নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা

নরসুন্দা নদের হাওয়া

আফরোজা সোমা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গন্ধরাজ

০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৯

তারা যাচ্ছে বৈকুণ্ঠপুর। বৈকুণ্ঠপুর; একটা গ্রাম। রোদের আভায় সেই গ্রাম সোনার কানপাশার মতন ঝিকমিক করে। বর্ষায় সেই ‘পুর’ এমনই অবর্ণনীয় সুন্দর যেনো তা রূপকথার মায়াপুরী।

মায়াপুর-ই তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য। শীতে বৈকুণ্ঠপুরে ফোটে গন্ধরাজ ফুল। সেই ফুলের সুগন্ধে পাতালপুরে মাতাল হয় সর্পরাজ। আর ভূপৃষ্ঠে, ভোরবেলায়, ঘন কুয়াশার আবছা আড়ালে নিজেকে মেলে ধরা গন্ধরাজের দিকে তাকিয়ে মাতা-ধরিত্রীর বন্দনায় নত হয় বৈকুণ্ঠপুরের অশিতীপরেরা।

বৈকুণ্ঠপুর এক গ্রাম। তরুণীর দুই স্তনের মাঝখানে একটা লাল তিল দেখতে যেমন আদুরে, তেমনি আদুরে আর মায়াবী হয়ে পাহাড়ের খাঁজে-খাঁজে গড়ে উঠেছে বৈকুণ্ঠপুর। এই গাঁয়ে ছোটো-ছোটো ঘর। ঘরের পাশে গাছের মাথায় মেঘ খেলা করে। দূর থেকে এই গ্রাম দৃশ্যমান নয়। এই গ্রাম মেঘে লুকনো। দূরের লোকের চোখে এই গ্রাম ধরা দেয় না। বৈকুণ্ঠপুরকে দেখতে গেলে নিকটে যেতে হয়। বৈকুণ্ঠপুরকে পেতে গেলে নিকটে যেতে হয়; ততটাই নিকটে যেতে হয় যতখানি নিকটস্থ না হলে দেখা যায় না তরুণীর বুকের কোমল লাল তিল।

বৈকুণ্ঠপুর ওদের কাছে একটা লাল তিল; মায়াবী। অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ সেই লাল তিল ঘিরে। এই লাল তিলের পাদদেশ দিয়ে বয়ে গেছে এক নদী। খরস্রোতা। নাম তার দুধরাজ। সারাক্ষণ নদীর বয়ে চলার শব্দ শোনা যায়। নদীর দিকে নিবিড়ভাবে কানপাতলে শোনা যায়, এইখানে নদীর পাড়ে বসে বয়ে চলা জলস্রোতের সঙ্গে নিরলে ঈশ্বর নামে এক পাগল করছেন আলাপ।

সেই গ্রামে শীতকালে কুয়াশার মধ্যে মাখামাখি হয়ে থাকা গন্ধরাজ ফুল দেখবে বলে তারা বেরিয়েছে। গন্ধরাজ কেবলি বৈকুণ্ঠপুরে ফোটে। রাজ্যের আর কোথাও নয়। ওরা তিন বন্ধু। দূরের নগর থেকে এদের দুইজন এসেছে জীবনে-না-দেখেও-চিরচেনা মোহনীয় গন্ধরাজের টানে।

এদের একজন ছিপছিপে তরুনী। তার গায়ে লাল পুলওভার। মাথায় লাল টুপি। আরেকজন ফর্সা তরুণ। লাউয়ের কচি ডগার মতন লকলকে তার শরীর। ওর মাথায় একটা কালো মাঙ্কি ক্যাপ। গায়ে নেভি ব্লু জ্যাকেট। দলের তৃতীয়জন সুঠামদেহী যুবা। নগর থেকে সে ফিরছে বাড়ি। ওর গলায় একটা হলুদ মাফলার। মাফলারটা তাকে দিয়েছিল লাল তিলের মতন মায়াবী গ্রামের তরুনী, মাওয়া।

মাওয়া আর হলুদ মাফলার পড়া যুবক একই সঙ্গে বেড়ে উঠেছে প্রেমে ও ঝগড়ায়। কোনো এক ঝগড়ার পর প্রেমের নিদর্শন হিসেবে মাওয়া তাকে দিয়েছিল নিজের হাতে বোনা ওলের এই হলুদ মাফলার। হলুদ মাফলারের গায়ে নানান রঙের সুঁতোয় নকশা করে আঁকা এক গ্রাম। পাহারের ভাঁজে ভাঁজে আঁকা সেই গ্রামটা দেখতে লাগে যেনো ঠিক বৈকুণ্ঠপুর।

ওরা যাচ্ছে শীতের বৈকুণ্ঠপুর। বৈকুণ্ঠপুরে ওদের জন্য অপেক্ষা করছে কুয়াশামাখা গন্ধরাজ। ওদের জন্য অপেক্ষা করছে দুধরাজ নদী। নদীর পাড়ে বসে জলস্রোতের সঙ্গে নিরলে ঈশ্বর করছেন আলাপ।

আগতদের পথ প্রায় ফুরলো। এবার কেবলি সামান্য হাঁটা পথ বাকি। ওদের চোখের সামনে, প্রায় নিকটেই একটা মেঘের বলয়। ওরা জানে, এই মেঘ-গোলকের ভেতরই বৈকুণ্ঠপুর। বৈকুণ্ঠপুরে হলুদ মাফলারওয়ালা যুবার বাড়ি। ওর বাড়ির দেওড়ির কোণায় একটা লাল জবা গাছ। এই রক্তজবা গাছটা ওর খুব প্রিয়। এই গাছটার গল্প সে অজস্রবার বলেছে বন্ধুদের। সে বলেছে, ঝিমমারা দুপুরের রোদের মধ্যে যখন সবুজ গাছটার বুক আলো করে ফুটে থাকে লাল-লাল ফুল তখন সেই দৃশ্যের দিকে চেয়ে খুনিও মুহূর্তের জন্য আনমনা হয়।
বৈকুণ্ঠপুরের দেখা পেতে আর বাকি নেই। মেঘের আবরনটা হাল্কা হতে শুরু করেছে। এই পাহাড়ের ঠিক নিচেই সেই লাল তিল। কিন্তু সেখানে যেতে হয় একটু ঘোরপথে। বড় রাস্তা এইখানে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে। বহু বহু দূরে বড়রাস্তার একদিকের শেষে আছে বিপুল রাজধানী। আরেক দিকে আঁকা-বাঁকা পায়ে চলা সরু-পথের শেষে আছে বিপুলা বৈকুণ্ঠপুর।

বৈকুণ্ঠপুরের পথটা ওরা ধরতে যাচ্ছে। এমন সময় দু’টো মোটরবাইকে করে কয়েকটা যুবক হৈহৈ করতে-করতে রাজধানীর দিকে যাচ্ছিলো। যেতে পথে হলুদ মাফলারওয়ালা যুবাদের দলটাকে দেখে বাইকগুলো থামলো। হলুদ-মাফলার-যুবার লালটুপি পরা বন্ধুটাকে ওরা টেনে হিঁচড়ে নিতে চায়। নেভি-ব্লু-জ্যাকেট-যুবা, হলুদ-মাফলারওয়ালা-তরুণ কিছুতেই রাজধানীর থেকে আসা লোকেদের সাথে পারছে না।

ওদের একজন ঠুস-ঠাস করে দুইটা গুলি করে দিলো হলুদ মাফলারওয়ালা তরুণের বুকে আর পেটে। দুইজনে ধরে নেভি-ব্লু-জ্যাকেট ছেলেটার প্যান্টটা হাঁটুর কাছে নামিয়ে আনার পর তার উপরে সওয়ার হলো নগরের একটা ফর্সা বলিষ্ঠ যুবক। এই দৃশ্যে বলিষ্ঠ যুবকের বন্ধুরা মজা পেলো খুব। তারপর নীল জ্যাকেট তরুণ-এর লালটুপি বন্ধুটাকে ওরা একটা গাছের নিচে টেনে নিলো।

খানিকপরে একটা লালটুপি গাছের নিচ থেকে খাড়া পাথুরে-পাহার থেকে গড়িয়ে পড়লো। গড়াতে-গড়াতে টুপিটা পড়লো দুধরাজ নদীর জলে। উপর থেকে পড়া ভারীবস্তুর চাপে পানি ছলকে উঠার শব্দে ঈশ্বর ঘাড় ঘুরে তাকালেন। তাকিয়ে দেখলেন, নদীর পাড়েই পাহাড়ের উপর একটা বুনো জবা গাছ। কিন্তু ঈশ্বর ভাবছেন, শুকিয়ে যাওয়া একটা জবাফুল পানিতে পড়লে কি এতোটা শব্দ হয়!

১৭.০৮.১৬

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
আপনার কল্পনার বৈকন্ঠপুর তো চমৎকার। আসলেই চমৎকার। আর বর্ণনায় চোখে ভাসিয়ে তুলেছেন। আপনার লেখার আবহটাই অন্যরকম। পড়লে মন শান্ত হয়ে যায়।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:১৯

আফরোজা সোমা বলেছেন: রক্তিম, আপনি যে সুন্দর করে বলেছেন তা অবিশ্বাস্য! পড়ার জন্য এবং অনুভূতি জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:০৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: আফরোজা সোমা ,



এটা কি কোনও রূপক ? ঠিক ধরতে পারিনি মূলটাকে । হয়তো বোঝাতে চেয়েছেন,ঈশ্বর নির্বিকার ।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

আফরোজা সোমা বলেছেন: আহমেদ জী এস, শুভেচ্ছা নেবেন। গল্পটা পড়া এবং মন্তব্য জানানোর জন্য কৃতজ্ঞতা।

আমি এক ক্ষুদ্র মানুষ। আমার আশ-পাশের ক্ষুদ্র, বড়, মহত মানুষ এবং মানুষের সমাজই আমার মূল আগ্রহ। ঈশ্বরের মতন অসীম, বিরাটত্বকে ধারণের সামর্থ আমার নেই। আপনি 'নির্বিকার' শব্দটা যুৎসই বলেছেন। কিন্তু এই শব্দটার আগে ঈশ্বরের জায়গায় সমাজ বসিয়ে নিন না।

৩| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:১২

ইমরান নিলয় বলেছেন: সুন্দর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.