![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
শফিক রেহমান
আমেরিকার ৩৭তম প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন প্রথমবার নির্বাচিত হয়েছিলেন ১৯৬৮ -তে। তার চার বছরের মেয়াদ ১৯৭২-এ ফুরিয়ে যাবার আগে তিনি সেই বছরে আবার প্রেসিডেন্ট পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এবার তিনি প্রথমবারের চাইতে অনেক বেশি ভোটে নির্বাচিত হন। জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল এবং প্রত্যাশিত ছিল যে আরো চার বছর প্রেসিডেন্ট পদে থেকে তিনি ১৯৭৬-এ বিদায় নেবেন। কিন' একটি মিথ্যা কথা বলার জন্য নিক্সনকে বিদায় নিতে হয় দুই বছর আগেই ১৯৭৪-এ।
নিক্সন কি মিথ্যা বলেছিলেন?
নিক্সনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছিল যে বিরোধী রাজনৈতিক দল ডেমক্রেট পার্টির নেতাদের এবং অন্যান্য বিরোধী মতাবলম্বীদের ঘায়েল করার জন্য তার প্রশাসন অবৈধ পন্থা অবলম্বন করেছে। বলা হয়েছিল প্রতিপক্ষদের হয়রানি করার জন্য নিক্সন তার গোয়েন্দা বাহিনী এফবিআই, সিআইএ এবং ট্যাক্স আদায় বিভাগ (ইনটারনাল রেভিনিউ সার্ভিস)-কে কাজে লাগিয়েছিলেন। নিক্সন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেন, এই ধরনের তৎপরতা বিষয়ে কিছুই জানেন না। তখন তাকে বলা হয়, একটি টেপে প্রমাণ পাওয়া গেছে, নিক্সন এসব জানতেন এবং তিনিই এসব হয়রানির আদেশ দিয়েছিলেন। এই পর্যায়ে নিক্সন বলেন, ওই টেপে তার ওই ধরনের কোনো বক্তব্য নেই। আদালত তখন তাকে আদেশ দেয় ওই টেপ আদালতে জমা দিতে। নিক্সন বাধ্য হন ২০ জুন ১৯৭২-এ টেপ জমা দিতে। তখন দেখা যায় ওই টেপের সাড়ে আঠারো মিনিট মুছে ফেলা হয়েছে। ধারনা করা হয় সেখানেই নিক্সনের হয়রানিমূলক আদেশটি ছিল। প্রেসিডেন্টের পার্সনাল সেক্রেটারি মিজ রোজ মেরি উডস প্রেসিডেন্টকে বাচানোর জন্য বলেন, তিনিই (রোজ মেরি উডস) ভুলক্রমে ওই অংশটি মুছে ফেলেছেন। যদিও নিক্সন নিজেই টেপের এই অংশটি মুছে ফেলেছেন সেটা প্রমাণিত হয়নি এবং যদিও ওই অংশে তিনি কি বলেছিলেন সেটা জানা যায়নি- তবুও আদালত, আমেরিকান সিনেট ও কংগ্রেসের অধিকাংশ সদস্য এব্রং আমেরিকান মিডিয়া ও জনগন এই সিদ্ধান্তে আসে যে প্রেসিডেন্ট নিক্সন জানতেন তার প্রতিপক্ষকে হয়রানি করা হচ্ছে। অর্থাৎ, দেশবাসীকে মিথ্যা বলেছিলেন প্রেসিডেন্ট।
এর ফলে তাকে ইমপিচ করার সম্ভাবনা দেখা দেয় এবং তার ফলে ৯ আগস্ট ১৯৭৪-এ প্রেসিডেন্ট নিক্সন পদত্যাগ করেন। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ক্ষমতার পদে থেকেও সরকার প্রধানকে যে মিথ্যা কথার জন্য পদত্যাগ করতে হয়, ওয়াটারগেইট কেলেংকারি রূপে কুখ্যাত এই ঘটনাটি তার দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।
মাত্র একটি মিথ্যা কথনের জন্য, তাও নিজের টেপ মাত্র সাড়ে আঠারো মিনিট মুছে ফেলার বিষয়ে মিথ্যা কথনের জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নিক্সনকে পদত্যাগ করতে হয়েছিল।
এই ঘটনার বিপরীতে বিবেচনা করুন গত প্রায় সাড়ে চার বছরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কতো প্রসঙ্গে কতো বার মিথ্যা বলেছেন।
পিলখানা থেকে রানা প্লাজা
সামরিক ও বেসামরিক জীবন বিপন্ন
সর্ব প্রথমে বিবেচনা করুন তার ক্ষমতাসীন হবার ৪১ দিন পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৯-এ ঢাকায় পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা অফিসারসহ ৭৩ জন নিহতের ঘটনাটি। ওই ঘটনায় নিহত বিডিআর চিফ জেনারেল শাকিলের ছেলে রাকিন আহমেদ লন্ডন থেকে দাবি করেন, ঘটনার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী আগেই জানতেন এবং সে জন্যে তিনি ওই দিনে পূর্ব নির্ধারিত অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পিলখানায় যান নি। রাকিন আহমেদের এই দাবির আগেই এমন অভিযোগ চলমান ছিল। রাকিন এই অভিযোগে আরো বিশ্বাসযোগ্যতা দেন এবং প্রধানমন্ত্রী যে সত্য গোপন করেছেন সেই ধারনা জনমনে বদ্ধমূল হয়।
আর সবশেষে বিবেচনা করুন ২৪ এপৃল ২০১৩-তে সাভারে ভবন ধসে বহু শত মানুষের হতাহত-নিখোজ হওয়া এবং তার সঙ্গে ভবন মালিক যুব লীগ নেতা সোহেল রানার সংশ্লিষ্টতা। ওই দিন দুর্ঘটনার মাত্র কয়েক ঘণ্টা পরেই সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সোহেল রানা যুব লীগের কেউ নন। এই প্রসঙ্গে ২ মে ২০১৩-তে সিএনএন থেকে প্রচারিত একটি ইন্টারভিউতে প্রখ্যাত সংবাদিক মিজ কৃশ্চিয়ান আমানপোরের প্রশ্নের উত্তরে (অতি দুর্বল গোপালিশ ভাষায়, লিসেন! লিসেন!) শেখ হাসিনা এই মিথ্যাচার আবারো করেন। পরপর তিনবার শেখ হাসিনা বলেন, সোহেল রানা যুব লীগের সদস্য নন। এই ইন্টারভিউতে তিনি আরো কিছু অসত্য এবং অর্ধসত্য বলেন।
এই দুটি ঘটনার মধ্যে বিবেচনা করুন গত প্রায় সাড়ে চার বছরে শেখ হাসিনা আরো যেসব মিথ্যা বলেছেন। যেমন, দশ টাকা কেজিতে চাল খাওয়ানো, বিনামূল্যে সার দেওয়া এবং ঘরে ঘরে চাকরি সৃষ্টি করা, প্রভৃতি নির্বাচনীয় প্রতিশ্রুতি প্রসঙ্গে।
রিচার্ড নিক্সনের তুলনায় শেখ হাসিনার মিথ্যাচারের কুফল ও পাপ অনেক বেশি। রিচার্ড নিক্সনের পাপে তার দেশে রাজনৈতিক পরিবেশ হয়েছিল বিপজ্জনক। আর শেখ হাসিনার পাপে বাংলাদেশকে বেসামরিক ও সামরিক উভয় ধরনের জীবনই হয়েছে বিপন্ন।
গুডবাই গার্মেন্টস মার্কেট
শুধু তাই নয়। শেখ হাসিনার বিভিন্ন কর্মকাণ্ড ও বিবৃতির ফলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক জীবন হয়েছে বিপদগ্রস্ত। সিএনএনে কৃশ্চিয়ান আমানপোরের ইন্টারভিউয়ের ফলে গার্মেন্টসের আন্তর্জাতিক বাজার হারাতে বসেছে বাংলাদেশ। এই ইন্টারভিউতেই আমানপোর জানিয়েছেন বিশ্বে সবচেয়ে বড় গার্মেন্টস ক্রেতা আমেরিকান কম্পানি ডিসনি বলেছে, বাংলাদেশ থেকে তারা আর গার্মেন্টস কিনবে না। বাংলাদেশের ২৩% গার্মেন্টস কেনে আমেরিকা। কানাডা যারা বাংলাদেশের ৫% গার্মেন্টস কেনে, তারাও চিন্তা করছে যেসব সুযোগ সুবিধা তারা বাংলাদেশকে দিতো সেসব প্রত্যাহার করে নেওয়া। আর ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন যারা বাংলাদেশের ৬০% গার্মেন্টস কেনে তারা জরিমানা আরোপের বিষয় চিন্তা করছে।
রিচার্ড নিক্সনকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল। শেখ হাসিনাকেও ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে হবে।
প্রয়োজন ছিল বিদেশি পরামর্শক
রানা প্লাজা ধসে পড়ার পরে শুধু মিথ্যাচারই নয়- আওয়ামী সরকার বহু দুরাচারও করেছে এবং সে জন্য প্রধানত দায়ী প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মখা আলমগীর, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপুমনি, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়ুয়া ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
এদের সম্মিলিত প্রথম দুরাচার হলো এরা উদ্ধার কাজে বৈদেশিক সাহায্য চান নি। বরং বিদেশিরা সেই সাহায্য অফার করলে বাংলাদেশের মর্যাদা হানি হবে এই যুক্তিতে তারা সেসব অফার নাকচ করে দিয়েছিলেন। এখন জানা যাচ্ছে, দুর্ঘটনার পরপরই জাতিসংঘ, আমেরিকা ও বৃটেন টেকনিকাল পরামর্শক পাঠাতে চেয়েছিল। কিন' বাংলাদেশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেটা রিফিউস করে দেয়।
বিদেশে ভবন নির্মাণ বিষয়ে যেমন ইঞ্জিনিয়ারিং কনসালটিং ফার্ম আছে ঠিক তেমনি প্রয়োজনে কোনো ভবন অপসারনের জন্য ডিমলিশিং (Demolishing) এক্সপার্টস ফার্ম আছে। এই ডিমলিশিং বিশেষজ্ঞরা জানেন, কিভাবে ভবন ভাংতে হয় এবং কিভাবে ভাঙ্গা ভবনে উদ্ধার কাজ করতে হয়। বিভিন্ন ধরনের সেন্সর (ঝবহংড়ৎ) ইন্সট্রুমেন্টস এবং অক্সিজেন সাপ্লাই, নিউম্যাটিক ডৃলিং মেশিন, কাটিং, লাইটস, সরঞ্জাম তাদের থাকে। তারা জানে কোনখান থেকে কাজ শুরু করতে হয়। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পরপরই আমেরিকান ও ইওরোপিয়ান সাহায্যে ডিমলিশিং ও রেসকিউ এক্সপার্টদের বাংলাদেশে নিয়ে এলে এতোদিনে সব নিখোজ ব্যক্তিদের জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা যেত। এতোদিনে আটকে পড়া ব্যক্তিরা গলে পচে ধংসস'পে মিশে গিয়েছেন।
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি খনি দুর্ঘটনা হয় চায়নাতে। তারা জানে মাটির নিচ থেকে কিভাবে মানুষ উদ্ধার করতে হয়। পশ্চিমের সাহায্যের পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের উচিত ছিল চায়নারও সাহায্য চাওয়া।
উচিত ছিল বিদেশি মিডিয়াকে আসতে দেয়া
আওয়ামী সরকারের দ্বিতীয় দুরাচারটি হচ্ছে তারা বিশ্ব মিডিয়ার কাছে সাভার দুর্ঘটনার ভয়াবহতা গোপন করে যেতে চেয়েছে। এজন্য তারা সিএনএনসহ আরো কিছু বিশ্ব টিভি ও নিউজ পেপারকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়নি। সিএনএন উপস্থাপিকা আমানপোর যখন বিষয়টির প্রতি শেষ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তখন তিনি প্রথমে এই অভিযোগ অস্বীকার করেন।
নিচে এই ইন্টারভিউয়ের একটি অংশ পড়ুন :
আমানপোর : প্রধানমন্ত্রী, স্বচ্ছতার ব্যাপক অভাব দেখা যাচ্ছে। আমি এটা বলছি, কারণ সিএনএনকে এ নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করতে বাংলাদেশে আসার সুযোগ দেয়া হয়নি। স্পষ্টভাবেই বলছি, আপনি যেসব কথা বলছেন, সেগুলো ভালো হতো, যদি আমাদের তা দেখার সুযোগ দেয়া হতো। অন্য আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাগুলোকেও দেয়া হয়নি। আপনার সরকার...
শেখ হাসিনা : আমি দুঃখিত। সিএনএনকে বাংলাদেশে আসার অনুমতি দেয়া হয়নি?
আমানপোর : না। না আসতে দেয়া হয়নি। আমি এখন আপনাকে বলছি, (আপনাদের) এই সিদ্ধান্ত বদলাতে।
শেখ হাসিনা : আপনি কি নিয়ে বলছেন?
আমানপোর : আমি তা বলেছি। সিএনএনকে এই বিষয় নিয়ে লেখার সুযোগ দেয়া হয়নি।...
শেখ হাসিনা : (এটা ঠিক) না। আমি দুঃখিত।
আমানপোর : না, ম্যাম...
শেখ হাসিনা : আপনি কি বললেন?
আমানপোর : আমি বলেছি, এই রিপোর্ট লিখতে সিএনএন ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস'াকে সাংবাদিক হিসেবে আসার অনুমতি দেয়া হয়নি। তাদের ওপর খুব কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা : না। এটা সত্য নয়।
আমানপোর : এটা সত্য।
শেখ হাসিনা : না, না, না।
আমানপোর : হ্যা, হ্যা, এটা সত্য।
শেখ হাসিনা : না, না। বাংলাদেশ মুক্ত দেশ।
আমানপোর : আহ! আমাদের সেসব আগে শোনানো হয়েছে।
শেখ হাসিনা : না, শুনুন, আমাদের দেশে, আমাদের প্রাইভেট টেলিভিশন আছে। না, আমাকে একটা কথা বলুন। যদি বাধা দেয়া হয়েই থাকে তবে কেন আমি এখন আপনার সঙ্গে কথা বলছি?
আমানপোর : কারণ আমি সেখানে (ঢাকায়) নেই।
শেখ হসিনা : আমরা যদি সিএনএনকে বাধা দিয়ে থাকি, তবে আমি কেন কথা বলছি? আপনাকে থামানো হতো। আপনি এটা প্রকাশ করতে পারতেন না। আপনি যদি বুঝে থাকেন, আমরা সিএনএনকে বাংলাদেশে আসতে বাধা দিয়েছি, তাহলে আমার এই ইন্টারভিউ প্রকাশ করা আপনার উচিত হবে না।
আমানপোর : তাহলে ঠিক আছে। আমাদের সিএনএন কর্তৃপক্ষ এবং আমাদের সাংবাদিকদের কি বলা হয়েছিল, তা বলছি। তাদের বলা হয়েছিল, এমন একটি কাগজে তাদের সই করতে বলা হয়েছিল যার ফলে সরকার চাইলে রিপোর্ট বদলাতে হতো। আমি পড়ছি, তাদের কি বলা হয়েছিল। এসব কর্মকর্তা বলছিলেন তাদের রিপোর্ট পর্যালোচনা, বাজেয়াফত করার অধিকার থাকবে...।
শেখ হাসিনা : শুনুন... আমি বিষয়টি জানি না। তবে হ্যা, কিছু বিধিবিধান রয়েছে। সব দেশেই এ ধরনের বিধিবিধান রয়েছে। প্রত্যেককেই তা পালন করতে হয়।
ইয়াহিয়া সরকার ও হাসিনা সরকার
সিএনএনসহ ওয়ার্ল্ড মিডিয়া যদি বাংলাদেশে ইমিডিয়েটলি এসে পৌছাতো তাহলে তাদের প্রচারের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন সংস্থা বাংলাদেশে ত্রাণকর্মী পাঠাতে পারতো। তারা আধুনিকতম পদ্ধতিতে সাভার রেসকিউ অপারেশন করতে পারতো।
এমনটা ঘটেছিল ১২ নভেম্বর ১৯৭০-এ, বাংলাদেশের দক্ষিণে মনপুরায় জলোচ্ছ্বাসের পরে। তখন ঢাকায় একটি মাত্র ফাইভ স্টার হোটেল (ইন্টারকন্টিনেন্টাল, যেটি এখন রূপসী বাংলা) ছিল। এই হোটেলের তিনশ রুম ভর্তি হয়ে যাবার পর লবি, লাউঞ্জ ও বলরুমে ক্যাম্প বেড ও মেঝেতে বিদেশ থেকে আসা ত্রাণকর্মীরা ছিলেন। সেই সময়ে পাকিস্তানের ইয়াহিয়া সরকার তাদের আসতে দিয়েছিল।
এবার ২০১৩-তে সাভারে বিশ্ব গার্মেন্টস ইনডাস্টৃর বৃহত্তম দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও একজনও বিদেশী ত্রাণকর্মী আসেন নি। খুব কমই বিদেশী মিডিয়া পার্সনালিটি বাংলাদেশে আসতে পেরেছেন। এজন্য নিশ্চয়ই কৃতিত্ব দাবি করতে পারে প্রথম মুক্তিযুদ্ধে অনুপসি'ত কিন' তথাকথিত দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধেâ€র উদগাতা স্বাধীন বাংলাদেশের হাসিনা সরকার।
ঢাকার ডিপ্লম্যাটিক সার্কল হতভম্ব হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের অহমিকা এবং অবিমৃষ্যকারিতা দেখে।
রিয়ালি সিরিয়াস নয়
সিএনএনে আমানপোর-হাসিনা ইন্টারভিউয়ের পরপরই ৩মে ২০১৩-তে দিল্লিতে অর্থমন্ত্রী মুহিত একটি প্রেস কনফারেন্সে বলেন, বর্তমানে যে সমস্যা হয়েছে, সেটা রিয়ালি সিরিয়াস বলে আমি মনে করি না। এটা একটা অ্যাকসিডেন্ট। এমন ঘটনা যেন আর না ঘটে সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা ব্যবস্থা নিয়েছি। সেসব ব্যবস্থা বেশ ব্যাপক। আমি মনে করি তাতে সবাই আশ্বস্ত হবেন।
বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ক্রেতারা চলে যাবে এমন সম্ভাবনা নাকচ করে মুহিত বলেন, এ ধরনের দুর্ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা...অ্যাকসিডেন্ট। সেটা সবখানেই ঘটে।
(The present difficulties...well, I don't think it is really serious - it's an accident. And the steps we have taken in order to make sure that is doesn't happen, they are quite elaborate and I believe will be appreciated by all...these are individual cases of ...accidents. It happens everywhere) ( দি গার্ডিয়ান, লন্ডন ৩.৫.২০১৩)
রিয়ালি?
অ্যাকসিডেন্ট কি সবখানেই ঘটে?
অর্থমন্ত্রী সচিবালয়ের যে ভবনটির চতুর্থ তলায় বসেন কাকতালীয়ভাবে সেটি রানা প্লাজার মতো নয় তলা ভবন। সেখানে কি রানা প্লাজার মতো অ্যাকসিডেন্ট কখনো হবে? প্লিজ, চেক ইট, মিস্টার ফাইনান্স মিনিষ্টার।
বাংলাদেশ অ্যাকসিডেন্ট হয় গরিব মানুষের বস্তিতে, গরিব মানুষের যানবাহনে এবং গরিব মানুষের ফ্যাক্টরিতে।
অর্থমন্ত্রীর প্রিয় তিনটি শব্দ হচ্ছে ননসেন্স, স্টুপিড ও রাবিশ।
দিল্লিতে তার মন্তব্যকে সবাই বলছেন, ননসেন্স।
সাভারে নয় তলা রানা প্লাজা হয়েছে জীবন্ত মানুষের কবর সংবলিত স'পীকৃত রাবিশ।
আর এ সবই প্রমাণ করেছে আসলে কে স্টুপিড।
অ্যাকসিডেন্ট
অর্থমন্ত্রী মুহিত প্রতিধ্বনি করেছেন তার বসের। মুহিতের মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা আগে একই কথা বস শেখ হাসিনা বলেছিলেন আমানপোরকে।
ওই ইন্টারভিউতে হাসিনা বলেন, বিশ্বের যে কোনো স্থানে যে কোনো অ্যাকসিডেন্ট ঘটতে পারে। আপনি কোনো কিছুর ভবিষ্যদ্বানী করতে পারেন না। এমনকি আমরা দেখছি, উন্নত দেশগুলোও পারে না। আপনি জানেন, সম্প্রতি টেক্সাসে একটি সার কারখানায় অ্যাকসিডেন্ট ঘটেছে। তার মানে, অ্যাকসিডেন্ট ঘটতেই পারে। (But you know, in anywhere in the world, any accident can take place. You cannot, you know, predict anything, even in many developed country, we can see. Recently there was, you know, an accident in a fertilizer industry in Texas. So accidents may take place.") (সিএনএন ২.৫.২০১৩)
প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর যুক্তি (অ্যাকসিডেন্ট হতেই পারে) কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ধরুন, আপনি যদি আপনার পরিবারকে নিয়ে একটি মোটরকারে ড্রাইভে যান তাহলে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সেটাকে বলতে পারেন, অ্যাকসিডেন্ট। কিন্তু মোটরকারের বিভিন্ন পাটর্স যদি আগেই ত্রুটিপূর্ণ থাকে এবং তার ফলে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে সেটাকে অ্যাকসিডেন্ট বলা যাবে না। এই ধরনের পরিহারসাধ্য দুর্ঘটনাকে বলা যেতে পারে অ্যাভয়ডেবল অ্যাকসিডেন্ট।
রানা প্লাজার অ্যাকসিডেন্টটি সেই রকমই ছিল।
ভবনটিতে আগে থেকেই ফাটল দেখা গিয়েছিল।
রানা প্লাজা ধ্বংস হওয়া এড়ানো যেত না - কিন' মানুষ হতাহত হওয়াটা এড়ানো যেত।
আমি ২৪ এপৃল ২০১৩-র রাতে সাভারে যেতে চেয়েছিলাম। কিন' মিরপুর ছাড়িয়ে যাবার কিছু পরে পুলিশ আমার গাড়িকে ফিরিয়ে দেয়। এরপর ৪ মে ২০১৩-র সকালে আমি সাভারে গিয়ে স্থানীয় মানুষদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি রানা প্লাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ অনিয়মিত ছিল। তাই গার্মেন্টস ফ্যাক্টরির কয়েকটি ফ্লোরে (তিন, চার, পাচ, ছয় ও সাত) জেনারেটর ছিল। এর মধ্যে ফোর্থ ফ্লোরের জেনারেটর ছিল সবচেয়ে ভারি। এসব জেনারেটর যখন চলতো তখন ভবনটি কাপতো। ঘটনার দিন সকাল নয়টার দিকে জেনারেটর চালু করার সঙ্গে সঙ্গে দেড় মিনিটের মধ্যে নয় তলা ভবনটি ধসে পড়ে।
রানা প্লাজায় একাধিক জেনারেটর ও ভবনের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখার পরে শ্রমিকদের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও স'ানীয় পুলিশ কর্তৃপক্ষ ঘটনার দিন কেন শ্রমিকদের ভেতরে ঢুকতে দিল সেই প্রশ্ন স্থানীয় মানুষরা করছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দল দমনে গোপালীদের যে তৎপরতা দেখা যায় রানা প্লাজায় দুর্ঘটনা এড়াতে সেই তৎপরতার দেখা গেল না কেন?
আওয়ামী সরকার কেন ভীত?
একটা প্রশ্ন এখন অনেকেই করছেন।
কেন আওয়ামী সরকার বিদেশি উদ্ধার সাহায্য এবং বিদেশি মিডিয়া বিষয়ে এত ভীত?
এর উত্তর হচ্ছে, বাংলাদেশে ক্ষমতায় চিরস্থায়ীভাবে থাকার লক্ষ্যে তারা বিদেশে প্রচার করে চলেছে।
এক. ইসলামি জাগরণ ও ইসলামি সন্ত্রাস ঠেকাতে একমাত্র তারাই সক্ষম।
দুই. গণতান্ত্রিক রীতিনীতি প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখতে একমাত্র তারাই সক্ষম।
তিন. দেশে শান্তি বজায় রাখতে একমাত্র তারাই সক্ষম।
চার. শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে একমাত্র তারাই সক্ষম।
আওয়ামী সরকার জানে, বিদেশি মিডিয়া এখানে এলে তাদের এসব মিথ্যা প্রচার ধরে ফেলবে। বিদেশি মিডিয়া জানবে, এক. হেফাজতে ইসলামি তথা ইসলামি জাগরণের জন্য দায়ী আওয়ামী সরকার পৃষ্ঠপোষিত শাহবাগী জাগরণ। দুই. বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এখন বাংলাদেশে চলছে হাসিনা সংবিধান যা সুপারভাইজ করছে আওয়ামী দলীয় বিচারবিভাগ। তিন. বাংলাদেশে শান্তি নেই। সুখ সুদূরপরাহত। বাংলাদেশে আছে, সেনা হত্যা, বিডিআর নির্যাতন, শেয়ারবাজার লুট, ডেসটিনি প্রতারণা, হলমার্ক ব্যাংক লুট, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, রিমান্ডে টর্চার, আজ্ঞাবহ বিচার বিভাগ, ইনডিয়াকে অবাধে ট্রানজিট দান, পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি এবং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে আগুন ও ধস। চার. বাংলাদেশে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় উৎসাহী শুধু কয়েকজন তরুণ-তরুণী যাদের কাজ করে খেতে হয় না।
অমানুষ মানুষের জন্য
আওয়ামী সরকারের প্রায় সাড়ে চার বছর ব্যাপী এসব কুকান্ডের জন্য দায়ী প্রধানমন্ত্রী, বিশেষ কয়েকজন মন্ত্রী উপদেষ্টা এবং কিছু নেতা। এরা কখনো টাইটেল পেয়েছেন হাই কোর্ট থেকে রং হেডেড। কখনো টাইটেল পেয়েছেন উম্মাদ (স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এই টাইটেল দিয়েছেন এরশাদ।) কখনো নিজেরাই নিজেকে টাইটেল দিয়েছেন ঘৃনিত।
কিন্তু একটা সমাজে যে কোনো সময়ে কিছু রং হেডেড, কিছু উম্মাদ, কিছু ঘৃণিত ব্যক্তি থাকতেই পারে। তাদের নিয়েই সমাজকে চলতে হয় - কিছু অসুবিধা সত্ত্বেও।
কিন' মানুষ যখন দানব হয়ে যায় তখন কোনো দেশ ও সমাজ চলতে পারে না। নিজের প্রাণ বাচানোর জন্য সাধারণ মানুষ ব্যাকুল হয়ে চায় গণহত্যাকারী অমানুষরা যেন বিদায় নেয়।
প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ স্লোগান দিয়েছিলেন তুই রাজাকার।†সাংবাদিক ও টকশো কথাকার এবিএম মুসা স্লোগান দিয়েছিলেন তুই চোর।
বাংলাদেশে এই মুহূর্তের স্লোগান হওয়া উচিত, তুই দানব, তুই যা।
(চলবে)
৪ মে ২০১৩
facebook.com/shafikrehmanpresents
©somewhere in net ltd.
১|
১৩ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯
সাধারণ মুসলমান বলেছেন: Waiting.............