নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিচার ছাড়া হত‌্যায় কেমন বিচার হয়!

২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:১৫

বছরখা‌নেক ‌আ‌গে আগে এক ভদ্র মহিলা গনপিটুনিতে মারা গেলেন। তখন তার পরিচয় দ্রুত বের না হলে, দু বাচ্চার মা এটা না জানলে মানুষ জন কি ঠিক এ রকম হাহাকার করতো! মানে ‘গনপিটুনি’ জাতিয় ভয়ঙ্কর বিষাক্ত বিষয়টা নিয়ে কি কারো সত্যিকার অর্থে আপত্তি আছে! মনে হচ্ছে না যে আছে। মনে হচ্ছে যেন আপত্তিটা শুধু ভুল করে ‘মা’ কে মেরে ফেললো কেন এটা নিয়ে।

এইযে চোখ কান বুজে বিচার করে ফেলা। সবাই ই নিজে নিজেই তদন্তকারি, বিচারক এবং জল্লাদের ভূমিকা একই সময়ে পালন করা শুরু করলো! এভাবে সিস্টেমের বাইরে গন হারে চলে যাওয়া, এর চর্চা কিভাবে চলছে, কিভাবে বন্ধ হবে তা নিয়ে আলোচনা নাই। গুজবে কান দিবেন না’ ‘কান নিয়েছে চিলে বলে দৌঁড়াবেন না’ এসব প্রচারনা মূল সমস্যাটা যথেষ্ট হালকা করে আড়াল করে ফেলছে। যেন ব্যপারটা গুজব না হয়ে সত্যি হলে, দেশে সত্যিকারে কিডন্যাপারের উৎপাত থাকলে এমন দুয়েক জনকে সন্দেহের বশে পিটিয়ে মারাটা অতটা বেখাপ্পা লাগতো না এসব প্রচারকদের কাছে।
.
আরে কে মরলো সেটাতো পরে। আগে তো হচ্ছে হঠাৎ এই বিনা উস্কানির বর্বতা তারা কোন সাহসে দেখাচ্ছে তা বের করা। কিছু একটা মনে হলো অমনি পিটানি দেয়ার চর্চায় যে কেউইতো মরতে পারে!
.
মূল সমস্যাটা হলো আমরা সর্বস্তরে সবাই মিলে প্রতিষ্ঠিত পুর বিচার ব্যবস্থাটাকে পাশ কাটিয়ে চলতে অভ্যস্ত হচ্ছি। দীর্ঘ দিন ধরে এই চর্চাই আমরা করে আসছি। হঠাৎ দুয়েকটা বেশি প্রচার হয়ে গেলে নড়ে চড়ে বসছি। যা কিছু যথন স্ক্রীন হয় মানে দেখা যায় তখনই শুধু সেটা নিয়ে হইচই করছি।
.
স্রেফ কত গুলো খবর আর গন মানুষের প্রতিক্রিয়া একটার পর একটা রেখে সামগ্রিক আচরন কিছুটা আঁচ করা যায় কিনা দেখি:
খবর: মা গিয়েছিলেন বাড্ডায় সন্তানের ভর্তির খোঁজ নিতে, ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মারা হলো(১. কালের কন্ঠ; ২০ জুলাই ২০১৯)। মেয়েকে দেখতে গিয়ে গণপিটুনিতে মারা গেলেন বাবা। (২. যমুনা টিভি; ২১ জুলাই ২০১৯)।

ভিকটিম নিরীহ প্রমাণিত হওয়ার পরে মানুষের তীব্র ক্ষোভের ভাষা নিয়েই এতক্ষন বলছিলাম।
.
খবর: Sabbir Hossain Nayan alias Nayan Bond, one of the two attackers who hacked Barguna youth Rifat Sharif to death in front of his wife in broad daylight, was killed in “gunfight” with law enforcers early today, police said. (The Daily Star, July 02, 2019. Link: 0৪)
.
লাইভ কুপিয়ে খুন করার পরে জৈনক নয়ন বন্ডকে পুলিশ এক্সিকিউট করলো। যদিও একই ধরনের বাকি গুন্ডা পান্ডা বিভিন্ন এলাকায় একই ভাবে টিকে আছে বলে খবর আসছে। কথা হলো, সবাই খুনের বদলা খুন কে বিরাট বিচার হয়েছে বলে ধরে দারুন উল্লাস করলো। আইন আদালত উকিল মোক্তার কিচ্ছু দরকার নাই। ‘ভিডুতে’ দেখা গেছে সে কোপাইছে। আবার ‘ছবিতে’ দেখা গেছে সে গুল্লি খাইছে। ব্যাস! পুলিশে মারুক আর জেলারের জল্লাদে মারুক দেখার বিষয় না কারো। সবাই ধরে নিলো তার মরাটাই বিচার। মনে করলো আইন আদালত হলে ফাঁক ফোকরে বের হয়ে যেতো। মানে মূল প্রসেসে ভরসা করতে রাজি না কেউ।
.
খবর: At least five of the 13 convicts, who were awarded death sentence and life term in Biswajit Das murder case, are fugitives in police record for the last five years, although they are active in social media or are seen in some areas in the capital, sources said. (The Daily Star, December 09, 2017. Link: 0৫)
.
একই ভাবে ভিডিও ক্যামেরার সামনে বিশ্বজিৎরে খুন করে মূল ধারায় বিচার পাওয়া আসামীরা এখন খবরের পাতারই বাইরে আছে। আর পুর প্রক্রিয়ার সর্বউচ্চ জায়গা থেকে প্রমাণিত অপরাধী মাফ পাওয়ার নজির গড়ছে।
.
খবর: MURDERS IN LAXMIPUR, President pardons a criminal twice (The Daily Star, February 27, 2012. Link: 06)
The president has granted mercy to convicted killer AHM Biplob for the second time in seven months. This time, Biplob's life sentence in each of two murder cases has been reduced to a 10-year imprisonment.
.
এই সব খবরে মানুষ মনে করছে প্রচলিত বিচারে এভাবেই অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। এখানে সিস্টেমকে বাইপাস করলেই পাশ। তাই নিরাপত্তা বাহিনীর কাজে তারা উচ্ছ্বসীত হয়।
.
খবর: নয়ন বন্ডের মৃত্যুতে দেশে বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরণ (http://www.somoynews.tv, July 2, 2019, Link: 0৭)
.
এখন মিন্নি ধরা খাওয়ার পর সবাই হতচকিত। পুর ঘটনা সবার জন্যে বুজা কঠিন। মূল আসামীতো গল্পের শুরুতেই মৃত। যাদের বিচারে ভরসা করে মিষ্টি বিতরন করলো তাদেরকে আবার সন্দেহ করছে যে তারাই ফাঁসাচ্ছেনা তো কাউকে! এই মিষ্টিমুখের জনতাই জানে যে দেশের ঘুষ, দূর্নিতির তলানি কোথায় ঠেকে আছে। দূর্নীতিতে বারে বারে চ্যাম্প‌িয়ন দেশটার সব চেয়ে দূর্নীতিগ্রস্থ অংশটার উপর পুর বিচার ব্যবস্থার দায়িত্ত্ব ছেড়ে দিতে চাচ্ছে সবাই!
.
খবর: ‘Corruption highest in law enforcement’ Finds TIB survey on graft in service-oriented sectors (The Daily Star, August 31, 2018. Link: 0৮)
.
সিস্টেম বাইপাসের পাশ প্রথমে পায় এলিট ফোর্স, এর পর কিছু এলিট গোয়েন্দা দল, এখন সাধারন থানা পুলিশও এলিট শ্রেনীতে যোগ দিচ্ছে। সবাই যখন ভাবতে লাগলো দেশের ল এন্ড অর্ডার এভাবেই শক্ত ভাবে টিকে থাকবে তখনি শীতলক্ষায় সাতটা লাশ ভেসে উঠে।
আর মূল সিস্টেমে, সিস্টেম বাইপাস করাদের বিচার শুরু হয়।
.
খবর: On August 22 last year, the HC upheld death penalty of 15 convicted persons, including three former top Rab officials and expelled Awami League leader Nur Hossain, for their involvement in conspiracy, abduction and killing of seven Narayanganj men in 2014. (The Daily Star, November 15, 2018. Link: 0৮)

তবুও বিচারের মূল ধারা ফেলে বাইপাসে ভরসা কমে না মানুষের। দাবী উঠতে থাকে ‘ওমুক কেও ফেল, তমুক অপরাধীকেও ফেলে দাও ওভাবে’। কিন্তু অপরাধী প্রমান করার স্বচ্ছ পথের দিকে নজর নেই কারো। আবার যখন তাদের প্রিয় পথে এক্সিকিউশানের চাক্ষুস অডিও ভিডিও আসে কেন যেন তারাই আবার ফুঁসে উঠে সবাই। ফেসবুক ওয়াল ভরে যায় ‘আব্বু তুমি কানতেছো যে….’ এমন চিকায়…
.
খবর: Akram 'Killing': Ominous for human rights. Human Rights activists stunned by audio clips (The Daily Star, June 02, 2018. Link: 0৯)

.
আর এভাবেই ল এন্ড অর্ডার প্রতিষ্ঠীত করার আশায় বুঁদ একটা জাতি দেখতে থাকলো কিভাবে তাদের স্বাভাবিক জীবন কোন যুদ্ধ বিগ্রহ ছাড়াই কেমন বিভীষিকাময় হয়ে উঠছে। তারা সবাই বিচারক, তদন্তকারী এবং এক্সিকিউশানকারী জল্লাদ হয়ে উঠছে মূহুর্তেই। শুধু একেক দিন একেক জনের একেক অপরাধ মাথায় নিয়ে মরার অপেক্ষা। কোন দিন কি বুজবে, যে বা যারা আইন কানুনের ফাঁক ফোঁকরে বের হয়ে যাচ্ছে ক্ষমতার ধাক্কায় তারা সব সময়ই এই সব বাইপাস বিচার গুলোকেও বাইপাস করে ধরা ছোঁয়ার বাইরেই থাকতে পারে।

.
নিজে গুলি খেয়ে, কোপ খেয়ে, গাড়ীতে পিষে, বা গনপিটুনিতে মরার আগে হয়তো সবারই মনে হবে যে দেশটার ল এন্ড অর্ডার মানার শক্ত মনোবল থাকা উচিৎ ছিলো। দু্র্নীতি যখন রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়ায় তখন মূল সিস্টেম থেকে বেরোনো বেকুবি। ব্যাক্তি বা কিছু দল কেন্দ্রিক ব্যাস্থার দিকে ঝুঁকা আরো ভয়ঙ্কর ঝুঁকি পূর্ণ। মরার আগে হয়তো সবার বোধে আসবে যে অনৈতিকতার রাজ্যে নিয়ম তান্ত্রিকতাটাই সবচাইতে বড় ভরসার নাম ছিলো। মানুষ নি‌জে করাপ্টেড হয়, নিয়ম নিজ থে‌কে করাপ্টেড হয় না।
.
#Afnan_Abdullah
07232019

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৪৮

রাজীব নুর বলেছেন: ৭০/৮০ বা ৯০ এর দশকে আমাদের দেশের মানুষ এত নিষ্ঠুর ছিলো না।
চোখ বন্ধ করে বিনা দ্বিধায় বলা যায় আমাদের দেশের মানুষ অনেক অমানবিক এবং হৃদয়হীন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.