![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
আগের লেখার লিঙ্কঃ
Click This Link
‘আলা ইবনে হায্রামীর কাহিনী
‘আলা ইবনে হাযরামী হচ্ছেন আবদুল্লাহ্ বিন্ ‘ইমাদ্ বিন্ আকবার বিন্ রাবি‘আহ্ বিন্ মালেক বিন্ ‘উওয়াইফ্ হায্রামীর পুত্র। তাঁর পিতা ছিলেন মক্কার অধিবাসী এবং বনী উমাইয়াহ্র সাথে চুক্তিবদ্ধ। হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) ‘আলা’কে বাহরাইনের প্রশাসক নিযুক্ত করেন। হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ইন্তেকালের পর খলীফাহ্ আবু বকরও তাঁকে সে পদেই বহাল রাখেন। ওমরের শাসনামলেও তিনি এ পদেই বহাল থাকেন এবং এ পদে থাকা অবস্থায়ই হিজরী ১৪ বা ২১ সালে ইন্তেকাল করেন।১
‘আলা ইবনে হায্রামী সম্পর্কে সাইফের রেওয়াইয়াত
ত্বাবারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে২ সাইফ থেকে (এবং সাইফ মেনজাব্ বিন্ রাশেদ৩ থেকে) বর্ণনা করেন যে, আবু বকর বাহ্রাইনের মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে ‘আলা বিন্ হায্রামীকে দায়িত্ব দেন। মেনজাব্ বলেন ঃ
আমাদেরকে দাহ্নাহ্৪র পথে নিয়ে যাওয়া হয়। আমরা মরুভূমির মাঝে পৌঁছে গেলাম এবং আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে তাঁর নিদর্শন দেখাতে ইচ্ছা করলেন। ‘আলা তাঁর বাহন থেকে অবতরণ করলেন এবং লোকদেরকে অবতরণের জন্যে আদেশ দিলেন। তাই আমরা সকলে সেখানে অবতরণ করলাম। হঠাত সেই রাতের বেলা উটগুলো বিদ্রোহ করলো ও বোঝা সহ পালিয়ে গেলো। আমরা আমাদের সকল মালামাল সেই বালুময় প্রান্তরে হারিয়ে ফেললাম। আমরা সে রাতে এমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলাম যে ধরনের দুশ্চিন্তাগ্রস্ত লোকদের কথা আমাদের জানা ছিলো না। বস্তুতঃ আমরা আমাদের জীবন সম্পর্কে হতাশ হয়ে পড়েছিলাম এবং আমাদের প্রত্যেকেই অন্যের নিকট ওয়াছিয়্যাত করছিলো।
এ সময় ‘আলা-র পক্ষ থেকে একজন ঘোষক সকলকে জমায়েত হবার জন্যে নির্দেশ দিলেন। আমরা সকলে ‘আলা-র চারদিকে সমবেত হলাম। ‘আলা আমাদের দিকে ফিরে বললেন ঃ “তোমাদের মধ্যে এ কী অবস্থা দেখতে পাচ্ছি?” লোকেরা বললো ঃ “এতে আমাদেরকে তিরস্কারের কী আছে? আমরা তো এমন এক অবস্থায় পড়েছি যে, সূর্যোদয় পর্যন্ত এ অবস্থায় থাকলে আমরা গত হয়ে যাওয়া কাহিনীতে পরিণত হবো।” ‘আলা বললেন ঃ “হে লোক সকল! তোমরা ভয় পেয়ো না; তোমরা কি মুসলমান নও? তোমরা কি আল্লাহ্র রাস্তায় বহির্গত হও নি? তোমরা কি আল্লাহ্র সাহায্যকারী নও?” লোকেরা বললো ঃ “অবশ্যই।” তিনি বললেন ঃ “তাহলে আমি তোমাদেরকে সুসংবাদ দিচ্ছি এবং আল্লাহ্র শপথ করে বলছি যে, তিনি কখনো তোমাদের মতো লোকদেরকে লাঞ্ছিত করবেন না।”
প্রত্যুষে মুযাজ্জিন আযান দিলেন এবং ‘আলা আমাদের নিয়ে নামায আদায় করলেন। নামায শেষে তিনি লোকদেরকে সাথে নিয়ে দো‘আ করলেন। ইতিমধ্যে সূর্য উদিত হলো এবং দূরে সূর্যের আলোতে পানির তরঙ্গ দেখা গেলো। ‘আলা লোকদের দিকে ফিরে বললেন ঃ “কেউ সেখানে গিয়ে দেখুক যে, ওটা কী।” একজন সেখানে গেলো এবং ফিরে এসে বললো যে, তা মরীচিকা মাত্র। তখন ‘আলা আবারো দো‘আ করলেন। এবারও পানির তরঙ্গ দেখা গেলো এবং এটিও আগেরটির মতো মরীচিকা বলে প্রমাণিত হলো। এরপর আবারও পানির তরঙ্গ দেখা গেলো। কিন্তু এবার খবর আনতে যাওয়া লোকটি ফিরে এসে বললো যে, সেখানে পানি আছে। তখন ‘আলা সকলকে নিয়ে সেখানে গেলেন এবং আমরা সকলে পানি পান করলাম ও গোসল করলাম। তখনো সূর্য খুব একটা ওপরে উঠে নি। দেখলাম যে, আমাদের উটগুলোকে যেন চারদিক থেকে তাড়িয়ে আমাদের দিকে নিয়ে আসা হচ্ছে এবং সেগুলো আমাদের নিকটে এসে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লো। প্রত্যেকেই সব কিছু সহ নিজ নিজ বাহন বুঝে নিলো। আমরা বাহনগুলোকে পানি পান করালাম আর নিজেরাও পানি পান করলাম এবং এরপর রওয়ানা হলাম।
আবু হুরাইরাহ্ ছিলেন আমার বন্ধু; (পরে) আমরা যখন সে জায়গার নিকট দিয়ে অতিক্রম করি তখন তিনি বললেন ঃ “পানির জায়গাটা চিনতে পারছেন?” আমি বললাম ঃ “ এ ভূখণ্ডের সাথে আমি অন্য যে কারো চাইতে বেশী পরিচিত।” তিনি বললেন ঃ “আমার সাথে থাকুন যাতে আমাকে সে পানির নিকট পৌঁছে দিতে পারেন।” আমরা দু’জন একত্রে সেখানে গেলাম, কিন্তু কী আশ্চর্য! না সেখানে কোন খাদ আছে, না পানির কোনো চিহ্ন। আমি তাঁকে বললাম ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আমি এখানে কোনো খাদই দেখতে পাচ্ছি না, নইলে বলতাম যে, এটা হচ্ছে সেই জায়গা। আর আরো আশ্চর্যের বিষয় এই যে, ঐ ঘটনার আগে আমি এখানে কোনো পান দেখতে পাই নি। আমাদের এ কথাবার্তার মধ্যে একটি পানিপূর্ণ বদনার প্রতি আবু হুরাইরার দৃষ্টি পড়লো এবং তিনি বললেন ঃ “হে আবু সাহ্ম্! আল্লাহ্র শপথ, এটা সেই জায়গা। আর আমি এই বদনাটির জন্যেই ফিরে এসেছি এবং এই বদনাটির জন্যেই তোমাকে এখানে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছি। আমি বদনাটিতে পানি ভরে খাদের কিনারে রেখেছিলাম যাতে ফিরে আসার সময় জানতে পারি যে, সত্যি সত্যিই এখানে পানি আছে কিনা, নাকি এই মরুভূমির মাঝে পানিপ্রাপ্তির বিষয়টি অলৌকিক ঘটনা ছিলো। এখন বুঝতে পারলাম যে, এটি একটি অলৌকিক ঘচনা ছিলো।” এরপর আবু হুরাইরাহ্ আল্লাহ্র প্রশংসা করলেন এবং আমরা আমাদের পথে চললাম।
এরপর সাইফ বাহ্রাইনের মুরতাদদের সাথে ‘আলা-র যুদ্ধের কথা বর্ণনা করে বলে ঃ ‘আলা-র বাহিনী এমন এক রাতে তাদের ওপর বিজয়ী হয় যখন তাদের সকলেই নেশাগ্রস্ত ছিলো। এরপর সে বলে৫ ঃ ‘আলা তাদের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হয়ে লোকদেরকে দারাইন্ শহরের দিকে অভিযানের জন্যে আহ্বান জানালেন। তিনি লোকদেরকে সমবেত করে ভাষণ দিলেন এবং তাতে বললেন ঃ “আল্লাহ্ শয়তানদের দলগুলোকে এবং যুদ্ধ পলাতকদেরকে এ দ্বীপ-শহরে সমবেত করেছেন। তিনি তোমাদেরকে মরু প্রন্তরের মাঝে স্বীয় নিদর্শন দেখিয়েছেন যাতে তা তোমাদের জন্যে শিক্ষা স্বরূপ ও উৎসাহের কারণ হয়। অতএব, তোমরা ওঠো ও স্বীয় দুশমনদের দিকে এগিয়ে যাও এবং সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ো। কারণ, আল্লাহ্ তোমাদের দুশমনদেরকে এক জায়গায় একত্রিত করেছেন।” সৈন্যরা বললো ঃ “আল্লাহ্র শপথ, দাহ্নাহ্র মরুভূমির ঘটনার পর আমরা আর কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনায়ই ভয় পাবো না।”
‘আলা সওয়ার হলেন এবং তাঁর সৈন্যরাও সওয়ার হলেন। আরোহী ও পদাতিক নির্বিশেষে সবাই সমুদ্রের তীরে উপনীত হবার পর এই দো‘আ পড়তে পড়তে সমুদ্রে পদার্পণ করলেন ঃ “ইয়া র্আহার্মা রাহিমীন, ইয়া কারীম্, ইয়া হালীম্, ইয়া আহাদ্, ইয়া ছামাদ্, ইয়া হাই, ইয়া মুহীয়্যাল্ মাওতা, ইয়া হাই, ইয়া ক্বাইয়্যুম্, লা ইলাহা ইল্লা আন্তা, ইয়া রাব্বানা।” এ দো‘আ সহকারে তাঁরা সমুদ্রে নেমে এলেন এবং পার হয়ে গেলেন। তাঁদের পায়ের নীচে সমুদ্র পানিতে নিমজ্জিত নরম মাটির মতো মনে হচ্ছিলো। শুধু উটের হাঁটু পর্যন্ত পানি ছিলো। আর সমুদ্রের এ প্রান্ত থেকে দারাইন শহর পর্যন্ত সামুদ্রিক জাহাযে পার হতে অনেক সময় একদিন এক রাত লেগে যেতো; তাঁরা সমুদ্র পার হয়ে দারাইন পৌঁছে গেলেন এবং দুশমনদের মুখোমুখী হলেন। সেখানে প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো এবং তাঁরা এমনভাবে তলোয়ার চালালেন যে, এ সংবাদ বয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যে শত্র“দের একজনও আর বেঁচে থাকলো না। তাদের পরিবারের সদস্যরা বন্দী হলো এবং তাদের ধনসম্পদ লুণ্ঠিত হলো। এত পরিমাণ সম্পদ হস্তগত হলো যে, প্রত্যেক সওয়ারের ভাগে ছয় হাজার ও প্রত্যেক পদাতিকের ভাগে দুই হাজার অংশ পড়লো। তাঁরা যেভাবে এসেছিলেন সেদিনই ঠিক সেভাবেই সমুদ্র অতিক্রম করে ফিরে গেলেন।
এরপর সাইফ তার কল্পিত ছাহাবী ‘আফীফ্ বিন্ আল্-মুনযারের মুখে এই কবিতাটি লাগিয়ে দিয়েছে ঃ
“তুমি কি দেখো নি কীভাবে আল্লাহ্ পোষ মানালেন তাঁর সমুদ্রকে
আর নাযিল করলেন কাফেরদের ওপরে বড় এক বালা
ডাকলাম তাঁকে যিনি বিভক্ত করলেন বালুরাশিকে৬; এলো
এমন বিস্ময় যা প্রথম বার সমুদ্র বিভক্ত হওয়ার৭ চেয়েও বিস্ময়।”
এরপর সাইফ বলে ঃ ‘আলা যখন বাহরাইনে ফিরে এলেন এবং সেখানে ইসলাম সুপ্রতিষ্ঠিত হলো ... মুসলমানদের সাথে ছিলেন এমন একজন খৃস্টান সন্ন্যাসী ইসলাম গ্রহণ করলেন। তাঁর নিকট জিজ্ঞেস করা হলো ঃ “কী কারণে আপনি ইসলাম গ্রহণ করলেন?” তিনি বলেন ঃ “তিনটি ঘটনা দেখে আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি যা দেখে আমার ভয় হয়েছে যে, যদি ইসলাম গ্রহণ না করি তাহলে আল্লাহ্ আমাকে পশুতে পরিণত করবেন। তা হচ্ছে ঃ বালুময় প্রান্তরে পানির উদ্ভব, উত্তাল সমুদ্রের মধ্য দিয়ে চলার উপযোগী পথ তৈরী হওয়া এবং প্রত্যুষে ইসলামী বাহিনীর যে দো‘আ আমার কাছে ভেসে আসে। সে দো‘আ হচ্ছে ঃ আল্লাহুম্মা আর্ন্তা রাহ্মার্নু রাহীমু লা ইলাহা গ¦াইরুকা ওয়াল্ বাদী‘উ লাইসা ক্বাব্লাকা শাইয়্যুন্ ওয়াদ্ দায়েমুন্ গাইরাল্ গ¦াফেলে ওয়াল্ হাইয়্যু লা ইয়ামুতু ওয়া খালেকু মা ইয়ারা ওয়া মা লা ইয়ারা ওয়া কুল্লা ইয়াওমিন্ আন্তা ফী শা‘নিন্ ওয়া ‘আলিম্তাল্লাহুম্মা কুল্লা শাইয়িন্ বেগ¦ায়রে তা‘আল্লুম্। এ থেকে বুঝতে পারলাম যে, কেবল এ কারণে এই লোকদের সাহায্যার্থে ফেরেশতা নিয়োজিত করা হয়েছে যে, তাঁরা সত্যের পথে চলছেন।” হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ছাহাবীগণ পরে এই সন্ন্যাসীর নিকট থেকে উক্ত ঘটনার কথা শোনেন।
‘আলা আবু বকরকে লিখেন ঃ “আল্লাহ্ আমাদের জন্যে এমন ফোয়ারা প্রবাহিত করেন যার শেষ প্রান্ত দেখা যাচ্ছিলো না। এভাবে তিনি আমাদের জন্যে শিক্ষণীয় তাঁর একটি কুদরত আমাদেরকে প্রদর্শন করেছেন। তাই দুঃখ ও দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত হবার পর আমরা আল্লাহ্র নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করি এবং তাঁর প্রশংসা করি। আপনিও আমাদের জন্যে দো‘আ করুন এবং তাঁর নিকট প্রার্থনা করুন যাতে তিনি তাঁর বাহিনীকে এবং তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারীদেরকে সাহায্য করেন।”
আবু বকরের নিকট এ পত্র পৌঁছলে তিনি আল্লাহ্র নিকট শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন এবং দো‘আ করেন। তিনি বলেন ঃ “আরবের মরু এলাকার লোকেরা যখনই নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতো তখন বলতো যে, লোকমানের নিকট জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো যে, তারা দাহ্নাহ্র মরু এলাকায় পানির কূপ খনন করবে কিনা? তখন লোকমান তাদেরকে তা থেকে নিষেধ করেন ও তাদেরকে কূপ খনন থেকে বিরত রাখেন। কারণ, তিনি মনে করতেন যে, এখানে পানি এতই নীচে যে, কোনো রশিই সেখানে পৌঁছবে না এবং সেখানে কোনো ফোয়ারাই পাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় সেখানে পানিপ্রাপ্তি অবশ্যই আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে ঘটানো এক বিরাট অলৌকিক ঘটনা যেরূপ ঘটনা এর আগে অন্য কোনো উম্মতের মধ্যে সংঘটিত হয়েছে বলে শুনি নি। হে আল্লাহ্! মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর অস্তিত্বের প্রভাব ও বরকতকে আমাদের মধ্য থেকে তুলে নিও না। ...”
ইবনে কাছীর তাঁর তারীখ-এ৮ সাইফ থেকে বিস্তারিতভাবে এ কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এছাড়া আবূল ফারাজ তাঁর আল্-আগ¦ানী গ্রন্থে ত্বাবারী থেকে সাইফের বর্ণিত এ কাহিনী উদ্ধৃত করেছেন। মোদ্দা কথা, এ মনীষীগণের সকলেই সাইফ থেকে এ রূপকথা বর্ণনা করেছেন।
সাইফ ব্যতীত অন্যান্যের রেওয়াইয়াতে ‘আলা-র কাহিনী
‘আলা বিন্ হায্রামীর ঘটনা সম্পর্কে অন্যান্যের বর্ণনা সাইফের বর্ণনা থেকে স্বতন্ত্র। উদাহরণ স্বরূপ, বালাযুরী লিখেছেন৯ ঃ
‘আলা খলীফাহ্ ওমরের শাসনামলে যারাহ্ ও দারাইনের লোকদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে রওয়ানা হন। কিন্তু যারাহ্র লোকেরা যুদ্ধ করার জন্যে প্রস্তুত ছিলো না। তাই তারা সন্ধি ও আপোসের পথ বেছে নেয় এবং ‘আলা-র সাথে শান্তি ও যুদ্ধবর্জনের চুক্তি স্বাক্ষর করে। আপোসের শর্ত ছিলো এই যে, উক্ত শহরের সমস্ত সম্পদের১০ এক তৃতীয়াংশ এবং এক তৃতীয়াংশ স্বর্ণ ও রৌপ্য তিনি পাবেন। এছাড়া শহরের বাইরে তাদের যে সম্পদ১০ আছে তার অর্ধেক তিনি পাবেন। এরপর আখনাস্ বিন্ আল-‘আমেরী ‘আলা-র নিকট এসে বললেন ঃ এরা এদের নিজেদের ব্যাপারে আপনার সাথে সন্ধি করেছে। কিন্তু দারাইনে তাদের যে আত্মীয়-স্বজন আছে তাদের ব্যাপারে এ সন্ধি কার্যকর নয়। তখন কারাযুন্ নুক্রী নামে জনৈক ব্যক্তি সেখানে পানির মধ্য দিয়ে যে স্থলভাগ ছিলো সে পথে তাঁদেরকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন এবং ‘আলা একদল মুসলমানকে সাথে নিয়ে সে পথে রওয়ানা হন। দারাইনের অধিবাসীরা কোনো কিছুই জানতো না। তারা সহসা ইসলামী বাহিনীর তাকবীর ধ্বনি শুনে তাদের বাড়ীঘর থেকে বেরিয়ে আসে এবং তিন দিক থেকে আক্রান্ত হয়। তাদের মধ্যকার যোদ্ধারা ইসলামী সৈন্যদের হাতে নিহত হয় এবং তাদের পরিবার-পরিজন বন্দী হয়।
পর্যালোচনা ও উপসংহার
এখানে সাইফের ও সাইফ ব্যতীত অন্যদের রেওয়াইয়াতের মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য দেখা যাচ্ছে। সাইফ তার রেওয়াইয়াতে বাহরাইনের লোকদের যুদ্ধকে মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং এ যুদ্ধের ঘটনায় বালুময় মরুপ্রান্তরে পানিপ্রাপ্তির কাহিনী তৈরী করেছে। অবশ্য তার আগে উটসমূহের বিদ্রোহ করা ও পালিয়ে যাওয়ার কাহিনী তৈরী করেছে।
এ কাহিনীকে পুরোপুরি বিশ্বাসযোগ্য করার লক্ষ্যে সে পুনরায় আবু হুরাইরাহ্ ও তাঁর বন্ধুর সেখানে ফিরে আসার কাহিনী তৈরী করেছে যাতে সেই পানির উৎসের পাশে পানিভর্তি বদনা রেখে দেয়া হয় এবং তা সে অবস্থায়ই পাওয়া যায়, কিন্তু পানির উৎসটি উধাও হয়ে যায়। সাইফ তার কল্পিত অলৌকিক ঘটনার অলৌকিকত্বকে সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে সেখানে পানি পাওয়ার অসম্ভাব্যতা সম্পর্কে লোকমানের অভিমত তুলে ধরে।
এরপর সাইফ আরেকটি অলৌকিক ঘটনা তৈরী করে যেরূপ ঘটনা ইতিপূর্বে কখনো ঘটে নি। এমন কি হযরত মূসা (আঃ) আলোকময় হস্ত এবং অলৌকিক লাঠির অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও তা পারেন নি। কারণ, তিনি পানি বিভক্ত করে সমুদ্র পার হলেও পানির ওপর দিয়ে যেত পারেন নি। সাইফ তার রচিত এ অলৌকক ঘটনাকে বিশ্বাসযোগ্য করানোর জন্যে এ বিষয়ে ‘আফীফ্ বিন্ মুন্যারের নামে একটি কবিতাও উপস্থাপন করেছে।
তেমনি সাইফ তার বর্ণিত এ অলৌকিক ঘটনার সমর্থনে জনৈক খৃষ্টান সন্ন্যাসীর ইসলাম গ্রহণের ঘটনাও তৈরী করেছে যিনি কিনা এ অলৌকিক ঘটনা দর্শনে এবং ফেরেশতাদের সাহায্য করার বিষয়ে জানতে পেরে এ ভয় করছিলেন যে, ইসলাম গ্রহণ না করলে তাঁকে পশুতে পরিণত হতে হবে।
সাইফ এ ব্যাপারে সব শেষে ‘আলা কর্তৃত আবু বকরকে পত্র লেখার ও তাতে দো‘আ কামনার এবং আবু বকর কর্তৃক তাঁদের জন্যে দো‘আ করার কাহিনী তৈরী করেছে।
সাইফ এ ধরনের কাহিনী রচনা করেছে এবং ত্বাবারী, হামাভী, ইবনে আছীর, ইবনে কাছীর ও অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ তা তাঁদের গ্রন্থে স্থান দিয়েছেন। অথচ প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে এই যে, দারাইন ও মূল ভূখণ্ডের মাঝে একটি সংযোজক স্থলপথ ছিলো যে পথে ইসলামী বাহিনী দারাইন পৌঁছেছিলো। আর সে পথটি প্রথম বারের মতো ইসলামী বাহিনী কর্তৃক ব্যবহৃত কোনো পথ ছিলো না। বরং অন্য লোকেরা পূর্ব থেকেই সে পথটি ব্যবহার করতো। কারণ, কারাযুন্ নুক্রী নামে জনৈক ব্যক্তি ইসলামী বাহিনীকে সে পথ দিয়ে নিয়ে যায়। তার মানে ঐ ব্যক্তি পূর্ব থেকেই ঐ পথটির সাথে পরিচিত ছিলো।
কিন্তু সব চেয়ে বড় কথা হলো দারাইনের যুদ্ধ আবু বকরের যুগে সংঘটিত হয় নি, বরং ওমরের যুগে সংঘটিত হয়েছিলো। কেবল সাইফের বর্ণনায়ই এ ঘটনাকে আবু বকরের যুগের বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া ইসলামী সৈন্যরা এমন ভয়াবহ যুদ্ধ করেন যে, এমন কি যুদ্ধের খবর বয়ে নিয়ে যাওয়ার মতো একজন লোকও তাদের মধ্যে বাকী রাখেন নি Ñ এরূপ দাবীও একমাত্র সাইফের বর্ণনায়ই করা হয়েছে।
এ তো গেলো মূল পাঠ (ঞবীঃ Ñ متن) বা বক্তব্যের বিচারে সাইফের রেওয়াইয়াতের অবস্থা। সনদের বিচারেও তার রেওয়াইয়াতের মিথ্যা হওয়ার বিষয়টি সুস্পষ্ট। কারণ সাইফ তার রেওয়াইয়াত ছা‘ব্ বিন্ ‘আত্বিয়্যাহ্র নামে উপস্থাপন করেছে এবং দাবী করেছে যে, এটি ছা‘ব্ বিন্ ‘আত্বিয়াহ্ তাঁর পিতা ‘আত্বিয়াহ্ বিন্ বেলালের নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু আমরা মালেক বিন্ নুওয়াইরাহ্র কাহিনীতে প্রমাণ করেছি যে, ছা‘ব্ ও ‘আত্বিয়াহ্ উভয়ই সাইফের তৈরী কাল্পনিক ব্যক্তিত্ব প্রকৃত পক্ষে যাদের আদৌ কোনো অস্তিত্ব ছিলো না।
পাদটীকা ঃ
১. আল-ইস্তি‘আব্, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১৪৬-১৪৮; আল-ইছাবাহ্, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪৯১।
২. ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২২-৫২৮।
৩. যদ্দূর সম্ভব মেনজাব হচ্ছে সাইফের অন্যতম কল্পিত চরিত্র, কারণ সে এ ধরনের বহু কল্পিত ছাহাবী চরিত্র রচনা করেছে এবং তাদেরকে সূত্র হিসেবে ব্যবহার করেছে।
৪. দাহ্নাহ্ বানূ তামীমের বসবাসের স্থানসমূহের অন্যতম যেখানে সাতটি বালুর পাহাড় রয়েছে। (মু‘জামুল্ বুলদান্. ২য় খণ্ড, পৃঃ ১১৫)
৫. তারীখে ত্বাবারী, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৫২৬।
৬. অর্থাৎ তিনি বালুরাশি বিভক্ত করে পানি উৎসারিত করলেন।
৭. অর্থাৎ হযরত মূসা (আঃ)-এর কওমকে সমুদ্র পার করিয়ে নেওয়া।
৮. ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৩২৮-৩২৯।
৯. ফুতূল্ বুল্দান্, পৃ ঃ ৯২-৯৩।
১০. সম্ভবতঃ এ দ্বারা জমি বুঝানো হয়েছে। Ñঅনুবাদক
চলবেঃ
©somewhere in net ltd.