নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ ও তার কল্প কাহিনী

১৮ ই জুলাই, ২০১৩ দুপুর ২:৫০

আগের লেখার লিঙ্কঃ

Click This Link



সাইফের রেওয়াইয়াতের পর্যালোচনা

ইতিপূর্বে আমরা সাক্বীফাহ্র ঘটনা সম্পর্কে সাইফের বর্ণিত সাতটি রেওয়াইয়াত উল্লেখ করেছি। এখানে আমরা সে সব রেওয়াইয়াতের সংক্ষিপ্তসার তুলে ধরবো এবং এরপর একই ঘটনা সম্পর্কিত অন্যান্য রেওয়াইয়াতের সাথে তার তুলনা করবো।

সাইফের রেওয়াইয়াত সমূহের সংক্ষিপ্তসার

ক) যারা মুরতাদ হয়েছিল বা মুরতাদ হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল তারা ছাড়া আর কেউই আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানায় নি এবং মুহাজিরগণ স্বেচ্ছায় বাই‘আত হন।

খ) আলী যখন শুনলেন যে, লোকেরা আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হয়েছেন এ কথা শুনার সাথে সাথে তিনি সময় বাঁচানোর জন্যে তাঁর নৈশ পোশাক পরিহিত অবস্থায়ই ছুটে যান এবং বাই‘আত হন ও আবু বকরের পাশে বসে পড়েন। লোকেরা পরে তাঁর পোশাক নিয়ে আসে এবং এরপর তিনি তা পরিধান করেন।

গ) ক্বা‘ক্বা‘ বলেন ঃ আমি যোহরের নামায আদায়ের জন্যে মসজিদে ছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি সেখানে এসে মুহাজিরদেরকে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের এবং তাঁর নির্দেশের বিপরীতে সা‘দকে খলীফাহ্ করার জন্যে আনছারদের সমবেত হওয়ার সংবাদ জানালো। এ সংবাদ মুহাজিরদের মধ্যে বিরাট উদ্বেগের সৃষ্টি করে।

ঘ) হুবাব্ বিন্ মুর্ন্যা আবু বকরকে তলোয়ার দ্বারা আক্রমণ করতে উদ্যত হয়েছিলেন, কিন্তু ওমর তাঁর হাতে আঘাত করে তলোয়ার ফেলে দেন। তখন আনছাররা অসুস্থ সা‘দের ওপর দিয়ে লাফিয়ে আবু বকরের নিকটে চলে যান এবং তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হন। আর আনছারদের বিরোধিতা ছিলো ভুল কাজ যা ছিলো জাহেলিয়্যাত যুগের ভুল কাজের অনুরূপ এবং আবু বকর এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।

ঙ) সা‘দ আবু বকরকে বলেন ঃ আপনারা মুহাজিরগণ এবং আমার কওমের লোকেরা (আনছার) আমাকে বাই‘আত হতে বাধ্য করেছেন।

জবাবে তিনি বলেন ঃ আমরা যদি তোমাকে সমষ্টি থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করতাম এবং তুমি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ সমষ্টিতে যোগদান করতে তাহলে একটা পথ ছিলো। কিন্তু আমরা তোমাকে সমষ্টির সাথে যোগদানে বাধ্য করেছি। অতএব, এখন আর তোমার ফিরে যাবার কোনো পথ নেই। এখন যদি তুমি আনুগত্য থেকে বিরত থাকো বা সমষ্টির মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করো তাহলে তোমার শিরচ্ছেদ করবো।

চ) বাই‘আতের পর আবু বকর মোটামুটি দীর্ঘ দু’টি খোতবাহ্ প্রদান করেন।

ছ) উমাইয়াহ্ গোত্রের খালেদ বিন্ সা‘ঈদ কর্তৃক আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের বিরোধিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি শান্তিকালীন সময়ে রেশমী পোশাক পরিধান করেছিলেন। তখন ওমর তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলার জন্যে নির্দেশ দেন। এ কারণেই খালেদ আলীকে বলেন ঃ হে ‘আব্দ্ মানাফের বংশধর! আপনারা কি পরাজিত ও পরাভূত হয়েছেন? জবাবে আলী বলেন ঃ তুমি কি একে সংগ্রাম বলে মনে করছো, নাকি খেলাফত বলে? তখন ওমর খালেদকে বলেন ঃ আল্লাহ্ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। তুমি এমন কথা মুখে এনেছো যা সব সময় মিথ্যাবাদীদের হাতে বাহানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

তুলনা ও পর্যালোচনা

এ হলো সাক্বীফাহ্ ও আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের ঘটনা সম্পর্কে সাইফের রেওয়াইয়াত সমূহের সংক্ষিপ্তসার যার পূর্ণ বিবরণ ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে যে সব ছহীহ্ ও মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্য থেকে কতগুলো আমরা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করেছি। এবার আমরা এ দুই ধরনের বর্ণনাকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করবো। তাহলেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, সাইফ মিথ্যা হাদীছ রচনার ক্ষেত্রে কতখানি পারঙ্গম ছিলো এবং ইসলামের ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনাবলী থেকে কতখানি ভিন্ন ও বিপরীত বর্ণনা প্রদান করেছে।

১) আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সাইফ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ছাহাবী ও ঘনিষ্ঠ জনদের, বিশেষতঃ বানী হাশেম ও মুহাজিরদের

জবাবে তিনি বলেন ঃ আমরা যদি তোমাকে সমষ্টি থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য করতাম এবং তুমি আমাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে এ সমষ্টিতে যোগদান করতে তাহলে একটা পথ ছিলো। কিন্তু আমরা তোমাকে সমষ্টির সাথে যোগদানে বাধ্য করেছি। অতএব, এখন আর তোমার ফিরে যাবার কোনো পথ নেই। এখন যদি তুমি আনুগত্য থেকে বিরত থাকো বা সমষ্টির মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করো তাহলে তোমার শিরচ্ছেদ করবো।

চ) বাই‘আতের পর আবু বকর মোটামুটি দীর্ঘ দু’টি খোতবাহ্ প্রদান করেন।

ছ) উমাইয়াহ্ গোত্রের খালেদ বিন্ সা‘ঈদ কর্তৃক আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের বিরোধিতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে যে, তিনি শান্তিকালীন সময়ে রেশমী পোশাক পরিধান করেছিলেন। তখন ওমর তাঁর পোশাক ছিঁড়ে ফেলার জন্যে নির্দেশ দেন। এ কারণেই খালেদ আলীকে বলেন ঃ হে ‘আব্দ্ মানাফের বংশধর! আপনারা কি পরাজিত ও পরাভূত হয়েছেন? জবাবে আলী বলেন ঃ তুমি কি একে সংগ্রাম বলে মনে করছো, নাকি খেলাফত বলে? তখন ওমর খালেদকে বলেন ঃ আল্লাহ্ তোমার মুখ ভেঙ্গে দিন। তুমি এমন কথা মুখে এনেছো যা সব সময় মিথ্যাবাদীদের হাতে বাহানা হিসেবে ব্যবহৃত হবে।

তুলনা ও পর্যালোচনা

এ হলো সাক্বীফাহ্ ও আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের ঘটনা সম্পর্কে সাইফের রেওয়াইয়াত সমূহের সংক্ষিপ্তসার যার পূর্ণ বিবরণ ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করা হয়েছে। অন্যদিকে এ বিষয়ে যে সব ছহীহ্ ও মুতাওয়াতির হাদীছ বর্ণিত হয়েছে তার মধ্য থেকে কতগুলো আমরা ইতিপূর্বে উদ্ধৃত করেছি। এবার আমরা এ দুই ধরনের বর্ণনাকে পাশাপাশি রেখে তুলনা করবো। তাহলেই সুস্পষ্ট হয়ে যাবে যে, সাইফ মিথ্যা হাদীছ রচনার ক্ষেত্রে কতখানি পারঙ্গম ছিলো এবং ইসলামের ইতিহাসের প্রকৃত ঘটনাবলী থেকে কতখানি ভিন্ন ও বিপরীত বর্ণনা প্রদান করেছে।

১) আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সাইফ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ছাহাবী ও ঘনিষ্ঠ জনদের, বিশেষতঃ বানী হাশেম ও মুহাজিরদের



করছিলাম এবং এরপর এক ব্যক্তি এসে মুহাজিরদেরকে জানায় যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর গৃহীত অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আনছাররা সা‘দের অনুকূলে বাই‘আত হতে চাচ্ছে।

ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ করেছি, মিথ্যা হাদীছ রচনার ক্ষেত্রে সাইফ অত্যন্ত পারঙ্গম ছিলো। উদাহরণ স্বরূপ এ রেওয়াইয়াতে সে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে ছাহাবীদের নিকট থেকে খেলাফত প্রশ্নে অঙ্গীকার গ্রহণের কথা উল্লেখ করেছে এবং উসামাহ্র বাহিনী সংক্রান্ত ঘটনা এমনভাবে বর্ণনা করেছে যা থেকে বুঝা যেতে পারে যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) কার অনুকূলে কথিত অঙ্গীকার গ্রহণ করেছিলেন। কারণ সে এতদসংক্রান্ত রেওয়াইয়াতে বলে ঃ ওসামাহ্র নিকট হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের খবর পৌঁছলে তিনি রওয়ানা হওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং ওমরকে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খলীফাহ্ আবু বকরের নিকট পাঠান।

একজন পাঠক যখন প্রথম রেওয়াইয়াতটি পড়বেন তখন তাঁর মনে এ ধারণা হওয়াই স্বাভাবিক যে, খেলাফতের ব্যাপারে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর পক্ষ থেকে একটি অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিলো, কিন্তু আনছারগণ তার বিরোধিতা করতে চাচ্ছিলেন। আর দ্বিতীয়োক্ত রেওয়াইয়াত থেকে এ ধারণা পাওয়া যায় যে, উক্ত অঙ্গীকার আবু বকরের অনুকূলে গ্রহণ করা হয়েছিলো। কারণ, সাইফ বলছে যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের খবর পৌঁছলে ওসামাহ্ রওয়ানা হওয়া থেকে বিরত থাকেন এবং ওমরকে “হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খলীফাহ্ আবু বকরের নিকট” পাঠান।

সাইফ তার অপর এক রেওয়াইয়াতেও এ কথাই বুঝাবার চেষ্টা করেছে। সে বলেছে ঃ কেউ তাঁদেরকে আহ্বান না করলেও মুহাজিরগণ কাতারবদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে একের পর এক তাঁর অনুকূলে বাই‘আত হন। কিন্তু অনুসন্ধান ও নিখুঁত পর্যালোচনার ফলে আমরা দেখতে পাই যে, অত্র হাদীছের রেওয়াইয়াতকারী হিসেবে সাইফ যে ক্বা‘ক্বা‘ বিন্ আম্রের নাম উল্লেখ করেছে। কিন্তু বাস্তবে এরূপ কোনো ব্যক্তির আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিলো না; এ হচ্ছে সাইফের তৈরী করা কাল্পনিক চরিত্র সমূহের অন্যতম।



(এ বিষয়ে আমি আমার লেখা ‘দেড়শ’ জন কল্পিত ছাহাবী’ গ্রন্থে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।)

৪) সাইফ বলেছে যে, হাব্বাব বিন্ মুনযার সেদিন সা‘দ বিন ‘ইবাদাহ্র অনুকূলে বাই‘আত হবার লক্ষ্যে তলোয়ার কোষমুক্ত করেছিলেন। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো এই যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ফুফাতো ভাই যুবাইর ইবনে ‘আওয়াম সেদিন হযরত আলী (আঃ)-এর অনুকূলে বাই‘আত হওয়ার জন্যে তলোয়ার কোষমুক্ত করেছিলেন। কিন্তু যেহেতু যুবাইর ও আলী উভয়ই ছিলেন মুহাজির, আর সাইফ বলতে চেয়েছে যে, মুহাজিরদের মধ্য থেকে কেউই আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হওয়ার বিরোধিতা করেন নি, বরং কেবল আনছাররাই বিরোধিতা করেছিলেন, সেহেতু সে যুবাইরের কাজটিকে হাব্বাবের নামে চালিয়ে দিয়েছে এবং সে ক্ষেত্রেও তাঁর নামে এ কাজটিকে সা‘দের অনুকূলে দেখিয়েছে, আলীর অনুকূলে নয়।

৫) ওমর আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত সম্বন্ধে বলেন যে, এ বাই‘আত ছিলো জাহেলিয়্যাত যুগের বিচ্যুতি সমূহের ন্যায় একটি বিচ্যুতি। কিন্তু ওমরের এ কথাটিকে চাপা দেয়ার লক্ষ্যে সাইফ আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের ক্ষেত্রে আনছারদের বিরোধিতাকে ‘বিচ্যুতি’ হিসেবে উল্লেখ করেছে যাতে পাঠক-পাঠিকাগণের মনে হয় যে, ওমরও জাহেলিয়্যাত যুগের বিচ্যুতির ন্যায় বিচ্যুতি বলতে এটাই বুঝিয়েছেন।

৬) বাই‘আতের পর আবু বকর মোটামুটি দীর্ঘ দু’টি খোতবাহ্ প্রদান করেন বলে সাইফ তার রেওয়াইয়াতে উল্লেখ করেছে। আমরা যদি সূক্ষ্মভাবে এ দু’টি খোতবাহ্ নিয়ে পর্যালোচনা করি তো দেখতে পাবো যে, তার অন্যান্য রেওয়াইয়াতের ন্যায় এ দু’টি রেওয়াইয়াতও মিথ্যা। কারণ, এ দু’টি খোতবায় প্রধানতঃ মৃত্যু, দুনিয়ার নশ্বরতা ও পরকালের শাস্তি সম্পর্কে আলোচনা ও নছিহত করা হয়েছে। খোতবাহ্র এ ধরনটি প্রথম তিন খলীফাহ্র খোতবায় পাওয়া যায় না। বরং এ ধরনটি হচ্ছে বিশেষভাবে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এবং হযরত আলী (আঃ)-এর অনুসৃত পদ্ধতি Ñ যা হযরত আলীর পরে মুসলমানদের মধ্যে সাধারণ প্রচলন লাভ করে। সাইফ যে সব প্রাঞ্জল কবিতা ও গৌরব গাথা রচনা করেছে, এ খোতবাহ

দু’টি তার তুলনায় অপেক্ষাকৃত নিরস ধরনের। এ থেকে মনে হয় যে, সাইফ তার বিশেষ আক্বিদাহ্-বিশ্বাসের প্রভাবে দো‘আ মূলক এবং পরকালীন শাস্তি ও পুরস্কার সংক্রান্ত ওয়ায-নছিহতের ব্যাপারে বিশেষজ্ঞত্বের অধিকারী ছিলো না। এ কারণে সে তার মিথ্যা রচনার ক্ষেত্রে এ বিষয়টিতে ভাষাগত ব্যাপারে পারঙ্গমতার পরিচয় দিতে পারে নি।১ এছাড়া হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ও খলীফাহ্ আবু বকরের সময় দীর্ঘ খোতবাহ্র প্রচলন ছিলো না। তৎকালে সাধারণতঃ সংক্ষিপ্ত খোতবাহ্ দেয়া হতো এবং তাতে মূল কথাগুলোই বলে দেয়া হতো। খলীফাহ্ ওমরের যুগে দীর্ঘ খোতবাহ্ প্রদান শুরু হয় এবং হযরত আলী (আঃ)-এর খেলাফত কালে তা চরমোৎকর্ষে উপনীত হয়।

তাছাড়া রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলগণ সাধারণতঃ প্রথম খোতবায় সরকারের রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। অন্যান্য বর্ণনাকারী আবু বকরের যে প্রকৃত খোতবাহ্ রেওয়াইয়াত করেছেন তাতে এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যায়। এ সব বিষয় বাদ দিলেও যে বিষয়টি সব চেয়ে বেশী দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হচ্ছে আবু বকরের যবানীতে সাইফ যে কথা ব্যবহার করেছে। সাইফের দাবী অনুযায়ী, আবু বকর বলেন ঃ

الا ان لی شيطانا يعترينی فاذا اتانی فاجتنبونی و لا اوثرفی اشعارکم و ابشارکم.

“সাবধান! জেনে রাখো, অবশ্যই আমার একটি শয়তান আছে যা (অনেক সময়) আমাকে পরাভূত করে, অতএব, যখন তা আমার কাছে আসবে (ও আমাকে পরাভূত করবে) তখন তোমরা আমার কাছ থেকে দূরে থেকো যাতে আমি নিজের স্বার্থে তোমাদের ধন ও জনে হস্তক্ষেপ না করি।”

সাইফ যে আবু বকরের যবানীতে এ বাক্যটি জুড়ে দিয়েছে তার উদ্দেশ্য কী তা সুস্পষ্ট নয়। সে কি এরূপ ধারণা করেছিলো যে, আবু বকরের যুগের জনগণ তাঁর নিকট থেকে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ও হযরত আলী (আঃ)-এর খোতবাহ্র ন্যায় ওয়ায-নছিহত মূলক ও দুনিয়া ত্যাগ বিষয়ক খোতবাহ্ পসন্দ করে থাকবে? যদি তা-ই হয়ে থাকে তাহলে সে কেন এটা বুঝতে পারে নি যে, সে ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়ই হোক, কার্যতঃ আবু বকরের কঠোর নিন্দা করেছে? কারণ, মুসলমানদের খলীফাহ্র জন্যে এ ধরনের একটি অস্বস্তিকর কথা স্বীকার করা মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়।

আর শয়তান যখন তাঁর ওপর বিজয়ী হবে ও তাঁকে পরাভূত করবে তখন যেন মুসলমানরা তাঁকে বর্জন করেন Ñ এ ধরনের কথার কোন সঠিক তাৎপর্য নেই। কারণ ওসামাহ্র বাহিনীকে বিদায় দেয়ার সময় আবু বকর যে কথা বলেছিলেন বলে সাইফ দাবী করেছে তার মতোই খোতবাহ্র নামে আবু বকরের যবানীতে সাইফের লাগিয়ে দেয়া এ কথাটি মুসলমানদের খলীফাহ্ সম্পর্কে মুসলিম জনগণের মধ্যে খারাপ ধারণা ও ঘৃণা সৃষ্টির জন্যে যথেষ্ট।

তবে সাইফ এমন বোকা লোক ছিলো না যে, সে এসব বুঝতে পারে নি। বরং সে অনেকের ধারণার চাইতেও অনেক বেশী ধুর্ত ছিলো। তাই সে তার কুফরী আক্বিদাহ্-বিশ্বাস২ ও ইসলামের প্রতি তার দুশমনীর কারণে ইসলামের ইতিহাসের মধ্যে কতগুলো উদ্ভট বিষয় ও বিভ্রান্তিকর চিন্তা প্রবেশ করাতে চেয়েছিলো যাতে এর মাধ্যমে সে ইসলামের বিশাল প্রাসাদের ভিত্তিকে নড়বড়ে করে ফেলতে পারে। পরে আমরা সাইফের আরো কতগুলো রেওয়াইয়াত নিয়ে আলোচনা করবো যা থেকে এ সত্যটি আরো সুস্পষ্টভাবে ধরা পড়বে।

৭) সাইফ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর দেহরক্ষী ছার্খা থেকে বর্ণনা করেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন ইন্তেকাল করেন তখন খালেদ বিন্ সা‘ঈদ ‘আছী ইয়ামানে ছিলেন। তিনি এক মাস পর মদীনার উদ্দেশে রওয়ানা হন এবং মদীনায় পৌঁছে রেশমী ক্বাবা (বহিরাবরণ) গায়ে ওমর ও আলীর সামনে পড়ে যান, অথচ তখন যুদ্ধের সময় ছিলো না। তখন ওমরের নির্দেশে তাঁর আশেপাশের লোকেরা খালেদের রেশমী ক্বাবা তাঁর গায়ে থাকা অবস্থায়ই ছিঁড়ে ফেলে। এতে খালেদ ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন এবং আলীকে উদ্দেশ করে বললেন ঃ “হে আবূল হাসান! হে আব্দ্ মানাফের বংশধররা! তোমরা খেলাফতকে হাতছাড়া করেছো এবং পরাভূত হয়েছো!”

সাইফ কর্তৃক খালেদের মুখে এ কথা লাগানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে এটাই বুঝানো যে, খালেদ বিষয়টিকে গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বানী আব্দ্ মানাফের পরাজয় হিসেবে দেখেছেন তথা খালেদ কর্তৃক আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের বিরোধিতা ছিলো গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে।

সাইফের বর্ণনা অনুযায়ী, জবাবে আলী বললেন ঃ “তুমি কি একে পরাভূতকারী ও পরাভূত হিসেবে দেখছো, নাকি খেলাফত হিসেবে?” এর মাধ্যমে সাইফ দেখাতে চেয়েছে যে, আলী বিষয়টিকে গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন নি। অন্যদিকে, সাইফ বলছে, ওমর খালেদের দিকে ফিরে বললেন ঃ “আল্লাহ্ তোমার মুখকে চুরমার করে দিন। আল্লাহ্র শপথ! তুমি এমন কথা বলেছো যা সব সময়ই মিথ্যাবাদীদের নিকট বাহানা হয়ে থাকবে। আর যে এ কথা বলবে সে কেবল নিজের ক্ষতিই করবে।” এভাবে সে বুঝাতে চায় যে, ওমরও বিষয়টিকে গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার বিরোধিতা করেন। শুধু তা-ই নয়, সাইফ সুকৌশলে দেখাতে চাচ্ছে যে, খেলাফতকে সর্বপ্রথম খালেদই গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেছিলেন।

সে আরো বুঝাতে চাচ্ছে যে, পরবর্তী কালে আবু বকরকে খলীফাহ্ করার পিছনে গোত্রীয় দৃষ্টিকোণ কার্যকর ছিলো বলে যত মতামত এসেছে তার সবই খালেদের মতামত দ্বারা প্রভাবিত এবং এ ব্যাপারে ওমর তখনই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আর এ ভবিষ্যদ্বাণীই ফলেছে। অর্থাৎ এর কোনো প্রকৃত ভিত্তি নেই এবং খেলাফত প্রশ্নে আবু বকর ও ওমরের সাথে আলীর কোনো বিরোধ ছিলো না। আর যারা এ বিরোধ নিয়ে কথা বলছে তারা মিথ্যবাদী। কারণ, ওমর বুঝতে পেরেছিলেন যে, মিথ্যবাদীরা খালেদের বক্তব্যকে বাহানা করে মিথ্যা রচনা ও প্রচার করবে।

এ প্রসঙ্গে আরো লক্ষণীয় যে, সাইফ এ রেওয়াইয়াতটি হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর) দেহরক্ষী ছার্খা থেকে বর্ণনা করেছে, অথচ প্রকৃত ব্যাপার হলো হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ছার্খা নামে কোনো দেহরক্ষী ছিলো না। বরং ছার্খা হচ্ছে সাইফ্ কর্তৃক কল্পিত একটি চরিত্র যাকে সে তার উদ্দেশ্য সাধনার্থে তথা মিথ্যা হাদীছ রচনার উদ্দেশ্যে তৈরী করেছে।

৮) সাইফের তৈরী মিথ্যা হাদীছে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ যে বাক্যটি পাওয়া যায় তা হচ্ছে এই যে, তার দাবী অনুযায়ী, যারা মুরতাদ হয়েছিল বা মুরতাদ হওয়ার কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল তারা ছাড়া আর কেউই আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানায় নি।

এ কথা বলার পিছনে সাইফের উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, কোনো পাঠক যদি ইতিহাসে এমন কতক ছাহাবীর নাম পেয়ে যান যারা আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন তখন যেন তিনি সাথে সাথে এ উপসংহারে উপনীত হন যে, ঐ ছাহাবীরা আসলে মুরতাদ হয়ে গিয়েছিলেন।

এখন দেখা দরকার যে, সাইফের বক্তব্য অনুযায়ী ছাহাবীদের মধ্য থেকে মুরতাদ হয়ে যাওয়া অর্থাৎ আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী সেই ব্যক্তিগণ কারা? আরো দেখা দরকার যে, তাঁরা কি এমন ব্যক্তি ছিলেন যাদেরকে মুরতাদ বলে গণ্য করা যেতে পারে?

ছাহাবীদের মধ্য থেকে যে সব ব্যক্তি আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের বিরোধিতা করেন এবং আলীর অনুকূলে বাই‘আত হবার জন্যে আগ্রহ প্রকাশ করেন ও বাই‘আত নেয়ার জন্যে তাঁকে পীড়াপীড়ি করেন Ñ সাইফ যাদেরকে মুরতাদ বলে গণ্য করেছে Ñ তাঁরা হলেন ঃ ১) যুবাইর বিন্ ‘আওয়াম Ñ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ফুফাতো ভাই, ২) আব্বাস Ñ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর চাচা, ৩) সা‘দ ওয়াক্কাছ Ñ ইরাক বিজেতা, ৪) তাল্হাহ্ বিন্ আবদুল্লাহ্, ৫) মিক্বদাদ বিন্ আল্-আস্ওয়াদ প্রমুখ।

এছাড়া ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা অনুযায়ী আলী (আঃ)-এর অনুকূলে বাই‘আত হওয়ার জন্যে যে সব ছাহাবী হযরত ফাতেমাহ্র (আঃ) গৃহে জমায়েত হয়েছিলেন অথবা পরে মদীনায় এসে বাই‘আত গ্রহণের জন্যে আলীকে পীড়াপীড়ি করেন, তাঁদেরকেও এই সাথে যোগ করতে হবে। তাঁরা হলেন ঃ ৬) আবু যার গিফারী, ৭) সালমান ফারসী, ৮) ‘আর্ম্মা ইয়াসার, ৯) বারাআ বিন্ ‘আযেব্ আনছারী, ১০) উবাই ইবনে কা‘ব্ আনছারী, ১১) ফায্ল্ বিন্ আব্বাস Ñ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর চাচাতো ভাই, ১২) আবু সুফিয়ান বিন্ র্হাব্, ১৩) খালেদ বিন্ সা‘ঈদ ও ১৪) আবান্ বিন্ সা‘ঈদ।

ঐতিহাসিকগণের বর্ণনা অনুযায়ী এ চৌদ্দ জন ছাহাবী আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। এ ব্যক্তিগণ ছাড়াও, ঐতিহাসিকগণের সুস্পষ্ট উল্লেখ অনুযায়ী, সামগ্রিকভাবে বানী হাশেম-এর

কেউই হযরত ফাতেমাহ্ (আঃ)-এর ওফাতের পূর্বে আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হন নি।

উপরে যাদের কথা উল্লেখ করা হলো তাঁদের সকলেই হযরত আলী (আঃ)-এর সমর্থক ছিলেন এবং এ কারণেই তাঁরা আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হওয়া থেকে বিরত থাকেন। এরা ছাড়াও আনছারদের মধ্য থেকে খেলাফতের দাবীদার সা‘দ বিন্ ‘ইবাদাহ্ আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানান।৩

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এ সব ইসলামী ব্যক্তিত্বকে সাইফের দাবীর ভিত্তিতে মুরতাদ হিসেবে গণ্য করা সম্ভব কি?

ওপরে যাদের কথা উল্লেখ করা হলো তাঁরা হলেন মদীনার ছাহাবী Ñ যারা আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আতের বিরোধিতা করেছেন। এ ছাড়াও মদীনার বাইরের অনেক ছাহাবীও আবু বকরের অনুকূলে বাই‘আত হতে অস্বীকৃতি জানান এবং তাঁদের মধ্য থেকে কতক এ বিরোধিতা অব্যাহত রাখতে গিয়ে নিহত হন। এদের মধ্যে ছিলেন মালেক বিন্ নুওয়াইরাহ্ প্রমুখ। বস্তবতার বিপরীতে সাইফ তাঁদেরকে সুস্পষ্ট ভাষায় মুরতাদ বলে এবং তাঁদের সাথে সংঘটিত যুদ্ধকে মুরতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বলে অভিহিত করেছে। (ইনশা আল্লাহ্, আমরা পরবর্তীতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করবো।)

উপসংহার

এ আলোচনা থেকে সাইফের চেহারা সুস্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা দেখতে পেয়েছি যে, সাইফ তার উদ্দেশ্য সাধনের জন্যে কীভাবে ইসলামের ইতিহাসকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে Ñ যার ফলে ইসলামের ইতিহাসের নামে মুসলমান ও অমুসলমানদের মধ্যে এবং প্রাচ্যবিদ্যা বিশারদদের মধ্যে বিভিন্ন কল্পকাহিনী ছড়িয়ে পড়েছে। সাইফের বানানো অনেক কাল্পনিক চরিত্রই ছাহাবী ও ইসলামী ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এখনো কি ইসলামের ইতিহাসকে এসব মিথ্যা ও বাস্তবতার সাথে সম্পর্কহীন রেওয়াইয়াত থেকে মুক্ত করার এবং বর্তমান ও ভবিষ্যত প্রজন্মের নিকট ইসলামের সঠিক ইতিহাস উপস্থাপনের সময় আসে নি? নাকি আমরা

ইসলামের ইতিহাসের নামে এসব মিথ্যা কল্পকাহিনীতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি বলে এগুলোকে সমর্থন করতে ও এগুলোর পক্ষে ছাফাই গাইতে থাকবো এবং ইসলামের সঠিক ইতিহাসের পথে বাধা সৃষ্টি করে রাখবো?

পাদটীকা ঃ

১. এ খোতবাহ্ দু’টির মূল আরবী তারীখে ত্বাবারী-র তৃতীয় খণ্ড পৃঃ ২১০ দ্রষ্টব্য।

২. সাইফ ও তার ‘আক্বিদাহ্ সম্বন্ধে ‘ইল্মে রেজালের পণ্ডিতগণের মতামত “সাইফ ও তার রেওয়াইয়াত সম্পর্কে পর্যালোচনা” শীর্ষক অধ্যায় দ্রষ্টব্য।

৩. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৪৪৩-৪৪৪, ৪৪৬; সীরাতে ইবনে হিশাম, ৪র্থ খণ্ড/ ৩৩৫-৩৪১; মুসনাদে আহ্মাদ, ১ম খণ্ড/ ৫৫ প্রভৃতি।

..........চলবে।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.