![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
আগের লেখার লিঙ্কঃ
Click This Link
সাইফের কল্পকাহিনীর তুলনামূলক পর্যালোচনা
সাইফের বর্ণনার মূল পাঠ অন্যান্য বর্ণনার মূল পাঠের সাথে তুলনা করলে আমরা এ উপসংহারে উপনীত হতে বাধ্য যে, সাইফ তার এ রেওয়াইয়াত সমূহের মধ্য থেকে কতগুলো পুরোপুরি নিজে তৈরী করেছে এবং কতগুলোকে তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিকৃত করেছে ও তাতে নিজস্ব কথা যোগ করেছে। এভাবেই সে, খালেদ বিন্ ওয়ালীদের ছাফাই গাওয়ার এবং তাঁর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ থেকে তাঁকে মুক্ত করার চেষ্টা করেছে। এ লক্ষ্যে প্রথমে সে একটি ক্ষেত্র তৈরী করেছে, তা হচ্ছে, সে বাহ্রাইন, বানূ তামীম ও সাজাহ্র কাহিনী উত্থাপন করেছে এবং মালেকের ওপর দ্বিধাদ্বন্দ্ব আরোপ করেছে। আর তাঁর মোকাবিলায় কতক মুসলমানকে অত্যন্ত দৃঢ়পদ হিসেবে চিত্রিত করেছে এবং মালেকের সঙ্গীসাথীদের ব্যাপারে তাদের মধ্যে মতপার্থক্য প্রদর্শন করেছে। অন্যদিকে সে নবুওয়াত দাবীকারী সাজাহ্র সাথে মালেকের অভিন্ন মত এবং আবু বকর ও দৃঢ় ঈমান লোকদের ওপর তার আক্রমণের ইচ্ছা ছিলো বলে দেখিয়েছে। এরপর সে বলেছে যে, সাজাহ্র চলে যাওয়ার পর মালেক দিশাহারা হয়ে পড়েন। কোনো ঐতিহাসিকই বলেন নি যে, যেরারের হাতে বন্দী হওয়ার সময় মালেক তাঁর চারদিকে সৈন্যসামন্ত সমবেত করেছিলেন, কিন্তু সাইফ তা-ই বলছে। এ কারণে সাইফের রেওয়াইয়াতের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হবে বুঝতে পেরে সে তার চতুর্থ রেওয়াইয়াতটি তৈরী করেছে এবং বলেছে যে, মালেক তাঁর লোকদেরকে ছত্রভঙ্গ হয়ে যাবার নির্দেশ দেন। তবে সাইফ সেই সাথে এটাও দেখাবার চেষ্টা করতে ভুলে যায় নি যে, মালেক অনুতপ্ত হবার কারণে এ কাজ করেন নি, বরং ভীত ও আতঙ্কিত হবার কারণে করেছেন।
এভাবে সাইফ মালেকের মুরতাদ হবার ধারণা প্রদানেরই চেষ্টা করে। আর লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, এ ক্ষেত্রে সাইফ খালেদ বিন্ ওয়ালীদের নাম উল্লেখ করে নি। এর উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, কেউ যেন ধারণা না করে যে, সাইফ কর্তৃক মালেকের ওপর মুরতাদ হবার দোষারোপের উদ্দেশ্য খালেদ বিন্ ওয়ালীদের বা অন্য কারো পক্ষে ছাফাই গাওয়া এবং যদি প্রমাণিত হয় যে, খালেদ মালেককে হত্যা করেছেন তাহলে যেন এ ধারণাই হয় যে, এ ধরনের একজন মুরতাদ ব্যক্তিকে বা দোদুল্যমান ব্যক্তিকে হত্যা করে খালেদ সঠিক কাজই করেছেন।
এছাড়া সাইফ খালেদ ও তাঁর বাহিনীর মধ্যকার আনছারদের মধ্যে একটি কথোপকথন তৈরী করেছে যাতে খালেদের অপরাধের দায়দায়িত্ব আবু বকরের ওপর না পড়ে এবং ইতিহাস পাঠকের পক্ষে এ অপরাধের জন্যে আবু বকরকে দায়ী করা সম্ভব না হয়। কারণ, আনছাররা বলেন যে, আবু বকর এ ধরনের কোনো আদেশই দেন নি। তেমনি খালেদের ব্যাপারেও যেন এরূপ ধারণা না হয় যে, তিনি নিজ থেকেই এ কাজ করেছেন। কারণ, খালেদ উল্লেখ করছেন যে, তাঁর নিকট একের পর এক আদেশ এসে পৌঁছছে। ফলতঃ না একে দোষারোপ করা যাচ্ছে, না ওকে।
সাইফ এ ধরনের ক্ষেত্র তৈরীর পর বলে যে, খালেদ তাঁর লোকদেরকে ইসলাম প্রচারের জন্যে পাঠান এবং নির্দেশ দেন যে, যারা তাঁদের দাওয়াত কবুল না করবে তাদেরকে যেন বন্দী করে নিয়ে আসে। এ প্রসঙ্গে সে খলীফাহ্ আবু বকরের নির্দেশ হিসেবে যা উল্লেখ করেছে তাতে কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এরপর সে বলে যে, সৈন্যরা মালেককে বন্দী করে খালেদের নিকট নিয়ে আসে, অথচ তাদের নিজেদের মধ্যেই মালেকের অবস্থা সম্বন্ধে মতপার্থক্য ছিলো। এরপর খালেদ মালেক ও তাঁর সঙ্গীসাথীদেরকে সেই প্রচণ্ড শীতের রাতে বন্দী করে রাখার আদেশ দেন। এরপর খালেদ বন্দীদেরকে গরম রাখার জন্যে নির্দেশ দেন, কিন্তু তিনি আকারে-ইঙ্গিতে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন ধারণা করে সৈন্যরা তাদেরকে হত্যা করে। আর খালেদ তা জানতে পারেন কেবল সব শেষ হয়ে যাবার পর।
অতঃপর সাইফ বলে যে, খালেদ মালেকের স্ত্রীকে বিবাহ করলেও কেবল তার ইদ্দত পালন শেষ হবার পরেই তার সাথে শয্যা গ্রহণ করেন। ফলে খালেদের বিরুদ্ধে একমাত্র আপত্তি থাকে এই যে, তিনি যুদ্ধকালে স্ত্রী পরিগ্রহণ করেছেন যা “আরবদের রীতির সাথে সাংঘর্ষিক”। (অর্থাৎ খালেদ ইসলামের দৃষ্টিতে আপত্তিকর কিছুই করেন নি।) একইভাবে সাইফ খালেদ ও আবু ক্বাতাদাহ্র মধ্যকার বিতর্ক এবং ওমর ও খালেদের মধ্যকার বিতর্ককেও বিকৃত করেছে।
সাইফ ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছে যে, মালেককে ভুল বশতঃ হত্যা করা হয়েছে। কারণ, খালেদের সৈন্যরা ধারণা করেছিলেন যে, তিনি আকারে-ইঙ্গিতে কথা বলেছেন এবং এর মাধ্যমে বন্দীদেরকে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন।
কিন্তু এখানে একটি বিষয়ের কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায় না। তা হচ্ছে, যদি ধরে নেই যে, সাইফের প্রদত্ত ধারণাই সঠিক এবং খালেদের নির্দেশের তাৎপর্য বুঝতে না পেরে বন্দীদেরকে ভুল বশতঃ হত্যা করা হয়েছে, তাহলে বন্দীদের কর্তিত মাথাগুলোকে কেন জ্বলন্ত চুলায় পাতিলের নীচে রাখা হলো? এ ধরনের অসামঞ্জস্য মূলক বিষয়গুলো কেবল সাইফের রেওয়াইয়াত সমূহেই পাওয়া যায় এবং অন্য কারো রেওয়াইয়াতে পাওয়া যায় না।
কিন্তু তা সত্ত্বেও ত্বাবারী ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ সাইফের রেওয়াইয়াত সমূহকে তাঁদের গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। অতঃপর ইবনে আছীর, ইবনে কাছীর ও মীর খানের মতো ঐতিহাসিকগণ তারীখে ত্বাবারী থেকে স্বীয় গ্রন্থে তা উদ্ধৃত করেছেন। তেমনি ইবনে হাজার তাঁর “আল-ইছাবাতু ফী তামীজিছ্ ছাহাবাহ্” গ্রন্থে সে তথ্য গ্রহণ করেছেন। এভাবেই সাইফের রচিত মিথ্যা তথ্যাবলী ইসলামের ইতিহাস ও ‘ইলমে রেজালের বিভিন্ন গ্রন্থে স্থানলাভ করেছে। ফলে পরবর্তী প্রজন্ম সমূহের নিকট প্রকৃত সত্য গোপন রয়ে গেছে। কেবল যারা সাইফের বর্ণনার পাশাপাশি অন্যান্য বর্ণনা নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন তাঁদের নিকট সাইফের বর্ণনার স্ববিরোধিতা ধরা পড়েছে এবং তাঁদের নিকট সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে, খালেদ স্বয়ং সরাসরি মালেককে হত্যার নির্দেশ দেন। বালাযুরীর “ফুতূহুল বুলদান্”-এ (পৃঃ ১০৫), “তারীখে ইবনে ‘আসার্কে”-এ (৫ম খণ্ড, পৃঃ ১০৫ ও ১১২), “তারীখুল্ খামীস্”ে-এ (২য় খণ্ড, পৃঃ ৩৩৩), ইবনে আছীরের “নিহাইয়াহ্”-তে (৩য় খণ্ড, পৃঃ ২৫৭), “আছ্-ছাওয়া‘একুল্ মুহাররিক্বাহ্”-তে (পৃঃ ২১) এবং যুবাইদীর “তাজুল্ ‘আরুস্”-এ (৮ম খণ্ড, পৃঃ ৭৫) এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে উল্লিখিত হয়েছে।
পাদটীকা ঃ
১. ইবনে আবিল হাদীদের র্শাহে “নাহজুল্ বালাগ¦াহ্’ গ্রন্থে এ তৃতীয় পংক্তিটি এভাবে উল্লিখিত হয়েছে ঃ فان قام بالامر المجدد قائم (অতঃপর যদি কোনো অভ্যুত্থানকারী এ নবায়নকারী ব্যাপারের তরে উত্থিত হয়)।
২. ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫০৩।
৩. হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর বিশিষ্ট ছাহাবী যিনি উহুদ ও তৎপরবর্তী যুদ্ধ সমূহে রাসূলুল্লাহ্(সাঃ)-এর পাশে থেকে অংশগ্রহণ করেছেন। কোনো কোনো মতে, তিনি বদর যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছেন। পরবর্তী কালে তিনি হযরত আলী (আঃ)-এর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন। তিনি ৭০ বা ৭২ বছর বয়সে হিজরী ৩৮ বা ৪০ সালে ইন্তেকাল করেন। (আল্-ইছাবাহ্, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৫৭-১৫৮; আল্-ইস্তি‘আব্, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৯১-১৯২)
৪. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৩২।
৫. পৃঃ ১১০।
৬. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৩২।
৭. পৃঃ ১৫৮।
৮. ইবনে শাহ্নাহ্ও তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে (পৃঃ ১৬৬) তারীখে কামেল ৭ম খণ্ড থেকে এভাবে উদ্ধৃত করেছেন।
৯. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩৩৭।
১০. ত্বাবারী, ২য় খণ্ড/ ৫০৩; আল্-ইছাবাহ্, ৩য় খণ্ড/ ৩৩৭; ইবনে আছীর ঃ বাত্বাহ্র যুদ্ধ বিষয়ক অধ্যায়; ইবনে কাছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড/ ৩২১; আবিল ফিদাহ্, পৃঃ ১৫৮; ইবনে আবিল হাদীদ, ১৭তম খণ্ড।
১১. তারীখে ইয়াকুবী, ২য় খণ্ড/ ১১০।
১২. ৩য় খণ্ড/ ৪৮৭।
১৩. হায়দরাবাদ, ভারত থেকে চার খণ্ডে প্রকাশিত “তাযকেরাতুল হুফফায্” গ্রন্থে বিস্তারিত বিবরণ দ্রষ্টব্য।
১৪. যারা হযরত আলী (আঃ)-এর দল থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো। এরূপ এক ব্যক্তিই তাঁকে হত্যা করেছিলো। Ñ অনুবাদক
১৫. শিয়া মাযহাব থেকে বিচ্যুত কোনো কোনো ক্ষুদ্র উপদল যারা হযরত আলী (আঃ) সম্পর্কে বাড়াবড়ি মূলক বিশ্বাস পোষণ করতো, যেমন ঃ তাঁকে আল্লাহ্র প্রতিভু মনে করতো। Ñ অনুবাদক
১৬. যারা ঈমানদারদের জন্যে পাপের ক্ষমার ব্যাপারে আল্লাহ্র ওপরে আশাবাদ পোষণকারী। Ñ অনুবাদক
১৭. যারা মানুষকে পূর্ণ এখতিয়ার সম্পন্ন বলে মনে করে Ñ যাদের মতে, আল্লাহ্ কোনো অবস্থায়ই মানুষের কাজে হস্তক্ষেপ করেন না। Ñ অনুবাদক
১৮. ক্বাদরিয়াহ্ চিন্তাধারার প্রায় অনুরূপ চিন্তাধারা পোষণকারী ধর্মীয় গোষ্ঠী বিশেষ। Ñ অনুবাদক
১৯. যারা মনে করে যে, মানুষের কোনো কিছু করার বা না করার এখতিয়ার নেই, বরং সব কিছুই আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক নির্ধারিত। Ñ অনুবাদক
২০. দ্রস্টব্য যাহাবী প্রণীত “তারীখুল ইসলাম” , প্রথম মুদ্রণ. মিসর।
২১. দ্রষ্টব্য “জাওয়ামে‘উস্ সীরাতে ইব্নে হায্ম্”।
চলবে.....।
©somewhere in net ltd.