নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্
মুসলীম সমাজে যে ফেরাউন অভিশপ্ত শাষকের প্রতীক ততকালিন মিশরীয়দের কাছে সেই ফেরাউনই ছিলেন ‘দ্যা গ্রেট রামেসিস’ (২য় রামেসিস) নামে পরিচিত। তাদের জন্যে তিনি ছিলেন মহান উদার প্রজা বৎসল এক জন শাষক (যার মমী সংরক্ষিত আছে তিনি প্রথম না দ্বিতিয় রামেসিস তা নিয়ে সংশয় আছে যদিও)। এই শাষক স্বজাতির জন্যে যতটুকু মহান ছিলেন তার থেকে অনেক ভয়ঙ্কর ছিলেন বনি ইসরাঈলিদের জন্যে। তারা তার সম্রাজ্যে বসবাস করতো কৃতদাস হিসেবে পশুর মত। এই বৈসম্য তাকে নিয়ে গেছে নিষ্ঠুর শাষকদের কাতারে।
.
এক জন বা এক দল মানুষ যখন যে কোন একটা অযুহাত দেখিয়ে আরেক জন বা আরেক দল মানুষকে নিজের থেকে আলাদা এবং অবশ্যই নিম্ন স্তরের গোত্র বা জাত হিসেবে চিহ্নিত করে তার ফল সব সময়ই হয় ভয়ঙ্কর। ইউরোপের সাদা চামড়ার মানুষ গুলো এক সময় মধ্য আফ্রিকায় ঘোড়ায় চড়ে কালো মানুষ শিকারে বের হতো। ধরে বেঁধে নিয়ে ব্রাসেলসের চীড়িয়া খানায় কালো মানুষ প্রদর্শনের নজির গড়ে তারা। ব্যাঙের ব্যাবচ্ছেদ করে যেমন মানুষের সাথে মিল খুঁজা হতো, কালো মানুষ ব্যাবচ্ছেদ করে মানুষের সাথে তাদের অমিল খুঁজতো তারা। সাধারন মানুষকে বুজানো হতো যে দেখতে মানুষের মতো মনে হলেও ওরা আসলে পুরোপুরি মানুষ না। মূলত মানুষই না, মানুষ সদৃশ্য বানর গোত্রীয় প্রানী যাদের সাথে যা খুশী তাই করা যায়। আর এই ধারনাই সেই রামেসীস বা তারও আগে থেকে এখন অবদি সকল নৃশংস মানুষকে এক সুতায় গেঁথে রাখছে।
.
হীটলারের নাৎসী বাহিনী মেডিকেল পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে এমন কিছু কাজ কর্ম করে যা সাধারন মানুষ কল্পনা করতে গেলেই অসুস্থ হয়ে পড়বে। দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯৪৬ সালে নুরেমবার্গ ডক্টর’স ট্রায়ালে নাৎসি বাহিনীর বিশ জন ডাক্তার সাথে তিন জন প্রশাসনিক কর্মকর্তার বিচার হয় তাদের ‘ইউথেনাসিয়া প্রোগ্রামের জন্যে (Euthanasia Program-অনারোগ্য রোগীদের যন্ত্রণা লাঘবে তাদের মেরে ফেলার ধারনাকে Euthanasia বলে)। এই প্রোগ্রামের আওতায় তারা প্রায় দুই লক্ষ মানসিক এবং শারীরিক অসুস্থ মানুষকে জীবনযাপনের অযোগ্য ঘোষনা দিয়ে বিষাক্ত গ্যাস চেম্বারে ঢুকিয়ে মেরে ফেলে। যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে তারা হাজার হাজার ইহুদির উপর চালায় নজির বিহিন মেডিকেল পরীক্ষা। মানুষ কত কম অক্সিজেনে বাঁচতে পারে, শরীর বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা দিয়ে রাখলে কত দিনের মাথায় সেখানে গ্যাংঘ্রীন হয়, পাথুরে বরফে বা তীব্র গরমে কতক্ষন মানুষ বেঁচে থাকে, কোন জীবানু মানুষকে কতক্ষনে মারতে পারে তার পরীক্ষার পরে যে সব উচ্ছিষ্ট মানুষ বেঁচে থাকতো তাদের মারা হতো বিষাক্ত গ্যাস দিয়ে। এই নাৎসিরা ট্রায়ালে স্বীকার করে যে ইহুদিদের তারা বিবেচনা করতো ইঁদুর হিসেবে। অর্থাৎ ইহুদিরা মানুষ না, দেখতে একই অন্য কোন প্রানী। আর এই বিশ্বাসই তাদের শক্তি দিতো এক জন মানুষ হয়ে আরেক জন মানুষের শরীরে ঠান্ডা মাথায় ভয়ঙ্কর জীবাণু ঢুকিয়ে দিতে।
.
ড. ডেভিড লিভিঙস্টোন স্মিথ্ (এক জন দার্শনিক যিনি মনোবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করেন) তার ‘Less Than Human: Why We Demean, Enslave and Extraminate Others’ নামের বইটিতে বর্ণনা করেছেন মানব জাতির ইতিহাসে মানুষের উপর আরেক জন মানুষের রক্তহীম করা বর্বরতার ঘটনাগুলোর পেছনের মানুষ গুলোর ভয়ঙ্কর মানসিকতা, এই মানসিকতার উৎপত্তি, তার ধারন এবং লালনের মূল কি হতে পারে তার বিস্তারিত। তিনি দেখিয়েছেন এসব বর্বরতার সময় শিকারী মানুষ তার শিকার মানুষটিকে মূলত মানুষ হিসাবেই বিবেচনা করেনা। সে মনে করে এটা স্রেফ একটা প্রানী, ইঁদুর, শুকর বা বানরের মত, যাকে যেভাবে খুঁশী অত্যাচার করা যায়।
.
আমার মনে হয় এই ভয়ঙ্কর ধারনার সূত্রপাত হয় ঠিক ঐ সময় থেকে যে সময়ে সমাজে বৈসম্যের সূত্রপাত হয়। যখন এক জন বা এক দল মানুষ যে কোন একটা অযুহাত দেখিয়ে আরেক জন বা আরেক দল মানুষকে নিজের থেকে আলাদা এবং অবশ্যই নিম্ন স্তরের গোত্র বা জাত হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু করে। যখন একদল মানুষ সম্পদ বন্টন, নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্ব ক্ষেত্রে নিজেদের রাজ গোত্র মনে করা শুরু করে। একই অপরাধে নিজেদের জন্যে আরামদায়ক আলাদা বিচার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করে। আর বাকিরা যখন 'বয়েলিঙ ফ্রগ সিন্ড্রমে' ভুগতে থাকে। মানে দেখিনা এর পর কি হয়, দেখিনা এরপর কি করে এর বাইরে আর কিছু করার থাকেনা তাদের।
.
০৮০৪২০১৭
.
ছবি: প্রথম আলো
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১০:২৭
আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: খুবই দূর্ভাগ্যজনক
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৬
টারজান০০০০৭ বলেছেন: জাতিকে নাড়া দেওয়ার জন্য মোটিভেশনের কেহ নাই ! সব আদর্শের মৃত্যু হইয়াছে ! একারণে সবাই টাইম পাস করিতেছে।বিকল্ ধর্ম ছাড়া আর কিছু দেখিনা ! নেতৃত্বের যোগ্য যাহারা , তাহারা আসিবে না ! জাতির সামনে খারাবি আছে ! আল্লাহর কাছে নিরাপত্তা চাহিতেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ৯:৫০
চাঁদগাজী বলেছেন:
"আরেক দল মানুষকে নিজের থেকে আলাদা এবং অবশ্যই নিম্ন স্তরের গোত্র বা জাত হিসেবে চিহ্নিত করা শুরু করে। যখন একদল মানুষ সম্পদ বন্টন, নিরাপত্তা, শিক্ষা, চিকিৎসা সর্ব ক্ষেত্রে নিজেদের রাজ গোত্র মনে করা শুরু করে। "
-আমাদের দেশে মানুষের সম্পদ লুন্ঠন শুরু হয়েছে ১৯৭২ সাল থেক্বে, আজও চলছে। শিক্ষা ও সুযোগ কেড়ে নেয়া হয়েছে সাধারণ মানুষ থেকে।