নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোলাপ-জিজ্ঞাসা

১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৩০

গোলাপ-ও যে জটিলতার কারণ হতে পারে, সেটি হয়তো ঘটনাটি এইভাবে না ঘটলে বোঝাটা একটু মুস্কিলই হতো। বন্ধুর জন্মদিনে ভীষণ ভালোবেসে দেয়া হয়েছিল গুচ্ছগোলাপ। মানে, কোনো মানুষের যদি কেবল একজনই মাত্র বন্ধু থাকে, এবং সেই যদি হয় প্রাণের দোসর, তবে সেই বন্ধুর জন্মদিনে মানুষ যতখানি আবেগ থরো থরো হয়ে গোলাপগুচ্ছ দেয়, আমাদের গল্পের এই গুচ্ছগোলাপেও তারচেয়ে কম আবেগ ছিল না। বরং বলা চলে, এই গোলাপে আবেগ একটু বেশিই ছিল।





কারণ এই গোলাপ বন্ধুর জন্মদিনে দেয়া যেকোনো গোলাপ নয়। এই গোলাপগুলো জানতো যে, এক বন্ধুর কাছ থেকে আরেক বন্ধুর কাছে তারা বিদায়ের রঙ হয়ে যাচ্ছে।



জন্মদিনেই বিদায়গোলাপ? হ্যাঁ, একই গোলাপ একই যাত্রায় দুই দায়িত্ব নিয়েছিল। কারণ, আমাদের গল্পের এই দুই বন্ধুর মধ্যে ঘোর শত্রু হয়ে ঢুকেছিল প্রেম। এইখানে বরং শব্দটা আরেকটু পাল্টে 'প্রেম'-এর জায়গায় যদি বলা হয় 'প্রণয়' তাহলে বোধহয় ঘটনাটার আরো খুব কাছাকাছি যাওয়া যেতে পারে।



মানে, দুই বন্ধুর মধ্যে প্রেম তো ছিলই। ভীষণ প্রেম। যার জীবনে একজনই মাত্র বন্ধু, ভীষণ বন্ধু, সেই বন্ধুর প্রতি প্রেম নিশ্চয়ই কম কিছু থাকে না। কিন্তু গল্পের এই দুই বন্ধুর প্রেমের মাঝে এসে ঢুকে পড়লো প্রণয়। সেই একই প্রণয়ে যদি তারা দু'টি নারী ও পুরুষ একই ছন্দে নাচতো, তবে হয়তো কোনো বিপত্তিই ছিল না। তবে হয়তো জন্মই হতো না এই গোলাপজিজ্ঞাসার।



কিন্তু দুই বন্ধুর মধ্যে যখন একজন প্রণয়ার্থে প্রেমে পড়ে যায় এবং আরেকজন পড়ে না তখন সেখানে যে দুঃখের জন্ম হয়, সেটি হয়তো কেবল অনুমান করতে পারে প্রিয় বন্ধুকে বিদায় জানাতে যাওয়া গুচ্ছ গোলাপ, আর কেউ নয়।



বন্ধুর জন্মদিনে যে গোলাপ যাচ্ছিলো শুভেচ্ছা জানাতে, সেই একই গোলাপ আসলে ছিল বিদায়েরও বার্তাবাহক। কারণ পরষ্পরের মধ্যে প্রেম আছে তুমুল, অথচ প্রণয় আছে শুধু একজনের, অন্যজনের নয়। বন্ধুর প্রতি প্রণয় না জেগে, বরং উল্টো, অন্য আরেকজনের প্রতি নারীটির জেগেছিল প্রণয়। সেই প্রণয়ও জীবনে হুড়মুড় করে ঢুকে যাওয়া তুমুল প্রণয়।



এমতাবস্থায় সম্পর্কে জটিলতা তৈরি হয়, হতে থাকে। জটিলতা খোলার চেষ্টা করতে গিয়ে তা আরো বাড়ে। এদেরও হয়েছিল তাই।



ফলে, সব দেখে শুনে একবন্ধু ঠিক করে নিল, ওর এবারের জন্মদিনটাই হোক আমাদের দুইজনের একসঙ্গে উদযাপন করা শেষ জন্মদিন।





বিদায়ী সেই জন্মদিনে একগুচ্ছ গোলাপ হাতে একজনের মুখোমুখি হয় আরেকজন। তারা গল্প করে। যেনো জীবন তাদের আলাদা হয়ে যাচ্ছে না, যেনো তারা নির্বান্ধব হয়ে যাচ্ছে না-- এইরকম ভাবে তারা হাসে, পরস্পরের দিকে চায়।



তারপর সেই জন্মদিনটা পাড় হলে তাদের কক্ষপথ বিভক্ত হয়। প্রণয়ী হারানোর বেদনা মনে নিয়ে নিজের কক্ষপথে শীতের ঘন কুয়াশায় রাস্তায় উদ্দেশ্যহীন একা একা হাঁটে একজন। আরেকজন, বন্ধু হারানোর যাতনায় নিজের মধ্যে নিজে নিঃশেষ হয়।





তারা দু’জনেই যাপন করে একই ব্যথা; একই শোক। কিন্তু তারা আর কেউ কারো দোসর নয়। আলাদা আলাদা কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে তারা কাঁদে। তাদের মধ্যে কোনো যোগাযোগ হয় না আর।



এইরকমই যোগাযোগহীন চলছিল। কিন্তু কয়েকমাস পর জন্মদিনের সেই ফুলগ্রহীতা হঠাতই একদিন ফুলদাতাকে ফোন দেয়, দেখা করতে বলে। মনের মধ্যে ঝড় গোপন রেখে একপক্ষ আরেক পক্ষের সাথে দেখা করতে যায়।



কিন্তু দেখা হবার পর তাদের মধ্যে কোনো কুশল বিনিময় হয় না, হাসি বিনিময় হয় না। জন্মদিনে উপহার পাওয়া সেই গোলাপ গুচ্ছ-- শুকিয়ে মলিন হয়ে যা এখন প্রায় কাগজের ফুল-- গোলাপদাতার দিকে বাড়িয়ে ধরে একদার গোলাপগ্রহীতা।





হাত বাড়িয়ে বলে, নেন, এইগুলা ফেরত নেন। আর আমি রাখতে পারছি না।





বাড়ানো গোলাপের দিকে চেয়ে, বিগত বন্ধুর দিকে চেয়ে আরেক বন্ধুর কেমন যেনো লাগে। মনে হয়, এই দৃশ্য বাস্তবে ঘটছে না। যেনো, স্বপ্নে এসে এই শুকনো গোলাপ ভয় দেখাচ্ছে কেবল।





কিন্তু দৃশ্যটা বাস্তব। কারণ তাদের চারপাশ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে নগরের ব্যাস্ত কোলাহল। বাড়ানো শুকনো গোলাপের দিকেও দৃষ্টি যাচ্ছে আশপাশের কারো কারো।





এই বাস্তব দৃশ্যকে এড়িয়ে আসার জন্য একদা গোলাপ দিয়েছিল যে বন্ধু, সে একটু রুঢ় হয়ে ওঠে। ঝাঁঝালো স্বরে সেই গোলাপ প্রত্যাখান করে দৃশ্য থেকে পালিয়ে আসে সে।



কিন্তু দৃশ্য তাকে ছাড়ে না। তার পিছু পিছু আসে শুকনো গোলাপ। খাবার টেবিলে, পড়ার টেবিলে, এই গোলাপ বসে থাকে। এভাবেই যায় বহু দিন। কত দিন? তিনবছর? কী জানি হবে হয়তো।





তারপর বছর তিনেক পরে, পুরনো চেনা একজনের সঙ্গে, একদিন আবারো সেই গোলাপের প্রসঙ্গ ওঠে।





প্রসঙ্গটা উঠলে চেনাজন বলে, তুমি কেন উনারে ১১টা গোলাপ দিসিলা?





বন্ধুহারানোজন বলে, ১১টা গোলাপ দিসিলাম! কী জানি, সে-টা তো জানি না!





_বলো কী! তুমি না জেনেই ১১টা গোলাপ দিসো! ওহ নো! এইটা কেমনে হয়!





_কেমনে হয় মানে! দোকান থেকে ফুল কিনে তোড়া বানানোর সময় যে কয়টা ফুল লাগসে সেই কয়টা ফুলই দিসি। আমি তো আর গুণে গুণে ফুল দিই নাই।





_ওহ হো! তাইলে তো বিরাট কাকতাল হইসে। অথচ তোমার এই ১১টা গোলাপের জন্য কতো কিছু হইলো! আসলে ইলেভেন রোজেস-এর তো আবার আরেকটা মানে আছে। তাই, তোমার দেয়া ১১টা গোলাপ পেয়ে উনি ভাবছিলেন, মে বি দেয়ার ইজ হোপ; মে বি অ্যা নিউ বিগিনিং ইজ জাস্ট অ্যাবাউট টু স্টার্ট এগেইন।





ফুলদাতাবন্ধু বোকা হয়ে চেয়ে থাকে।





চেনাজন আবার বলে, ওফ! ইউ শুড হ্যাভ নোন বিফোর ইউ গিভিং হিম দ্যাট ইলেভেন রোজেস। বিকজ ইট হ্যাজ অ্যা ভেরি স্পেশাল মিনিং।





এইটুকু বলে চেনাজন থামে। তারপর বলে, আচ্ছা যা হবার তা তো হয়েই গেসে। তোমরা দুইজনেই আসলে কাকতালে পড়ছিলা। বাট অফকোর্স, নাও ইউ শুড নো দি মিনিং অফ ইলেভেন রোজেস। সো, তুমি নেটে সার্চ দাও। দিয়ে দেখো, হোয়াট ইজ দি মিনিং অফ ইলেভেন রোজেস?





“হোয়াট ইজ দি মিনিং অফ ইলেভেন রেড রোজেস” লিখে ফুলদাতা বন্ধু নেটে সার্চ দেয়। গুগল তাকে একসঙ্গে অনেক ইনফরমেশন দেয়; অনেক তথ্য শেখায় গোলাপের নানান সংখ্যার গূঢ়ার্থ নিয়ে। এবং গুগল তাকে জানায় যে, কেউ যদি ১১টা গোলাপ কাউকে দেয়, তাহলে এর অর্থ দাঁড়ায়, “ইউ আর মাই ট্রেজারড ওয়ান, দি ওয়ান আই লাভ মোস্ট ইন মাই লাইফ।”





ল্যাপটপের স্ক্রিনে থাকা ইলেভেন রোজেস-এর মিনিং-এর দিকে বন্ধুটি তাকিয়ে থাকে। শুধু তাকিয়ে থাকাই। সে কিছুই দেখে না। তার মনের মধ্যে আবারও অতর্কিতে জেগে ওঠে একটা ঝড়। সে বারবার ভাবে স্ক্রিনে দেখা শব্দগুচ্ছ।





‘ট্রেজার্ড ওয়ান’!





সে কি ছিল না অমূল্য রত্ন আমার! একজনই মাত্র বন্ধু যার, যেই কি-না ছিল প্রাণের দোসর, সে কি ছিল না ট্রেজার্ড ওয়ান!





কিন্তু আমাদের গল্পে গুগল সার্চে উঠে আসা ইলেভেন রোজেস তো বন্ধুর কথা বলছে না। বলছে, প্রণয়ের কথা। ফলে, প্রণয়ের কাছে প্রেম ম্লান হয়ে যায়। প্রণয়ের কাছে পরাস্ত হয়ে শুকনো ও বিবর্ণ হয়ে ফিরে আসে বন্ধুর দেয়া লাল গোলাপ।





১০.০৯.১৪

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৮:০৭

ভিটামিন সি বলেছেন: Jotil Patch. Buzi na re vai...

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৫

আফরোজা সোমা বলেছেন: হা হা হা....

ভাই, গল্পরে জটিলতা কোনোদিনই জীবনের জটিলতার চেয়ে বেশি হতে পারে বলে আমার মনে হয় না।

সে যাই হোক। আপনি যে লেখাটি পড়েছেন এবং মতামত জানিয়েছেন এজন্য অনেক কৃতজ্ঞতা।

ভালো থাকবেন।

২| ১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৯

মামুন রশিদ বলেছেন: ইলেভেন রেড রোজেস এর অর্থ তাহলে প্রণয়ের আহবান!

গল্পটা আরও বিস্তৃত প্লটে হতে পারত, যেখানে প্রেম প্রণয়ের কাছে হেরে যায় । সব মিলিয়ে আপনার গল্প লেখার হাত চমৎকার ।

১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৪ ভোর ৪:৪৭

আফরোজা সোমা বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ, মামুন রশিদ।

ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.