নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম ও জীবনধারার আধুনিকায়ন

২০ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২০



ইসলাম ও জীবনধারার আধুনিকায়ন



আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহ্হারী



মানুষ সামাজবদ্ধ জীবন যাপনকারী একমাত্র প্রাণী নয়। অনেক প্রাণী, বিশেষ করে পোকা-মাকড় সমাজবদ্ধ জীবন যাপন করে এবং তারা কতগুলো বিজ্ঞোচিত বিধিবিধান ও নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চলে। তাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে পারস্পরিক সহযোগিতার নীতি, কর্মবণ্টন, উৎপাদন ও বণ্টন, অধিনায়কত্ব ও আদেশ পালন এবং আদেশ ও আনুগত্য।



মৌমাছি এবং কোন কোন জাতের পিপিলিকা ও উইপোকা এমন সভ্যতা, নিয়ম-শৃঙ্খলা ও সংগঠনের অধিকারী যে, নিজেদেরকে সৃষ্টির সেরা গণ্যকারী মানুষের পক্ষে কেবল বছরের পর বছর, বরং শতাব্দীর পর শতাব্দী চেষ্টা করে এসব ক্ষেত্রে তাদের পর্যায়ে উপনীত হওয়া সম্ভব।



মানুষের সভ্যতার বরখেলাফে তাদের সভ্যতা বন-জঙ্গলের যুগ, প্রস্তর যুগ, লৌহ যুগ, পারমাণবিক যুগ ইত্যাদি বিভিন্ন যুগ অতিক্রম করে আসে নি। তারা বর্তমানে যে সভ্যতা ও সংগঠনের অধিকারী এ পৃথিবীর বুকে যাত্রা শুরু করার পর থেকেই তার অধিকারী ছিল। তাদের পরিস্থিতিতে কোনই পরিবর্তন সাধিত হয় নি। কেবল এই মানুষই – যাকে দুর্বলরূপে সৃষ্টি করা হয়েছে (و خلق الانسان ضعيفا) – শূন্য থেকে তার জীবন শুরু করে এবং সীমাহীনতার দিকে এগিয়ে চলে।



প্রাণিকুলের জন্যে কালের দাবী সব সময়ই এক রকম। কালের দাবী তাদের জীবনকে ওলটপালট করে দেয় না। তাদের জন্যে আধুনিকতাবাদ ও নতুন-পূজা কোন অর্থ বহন করে না; তাদের কাছে নতুন ও পুরাতন বিশ্বের অস্তিত্ব নেই। বিজ্ঞান তাদের জন্যে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আবিষ্কার-উদ্ভাবন নিয়ে আসে না এবং তাদের পরিস্থিতিকে পাল্টে দেয় না। তাদের জন্যে প্রতিটি দিনই ভারী ও ক্ষুদ্র শিল্প নতুন নতুন ও পূর্ণতর রূপ নিয়ে আসে না। এর কারণ কী? এর কারণ হচ্ছে এই যে, সহজাত প্রবৃত্তি তাদের জীবন যাপন পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে, বিচারবুদ্ধি নয়।



কিন্তু মানুষের সামাজিক জীবন সব সময়ই পরিবর্তিত ও রূপান্তরিত হয়ে চলেছে। প্রতি শতাব্দীতেই মানুষের জন্যে এ পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে যাচ্ছে। মানুষের সৃষ্টির সেরা হওয়ার রহস্যও এতেই নিহিত রয়েছে। মানুষ হচ্ছে প্রকৃতির প্রাপ্তবয়স্ক ও পরিপক্ক সন্তান। সে এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তার জন্যে প্রকৃতির প্রত্যক্ষ অভিভাবকত্ব ও তত্ত্বাবধানের প্রয়োজন নেই। তাই সহজাত প্রবৃত্তি নামক রহস্যময় শক্তি তাকে নিয়ন্ত্রণ করে না। কারণ, সে বিচারবুদ্ধি অনুযায়ী জীবন যাপন করে, সহজাত প্রবৃত্তি অনুযায়ী নয়।



প্রকৃতি মানুষকে প্রাপ্তবয়স্ক হিসাবে গণ্য করেছে, তাই তাকে মুক্ত ও স্বাধীন হিসাবে ছেড়ে দিয়েছে; তার ওপর থেকে স্বীয় অভিবাবকত্ব ও কর্তৃত্ব তুলে নিয়েছে। প্রাণিকুল যে কাজ সহজাত প্রবৃত্তির কারণে ও অলঙ্ঘনীয় প্রাকৃতিক আইনের কারণে আঞ্জাম দেয় মানুষকে তা বিচারবুদ্ধির শক্তির দ্বারা, জ্ঞানের কারণে এবং লঙ্ঘনযোগ্য শার্‘ঈ আইনের ভিত্তিতে আঞ্জাম দিতে হয়।



মানুষের পাপাচার ও বিকৃতির রহস্য এখানেই অর্থাৎ তা মানুষের উন্নতি ও পূর্ণতার ধারাবাহিকতা থেকেই উদ্ভূত হয়। মানুষের স্থবিরতা ও অধঃপতনের রহস্যও এখানেই নিহিত। মানুষের পতন ও ধ্বংসও এ থেকেই উদ্ভূত।



মানুষের জন্যে একদিকে যেমন তার উন্নতি ও অগ্রগতির পথ উন্মুক্ত, অন্যদিকে তার জন্যে পাপাচার, বিকৃতি এবং পতনের পথও বন্ধ নয়।



মানুষ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, কোরআন মজীদের ভাষায়, আসমান সমূহ, পৃথিবী ও পাহাড়-পর্বত যে আমানতের বোঝা গ্রহণ করতে রাযী হয় নি মানুষ সে বোঝাই কাঁধে তুলে নিয়েছে। অর্থাৎ সে স্বাধীন জীবনকে বেছে নিয়েছে এবং কর্তব্য ও আইন-কানুনের দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। আর এ কারণেই সে জুলুম-অত্যাচার, পাপাচার, অজ্ঞতা, আত্মপূজা ও ভ্রান্তি থেকে মুক্ত ও সংরক্ষিত নয়।



মানুষের মধ্যে এ আমানত বহনের ও দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের যে বিস্ময়কর সম্ভাবনা নিহিত রয়েছে কোরআন মজীদ তা উল্লেখ করার পর পরই তাকে ‘জুলুমকারী’ (ظلوم) ও ‘অজ্ঞ’ (جهول) বিশেষণেও বিশেষায়িত করেছে।



মানুষের মধ্যে নিহিত এ দুই পরস্পর বিরোধী সম্ভাবনা অর্থাৎ একই সাথে পূর্ণতা অর্জনের ও পথভ্রষ্ট হবার সম্ভাবনা পরস্পর অবিচ্ছেদ্যভাবে জড়িত। মানুষ অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় নয় যারা তাদের সমাজবদ্ধ জীবনে না সামনে এগিয়ে যায়, না পিছনে পিছিয়ে যায়; না ডানে মোড় নেয়, না বামে মোড় নেয়। মানুষের জীবনে যেমন সামনে এগিয়ে যাওয়া তথা উন্নতি-অগ্রগতি আছে তেমনি আছে পশ্চাদমুখিনতা। মানুষের জীবনে যদি পথচলা ও গতি থেকে থাকে, তো থেমে যাওয়া ও অধঃপতনও আছে; যদি উন্নতি-অগ্রগতি ও পূর্ণতা থেকে থাকে, তো ধ্বংস, বিপর্যয় ও বিকৃতিও আছে; যদি ন্যায়বিচার ও ভালো কাজ থেকে থাকে, তো জুলুম-অত্যাচার ও সীমালঙ্ঘনও আছে; যদি জ্ঞান ও বিচারবুদ্ধির বহিঃপ্রকাশ থেকে থাকে, তো অজ্ঞতা ও প্রবৃত্তিপূজাও আছে।



কালের প্রবাহে যে পরিবর্তন সাধিত হয় ও যে নতুন নতুন প্রপঞ্চের উদ্ভব ঘটে, অসম্ভব নয় যে, তা এই দ্বিতীয় শ্রেণীর হবে।



স্থবিরতা ও অজ্ঞতা



মানুষের মধ্যে নিহিত বৈশিষ্ট্যসমূহের অন্যতম হচ্ছে চরম পন্থা ও শিথিল পন্থা। মানুষ যদি এ দুই পন্থার পরিবর্তে ভারসাম্যপূর্ণ পন্থা অবলম্বন করে তাহলে সে ওপরে উল্লিখিত দুই ধরনের পরিবর্তনের মধ্যে পার্থক্য করার চেষ্টা করে, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির দ্বারা এবং স্বীয় চেষ্টা ও কর্মের দ্বারা যুগকে সামনে এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে, নিজেকে যুগের উন্নতি ও অগ্রগতির বহিঃপ্রকাশ সমূহের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে চেষ্টা করে, তেমনি সে যুগের বিকৃতি ও পথভ্রষ্টতার বহিঃপ্রকাশ সমূহকে প্রতিহত করার চেষ্টা করে এবং নিজেকে ঐ সবের রঙে রঞ্জিত করা থেকে বিরত থাকে।



কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, সব সময় এমনটি হয় না। এ ক্ষেত্রে দু’টি ভয়ঙ্কর ব্যাধি সব সময়ই মানুষকে হুমকি দিয়ে আসছে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে স্থবিরতার ব্যাধি, অপরটি হচ্ছে অজ্ঞতার ব্যাধি। প্রথম ব্যাধির পরিণতি হচ্ছে থেমে যাওয়া, নীরব হয়ে যাওয়া, অথর্ব হয়ে পড়া এবং উন্নতি ও অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে পড়া। আর দ্বিতীয় ব্যাধিটির পরিণতি হচ্ছে পতন, বিকৃতি ও পথচ্যুতি।



যাকিছুই নতুন স্থবির তার ওপরে বিরক্ত; সে পুরাতন ব্যতীত কোন কিছুতে অভ্যস্ত হয় না। আর অজ্ঞ ব্যক্তি নব আবিষ্কৃত যেকোন প্রপঞ্চকেই যুগের দাবী বলে অভিহিত করে এবং আধুনিক ও প্রগতিশীল বলে গণ্য করে গ্রহণ করে নেয়। স্থবির ব্যক্তি যা কিছু নতুন তাকেই পাপ, বিকৃতি ও পথচ্যুতি বলে গণ্য করে এবং অজ্ঞ ব্যক্তি নতুন সব কিছুকেই একত্রে ও ঢালাওভাবে সভ্যতা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানের উন্নতি বলে অভিহিত ও গ্রহণ করে।



স্থবির ব্যক্তি শাঁস ও খোসার মধ্যে এবং পন্থা ও লক্ষ্যের মধ্যে পার্থক্য করে না। তার দৃষ্টিতে দ্বীন প্রাগৈতিহাসিক নিদর্শনকে সংরক্ষণের নির্দেশ দিয়েছে। তার মতে, কালের প্রবাহকে থামিয়ে দেয়ার জন্যে এবং বিশ্বের পরিস্থিতিকে যেমন আছে তেমন টিকিয়ে রাখার জন্যেই কোরআন নাযিল হয়েছিল।



স্থবির ব্যক্তির দৃষ্টিতে খোলা কাগজের বই পড়া, নলের বাঁশের কঞ্চির কলম দ্বারা লেখা, সাধারণ গোসলখানায় গোসল করা, হাত দিয়ে খানা খাওয়া, তেলের বাতি জ্বালানো এবং অজ্ঞ ও নিরক্ষর থাকাকে দ্বীনের নিদর্শন হিসাবে হেফাযত করতে হবে। আর অজ্ঞ ব্যক্তি এর বিপরীতে শুধু পাশ্চাত্যের দিকে তাকিয়ে থাকে এবং দেখতে থাকে যে, সেখানে কোন্ নতুন ফ্যাশানের উদ্ভব হয় এবং কোন্ নতুন অভ্যাস গড়ে উঠে, আর সাথে সাথেই অন্ধভাবে তার অনুসরণ করে এবং এর ওপরে আধুনিকতার ও যুগের অনিবার্য দাবীর লেবেল লাগিয়ে দেয়।



স্থবির ও অজ্ঞ উভয় ব্যক্তিই এ মর্মে অভিন্ন ধারণা পোষণ করে যে, অতীতে যা কিছুই ছিল তা-ই ধর্মীয় বিষয় ও ধর্মীয় নিদর্শন। তাদের মধ্যে পার্থক্য কেবল এখানে যে, স্থবির ব্যক্তি এ উপসংহারে উপনীত হয় যে, এসব বিষয় ও নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখতে হবে, অন্যদিকে অজ্ঞ ব্যক্তি এ উপসংহারে উপনীত হয় যে, মূলতঃ ধর্মের মানেই হচ্ছে প্রাচীনতার পূজা এবং নীরবতা ও স্থবিরতা।



বিগত কয়েক শতাব্দী কাল যাবত পাশ্চাত্যের লোকদের মধ্যে ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধ সম্পর্কে অনেক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। মূলতঃ ধর্ম ও বিজ্ঞানের বিরোধের ধারণা দু’টি উৎস থেকে উৎসারিত। প্রথমটি হচ্ছে খৃস্টান ধর্মনেতাদের চিন্তা-বিশ্বাস; তৎকালে খৃস্টান ধর্মনেতারা প্রাচীন কালের বেশ কিছু দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক বিষয়কে – যার অবশ্য ধর্মীয় বিশ্বাসগত কোন না কোন দিক ছিল – ধর্মীয় বিষয় বলে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু বিজ্ঞানের উন্নতির ফলে ঐসব বিষয় ভুল বলে প্রমাণিত হয়। এভাবে বিজ্ঞান পাশ্চাত্যের মানুষের জীবনধারাকে পরিবর্তিত করে দেয় এবং তাদের জীবনের চেহারা বদলে দেয়।



ধার্মিক-সাজা স্থবির লোকেরা একদিকে যেমন কতগুলো দার্শনিক বিষয়কে অযথাই ধর্মীয় রঙে রঞ্জিত করে, তেমনি বস্ত্তগত জীবনের বাহ্যিক রূপকেও ধর্মের আওতাভুক্ত বিষয় বলে গণ্য করে। আর অচেতন অজ্ঞ লোকেরাও ধারণা করে যে, এটাই প্রকৃত অবস্থা এবং ধর্ম মানুষের বস্ত্তগত জীবনের জন্যে বিশেষ রূপ ও ধরন নির্ধারণ করে দিয়েছে। আর যেহেতু বিজ্ঞানের রায় অনুযায়ী মানুষের বস্ত্তগত জীবনের রূপে পরিবর্তন সাধন অপরিহার্য সেহেতু বিজ্ঞান ধর্মকে রহিত করে দেয়ার সপক্ষে রায় প্রদান করে।



প্রথম গোষ্ঠীর স্থবিরতা এবং দ্বিতীয় গোষ্ঠীর অজ্ঞতা মিলে বিজ্ঞান ও ধর্মের বিরোধের ধারণা সৃষ্টি করে।



কোরআনের উপমা



ইসলাম হচ্ছে অগ্রসরমান ও অগ্রসরকারী দ্বীন। মুসলমানরা যাতে সব সময়ই ইসলামের আলোকধারায় স্নাত হয়ে বিকাশ, উন্নতি ও পূর্ণতার অধিকারী হয় সে লক্ষ্যে কোরআন মজীদ একটি উপমা পেশ করেছে। তা হচ্ছে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অনুসারীদের উপমা হচ্ছে জমিতে বপনকৃত শস্যদানার ন্যায়; এ শস্যদানা প্রথমে দুই পাতার ছোট্ট চারা হিসাবে মাটির নীচ থেকে মাথা বের করে দেয়, এরপর নিজেকে শক্তিশালী করে, এরপর স্বীয় কান্ডের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে যায় এবং সে এমন দ্রুত গতিতে এসব পর্যায় অতিক্রম করে যে, তা স্বয়ং কৃষকদেরকেই বিস্মিত করে।



এ উপমা হচ্ছে কোরআন মজীদের লক্ষ্য যে সমাজ গড়ে তোলা তার উপমা; কোরআন মজীদের কাঙ্ক্ষিত সমাজের বিকাশের চার্ট। বস্ত্ততঃ কোরআন মজীদ এমন এক সমাজের ভিত্তি স্থাপন করে যা অনবরত বিকশিত, উন্নত ও সম্প্রসারিত হতে থাকবে।



উইল ডুরান্ট বলেনঃ ইসলামের ন্যায় অন্য কোন ধর্মই স্বীয় অনুসারীদেরকে শক্তিশালী হবার জন্যে আহবান জানায় নি। ইসলাম সমাজকে নতুন করে গড়তে ও সামনে এগিয়ে নিতে কতখানি সক্ষম ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাস তা তুলে ধরেছে।



ইসলাম যেমন স্থবিরতার বিরোধী, তেমনি অজ্ঞতারও বিরোধী। তাই এই গোষ্ঠী যেমন ইসলামের জন্যে বিপদ তেমনি ঐ গোষ্ঠীও ইসলামের জন্যে বিপদ। স্থবির ও শুষ্কমস্তিষ্ক লোকেরা যেকোন প্রাচীন শ্লোগানের প্রতিই আগ্রহ প্রদর্শন করে যদিও এসব শ্লোগানের অনেকগুলোরই ইসলামের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এ কাজ করে তারা অজ্ঞদের হাতে বাহানা তুলে দেয়, আর অজ্ঞরা বলে যে, ইসলাম প্রকৃত অর্থেই আধুনিকায়নের বিরোধী। অন্যদিকে অজ্ঞদের পাশ্চাত্যের অন্ধ অনুকরণ, ফ্যাশনপূজা ও পশ্চিমা রূপ ধারণ এমন এক পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যে, তারা মনে করে, শারীরিক ও মানসিকভাবে এবং প্রকাশ্যে ও গোপনে ফিরিঙ্গি হওয়া, পাশ্চাত্যের সকল আদব-কায়দা, রসম-রেওয়াজ ও ঐতিহ্য গ্রহণ করে নেয়া এবং নিজেদের নাগরিক ও সামাজিক আইন-কানুন ও বিধিবিধানকে সংশোধন করে অন্ধভাবে পাশ্চাত্যের আইন-কানুনের সাথে সামঞ্জস্যশীল করে নেয়ার মধ্যেই প্রাচ্য জগতের মানুষের সৌভাগ্য নিহিত রয়েছে। এভাবে তারা স্থবিরদের হাতে যেকোন নতুন অবস্থার প্রতি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকাবার এবং তাকে স্বীয় জাতির ধর্ম, স্বাধীনতা ও সামাজিক ব্যক্তিত্বের জন্যে বিপদরূপে গণ্য করার জন্যে বাহানা তুলে দিয়েছে।



আর এই ঊভয় পক্ষের এ ধরনের ভুলের খেসারত যাকে দিতে হচ্ছে সে হল ইসলাম।



বস্ত্ততঃ স্থবিরদের স্থবিরতা অজ্ঞদের জন্যে আগ্রাসনের ময়দান তৈরী করে দিচ্ছে, অন্যদিকে অজ্ঞদের অজ্ঞতা স্থবিরদেরকে তাদের শুষ্ক চিন্তাবিশ্বাসের ক্ষেত্রে অধিকতর অন্ধ বানিয়ে দিচ্ছে।



বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, সভ্য হওয়ার ভানকারী এই সব অজ্ঞের দল ধারণা করেছে যে, যুগ একেবারেই ‘নিষ্পাপ’। কিন্তু তাদেরকে প্রশ্ন করতে হয়ঃ যুগের পরিবর্তন মানুষ ছাড়া কি অন্য কারো দ্বারা সংঘটিত হয়েছে? মানুষ কখন থেকে এবং কোন তারিখ থেকে ভুলত্রুটি থেকে মুক্ত ও পাপাচার থেকে সুরক্ষার অধিকারী হয়েছে যে, যুগের পরিবর্তন তাদের ভুলত্রুটি ও পাপাচার থেকে মুক্ত ও সুরক্ষিত থেকে যাবে?



মানুষ একদিকে যেমন তার জ্ঞানগত, চারিত্রিক ও ধর্মীয় ঝোঁকপ্রবণতার দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যুগে যুগে নব নব আবিষ্কার-উদ্ভাবনের দ্বারা মানব প্রজাতির কল্যাণ সাধন করে আসছে, অন্যদিকে আত্মপূজারী, ক্ষমতালোভী, কামুক, অর্থলোভী ও ঔপনিবেশিক প্রবৃত্তি দ্বারাও প্রভাবিত হয়ে অনেক কিছু করে আসছে। মানুষ একদিকে যেমন নব নব আবিষ্কার-উদ্ভাবনে এবং উন্নততর পন্থা ও উপায়-উপকরণ উদ্ভাবনে সফল হচ্ছে, অন্যদিকে সে অনেক ক্ষেত্রে বড় ধরনের ত্রুটি ও ভুলের শিকার হচ্ছে। কিন্তু আপনভোলা অজ্ঞ লোকেরা এসব কথা বুঝতে পারে না; তাদের কেবল এক কথাঃ আজকের দুনিয়া এই রকম, আজকের দুনিয়া ঐ রকম।



বিস্ময়ের ব্যাপার এই যে, এই লোকগুলো জীবনের মূলনীতিকে জুতা, টুপি ও পোশাকের সাথে তুলনা করে থাকে। যেহেতু জুতা ও টুপি নতুন ও পুরাতন হয়ে থাকে; যখনই নতুন আসে, ছাঁচের মধ্য থেকে সদ্য বেরিয়ে আসে তখন তার মূল্য থাকে, অতএব, তা কিনতে হবে ও পরিধান করতে হবে; আর যখনই তা পুরনো হয়ে যাবে তখন তাকে দূরে নিক্ষেপ করতে হবে; সেহেতু (তাদের মতে,) দুনিয়ার সমস্ত সত্যই এ ধরনের। এই অজ্ঞদের দৃষ্টিতে ‘নতুন’ ও ‘পুরাতন’ ব্যতীত ‘ভালো’ ও ‘মন্দের’ আর কোন তাৎপর্য নেই। তাদের দৃষ্টিতে, সামন্তবাদ অর্থাৎ একজন শক্তিমান লোক গায়ের জোরে অন্যায়ভাবে জমিজমা ও ধনসম্পদের মালিক হয়ে বসবে ও আরামে বসে থাকবে এবং তার মুখে হাসি ফুটাবার জন্যে শত শত লোক কাজ করবে – কেবল এ কারণে এ ব্যবস্থাটা খারাপ যে, এটা এখন পুরনো হয়ে গেছে; আজকের দুনিয়া এ ব্যবস্থাকে পসন্দ করে না, এর যুগ অতীত হয়ে গেছে, এ ব্যবস্থা এখন অনাধুনিক হয়ে গেছে। কিন্তু এ ব্যবস্থাটা প্রথম বারের মতো যখন প্রবর্তিত হয়েছিল এবং সদ্য জন্ম নিয়েছিল ও বিশ্বের বুকে পেশ করা হয়েছিল তখন তা ভালো ছিল, কারণ তখন তা নতুন ছিল।



তাদের দৃষ্টিতে নারীকে শোষণ করা খারাপ, কারণ, আজকের দুনিয়া আর এ কাজটিকে পসন্দ করে না এবং একে মেনে নিতে চায় না। কিন্তু গতকাল যে, নারীকে উত্তরাধিকার দেয়া হত না, তাদেরকে ধনসম্পদের মালিক হতে দেয়া হত না, তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা ও চিন্তা-বিশ্বাসের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হত না, তখন তা ভালো ছিল, কারণ, তখন তা নতুন ছিল, সদ্য প্রচলিত হয়েছিল।



এ ধরনের লোকদের দৃষ্টিতে, যেহেতু বর্তমান যুগ হচ্ছে নভোচারণের যুগ, অতএব, বিমান বাদ দিয়ে গাধায় চড়ে পথচলা যাবে না, বিদ্যুত বাদ দিয়ে তেলের কুপি জ্বালানো যাবে না, বিশাল বিশাল টেক্সটাইল মিল বাদ দিয়ে চরকা দ্বারা সুতা কাটা যাবে না, দৈত্যাকার প্রিন্টিং মেশিন বাদ দিয়ে হাতে বইপুস্তক কপি করা যাবে না, একইভাবে নাচের আসর থেকে দূরে থাকা চলবে না, সুইমিং কস্টিউম পরে সাঁতার কাটা বা কিচেন পার্টিতে অংশগ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে না, মারদাঙ্গা ধরনের গানবাজনা না করলে চলবে না, জুয়া না খেললে হবে না, হাঁটু অনাবৃত পোশাক না পরলে চলবে না, কারণ, এর সব কিছুই চলতি শতাব্দীর প্রপঞ্চ; এসব কিছু না করার মানে হচ্ছে গাধায় চড়ে পথচলার যুগে ফিরে যাওয়া।



এই ‘শতাব্দীর প্রপঞ্চ’ কথাটি অসংখ্য মানুষকে ভাগ্যাহত করেছে এবং অসংখ্য পরিবারকে ধ্বংস করে দিয়েছে।



এই লোকেরা বলেঃ বর্তমান যুগ হচ্ছে বিজ্ঞানের যুগ, পরমাণুর শতাব্দী, কৃত্রিম উপগ্রহের যুগ, মহাশূন্য যানের যুগ। খুবই ভালো কথা। আমরাও আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট এ জন্য শুকরিয়া জানাচ্ছি যে, আমরা এ যুগে জীবন যাপন করছি এবং বিজ্ঞান ও শিল্পের অবদানকে আরো যত বেশী সম্ভব ব্যবহারের আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ যুগে কি বিজ্ঞানের ফোয়ারা ছাড়া অন্য সমস্ত ফোয়ারাই শুকিয়ে নিঃশেষ হয়ে গেছে? এ শতাব্দীর সমস্ত প্রপঞ্চই কি বিজ্ঞানের ফসল? বিজ্ঞান কি এরূপ দাবী করছে যে, স্বয়ং বিজ্ঞানী ব্যক্তির প্রকৃতিকে শতকরা একশ’ ভাগ পোষ মানাতে ও অনুগত করতে এবং মানবিক বানাতে পেরেছে?



বিজ্ঞান কখনোই বিজ্ঞানী ব্যক্তি সম্বন্ধে এরূপ দাবী করে নি। অতএব, অত্যন্ত স্বাভাবিকভাবেই একদল বিজ্ঞানী ও পন্ডিত যেমন পরিচ্ছন্ন মনে ও পরিপূর্ণ আন্তরিকতার সাথে অনুসন্ধান ও আবিষ্কার-উদ্ভাবনের কাজে নিয়োজিত আছেন, অন্যদিকে একদল ক্ষমতালোভী, প্রবৃত্তিপূজারী ও অর্থপূজারী লোক ঐসব বিজ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তিদের পরিশ্রমের ফসলকে স্বীয় নোংরা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য চরিতার্থ করণের জন্যে কাজে লাগাচ্ছে। মানুষের বিদ্রোহী প্রকৃতির দ্বারা বিজ্ঞানের ফসল অপব্যবহৃত হয়েছে – এ কারণে সব সময়ই বিজ্ঞানকে বিলাপ করতে দেখা গেছে। আমাদের শতাব্দীর সমস্যা ও দুর্ভাগ্য এটাই।



পদার্থবিদ্যা অনেক অগ্রগতি হাসিল করেছে এবং আলোর ধর্ম আবিষ্কার করেছে। কিন্তু কতক মুনাফাখোর লোক বিজ্ঞানের এ আবিষ্কারকে কাজে লাগিয়ে এমন সব ছায়াছবি তৈরী করেছে যা পারিবারিক জীবনকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। রসায়ন শাস্ত্র উন্নতি সাধন করেছে এবং বিভিন্ন জিনিসের গঠন-উপাদান ও রাসায়নিক উপাদানসমূহের ধর্ম আবিষ্কার করেছে। অতঃপর একদল লোক স্বীয় হীন স্বার্থে এর অপব্যবহারের চিন্তায় লিপ্ত হয় এবং মানব প্রজাতির মাথায় ‘হেরোইন’ নামক এক কঠিন বিপদ চাপিয়ে দেয়। বিজ্ঞান পরমাণুর ভিতরে পর্যন্ত পথ করে নিতে সক্ষম হয় এবং পরমাণুর মধ্যকার বিস্ময়কর শক্তিকে আবিষ্কার করে। কিন্তু এ শক্তিকে মানুষের কল্যাণের জন্যে সামান্য পরিমাণে ব্যবহারের আগেই ক্ষমতালোভী লোকেরা এ শক্তি দ্বারা পারমাণবিক বোমা তৈরী করে এবং অন্য দেশের মানুষের ওপর তার বিস্ফোরণ ঘটায়।



বিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সম্মানে যখন সম্বর্ধনার আয়োজন করা হয় সেখানে তিনি মাইকের সামনে গিয়ে বলেনঃ ‘‘আপনারা কি এমন কারো সম্মানে সম্বর্ধনার আয়োজন করেছেন যার জ্ঞান পারমাণবিক বোমা তৈরীর কারণ হয়েছে?!’’



আইনস্টাইন পারমাণবিক বোমা বানাবার উদ্দেশ্যে তাঁর জ্ঞানের চর্চা করেন নি, কিন্তু অপর একদল লোক তাদের শক্তিলিপ্সার কারণে তাঁর জ্ঞানকে এ কাজে ব্যবহার করেছে।



হেরোইন, পারমাণবিক বোমা এবং এই ধরনের ও ঐ ধরনের চলচ্চিত্রকে কেবল ‘শতাব্দীর প্রপঞ্চ’ হবার যুক্তিতেই ভালো ও গ্রহণযোগ্য গণ্য করা যেতে পারে না। সর্বোচ্চ ডিগ্রীধারী লোকেরা যদি সর্বশেষ মডেলের ক্ষেপণাস্ত্রের সাহায্যে নিরীহ মানুষের ওপর উন্নততম বোমা নিক্ষেপ করে সে ক্ষেত্রেও এ কাজের পৈশাচিক হওয়ার ব্যাপারে বিন্দুমাত্রও সন্দেহের অবকাশ থাকে না।



ইসলাম ও জীবনধারার আধুনিকায়ন (৩)



যারা বলে যে, পারিবারিক অধিকার প্রশ্নে পাশ্চাত্য ব্যবস্থার অনুসরণ করতে হবে, তাদের এ অভিমতের পিছনে মূল কারণ হচ্ছে এই যে, যুগের অবস্থা পরিবর্তিত হয়েছে; বিংশ শতাব্দীর পরিস্থিতি এটাই দাবী করে। অতএব, আমরা যদি এ ব্যাপারে আমাদের অভিমত সুস্পষ্টভাবে তুলে না ধরি তাহলে আমাদের অন্যান্য আলোচনা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।



এ ব্যাপারে যথেষ্ট পরিমাণে ও বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান ও গবেষণার জন্যে আমাদের এ প্রবন্ধমালার সীমিত পরিসরে যথেষ্ট অবকাশ নেই। কারণ, তাহলে প্রচুর বিষয় উপস্থাপন ও আলোচনা করতে হবে, যার মধ্যে কতগুলো বিষয় দার্শনিক, কতগুলো বিষয় ফিক্হী, কতগুলো বিষয় চরিত্র সংশ্লিষ্ট ও কতগুলো বিষয় সামাজিক। আশা করছি, ‘ইসলাম ও যুগের দাবী’ শীর্ষক যে গ্রন্থ রচনার পরিকল্পনা করেছি – যার নোটসমূহ ইতিমধ্যেই প্রস্ত্তত করেছি – তাতে এর সবগুলো বিষয়ই বিস্তারিত আলোচনা করবো এবং আগ্রহী পাঠক-পাঠিকাদের হাতে তুলে দেবো। আপাততঃ দু’টি বিষয় সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরাকেই যথেষ্ট মনে করছি।



এর মধ্যে একটি বিষয় এই যে, যুগের পরিবর্তনের সাথে তাল মিলিয়ে চলার বিষয়টি এর প্রবক্তারা যেরূপ মনে করছে এবং যত সহজে বলছে এটা তত সহজ ব্যাপার নয়। কারণ যুগে যেমন অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রা আছে তেমনি বিকৃতি ও পথচ্যুতিও আছে। তাই যুগের অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে যেমন এগিয়ে যাওয়া প্রয়োজন তেমনি যুগের বিকৃতি ও পথচ্যুতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা প্রয়োজন। এই দুই ধরনের বিষয়কে পরস্পর থেকে পৃথক করার জন্যে দেখতে হবে যে, যুগের বুকে সংঘটিত এসব নতুন নতুন প্রপঞ্চ ও নতুন নতুন ঘটনা কোন কোন উৎস থেকে উৎসারিত হয়েছে এবং কোন লক্ষ্য পানে এগিয়ে চলেছে। দেখতে হবে, মানুষের বিভিন্ন ধরনের প্রবণতার মধ্যে কোন প্রবণতা থেকে এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণীর মধ্য হতে কোন শ্রেণী থেকে এগুলো উৎসারিত হয়েছে। মানুষের সমুন্নত ও মানবিক প্রবণতা থেকে, নাকি মানুষের ঘৃণ্য ও পাশবিক প্রবণতা থেকে? অসদুদ্দেশ্য ও মতলববাজি থেকে মুক্ত বিজ্ঞানী, মনীষী ও গবেষকগণের উদ্ভাবনী স্পৃহা, নাকি সমাজের প্রবৃত্তিপূজারী, ক্ষমতালোভী ও অর্থপূজারী অংশের লোভ-লালসা এসব উদ্ভাবনের উৎস। এ বিষয়ে পূববর্তী দুই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে।



ইসলামী আইনের গতিশীলতা ও স্থিতিস্থাপকতার রহস্য



অন্য যে বিষয়টি সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন তা হচ্ছে, ইসলামী চিন্তাবিদগণ মনে করেন যে, দ্বীন ইসলামে এমন এক রহস্য নিহিত রয়েছে যা এ দ্বীনকে যুগের অগ্রগতির সাথে খাপ খাইয়ে চলার বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে। তাঁদের মতে, এ দ্বীন যুগের অগ্রগতি, সাংস্কৃতিক উন্নতি এবং উন্নয়ন থেকে উদ্ভূত পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্যশীল। এখন আমরা দেখবো যে, উক্ত রহস্য কী? অন্য কথায়, এ দ্বীনের ইমারত নির্মাণে এমন সব নাট-বল্টু ও কব্জা ব্যবহার করা হয়েছে যা তাকে গতিশীলতা প্রদান করেছে, যার ফলে এ দ্বীন তার কোন আদেশ-নিষেধকে পাশে সরিয়ে রাখা ছাড়াই বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির অগ্রগতি থেকে উদ্ভূত পরিবর্তিত পরিস্থিতির সাথে পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে পারে এবং উভয়ের মধ্যে কোন রকম সংঘাতই দেখা দেয় না। প্রশ্ন হচ্ছে, এ নাট-বল্টু ও কব্জাগুলো কী? এখানে এ বিষয়গুলো আলোচনা করা প্রয়োজন।



পাঠক-পাঠিকাদের অনেকে লক্ষ্য করে থাকবেন এবং স্বয়ং আমিও লক্ষ্য করেছি যে, এ বিষয়টির বিশেষজ্ঞত্বের দিক রয়েছে। তাই কেবল বিশেষজ্ঞদের পরিবেশেই তা আলোচিত হওয়া উচিৎ। কিন্তু যেহেতু দ্বীন সম্পর্কে আগ্রহীদের অনেকেই এ প্রশ্নের সম্মুখীন হন এবং অনেকের মনেই এ সম্পর্কে ভুল ধারণা ও সন্দেহ আছে – যারা বিশ্বাস করতে পারছে না যে, সত্যি সত্যিই ইসলামে এরূপ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, তাই আমরা এখানে এ বিষয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করব যাতে সন্দিহান লোকদের সন্দেহ দূর হয়ে যায় এবং অন্যরাও এ ব্যাপারে মোটামুটি ধারণা পেতে পারেন।



সম্মানিত পাঠক-পাঠিকাদের জ্ঞাতার্থে জানাচ্ছি যে, এ বিষয়টি দূরদর্শী ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টি এড়িয়ে যায় নি এবং তাঁরা এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। যারা এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চান তাঁদেরকে ফার্সী ভাষায় রচিত মরহূম আয়াতুল্লাহ্ নায়িনীর ‘‘তাম্বিয়াতুল্ উম্মাহ্’’ গ্রন্থ এবং আল্লামা তাবাতাবাঈর ‘‘মার্জাঈয়্যাত্ ভা রূহানিয়্যাত্’’ গ্রন্থের ‘‘ভিলাইয়্যাত্ ভা যাআমাত্’’ প্রবন্ধ অধ্যয়নের পরামর্শ দিচ্ছি।



পবিত্র দ্বীন ইসলাম স্থায়ী ও অপরিবর্তনশীল আইন-কানুনের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও যে সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির সাথে সামঞ্জস্যশীল এবং জীবনের পরিবর্তনশীল রূপসমূহের সাথে খাপ খাওয়াতে সক্ষম তার পিছনে কয়েকটি রহস্য নিহিত রয়েছে। আমরা এখানে তার কিছুটা তুলে ধরবো।



একঃ চেতনা ও তাৎপর্যের দিকে মনোযোগ এবং বাহ্যিক রূপকে উপেক্ষা



ইসলাম মানুষের জীবনের বাহ্যিক রূপ নিয়ে মাথা ঘামায় নি যা পুরোপুরি মানবিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের মাত্রার ওপর নির্ভশীল। ইসলামের আদেশ-নিষেধ সমূহ মানুষের জীবনের চেতনা, তাৎপর্য ও লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্কিত এবং মানুষ যাতে অধিকতর উত্তমভাবে সে সব লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে উপনীত হতে পারে তার পন্থার সাথে সম্পর্কিত। অন্যদিকে বিজ্ঞান না মানুষের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে পরিবর্তিত করে দেয়, না এ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের পানে উন্নততর, নিকটতর ও অধিকতর ঝুঁকিমুক্ত পথ প্রদর্শন করতে সক্ষম। বিজ্ঞান সব সময়ই মানুষের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে উপনীত হবার জন্যে উন্নততর ও পূর্ণতর উপায়-উপকরণ সরবরাহ করেছে এবং এ লক্ষ্য-উদ্দেশ্যে উপনীত হবার পথপরিক্রমায় সাহায্য করেছে।



ইসলাম মানুষের জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণের বিষয়টিকে নিজের আওতায় রেখেছে এবং জীবনের বাহ্যিক রূপ ও সে জন্যে প্রয়োজনীয় উপায়-উপকরণকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আওতায় ছেড়ে দিয়েছে। এভাবে ইসলাম সভ্যতা ও সংস্কৃতির অগ্রগতির সাথে সংঘাতকে এড়িয়ে গেছে। বরং ইসলাম সভ্যতার অগ্রগতির উপাদান সমূহকে অর্থাৎ জ্ঞান-বিজ্ঞান, শ্রম-সাধনা, সংযম, ইচ্ছাশক্তি, উদ্যম ও দৃঢ়তাকে উৎসাহিত করে স্বয়ং সভ্যতার অগ্রগতি সাধনে মূল ভূমিকা পালন করেছে।



ইসলাম মানব জাতির পথচলার জন্যে কতগুলো নির্দেশক ফলক প্রতিষ্ঠা করেছে। এসব ফলক একদিকে যেমন পথ ও লক্ষ্যস্থল নির্দেশ করছে, অন্যদিকে বিকৃতি, পথচ্যুতি, বিপদ ও ধ্বংসের চিহ্ন প্রদর্শন করছে। ইসলামের সমস্ত বিধিবিধানই হয় প্রথম ধরনের নির্দেশক, নয়তো দ্বিতীয় ধরনের নির্দেশক।



যেকোন যুগের জীবন যাপনের উপায়-উপকরণ সে যুগের মানুষের বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ও তথ্যপ্রবাহের ওপর নির্ভরশীল। কোন যুগে বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রবাহ যে পরিমাণে বিস্তার লাভ করে সে যুগে জীবন যাপনের উপায়-উপকরণ তত বেশী পূর্ণতার অধিকারী হয়। ফলে দুর্বল, অসম্পূর্ণ ও নিম্ন মানের উপায়-উপকরণ কালের অমোঘ বিধান অনুযায়ী বিলুপ্ত হয়ে যায়।



মানুষের জীবন যাপনের এমন কোন উপকরণ অথবা বাহ্যিক রূপ বা কাঠামো নেই ইসলাম যাকে পবিত্র গণ্য করেছে যাতে একজন মুসলমানের জন্যে সব সময় সে উপকরণ অথবা বাহ্যিক রূপ বা কাঠামোকে সব সময়ের জন্যে অাঁকড়ে ধরে রাখতে হবে।



দর্জিগিরি, বয়ন, কৃষি, পরিবহন, যুদ্ধ বা অন্য কোন কাজের ব্যাপারেই ইসলাম বলে নি যে, তা অমুক বিশেষ হাতিয়ারপত্র বা যন্ত্রপাতি দ্বারা আঞ্জাম দিতে হবে যার ফলে বিজ্ঞানের অগ্রগতির দ্বারা ঐসব হাতিয়ারপত্র বাতিল ও পরিত্যক্ত হয়ে যাওয়ায় বিজ্ঞান ও ইসলামের আদেশ-নিষেধের মধ্যে সংঘাত দেখা দিতে পারে। ইসলাম না বিশেষ ফ্যাশানের জুতা ও পোশাক নিয়ে এসেছে, না বিশেষ ধরনের, যেমনঃ হাল্কা ধরনের, ভবন নির্মাণের মডেল নিয়ে এসেছে, না বিশেষ ধরনের হাতিয়ার ও যন্ত্রপাতি তৈরীর নির্দেশ দিয়েছে।



এ হচ্ছে ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট্য যা তার জন্যে যুগের অগ্রগতির সাথে খাপ খাওয়ানোকে সহজ করে দিয়েছে।



দুইঃ স্থায়ী প্রয়োজনে স্থায়ী আইন ও পরিবর্তনশীল প্রয়োজনে পরিবর্তনশীল আইন



দ্বীন ইসলামের আরেকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, মানুষের স্থায়ী প্রয়োজনের জন্যে স্থায়ী আইন ও মানুষের পরিবর্তনশীল প্রয়োজনের জন্যে পরিবর্তনশীল আইন প্রদান করেছে। বলা বাহুল্য যে, ব্যক্তিগত ক্ষেত্র এবং সাধারণ ও সামাজিক ক্ষেত্র নির্বিশেষে মানুষের কতগুলো প্রয়োজন স্থায়ী – যার রূপ সর্বাবস্থায় অভিন্ন। মানুষের মধ্যে নিহিত প্রবণতাসমূহের ও তার সমাজের নিয়ন্ত্রণের জন্যে যে ব্যবস্থা থাকা দরকার এবং সে ব্যবস্থার যে মূলনীতি থাকা প্রয়োজন তা অবশ্যই সর্বাবস্থায় ও সকল যুগে অভিন্ন।



কিন্তু আমি জানি, কতক লোক ‘চরিত্রের আপেক্ষিকতা’ ও ‘ন্যায়বিচারের আপেক্ষিকতা’র প্রবক্তা। তাই তাদের এ অভিমতের কথা মাথায় রেখে আমি আমার বক্তব্য পেশ করব।



অন্যদিকে মানুষের অপর কতক প্রয়োজন পরিবর্তনশীল – যা পরিবর্তনশীল ও অস্থায়ী আইন-কানুন দাবী করে। ইসলাম এ ধরনের প্রয়োজন সমূহের জন্যে পরিবর্তনশীল আইন প্রণয়নের মূলনীতি প্রদান করেছে। অর্থাৎ মূলনীতি প্রদানের মাধ্যমে ইসলাম পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করেছে এবং এ মূলনীতি যেকোন পরিস্থিতির জন্যে গৌণ বিধান প্রণয়নের সুযোগ তৈরী করে দিয়েছে।



অত্র প্রবন্ধে এ বিষয়টিকে এর চেয়ে বেশী ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তবে পাঠক-পাঠিকাদের নিকট বিষয়টিকে সুস্পষ্ট করে তুলে ধরার জন্যে কয়েকটি দৃষ্টান্ত পেশ করবোঃ



ইসলামের একটি সামষ্টিক মূলনীতি হচ্ছেঃ و اعدوا لهم ما اسةطعةم من قوة - ‘‘আর তোমরা তাদের (তোমাদের শত্রুদের) জন্যে তোমাদের সাধ্য অনুযায়ী (সামরিক) শক্তি প্রস্ত্তত করে রাখো।’’ অর্থাৎ মুসলমানদেরকে তাদের সামর্থ্যের সর্বশেষ সীমা পর্যন্ত দুশমনদের মোকাবিলায় সামরিক শক্তি প্রস্ত্তত করে রাখতে হবে। এছাড়া (কোরআন মজীদের এ নির্দেশের পাশাপাশি) হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর নিকট থেকে কতগুলো নির্দেশ এসেছে, ফিকাহ্ শাস্ত্রে যা سبق و رماية নামে পরিচিত। হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এ মর্মে নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দক্ষতা অর্জনের পর্যায় পর্যন্ত অশ্বারোহণ ও তীরন্দাযী শিক্ষা দাও। অশ্বারোহণ ও তীরন্দাযী ছিল সে যুগের সামরিক শিক্ষার অন্যতম। এখানে অত্যন্ত সুস্পষ্ট যে, سبق و رماية আইনের মূল উৎস হচ্ছে و اعدوا لهم ما اسةطعةم من قوة মূলনীতি। অর্থাৎ ইসলামের দৃষ্টিতে তীর-ধনুক, তলোয়ার, বর্শা, ঘোড়া, গাধা ইত্যাদি কোন মৌলিক বিষয় নয়। ইসলামের দৃষ্টিতে যা মৌলিকত্বের অধিকারী তা হচ্ছে, মুসলমানদেরকে যে কোন যুগে তৎকালীন প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে শত্রুর মোকাবিলায় তাদের সাধ্যের শেষ সীমা পর্যন্ত সামরিক ও প্রতিরক্ষা শক্তির দিক থেকে শক্তিশালী হতে হবে। তীরন্দাযী ও অশ্বারোহণকে তখনই প্রয়োজনীয় গণ্য করা হয়েছে যখন তা সামরিক শক্তির পরিচায়ক ছিল। অন্য কথায়, কেবল উপরোক্ত মূলনীতির বাস্তব রূপায়নের জন্যে তৎকালীন প্রেক্ষাপটে তীরন্দাযী ও অশ্বারোহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। শত্রুর মোকাবিলায় সামরিক ও প্রতিরক্ষা শক্তি অর্জন হচ্ছে স্থায়ী মূলনীতি যা স্থায়ী প্রয়োজন থেকে উৎসারিত হয়েছে।



অন্যদিকে তীরন্দাযী ও অশ্ব^ারোহণে দক্ষতা অর্জনের বিষয়টি হচ্ছে একটি সাময়িক ও পরিবর্তনশীল প্রয়োজন পূরণের বিষয় যা যুগের পরিবর্তনের সাথে সামঞ্জস্য রেখে পরিবর্তিত হয়ে যায়। মানব সভ্যতার অবস্থা পরিবর্তিত হবার সাথে সাথে অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক প্রশিক্ষণের অবস্থাও পরিবর্তিত হয়ে যাবে; আজকের দিনে আগ্নেয়াস্ত্র ও তা ব্যবহারের প্রশিক্ষণ তীর-ধনুক ও অশ্ব এবং তীরন্দাযী ও অশ্বারোহণের স্থান দখল করে নিচ্ছে।



আরেকটি দৃষ্টান্তঃ মানুষের সামষ্টিক জীবনের জন্যে কোরআন মজীদে বর্ণিত অপর একটি মূলনীতি হচ্ছে ধনসম্পদের বিনিময়। ইসলাম ব্যক্তিমালিকানার মূলনীতিকে গ্রহণ করেছে। অবশ্য ইসলামে মালিকানার ধারণা এবং পুঁজিবাদী বিশ্বে মালিকানার যে ধারণা প্রচলিত আছে তার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে; অত্র প্রবন্ধের সীমিত পরিসরে সে সম্পর্কে আলোচনা সম্ভব নয়।



মালিকানার শর্ত হচ্ছে সম্পদ বিনিময়ের সুযোগ। ইসলাম সম্পদ বিনিময়ের জন্যে বেশ কিছু মূলনীতি নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম মূলনীতি হচ্ছে و لا تأکلوا اموالکم بينکم بالباطل – ‘‘তোমরা তোমাদের মধ্যে অযথা তোমাদের সম্পদ ভক্ষণ করো না।’’ অর্থাৎ তোমরা অযথাই তোমাদের মধ্যে ধনসম্পদ বিনিময় করো না। অর্থাৎ ধন-সম্পদ যখন এক হাত থেকে অন্য হাতে যায় এবং উৎপাদনকারী তথা মূল অধিকারীর নিকট থেকে অন্য লোকের হাতে যায় এবং তার নিকট থেকে তৃতীয় ব্যক্তির হাতে যায়, এভাবে যে বিনিময় সংঘটিত হয় তার মোকাবিলায় সম্পদের মালিকের জন্যে কোন বৈধ উপকারিতা অবশ্যই থাকা দরকার। সম্পদের মালিকের জন্যে কোন বৈধ উপকারিতা ব্যতিরেকে সম্পদ বিনিময় নিষিদ্ধ। অর্থাৎ ইসলাম সম্পদে ব্যক্তির মালিকানাকে নিরঙ্কুশ এক্তিয়ারের সমতুল্য গণ্য করে না।



অন্যদিকে ইসলামী বিধানে কতগুলো জিনিসের বেচাকিনা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে মানুষের রক্ত ও পায়খানা অন্যতম। এর কারণ কী? এর কারণ মানুষের বা দুম্বার রক্তের এমন কোন কল্যাণকর ব্যবহার নেই যা তাকে মূল্যের অধিকারী করতে ও মানুষের সম্পদের মর্যাদা দিতে পারে। রক্ত ও পায়খানা বেচাকিনা নিষিদ্ধ হওয়ার মূল হচ্ছে و لا تأکلوا اموالکم بينکم بالباطل মূলনীতি। নচেৎ রক্ত ও পায়খানা বেচাকিনা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ইসলামের কোন মৌলিক নীতি নয়। এখানে যে বিষয়টির মৌলিকত্ব রয়েছে তা হচ্ছে দু’টি জিনিসের বিনিময়ের ক্ষেত্রে অবশ্যই মানুষের জন্যে উপকারিতা থাকতে হবে। রক্ত ও পায়খানা বেচাকিনা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি অযথা বিনিময় নিষিদ্ধ হওয়ার মূলনীতির অধীন। শুধু তা-ই নয়, এমন কি বিনিময়ের ব্যাপার যদি না-ও থাকে তথাপি অযথা সম্পদের মালিকানা হস্তান্তর ও সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না।



এ মূলনীতি হচ্ছে একটি স্থায়ী ও সকল যুগের জন্যে প্রযোজ্য মূলনীতি এবং এর উৎস হচ্ছে স্থায়ী সামাজিক প্রয়োজন। কিন্তু রক্ত ও পায়খানাকে সম্পদ গণ্য করা যাবে না ও তা বেচাকিনাযোগ্য নয় – এটা বিশেষ যুগের ও সভ্যতার বিশেষ পর্যায়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। অতএব, পরিস্থিতির পরিবর্তন এবং বিজ্ঞান ও শিল্পের অগ্রগতির সাথে সাথে এর কল্যাণকর ব্যবহার উদ্ভাবিত হলে এতদসংক্রান্ত হুকুমও পরিবর্তিত হয়ে যাবে।



আরেকটি দৃষ্টান্তঃ আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আঃ)-এর জীবনের শেষ দিকে তাঁর চুল ও দাড়ি সাদা হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি তাতে রং লাগান নি। এমতাবস্থায় এক ব্যক্তি তাঁকে বললঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ্ কি বলেন নি, ‘তোমরা তোমাদের সাদা চুলে রং করো।’?’’ জবাবে তিনি বললেনঃ ‘‘হ্যা, বলেছেন।’’ লোকটি বললঃ ‘‘তাহলে আপনি রং করছেন না কেন?’’ হযরত আলী (আঃ) বললেনঃ ‘‘রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যে সময় এ নির্দেশ দেন তখন মুসলমানরা সংখ্যায় কম ছিল। তখন তাদের মধ্যে কতক বৃদ্ধ লোকও ছিলেন এবং তাঁরাও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন। দুশমনরা মুসলমান যোদ্ধাদের দিকে দৃষ্টিপাত করে এ সাদা চুল বিশিষ্ট বৃদ্ধ লোকদেরকে দেখে বুঝতে পারত যে, তাদের প্রতিপক্ষ বৃদ্ধ লোকজন এবং এতে তাদের মনের বল বেড়ে যেত। এ কারণেই রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) সাদা চুল রং করার নির্দেশ দেন যাতে দুশমনরা তাঁদের বৃদ্ধ অবস্থা সম্পর্কে ধারণা করতে না পারে।’’ হযরত আলী (আঃ) এরপর বলেনঃ ‘‘হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) এমন এক সময় এ আদেশ দেন যখন মুসলমানরা সংখ্যাশক্তিতে কম ছিল। তাই তখন এটা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইসলাম সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে, তাই বর্তমানে এর প্রয়োজন নেই। এখন যে চায় রং করতে পারে, যে চায় না করতে পারে।’’



হযরত আলী (আঃ)-এর দৃষ্টিতে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যে রং করার নির্দেশ দেন তা কোন মৌলিক ও স্থায়ী নির্দেশ ছিল না। বরং এ নির্দেশ ছিল মূলতঃ অন্য একটি মৌলিক নির্দেশের বস্তবায়ন মাত্র। সে মৌলিক নির্দেশ বা বিধান হচ্ছে শত্রুদের মনোবল বৃদ্ধি পায় এমন কোন কাজ না করা।



ইসলাম বাহ্যিক রূপকেও গুরুত্ব দেয় এবং মূল চেতনাকেও গুরুত্ব দেয়। তবে ইসলাম বাহ্যিক রূপকে চেতনার জন্যে, খোসাকে বীজের জন্যে, খুলিকে মস্তিষ্কের জন্যে এবং জামাকে শরীরের জন্যে গুরুত্ব প্রদান করে।



বর্ণমালা পরিবর্তন প্রসঙ্গ



বর্তমানে আমাদের দেশে ‘বর্ণমালা পরিবর্তন’ নামে একটি প্রসঙ্গ বেশ লক্ষ্য করা যায়। এ বিষয়টি একদিকে যেমন ফার্সী ভাষা ও সাহিত্যের দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনাযোগ্য, তেমনি ইসলামী নীতিমালার দৃষ্টিকোণ থেকেও আলোচনাযোগ্য। এ বিষয়টি সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে দুইভাবে আলোচনা করা যেতে পারে। একভাবে আলোচনার উপস্থাপনা হবে এভাবে যে, ইসলামে কি কোন বিশেষ বর্ণমালা আছে এবং ইসলাম কি বিভিন্ন ধরনের বর্ণমালার মধ্যে পার্থক্য করে? বর্তমানে আমরা যে বর্ণমালা ব্যবহার করছি – যা আরবী বর্ণমালা নামে পরিচিত – ইসলাম কি তাকে নিজস্ব বর্ণমালা মনে করে এবং অন্যান্য বর্ণমালাকে, যেমনঃ লাতিন বর্ণমালাকে, বিজাতীয় বর্ণমালা মনে করে? অবশ্যই না। বিশ্বজনীন দ্বীন ইসলামের দৃষ্টিতে সমস্ত বর্ণমালাই সমান।



এ বিষয়টি অন্য যেভাবে আলোচনা করা যেতে পারে তা হচ্ছে, বর্ণমালা পরিবর্তন মুসলিম মিল্লাতের বিজাতীয়দের মধ্যে মিশে যাওয়া ও আত্মবিলুপ্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে? নিজস্ব সংস্কৃতির সাথে এ জাতির সম্পর্ক ছিন্ন হওয়ার ক্ষেত্রে কতখানি প্রভাব বিস্তার করতে পারে? এ প্রশ্ন বিশেষভাবে এ কারণে আসে যে, এ জাতি বিগত চৌদ্দশ’ বছর যাবত তার দ্বীনী ও পার্থিব জ্ঞানবিজ্ঞান এ বর্ণমালায়ই লিপিবদ্ধ করেছে। আরো প্রশ্ন এই যে, বর্ণমালা পরিবর্তনের এ প্রস্তাব কার পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে এবং তার বাস্তবায়নকারী কে?



এ প্রসঙ্গে এ সবগুলো বিষয়ই আলোচনা করা প্রয়োজন।



অনাহূত মেহমান হওয়া হারাম, লুঙ্গির টুপি হারাম নয়



আমাদের মতো লোকদেরকে অনেক সময় এ ধরনের প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়; বিদ্রুপের ছলে জিজ্ঞেস করা হয়ঃ জনাব, দাঁড়িয়ে খানা খাওয়া সম্বন্ধে শারী‘আহ্ কী বলে? চামচ ও কাঁটা-চামচ দ্বারা খানা খাওয়ার ব্যাপারে হুকুম কী? লুঙ্গি দিয়ে টুপি তৈরী করে তা মাথায় দেয়া কি হারাম? কথাবার্তায় বিজাতীয় ভাষার শব্দ ব্যবহার করা কি হারাম?



এদের এসব প্রশ্নের জবাবে বলবঃ এসব ব্যাপারে ইসলাম কোন বিশেষ নির্দেশ দেয় নি। ইসলাম যেমন হাত দিয়ে খানা খেতে বলে নি, তেমনি চামচ দিয়ে খেতেও বলে নি। ইসলাম বলেছে, সর্বাবস্থায় পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিধান মেনে চলো। জুতা টুপি ও পোশাকের জন্যেও ইসলাম কোন বিশেষ ফ্যাশান ও ডিজাইন প্রদান করে নি। ইসলামের দৃষ্টিতে ইংরেজী, জাপানী ও ফার্সী তথা সকল ভাষাই অভিন্ন।



কিন্তু …



কিন্তু ইসলাম অন্য একটা কথা বলেছে। ইসলাম বলেছে, ব্যক্তিত্বকে বিক্রি করে দেয়া হারাম। অন্যদের ভয়ে ভীত হওয়া হারাম, অন্ধ অনুসরণ করা হারাম, অন্যদের মধ্যে হযম হয়ে যাওয়া – বিলীন হয়ে যাওয়া হারাম। অনাহূত মেহমান হওয়া হারাম। খরগোশ যেভাবে সাপের সামনে সম্মোহিত হয়ে যায় সেভাবে বিজাতীয়দের দ্বারা সম্মোহিত হওয়া হারাম, বিজাতীয়দের মরা গাধাকে মোটাতাজা খচ্চর মনে করা হারাম। তাদের বিকৃতি ও পথভ্রষ্টতা এবং তাদের দুর্দশাকে ‘শতাব্দীর প্রপঞ্চ’ মনে করে তাতে অভ্যস্ত হওয়া হারাম। ইরানীদের শারীরিক ও মানসিকভাবে এবং বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ফিরিঙ্গি হয়ে যাওয়া উচিৎ – এরূপ বিশ্বাস পোষণ করা হারাম। চার দিনের জন্য প্যারিস যাওয়া এবং ফিরে এসে ‘রা’ হরফকে ‘গ্বাইন্’-এর মতো উচ্চারণ করা এবং ‘রাফ্তাম্’ (গেলাম)-কে ‘গ্বাফ্তাম্’ উচ্চারণ করা হারাম।



তিনঃ অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়



ইসলামের অন্য যে বৈশিষ্ট্যটি তাকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সাহায্য করছে তা হচ্ছে এ দ্বীনের আদেশ-নিষেধ সমূহের বিচারবুদ্ধিগ্রাহ্য দিক। ইসলাম তার অনুসারীদের নিকট ঘোষণা করেছে যে, তার সমস্ত আদেশ-নিষেধই কতগুলো সমুন্নত কল্যাণকর উদ্দেশ্য থেকে উৎসারিত। অন্যদিকে স্বয়ং ইসলাম কল্যাণের বিভিন্ন স্তরও বর্ণনা করেছে। ইসলামের এই শেষোক্ত বৈশিষ্ট্যটি ইসলামের প্রকৃত গবেষকদের জন্যে পরস্পর বিরোধী বিভিন্ন কল্যাণের মধ্যে অগ্রাধিকার নির্ধারণকে সহজ করে দিয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম তার বিশেষজ্ঞদেরকে বিভিন্ন কল্যাণের স্তর পরিমাপ করার এবং স্বয়ং ইসলামের দেয়া পথনির্দেশের আলোকে অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ কল্যাণকে বেছে নেয়ার জন্যে অনুমতি দিয়েছে। ফকীহ্গণ এ নীতিটিকে ‘অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ’ (اهم و مهم) নামকরণ করেছেন। এ ব্যাপারেও অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। কিন্তু (সীমিত পরিসর বিবেচনায়) এ থেকে বিরত থাকলাম।



চারঃ যেসব আইনের ভেটো ক্ষমতা আছে



অন্য যে একটি বৈশিষ্ট্য এ দ্বীনকে গতিশীলতা ও খাপ খাওয়ানোর বৈশিষ্ট্য প্রদান করেছে এবং তাকে জীবন্ত ও চিরন্তন করেছে তা হচ্ছে, এ দ্বীন এমন কতগুলো আইন ও নিয়ম তৈরী করেছে যার কাজ হচ্ছে অন্যান্য আইনের নিয়ন্ত্রণ ও সে সব আইনের মধ্যে ভারসাম্য বিধান। ফকীহ্গণ এ ধরনের আইন ও নিয়মকে ‘ক্বাওয়ায়েদে হাকেমাহ্’ (আধিপত্যকারী/ নিয়ন্ত্রণকারী নিয়ম সমূহ) বলে অভিহিত করেছেন। এর মধ্যে ‘লা হারাজ্’ (ভীতিহীনতা) ও ‘লা যারার্’ (ক্ষতিহীনতা) অন্যতম যা গোটা ফিকাহ্ শাস্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ ধরনের আইন ও নিয়মের কাজ হচ্ছে অন্যান্য আইনকে নিয়ন্ত্রণ ও তাতে ভারসাম্য বিধান করা। প্রকৃত পক্ষে এ জাতীয় আইন ও নিয়মগুলো অন্যান্য আইন-কানুনরে ওপর ভেটো ক্ষমতার অধিকারী। এ ব্যাপারে অনেক দীর্ঘ আলোচনা করা যেতে পারে. এখানে যার অবকাশ নেই।



শাসকের এক্তিয়ারসমূহ



এ পর্যন্ত যা উল্লেখ করা হল তা ছাড়াও পবিত্র দ্বীন ইসলামের ইমারতে আরো অনেক নাট-বল্টু ও কব্জা ব্যবহার করা হয়েছে যা এ দ্বীনকে চিরন্তনত্বের ও সর্বশেষ জীবন বিধান হওয়ার বৈশিষ্ট্য দান করেছে। এ ক্ষেত্রে ইসলাম উপযুক্ত শাসকের হাতে যে ক্ষমতা ও এক্তিয়ার প্রদান করেছে মরহূম আয়াতুল্লাহ্ নায়িনী ও হযরত আল্লামা তাবাতাবাঈ তার ওপর অনেক গুরুত্ব অরোপ করেছেন।



ইজতিহাদ নীতি



আল্লামা ইকবাল বলেনঃ ‘‘ইজতিহাদ হচ্ছে ইসলামের গতিসঞ্চারক শক্তি।’’ তাঁর এ অভিমত পুরোপুরি সঠিক। তবে ইসলামের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইসলামের ইজতিহাদ গ্রহণযোগ্যতা। ইসলামের স্থলে অন্য কিছু বসালে আমরা দেখতে পাব ইজতিহাদ কত কঠিন। এটাই প্রধান বিষয় যে, বিস্ময়কর আসমানী দ্বীন ইসলামের অট্টালিকায় কী এমন সব রহস্য নিহিত রাখা হয়েছে যে, এর ফলে তা সভ্যতার অগ্রগতির সাথে খাপ খাওয়ানোর বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়েছে!



আবূ আলী ইবনে সীনা তাঁর ‘শিফা’ গ্রন্থে ইজতিহাদের অপরিহার্যতাকে এ মূলনীতির ওপর ভিত্তিশীল গণ্য করেছেন। তিনি বলেনঃ যেহেতু যুগের পরিস্থিতি পরিবর্তনশীল, সেহেতু অনবরত নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হয়ে থাকে। অন্যদিকে ইসলামের সাধারণ মূলনীতি স্থায়ী ও অপরিবর্তনীয়। তাই প্রত্যেক কালে ও যুগে এমন কতক ব্যক্তির প্রয়োজন রয়েছে যারা ইসলামের জ্ঞান ও ইসলাম সংক্রান্ত তথ্যাদির সাথে পুরোপুরি পরিচিত থাকবেন এবং প্রত্যেক যুগে যেসব নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হবে মুসলমানদেরকে তদসংশ্লিষ্ট প্রশ্নের জবাব দেবেন।



ইরানের সংবিধানের পরিপূরক ধারায়ও একথাই বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে যে, প্রত্যেক যুগেই মুজতাহিদগণের একটি কমিটি – যাদের সংখ্যা পাঁচ জনের কম হবে না – এবং যাদের প্রত্যেকেই ‘যুগের দাবীসমূহ সম্বন্ধে ওয়াকেফহাল’ হবেন, তাঁরা পাশকৃত আইন-কানুনের ওপর তদারকী করবেন। এ ধারার প্রণেতাদের উদ্দেশ্য এই যে, আইন-কানুন প্রণয়ণের ওপর এমন সব ব্যক্তি দৃষ্টি রাখবেন যারা না ‘স্থবির’ হবেন, না ‘অজ্ঞ’ হবেন, না যুগের উন্নতি-অগ্রগতির বিরোধী হবেন, না অন্যদের অন্ধ অনুসরণকারী হবেন।



এখানে একটি বিষয় স্মরণ করিয়ে দেয়া প্রয়োজন মনে করছি। তা হচ্ছে, প্রকৃত ও পারিভাষিক অর্থের বিচারে ‘ইজতিহাদ’ শব্দের তাৎপর্য হচ্ছে ইসলাম সংক্রান্ত বিষয়াদিতে বিশেষজ্ঞত্ব। এটা এমন বিষয় নয় যে, যেকোন ‘আদর্শচ্যুত’ ব্যক্তি কয়েক দিন দ্বীনী মাদ্রাসায় পড়েছে – এই বাহানায় নিজেকে মুজতাহিদ বলে দাবী করতে পারবে।



নিঃসন্দেহে দ্বীনী বিষয়াদিতে বিশেষজ্ঞত্ব এবং মতামত প্রদানের যোগ্যতা অর্জনের জন্যে একটি জীবনের সাধনা যদি কম না-ও হয় তো বেশী নয়। তারপরও শর্ত হচ্ছে এই যে, এরূপ ব্যক্তিকে শক্তিশালী মেধা-প্রতিভার অধিকারী হতে হবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে তাওফীকপ্রাপ্ত হতে হবে।



এ ধরনের বিশেষজ্ঞত্ব ও ইজতিহাদের বাহ্যিক যোগ্যতা ছাড়াও কেবল এমন লোকদের মতামতই অনুসরণযোগ্য হবে যারা সর্বোচ্চ তাকওয়া-পরহেযগারীর অধিকারী হবেন, আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলবেন এবং আল্লাহ্কে ভয় করে চলবেন। ইসলামের ইতিহাসে এমন ব্যক্তিত্ববর্গের দেখা মিলে যারা পরিপূর্ণ জ্ঞানগত ও চারিত্রিক যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও যখন কোন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করতে চাইতেন তখন আল্লাহ্ তা‘আলার ভয়ে প্রকম্পিত হতেন।



এ বিষয়ের আলোচনা এতদূরে উপনীত হওয়ায় পাঠক-পাঠিকাগণের নিকট পুনরায় ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।







ইরান কালচারাল সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত, আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মুতাহ্হারী প্রণীত ইসলামে নারীর অধিকার গ্রন্থের চতুর্থ অধ্যায় থেকে সংকলিত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.