![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই বর্ষণমুখর দিনে জানালার গ্রিল দিয়ে বাইরে ২ মিনিট তাকালে আপনার মনটা নিশ্চয়ই কাব্যিক হয়ে গুন-গুন করে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাওয়া শুরু করবে! কিন্তু সমস্যা হবে আরও ১০ মিনিট পর!
যখন উৎসুক মন কাব্যিকতা থেকে দার্শনিকতার দিকে চলে গিয়ে বিচিত্র সব প্রশ্নের উদ্ভব ঘটাবে।
যেমন, আমরা মানুষরা কেন এখানে? আমরা কোথা থেকে এসেছি বা কোথায় যাব?
অথবা এই জটিল মহাবিশ্ব কি দিয়ে গঠিত হল? ইত্যাদি হাজারও প্রশ্ন।
চলুন তাহলে এই বিচিত্র প্রশ্নটির সহজ উত্তর খোজার একটু চেষ্টা করি পদার্থবিজ্ঞানের আলোকে----
প্রসঙ্গত প্রথমেই স্যার আইজাক নিউটনের কথা চলে আসে, যে কিনা সর্বপ্রথম মহাকর্ষ বল আবিষ্কার করেন। মহাকর্ষ বল আবিস্কারের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করা সম্ভব হল গ্রহ-নক্ষত্রের গতি ও তাদের কক্ষপথ, যদিও মহাকর্ষ বলের নিজের প্রকৃতি থেকে গেল রহস্যময় হিসাবে। তবে আবিষ্কারটা আমাদের মহাবিশ্বের রহস্য অনেকটা উন্মোচিত করার পাশাপাশি পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের মত অনেক ভুল ধারনা থেকে মুক্তি দেয়।
যাই হোক, নিউটনের পর আসল আলবার্ট আইনস্টাইন নতুন মাত্রার চিন্তা, তার বিখ্যাত “আপেক্ষিকতাবাদ” নিয়ে। নিউটোনিয়ান মেকানিক্স গুলিয়ে ভরকে শক্তিতে রুপান্তর করল এবং মহাকর্ষকে ব্যাখ্যা করে নতুনভাবে, স্থান-সময় এর জামিতিক বুনন হিসাবে। আর সময়কে প্রতিষ্ঠা করল চতুর্থ মাত্রা হিসাবে।
একই সাথে আসল ম্যাক্স প্লাঙ্কের ‘কোয়ান্টাম তত্ত্ব’! সবকিছুর গঠনকে বর্ণনা করল পৃথক, অদৃশ্য শক্তির একক ‘কোয়ান্টার’ মাধ্যমে, যার কিনা একইসাথে তরঙ্গ এবং বস্তুর ধর্ম বিরাজমান।
কিন্তু, কোয়ান্টাম তত্ত্ব মহাকর্ষের ব্যাপারে একেবারে নিশ্চুপ থাকল।
অপরদিকে আবার আইনস্টাইনের ‘সাধারন আপেক্ষিকতাবাদ’ গ্রহ-নক্ষত্রের গতি, তারা-গ্যালাক্সির বিবর্তন ব্যাখ্যা করলেও কোয়ান্টাম থিওরি এবং ক্লাসিক্যাল মেকানিক্সকে উপেক্ষা করে গেল।
কিছু ক্ষেত্রে এই তত্ত্বগুলার অসামঞ্জস্য সমস্যার সৃষ্টি করল। যেমন- “ব্লাক হোল”।
এখানে সাধারন আপেক্ষিকতা প্রযোজ্য বিশাল ভরের জন্য, আবার একই সাথে অতি ক্ষুদ্র আকারের জন্য কোয়ান্টাম তত্ত্বও প্রযোজ্য!
এমতাবস্থায় একটা একত্রিকরন অত্যন্ত জরুরী হয়ে গেল পদার্থবিদদের জন্য। এমন একটা নতুন মডেল প্রয়োজন যার সাহায্যে সবকিছু একসাথে বর্ণনা করা যাবে বা যাকে বলা যাবে “Theory of Everything”
এখান থেকেই উৎপত্তি “স্ট্রিং থিওরি” এর। যার অভিধানিক অর্থ ‘রজ্জু তত্ত্ব’।
এই তত্ত্বের মুল ধারনা হল এই মহাবিশ্বের সবকিছু একধরনের ‘অবিশ্বাস্য ক্ষুদ্র কম্পনশীল শক্তি বা স্ট্রিং’ দ্বারা গঠিত। পুরো মহাবিশ্বটাই যেন এক বৃহৎ মহাজাগতিক ছন্দ। একই সাথে এটি মহাবিশ্বের ১১টি ভিন্ন-ভিন্ন মাত্রা থাকার কথাও বলে।
আর আনবিক পর্যায় থেকে যথাক্রমে-
অণু > পরমাণু > মৌলিক কনিকা(ইলেকট্রন,প্রোটন,নিউট্রন)> অতিপারমানবিক কনা(ইলেকট্রন,কোয়ার্ক)> স্ট্রিং
এই স্ট্রিং থিওরিই আমাদের দেখায় যে পরমাণুর কোয়ার্ক এবং ইলেকট্রন কোন শূন্য(০) মাত্রিক বস্তু না, বরং একমাত্রিক আন্দোলিত রশি বা স্ট্রিং। যা কিনা আন্দোলিত হয় এবং কণাগুলোকে তার প্রয়োজনীয় ভর, চার্জ ও ঘূর্ণন দিক প্রদান করে থাকে। ‘Nambo-Goto Action’ এর সাহায্যে আমরা সহজেই বুঝতে পারি স্ট্রিং কিভাবে স্থান ও সময়ে প্রবাহিত হয়।
এই স্ট্রিং আবার দুধরনের-
1. I. বদ্ধ স্ট্রিং(যেমন- গ্রাভিটন)
2. II. উন্মুক্ত স্ট্রিং(যেমন- ফোটন)
স্ট্রিংগুলা নিজের ‘টানশক্তি’ এবং হাইজেনবার্গের ‘অনিশ্চয়তা নীতির’ মধ্যে ভারসাম্য করতে গিয়ে কিছুটা প্রসারিত হয়ে থাকে। এই স্ট্রিং গুলা নিজেরা ভাঙতে আবার জোড়া লাগতে পারে।
তবে যদিও স্ট্রিং তত্ত্বের কোন প্রত্যক্ষ পরীক্ষামূলক প্রমান নেই, তবুও স্টিফেন হকিং, এডওয়ার্ড ওয়াইডেন, লিওনার্ড সাসকিন্ড এর মত বিজ্ঞানীরা এতে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে।
পরিশেষে বলা যায় যে ‘স্ট্রিং তত্ত্বের’ সবচেয়ে বড় সাফল্য এটি চারটি মৌলিক বলকে (মহাকর্ষ, তড়িৎচৌম্বক বল, দুর্বল ও সবল নিউক্লিও বল) একত্রিত করতে পেরেছে। যা কিনা ছিল আইনস্টাইন সহ অনেক বিখ্যাত পদার্থবিদের অসমাপ্ত স্বপ্ন!
©somewhere in net ltd.