নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিজেকে নিয়ে যা জানি খুব কম, তাই না জেনে কিছু না বলাটাই ভাল। । । ।

রাহাত আহমেদ মুনিম

রাহাত আহমেদ মুনিম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মকথনঃ

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১

এই জীবনে ব্যর্থতা জনিত হতাশার সম্ভাব্য কারন হতে পারে পাঁচটি-
১। কর্মফলঃ আমাদের অধিকাংশ সমস্যার জন্য, আমরা নিজেরাই দায়ী থাকি। মানুষ অতিদ্রুত নিজের খারাপ কাজের অতীত ভুলতে চায়, কারন সে নিজের কাছে নিজে ছোট থাকতে চায় না। এজন্যই আমাদের অতিতের কর্মফলগুলো যখন ঘুরে-ফিরে আসে, তখন হা-হুতাশ শুরু করি... “হায় আল্লাহ্‌, আমার কি দোষ ছিল। আমার ভাগ্য কেন তুমি এরকম করলে” টাইপের সিনেমার ডাইলগ ভাবা শুরু করি...
এমনকি ওই মুহূর্তেও যদি নিজের অতীত ভুলের কথা সচেতন মনে চলে আসে, তারপরও আমরা সেই ভুল ঠিক করা বাদ দিয়ে, ওই চিন্তা মুহূর্তের মধ্যে সচেতন মন থেকে মুছে ফেলে আবার হা-হুতাশ শুরু করতে আর মাইক নিয়ে দেশের লোকজনের কাছে জানিয়ে- সেটার জন্য সহানুভূতি আদায় করতেই বেশি পছন্দ করি।
এরকম ব্যর্থতার ব্যাপারে বিন্দুমাত্র আবেগি না হয়ে, বিচারকের আসনে বসে কঠোর ভাবে নিজেকে বিচার করা উচিত। সেইসাথে একবার হলেও অন্তত চিন্তা করা যে, তার ওই অতীত ভুলটার সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারত, আর বাস্তবে তার জীবনে কতটুকু হচ্ছে। আমি নিশ্চিন্ত ওই মানুষটা দেখবে বাস্তবে তার কর্মফল অনেক কম ভোগ করতে হচ্ছে।
এই বিচার করাতে তার লাভ হবে দুইটা।
প্রথমত, সে নিজের ভুলগুলো সংশোধন করবে বা করতে চাইবে।
দ্বিতীয়ত, সে স্রস্টার প্রতি ভুল-ভাল অভিমান দেখানো বাদ দিয়ে কৃতজ্ঞ হবে কর্মফল বহুগুনে কম করে দেবার জন্য।
যেমনটি স্রস্টা ধর্মগ্রন্থে বলেছেন “বিপদ-আপদ যা কিছু আসে তা তোমাদের কর্মফল, আর তিনি অনেকটাই ক্ষমা করে দেন।” আল-কোরআন(৪২:৩০)
২। অদূরদর্শিতাঃ মানুষ হিসাবে আমাদের অবশ্যই অনেক ব্যাপারেই সীমাবদ্ধতা আছে। এরকম অনেক বড় একটা সীমাবদ্ধতা- ‘আমরা ভবিষ্যৎ সম্পর্কে পূর্ব অভিজ্ঞতা ও যুক্তির আলোকে “ধারনা” করতে পারি শুধু, কিন্তু সেটা কখনও আগে থেকে “জানি” না’।
তবে স্রষ্টা স্বাভাবিকভাবেই এই সীমাবদ্ধতার ঊর্ধ্বে। ব্যাপারটা অনেকটা এরকম ‘আমি আল্লাহ্ এর কাছে রাতদিন একটা মোটরসাইকেল এর জন্য প্রার্থনা করছি, কিন্তু কোনভাবেই সেটা পাচ্ছি না। কারন, আমার সাইকেল চালানোর যা স্বভাব আর আমি যে এলাকাতে থাকি মোটরসাইকেল পাবার ১ সপ্তাহের মধ্যে আমি এক্সিডেন্ট করে রাস্তার মাঝখানে চিৎ হয়ে পড়ে থাকবো।‘
ব্যাপারটা আল্লাহ্ জানেন, কিন্তু আমি জানি না। এগুলো আসলে ব্যর্থতা নয়, স্রষ্টা আপন দূরদর্শিতা থেকে আমাদের বিপদ থেকে বাচান।
ধর্মগ্রন্থে বলা “মানুষ আমার কাছে যেমন তার কল্যান প্রার্থনা করে, তেমনি তার অকল্যাণও প্রার্থনা করে”
আবার, কিছু ক্ষেত্রে আমরা জীবনে যেটা পেতে চায় সেটা পাই না, কারন স্রষ্টার কাছ থেকে আমাদের জন্য আরও ভালো কিছু অপেক্ষা করে… হয়তো ছোটবেলা থেকেই আমার বিশাল আকারে শখ ছিল যে আমি বাংলা ছিনেমার মারদাঙ্গা টাইপের নায়ক হব, কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল আমি হাজার চেষ্টাতেও সিনেমাতে নায়কের পেছনে নৃত্য করার থেকে বেশি কিছু করতে পারলাম না! অতঃপর প্রচণ্ড মন খারাপ করে আমি রাজনীতিতে যোগ দিলাম এবং একদিন অবিসংবাদিত এক নেতা হলাম!
ইতিহাসে এরকম উদাহরণ প্রচুর। আমাদের পরিচিত অনেক মানুষকেই আমরা হয়ত চিনতামও না যদি তারা জীবনের প্রথম স্তরের প্রথম টার্গেটে সফল হত, তারা ব্যর্থ হয়েই তারপর টার্গেট পরিবর্তন করছিল এবং আজ আমরা তাদের সেই পরিবর্তিত টার্গেটের অন্যতম সফল ব্যক্তি হিসাবে চিনি।
৩।ধৈর্যহীনতাঃ অস্থির প্রকৃতির লোকজনের মধ্যে এই ব্যাপারগুলোকে ব্যর্থতা হিসাবে দেখার প্রবণতা বেশী। এরা ধৈর্যহীন হয় দুই কারণে-
প্রথমত, প্রথম হাটতে শিখার সময় যে অনেকবার আছাড় খেতে হয়, এরা এই সত্যটা কোনভাবেই মানতে চায় না। কোন বড় কিছু শিখতে গেলে প্রথমবারেই কখনও শেখা যায় না, কয়েকবার ব্যর্থ হয়ে তারপর সবাই শেখে।
দ্বিতীয়ত, সহজে বলতে গেলে “গাছের পাকা আমটা যে উচ্চতায়, আপনাকে ঢিলটি কষ্ট করে ঠিক তততুকু উচ্চতায় ছুড়তে হবে। ঢিলটি ছোড়ার সময় যদি প্রয়োজন থেকে সামান্য একটু কম জোর দিয়ে ছোড়েন, তাহলে ঢিলটিও আমের সামান্য একটু নিচ দিয়ে চলে যাবে। ফলাফল শুন্য! এটার মানে এরকম নয় যে আমটি পাড়া সম্ভব না, অথবা আপনার আম পাড়ার শক্তি নাই। কারন এটাই, যে আপনি ধৈর্য ধরে যথেষ্ট চেষ্টা করতে পারেন নাই।
৪।পরীক্ষাঃ স্রষ্টা তার প্রিয় বান্দাদের কোন বিপদে ফেলেন না, প্রচণ্ড ভুল একটা কথা! স্রষ্টা তার পছন্দের বান্দাদের জীবনের কিছু স্তরে আরও বেশী বিপদে ফেলেন স্রষ্টার ওপর তার বিশ্বাসের মাত্রাটা দেখার জন্য। এটার জ্বলন্ত উদাহরণ ইব্রাহীম (আঃ) এর জীবন। পরীক্ষার ধরন ব্যক্তিভেদে সবসময় আলাদা। কাওকে হয়তো বেশী সুন্দর চেহারা দিয়ে পরীক্ষা করেন ‘অহংকারী’ হয় কিনা! আবার কাউকে তুলনামূলকভাবে অনেক কম সুন্দর চেহারা দিয়ে দেখেন ‘অকৃতজ্ঞ’ হয় কিনা!
তবে আমরা ভুলভাল টাইপের আমজনতা এই ক্যাটাগরির ব্যর্থতা আদৌ কয়টা জীবনে মোকাবেলা করি আল্লাহ্ই ভালো জানেন। আমরা বরং নিজের কর্মফল জনিত ব্যর্থতাকে আল্লাহ্ পরীক্ষা নিচ্ছেন ভেবে নিজের কাছে নিজের দোষ ঢাকতে বেশী ব্যস্ত থাকি। অথবা, স্রস্টা পরীক্ষা নীলেও সেটা পেরোবার চিন্তা বাদ দিয়ে-
“হায় আল্লাহ্, আমার কি দোষ ছিল? কেন তুমি আমার এ ক্ষতি করলে?” এগুলো ভাবতেই বেশী পছন্দ করি। তবে সফলদের কথা আলাদা, তারা জীবনের এরকম পরিক্ষার বেশীর ভাগেই সুন্দর করে পেরিয়ে “প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস” ও স্রষ্টার “অশেষ করুনা” দুটোই লাভ করে।
স্রষ্টার ভাষায়-
“আর আমরা নিশ্চয়ই তোমাদের যাচাই করব যতক্ষণ না আমরা জানতে পারি তোমাদের মধ্যের কঠোর সংগ্রামশীলদের ও অধ্যবসায়ীদের।” আল-কোরআন (৪৭:৩১)
৫।অলঙ্ঘনীয়ঃ পৃথিবীর বেশিরভাগ বড়-বড় “সাধু বা শয়তান” এর জন্ম মনে হয় এখান থেকেই। এটাকে পরীক্ষাও বলা যেতে পারে, তবে এ পরীক্ষাটা যথেষ্ট ভয়ংকর লেভেলের এবং একটা মানুষকে তার সাইকোলজিক্যাল ব্রেকডাউন পয়েন্টে যেতে বাধ্য করে।
সেইসাথে আরও খারাপ ব্যাপারটা হল ওই মানুষটাকে পরীক্ষা পার করতে হয় সম্পূর্ণ ‘একাকী’। একটা মানুষও থাকে না যে তার কষ্টে ব্যাথিত হয়ে তাকে একটু শান্তনা দিবে, বা তাকে পরবর্তী করনীয় বলে দিবে!
ব্যাপারটা কিছুটা এরকম- হঠাৎ করে কেউ আবিস্কার করলো যে সে মাঝ-নদীতে ডুবন্ত অবস্থায়, যে ডুবন্ত অবস্থায় পড়ার জন্য সে নিজে কোনভাবেই দায়ী নয়! যদিও নদী-তীরে অনেকে তখন নিরাপদে বালু নিয়ে খেলা করছে, কিন্তু কেউ তাকে সাহায্যের জন্য হাত বাড়াচ্ছে না। কারন তার চিৎকার তীরে পৌছাচ্ছে না! তখন সেই মানুষটা বাঁচার তাগিদেই আপ্রানভাবে সাঁতরাবার চেষ্টা করে!
স্রষ্টার খেলাটা থাকে এখানেই!!!
স্রষ্টা তাকে নদীতীরে বসে বালু নিয়ে খেলার জন্য দুনিয়াতে পাঠায় নাই, পাঠিয়েছে সাতরিয়ে সাগর পেরোবার মত অসাধ্য সাধনের জন্য! আর এজন্যই তাকে মাঝ নদীতে ফেলে দিয়েছেন যেন সে বাঁচার তাগিদে চেষ্টা করতেই বুঝতে পারে- স্রষ্টা তার মাঝে সাতরিয়ে বিশাল জলরাশি পার হবার মত প্রচণ্ড শক্তি দিয়েই পাঠিয়েছেন! যা তিনি পাশে বসে থাকা বালু নিয়ে খেলা করা সাধারন মানুষদের দেন নাই, এজন্যই তাদের পাশের নিরাপদ বালুতীরেই রেখেছেন!
যারা সাধু হয়, তারা জীবনের কোন একটা পর্যায়ে এসে উপরোক্ত সত্যটা উপলব্ধি করা শেখে এবং তারপর "আমি কেন মাঝ নদীতে পড়ছিলাম?’ এই চিন্তা বাদ দিয়ে, তার উপহার পাওয়া প্রচণ্ড সাঁতরাবার শক্তির দিকে মনোযোগ দেয়। আর ঠিকই একদিন সেই শক্তির সর্বোচ্চ ব্যাবহার করে সাগর পাড়ি দেয়!
যারা শয়তান হয়, তারা এই জায়গাটাতে এসেই প্রচণ্ড ক্ষোভ দেখায় হয়তো স্রষ্টার প্রতি, অথবা নিজের প্রতি! তারা কোন দোষ ছাড়াই মাঝ নদীতে পড়ছে এটা কোনভাবেই মানতে চায় না। অথবা, ওই লোকগুলো কত সুন্দর বালি নিয়ে খেলা করছে আর সে কিনা কোন দোষ ছাড়াই ডুবন্ত অবস্থায়! এই দুটো কারনের প্রতি প্রচণ্ড পরিমানে ক্ষোভের জন্যই তারা একটা সময় ভয়ংকরভাবে ধংসাত্তক হয়ে ওঠে, পাশের বালুতীরের মানুষগুলোকে টেনে মাঝ নদীতে তার মত একই অবস্থায় ফেলার জন্য!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:৫০

করুণাধারা বলেছেন: খুব ভাল ভাবে লিখতে পেরেছেন। গভীর ভাবে ভাববার বিষয়।

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৬ রাত ১০:৩৭

রাহাত আহমেদ মুনিম বলেছেন: ধন্যবাদ :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.