![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
View this link
আহলে বাইতের অনুসারীদের মহান ইমামগণের পরিচয়
আহলে বাইতের অনুসারীগণ মহান আহলে বাইতের বারো জন ইমামের ইমামতে বিশ্বাসী। তাঁদের মধ্যে প্রথম হলেন আলী ইবনে আবি তালিব, তারপর তাঁর পুত্র ইমাম হাসান, তারপর ইমাম হুসাইন এবং তারপর ইমাম হুসাইনের বংশ হতে নয় জন মাসুম ইমাম।
রাসুল (সা.) কয়েকবার বারোজন ইমামের ইমামত সম্পর্কে স্পষ্ট এবং আকার-ইঙ্গিতে নির্দিষ্ট করেছেন। কিছু কিছু রেওয়ায়েতে নামসহ ইমামগণের আলোচনা আছে। এই রেওয়ায়েতগুলিকে উভয় মাযহাবের ওলামাগণ বর্ণনা করেছেন।
কিছু কিছু আহলে সুন্নাতগণ এই রেওয়ায়েতগুলির উপর আপত্তি করে বলেন যে, রাসুল (সা.) ঐ বিষয়াবলী সম্পর্কে কেমন করে কিছু বলতে পারেন যা ভবিষ্যতের সাথে সম্পর্কিত? যেহেতু কোরআন মজিদে আল্লাহ বলেছেন, “. . . আর আমি যদি গায়েব জানতাম তাহলে অধিক কল্যাণ লাভ করতাম এবং আমাকে কোন ক্ষতি স্পর্শ করত না . . .।” [সূরা আ’রাফ, আয়াত-১৮৮]
ঐ লোকগুলির আপত্তির জবাব হল এই যে, (বর্ণিত) আয়াতটি রাসুল (সা.)-এর গায়েবের জ্ঞানকে অস্বীকৃতি প্রদান করে না। বরং আয়াতটি সেই মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যারা রাসুল (সা.)-কে এই কথা বলতো যে, আমাদেরকে এই কথা বলুন যে কিয়ামত কখন আসবে? কিয়ামত সংঘটিত হবার বিষয়কে আল্লাহ নিজের সত্মার সাথে বিশিষ্ট করেছেন। “তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া”। [সূরা জিন, আয়াত-২৬ ও ২৭]
এই আয়াতটি এই কথার প্রতি স্পষ্ট দলিল বহন করছে যে, আল্লাহ তায়ালা নিজের রাসুলগণের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে ইলমে গায়েব সম্পর্কে অবগত করান। সুতরাং নিজের কয়দী সঙ্গীদের সাথে হযরত ইউসুফ (আ.)-এর নিন্মোক্ত কথাটি এ বিষয়ে একটি স্পষ্ট উদাহরণ। বলা হচ্ছে, “তোমাদেরকে যা খেতে দেয়া হয় তা আসার পূর্বেই আমি তোমাদেরকে সেটির তাবীর বলে দিব এবং ইহা সম্মিলিতরূপে সেই সকল কথার অন্তর্ভূক্ত যা আমার আল্লাহ আমাদের (নবীদের) শিক্ষা দিয়েছেন”। সূত্র ? [সূরা আয়াত]
অন্যত্র বলা হচ্ছে, “অতঃপর তারা আমার বান্দাদের মধ্য থেকে এক বান্দাকে (খিজির) পেল, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছি এবং তাকে আমার পক্ষ থেকে জ্ঞান শিক্ষা দিয়েছি”। [সূরা কাহাফ, আয়াত-৬৫]
সকল মুসলমানদের মাঝে এ বিষয়ে কোন বিরোধ নেই যে রাসুল (সা.) ‘ইলমে গায়েব’ জানতেন। সীরাত লেখকগণ ইলমে গায়েবের সাথে সম্পৃক্ত ঘটনাবলী লিপিবদ্ধ করেছেন। সংক্ষেপে তাদের মধ্য হতে কয়েকটি নিুরূপ :-
ক্স হযরত আম্মার (রা.)-কে বলেছিলেন, “হে আম্মার! তোমাকে বিদ্রোহী দল হত্যা করবে”।
ক্স হযরত আলীকে বলেছিলেন, “সবচেয়ে নির্মম ব্যক্তিটি তোমার মাথায় আঘাত করবে এবং তোমার দাঁড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যাবে”।
ক্স ইমাম হাসান সম্পর্কে বলেছিলেন, “নিঃসন্দেহে আমার পুত্র হাসান দ্বারা আল্লাহ মুসলমানদের দুই বড় দলের মধ্যে সন্ধি স্থাপন করাবে”।
ক্স আবু যার গিফারী (রা.) সম্পর্কে বলেছিলেন, “তিনি অতি শিঘ্রই অসহায় অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন”।
ইহা ছাড়া আরো অনেক ঘটনাবলী ও সংবাদাদী আছে, যেমনটি বুখারী ও মুসলিম এবং অন্যান্য মুহাদ্দেসীনগণ একটি বিখ্যাত হাদীস বর্ণনা করেছেন যার মধ্যে নবী (সা.) তাঁর পরবর্তীতে বারো জন ইমামের সংবাদ দিয়েছেন। বলা হয়েছে, “আমার পরে বারো জন ইমাম হবেন যারা কোরায়শ থেকে হবেন”।
কিছু কিছু রেওয়ায়েতে কোরায়েশের পরিবর্তে বনী হাশিম শব্দটি ব্যবহার হয়েছে অর্থাৎ উক্ত ‘ইমাম’ সকলেই বনী হাশিম থেকে হবেন। আমি আমার পূর্ববর্তী কিতাব “কুনু মায়াস্ সাদেকীন ও আহলে যিকির”-এ প্রমান করেছি যে, আহলে সুন্নাতগণ নিজেদের সিহাহ্ ও মাসানীদগুলিতে এমনসব হাদীস বর্ণনা করেছেন এবং সেগুলিকে সত্য বলে স্বীকারও করেছেন যেগুলি ১২ জন ইমামের ইমামতের উপর স্পষ্ট দলিল বহন করে।
আর তাদেরকে যখন কেউ জিজ্ঞাসা করে যে, “তোমরা বারো জন ইমামকে বাদ দিয়ে চার জনের আনুগত্য কেন কর, অথচ তোমরা সেই হাদীসগুলিকে স্বীকার কর এবং সেগুলিকে সহীহ বলেও মান্য কর?”
তাহলে তার জবাব হল এই যে, “যেহেতু তাদের পূর্ব পুরুষরা হলেন সেই প্রথম তিন খলিফা হযরত আবু বকর, উমর ও উসমান-এর সাহায্যকারী যাদেরকে ‘সাকীফা’ জন্ম দিয়েছিল, আর তারা সকলেই আহলে বাইত ও হযরত আলীকে ঘৃনা করতেন এবং তাঁর সন্তানদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করতেন। সেহেতু তারা নবীর সুন্নাতকে বরবাদ করে দিলেন এবং নিজেদের ‘ইজতিহাদ’ দ্বারা পরিবর্তন করে ফেললেন”।
সে কারণেই রাসুল (সা.)-এর পরবর্তীতে উম্মত দুটি ফেরকাতে বিভক্ত হয়েগেল। পূর্বপুরুষ, তাদের অনুসরণকারী এবং তাদের রায় মান্যকারী যাদের সংখ্যাগরিষ্ট ছিল তারা ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ হয়ে গেলেন। আর যারা হযরত আবু বকরের বায়াত করেনি, হযরত আলী এবং তাঁর অনুসারী ছিলেন, তারা সংখ্যালঘু ছিলেন এবং এ কারণেই তাদের কোন পরওয়া করা হয়নি, তারা শাসকগোষ্ঠীর অত্যাচারের শিকার হতে থাকেন, লোকেরা তাদেরকে ‘রাফেজী’ বলতো।
যদিও আহলে সুন্নাতগণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে উম্মতের উপর শাসক ছিলেন, উম্মতের ভাগ্যের কলম তাদের হাতেই ছিল। বনী উমাইয়া ও বনী আব্বাস সকলেই সেই খেলাফতের মাদ্রাসার অনুসরণকারী ছিল যার ভিত্তি হযরত আবু বকর, উমর, উসমান ও মোয়াবিয়া এবং ইয়াজীদ স্থাপন করেছিলেন। (আমি এখানে জেনেশুনে হযরত আলীর খেলাফতের আলোচনা করেনি, কেননা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত তাঁকে খলিফা স্বীকার করতেন না, যেমনটি আমি পূর্বেই বয়ান করেছি। তবে হ্যাঁ আহমদ বিন হাম্বলের যুগ থেকে তাঁকে খলিফা বলে স্বীকার করেছে। অধ্যয়ন করুন ‘আহলে সুন্নাত, নবীর সুন্নাতকে মানেন না’)।
যখন খেলাফতের বাতাস বেরিয়ে গেল অর্থাৎ খেলাফতের যুগ শেষ হয়েগেল এবং তা গোলাম ও অপরিচিতদের হাতে পৌঁছে গেল, তখন রাসুল (সা.)-এর সুন্নাতকে একত্রিত করার কথা শুনতে পাওয়া গেল, যেগুলিকে প্রথম যুগের মুসলমানগণ মুছে ফেলা এবং লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছিল আর এমনটি না করে তাদের কোন উপায়-ই ছিলনা। এই হাদীসসমূহ তাদেরকে অবাক করে দিল কেননা ইহা তাদের মকতবের (আকীদার) সরাসরি বিরুদ্ধে ছিল।
কিছু লোক উক্ত হাদীসসমূহে এবং যা তাদের আকীদার বিরুদ্ধে ছিল, সেগুলির প্রতি ঐক্যমত প্রকাশ করতে চাইল এবং আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা প্রদর্শন করতে লাগল এবং হযরত আলীর নামের সাথে ‘রাযিয়াল্লাহু আনহু’ এবং ‘কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু’ বলা শুরু করল, যাতে লোকেরা বুঝুক যে তারা আহলে বাইতের শত্রু নয়।
কোন মুসলমান এমন কি মুনাফিকও নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করতে পারে না, কেননা আহলে বাইতের শত্রু হল রাসুল (সা.)-এর শত্রু এবং রাসুল (সা.)-এর শত্রুতা ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়।
এসকল কথা-বার্তার সারাংশ হল এই যে, তাদের ‘সুলফে সালেহ্’ (পূর্ব পুরষগণ) হলেন আহলে বাইতের শত্রু, যারা নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলেছেন অথবা তাদের সাহায্যকারীগণ ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের’ নাম দিয়েছেন। এর দলিল হল এই যে, তারা সেই চার মাযহাবের প্রতি আমল করে থাকেন যেগুলিকে সেযুগের শাসক গোষ্ঠী আবিস্কার করেছিল (শীঘ্রই আমি এ সম্পর্কে বিস্তারিত বয়ান করব)। তাদের মাযহাবে এমন কোন হুকুম নাই যে, সে বিষয়ে তারা আহলে বাইতের ফিক্হ-এর প্রতি রুজু করেন অথবা ১২ ইমামের মধ্যেকার কোন এক ইমামের দিকে রুজু করেন।
আসলে ১২ ইমামের অনুসারীগণই হলেন ‘আহলে সুন্নাত’। কেননা ফিক্হগত হুকুম-আহ্কামের ক্ষেত্রে তাঁরা আহলে বাইতের ইমামগণের প্রতি রুজু করে থাকেন, যাঁরা নিজেদের নানার কাছ থেকে সঠিক সুন্নাত ‘মীরাস’ হিসাবে পেয়েছেন। তাঁরা তাতে নিজেদের মতামতকে প্রবেশ করান না, আর না খলিফাদের ইজতিহাদ ও তাদের কথা-বার্তাকে সেগুলির সাথে সংযুক্ত করেন।
দীর্ঘ ইতিহাসের মধ্যে একমাত্র আহলে বাইতের অনুসারীগণই ‘নুসুস’ অর্থাৎ আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর সিদ্ধান্তে অবিচল/অনড় এবং আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর সিদ্ধান্তের বিপরীত ইজতিহাদকে রদ করে দেন। যেমন তারা হযরত আলীর খেলাফত এবং তাঁর সন্তানদের খেলাফতকে মান্য করেন কেননা তাঁদের খেলাফতের পক্ষে রাসুল (সা.) সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন, বিধায় তারা হযরত আলী এবং তাঁর সন্তানগণকে ‘খলিফাতুর রাসুল’ অর্থাৎ রাসুল (সা.)-এর খলিফা বলে স্বীকার করে থাকেন। যদিও প্রকাশ্য খেলাফত হযরত আলী ছাড়া আর কেহই পান নি। ঠিক তেমনই তারা সেই শাসকগণের খেলাফতকে অস্বীকার করেন যারা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত খেলাফতকে অদল-বদল করে আসছে। কেননা, কোন চিন্তা-ভাবনা না করেই এর ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছিল এবং যার অনিষ্ট থেকে আল্লাহ তায়ালাই রক্ষা করেছেন। এটি ছিল সেই খেলাফত যা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর হুকুমসমূহকে দূরে ঠেলে দিত এবং ‘খেলাফত-এ-রাশেদা’ তো একটি ‘মীরাসে’ পরিনত হয়েছিল এবং যে বিদায় নিত সে পরবর্তীজনকে নিযুক্ত করে যেত। হয় তা যুদ্ধ বা আন্দেলনের মাধ্যমেই হোক না কেন। এমন কুৎসিত কৃতকর্ম হতে কেবল আলী ইবনে আবি তালিবের খেলাফতই মুক্ত আছে। একমাত্র তিনিই এমন ব্যক্তি যাঁকে পূর্ববর্তী খলিফা নিযুক্ত করেনি আর না তিনি শক্তির বলে খলিফা হয়ে ছিলেন বরং মুসলমানগণ স্বাধীনভাবে তাঁর বায়াত করেছিল এবং অনেক অনুনয়-বিনয় করে তাঁকে খেলাফত গ্রহণ করার দাওয়াত দিয়েছিল।
এ সমস্ত কারণেই আহলে সুন্নাতগণকে বাধ্য হয়েই প্রত্যেক ফাসিক ও ফাজির ব্যক্তির ইমামতকে স্বীকার করতে হয়েছে এবং এ কারণেই তারা ফাসিক শাসকদের খেলাফতকেও সঠিক বলে মান্য করেছেন। ইমামিয়া বিশ্বাসের অনুসারীগণ ইমামের জন্য ‘ইসমাত’ (নিঃষ্পাপতা)-কে ওয়াজিব গণ্য করে থাকেন। অতএব ‘ইমামত-এ-কুবরা’ এবং ইমামত ও নেতৃত্বের হক (অধিকার) কেবল মাসুম ইমামগণেরই আছে এবং এই উম্মতের মধ্যে তাঁদের ব্যতীত অন্য কেউ মাসুম নাই, যাদেরকে আল্লাহ সমস্ত ধরণের কলুষ-কালিমা থেকে মুক্ত রেখেছেন এবং এমনভাবে পুতঃপবিত্র রেখেছেন যেমনটি পবিত্রতার হক আছে। আহলে সুন্নাতের ইমামগণের পরিচিতি
আহলে সুন্নাতগণ ‘ফুরুয়ে দ্বীনের’ ক্ষেত্রে “আম্মিায়ে আরবায়া” তথা চারজন ইমাম যথাক্রমে আবু হানিফা, মালিক, শাফেয়ী এবং আহমদ বিন হাম্বল-এর ‘তাকলীদ’ করে থাকেন।
উক্ত চারজন ইমাম রাসুল (সা.)-এর সাহাবী নন আর না তাবেয়ীনদের অন্তর্ভূক্ত, না তাদেরকে রাসুল (সা.) জানেন আর না তারা তাঁকে দেখেছেন। বয়সের দিক থেবে আবু হানিফা তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ। আবু হানিফা এবং নবী (সাঃ)-এর মাঝে ১০০ বছরেরও অধিক সময়ের ব্যবধান আছে, কেননা আবু হানিফা ৮০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৫০ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন। আর উক্ত চারজন ইমামের মধ্যে সকলের কনিষ্ট হলেন আহমদ বিন হাম্বল যিনি ১৬৫ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ২৪১ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
‘উসুল-এ-দ্বীন’-এর মধ্যে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতগণ ইমাম আবুল হাসান বিন ইসমাঈল আশয়ারীকে অনুসরণ করে থাকেন, যিনি ২৭০ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন এবং ৩৩৫ হিজরীতে ইন্তেকাল করেন।
উক্ত ইমামগণের মধ্যে আপনি কাউকেই আহলে বাইতের অন্তর্ভূক্ত পাবেন না, আর না রাসুল (সা.)-এর সাহাবীগণের মধ্যেকার কাউকে পাবেন, যার সম্পর্কে রাসুল (সা.) কিছু বলে থাকবেন অথবা তার দিকে উম্মকে হিদায়েত করেছেন? কষ্মিনকালেও এমন কোন বিষয় পাওয়া যাবে না, এই কাজটি অনেক কষ্ট-সাধ্য ব্যাপার হতে পারতো।
আবার যখন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এই দাবী করেন যে আমরা নবী (সা.)-এর সুন্নাতের দামন (ক্রোড়)/আচল ধরে আছি, তাহলে এই চারটি মাযহাব এতো বিলম্বে কেন অস্তিত্ব লাভ করল? ইহার পূর্বে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত কোথায় ছিলেন? কার কথা গ্রহণ করতেন? আহ্কামের বিষয়ে কার দিকে রুজু করতেন? আবার এমন লোকগুলির তাকলীদের প্রতি কেমন করে সন্তুষ্ট হয়েগেলেন যারা নবী (সা.)-এর যুগে ছিলেন না এবং তাঁকে জানতেনও না। উক্ত চারজন ইমাম তো তখন জন্মগ্রহণও করেন নি যখন ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছিল। সাহাবাগণ একে অপরকে হত্যা করতে ছিলেন এবং একজন আর একজনকে কাফের বলছিলেন। অথচ খলিফাগণ কোরআন ও সুন্নাতের মধ্যে নিজেরদের মনমানি (পছন্দ সই) কর্ম করে ফেলেছিলেন এবং নিজেদের ‘ইজতিহাদ’ দ্বারা কর্ম সম্পাদন করে ফেলেছিলেন। আবার সেই ইয়াজিদের খেলাফত আমলও শেষ হয়েগিয়েছিল যে নিজের বাহিনীর জন্য রাসুল (সা.)-এর মদীনাকে ‘মোবাহ’ ঘোষণা দিয়েছিল যেন যে যা ইচ্ছা তাই করে। সুতরাং দীর্ঘদিন পর্যন্ত ইয়াজিদী বাহিনী ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে রেখেছিল এবং সেই সমস্ত উত্তম সাহাবাগণকে তরবরারী দ্বারা হত্যা করে ফেললো যারা ইয়াজিদের ব্যায়াত করেন নি, মহিলাদেরকে মোবাহ গণ্য করল এবং কারোরই মান-সম্মানের প্রতি লক্ষ্য রাখে নি এমন কি অনেক মহিলা গর্ভবতী হয়ে গেলেন।
একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি তেমন ইমামগণের প্রতি কেমন করে আস্থা রাখতে পারে যাদের সম্পর্ক ছিল মানুষের সেই গোষ্ঠীর সাথে যারা ফিতনার সাথে জড়িত, যাদের খাদ্য হল রং-বেরংগের দুধ, যাদের ভিত্তি মকর ও ফেরেবের উপর নির্ভরশীল এবং তাতেই লালিত পালিত হয়েছে এবং তাদের প্রতিটি কর্ম জালিয়াতী জ্ঞানের উপর প্রতিষ্ঠিত। অতএব তাদের মাধ্যমে সেই লোকগুলিই অস্তিত্ব লাভ করল যাদের প্রতি শাসকগোষ্ঠী রাজি ও খুশি ছিল। (পরবর্তী আলোচনায় বয়ান হবে যে, উমাইয়া ও আব্বাসীয় শাসকগণই উক্ত মাযহাবসমূহকে অস্তিত্ব দান করে মানুষের উপর চাপিয়ে দিয়েছে)।
আর সুন্নাত থেকে সম্পৃক্ত ব্যক্তিত্ব, জ্ঞান নগরীর শহর, ইমাম আলী এবং বেহেশতে যুবকদের সরদার ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন এবং নবী (সা.)-এর ‘ইতরাত’ হতে অন্যান্য পবিত্র ইমামগণকে কেমন করে ত্যাগ করা যেতে পারে যারা তাঁদের নানা রাসুল (সা.) হতে ‘মীরাস’ হিসাবে জ্ঞান লাভ করেছেন। আবার কোন ব্যক্তি সেই ইমামগণের কেমন করে অনুসরণ করতে পারে যারা নবী (সাঃ)-এর সুন্নাত সম্পর্কে কোন জ্ঞানই রাখত না বরং উমাইয়াদের রাজনীতি যাদেরকে অস্তিত্ব দান করেছিল?
আবার আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত এমন দাবী কেমন করে করতে পারেন যে, “আমরা নবী (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণ করি”, অথচ তারা সুন্নাতকে ছেড়ে দিয়ে উল্টা সেটির বিরুদ্ধে দুর্গ তৈরী করেছিলেন? আবার ইসলামী ইতিহাস অধ্যয়নকারী আর কোরআন ও সুন্নাত সম্পর্কে জ্ঞাত কোন মুসলমান এই কথাতে কি সন্দেহ পোষণ করবে যে আহলে বাইতের অনুসারীগণ নবী (সা.)-এর ইতরাতের মুক্বাল্লিদ (অনুসরণকারী) নন এবং তাঁদেরকে ভালবাসেন না? সত্য তো ইহাই যে, আহলে বাইতের অনুসারীগণই নবী (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণ করে থাকেন। তারা ব্যতীত অন্য কারোর এই দাবী করার অধিকার নাই যে, তিনি নবী (সা.)-এর সুন্নাত অনুসরণ করছে।
শ্রদ্ধেয় পাঠকমন্ডলী! আপনারা কি লক্ষ্য করেছেন যে, রাজনৈতিক বিষয়াবলী কিভাবে পরিবর্তন হয়ে থাকে এবং উহা বাতিলকে হক এবং হককে বাতিল কিভাবে বানিয়ে দেয়। সুতরাং নবী (সা.) ও তাঁর ইতরাতের প্রতি ভালবাসা পোষণকারীগণকে রাফেজী ও বিদআতকারী বলা হলো এবং বিদআতকারী, নবী (সা.)-এর সুন্নাত ও তাঁর ইতরাতকে যারা ত্যাগ করেছে আর জালিম শাসকদের ইজতিহাদের প্রতি যারা আমলকারী তাদেরকেই ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ বলা হলো, এমতাবস্থায় এর চাইতেও অধিক তাজ্জব ও অবাক হবার মত কথা আর কি হতে পারে?
কিন্তু আমি তো পূর্নাঙ্গ একিনের সাথে এই কথা বলছি যে, এমন লোকগুলিকে ‘আহলে সুন্নাত’-এর নাম দেয়ার ক্ষেত্রে কোরায়েশদের হাত আছে, কেননা এমন কাজ করাতেই তাদের সফলতা ছিল।
এই কথা বয়ান করা হয়েগেছে যে, কোরায়েশগণ আব্দুল্লাহ ইবনে আমরুকে রাসুল (সা.)-এর হাদীস লিখতে নিষেধ করে দিয়েছিল এবং এই দলিল উপস্থাপন করেছিল যে, ‘নবী (সা.) মাসুম নন’।
আসলে কোরায়েশ ছিল সেই সকল ব্যক্তিবর্গ যারা আরবের গোত্রসমূহের মধ্যে বংশীয় আর প্রকাশ্য প্রভাব প্রতিপত্তির অধিকারী ছিল। সে কারণেই কিছু কিছু ইতিহাস বেত্তাগণ তাদের ক্ষেত্রে “দাহাতুল আরব” (অর্থাৎ আরবের চতুর-চালাকতম ব্যক্তিবর্গ) শব্দ লিপিবদ্ধ করেছেন। কেননা মকর ও ফেরেব, চালাকি এবং বিষয়াবলীর আয়োজনে আর শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে তারা অনেক বিখ্যাত ছিল। এই লোকগুলিকেই কিছু লোক “আহলে হাল্ল ও আক্বদ্” অর্থাৎ “সমাধানকারী ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব” বলেছেন।
আর এদের মধেই হযরত আবু বকর, উমর, উসমান, আবু সুফিয়ান, মোয়াবিয়া, আমর আ’স, মুগীরা বিন শো’বা, মারওয়ান বিন হাকাম, তালহা বিন আব্দুল্লাহ, আব্দুর রহমান বিন আউফ এবং আবু ওবায়দা আমির বিন জেরাহ প্রমুখগণ অন্তর্ভূক্ত। [আমি হযরত আলীকে এদের মধ্যে গণ্য করিনি, কেননা হিকমতের দৃষ্টিকোণ থেকে হুশিয়ার ও বুদ্ধিমান হওয়া এবং সুন্দর পরিচালক হওয়া ভিন্ন বিষয় আর ধোকাবাজী, চালাকী ও মুনাফেকী হল ভিন্ন বিষয়। হযরত আলী স্বয়ং অনেকবার বলেছেন যে, “আমি যদি ধোকাবাজী ও মুনাফেকীর আশ্রয় নিতাম তাহলে আরবের চালাকতম ব্যক্তি হতাম”। বিধায় কোরআন মজিদেও বয়ান হয়েছে যে, “ওয়া ইয়ামকুরুনা ওয়া ইয়ামকুরুল্লাহা ওয়াল্লাহু খায়রুল মাকেরীন” [সূত্র: সূরা আয়াত ]। আল্লাহর মকর হল সুন্দর পরিচালনা ও হিকমত এবং মুশরেকীনদের মকর হলো ফেরেব ও ধোকা এবং মুনাফেকী ও মিথ্যাবাদ]।
যেমন এই লোকগুলি কোন বিষয়ে পরামর্শ এবং কোন বিষয়কে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে মিটিং করত। যখন সেটির প্রতি ঐক্যমত হয়ে যেত তখন তাকে শক্তিশালী ও স্থায়ী করার জন্য মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিত, যাতে কিছু দিন পর তা সত্যের রূপ ধারণ করে নেয় এবং মানুষ সেটির রহস্য না বুঝেই তার উপর আমল করতে লাগে।
তাদের মকর ও ফেরেবকারীর মধ্যে ইহাও একটি বিষয় যে, মুহাম্মদ (সা.) মাসুম নন বরং সকল মানুষের মত তিনিও বাশার (মানুষ) তাঁর দ্বারা ভুল হতেই পারে। এভাবেই তারা নবী (সা.)-এর সম্মানহানী করতো এবং হকের বিষয়ে তাঁর সাথে বিবাদ করতো যদিও তারা সত্য জানতো। উক্ত চালাকীর মধ্যে ইহাও একটি বিষয় ছিল যে, তারা হযরত আলীকে ‘আবু তুরাব’ বলে আহ্বান করতো, তাঁর প্রতি গাল-মন্দ করতো এবং মানুষকে এই কথা বিশ্বাস করাতো যে (মায়াজাল্লাহ) আলী হল আল্লাহ ও রাসুলের শত্রু।
এমন ধরণেরই চালাকীর মধ্যে ইহাও একটি বিষয় ছিল যে, তারা হযরত আম্মার ইয়াস্সারকে ওবায়দুল্লাহ বিন সাবা অথবা ইবনে সাওদা নাম ধরে আহ্বান করে তাকে অসম্মান করতো। আম্মার ইয়াস্সারের দোষ কেবল ইহাই যে তিনি খলিফাদের নীতির বিরুদ্ধে ছিলেন এবং মানুষকে হযরত আলীর ইমামতের দিকে আহ্বান করতেন (এই ব্যাপারে ড. মুস্তফা কামিল আলশীসি মিসরীর কিতাব “আসসিলাহ্ বাইনুত্ তাসাউফ্ ওয়াত্ তাশীয়” অধ্যয়ন করুন যেখানে লেখক ১০টি দলিলের মাধ্যমে প্রমান করতে চেয়েছে যে আম্মার ইয়াস্সারই হলেন আব্দুল্লাহ বিন সাবা ইয়াহুদী অথবা ইবনে সাওদা)।
তাদের মকর/সড়যন্ত্র সমূহের মধ্য থেকে ইহাও একটি বিষয় যে, তারা হযরত আলীর অনুসারীগণকে ‘রাফেজী’ বলে থাকে, যাতে মানুষের মন-মস্তিষ্কে এ কথাটি বসিয়ে দিতে পারে যে, তারা মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়াতকে অস্বীকার করেছে এবং হযরত আলীর অনুসরণ করে চলেছে।
নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ নাম দেয়া একটি চালাকী মাত্র, যাতে মুখলেছ মুমিনগণ ধোকা খেয়ে যায় এবং রাফেজীদের আকীদা-বিশ্বাসকেই নবী (সা.)-এর সুন্নাত বলে গণ্য করে এবং তাদেরকে সুন্নাত অস্বীকারকারী বলে গণ্য করে।
বাস্তবে তাদের নিকট সুন্নাত হলো সেই জঘন্যতম ‘বিদআত’ যা তারা আমীরুল মুমেনীন এবং নবী (সা.)-এর আহলে বাইতের প্রতি প্রত্যেক মসজিদের মিম্বর থেকে লা’নত বলা শুরু করেছিল। সুতরাং প্রত্যেক শহর ও গ্রাম-গঞ্জের মসজিদ থেকে এই ন্যাক্কারজনক কর্মটি সম্পাদন করা হতো। আর উক্ত বিদআতটি ৮০ বছর পর্যন্ত জারী ছিল। এমন কি কোন খতীব যদি হযরত আলীর প্রতি লা’নত না দিয়েই নামাজের জন্য মিম্বর থেকে নেমে আসতো তখন মসজিদে উপস্থিত লোকেরা এই কথা বলে চেচামেচী শুরু করে দিত যে, “তুমি সুন্নাত তরক করেছ”।
আবার যখন উমর বিন আব্দুল আজিজ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের এই ভাষ্যানুযায়ী, “নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফ, সদাচার ও নিকট আত্মীয়দের দান করার আদেশ দেন. . .” [সুরা নহল, আয়াত-৯০] তাদের সুন্নাতকে পরিবর্তন করে ফেললেন তখন তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে মুসলমানরা তাকে হত্যা করে ফেললো। কারণ উমর বিন আব্দুল আজিজ তাদের সুন্নাতকে বরবাদ করে দিয়েছিল এবং তাদের সেই সমস্ত পূর্বপুরুষদের কথা-বার্তাকে বাতিল ঘোষণা করেছিল যারা তাকে খেলাফতের মসনদে আসীন করেছিল। বিধায় তাকে বিষ পান করিয়ে হত্যা করা হলো, যদিও তার বয়স মাত্র ৩৭ বছর ছিল এবং মাত্র দু বছর পর্যন্ত খেলাফত পরিচালনা করেছিল। কেননা তার চাচাতো ভাইয়েরা নিজেদের সুন্নাতের মৃত্যুকে সহ্য করতে পারছিল না, কারণ এর জন্য আবু তুরাব ও তাঁর সন্তানগণের সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
আবার যখন বনী উমাইয়াদের খেলাফত ধ্বংস হওয়ার পর খেলাফত যখন বনী আব্বাসীয়দের হাতে এলো, তখন তারাও সুযোগ হাতছাড়া করেনি এবং তাঁদের অনুসারীদের প্রতি মুসিবাতের পাহাড় নামিয়ে দিল। সুতরাং যখন জাফর বিন মো’তাসিম আল-মুকাল্লিব বেহ্ মোতাওয়াক্কিলের যুগ উপস্থিত হল তখন সেও হযরত আলী এবং তাঁর সন্তানগণের প্রতি অনেক শত্রুতা প্রদর্শন করল। তার হিংসা ও বিদ্বেষ এতো দূর পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছিল যে, সে কারবালায় ইমাম হুসাইনের পবিত্র কবরকে খুড়ে ফেলেছিল এবং মানুষকে উহার জিয়ারত করাকে নিষেধ করে দিয়েছিল। মোতাওয়াক্কিল তাদেরকেই উপঢৌকন দিত যারা হযরত আলীর প্রতি গাল-মন্দ করতো।
‘ইলম-এ-নহুর’ বিখ্যাত আলিমে দ্বীন ইবনে সুকায়তের জিহ্বা কেবল এই অপরাধে টেনে ছিড়ে ফেলা হয়েছিল যে তিনি হযরত আলী এবং তাঁর আহলে বাইতগণের প্রতি এমন সময় ভালবাসা প্রকাশ করেছিলেন যখন তিনি মোতাওয়াক্কিলের সন্তানদেরকে শিক্ষা দিতেন। মোতাওয়াক্কিলের শত্রুতার সীমা তো এতদূর পর্যন্ত ছিল যে, সে ঐ সমস্ত সন্তানদেরকেও হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিল যাদের নাম তাদের মাতা-পিতা ‘আলী’ রেখেছিল, কেননা মোতাওয়াক্কিলের নিকট ‘আলী’ নামটিই ঘৃনিত ছিল। শত্রুতার হদ ও সীমার প্রতি লক্ষ্য করুন যে, যখন বিখ্যাত কবি আলী বিন আল-জেহাম, মোতাওয়াক্কিলের নিকটে গেল তখন বলতে লাগল, “হে আমীরুল মুমেনীন! আমার পিতা-মাতা আমাকে ত্যাজ্য করেছে”।
মোতাওয়াক্কিল জিজ্ঞাসা করল, “কেন”? সে বললো, “কারণ তারা আমার নাম আলী রেখেছিল আর এই নামটি আমার পছন্দ নয় এবং আমি ইহা পছন্দও করি না যে, কারোর এই নাম রাখা হোক”।
তার কথা শুনে মোতাওয়াক্কিল উচ্চ স্বরে হেসে উঠল এবং তাকে পুরস্কৃত করল।
মোতাওয়াক্কিলের মজলিশে একজন নিজেকে আমীরুল মুমেনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব সাজে। লোকেরা তাকে দেখে হাসি-মস্করা করে আর বলে, “টেকো পুরোহিত আসছে (মায়াজ্ল্লাহ)”।
মজলিশে উপস্থিত লোকেরা তার সাথে ঠাট্টা মস্করা করে, আর তা দেখে মোতাওয়াক্কিল সন্তুষ্ট হয়।
প্রকাশ থাকে যে, যে ব্যক্তি হযরত আলীর প্রতি এতো শত্রুতা পোষণ করতো এবং এ সমস্ত বিষয়াবলীই তার মুনাফেকী ও অবাধ্যতার কারণ ছিল, আহলে হাদীসগণের নিকটই সে খুবই প্রিয় এবং তারা তাকে ‘মহিউস সুন্নাহ্’ উপাধী দ্বারা ভূষিত করেছেন। ‘আহলে হাদীস’ অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত।
এই কথা তো দলীল দ্বারা প্রমানিত হয়েগেছে যে, আহলে সুন্নাতগণ আলী বিন আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা ও শত্রুতা এবং তাঁর থেকে দূরত্ব বজায় রাখাকেই ‘সুন্নাত’ বলে থাকেন।
আবার খাওয়ারেজমীর এই বক্তব্যটি ইহা আরো স্পষ্ট করে দেয় যে, হারুণ বিন খীযরান এবং জাফর মোতাওয়াক্কিল “আলীউশ শায়তান লা আলীউর রহমান” অর্থাৎ “আলী হচ্ছে শয়তান আলী রহমান নয়” কথাটি বলতো (নাউজুবিল্লাহ)।
আর তাকেই খাবার-দাবার ও টাকা-পয়সা দিত যে আলে আবি তালিবগণের প্রতি লা’নত করতো এবং নাওয়াসিবদের মাযহাবকে সাহায্য করত [দ্র: কিতাবুল খাওয়ারেজমী, পৃ-১৩৫]
ইবনে হাজর, আব্দুল্লাহ বিন আহমদ বিন হাম্বল হতে নকল করেছেন যে তিনি বললেন, “যখন নসর বিন আলী বিন সেহবান এই হাদীসটি বয়ান করল যে, রাসুল (সা.) ইমাম হাসান ও হুসাইনের হাত ধরে বললেন, ‘যে আমাকে ভালবাসে আর এই দুজনাকে (হাসান ও হুসাইন) ভালবাসে এবং তাঁদের পিতা-মাতাকে ভালবাসে, কিয়ামত দিবসে সে আর আমি একই স্তরে অবস্থান করব”।
এই কথা শুনে মোতাওয়াক্কিল নসর বিন আলী বিন সেহবানকে একশটি দোররা মারার শাস্তি দিয়েছিল। যার দরুন তার অবস্থা মরার মত হয়ে গিয়েছিল। অতঃপর জাফর বিন আব্দুল ওয়াহিদ বললো, “হে আমীরুল মুমেনীন! এতো সুন্নী”। ইহা শুনে মোতাওয়াক্কিল তাকে ছেড়ে দিল [সূত্র: তাহযীবুত তাহযীব, -ইবনে হাজর, নসর বিন আলী সেহবানের জীবনীতে]
মোতাওয়াক্কিলকে জাফর বিন আব্দুল ওয়াহিদ যে কথাটি বলেছিল উহা দ্বারা প্রত্যেক বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই এই ফলাফল বের করতে পারে যে নসর নামক ব্যক্তিটি ‘সুন্নী’ ছিল, বিধায় সে হত্যার কবল থেকে রক্ষা পেল। আবার ইহা হল দ্বিতীয় দলিল যে আহলে বাইতের শত্রুরাই ‘আহলে সুন্নাত’ সেজে বসেছে। অথচ মোতাওয়াক্কিল আহলে বাইতের প্রতি কঠিন শত্রুতা পোষণ করত আর এমন সবাইকে হত্যা করিয়ে ফেলত যারা তাঁদের ফজিলাতকে বয়ান করে দিত [সূত্র: তাহযীবুত তাহযীব, খন্ড-৫, পৃ-৩৪৮]। প্রসিদ্ধ আছে যে, উসমানীরা হযরত আলীর প্রতি লা’নত করত এবং তাঁর প্রতি উসমান বিন আফ্ফান হত্যার দোষারোপ করত।
ইবনে হাজর লিখেছেন যে আব্দুল্লাহ বিন ইদ্রিস আযদী সুন্নী মতালম্বী ছিলেন এবং কট্টর ‘উসমানী সুন্নী’ ছিলেন। আব্দুল্লাহ বিন আওন বসরী বলেন, “আব্দুল্লাহ বিন ইদ্রিস আযদী খুবই পরিপক্ক ছিলেন, তিনি সুন্নাতের বিষয়ে খুবই কঠিন এবং আহলে বিদআতদের জন্য নাঙ্গা তরবারী ছিলেন”। ইবনে সা’দ বলেন যে, তিনি ছিলেন উসমানী। [সূত্র: তাহযীবুত তাহযীব, খন্ড-৫, পৃ-৩৪৮]
ইব্রাহীম বিন ইয়াকুব জাওযজানী লিখেছেন যে, “আব্দুল্লাহ বিন ইদ্রিস আযদী ‘হারীয মাযহাব’ অবলম্বী ছিলেন অর্থাৎ হারীয বিন উসমান দামেশকীর অনুসারী ছিলেন এবং তার নাসেবিয়াত অনেক বিখ্যাত ছিল”। ইবনে হায়ান বলেন যে, তিনি সুন্নাতের বিষয়ে খুবই কঠিন ছিলেন। [সূত্র: তাহযীবুত তাহযীব, -ইবনে হাজর, খন্ড-১, পৃ-৮২]
এই সমস্ত কথাবার্তা দ্বারা আমার বুঝে তো ইহাই আসে যে, হযরত আলী এবং তাঁর সন্তানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণকারী আর তাঁদের প্রতি লা’নতকারীরাই আহলে সুন্নাতগণের কাছে সুন্নাতের ক্ষেত্রে বড় কঠিন ব্যক্তি বলে গণ্য। আবার এ কথাটিও বর্ণনার অপেক্ষা রাখে না যে, উসমানীরা মহান আহলে বাইতগণের জানের শত্রু ছিল, হযরত আলী এবং তাঁর শুভাকাঙ্খি অনুসারীদেরকে এক চোখে দেখতে পারত না অর্থাৎ মোটেই সহ্য করতে পারত না।
‘আহল-এ-বিদআত’ বলতে তারা সেই ব্যক্তিদেরকে বুঝিয়েছেন যারা হযরত আলীকে ‘ইমাম’ মান্য করেন। কারণ হযরত আলীর ইমামতের আকীদাকে আহলে সুন্নাতগণ ‘বিদআত’ মনে করেন। কেননা এর দ্বারা সাহাবা আর খলিফায়-এ-রাশেদীনদের বিরোধিতা হয়। আবার যেহেতু তাদের পূর্বপুরুষরা হযরত আলীর ‘ইমামত’-কে স্বীকারই করেনি আর না তাঁকে রাসুল (সা.)-এর ‘ওয়াসী’ বলে মান্য করেছে। এই ব্যাপারে অসংখ্য ঐতিহাসিক স্বাক্ষ্য মওজুদ আছে, আমি কেবল ততটুকুই বয়ান করেছি যতটার প্রয়োজন ছিল। আবার নিজ অভ্যাস বশতঃ সংক্ষিপ্ততাকেও দৃষ্টিতে রেখেছি। আগ্রহীগণ কিতাবাদির মধ্যে আরো খোজ করতে পারেন।
“আর যারা আমার পথে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালায়, তাদেরকে আমি অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আর নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের সাথেই আছেন”। [সূরা আনকাবুত, আয়াত-৬৯]
চলবে...........।
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৩
আল-মুনতাজার বলেছেন: “তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া”। [সূরা জিন, আয়াত-২৬ ও ২৭] >>
>>সুতরাং ভ্রষ্টতার পথ ছেড়ে দিয়ে সত্যের পথে চলে আসুন।
২| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:১৬
নড়াইলের ছেলে বলেছেন: ১+২ এর উত্তরঃ
আল্লাহ পাক হচ্ছেন আলিমুল গায়েব।তিনি বিনা মধ্যস্ততায় সকল গায়েবের মালিক। কিন্তু তিনি তার পছন্দের বান্দাদের কে এসব গায়েবের বিষয় জানিয়ে থাকেন।যেমন
“তিনি অদৃশ্যের জ্ঞানী, আর তিনি তাঁর অদৃশ্যের জ্ঞান কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তবে তাঁর মনোনীত রাসূল ছাড়া”। [সূরা জিন, আয়াত-২৬ ও ২৭]
আল্লাহ পাক এমন নন যে অদৃশ্যের খবর তোমাদেরকে অবহিত করবেন, তবে আল্লাহ তার রাসুলগনের মধ্য হতে যাকে ইচ্ছা মনোনিত করেন(সুরা আল ইমরান -আয়াত ১৭৯)
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন “আমি সমস্ত ইলমসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৫১২)
৩।আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।(সূরা আ'রাফ-১৮৮)
রাসুল সল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া সাল্লাম তিনি নিজের থেকে কোন কথা বলেন না, তবে শুধু মাত্র ওহী ব্যাতীত যা তার প্রতি অবতির্ণ হয়।(সুরা নাজম ৩-৪)
'''আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না।''' হুযুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পুরা জীবন ই তো রহমত ও বরকতে পরিপুর্ন এবং উনাকে কখনো অমংগল স্পর্শ করতে পারে নি যে কারনে স্বয়ং আল্লহ পাক উনাকে উসওয়াতুন হাসানাহ বলেছেন এবং রাসুল সল্লাল্লাহু আলিহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরন করলে আল্লহ পাক এর মহব্বত ও ক্ষমার ঘোষনা দেয়া হয়েছে।
উনাকে কখনো অমংগল স্পর্শ করতে পারে নি যেটা আমরা হিজরতের পুর্বে কাফের দের দ্বারা ঘেরাও এবং আল্লাক পাক এর কুদরতি ভাবে উদ্বার এবং এ রকম আরও আসংখ্য উদাহরন রয়েছে
যেখানে আল্লাহ পাক উনার হাবিব হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে কুদরতী ভাবে হেফাযত করেছেন।
@সত্য কথা বলি ঃআপনি উদাহরন দিন যেখানে হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে অমঙ্গল স্পর্শ করেছে (নাউযুবিল্লাহ)
৩| ২৯ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১০:১৭
নড়াইলের ছেলে বলেছেন: “আমি তোমাদেরকে সামান্যতম ইলম দান করেছি। (সূরা বণী ঈসরাইল- ৮৫)
খালিক মালিক মহান আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন হচ্ছেন ‘আলিমুল গইব’ অর্থাৎ সর্ব প্রকার গইব বা অদৃশ্য বস্তু বা বিষয়ের ইল্ম আল্লাহ পাক উনার রয়েছে। আল্লাহ পাক বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ছাড়াই সকল ইলমের বা ইলমে গইবের অধিকারী।
আর এরূপ ইল্মে গইব সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক উনার কালামে পাকে ইরশাদ করেন, “আসমান-যমীনে আল্লাহ পাক ব্যতীত কারো ইল্মে গইব নেই।”(সূরা নমল-৫৫) অর্থাৎ বিনা মধ্যস্থতায় বা কারো মাধ্যম ব্যতীত যে ইল্মে গইব তা শুধুমাত্র আল্লাহ পাক উনারই রয়েছে।
প্রথমোক্ত আয়াত শরীফে ইলমের স্বল্পতা মহান আল্লাহ পাক উনার সাধারণ বান্দাদের জন্য প্রযোজ্য। আল্লাহ পাক উনার বিশেষ বিশেষ বা খাছ বান্দাগণ তথা হযরত আম্বিয়া আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং হাক্বীক্বী নায়িবে নবী ওয়ারাছাতুল আম্বিয়া তথা খাছ খাছ ওলী আল্লাহগণ এ হুকুমের বাইরে। অর্থাৎ দুনিয়াতে মানুষ বৈজ্ঞানিক, দার্শনিক ইত্যাদি যাই হোক না কেন তার জ্ঞান সামান্য থেকে সামান্যতম।
পক্ষান্তরে যাঁরা মহান আল্লাহ পাক উনার গুণে হাক্বীক্বীভাবে গুণান্বিত তথা নবী রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ, বিশেষ করে সকল নবীদের নবী, রসূলদের রসূল হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মহান আল্লাহ পাক উনার খাছ হাবীব বা বন্ধু হওয়ার কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাকই উনাকে সমস্ত প্রকার ইলম দান করেছেন। আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতে এমন কোন বিষয় ছিল না যা উনি জানতেন না বা জানেন না।
অর্থাৎ আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে সর্ব প্রকার ইল্মে গইব দান করেছেন।
মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, “দয়াময় আল্লাহ পাক উনার হাবীব উনাকে কুরআন শরীফ শিক্ষা দিয়েছেন, উনি ইনসান সৃষ্টি করেছেন এবং উনাকে বয়ান শিক্ষা দিয়েছেন।” (সূরা আর রহমান ১-৪)
এ আয়াত শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘তাফসীরে খাযিনে’ উল্লেখ আছে, “বলা হয়েছে যে, ইনসান দ্বারা উদ্দেশ্য হলেন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আর বয়ান দ্বারা বুঝানো হয়েছে যে, যা ঘটেছে এবং যা ঘটবে, পূর্বাপর সমস্ত কিছুর ইল্ম আল্লাহ পাক উনাকে দান করেছেন। কেননা উনাকে পূর্ববর্তী পরবর্তী এবং পরকাল সম্পর্কে সকল গাইবী বিষয়ের ইল্ম দান করেছেন।” অনুরূপ তাফসীরে মায়ালিমুত তানযীল, হুসাইনী, ছাবীতেও উল্লেখ আছে।
হাদীছ শরীফের বিখ্যাত ও মশহুর কিতাব ‘মিশকাত শরীফে’ উল্লেখ আছে, “হযরত আব্দুর রহমান বিন আইশ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। উনি বলেন, আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি আমার রবকে উত্তম ছূরত মুবারকে দেখেছি। আমার রব বললেন, (হে আমার হাবীব!) মুকার্রব ফেরেশ্তাগণ কোন বিষয়ে আলোচনা করছে? আমি বললাম, আপনিই অধিক জানেন। হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর মহান আল্লাহ পাক উনার রহমতের হাত আমার দু’কাঁধের মধ্যখানে রাখলেন। আমি আল্লাহ পাক উনার ফয়েজের শীতলতা আমার মধ্যে অনুভব করলাম। অতঃপর আসমান-যমীনের সকল বিষয় ও বস্তুর ইলম আমার অর্জিত হয়ে গেল।”
এ হাদীছ শরীফের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত মুহাদ্দিছ আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরকাত শরীফে’ লিখেন, “আল্লামা ইবনে হাজার রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, “সামাওয়াত” দ্বারা আসমানসমূহ এমনকি তারও উপরের সমস্ত সৃষ্টির ইলমকে বুঝানো হয়েছে। যেমন মি’রাজ শরীফের ঘটনা দ্বারা বুঝা যায়। আর ‘আল আরদ’ জিন্স (জাতি) অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, ঐ সমূদয় বস্তু যা সমস্ত যমীনের মধ্যে বরং তারও নিচে রয়েছে তার সব বিষয়েরই ইলম হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অর্জিত হয়ে যায়। (শুধু তাই নয় হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন) আমার জন্যে মহান আল্লাহ পাক গইব-এর সকল দরজাসমূহ খুলে দিয়েছেন।”
মূলতঃ এই প্রকারের হাদীছ শরীফ আয়াত শরীফ-এর মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকতা এর বিষয়টা বুঝানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাবীবুল্লাহ সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, হিসেবে সৃষ্টি হয়েছে। যার কারণে উনি সমস্ত ইল্ম ও নিয়ামত সহই সৃষ্টি হয়েছেন। কাজেই নতুন করে দেয়ার মত বিষয় নয়। বরং যা দেয়া হয়েছে সে বিষয়টা সমস্ত কায়িনাতকে বুঝানোর জন্য অনুষ্ঠান করা হয়েছে।
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে, “হযরত উমর ইবনুল খত্তাব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত । উনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে সৃষ্টির শুরু থেকে জান্নাতবাসীদের জান্নাতে প্রবেশ এবং দোযখবাসীদের দোযখে প্রবেশ করা পর্যন্ত সকল বিষয়ের সংবাদ প্রদান করেন। এগুলো যারা স্মরণ রাখতে পেরেছেন উনারা স্মরণ রেখেছেন আর যাঁরা স্মরণ রাখতে পারেননি উনারা ভুলে গেছেন।” (বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ)
‘ছহীহ মুসলিম শরীফে” আরো উল্লেখ আছে যে, “হযরত হুযাইফা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত। উনি বলেন, একদা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ক্বিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু হবে তার সব কিছুই বর্ণনা করে দিলেন, কোন কিছুই বাদ দিলেন না।”
আখিরী রসূল, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন “আমি সমস্ত ইলমসহ প্রেরীত হয়েছি।” (বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, মিশকাত শরীফ-৫১২)
বিখ্যাত মুহাদ্দিছ ও মুহাক্কিক হযরত শায়খ আব্দুল হক্ব মুহাদ্দিছ দেহলভী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার বিখ্যাত গ্রন্থ “মাদারিজুন নুবুওওয়াতে” উল্লেখ করেন, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল বিষয় বা বস্তু সম্পর্কেই অবহিত ছিলেন। উনি আল্লাহ পাক উনার শান তার আহকাম বা বিধি-বিধান, উনার ছিফাত বা গুণাবলী তার আসমা বা নাম সমূহ উনার আফয়াল বা কর্মসমূহের এবং আদি-অন্ত, যাহির-বাতিন ইত্যাদি সর্ব প্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন।”
অনুরূপ আরো ইমাম-মুজতাহিদ আউলিয়ায়ে কিরাম তাঁদের স্ব-স্ব কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, আখিরী রসূল হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ পাক উনার কায়িনাতের সর্বপ্রকার ইলমের অধিকারী ছিলেন। কাজেই, ইলমের স্বল্পতা বা ইলমের সীমা হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার জন্য প্রযোজ্য নয় বরং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন- “মুত্তালা আলাল গইব” অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক উনার হাবীবকে পরিপূর্ণ ইলমে গইব দান করেছেন এবং নূরে মুজাস্সাম, হাবীবুল্লাহ, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার অপরিসীম ইল্ম্ সর্বপ্রকার সীমার উর্ধ্বে।
শুধু তাই নয়, বরং পূর্ববর্তী সকল নবী-রসূল আলাইহিমুস্ সালামগণ এবং হক্কানী ওলীআল্লাহগণকেও মহান আল্লাহ পাক ইলমে গইব দান করেছেন বা করেন। এটাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদা।
৪| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০১
জ্ঞান িপপাসু মুনতািসর বলেছেন: সুবহানাল্লাহ................ আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদ ও আলে মুহাম্মাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৮
সত্য কথা বলি বলেছেন: শিয়ারা মিথ্যা বলতে কোন দ্বিধা করেনা ,এটা আমরা জানি। আপনিও তাই লিখেছেন.... সকল মুসলমানদের মাঝে এ বিষয়ে কোন বিরোধ নেই যে রাসুল (সা.) ‘ইলমে গায়েব’ জানতেন।
কুরআন বলছে...
১।আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার রয়েছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য বিষয় অবগতও নই। আমি এমন বলি না যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার কাছে আসে। আপনি বলে দিনঃ অন্ধ ও চক্ষুমান কি সমান হতে পারে? তোমরা কি চিন্তা কর না ?(সূরা মায়িদা-৫০)
২।তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। (সূরা মায়িদা-৫৯)
৩।আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের কল্যাণ সাধনের এবং অকল্যাণ সাধনের মালিক নই, কিন্তু যা আল্লাহ চান। আর আমি যদি গায়বের কথা জেনে নিতে পারতাম, তাহলে বহু মঙ্গল অর্জন করে নিতে পারতাম, ফলে আমার কোন অমঙ্গল কখনও হতে পারত না। আমি তো শুধুমাত্র একজন ভীতি প্রদর্শক ও সুসংবাদদাতা ঈমানদারদের জন্য।(সূরা আ'রাফ-১৮৮)
৪।বলুন, আল্লাহ ব্যতীত নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে কেউ গায়বের খবর জানে না এবং তারা জানে না যে, তারা কখন পুনরুজ্জীবিত হবে। (সূরা নামল-৬৫)
সুতরাং ভ্রষ্টতার পথ ছেড়ে দিয়ে সত্যের পথে চলে আসুন।