![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
নারী সম্পর্কে ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মহান নেতা হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর দৃষ্টিকোণ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ইসলামী মানবিক দৃষ্টিকোণ যা সর্বোত্তম প্রগতিশীল দৃষ্টিকোণ। এ দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী তিনি মুসলিম নারীদের সামাজিক ভূমিকাকে বিশ্বের নারীকুলের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছেন। একই সাথে তিনি সমাজে নারীর সক্রিয় ভূমিকা পালন ও ইসলামী বিধি-বিধান মেনে চলার, বিশেষ করে হিজাবের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন : ‘নারীদের ব্যক্তিত্ব প্রদানের জন্য, তাকে মানবিক ব্যক্তিত্বের অধিকারী করার জন্যই হিজাবের আয়াত নাযিল হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন : ‘নারীরা সামাজিক কর্মকা-সমূহে অংশগ্রহণ করতে পারে, তবে হিজাব সহকারে।’
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর দৃষ্টিতে যে কোন সমাজব্যবস্থার জন্যই নারী হচ্ছে সর্বাধিক প্রভাবশালী স্তম্ভ এবং নারীর ভাল ও মন্দ হওয়ার বিষয়টি সমাজের ওপর বিরাট গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব বিস্তার করে থাকে। তাই আধুনিক জাহেলিয়্যাতের এ যুগে ইসলামের মুক্তিদাতা আদর্শের মহান সন্তান হিসেবে হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) নারীর ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ও মর্যাদা পুনরুজ্জীবনের জন্য নিরলস চেষ্টা-সাধনা করে যান।
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) তাঁর সুদীর্ঘ জীবনের প্রতিটি স্তরেই নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করার লক্ষ্যে সোচ্চার ছিলেন এবং এ কারণে নারী সম্পর্কে তাঁর সকল উক্তি একত্র করা হলে একটি বিরাট সংকলনের রূপ নেবে। তিনি মানবজীবনের প্রতিটি বিভাগেই নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করে তুলে ধরেছেন। এখানে আমরা তাঁর কয়েকটি উক্তি তুলে ধরে বিষয়টির ওপর অত্যন্ত সংক্ষেপে আলোকপাত করছি।
ইসলামে নারী-পুরুষের সমমর্যাদা
হযরত ইমাম খোমেইনী মনে করেন ইসলাম নারীকে সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম মর্যাদা দিয়েছে। যেসব লোক মনে করে যে, ইসলাম নারীকে পুরুষের তুলনায় কম গুরুত্ব ও অধিকার দিয়েছে তাদের ধারণার প্রতিবাদ করে তিনি বলেন :
‘ইসলাম হচ্ছে শ্রেষ্ঠতম পথনির্দেশ যা মানবিক মূল্যবোধের দৃষ্টিতে নারী ও পুরুষের মধ্যকার সমতাকে পূর্ণতা প্রদান করেছে। ইসলাম নারী ও পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করেনি এবং যে কেউ এ ছাড়া অন্য কোন ধারণা পোষণ করে সে ইসলামকে সঠিকভাবে জানে না। ইসলাম নারীর অবমাননা করেনি এবং তাকে অবমাননা করার অনুমতিও দেয়নি। জ্ঞানার্জন, কাজকর্ম, সমাজ গঠন ও ইসলামী দায়িত্ব-কর্তব্য পালনের ক্ষেত্রে ইসলাম নারী ও পুরুষকে অভিন্ন গণ্য করেছে।’
নারীর সামাজিক-রাজনৈতিক ভূমিকার তাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক ভিত্তি
তিনি বলেন : ‘নারীর বিভিন্ন বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে ঠিক যেভাবে পুরুষেরও রয়েছে; মানুষের প্রাকৃতিক গঠনরূপজনিত এ মর্যাদা হচ্ছে তার জন্য তুচ্ছতম মর্যাদা। এটা যেমন নারীর জন্য তুচ্ছতম মর্যাদা, তেমনি পুরুষের জন্যও তুচ্ছতম মর্যাদা। এ তুচ্ছতম মর্যাদা থেকেই পূর্ণতা অভিমুখে তার অভিযাত্রা। মানুষ হচ্ছে এক গতিশীল সৃষ্টি; প্রাকৃতিক মর্যাদা থেকে গায়েবের দিকে- আল্লাহ্তে ফানা (বিলীন) হবার দিকে তার অভিযাত্রা।’
ইমাম খোমেইনী ইসলামের দৃষ্টিতে বহিরাঙ্গনে নারীর ভূমিকাকে সমর্থন করতে গিয়ে ইসলামের ইতিহাসের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। তিনি বলেন : ‘ইসলামের প্রথম যুগে নারীরা ময়দানসমূহে অবতীর্ণ হতেন; তাঁরা ইসলামী যুদ্ধসমূহে অংশগ্রহণ করেন। তখন নারীরা আহতদের সেবা-শুশ্রূষা করার জন্য রণাঙ্গনসমূহে যেতেন।’
জ্ঞানার্জন ও কর্মতৎপরতায় নারী পুরোপুরি স্বাধীন
নারীকে শিক্ষা, জ্ঞানার্জন ও কর্মতৎপরতা থেকে দূরে রাখা ও চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে বাধ্য করার কঠোর সমালোচনা করেছেন হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)। তাঁর মতে, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি আদৌ ইসলামসম্মত নয়। তিনি ১৩ নভেম্বর ১৯৭৯ তারিখে একজন জার্মান সাংবাদিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে ‘ইসলাম নারীর স্বাধীনতা ও জ্ঞানার্জনের বিরোধী’ মর্মে পাশ্চাত্যে প্রচলিত ইসলামবিরোধী বিষাক্ত অপ্রপচার খণ্ডন করে বলেন : ‘আপনারা মুসলিম নারীদের সম্বন্ধে ও অন্যান্য বিষয়ে যা কিছু শুনেছেন তার সবই শাহ্ ও মতলববাজ লোকদের প্রচার মাত্র। নারীরা পুরোপুরি স্বাধীন এবং তারা জ্ঞানার্জনেও পুরোপুরি স্বাধীন। অন্যান্য কাজের ক্ষেত্রে পুরুষরা যেমন স্বাধীন ঠিক সেভাবে তারাও স্বাধীন।’
ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের অব্যবহিত পূর্বে ১৯৭৮ সালের ৭ ডিসেম্বর লস এঞ্জেলেস্ টাইমস্-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ইমাম বলেন : ‘ইসলামী সমাজে নারীরা স্বাধীন এবং বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস-আদালত ও সভা-সমিতিতে গমনে কোনভাবেই তাদের বাধা দেয়া হয় না; যেটুকু বাধা দেয়া হয় তা হচ্ছে অনৈতিকতার বিষয়ে যে ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষ সমান এবং তা উভয়ের জন্যই হারাম।’
ইসলামী রাষ্ট্র ও সমাজে নারীর ভূমিকা
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) ইসলামের দৃষ্টিতে সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে নারীর উপস্থিতি ও তৎপরতার গুরুত্ব তুলে ধরতে গিয়ে বলেন : ‘ইসলামের দৃষ্টিতে নারীরা ইসলামী সমাজ বিনির্মাণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার অধিকারী। ইসলাম নারীকে এতখানি সমুন্নত করেছে যাতে সে সমাজের বুকে স্বীয় মানবিক অবস্থান ফিরে পেতে পারে এবং তাকে যে একটি ‘পণ্য’ মনে করা হত সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। আর এর ফলে তার পক্ষে এতখানি বিকাশের অধিকারী হওয়া সম্ভব যাতে সে ইসলামী রাষ্ট্রে দায়িত্ব পালন করতে পারে।’
তিনি নারীদের রাজনৈতিক তৎপরতার অধিকারের ওপর জোর দিয়ে বলেন : ‘রাজনীতির মানে হচ্ছে দেশের শাসনকার্য পরিচালনা করা এবং দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। এ অর্থে এ দেশের সকল জনগণই এ কাজে অধিকার রাখে। নারীরা রাজনীতিতে প্রবেশের পুরোপুরি অধিকার রাখে এবং এ কাজ করা তাদের কর্তব্যও বটে।’
তিনি আরও বলেন : ‘নারীকে পুরুষের সমান অধিকার পেতে হবে। ইসলাম নারী ও পুরুষের সমতার ওপরে গুরুত্ব আরোপ করেছে। ইসলাম তাদের উভয়কেই স্বীয় ভাগ্য নির্ধারণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার দিয়েছে এবং তাদেরকে সকল অধিকারের অধিকারী করেছে- নির্বাচন করার, রায় দেয়ার ও নির্বাচিত হবার অধিকার দিয়েছে।’
ইসলামী বিপ্লবে নারীদের ভূমিকার মূল্যায়ন
এটা সর্বজনবিদিত যে, ইরানের ইসলামী বিপ্লবের বিজয়ের পূর্বে সুদীর্ঘ এক যুগেরও বেশিকাল যাবৎ ইমামের অনুসারীরা দ্বীনের বিপ্লবী আন্দোলন পরিচালনা করেন, আর এ আন্দোলনে কেবল পুরুষরাই অংশগ্রহণ করেননি, নারীরাও অংশগ্রহণ করেছেন এবং তাঁদের অনেকে শহীদ বা আহত হয়েছেন। এছাড়া বিপ্লবের বিজয় প্রক্রিয়ায় এবং বিপ্লবোত্তরকালে বিশ্ব শয়তানী চক্রের উস্কানিতে সাদ্দাম কর্তৃক ইরানের ওপর চাপিয়ে দেয়া যুদ্ধেও নারীরা পবিত্র প্রতিরক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। ইমাম খোমেইনী (র.) ইরানের মুসলিম নারীদের এ গৌরবময় ভূমিকার কথা বিভিন্ন সময় তুলে ধরেন। কিন্তু ইসলামী আন্দোলন, বিপ্লব ও প্রতিরক্ষা যুদ্ধে ইরানী মুসলিম নারীদের সবচেয়ে বড় ও সর্বাধিক গৌরবময় ভূমিকা হচ্ছে স্বীয় প্রিয়জনদের আন্দোলন, বিপ্লব ও যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য উদ্বুদ্ধকরণ- মা, বোন ও স্ত্রী হিসেবে যে ত্যাগের কোন তুলনা নেই। এ ত্যাগের মূল্যায়ন করতে গিয়ে ইমাম বলেন : ‘পুরুষরা যেভাবে ময়দানে উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত মহিলারাও সেভাবেই ময়দানে উপস্থিত ছিলেন; বরং বলা চলে যে, তাঁদের ভূমিকা ও তাঁদের চেষ্টা-সাধনা পুরুষদের তুলনায় বেশি ছিল। কারণ, নারীরা ময়দানে প্রবেশ করলে ময়দানে পুরুষদের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়, দশ গুণ হয়; পুরুষদের পক্ষে এটা দেখা সম্ভব নয় যে, নারীরা ময়দানে প্রবেশ করেছেন, আর তারা পাশে সরে রয়েছেন।’
এ প্রসঙ্গে তিনি ইরানী মুসলিম নারীদের সম্বোধন করে বলেন : ‘আপনারা- মহিলারা প্রমাণ করেছেন যে, আপনারা সামনের কাতারে রয়েছেন। আপনারা পুরুষদের তুলনায় অগ্রবর্তী। পুরুষরা আপনাদের কাছ থেকে অনুপ্রেরণা লাভ করেছে। ইরানের পুরুষরা ইরানের পর্দানশীলাদের কাছ থেকে, ইরানের নারীদের কাছ থেকে শিক্ষাগ্রহণ করেছে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি নারীদের প্রত্যক্ষ আত্মত্যাগের কথাও শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি বলেন : ‘নারীরা পুরুষদের পাশাপাশি অভ্যুত্থান করেন এবং স্বীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার দাবিতে সোচ্চার হন; তাঁরা শাহের বিরুদ্ধে নিন্দা জানান। এর ফলে বহুলপ্রচলিত তথ্য অনুযায়ী, কালো শুক্রবারের ঘটনায় ছয়শ’ মুক্তিকামী নারী শাহের ভাড়াটেদের হাতে নিহত হন।’
নারীর কোলই সমাজের সৌভাগ্যের উৎসস্থল
ইসলামী আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে ইরানের মুসলিম নারী সমাজ যে গৌরবময় ভূমিকা পালন করে তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে তিনি বলেন : ‘সমাজে নারীর এক বিরাট ভূমিকা রয়েছে। নারী হচ্ছে মানব প্রজাতির আশা-আকাক্সক্ষাসমূহ বাস্তবায়নের অন্যতম মাধ্যম। কারণ, নারী হচ্ছে সম্মানার্হ, নারী পুরুষদের লালনকারী। তারা সমাজের শিক্ষক; নারী মানব প্রজাতির সদস্যদের শিক্ষক। জাতিসমূহের সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য নারীর উপস্থিতির ওপর নির্ভরশীল। উপযুক্ত শিক্ষা পেলে নারী প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে ওঠে এবং তাকে উপযুক্ত শিক্ষা দেয়া হলে সে দেশকে গড়ে তোলে।’
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) সমাজে নারীর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন : ‘নারী হচ্ছে সকল কল্যাণের উৎস। বিশ্বের বুকে নারীর ভূমিকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক বৈশিষ্ট্যাবলির অধিকারী। একটি সমাজের ভাল ও মন্দ- কল্যাণ ও অকল্যাণ ঐ সমাজের নারীর ভাল ও মন্দ হওয়া থেকে উৎসারিত।’
ইমাম খোমেইনী আরও বলেন : ‘আমাদের যুগের নারীরা প্রমাণ করেছেন যে, পবিত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁরা পুরুষদের সমকক্ষ; বরং তাঁদের চেয়েও অগ্রবর্তী। নৈতিক পূত-পবিত্রতার বহিঃপ্রকাশ এই নারীরা সংগ্রামের ক্ষেত্রে যেমন অগ্রবর্তী ছিলেন, তেমনি স্বীয় ধনসম্পদ দানের ক্ষেত্রেও তাঁরা অগ্রবর্তী।’
ইমামের দৃষ্টিতে নারীর মাতৃভূমিকার গুরুত্ব
ইমাম খোমেইনীর চিন্তাধারায় পরিবার একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক অবস্থানের অধিকারী। মানবিক আবেগ-অনুভূতির উৎস ও বহিঃপ্রকাশ ক্ষেত্র সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিবার হচ্ছে সমাজের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বিধানের অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। আর এ পরিবারের কেন্দ্রে অবস্থান করছেন মা। বস্তুত সন্তানের লালন-পালন ও তাকে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) বিভিন্ন সময় বলেন : ‘মায়ের কোল হচ্ছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে শিশুকে শিক্ষা দেয়া হয়; আর এটা হচ্ছে শিক্ষকতার কাজ যা বিশেষভাবে বিবেচনার দাবি রাখে। কারণ, মহান মানবগণ মহান মাতাদের দ্বারা প্রদত্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণেরই ফসল।’
ইমাম খোমেইনী (র.) মানবগঠনে নারীর ভূমিকার গুরুত্বের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন : ‘কুরআন মাজীদ মানুষকে শিক্ষা প্রদান করে, তেমনি নারীও মানুষকে শিক্ষাদান করে।’
ইমাম খোমেইনীর এ উক্তি থেকে সুস্পষ্ট যে, যেসব মা সন্তানদের যথাযথভাবে লালন-পালন করেন এবং সুশিক্ষা দিয়ে সুসন্তানরূপে গড়ে তোলেন তাঁরা নবী-রাসূলগণের ভূমিকার অনুরূপ ভূমিকা পালন করেন। তাঁর মতে একটি জাতির সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য নির্ভর করে ঐ জাতির মায়েরা তাঁদের সন্তানদের কী হিসেবে গড়ে তুলছেন তার ওপরে।
ইমাম মায়েদের সম্বোধন করে বলেন : ‘মানুষ গড়ার লক্ষ্যে-যা আসলে নবী-রাসূলগণের মিশন-আল্লাহ আপনাদের হেফাযত করুন। আপনি যদি একজন সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তোলেন তাহলে হয়ত সে একটি জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। আর, খোদা না করুন, আপনার কোলে যদি একটি কুসন্তান গড়ে ওঠে তাহলে হয়ত তার মাধ্যমে সমাজে অনৈতিকতা বিস্তার লাভ করবে।’ অর্থাৎ তিনি সমাজের ভাল ও মন্দ, নেক আমল ও পাপাচার, কল্যাণ ও অকল্যাণ, উত্তম কর্ম ও অনাচার, জাতির খেদমত ও দুর্নীতি ইত্যাদির জন্য মায়ের ভূমিকাকে সবচেয়ে বড় কারণ বলে মনে করেন।
ইমাম খোমেইনী মনে করেন যে, সন্তানের জন্য জীবনযাত্রার কঠিন সংগ্রামে ও প্রতিকূল পরিবেশে মা-ই হচ্ছেন সর্বোত্তম আশ্রয়স্থল। সমস্যা ও সঙ্কটের মুখোমুখি পরিস্থিতিতে সন্তানের জন্য মায়ের সান্ত্বনা এবং স্নেহ-মমতা ও ভালবাসার ন্যায় আর কোন মনস্তাত্ত্বিক নিরাময়কারী নেই। কারণ, এ ধরনের পরিস্থিতিতে কেবল মায়ের পক্ষেই সর্বাধিক সান্ত্বনা প্রদান করা সম্ভব।
ইমামের দৃষ্টিতে সামাজিক অঙ্গনে নারীর উপস্থিতির গুরুত্ব
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.) তাঁর বিভিন্ন বক্তব্যে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসমূহে মুসলিম নারীদের সক্রিয় উপস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি যথোপযুক্ত সংস্কৃতি গড়ে তোলার ওপর বার বার জোর দিয়েছেন। তাঁর এ ধরনের উক্তিতে যেসব দিকের উল্লেখ রয়েছে আমরা এখানে সংক্ষেপে সেসব দিকের উল্লেখ করছি। এগুলো হচ্ছে :
* ইসলামী সমাজ গঠন ও এ সমাজের জন্য যথোপযুক্ত মানুষ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে নারীর ভূমিকা।
* ইরানের ইসলামী বিপ্লবে মুসলিম নারীদের ভূমিকা।
* ইসলামী সমাজের সামাজিক অঙ্গনসমূহে নারীদের সক্রিয় উপস্থিতির গুরুত্ব।
* সুস্থ সমাজ গঠন ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে পরিচালিত পবিত্র সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা।
* অর্থনৈতিক কর্মতৎপরতাসহ সকল অঙ্গনে তৎপরতার ক্ষেত্রে নারীদের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা।
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর বিভিন্ন ভাষণ ও বিবৃতিতে নারী সম্পর্কিত যে দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিফলিত হয়েছে এবং তাতে নারীর জন্য যে গুরুত্ব ও মর্যাদা স্থান লাভ করেছে তার ভিত্তিতে আমরা এ উপসংহারে উপনীত হতে পারি যে, একটি ইসলামী সমাজে মুসলিম নারীরা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ভূমিকা পালনে সক্ষম শুধু তা-ই নয়; বরং এসব অঙ্গনে তার পক্ষে অত্যন্ত প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করা সম্ভব এবং তা পালন করা অপরিহার্যও বটে। এ কারণে ইমাম মনে করেন যে, সমাজে নারীর মর্যাদার উন্নয়ন, রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ড তাদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সমাজের ভাগ্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাদের মতামত প্রকাশ অপরিহার্য প্রয়োজন। আর এটাকে তিনি কেবল তাদের অধিকারই মনে করেন না; বরং তাঁর মতে, তাদেরকে এ অধিকার প্রদান দ্বীনী দৃষ্টিতে এক অপরিহার্য কর্তব্য। অতএব, যারা দ্বীনী বিধি-বিধান ও ঐশী আদেশ-নিষেধ পালন করতে চায় তাদের জন্য নারীকে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদান অপরিহার্য।
ইমামের এ দৃষ্টিভঙ্গি পুরোপুরি ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি যা ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝার ক্ষেত্রে আমাদের সাহায্য করে। কারণ, অন্যান্য ধর্মের দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণের বিপরীতে ইসলাম নারীর ব্যক্তিত্বকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তাকে সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার দিয়েছে এবং সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনসমূহে তার সক্রিয় অংশগ্রহণের প্রতি সমর্থন দিয়েছে।
হযরত ইমাম খোমেইনী (র.)-এর অনন্য সমুন্নত দৃষ্টিভঙ্গিতে নারী হচ্ছে উন্নয়নের অন্যতম প্রধান অক্ষ ও ইসলামী সমাজব্যবস্থার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ। তাই তাকে মানুষ হিসেবে তার যথাযথ ভূমিকা পালনের সুযোগ দিয়ে গোটা সমাজের স্বার্থে তার মানবিক ও সৃজনশীল প্রতিভা ও সম্ভাবনাকে অধিকতর উত্তমরূপে কাজে লাগানো অপরিহার্য।
ইন্টারনেট সূত্র অবলম্বনে
আবু মারু
©somewhere in net ltd.