নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেঘ, বৃষ্টি, জোৎস্না রাতে তিনটা কুকুরের গল্প!

১৬ ই মে, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মেঘ, বৃষ্টি, জোৎস্না রাতে তিনটা কুকুরের গল্প!

: যাহ্ শালা। ধুপ করে আবার কারেন্টা চলে গেলো!

-‘কারেন্ট না, ওটা ইরেকট্রিসিটি বাবু-সোনা।

:হুম..ঐ একই। যাহা লটকানো, তাহাই টাঙ্গানো। ওহ্ মাই গড্! তু..তু…তুমি কিভাবে কথা বলতেছো!!

-‘কেন! আজব, আমি তোমার বৌ। কথা বলতে পারবো না তোমার সাথে! সামান্য ঝগড়ায় তুমি এমন নাটক করি উঠ কেন বুজিনা!

:না,..না..ঠিক তা না। তোমার তো…

-‘বাদ দাওনা ঝগড়া বিবাদের কথা। দেখছো না কি দারুন চাঁদ উঠেছে। চলোনা আমরা একটু বাইরে হাঁটি। বৌ-জামাই মিলে পুরনো দিনের মত চাঁদের হলুদ আলো মেখে মেখে আদর খাই।

:নাহ্। এসব ঢঙ আর ভাল্লাগেনা। সারা দিন শরীরের উপর অনেক ধকল গেছে।

-‘শরীর নয়, বলো মনের উপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। তোমার মনে যে এত্ত সাহস লুকানো তাতো আগে জানতাম না। চলো, একটু হেঁটে আসলে তোমার মনের সব ধকল দূর হয়ে যাবে। চলনা জান। চল।

:ঠি..ঠি..ঠিকাছে। চলো, এত্ত ঢঙ করে যখন বলতেছো।

-‘তুমি এত্ত ঘামাচ্ছ কেন নিনাদ! আর এমনিই বেরুচ্ছ যে! দরজায় তালা দাও ভালো করে। চোর না হোক, শেয়াল শকুনের ভয়ও কি নেই তোমার?

:হুম লাগালাম তালা। চলো এবার।

-‘শুন, যে দিকে হাঁটা দিছ ওই রাস্তাটাতো সুবিধার না। নেশাখোরদের রাতের আখড়া ওটা।

:বাহ্! আমার বউয়ের তো দেখি চোখ কান অনেক খুলে গেছে! আরে, দেখ তিন চারটা কুকুর আবার পিছু নিছে আমাদের। লাল চোখ দেখেতো মনে হচ্ছে এইগুলাও নেশা করছে। তুমি ভয় পাচ্ছনা তো আবার?

-‘উহু, আমার ভয় তোমাকে নিয়ে। মনের সাহস যোগাতে তুমি আজকে যা গিলছো না, ও পথে গেলে নেশাখোর গুলোর সাথে তুমি নিজেও মজে যাবে হয়তো। তোমার গাল থেকেতো এখনো গন্ধ বেরুচ্ছে। ছি নিনাদ! এই সব খাওয়াতেই তুমি উল্টা-পাল্টা দেখতেছ, বুজছো। আবার ফিরে দেখ, আমাদের পেছনে আসলে কোন কুকুর লেগে নেই। এই ছাই-পাশ লিকার তুমি ক্যামনে গিললে। তুমি না সিগারেটের গন্ধই সহ্য করতে পারতে না!

:কি করবো রোদেলা, বলো। তোমাকে যখন রাকিবের সাথে দেখলাম, আমার মাথার ভেতরে কি যেন হলো। কে যেন অট্ট হেঁসে আমাকে তিরষ্কার করতে থাকে। বলতে থাকে- দেখ নিনাদ, দেখ। তোর রোদকে দেখ। তোর সাথে তার যে যায়না সেটা বুজলিতো এই বার। দেখ রাকিবের সাথে কি সুন্দর মানায় রোদেলাকে। কি সুন্দর উচ্চারণে তারা কথা বলে। দুজনে যখন ফটোগ্রাফি ক্যাম্পেইনে যায়, কি দারুন মানিক জোড় মনে হয়। একই পেশা, একই মন। আর তুই! দেখ, তুই নিনাদ এক জন তুচ্ছ সরকারী কলেজের মাষ্টার।

-‘কিন্তু নিনাদ, তুমিইতো আমাকে উৎসাহ যুগিয়েছ ফটোগ্রাফিতে ঝুঁকতে। তুমিই তো কত কষ্ট করে তিলে তিলে টাকা জমাই আমাকে ডি.এস.এল.আর কিনে দিছ।

:সেতো তোমার ঐ দিকে অতি আগ্রহ দেখে। আমি তোমার প্রতিটা আকাংখা পূর্ণ করতে চাইতাম রোদ। যাতে কেউ বলতে না পারে আমি তোমাকে অযত্নে রাখছি।

-‘হুম। আর আমার প্রতিটা কাজে তুমিই তো ছিলে মূল প্রেরণাদায়ি।

:অথচ মাঝখানে রাকিব ঢুকে গেলো।

-‘রাকিব মাঝখানে ঢুকেনি নিনাদ। সে ছিলো আমাদের মূল ট্রেইনার। ও ক্যাম্পেইনে আমার তোলা ছবি দেখে আমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদি হয়ে পড়ে। ও আমাকে নেটজিও’র টেলেন্ট-হান্ট কম্পিটিশানে রেজিষ্ট্রেশান করায়। আমি প্রাইমারী রাউন্ডে সিলেক্ট হই। সেই খবর দিতেই সে আমাদের বাসায় আসে। একা বাসায় আমাদের দেখেই তুমি তোমার আজেবাজে ধারনার সাথে দুইয়ে দুইয়ে চার মিলালে! আর…’

:ইশানা নিয়মিতই তোমাদের নিয়ে আজেবাজে বলতো আমাকে। অথচ সে তোমার কাজীন প্লাস্ বান্ধবী। তোমাদের সাথেই ক্যাম্পেইনে ছিলো। আমারো এক সময় মনে হলো তোমার বাবার অত বড় প্রাসাদের মত বাড়ী থেকে তোমাকে এনে কি ভুলইনা করলাম। তোমার মনের সাময়িক আবেগের সুযোগ বুজে তোমাকে নিয়ে আমার ক্ষুদ্র ঘরে সংসার পাতলাম!

-‘ও সব নিয়ে আমার বাড়ীর কেউতো তোমাকে পরে আর কিছু বলেনি নিনাদ। বাবা শুধু প্রথম প্রথম একটু রাগারাগি করছিলো, ব্যাস। তাই না? আর মা’তো তোমাকে দারুন আদর করে, ঠিক না?

:হু। তবু তোমার এক পাল নাক উঁচু কাজীনদের সামনে আমার দারুন অস্বস্তি হতো। ওদের ঘর সংসারের বিলাস দেখলে আমার মনে হতো তোমাকে কি ঠকালাম আমি! মনে হতো, রাকিবের মত আরেক প্রাসাদবাসী ছেলে পেয়ে কি তুমি ধীরে ধীরে তোমার ভুল বুজে ফেলতেছো। তুমি যদি তোমার ভুল শোধরাতে রাকিবের হাত ধরে চলে যাও, এই আতঙ্ক আমাকে অস্থির করে তোলে। মাথার ভেতরে কি এক যন্ত্রনা দানা বাঁধতে থাকে। আমার মুক্তি চাই ভীষণ ভাবে, কিন্তু উপায় পাচ্ছিলাম না।

-‘মুক্তি কি পেয়েছ নিনাদ? নাকি আরো কঠিন যন্ত্রনার মাঝে গিয়ে পড়লা। শুন, মানুষের মিল গুলা তো শুধু একটা দিক দেখে হয় না। নাটক-সিনামায় ভালো জুটি বাঁধার শর্ত হলো নায়ক নায়িকা দু’জনকেই সুন্দর হতে হবে। গায়ের রঙ, চেহারা, উচ্চতা সব শারীরিক গুনাগুন মিলতে হবে। অবস্থা এমন যে দু’জন যেন যমজ ভাই বোন! শারীরিক সৌন্দর্য-এর যত মিল, তত হীট জুটি হয়। তার কিছু ছায়া পড়ে নাটুকে মানুষদের জীবনে। জীবন কাটানোর জন্যে সঙ্গী খুঁজতে তাদের কেউ টাকার অঙ্কের সমতা খুঁজে, কেউ ইউনিভার্সিটির ডিগ্রির সমতা। আমি এই ভার্সিটির, তুমি ঐ ফালতু ভার্সিটির, ব্যাস হবেনা! কেউ দেখবে যে আবার সিনেমার মতই কাপড়-চোপড় আর চেহারার সমতার পিছে পড়ে। অথচ তাদের জীবন-বোধ হয়তো থাকে পুরপুরি আলাদা! বাইরের মানুষের সামনে দেখানোর জন্যে, স্রেফ ‘আই-ওয়াশে’র জন্যে খুশী খুশী ভান করে এক সাথে জীবন কাটায়। অথচ আমরাতো সত্যিকারের খুশী ছিলাম নিনাদ!

:আমার আর তোমার জীবন-বোধ কি এক ছিলো রোদ? আমার কি দেখে আমার সাথে তুমি পুর জীবন কাটাতে আসলে বলতে পারবে? নাকি সত্যি কোন ভুলের মাসুল গুনছিলা তুমি আমার সাথে?

-‘তুমি আমাকে যে আদরে ‘রোদ’ বলে ডাক, তা শুনতেই আমি তোমার সাথে এক জীবন কাটাতে রাজি ছিলাম। বিশ্বাস করো।

: আমি তোমার সব কথা’ই বিশ্বাস করি রোদ।

-‘হুম্, জানি। শুধু রাকিবের ব্যাপারটা বিশ্বাস করনি। জানো, রাকিবের কিন্তু এক জন বাগদত্তা ছিলো, নায়লা। কানাডায় থাকে। খ্রিষ্টান বলে রাকিব বাসায় ব্যাপারটা বলতে পারছিলো না। এ বছরই আসবে নায়লা। তোমাকে তাদের বিয়ের দাওয়াত দিতে আসবে রাকিব। রাগ জমিয়ে না রেখে বিয়েতে যেও কিন্তু। জান্, দেখ; মেঘে চাঁদ ডুবে বৃষ্টি চলে আসছে হঠাৎ। চলো ভিজি। তোমার রাগ আরো গলে যাবে তাহলে।

:নাহ্, বাসায় চলো রোদেলা। আমার শরীর খারাপ লাগছে। তোমারও ঠান্ডা লাগবে।

-‘আরে নাহ্। আমার আর ঐসব লাগবে না। চলো আরেকটু হাটি।

:কোথায় যেতে চাচ্ছ আসলে বলতো রোদ। দেখ এই দিকে লোকালয় নাই। রাতও তো মনে হয় কম হয়নি। আর দেখ, সেই লাল চোখের কুত্তা গুলা আবার পিছে পিছে আসতেছে। চলো, আমারই ভয় লাগছে রোদ।

-‘কি সব বল! কোথায় কুকুর দেখলে, কিচ্ছূ নাই ওখানে। আরে, অমন করছো কেন! কি হলো তোমার?

:আমার খুবই ভয় লাগছে রোদ, চলো প্লিজ। চলো। আমার শরীর খুব খারাপ লাগছে হঠাৎ। বমি আসছে।

-‘ছাই-পাশ গিলছো। বমিতো আসবেই। রাস্তায় বসে পড়ো না, জান। প্লিজ্। আর একটু, এই তো এসে পড়েছি।

:কোথায় নিয়ে যাচ্ছ আমাকে তুমি। রোদ, বল প্লিজ্।

-‘তোমার মুক্তির পথে। এই তো এসে গেছি। যাও ভেতরে ঢুক। আমি বাইরে আছি। রাতেও থানায় দারোগা থাকে। সব বলার দরকার নাই। তাকে শুধু আমাদের বাসায় নিয়ে চল। আমার ওজন তো কম না। বিছানা থেকে আমাকে নামিয়ে তুমি একা মাটি চাপা দিত পারবে না জান। পুলিশের সাহায্য তোমার দরকার।

:তুমি কি বুজনি তোমার স্যুপে আমি বিষ দিয়েছি? বুজলে খেলে কেন রোদ?

-‘আমি তোমাক আমৃত্যু বিশ্বাস করতে চেয়েছি জান। তুমি পুলিশ নিয়ে যাও। তারা আমার বালিশের নিচ থেকে আমার লেখা স্বাক্ষর করা চিরকূট পাবে। সেটা আমার সুইসাইড নোট।

:মানে কি? তুমি তো সুই সাইড করোনি। রাকিবের সাথে তোমাকে বাসায় দেখে আমার মাথায় রক্ত চড়ে গেলো। আকন্ঠ লিকার গিলে ফিরলাম। সাথে কিনে আনলাম বটুলিনাম (Botulinum)। যত্ন করে তোমার জন্যে স্যুপ বানিয়ে তাতে মিশিয়ে দিলাম। কথা বলতে বলতে আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে পড়লে তুমি। মুক্তির স্বাদ পেলাম আমি। তোমাকে আমার কাছ থেকে কেউ আর নিতে পারবেনা। বিছানায় তোমাকে শুইয়ে দেয়ার সাথে সাথেই এক বোবা আতঙ্ক আর বিষাদ ভর করে আমার মনে। মাথার ভেতরে অসহ্য যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুই বুজতে পারছিলাম না।

-‘তোমার হঠাৎ নেশা করে আসা, স্যুপ খাওয়ার পর পরই আমার ঘুম ঘুম ভাব। সব বুজে আমি সুইসাইড নোটটা লিখি তখন। আমি চেয়েছি তুমি আমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাক নিনাদ। তোমার কিচ্ছু হবেনা, দেখ।

:না, রোদ আমি মুক্তি চাই, মুক্তি। মুক্তি। মুক্তি।
………………………………….
--‘ওই, রাত বিরাতে থানা হাজতের সামনে এমন মুক্তি চাই, মুক্তি চাই বলি চিৎকার পারতেছেন ক্যান? আপনি তো হাজতে নাই, মুক্তই আছেন!
:আপনি কে?
--‘আমার গায়ের কাপড় দেখি বুজেন না? আমি পুলিশ। সাব ইন্সপেক্টর ইলিয়াস। আপনার ঘটনা কি বলেন তো। খাই তো টাল হই আছেন, অথচ গায়ে দেখি ভদ্র লোকের জামা-কাপড়! জায়গামত না থাকি থানার সামনে আইছেন ক্যান? ডলা খাইতে মুঞ্চাইতেছে?

:ভাই, আমার বউ,…. আমার বউ…..। আচ্ছা, ভাই আপনি কি আমার পেছনে ওখানে তিনটা কুকুর দেখতেছেন?

--‘দেখ দেখি, বউ এরতুন আবার হঠাৎ করি কুত্তার মইধ্যে চলি গেছে। হু, ‍ঐ কুত্তা তিনডার লগেইতো মনে হইলো এতক্ষণ ধরি আলাপ কইরতেছিলেন। যান তো ভাই জায়গা মত যাই গিলেন। মাঝ রাইতে আই থানার সামনে গ্যাঞ্জাম পাকাইয়েন না। ফাউ ফাউ ঘুম নষ্ট করে। ধূর হ….এই মানিক মিয়া, পাগল দূর কর।”

---‘জ্বি, স্যার দৌড়াইতাছি। অনেক বছর ধরি এই পাগলাটারে দেখতেছি স্যার। শখের পাগল। প্রায়ই পূর্ণিমার রাইতে গলা সমান গিলে আর থানার সামনে আসি চিল্লাফাল্লা করে। ওই দূর হ, যা … যা….। দূরে গিয়া মর…।
………………………………………………………………………………………………………………

#Afnan_Abdullah

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.