটে যায় রাকিবের। তাই বরও হয়ে যায় সে রোদেলার।



প্রায়ই রাজ্যের বিরক্তি নিয়ে বাড়ি ফিরতো রাকিব। - ‘ধ্যাৎ! আমার ছবি নাকি বেশি বেশি বাস্তব। রঙ চং ছাড়া। এগুলা নাকি কোন নিউজ না। ব্যাটা ফাজিল এডিটর। নিউজের নামে সিনেমার পোষ্টার ছাপাবে! গর্দভের দল!’ জেদ চাপতে থাকে রাকিবের। একটা দূর্দান্ত ছবি তাকে তুলতেই হবে। আর এদিকে তার রোদ-ক্যামেরাটা একা হতে থাকে।



যেদিন রোদেলা বললো- ‘এ্যাই, আমাদের রোদ ক্যামেরাটা দিয়ে অটো-ফ্ল্যাশে আমাদের তিন জনের একটা ফ্যামেলি ছবি তুলে দাও না।’ রাকিব অবাক হলো- ‘তিন জন কে! শতকিয়া ভুলে গেছ নাকি…., ওহ!...ওহ্ মাই গড!....সত্যি! কত দিন?”

‘- তিন মাস!’ ‍লজ্জায় লাল হয় রোদেলা।



অনেক দিন পর রাকিবকে উচ্ছ্বসিত দেখায়। আবার তারা রোদ-ক্যামেরা হাতে ভোরে হাটতে বের হতে লাগলো।



এর মাস খানেক পরেই এলো সেই দিন। অতি প্রাকৃত লোভ আর ভুল পেশাদারিত্ত্ব ব্যাক্তি রাকিবকে হত্যা করে। প্রচন্ড ঘৃণায় স্বম্ভিত রোদেলা নেশা গ্রস্থের মত সীদ্ধান্ত নেয়।



খুব ভোরে রাস্তার উল্টা পাশে ডাষ্টবিনটার মধ্যে কি যেন দেখে খটকা লাগে রাকিবের। রোদেলাকে এপারে পার্কের বেঞ্চে বসিয়ে রাকিব ক্যামেরাটা নিয়ে কি মনে করে যেন এগিয়ে যায়। কাছে গিয়ে বিস্ফোরিত চোখে দেখে সেখানে প্রায় সদ্ধজাত কয়েক দিন বয়েসি একটি অপুষ্ট মানব শিশু পড়ে আছে। ঠিক করে কিছু বুজে ওঠার আগেই তার ক্যামেরার ফ্ল্যাশ ঝলসে উঠে। ফ্ল্যাশের আলোয় স্পষ্ট হয়ে উঠে শিশুটির গা বেয়ে উঠতে থাকা লাল পিঁপড়ার সারি।



‘-বেঁচে আছে! এক্ষুণি হসপিটালে নিতে হবে।’ হঠাৎ রাকিবের কানের কাছে হিসহিসিয়ে উঠে রোদেলার কন্ঠ। ছবি তুলায় বুঁদ থাকাতে সে কখন উঠে এসেছে রাকিব খেয়াল করেনি। বললো- ‘ তুমি যাও। এখন এসব দৃশ্য তোমার জন্যে ক্ষতিকর। আমি নিব হসপিটালে।’

‘- কোন দৃশ্য ক্ষতিকর? এই আধমরা বাবুটা, নাকি তোমর তার ছবি তোলার দৃশ্য??” হিস হিস করতে থাকে রোদেলার কন্ঠ। ছুটে গিয়ে সে বাচ্চাটাকে তুলতে যায়। রাকিব তাকে ধরে ফেলে। - ‘প্লিজ সর। আর একটা এ্যাঙ্গেল থেকে..’ জলতে থাকে ফ্ল্যাশ।

‘-দেরি হচ্ছে।’

‘-বুজতেছনা! এমন সাব্জেক্ট এক জীবনে বারবার পাওয়া যায়না। তার নিজের বাপ মায়েরই তো খবর নাই। আর বেঁচে আছেইবা কিভাবে বুজলে?’ স্নেপ নিয়েই চলছে রাকিব।



অবশেষে হসপিটালে নেয়ার পর ডাক্তার বললো –‘অন্য অনেক জটিলতা থাকলেও লাল পিঁপড়ার বিষেই শিশুটি মারা গেছে।’



রোদেলার পৃথিবী বদলে গেল এর পর থেকে। ‘-তোমার রোদ ক্যামেরায় যদি আমার আর একটি ছবি তুল তাহলে আমি আমার চেহারা গরম তেলে ঝলসে দিব।’ রাকিব তখন তার তোলা এক্মক্লুসিভ ছবিগুলো কোথায় পাঠাবে তাই নিয়ে ব্যাস্ত। তাই খেয়াল করলো না রোদেলা আমাদের ক্যামেরা না বলে তোমার ক্যামেরা বলছে।



টাইম ম্যাগাজিন বাংলাদেশের ভ্রণ হত্যা নিয়ে ফিচার করতে রাকিবের সাথে যোগাযোগ করলো। সেই দিন খুশির আতিশয্যে আকন্ঠ বিয়ার খেয়ে বাড়ি ফিরলো সে, যেখানে তার জন্যে আর রোদেলা অপেক্ষায় ছিলোনা।’



পর দিন রোদেলা ফোনে ওকে একটা হসপিটালে তার রোদ-ক্যামেরাটা নিয়ে যেতে বলে দূর্দান্ত একটি সাব্জেক্টের ছবি তুলতে। একটা আশঙ্কা আর আতঙ্ক নিয়ে ছুট যায় রাকিব। বেডে আধশোয়া রোদেলাকে দেখেই যেন অনেক কিছু বুজে যায় সে। কান্নাভেজা বসে যাওয়া চোখ দুটা মেলে সে রাকিবের দিকে চাইলো। রোদেলার লেপ্টে থাকা শরীরটা তার মাঝে শুধু যেন একটি জীবনের অনুপস্থিতিই নয়, বরং তাদের বাকি জীবনের সমস্ত সুখ আনন্দের অনুপস্থিতির এক মহা শূন্যতার ইঙ্গিত দিচ্ছে! রাকিবের বিখ্যাত হওয়ার স্বপ্নকে যেন কি নিষ্ঠুর ভাবে ব্যাঙ্গ করছে।



যে ক্যামেরা তাদেরকে এক করেছিলো একদিন,সেটাই তাদেরকে আবার পৃথিবীর দু-প্রান্তে ছিটকে দেয়। তারা ক্ষমা করতে পারছিলো না কাউকেই। না এক জন অন্যজনকে। না নিজের কাজের জন্যে নিজেকে।



# Afnan Abdullah

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ দুপুর ২:১৬

লাইলী আরজুমান খানম লায়লা বলেছেন: ভাল লাগলো ভীষণ

২| ০৮ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

আহমেদ জী এস বলেছেন: আফনান আব্দুল্লাহ্ ,




বেশ সুন্দর একটি থীম । ভালো লাগলো ।

শুভেচ্ছান্তে ।

৩| ০৯ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১২:২১

জাহাঙ্গীর.আলম বলেছেন:
গল্পের প্লট ভাল ৷ কিছু বানানের দিকটি খেয়াল করবেন আশা করি ৷

৪| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২২

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: thanks all,
Banan kheal rakbo @Jahangir alom bhai

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.