নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে সাবাহ ও তার কল্প কাহনিী

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৫২

আগের লেখার লিঙ্কঃ

Click This Link

আবু মাহ্জানের নেশাখোরী

ঐতিহাসিকদের বর্ণনায় আবু মাহ্জানের ঘটনা

আবু মাহ্জান ছাক্বাফী ছিলো হাবীব বিন্ ওমর বিন্ ‘উমাইর ছাক্বাফীর পুত্র। ছাক্বীফ গোত্র ইসলাম গ্রহণ করলে সে-ও ইসলাম গ্রহণ করে। সে ছিলো কবি ও সাহসী ব্যক্তি এবং জাহেলিয়্যাত ও ইসলাম উভয় যুগেই বীরযোদ্ধা হিসেবে সুপরিচিত ছিলো। সে নিয়মিত মদ পান করতো ও নেশায় বুঁদ হয়ে থাকতো। মাতাল হওয়ার কারণে খলীফাহ্ ওমর তাকে সাত বা আট বার শরয়ী শাস্তি প্রদান করেছিলেন।

আগ¦ানী গ্রন্থে১ বলা হয়েছে ঃ

একদল শরাবখোরের সাথে আবু মাহ্জানকে ওমর বিন্ খাত্তাবের সামনে আনা হয়। ওমর তাদেরকে বলেন ঃ “আল্লাাহ্ ও রাসূল মদ হারাম করা সত্ত্বেও তোমরা মদ পান করেছো?” তারা বললো ঃ “না আল্লাহ্ তা হারাম করেছেন, না তাঁর রাসূল। কারণ, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন ঃ যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে তারা ইতিপূর্বে যা ভক্ষণ করেছে তাতে কোনো গুনাহ্ নেই যখন তারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে এবং ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে।”২

ওমর তাঁর আশেপাশের লোকদের দিকে তাকিয়ে বললেন ঃ “এদের ব্যাপারে তোমাদের মত কী?” প্রত্যেকেই একেকটি মত প্রকাশ করলেন। তখন ওমর একজনকে আলীর নিকট পাঠালেন এবং তিনি এলে এ ব্যাপারে তাঁর সাথে পরামর্শ করলেন। আলী বললেন ঃ “তারা যা বলছে এ আয়াতের তাৎপর্য যদি তা-ই হয় তাহলে মৃতদেহ, ফিনকি দিয়ে বের হওয়া রক্ত এবং শুকরের মাংসকেও তাদের হালাল গণ্য করতে হবে।” হযরত আলীর নিকট থেকে এ জবাব শোনার পর তারা নীরব হয়ে গেলো। তখন হযরত ওমর হযরত আলীকে বললেন ঃ “(এদের ব্যাপারে) তোমার মত কী?” আলী বললেন ঃ “আমার মত হচ্ছে এই যে, তারা যদি মদকে হালাল গণ্য করে ও খেয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে নিহত হতে হবে। আর যদি হারাম জেনেও মদ পান করে থাকে তাহলে তাদের ওপর শরয়ী শাস্তি কার্যকর হবে।” ওমর তাদেরকে জিজ্ঞেস করলেন। তারা বললো ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আমরা এর হারাম হওয়ার ব্যাপারে কোনোই সন্দেহ পোষণ করি না। যা বলেছি তা কেবল শরীয়াতের হাত থেকে পলায়নের উদ্দেশ্যেই বলেছি যাতে চাবুক খাওয়া থেকে বাঁচতে পারি।”

ওমর এক এক করে তাদের ওপর শরয়ী শাস্তি কার্যকর করলেন। অতঃপর আবু মাহ্জানের পালা এলো। তাকে চাবূক মারা হলে সে এ কবিতাটি আবৃত্তি করলো৩ ঃ

“তুমি কি দেখো নি কেমন হয়ে গেলো বিষয়টা অভ্যাসের কারণে?

পুরুষটি সক্ষম হলো না তার শক্তিমত্তা কাজে লাগাতে

আমি ধৈর্য ধারণ করলাম, দুঃখিত হলাম না ও কাবু হলাম না

যালেম হুকুমাতে কালের প্রবাহে সংঘটিত দুর্ঘটনায়

অবশ্যই আমি ধৈর্যের অধিকারী, আমার ভাইয়েরা বিদায় নিলো

কিন্তু ধৈর্য ধরতে পারি নি রঙিন শরাবের তরে একটি দিন

নিক্ষেপ করলেন তাকে আমীরুল মু’মিনীন ধ্বংস করে

তাই তো শরাব প্রেমিকগণ ক্রন্দন করলো সারা যুগ ধরে।”

আবু মাহ্জানের এ কথা শুনে ওমর বললেন ঃ “তোমার অন্তরে যা ছিলো আমাদের তা জানা ছিলো না। কিন্তু তুমি আমাদের নিকট তা প্রকাশ করলে। অতএব, এখন আমি তোমার শাস্তিকে কঠিনতর করবো। কারণ, তুমি নেশাখোরীর ওপরে জেদ করছো।” তখন আলী বললেন ঃ “আপনার এরূপ অধিকার এবং কোনো ব্যক্তি যে কাজ করার কথা মুখে বলেছে কিন্ত করে নি সে কাজের জন্যে তাকে শাস্তি দেয়া জায়েয নয়। যেহেতু আল্লাহ্ তা‘আলা কবিদের ব্যাপারে বলেছেন ঃ অবশ্যই তারা এমন কথা বলে যা তারা করে না।৪” ওমর বললেন ঃ “আল্লাহ্ কতক লোককে তার ব্যতিক্রম করেছেন এবং বলেছেন ঃ তারা ব্যতীত যারা ঈমান এনেছে ও নেক আমল করেছে।৪” আলী বললেন ঃ “আপনি কি এই মদখোরদেরকে নেককার মু’মিন বলে মনে করেন? তাছাড়া রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) তো বলেছেন যে, কোনো বান্দাহ্ এমন অবস্থায় মদ পান করে না যখন সে ঈমানদার থাকে।”

আল-ইছাবাহ্ গ্রন্থে বলা হয়েছে ঃ আবু মাহ্জান ওমরের কাছে গেলো। ওমর ধারণা করলেন যে, সে মদ খেয়েছে। তাই তিনি তার মুখের ঘ্রাণ নেয়ার জন্যে একজনকে নির্দেশ দিলেন। তখন আবু মাহ্জান বললো ঃ “তোমার এ কাজ হচ্ছে সেই গোয়েন্দাগিরি যা করতে নিষেধ করা হয়েছে৫।” তখন ওমর তাকে পাকড়াও করা থেকে বিরত থাকেন।

ত্বাবারী হিজরী ১৪ সালের ঘটনাবলী বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন৬ ঃ এ বছরই ওমর মদপানের অপরাধে স্বীয় সন্তান ও তার বন্ধুদের এবং আবু মাহ্জানের বিরুদ্ধে শরয়ী শাস্তি কার্যকর করেন। ইবনে কাছীর বলেন৭ ঃ এ বছর আবু মাহ্জান ছাক্বাফীকে মদপানের অপরাধে সাত বার শরয়ী শাস্তি প্রদান করা হয়।

‘ইক্বদুল ফারীদ্ গ্রন্থে মদ খাওয়ার জন্যে কুখ্যাত বিশিষ্ট ব্যক্তিদের প্রসঙ্গে বলা হয়েছে ঃ “তাদের মধ্যে আবু মাহ্জান ছাক্বাফী অন্যতম। আর সে মদের খুবই ভক্ত ছিলো। এ কারণে সা‘দ্ বিন্ আবি ওয়াক্কাছ কয়েক বার তার বিরুদ্ধে শরয়ী শাস্তি কার্যকর করে।”

এছাড়া আল্-ইছাবাহ্ ও আল্-আগ¦ানী গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, আবু মাহ্জান শামূস্ নাম্নী এক নারীর প্রতি খুবই দুর্বল ছিলো। তাই তার সাথে সাক্ষাত করার জন্যে আবু মাহ্জান কোনো অপকৌশলের আশ্রয় নিতেই বিরত থাকে নি। শেষ পর্যন্ত সে এক রাজমিস্ত্রীর সহকারীর কাজ নেয় এবং শামূসের বাড়ীর পার্শ্ববর্তী বাড়ীর দেয়াল নির্মাণের কাজ করতে যায়। এভাবে সে ঐ বাড়ীর জানালা দিয়ে তার প্রিয় নারীর রূপসৌন্দর্য দর্শনে সক্ষম হয় ও তাকে নিয়ে নিম্নোক্ত কবিতা রচনা করে ঃ

“আমি দৃষ্টিপাত করলাম শামূসের প্রতি ও সে ছাড়া অন্যদের প্রতি

অথচ আমার মনে রহমানের৮ ভয়৯ কম ছিলো না মোটেই

কিন্তু আমি নিজেকে মনে করলাম একজন বিরাট সম্পদশালী

শহরে বসবাসের উপযুক্ত যে রবিশস্য চাষ ছেড়ে।”

এটা জানার পর শামূসের স্বামী ওমরের নিকট নালিশ করে। তখন ওমর তাকে হাযূযী১০তে নির্বাসিত করেন। তিনি তার সাথে দু’জন প্রহরী পাঠান। এদের মধ্যে একজনের নাম ছিলো ইবনে জাহ্রা’ নাছ্রী। ইবনে জাহ্রা’ আবু বকরের যুগে এ জাতীয় দায়িত্ব পালন করতো। ওমর তাদেরকে নির্দেশ দেন যে, আবু মাহ্জান যেন তলোয়ার সাথে নিতে না পারে। কিন্তু আবু মাহ্জান আটাভর্তি একটি বস্তার মধ্যে তলোয়ার ও অপর একটি বস্তার মধ্যে তলোয়ারের খাপ সাথে নিয়ে নেয়। উপকূলে পৌঁছার পর জাহায নিকটবর্তী হলে আবু মাহ্জান একটি দুম্বা ক্রয় করে এবং ইবনে জাহ্রাকে বলে ঃ “এসো দুপুরের খানা খেয়ে নিই।” একথা বলে সে তড়িত গতিতে উঠে একটি বস্তার কাছে যায় এবং আটা বের করার ভান করে তলোয়ার বের করে আনে। ইবনে জাহ্রা’ আবু মাহ্জানকে তলোয়ার হাতে নিতে দেখে পালিয়ে যায় এবং স্বীয় উটে সওয়ার হয়ে ওমরের নিকট গিয়ে ঘটনা বর্ণনা করে।১১

আল-ইছাবাহ্ ও আল্-ইস্তি‘আব্-এ বলা হয়েছে, এ ঘটনার পর আবু মাহ্জান সা‘দ বিন্ আবি ওয়াক্কাছের নিকট যায় এবং ঘটনাক্রমে তখন কাদেসিয়ার যুদ্ধ চলছিলো। মুহাম্মাদ বিন্ সা‘দ বিন্ আবি ওয়াক্কাছ বর্ণনা করেন ঃ আবু মাহ্জানকে পুরোপুরি পাঁড় মাতাল অবস্থায় সা‘দের নিকট আনা হয়। সা‘দ তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখার নির্দেশ দেন। সেদিন আহত থাকার কারণে সা‘দ রণাঙ্গনে যান নি, বরং খালেদ বিন্ ‘র্উফুতাহ্কে সেনাপতি করে রণাঙ্গনে পাঠান এবং নিজে এমন একটি জায়গায় অবস্থান গ্রহণ করেন যেখান থেকে পুরো রণাঙ্গন দেখা যায়। দুই পক্ষের সৈন্যরা মুখোমুখী হলে আবু মাহজান বলে ঃ

“আমার জন্যে সবচেয়ে বড় দুঃখ যবে অশ্বারোহীরা ছুটাছুটি করছে

বন্দী-স্থবির পড়ে আছি আমি মহীরূহ সাথে বাঁধা।”

তারপর সে হযরত হাফছার কন্যাকে Ñ যিনি ছিলেন সা‘দের স্ত্রী Ñ বললো ঃ “আফসোস! আমাকে মুক্ত করে দাও। তোমার সাথে অঙ্গীকার করছি, যদি রণাঙ্গন থেকে নিরাপদে ফিরে আসি তাহলে নিজেই এসে জিঞ্জিরাবদ্ধ হবো, আর যদি নিহত হই তাহলে তোমরা আমার হাত থেকে রেহাই পেলে।” তখন সা‘দের স্ত্রী তার শিকল খুলে দিলেন। সে উঠে দাঁড়ালো এবং সা‘দের ঘোড়ায় চড়ে বর্শা হাতে নিয়ে রণাঙ্গনে চলে গেলো। সে শত্র“দের যে অংশের ওপরই হামলা করলো তাদেরকেই পরাজিত করলো। লোকেরা (ইসলামী বাহিনীর সৈন্যরা) বলতে লাগলো ঃ “ইসলামের সাহায্যের জন্যে ফেরেশতা এসেছে।”

সা‘দ নিজে এ হামলা সমূহের দৃশ্য দেখলেন এবং বললেন ঃ “এ ধরনের লম্ফ আমার ঘোড়ার লম্ফ, কিন্তু যেভাবে বর্শার আঘাত হানা হচ্ছে তা আবু মাহ্জানের বর্শার আঘাত হানার ন্যায়, অথচ ও তো জিঞ্জিরাবদ্ধ আছে।”

শত্র“ বাহিনী পরাজিত হলে আবু মাহ্জান ফিরে আসে এবং পুনরায় নিজের হাতেই নিজের পায়ে জিঞ্জির পরায়। সা‘দের স্ত্রী তাঁর কাছে ঘটনা খুলে বললেন। সা‘দ বললেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আমি আজ সেই ব্যক্তিকে শরয়ী শাস্তি দেবো না আল্লাহ্ যার মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি এহেন অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন।” অতঃপর তিনি আবু মাহ্জানকে মুক্ত করে দেন। আবু মাহ্জান বললো ঃ “যে সব দিনে আমার ওপর শরয়ী শাস্তি কার্যকর করা হতো তখন তার মাধ্যমে আমি নিজেকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করতাম, কিন্তু আপনি যখন আমার ওপর থেকে শরয়ী শাস্তি তুলে নিলেন সেহেতু আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করছি, আর কোনো দিন মদপান করবো না।”

সাইফের বর্ণনা

কিন্তু সাইফের রেওয়াইয়াতের ভিত্তিতে ত্বাবারী১২ আবু মাহ্জানের ঘটনা যেভাবে উল্লেখ করেছেন তা হচ্ছে ঃ সা‘দ একদল লোককে গোলযোগ সৃষ্টির কারণে বন্দী করেন এবং বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, এখন যদি দুশমনদের মুখোমুখী ন্ াথাকতাম তাহলে তোমাদেরকে অন্যদের জন্যে শিক্ষায় পরিণত করতাম।” আর আবু মাহ্জানও এ বন্দীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলো।

সাইফের রেওয়াইয়াত থেকে ত্বাবারী১৩ এরপর বলেন ঃ সা‘দের স্ত্রী আবু মাহ্জানকে মুক্ত করে দিলে সে কাদেসিয়ার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে এবং এরপর কারাগারে ফিরে আসে ও শিকল পরিধান করে। সেই পবিত্রা নারী (সা‘দের স্ত্রী) তাকে জিজ্ঞেস করলেন যে, কেন তাকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে? আবু মাহজান বললো ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আমাকে না কোনো হারাম বস্তু খাওয়ার জন্যে কারারুদ্ধ করেছে, না হারাম পানীয় পানের জন্যে। বরং আমাকে এ কারণে কারারুদ্ধ করেছে যে, আমি জাহেলিয়্যাতের যুগে মদ পান করতাম। আর আমি একজন কবি; আমার মুখে কবিতা চলে আসে এবং অনেক সময় সে কবিতা পাঠ করি। এ কারণে লোকেরা আমাকে খারাপ বলে উল্লেখ করে। তাই সা‘দ আমাকে কারারুদ্ধ করেছেন। ...”

এরপর উক্ত সতী নারী তাঁর স্বামী সা‘দকে এ সব কথা বললেন। তখন সা‘দ আবু মাহ্জানকে ছেড়ে দিলেন এবং বললেন ঃ “যাও, এরপর কার্যতঃ অপরাধ না করা পর্যন্ত কেবল কথার জন্যে আমি তোমাকে পাকড়াও করবো না।” তখন আবু মাহ্জান বললো ঃ “ব্যাপার যখন এ রকমই, তাই আমিও আল্লাহ্র নামে শপথ করলাম যে, আর কখনোই অশ্লীল কথা বলার জন্যে আমার মুখ খুলবো না।”

আবূল ফারাজও তাঁর আগ¦ানী গ্রন্থের ১৯তম খণ্ডে ত্বাবারী থেকে সাইফের এ রেওয়াইয়াত হুবহু উদ্ধৃত করেছেন।

আর ইবনে হাজার১৪ বলেন, ইবনে ফাত্হূন্ এই কারণে আল-ইস্তি‘আব্-এর লেখকের সমালোচনা করেছেন যে, তিনি আবু মাহ্জান সম্পর্কে বলেছেন ঃ “সে সব সময় শরাবে নিমজ্জিত থাকতো।” ইবনে ফাত্হূন্ আরো বলেন, “তার সেই শরয়ী শাস্তি ভোগ করাই যথেষ্ট; তার ব্যাপারে এর চেয়ে বেশী কিছু বলা ঠিক নয়। তিনি (আল-ইস্তি‘আব্-এর লেখক) যদি তার সম্পর্কে সাইফ-এর যে রেওয়াইয়াত আমরা উদ্ধৃত করেছি তা উদ্ধৃত করতেন তাহলেই বেশী ভালো করতেন।” এরপর ইবনে হাজার বলেন ঃ “সাইফ হচ্ছে (বর্ণনাকারী হিসেবে) দুর্বল এবং আমরা যে সব রেওয়াইয়াত উদ্ধৃত করেছি তা অধিকতর নির্ভরযোগ্য ও অধিকতর মশহূর।”

ইবনে ফাত্হূনের মতে, যে কেউই রেওয়াইয়াত করেছেন যে, সা‘দ্ আবু মাহ্জানের ওপর থেকে শরয়ী শাস্তি তুলে নিয়েছিলেন তিনি ঠিক বলেন নি। তিনি বলেন ঃ “সা‘দ সম্পর্কে কখনোই এরূপ ধারণা করা চলে না।” তিনি বলেন ঃ “বরং সা‘দের এ ভূমিকার একটি ভালো যুক্তি রয়েছে।” কিন্তু তিনি সে যুক্তিটি উল্লেখ করেন নি। হয়তো তাঁর যুক্তিটি এই হয়ে থাকবে যে, যেহেতু সা‘দ বলেছেন, “আমি মদপানের ব্যাপারে আবু মাহ্জানকে চাবূক মারবো না।” সেহেতু এর পিছনে উহ্য রয়েছে যে, “যদি প্রমাণ হয় যে, সে মদপান করেছে।” কিন্তু আল্লাহ্ তা‘আলা আবু মাহ্জানকে খালেছ তাওবাহ্ করার তাওফীক দিয়েছেন এবং সে আর কখনোই মদপান করে নি। ...

মাস‘উদী১৫ সাইফের একই রেওয়াইয়াত সনদ উল্লেখ না করে উদ্ধৃত করেছেন। অত্র গ্রন্থকারের মতে, তিনি তা ত্বাবারী থেকে গ্রহণ করেছেন। কারণ, মাস‘উদী তাঁর গ্রন্থের ভূমিকায় নির্ভরযোগ্য ইতিহাস সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ত্বাবারীর ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।

সাইফের বর্ণিত কাহিনীর তথ্যসূত্র

সাইফের রেওয়াইয়াতের সনদে মুহাম্মাদ, ত্বাল্হাহ্, যিয়াদ ও ইবনে মেহ্রাক্বের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। শেষোক্ত ব্যক্তি ত্বাই গোত্রের লোক বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যিয়াদের বংশপরিচয় সংশোধন সংক্রান্ত আলোচনায় আমরা সাইফের উল্লিখিত দুই বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ও ত্বাল্হাহ্ সম্পর্কে আলোচনা করেছি।১৬

সাইফের রেওয়াইয়াতে যিয়াদ বলতে বুঝায় যিয়াদ বিন্ র্সাজেস্ আহ্মারীকে। আর এ-ও হচ্ছে একজন কাল্পনিক বর্ণনাকারী; সাইফের অন্যান্য কাল্পনিক বর্ণনাকারীর ন্যায় এর নামও ‘ইলমে রিজালের অন্য কোনো গ্রন্থে পাওয়া যায় না। তা সত্ত্বেও সাইফ কর্তৃক এর সূত্রে বর্ণিত ৫৩টি রেওয়াইয়াত ত্বাবারী কর্তৃক উদ্ধৃত হয়েছে।

তেমনি ত্বাই গোত্রে ইবনে মেহরাক্ব বা তার পিতা মেহ্রাক্বের কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না।



সাইফের রেওয়াইয়াতের পর্যালোচনা

ওপরে মুহাম্মাদ বিন্ সা‘দ ও সাইফের যে বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে তার মধ্যকার পার্থক্য অত্যন্ত সুস্পষ্ট। মুহাম্মাদ বিন্ সা‘দের বর্ণনা অনুযায়ী সা‘দের স্ত্রীর নিকট আবু মাহ্জানের উক্তি “আর যদি নিহত হই তাহলে তোমরা আমার হাত থেকে রেহাই পেলে।” থেকে সুস্পষ্ট যে, আবু মাহ্জানকে কী কারণে বন্দী করা হয়েছিলো তা সা‘দের স্ত্রীর জানা ছিলো। এছাড়া আবু মাহ্জান যে অনবরত মদ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকতো এবং এজন্য কয়েক বার তাকে শরয়ী শাস্তি ভোগ করতে হয়েছিলো, সে জনৈক আনছারীর গৃহে উঁকি দিয়ে তাঁর স্ত্রীর রূপ দর্শন করেছিলো ও এজন্য তাকে দ্বীপান্তর দেয়া হয়েছিলো, সে যে তার সাথে দেয়া প্রহরীকে হত্যা করতে চেয়েছিলো, এরপর মাতাল অবস্থায় সে সা‘দের হাতে বন্দী হয় Ñ এসব ঘটনা ছিলো এমন যা সেনাপতির স্ত্রীর নিকট তো বটেই, কারো নিকটই গোপন থাকার কথা নয়। অতএব, তিনি যে স্বয়ং আবু মাহ্জানের নিকট জানতে চাইবেন যে, কেন তাকে বন্দী করা হলো Ñ এর প্রশ্নই ওঠে না।

অন্যদিকে সা‘দের পুত্র মুহাম্মাদ বিন্ সা‘দ্ স্বয়ং বর্ণনা করেন যে, আবু মাহ্জানকে যখন সা‘দের নিকট আনা হয় তখন সে পাঁড় মাতাল ছিলো এবং এ কারণেই সা‘দ তাকে জিঞ্জিরাবদ্ধ করার নির্দেশ দেন। তেমনি মুহাম্মাদ বিন্ সা‘দ তাঁর রেওয়াইয়াতের শেষে বলেন যে, সা‘দ বলেন ঃ “আল্লাহ্র শপথ, আমি আজ সেই ব্যক্তিকে শরয়ী শাস্তি দেবো না আল্লাহ্ যার মাধ্যমে মুসলমানদের প্রতি এহেন অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছেন।” অর্থাৎ আবু মাহ্জান সুস্পষ্টতঃই শরয়ী শাস্তির উপযুক্ত ছিলো। স্বয়ং আবু মাহ্জানও বলে ঃ “যে সব দিনে আমার ওপর শরয়ী শাস্তি কার্যকর করা হতো তখন তার মাধ্যমে আমি নিজেকে গুনাহ্ থেকে পবিত্র করতাম, কিন্তু আপনি যখন আমার ওপর থেকে শরয়ী শাস্তি তুলে নিলেন সেহেতেু আমি আল্লাহ্র নামে শপথ করছি, আর কোনো দিন মদপান করবো না।” অর্থাৎ সে আগেও মদ পান করতো এবং সা‘দের নিকট যে বন্দী ছিলো তা-ও মদপানের কারণে।

কিন্তু সাইফ সা‘দের স্ত্রী ও আবু মাহ্জানের মধ্যে এমন একটি কথোপকথন তৈরী করেছে যার ফলে আবু মাহ্জানের বিরুদ্ধে উত্থাপিত মদপানের অভিযোগ এবং তার ওপর শরয়ী শাস্তি কার্যকর না করার জন্যে সা‘দের বিরুদ্ধে উত্থাপিত সমালোচনা ভিত্তিহীন প্রমাণিত হয়। শুধু তা-ই নয়, এরপর সাইফ তার তৈরী করা এ মিথ্যা বাক্যটি সা‘দের মুখে লাগিয়ে দেয় ঃ “যাও, এরপর কার্যতঃ অপরাধ না করা পর্যন্ত কেবল কথার জন্যে আমি তোমাকে পাকড়াও করবো না।” অর্থাৎ আবু মাহ্জান কার্যতঃ কোনো অপরাধ করে নি বলে সাইফ সা‘দের মুখে স্বীকারোক্তি লাগিয়ে দিয়েছে যার মাধ্যমে আবু মাহজানের অতীত সব অপরাধকে অস্বীকার করা হয়েছে।

পাদটীকা ঃ

১. ১৯তম খণ্ড/ ১৪২।

২. সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্ ঃ ৯৩।

৩. সাইফ এ ঘটনাকে বিকৃত করেছে এবং কবিতাটিও অন্য একজনের নামে চালিয়ে দিয়েছে।

৪. সূরাহ্ আশ্-শু‘আরা ঃ ২২৬।

৫. দ্রষ্টব্য সূরাহ্ হুজুরাত ঃ ১২।

৬. ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৫২।

৭. ৭ম খণ্ড, পৃঃ ৪৮।

৮. অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলার।

৯. অর্থাৎ তাঁর শাস্তির ভয়।

১০. জাহেলিয়্যাতের যুগে নির্বাসন বা দ্বীপান্তরের জন্যে ব্যবহৃত দ্বীপের ওপরে অবস্থিত একটি পাহাড়।

১১. র্আ-আগ¦ানী, ১৯তম খণ্ড/ ১৩৮।

১২. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৪৩।

১৩. ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৫৫-৫৭।

১৪. আল-ইছাবাতু ফী তামীযীছ্ ছাহাবাহ্, ৪র্থ খণ্ড, পৃঃ ১৫৭।

১৫. মুরূজুয্ যাহাব, ২য় খণ্ড, পৃঃ ৪২২-৪২৪।

১৬. মুহাম্মাদ একজন কল্পিত বর্ণনাকারী এবং ত্বাল্হাহ্ নামক সাইফের দুই বর্ণনাকারীর মধ্যে একজন কাল্পনিক, কিন্তু স্পষ্ট নয় তার লক্ষ্য কোন বর্ণনাকারী।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.