নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মায়ের ভাষা থেকে জ্ঞানের ভাষা . . .

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:২৮

প্রায়ই শুনি, বেহেশ্তে পুরুষরা নিজ বৌয়ের সাথে পাবে ৭০ জন হুর পরী। শুনে খটকা লাগতো! জামাইকে কারো দিকে আড়চোখে তাকাতে দেখলেই বৌদের শান্ত চোখ জোড়া মেডুসার মত জ্বলে উঠে। সেই বৌটাই পরকালে ৭০ জনের সাথে জামাইকে ভাগ করে নিবে। তার পরও আবার বৌ মনে করবে যে সে বেহেশতে আছে!! কেমনে কি! হুর পরীর সাথে বেহেশতী হিসেবে তার জন্যওতো ৭০ টা হুর-জীন থাকার কথা। নাকি মেয়েরা জীন পরী বেশী ভয় পায় বলে তাদের জন্যে শুধুই এক স্বামী বরাদ্ধ। কিতাব ঘেঁটে দেখলাম সূরা বাকারার ২৫ নাম্বার আয়াতের একটা অংশ বাংলা করা হয়েছে এমন-‘এবং সেখানে (বেহেশতে) তাদের জন্যে থাকবে শুদ্ধচারিনী রমণীকূল।” খটকা রয়ে গেলে দেখলাম ইংরেজী অনুবাদ। সেখানে অনুবাদে এমনটা বলা ‘-and they have therein companions pure। অর্থাৎ শব্দটাতে মূলত লীঙ্গ উল্লেখই করা হয়নি। কোথাও স্বর্গের সঙ্গী বলতে Spouse ব্যাবহার করা হয়েছে। তবুও বাংলা অনুবাদ করতে গিয়ে সঙ্গী হিসেবে শুধু রমনীর চিন্তাটাই কেন যেন অনুবাদকগনের মাথায় এসেছে। আর এতে কারো কারো কাছে স্বর্গ হয়ে উঠেছে অন্যরকম অকর্ষনীয়। অর্থ, ভাব, যাই হোক বিষয় হচ্ছে দু ভাষার অনুবাদক আরবী মূল ভাষা থেকে দু রকম ভাষান্তর করেছেন। ভাষা সব কিছুকেই বোধহয় খটমট করে তোলে। ব্রিটিশ আইনের বাংলা বুজতে গেলে যেমন জান কোরবান হওয়ার দশা হয়।
.
একটি বহুজাতিক এনার্জি ড্রিঙ্কস্ কোম্পানী অন্য দেশের মত আরব দেশেও ব্যানার এ্যাড করেছিলো এমন-‘প্রথম ছবিতে এক জন পানি-শূন্যাতায় ভোগা দূর্বল শুকনো মানুষ, দ্বিতীয় ছবিতে মানুষটি তাদের এনার্জি ড্রিঙ্কস খেলো আর তৃতীয় ছবিতে সজীব এবং স্বাস্থবান হয়ে গেলো।’ সব দেশে তা চললেও আরবের জুব্বাপরা জনগন ঐ পানিয়ের তৃসীমানায়ও ঘেঁসলো না। পরে দেখা গেলো এ্যারাবীয়ানরা পড়াশোনা করে ডান দিক থেকে। তাই তারা এ্যাডটাতে দেখে যে –‘এক জন জোয়ান তাগড়া মানুষ এ্যানার্জি ড্রিঙ্কসটি খেয়ে তৃতিয় ছবিতে (যেটা মূলত প্রথম ছবি) রোগা দূর্বল হয়ে পড়ছে।’ কে এই বস্তু খেয়ে সেধে অসুস্থ হবে!
কে. এফ. সি ‘ফিঙ্গার লিকিং গুড’ এর চায়নিজ অনুবাদের মানে দাঁড়িয়েছিলো-‘ইট ইউর ফিঙ্গার অফ্’! মানে ‘আপনার আঙ্গুল চাবাই খান’ জাতিয় কিছু। পাবলিকের বিতৃষ্না দূর করতে দ্রুতই ভাষা ঠিক করতে হয়েছিলো তাদের।
পেপসি’র ‘কাম এ্যালাইভ উইথ পেপসি’র চাইনিজ অনুবাদের মানে হয়েগিয়েছিলো –‘পেপসি তোমার মরা আত্মিয়স্বজন সব ফেরত নিয়ে আসবে।’ ফলাফল ধ্বস্। কারন মরা আত্মিয়ের জন্যে যতই কান্নাকাটি করুক কেউ’ই জম্বী হিসেবে তাদের ফেরত চাইবে না। ১৯৯৯ সালের দিকে এইচ.এস.বি.সি’র স্লোগান ছিলো ‘এ্যাসিউম নাথিঙ’ যার মানে দাঁড়ায় –‘(অর্থায়ন) কোন ব্যাপারই না’। তা কিছু দেশের মানুষ বুজলো ‘ডু নাথিঙ’! ব্যাস। প্রায় ১০ মিলিয়ন ডলার খরচ হয়ে গেলো কোম্পানীর স্লোগানটা ঠিক করে বুজাতে।
ফেসবুকে এক পাঠক একটা অনুবাদ বইয়ের রিভিউতে লিখেছিলেন যে অনুবাদক ‘Don’t talk like asshole’ এর বাংলানুবাদ করেছেন- ‘পাছার-ফুটা’র মত কথা বলো না!’
.
মূল কথা যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো, যে জ্ঞান যে ভাষাভাষী জ্ঞানী আবিষ্কার করেন, তিনি তাঁর ভাষাতেই তা সবচেয়ে ভালো এবং নিখুঁদ বর্ণনা করতে পারেন। তাই মনেহয় ঐ জ্ঞানটা যদি অন্য ভাষার কেউ, ধরা যাক আমি আত্মস্থ করতে চাই, তখন আমার জন্যে সর্বউত্তম হবে আবিষ্কারক জ্ঞানী মশাইয়ের ভাষাটা আত্মস্থ করা। দ্বিতিয় পথ হলো ঐ জ্ঞানী মহামানবটি যদি আমার ভাষায় তার জ্ঞানের বানীটি অনুবাদ করে দেন। এক্ষেত্রে তাঁকে আমার ভাষাটাও ভালো জানতে হবে। না হলে এমন কারো দারস্থ হতে হবে যিনি ঐ জ্ঞানটি ভালো জেনে আমার ভাষায় অনুবাদ করে দিবেন। অথবা এমন কোন ভাষায় অনুবাদ করলেন যা আমি ও জানি।
.
বর্তমানে আমাদের দেশে আমরা চলার মত জ্ঞান বিজ্ঞান আত্মস্থ করছি সর্ব শেষ পন্থায়। অর্থাৎ, যুগে যুগে দূনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে আবিষ্কৃত সমস্ত জ্ঞান আমরা পাচ্ছি ইংরেজীতে অনুদিত করে। মেডিকেল, এ্যাকাউন্টিঙ, ফাইন্যান্স, ইঞ্জিনিয়ারিঙ সবই ইংরেজীতে। সর্বস্তরে বাংলা প্রচলন করতে গেলে এসবই বাংলায় অনুবাদ করতে হবে। যেহেতু এসব জ্ঞান গুলোর সব বাংলা ভাষাভাষীদের আবিষ্কৃত নয়। তাই অনুবাদকের বিষয় এবং ভাষাগত দক্ষতা দুটাই তুখোড় ভাবে থাকা লাগবে তখন। পরকালের মনের শুদ্ধ সঙ্গীকে ‘বিশুদ্ধ-রমনীকূল’ বানিয়ে ফেললেও ইহলোকে তার প্রভাব পড়ছেনা। কিন্তু মেডিকেল বইতে চোখের ‘পিউপিলে’র বাংলা করতে গিয়ে ‘ছাত্র’ সমাজকে টেনে আনলে জন সমাজের খবর হয়ে যাবে।
.
চীন জাপানের মানুষ অবশ্যই ভীন দেশী ভাষায় লিখিত জ্ঞান ভান্ডার নিজ ভাষায় ঠিক ভাবে অনুবাদ করতে পারছে। তাই তারা সকল জ্ঞান বিজ্ঞান দূর্দান্ত ভাবে প্রয়োগও করতে পারছে। এত বছরে এত এত চেষ্টা করেও এখনো আমরা হিন্দী সিনেমা গুলোই ঠিক মতো বাংলায় অনুবাদ করতে পারছিনা। থ্রি ইডিয়টসের আমির খানের ডায়লগ গুলো শাকিব খানের মুখ দিয়ে বের করতে গিয়ে পুর জিনিষটারই দফারফা করে ফেলছি। সব কিছু এই ভাবে এই মানের বাংলা করে ফেললে অবস্থা কি দাঁড়াবে!! সর্ব স্তরে সর্ব বিষয়ে সর্ব জ্ঞান বাংলায় প্রচলন করে তার চর্চা করার জন্যে (ফেব্রুয়ারী মাসে যা ব্যাপক হারে শুনা যায়) আসলে আমরা ঠিক কতটা তৈরী!
.
অসীম সৌভাগ্য যে পড়াশোনার বেসিকটা, অন্তত এইচ. এস. সি পর্যন্ত নিজ ভাষায় পড়া যাচ্ছে। না হলে প্রথম বুলি শিখতাম বাংলায়, পড়াশোনা শুরু করতাম উর্দূতে, এর পর উচ্চতর বিদ্যার্জন করতাম ইংরেজীতে। ধর্ম শিক্ষা আরবীতে, হীন্দু হলে সংস্কৃতে। বিনোদীত হতাম হিন্দী সিনেমায়। আর গালিগালাজ করতাম আঞ্চলিক ভাষায়। জীবন চলে যেত ভাষা শিখতে শিখতেই।
.
মহান ২১ ফেব্রুয়ারীর বিশাল ত্যাগের বদৌলতে এসব থেকে শুধু উর্দূটাই বাদ দেয়া সম্ভব হয়েছে। বাকি সবই এখনো কঠিন বাস্তব।
.
আফনান আব্দুল্লাহ্
০২২১২০১৮

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১১:২৮

রাজীব নুর বলেছেন: ''ধান ভানতে শিবের গীত'' শুরু করে দিয়েছেন।

২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:১৭

আফনান আব্দুল্লাহ্ বলেছেন: গীত গাইতে গাইতে ধান ভানাটা আনন্দদায়ক। ;)

৩| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভাষাকে শ্রদ্ধা করি।

৪| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৬

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনুবাদের মাধ্যমে জানার চেয়ে ভাষা শিখে জানাটা বেশী কার্যকর। কারণ অনেক ক্ষেত্রে ১০০% অনুবাদ করা যায় না। কাব্যের ক্ষেত্রে এটা আরও বেশী প্রযোজ্য। এই কারণে আরবি না জানার কারণে অন্য ভাষার মুসলমান/ অমুসলমান অনেক সময় কোরআনের বাণীর প্রকৃত অর্থ বা বার্তা ধরতে পারে না। তখন না বুঝেই ইসলামের সমালোচনা করে। প্রাথমিক শিক্ষা আমার মতে অবশ্যই মাতৃভাষাতে হওয়া উচিত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.