![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
আগের লেখার লিঙ্কঃ
Click This Link
হাওয়াবের কুকুরদের চীৎকার
সাইফের বর্ণনায় হাওয়াবের কাহিনী
ত্বাবারী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থের মুরতাদ সংক্রান্ত ঘটনাবলীর অংশে সাইফ থেকে হাওয়াবের১ কাহিনী বর্ণনা করেছেন। এ বর্ণনা অনুযায়ী হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর যুগে উম্মে র্ক্বিফাহ্র নেতৃত্বাধীন যুদ্ধে মালেক বিন্ হুযাইফাহ্ বিন্ বাদ্রের কন্যা উম্মে যাম্ল্২ বন্দী হয় এবং বন্দী বণ্টনকালে তাকে হযরত আয়েশার ভাগে দেয়া হয়। আয়েশাহ্ তাকে আযাদ করে দেন, কিন্তু সে আগের মতোই আয়েশার নিকট থেকে যায়। (এরপর সে তার পরিবার-পরিজন ও আত্মীয়-স্বজনের নিকট ফিরে যায়।)
একদিন্৩ হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁদের৪ নিকট যান এবং এরশাদ করেন ঃ “তোমাদের মধ্য থেকে একজন হাওয়াবের কুকুরগুলোকে চীৎকার করাবে।” আর তা উক্ত মুক্তিপ্রাপ্তা নারী থেকেই ঘটেছিলো।
হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ওফাতের পরে সে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর জীবদ্দশায় নিহত তার আত্মীয়-স্বজনের হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে অভ্যুত্থান করে এবং সৈন্য সংগ্রহের উদ্দেশ্যে যার্ফা ও হাওয়াব্ গোত্রদ্বয়ের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে থাকে। খালেদের নিকট এ খবর পৌঁছলে ... তিনি উক্ত সৈন্য পরিবেষ্টিত নারীর উদ্দেশে রওয়ানা হন। খালেদ উক্ত নারীর শিবিরের ওপর হামলা করেন এবং উভয় পক্ষে প্রচণ্ড যুদ্ধ হয়। উক্ত নারী সে সময় তার মায়ের উটের পিঠে সওয়ার অবস্থায় ছিলো। ... অতঃপর কয়েকজন আরোহী সৈন্য তার উটকে ঘিরে ফেলে, তার পা কেটে ফেলে এবং উক্ত নারীকেও হত্যা করে। ...
হামাভীও তাঁর “মু‘জামুল্ বুল্দান্” গ্রন্থে সাইফ থেকে এ কাহিনী বর্ণনা করেছেন। আর ইবনে হাজার তাঁর ইছাবাহ্ গ্রন্থে৫ সংক্ষেপে তা উদ্ধৃত করেছেন যদিও সনদ উল্লেখ করেন নি।
সাইফের কাহিনীর তথ্যসূত্র
সাইফ এ রেওয়াইয়াত সাহ্ল্ ও আবু ইয়াকূব সূত্রে বর্ণনা করেছে।
সাইফ বর্ণিত রেওয়াইয়াত সমূহে সাহ্ল Ÿলতে সাহ্ল্ বিন্ ইউসুফকে বুঝায় এবং তারীখে ত্বাবারীতে সাইফের রেওয়াইয়াতের ২৬তম সনদে তা উল্লিখিত হয়েছে। কিন্তু ইবনে হাজার৬ তাঁর লীসানুল মীযান গ্রন্থে বলেছেন ঃ তাকে ও তার পিতাকে চিহ্নিত করা যায় নি। এছাড়া তিনি ইবনে আবদুল্ র্বা থেকে উদ্ধৃত করেছেন যে, না তাকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়েছে, না তার পিতাকে, কিন্তু সাইফ তার সূত্রে রেওয়াইয়াত করেছে।
আর সাইফের রেওয়াইয়াতে আবু ইয়াকূব হিসেবে উল্লিখিত ব্যক্তির মূল নাম হচ্ছে সা‘ঈদ বিন্ ‘উবাইদ। অবশ্য স্‘াঈদ বিন্ ‘উবাইদ নামে বেশ কয়েক জন হাদীছ বর্ণনাকারী রয়েছেন, কিন্তু তাঁদের কারো ডাকনামই আবু ইয়াকূব নয়। আর যাহাবী স্‘াঈদ্ বিন্ ‘উবাইদ্ নামে একজন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ করে বলেন যে, সে অজ্ঞাতপরিচয়।
এই হলো সাইফের বর্ণিত কাহিনীর সনদের অবস্থা।
উম্মে র্ক্বিফাহ্র যুদ্ধ ও রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী
সাইফ এখানে দুইটি ঐতিহাসিক ঘটনাকে সংমিশ্রিত করেছে এবং কতগুলো মিথ্যা রচনা করে তার সাথে যোগ করেছে।
ইবনে সা‘দ ও ইবনে হিশামের বর্ণনা অনুযায়ী প্রথম ঘটনাটি হচ্ছে এই যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) হিজরী ষষ্ঠ সালে ফাযারাহ্ গোত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে যায়েদ বিন্ হারেছাহ্কে একটি বাহিনী সহ প্রেরণ করেন। এ যুদ্ধের কারণ ছিলো এই যে, ইতিপূর্বে যায়েদ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর ছাহাবীগণের ব্যবসায়িক পণ্য সহ একটি কাফেলা নিয়ে শামে৭ যাচ্ছিলেন। তাঁরা মদীনা থেকে সাত মনযিল ব্যবধানে ওয়াদিল্ কুরা নামক স্থানে উপনীত হলে ফাযারাহ্ গোত্রের লোকেরা তাঁদের ওপর হামলা চালায় এবং তাঁদের ব্যবসায়িক পণ্য লুণ্ঠন করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় যায়েদ মারাত্মকভাবে আহত হন ও রণাঙ্গনের মাটিতে পড়ে থাকেন। তিনি সুস্থ হবার পর মদীনায় হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর খেদমতে উপনীত হয়ে তাঁর নিকট ঘটনাবলী বর্ণনা করেন। এ কারণেই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্যে যায়েদের সেনাপতিত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। এ থেকেই উম্মে র্ক্বিফাহ্র ঘটনার সূত্রপাত হয়।
আর ইয়াকূবী যায়েদকে পাঠানোর কারণ সম্পর্কে বলেন ঃ
ফাযারাহ্ গোত্রের গোত্রপতির স্ত্রী র্ক্বিফাহ্ মদীনাহ্ থেকে যায়েদের বাহিনীর রওয়ানা হবার কথা জানতে পেরে মদীনার উদ্দেশে একটি অগ্রবর্তী বাহিনী প্রেরণ করে। এ বাহিনীর সৈন্য ছিলো তারই চল্লিশ সন্তান। যায়েদ তাদের বিরুদ্ধে কঠিন যুদ্ধে অবতীর্ণ হন এবং তাদের পুরুষ যোদ্ধাদেরকে হত্যা ও নারীদেরকে বন্দী করেন। আর দু’জন বাদে উম্মে র্ক্বিকাহ্র পরিবারের সকলেই নিহত হয়। এ দু’জন হলো স্বয়ং উম্মে ক্বিরফাহ্ ও জারিয়াহ্ নামে তার এক কন্যা এবং উভয়ই বন্দী হয়। এরপর যায়েদের আদেশে উম্মে র্ক্বিফাহ্কে হত্যা করা হয় এবং হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) উম্মে র্ক্বিফাহ্র কন্যা জারিয়াহ্কে তাঁর [রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)-এর] মামাকে দান করেন। তার গর্ভে আবদুর রহমান নামে একটি পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করে।
ইতিহাসে এ ঘটনা উম্মে র্ক্বিফাহ্র ঘটনা হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। আর এ ঘটনার পুরোটাই হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর যুগে সংঘটিত হয়।
দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে হাওয়াবের কুকুরের ঘটনা।
হাওয়াব হচ্ছে মদীনাহ্ থেকে বছরার পথে একটি মনযিল। হাদীছের গ্রন্থাবলীতে ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) তাঁর স্ত্রীগণকে সম্বোধন করে বলেন ঃ “তোমাদের মধ্যে কে সে জন যে প্রচুর পশম বিশিষ্ট উটের পিঠে সওয়ার হয়ে যেতে থাকবে এবং এক সময় (সে হাওয়াবে উপনীত হবে এবং) হাওয়াবের কুকুরগুলো তার উদ্দেশে চীৎকার করবে? আর তার ডান পাশে ও বাম পাশে বহু লোক নিহত হবে৮ এবং সে নিজে বেঁচে যাবে, যদিও মৃত্যু তাকে হুমকি দেবে।”৯
আর একই ঘটনা উম্মে সালামাহ্ থেকে এরূপ বর্ণিত হয়েছে ঃ রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) উম্মাহাতুল মু’মিনীনের (তাঁর স্ত্রীগণের) কয়েক জনের খুরূজ্১০ সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। তখন আয়েশাহ্ হেসে ওঠেন। হযরত (সাঃ) তাঁকে বললেন ঃ “ওহে গর্দভী! সাবধান হও যাতে সেই নারী তুমি না হও। ওহে গর্দভী! আমি যেন দেখতে পাচ্ছি যে, তুমি আলীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছো এমন অবস্থায় যে, তুমি অন্যায় করছো আর তখন হাওয়াবের কুকুরগুলো তোমার উদ্দেশে চীৎকার করছে।”১১ এরপর তিনি আলীর দিকে ফিরে বললেন ঃ “আয়েশাহ্ যদি তোমার হাতে পড়ে তো তার প্রতি নমনীয়তা দেখিও।”১২
হাওয়াবে কার উদ্দেশে কুকুর ঘেউঘেউ করেছিল?
হাওয়াবের কুকুরের চীৎকার সম্বন্ধে হাদীছে উল্লিখিত হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ওপরে উল্লিখিত হলো। পরবর্তী কালে এ ভবিষ্যদ্বাণী যখন বাস্তবে রূপায়িত হয় তদসংক্রান্ত ঘটনাবলী অন্যান্য ঐতিহাসিকগণ কর্তৃক যেভাবে বর্ণিত হয়েছে তা নিম্নরূপ ঃ
আয়েশাহ্ যে উটে সওয়ার হয়ে জঙ্গে জামালে (উটের যুদ্ধে) অংশগ্রহণ করেন তার মালিক ‘উরানী বলেন ঃ আমি একটি উটের পিঠে সওয়ার হয়ে পথ চলছিলাম। হঠাত একজন আরোহী আমার সামনে এলো এবং বললো ঃ “ওহে উটের মালিক! তুমিইক তোমার এ উটটিকে বিক্রি করবে?”
আমি বললাম ঃ “হ্যা।”
সে বললো ঃ “দাম কত?”
বললাম ঃ “এক হাজার দেরহাম।”
“তুমি কি পাগল নাকি? একটা উট কি কখনো এক হাজার দেরহামে বিক্রি হয়?”
“হয়, আমার উট।”
“কোন্ যুক্তিতে এ কথা বলছো?”
“এর কারণ এই যে, আমি এ উটে সওয়ার হয়ে এমন কারো পশ্চাদ্ধাবন করি নি যাকে ধরতে পারি নি এবং আমি এ উটে সওয়ার থাকা অবস্থায় এমন কেউ আমার পশ্চাদ্ধাবন করে নি যে আমাকে ধরতে পেরেছে।”
“যদি জানতে যে, এ উট কার জন্যে চাচ্ছি তাহলে আমার সাথে এর চেয়ে উত্তমভাবে মোয়ামেলা করতে১৩।”
“কার জন্যে চাচ্ছো?”
“তোমার মায়ের জন্যে।”
“আমি আমার মাকে তাঁর ঘরে রেখে এসেছি। তিনি অচল হয়ে পড়ে আছেন; চলাফেরার শক্তি নেই।”
“আমি এ উটটিকে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশাহ্র জন্যে চাচ্ছি।”
“যদি তা-ই হয় তাহলে আমি মূল্য গ্রহণ ছাড়াই এ উটটিকে তোমার কাছে সোপর্দ করলাম।”
“না, বরং তুমি আমার সাথে মনযিলে আসো; আমি তোমাকে এর পরিবর্তে আরেকটি উট দেবো এবং এছাড়াও অতিরিক্ত কিছু অর্থ দেবো।”
‘উরানী বলেন ঃ আমি ফিরে এলাম; সে আয়েশাহ্র একটি বাচ্চাওয়ালা উট আমাকে দিলো এবং সেই সাথে চারশ’ বা ছয়শ’ দেরহাম অতিরিক্ত দিলো। তারপর আমাকে বললো ঃ “তুমি পথ চেনো?” আমি বললাম ঃ “হ্যা, অন্য যে কারো চেয়ে ভালোভাবে।” বললো ঃ “তাহলে আমাদের সাথে এসো।”
‘উরানী বলেন ঃ আমি তাঁদের সাথে রওয়ানা হলাম। পথে যখনই কোনো মরুপ্রান্তর বা নদী পড়েছে তখনই তাঁরা জিজ্ঞেস করেছেন, “এ জায়গা কোন্ জায়গা?” শেষ পর্যন্ত আমরা চলার পথে হাওয়াবের জলাভূমিতে১৪ এসে পৌঁছলাম। তখন সেখানকার কুকুরগুলো ডাক-চীৎকার শুরু করে দিলো। তিনি (আয়েশাহ্) আমাকে জিজ্ঞেস করলেন ঃ “এটা কোন্ জলাভূমি?” বললাম ঃ “হাওয়াব্ জলাভূমি।”
‘উরানী বলেন ঃ একথা শুনে আয়েশাহ্ উচ্চৈস্বরে চীৎকার করে উঠলেন। এরপর তিনি উটের পিঠে থাপ্পড় মেরে উটকে বসাবার চেষ্টা করলেন এবং বললেন ঃ “আল্লাহ্র কসম, আমিই সেই নারী যার চলার পথে হাওয়াবের কুকুরগুলো চীৎকার করেছে। আমাকে ফিরিয়ে নাও।” তিনি একথা তিন বার বললেন। আয়েশাহ্ তাঁর উটকে বসালেন এবং লোকেরাও তাঁর চারদিকে তাদের উটগুলোকে বসালো। আয়েশাহ্ একই অবস্থায় থাকলেন এবং অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত থাকলেন। পরদিন একই সময় আয়েশাহ্র বোনের ছেলে আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর তাঁর নিকট এলেন এবং বললেন ঃ “তাড়াতাড়ি করুন, তাড়াতাড়ি করুন। আল্লাহ্র শপথ, আলী ইবনে আবি তালেব আপনার কাছে পৌঁছে যাচ্ছেন।”
‘উরানী বলেন ঃ তখন তাঁরা সেখান থেকে রওয়ানা হলেন এবং আমাকে গালিগালাজ করলেন। ... (রেওয়াইয়াতের শেষ পর্যন্ত)।
মুসনাদে আহ্মাদে১৫ বলা হয়েছে ঃ
এ সময় যুবাইর বললেন ঃ “আপনি ফিরে যাবেন? হয়তো মহামহিম ও মহাপরাক্রান্ত আল্লাহ্ আপনার মাধ্যমে লোকদের মধ্যে সন্ধি প্রতিষ্ঠা করাবেন।”
ইবনে কাছীর বলেন১৬ ঃ শায়খাইন১৭ রেওয়াইয়াত ছহীহ্ হওয়ার জন্যে যে সব বিষয়কে শর্ত বলে গণ্য করেছেন এ রেওয়াইয়াতে তা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও তাঁরা এটিকে স্বীয় সংকলনে স্থান দেন নি।
এছাড়া ত্বাবারী১৮ যুহ্রী থেকে রেওয়াইয়াত করেন যে, আয়েশাহ্ কুকুরের চীৎকার শুনলেন এবং বললেন ঃ এ কোন্ পানি?” তারা বললো ঃ “হাওয়াব।” তিনি বললেন ঃ “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। নিঃসন্দেহে আমি সেই নারী। নিঃসন্দেহে আমি রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ)কে বলতে শুনেছি যে, Ñ আর তাঁর স্ত্রীগণ তখন তাঁর নিকটে ছিলেন Ñ তিনি বলেন, হায়! আমি যদি জানতাম যে, তোমাদের মধ্যে কার উদ্দেশে হাওয়াবের কুকুরগুলো চীৎকার করবে!” আয়েশাহ্ ফিরে যেতে চাইলেন। তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর আয়েশার নিকটে এলেন। ... (শেষ পর্যন্ত)
ইবনে কাছীর১৯ এবং আবূল ফিদা২০ বলেন ঃ আয়েশাহ্ তাঁর হাতে হাত মারলেন এবং বললেন ঃ “আমিই সেই নারী।” আর সেই একই রেওয়াইয়াতে বলা হয়েছে যে, ইবনে যুবাইর আয়েশাহ্কে বললেন ঃ “যে বলেছে যে, এটা হাওয়াবের পানি, নিঃসন্দেহে সে মিথ্যা বলেছে।”
মাস্‘উদী রেওয়াইয়াত করেছেন২১ ঃ ইবনে যুবাইর বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, এটা হাওয়াব নয়। যে আপনাকে এ কথা বলেছে সে ভুল বলেছে।” আর ত্বাল্হাহ্ Ñ যিনি লোকদের শেষ প্রান্তে ছিলেন Ñ নিজেকে আয়েশাহ্র নিকট পৌঁছালেন এবং তিনিও শপথ করে বললেন যে, এটা হাওয়াব নয়। এছাড়া তাঁদের সাথের লোকদের মধ্য থেকে পঞ্চাশ জন লোক এ দু’জনের অনুসরণে একইভাবে সাক্ষ্য দিলো। আর এটাই ছিলো ইসলামে২২ প্রথম মিথ্যা সাক্ষ্য।
তারীখে ইয়াকূবীতে২৩ বলা হয়েছে ঃ আয়েশাহ্ বলেন ঃ “আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে যাও। এ হচ্ছে সেই পানি যে সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) আমাকে বলেছিলেন, নিজের ব্যাপারে সাবধান হও, কারণ. হাওয়াবের কুকুরগুলো যার উদ্দেশে চীৎকার করবে তুমি যেন সেই নারী না হও।” তখন চল্লিশ ব্যক্তিকে আয়েশাহ্র সামনে আনা হলো এবং তারা আল্লাহ্র নামে শপথ করে সাক্ষ্য দিলো যে, এ পানি হাওয়াব নয়।
আল-ইমামাহ্ ওয়াস্ সীয়াসীয়্যাহ্২৪ গ্রন্থে এবং মানাক্বেবে খাওয়ারেযমীতে জঙ্গে জামাল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ঃ হাওয়াবের কুকুরগুলো যখন আয়েশাহ্র উদ্দেশে চীৎকার দিলো তখন তিনি মুহাম্মাদ বিন্ ত্বাল্হাহ্কে বললেন ঃ “এটা কোন্ পানি?” এরপর তিনি সেই পর্যন্ত বলেন যাতে বলা হয়েছে যে, “হযরত (সাঃ) বলেছিলেন, “হে গর্দভী! পাছে তুমিই সেই নারী না হও , হে গর্দভী!” তখন মুহাম্মাদ বিন্ ত্বালহাহ্ বললেন ঃ “আপনার রব আপনাকে ক্ষমা করুন, এগিয়ে যান এবং এ জাতীয় কথা বন্ধ করুন।” তখন আবদুল্লাহ্ ইবনে যুবাইর আয়েশাহ্র নিকটে এলেন এবং তাঁর নিকট আল্লাহ্র নামে শপথ করে বললেন ঃ “আপনি রাতের প্রথম ভাগেই হাওয়াব পার হয়ে এসেছেন।” আর তাঁরা আরবদের মধ্য থেকে বেশ কিছু সংখ্যক মিথ্যা সাক্ষ্যদানকারী নিয়ে এলেন; তারা এ বিষয়ে সাক্ষ্য দিলো। বলা হয়ে থাকে যে, ইসলামের ইতিহাসে এটাই প্রথম মিথ্যা সাক্ষ্য।
ওপরে যে সব ঐতিহাসিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এতদ্ব্যতীত অন্যান্য ঐতিহাসিকগণও তাঁদের নিজ নিজ গ্রন্থে হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) থেকে উক্ত হাদীছ বর্ণনা করেছেন। যেমন ঃ ইবনে আছীর তাঁর “আন্-নিহাইয়াহ্” গ্রন্থে (“হাওয়াব্” শব্দের ব্যাখ্যায়), হামাভী তাঁর “মু‘জামুল্ বুল্দান্” গ্রন্থে (“হাওয়াব্” শব্দের ব্যাখ্যায়), যামাখশারী তাঁর “আল্-ফায়েক্ব” গ্রন্থে (دبب শব্দের ব্যাখ্যায়), মুসনাদে আহ্মাদ (ষষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৫২-৯৭), সীরাতে হালাবীয়্যাহ্ (৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩২০-৩২১), মুন্তাখাবু কান্যুল্ ‘উম্মাল্ (৫ম খণ্ড/ ৪৪৪-৪৪৫) ও অন্যান্য।
উপসংহার
সীরাত, হাদীছ ও ইতিহাসের সকল গ্রন্থেই উল্লিখিত হয়েছে যে, হাওয়াবের কুকুরগুলো উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশাহ্র উদ্দেশে চীৎকার করেছিলো। আর হযরত রাসূলে আকরাম (সাঃ) এ ব্যাপারে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এবং যেহেতু তাঁর এ ভবিষ্যদ্বাণী প্রতিফলিত হয়েছিলো সেহেতু একে তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। কিন্তু সকলের বিপরীতে একমাত্র সাইফ এ ব্যাপারে তার মনগড়া কল্পকাহিনী উপস্থাপন করেছে এবং সত্যকে পরিবর্তিত করার চেষ্টা করেছে। এ উদ্দেশ্যেই সে একজন কল্পিত উম্মে যাম্ল্ তৈরী করেছে এবং কুকুর চীৎকারের ঘটনাকে তার সাথে জড়িত করার চেষ্টা করেছে।
তবে সৌভাগ্য বশতঃ ত্বাবারী এ ব্যাপারে কেবল সাইফের রেওয়াইয়াতই উদ্ধৃত করেন নি, বরং তিনি ‘উরানী ও যুহ্রীর রেওয়াইয়াতও উদ্ধৃত করেছেন যাতে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশাহ্র উদ্দেশে কুকুরদের চীৎকার করার কথা বলা হয়েছে।
অতএব, সাইফ যে এক্ষেত্রে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে কল্পকাহিনী তৈরী করেছে তাতে কারোই সন্দেহ পোষণের কোনো কারণ নেই।
পাদটীকা ঃ
১. হাওয়াব হচ্ছে মদীনা থেকে বছরা যাওয়ার পথে একটি মনযিলের নাম।
২. লীসানুল্ মীযান, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৯২২ দ্রষ্টব্য।
৩. অর্থাৎ উম্মে যাম্ল্ তার পরিবারের নিকট ফিরে যাওয়ার আগে।
৪. অর্থাৎ আয়েশাহ্ ও উম্মে যাম্লের নিকট (এবং সম্ভবতঃ অপর কতক নারীও সেখানে উপস্থিত ছিলেন)।
৫. ২য় খণ্ড, পৃঃ ৩২৫।
৬. মীযানুল ই‘তিদাল্, ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৫০।
৭. বৃহত্তর সিরিয়া Ñ বর্তমান সিরিয়া, জর্দান, ফিলিস্তিন ও লেবানন যার অন্তর্ভুক্ত ছিলো।
৮. ইবনে আছীর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ২১২।
৯. সুয়ূতী তাঁর “খাছায়েছ’-এ (২য় খণ্ড, পৃঃ ১৩৭) এবং ইবনে আবদুল র্বা তাঁর “ইস্তি‘আব্”-এ আয়েশাহ্র পরিচয় দিতে গিয়ে এ রেওয়াইয়াতটি উদ্ধৃত করেছেন এবং এরপর বলেছেন যে, এ রেওয়াইয়াতটি নবুওয়াতের অন্যতম নিদর্শন বর্ণনাকারী।
১০. “খুরূজ”-এর আভিধানিক অর্থ ‘বহির্গত হওয়া’ হলেও পারিভাষিক অর্থ ‘যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বহির্গমন’। Ñ অনুবাদক
১১. সুয়ূতী তাঁর “খাছায়েছ”-এ (২য় খণ্ড, পৃঃ ১৩৭) এবং ইবনে আবদুল র্বা তাঁর “ইস্তি‘আব্”-এ আয়েশাহ্র পরিচয় দিতে গিয়ে এ রেওয়াইয়াতটি উদ্ধৃত করেছেন এবং এরপর বলেছেন যে, এ রেওয়াইয়াতটি নবুওয়াতের অন্যতম নিদর্শন বর্ণনাকারী।
১২. ইবনে ‘আব্দে রাব্বিহ্ ঃ ‘ইক্বদুল ফারীদ, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ১১৮; সীরাতে হালাবীয়্যাহ্, ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৩২০-৩২১।
১৩. অর্থাৎ এর চেয়ে কম দামে বিক্রি করতে রাযী হতে।
১৪. আভিধানিক অনুবাদ হয় “এটা কোন্ পানি?” এর তাৎপর্য সুস্পষ্ট নয়। হয় এর দ্বারা জলাভূমি বুঝানো হয়েছে, অথবা চলার পথের পাশ্ববর্তী কোন পানিপূর্ণ জায়গা।
১৫. ষষ্ঠ খণ্ড, পৃঃ ৯৭।
১৬. ৭ম খণ্ড/ ২৩০।
১৭. ইমাম বোখারী ও ইমাম ইসমাঈল।
১৮. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৮৫।
১৯. ৭ম খণ্ড, পৃঃ ২৩০।
২০. পৃঃ ১৭৩।
২১. মুরূজুয্ যাহাব, ১৬তম খণ্ড।
২২. অর্থাৎ ইসলামের ইতিহাসে।
২৩. ২য় খণ্ড, পৃঃ ১৫৭।
২৪. পৃঃ ৫৫-৫৬।
চলবেঃ
©somewhere in net ltd.