নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

Rorschach test : মন পড়ার মন্ত্র

১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩১

৯/১১ তে টুইন টাওয়ারের ধোঁয়ার কুন্ডুলীতে অনেক মার্কিনই লাদেনের চেহারা খুঁজে পেয়েছিলো। কেউ পেয়েছিলো শয়তানের মুখ, আবার কেউ জেসাসের। যে কোন কিছুতে শুধু মানুষেরই মুখ খুজাকে পেইরিডৌলিয়া বলে। এটা মানুষের মজ্জাগত স্বভাব। তাই ম্যান হোলের ঢাকনাতে তিনটা ফুটো মিলিয়ে একটা হাঁসি মুখ পেয়ে যাই সবাই। এ্যাপৌফিনিয়ার খুব কমন একটা রুপ হলো এই পেইরিডৌলিয়া।

.

এ্যাপৌফিনিয়া হলো বিচ্ছিন্ন কিছু জিনিষের মাঝে জোর করে সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া। এক্ষেত্রে হিজিবিজি জিনিষে মানুষের মুখ নয়, ভিন্ন কিছু খুঁজে পায় মানুষ। এতে করে নিজের মনের মধ্যে যা আছে এলোমেলো যে কোন কিছুর মাঝে মানুষ সেটাই খুঁজে পেতে থাকে। যেমন পানের পিকের মধ্যে নর্তকির নাচ দেখতে পারে, সাদা মেঘের মাঝে হুযুরের চেহারা, তারার মধ্যে হৃদয়, চাঁদের মাঝে পান্তা বুড়ী না হয় সাইদি হুযুরের গাল সবই পায়, গুরুর গোসতে আরবী লিখা ইত্যাদি ইত্যাদি। এক জন দেখলে তার বর্ননানুযায়ী আরো অনেকেই দেখতে থাকে। যা আছে মূলত তার মাথায়।

এই এ্যাপৌফিনিয়া যখন তীব্র হয় তা আর নির্দোষ থাকেনা। নোবেল জয়ী গণিতবিদ জন ন্যাশ প্রতিদিন বিভিন্ন পত্রিকার পাতায় রাশিয়ান এ্যাজেন্টদের জন্যে প্রকাশিত বিভিন্ন কোড খুঁজে পেতে থাকলেন নিজের কল্পনায়। এ্যাপৌফিনিয়া যখন এমন তীব্র হয় তা এক পর্যায়ে সিজোফ্রেনিয়ার দিকে যেতে পারে। জন ন্যাশ যেমন ভয়ঙ্কর সিজোফ্রেনিয়ায় ভুগেছিলেন।

.

এটা শুনার ক্ষেত্রেও হতে পারে। এক টানা এক ঘেঁয়ে শব্দের মধ্যে যেমন প্রিয় গানের সুর, ধর্ম গ্রন্থের বানী শুনে কেউ তেমনি কেউ অশ্লীল কিছুও শুনতে পারে। অন্যমনস্ক দশায় বেশির ভাগ শব্দের মাঝে মানুষ নিজের নাম শুনতে পায়। আনেক সময় অফিসে ভুল ভাল কাজ জমা দেয়ার পরে বস্ হাঁচি দিলেও মনে হয় আমারে ডাকলো নাকি!

.

আমার মনে হয় এ্যাপৌফিনিয়া শুধু বস্তুগত জিনিষ দেখে বা শুনে তার বর্ণনা করতে গিয়ে হয় এমন নয়। অবুস্তগত বিষয় বুজা আর বর্ণনাতেও হয়। বিশ্বাস, বিচার, ধর্মীয় বিধি নিষেধ বিশ্লেষন, কারো চারিত্রীক বৈশিষ্ট বর্ননায়ও এ্যাপৌফিনিয়ার প্রভাব তীব্র ভাবে থাকে।

.

ধরুন, করিম সাহেব রহিম সাহেবকে দেখেই বুজে নিতে চান যে এই লোক ‘আবুল টাইপের হাস্যকর’ কেউ। তখন করিম সাহেব রহিম সাহেবের সব আচরনকেই হাস্যকর ভাবে বর্ণনা করতে চাইবেন। এজন্যে রহিম সাহেবের যে কোন ঘটনা করিম সাহেব কিছু বাড়িয়ে বলবেন আবার কখনো কিছু কমিয়ে বা বাদ দিয়ে বর্ণনা করবেন। যাতে তার নিজের ধারনা অনুযায়ী রহিম সাহেবের পার্সনালিটিটা প্রকাশ পায়।

ধরা যাক একটা পিচ্ছিল উঠান পার হতে গিয়ে রহিম সাহেব পিছলে গেলেও সামলে নিয়ে পার হয়ে এলেন। করিব সাহেব এতে তৃপ্তি পাবেন না। এতে তিনি মশলা যোগ করবেন। সবাইকে বলে বেড়াবেন যে- ‘জানেন, রহিম সাহেব তো ওখানে চিৎ হই পরে বিশাল বোয়াল মাছ ধরে ফেলেছেন! কি আর বলবো, দু পা দুদিকে গিয়ে প্যান্ট ফরাত করে ছিঁড়ে উনার সয় সম্পত্ত্বি সব লটকে গেলো। হো: হো: হো:।” করিম সাহেব তার কল্পিত ঘটনাটাই বিশ্বাস করে বসে থাকবেন। এটা হলো ঘটনা যোগ করে উপলব্ধি করা।

আর যদি এমন হয় যে, রহিম সাহেব সত্যি সত্যিই পরে গিয়েছিলেন। কিন্তু ঐ উঠানে আরো দশ জন মানুষ পার হয়েছেন। এবং সবাই পিছলে আছাড় খেয়েছেন। এক্ষেত্রে করিম সাহেব বাকি দশ জনের ব্যপারটা পুরোপুরি বাদ দিয়ে দিবেন। বলবেন-‘এত জন পার হলো কারো কিছু হলো না। আর আমাদের রহিম সাব চিৎপটাঙ! হা: হা: হা:।’ এটা হলো পুরো বিষয়টাকে নিজের কল্পিত ডাইস্ দিয়ে কেটে ছেঁটে পছন্দ অনুযায়ি উপলব্ধি করা। যত টুকু মনে রাখা আরামদায়ক ততটুকুই মনে রাখা।

.

এই ধরনের লোক জন ব্যাক্তিগত বিশ্বাস, স্বার্থ দেখে আইন কানুন, বিধি নিষেধ, ধর্মীয় বিষয় গুলো ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের চেষ্টা করে। আগেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সেই অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ করে, মনের মত করে ব্যাখ্যা করার বিষয়টা প্রায়ই বিষফোঁড়ার মত হয়ে যায় বাকিদের জন্যে। জামাই বা বৌ যখন বাকি জন পরকিয়া করছে বলে ধরে নিবে, তখন সে হাঁসলে ভাববে ঐটার কথা মনে করে হাঁসছে, কাঁদলে ভাববে ঐ টা সামনে নাইতো, তাই কাঁদছে। প্রত্যেকটা ফোন কল, মেসেজের শব্দে কেঁপে কেঁপে উঠবে।

.

এই ভাবে মানুষের মাথায় যখন ছেলে-ধরার রুপক ছাপ বসে যায়, সেই ব্রেইন তখন তার চার পাশে সেই ছেলা ধরা খুঁজতে থাকে। ভুতের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে যেমন বাচ্চারা চাঁদের আলোয় ভেজা কলাপাতায় জ্বীন দেখে, তেমনই তারা একটু ভীন্ন আচরন করা যে কোন মানুষের মধ্যে ছেলেধরা দেখে।

.

শার্লক হোমস বা ফেলুদার মত গোয়েন্দা গল্পে একটা বিষয় বার বার বলা হয়- ‘আগেই সীদ্ধান্ত নিও না ওয়াটসন। শুরুতেই কাউকে অপরাধী ভেবে বস না। যত পার খালি মাথায় বেশি করে তথ্য নিতে থাকো। সব তথ্য জোড়া দিলে সত্যি ঘটানাটা এমনিতেই বের হয়ে আসবে।’

.

তবুও গড়পড়তায় বেশির ভাগ মানুষই আগে থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে থাকে। তাই এলো মেলো হিজিবিজি জিনিষের মাঝে এক জন কি খুঁজে পাচ্ছে সেটা দেখে তার মাথার ভেতরে কি বসে আছে কিছুটা অনুমান করা যায়। Rorschach তার Rorschach test বা inkblots test এর মাধ্যমে মানুষের মাথার ভেতরটা বুজার চেষ্টা করতেন। যা এখনো ব্যবহৃত হয়। কত গুলো কার্ডে বিভিন্ন রকমের কালির ছোপ দেখিয়ে সাবজেক্টের কাছে জানতে চাওয়া হয় সে কার্ডে কি দেখছে। রেকর্ড রেখে আবার দেখানো হয়। এর পর জানতে চাওয়া হয় তার কেন মনে হচ্ছে যে এটা দেখছে। এভাবে বেরিয়ে আসে সাবজেক্টের চরীত্র, চিন্তা, ইমোশান।

.

পুনশ্চ:

1. ‘আজ রবি বার’ নাটকে জাহিদ হাসান এমন কিছু কার্ড দেথে বলেছিলো ‘হিজিবিজি, হিজিবিজি’, ‘আরো বেশি হিজিবিজি’। একই কার্ড গুলো দেখানো হয়ে ছিলো টাক মাথার কাগজ কাপড় ছিড়তে থাকা সেই মানসিক রুগীটিকে। সে বলেছিলো কার্ডে ‘একটা মেয়ে নদীতে সেনান করতেছে’ এমন ছবি আছে। ‘ছি: ছি: মেয়েটার গায়ে কোন কাপড় নাই। এই মেয়ের লইজ্জা নাই!’

.

2. ছবিটি ইঙ্কব্লট টেষ্টের প্রথম কার্ডের। Rorschach সাহেব নিজের হাতে এগুলো এঁকেছিলেন।

.

#Afnan_Abdullah

09102019

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৪০

এমজেডএফ বলেছেন: জটিল মনস্তাত্বিক বিশ্লেষণ!

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: এই লেখা শান্ত মাথায় পড়তে হবে। তা না হলে কিছু বুঝবো না।

৩| ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫৭

মা.হাসান বলেছেন: নতুন বিষয়, ভালো লিখেছেন।

৪| ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ রাত ১:১৬

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.