নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামের পবিত্রতা সংরক্ষনে নবী পরিবারের (আঃ) ভুমিকা

২৯ শে আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৪:২৮



অধ্যায় ১

আল্লাহর “প্রতিমূর্তি”



(ক) খলিফাদের (১ম ৩ খলিফা)মতাবলম্বীদের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রথমেই আমরা খলিফাদের মতাবলম্বীদের দুইটি হাদীস নিয়ে পর্যালোচনা করবো।



১. ইবনে খুজাইমাহ-এর তাওহিদ, এবং সহী বুখারী ও সহী মুসলিম-এ আবু হুরায়রার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে যে নবীজী (সঃ) বলেছেন:



“আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন, ষাট ফুট লম্বা করে। তারপর তিনি আদমকে নির্দেশ দিলেন ফেরেশতাগণের সামনে গিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে। ‘যখন তারা তোমার সম্ভাষণের উত্তর দেবে, সেটা ভালোভাবে শুনবে। কারন তুমি এবং তোমার বংশধরেরা পরবর্তীতে এভাবেই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করবে।’



আদম আল্লাহর নির্দেশ মেনে তাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করলেন: ‘আসসালামু আলাইকুম’ (আপনাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক)। ফেরেশতাগণ উত্তর দিলেন: ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ (আপনার উপর শান্তি ও আল্লাহর দয়া বর্ষিত হোক)। উত্তরে তাঁরা ‘ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ যোগ করলেন।



সুতরাং যারা বেহেশতে প্রবেশ করবে, তারা আদমের আকৃতি নিয়ে প্রবেশ করবে। সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে মানুষের আকার ছোট হতে হতে বর্তমানের আকৃতিতে এসেছে।”





২. আবু হুরায়রা বর্ণনা দিয়েছেন যে নবীজী (সঃ) বলেছেন:



“যখন কেউ অন্য আরেকজনের সাথে ঝগড়া বা মারামারি করে, তখন তাদের কারো মুখে আঘাত করা থেকে বিরত থাকা উচিত। এর কারন আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে বানিয়েছেন।”১৫



উপরের এই দুইটি হাদীসের বর্ণনা দিয়েছেন আবু হুরায়রা। এবারে আমরা আহলে বায়াত (আঃ)-এর মতাবলম্বীদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বর্ণিত হাদীসের সাথে এই দুইটিকে তুলনা করবো, যাতে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে পারি।





(খ) আহলে বায়াত (আঃ)-এ প্রকৃত সত্যের ব্যাখ্যা

১. হুসাইন বিন খালিদ বলেছেন:

“আল্লাহ যে আদমকে তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন, নবীজী (সঃ)-এর এই হাদীসটি সম্পর্কে আমি ইমাম রিজা (আঃ)-এর কাছে জানতে চেয়েছিলাম।



তিনি বললেন: ‘সেসব মিথ্যাবাদী বর্ণনাকারীদের উপর অভিশাপ বর্ষিত হোক, যারা এই হাদীসের প্রথম অংশটুকু বাদ দিয়েছে।’



তারপর তিনি ব্যাখ্যা করলেন: ‘একদিন নবীজী (সঃ) রাস্তায় চলার পথে শুনলেন যে দুইজন লোক এক অপরকে গালমন্দ করছে।’ তিনি শুনলেন যে একজন আরেকজনকে বলছে: ‘আল্লাহ তোমার মুখকে আর যারা তোমার মতো দেখতে, তাদের মুখকেও কুশ্রী আর অপমানিত করুন।’



তখন নবীজী (সঃ) সেই লোককে মৃদু তিরষ্কার করে বললেন: 'তোমার ভাইয়ের উদ্দেশ্যে এমন কথা বোলোনা। আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজের নিজের মতো করে বানিয়েছেন (অর্থাৎ আদমকে আল্লাহর সাথে তুলনা করেছেন)।’ ”১৬



২. আমিরুল মুমিনিন আলী বিন আবি তালিব (আঃ)-এর উদ্ধৃতি দিয়ে আবুল ওয়ারদ বিন সামামাহ বলেছেন:



“নবীজী (সঃ) শুনলেন যে একজন আরেকজনকে গালমন্দ করছে: ‘আল্লাহ তোমার মুখকে আর তোমার মতো দেখতে সবার মুখকে কুশ্রী ও অপমানিত করুন।’১৭



তখন নবীজী (সঃ) বললেন: ‘চুপ করো! এমন কথা বোলোনা! কারন আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজের মতো করে বানিয়েছেন।’ ”





৩. এই দুইটি হাদীসের পাশাপাশি আমরা আহলে বায়াত (আঃ)-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে আরেকটি হাদীসের বর্ণনা দিচ্ছি এটা বোঝানোর জন্য যে ‘আল্লাহর মানুষের মতো শরীর আছে’- এই ধারণাটিকে আহলে বায়াত (আঃ)-এর ইমামগণ কিভাবে দেখেন।



শেখ সাদুক তাঁর ‘তাওহিদ’-এ উল্লেখ করেছেন:

“একবার এক লোক ‘আল্লাহর শরীর ও আকৃতি আছে’, এই ধারণাটার উপর আলোকপাত করার জন্য ইমাম মুসা বিন জা’ফর (আঃ)-এর কাছে চিঠি লিখলো।



ইমাম উত্তর দিলেন: ‘সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর! কোথাও তাঁর সমতুল্য কোনোকিছুই নেই। তাঁর কোনো শরীর বা আকৃতি নেই।’”





(গ) পর্যালোচনা এবং তুলনা

উপরের হাদীস দুইটি পর্যালোচনা আর তুলনা করে আমরা দেখতে পাই যে আবু হুরায়রা এই দুইটি হাদীসের বর্ণনায় দুইটি বিষয় যোগ করেছেন এবং একটি বিষয় বাদ দিয়েছেন।



১. বাদ দেয়া অংশ

নবীজী (সঃ)-এর কথার উদ্ধৃতি দিতে গিয়ে আবু হুরায়রা সেই ঘটনাটির কথা বাদ দিয়েছেন, যেখানে দুইজন লোক একে অপরকে গালমন্দ করছে, তারপর নবীজী একজনকে তিরষ্কার করে বললেন যে আদমের সাথে তার মুখমন্ডলের সাদৃশ্য আছে। এখানে আবু হুরায়রা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বাদ দিয়েছেন। আর তিনি যেভাবে বর্ণনা দিয়েছেন, তাতে মনে হতে পারে যে এখানে ‘তাঁর’ সর্বনামটি দিয়ে আল্লাহকে বোঝানো হয়েছে। আসলে সেখানে বোঝানো হয়েছে মানুষকে।



এভাবে বর্ণনা দিলে তাওরাতের গল্পের সাথে এটা মিলে যায়।



আবু হুরায়রা যে এই অংশটি বাদ দিয়েছেন, এর তিনটি কারন থাকতে পারে।

ক) তিনি লিখতে বা পড়তে পারতেননা বলে হাদীসগুলি মুখস্ত করে রাখতেন। অবশ্য তিনি লেখাপড়া জানলেও খলিফারা তাঁকে সেটা করার অনুমতি দিতেননা। হিজরী প্রথম শতাব্দীর শেষ ভাগ পর্যন্ত নবীজী (সঃ)-এর হাদীসগুলি লিপিবদ্ধ করা নিষিদ্ধ ছিলো।



খ) আবু হুরায়রা কা’ব আল আহবার দ্বারা প্রচন্ডভাবে প্রভাবিত ছিলেন, যিনি তাওরাতের বিকৃত অনুচ্ছেদগুলি মুসলিম বিশ্বাসের ভেতরে ছড়িয়ে দিয়েছেন।



কা’ব-এর কথাগুলো তাঁর পক্ষে মনে রাখা সহজ ছিলো। কারন সেগুলো ছিলো সা¤প্রতিক, নবীজী (সঃ)-এর ইন্তেকালের প্রায় ২০ বছর পরে।

গ) হতে পারে এই ভুলটা করেছেন পরবর্তীকালের হাদীস বর্ণনাকারীরা। হয়তো তাঁরা ভুল করে কা’ব-এর বর্ণনা করা হাদীসগুলি আবু হুরায়রার নামে চালিয়ে দিয়েছেন।



কারনটা যাই হোক না কেনো, ফলাফলটা এখানে একই রকম।





২. দুইটি সংযোজন

ক) একটি হাদীসের বর্ণনায় আবু হুরায়রা আদমের উচ্চতার কথা বলেছেন:

“আল্লাহ আদমকে তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন, ষাট ফুট লম্বা করে .......”



এটা একেবারেই পরিষ্কার যে এ ধরনের বিবৃতি বাস্তব তথ্যমূলক নয়। বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাথে এই বর্ণনার কোনো সামঞ্জস্য নেই।



খ) অন্য হাদীসটিতে আবু হুরায়রা বর্ণনা দিয়েছেন যে নবীজী (সঃ) বলেছেন:

“যখন কেউ অন্য আরেকজনের সাথে ঝগড়া বা মারামারি করে, তখন তাদের কারো মুখে আঘাত করা থেকে বিরত থাকা উচিত .....”



সম্ভবত এই অংশটুকু আবু হুরায়রার নিজের বানানো। তিনি যে অংশটুকু বাদ দিয়েছেন, সেটার বদলে তাঁর বানানো এই অংশটুকু সংযোজন করেছেন।



এটা আমরা স্পষ্টভাবেই দেখতে পাই যে, আবু হুরায়রার বর্ণনার সাথে ওল্ড টেস্টামেন্টের জেনেসিস-এর গল্পগুলির অদ্ভুত সাদৃশ্য আছে। এভাবে নবীজী (সঃ)-এর সহী হাদীসগুলিতে বিভিন্ন বিষয় সংযোজন করে আর বাদ দিয়ে আবু হুরায়রা এবং তাঁর মতো আরো অনেকে তাওরাতের বিকৃত গল্পগুলোকে মুসলিমদের ধর্মবিশ্বাসে প্রবেশ করিয়েছেন। এসব ধারণাগুলিকেই বলা হয় ‘ইসরাইলিয়াত’, যেগুলো দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসলামের বিভিন্ন হাদীস আর বিশ্বাসের মধ্যে স্থান করে নিয়েছে।



খলিফাদের মতাবলম্বীরা এই ব্যাখ্যাগুলো মেনে নিয়েছেন কারণ এর সাথে আবু হুরায়রার মতো বিখ্যাত লোকের নাম জড়িত রয়েছে। আর এ কারনে যখন কোরানে আল্লাহর “মুখমন্ডল”-এর কথা উল্লেখ থাকে, তাঁরা তখন সেই শব্দটার আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করেন। তাঁদের মতে মানুষের যাবতীয় বৈশিষ্ট্য, আকৃতি ও প্রকৃতি আল্লাহর উপর আরোপ করা যায়! এই বিষয়টি নিয়ে আমরা পরবর্তী অধ্যায়ে আলোচনা করবো ইনশাল্লাহ।

অধ্যায় ২

আল্লাহর “মুখমন্ডল”



খলিফাদের মতাবলম্বীরা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন

ইবনে খুজাইমাহ তাঁর লেখা “তাওহিদ”-এর ১০ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন:



কোরানে আল্লাহর মুখমন্ডল সম্পর্কে নিশ্চিত করে বলা হয়েছে। সেখানে আল্লাহ নিজেই বলেছেন যে তাঁর মুখমন্ডল মর্যাদা এবং মহিমায় পরিপূর্ণ।



“অবিনশ্বর কেবল তোমার প্রতিপালকের মুখমন্ডল, যিনি মর্যাদা এবং মহিমায় পরিপূর্ণ।”

(সুরা আল রাহমান: আয়াত ২৭)



আল্লাহ আরো বলেছেন যে তাঁর মুখমন্ডল কখনোই ধ্বংস হবেনা।



“আল্লাহর মুখমন্ডল ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল”

(সুরা আল কাসাস: আয়াত ৮৮)



এভাবে ইবনে খুজাইমাহ কোরানের আরো কিছু আয়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে দাবী করেছেন যে: “সুতরাং আল্লাহ দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে তাঁর মুখমন্ডল আছে। তিনি বলেছেন যে তাঁর মুখমন্ডল মর্যাদাপূর্ণ ও মহিমাময়। তিনি আরো বলেছেন যে সেই মুখমন্ডল চিরস্থায়ী হবে, কখনো ধ্বংস হয়ে যাবেনা ....”



উপসংহারে ইবনে খুজাইমাহ বলেছেন: “আল্লাহ যেটা নিশ্চিত করে বলেছেন, আমরাও সেটা নিশ্চিত বলে ধরে নিতে পারি। তবে তাঁর (আল্লাহর) মুখমন্ডল তাঁর সৃষ্ট কোনো প্রাণীর মতো নয়।”



ঐ একই বইয়ের ১১ নং পৃষ্ঠায় ইবনে খুজাইমাহ নবীজী (সঃ)-এর ১৪টি হাদীসের বর্ণনা দিয়েছেন, যেখানে “মুখমন্ডল”-এর কথা বলা হয়েছে। আর এগুলোর উপর ভিত্তি করেই তিনি এই উপসংহারে এসেছেন।



উদাহরনস্বরূপ, নবীজী (সঃ) আল্লাহর কাছে বিনীতভাবে বলেন: “আমি তোমার করুণাময় মুখমন্ডলের কাছে আশ্রয় প্রার্থণা করছি.....”



ইবনে খুজাইমাহ দাবী করেন যে নবীজী (সঃ) এখানে “মুখমন্ডল” বলতে সত্যিকারের মুখকেই বুঝিয়েছেন। অন্য কথায়, খুজাইমাহ-এর মতে এই “মুখমন্ডল” হলো আল্লাহর শরীরের একটি অংশ।



এবারে আসুন আমরা আহলে বায়াত (আঃ)-এর দৃষ্টিভঙ্গিতে এই হাদীসের ব্যাখ্যাটা পর্যালোচনা করবো।





আহলে বায়াত (আঃ)-এর মতাবলম্বীরা যেভাবে এই “মুখমন্ডল”-এর ব্যাখ্যা দিয়েছেন

এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার আগে আমরা পবিত্র কোরানে আল্লাহর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য নিয়ে যেসব কথা বলা আছে, সেগুলো সম্পর্কে আমিরুল মুমিনিন আলী বিন আবি তালিব (আঃ)-এর ব্যাখ্যা পর্যালোচনা করে দেখবো। একবার এক লোক কোরানের বেশ কিছু আয়াত নিয়ে আলী বিন আবি তালিব (আঃ)-এর কাছে এসে তাঁকে প্রশ্ন করলো। সেই আয়াতগুলির ভেতর থেকে আমরা এখানে দুইটি আয়াত বেছে নিয়েছি।



আয়াত দু’টির শব্দগত অর্থ হলো:

(১) “এবং শেষ বিচারের দিনে তোমার প্রতিপালক উপস্থিত হবেন, এবং সারিবদ্ধভাবে ফেরেশতাগণও ....”

(সুরা আল ফাজর: আয়াত ২২)

(২) “তারা কি শুধু এজন্যই প্রতীক্ষা করে যে, তাদের কাছে ফেরেশতাগণ আসবে, কিংবা তোমার প্রতিপালক আসবে, কিংবা তোমার প্রতিপালকের কোনো নিদর্শন আসবে? ......”

(সুরা আল আনআম: আয়াত ১৫৮)



এখন প্রশ্ন হলো, আল্লাহ শেষ বিচারের দিন উপস্থিত হবেন কিনা, যেকথাটা এই আয়াতগুলিতে বলা হয়েছে। ইমাম আলী (আঃ) ব্যাখ্যা দিলেন:

“আল্লাহ সর্বশক্তিমান। তিনি এই আয়াতগুলিতে যা বলেছেন, সেটা পুরোপুরি সত্য। তবে তাঁর উপস্থিত হওয়াটা তাঁর সৃষ্ট কোনো প্রাণীর মতো হবেনা। আমি আগেও তোমাদের বলেছি যে কোরানের কিছু কিছু শব্দের আক্ষরিক অর্থ ধরা মোটেও ঠিক হবেনা। সেখানে শব্দগুলির রূপক অর্থ ধরতে হবে।



আল্লাহর কথা মানুষের কথার মতো নয়। তাঁর কাজগুলিও মানুষের কাজের মতো নয়।



এই কথাটা আরেকটু পরিষ্কার করার জন্য আমি কোরান থেকে উদ্ধৃতি দেবো। তাতে করে, ইনশাল্লাহ, তোমরা সঠিক ও শুদ্ধভাবে কোরান বুঝতে পারবে। কোরানে আছে যে নবী ইব্রাহীম (আঃ) বলছেন:



”আমি আমার প্রতিপালকের নিকট চললাম, তিনি আমাকে অবশ্যই সৎপথে পরিচালিত করবেন।”

(সুরা সাফফাত: আয়াত ৯৯)



এখানে “প্রতিপালকের নিকট যাওয়া” মানে পায়ে হেঁটে আল্লাহর কাছে পৌঁছানো নয়। এর মানে দৃঢ়ভাবে, সততার সাথে, প্রার্থণার মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য খোঁজা। তোমরা কি এই আয়াতের আক্ষরিক অর্থ আর আসল অর্থের মধ্যে পার্থক্যটা ধরতে পেরেছো?



এছাড়াও পবিত্র কোরানের আরো কিছু আয়াত বলছে:



(ক) “এবং তিনি প্রেরণ করেছেন আট প্রকারের গবাদিপশু”

(সুরা আল যুমার: আয়াত ৬)



(খ) “এবং আমি প্রেরণ করেছি লোহা, যাতে রয়েছে প্রচন্ড শক্তি”

(সুরা আল হাদীদ: আয়াত ২৫)



“এখন তোমরা যদি এই আয়াতগুলোর আক্ষরিক অর্থ ধরো, তাহলে তোমরা বলবে যে এই আট প্রকার গবাদিপশু আর লোহা পাঠানো হয়েছে বেহেশত থেকে। এখানে ‘তিনি প্রেরণ করেছেন’ বলতে বোঝানো হয়েছে ‘তিনি সৃষ্টি করেছেন’ ”(শেখ সাদুক-এর ‘তাওহিদ’, পৃষ্ঠা ২৬৫)।



আল্লাহর বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য আর কাজগুলি বুঝতে পারার জন্য আলী বিন আবি তালিব (আঃ) দুইটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মের কথা বলেছেন।



প্রথমটা হলো, আল্লাহর কাজগুলোকে কখনোই আমাদের অর্থাৎ তাঁর সৃষ্টির কাজের সাথে তুলনা করা যাবেনা। যখন আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলছেন:



“আল্লাহ অবশ্যই শুনেছেন .....”

(সুরা মুজাদালা: আয়াত ১)



আল্লাহর এই ‘শোনা’-কে কোনোভাবেই মানুষ, প্রাণী বা অন্য কোনো সৃষ্টির ‘শোনা’-র সাথে তুলনা করা যাবেনা। আমরা শুনতে পাই আমাদের কান দিয়ে। “আল্লাহ শুনছেন”, এই কথাটা এমন কোনো অর্থ প্রকাশ করেনা।



আল্লাহ কোরানে বলেছেন:



“.... আমি যা নিজ হাতে সৃষ্টি করেছি....”

(সুরা সাদ: আয়াত ৭৫)



মানুষও বলতে পারে যে সে নিজের হাতে কিছু একটা তৈরী করেছে। কিন্তু দুইটি কথার অর্থ আসলে দুই রকম। আল্লাহর কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই। তাঁর কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজনও হয়না।



আল্লাহ তাঁর নবী মুসা (আঃ)-কে বলছেন:



“তোমরা ভয় কোরোনা! আমি তো তোমাদের সঙ্গে আছি। আমি শুনি এবং আমি দেখি”

(সুরা তহা: আয়াত ৪৬)



আমরা যখন কারো সঙ্গে থাকি, তখন সেটা এক ধরনের অর্থ প্রকাশ করে। যখন আল্লাহ কারো “সঙ্গে” থাকেন, সেখানে শারীরিকভাবে কাছাকাছি থাকার কথা বোঝানো হয়না।



দ্বিতীয়টা হলো, আমিরুল মুমিনিন আলী বিন আবি তালিব (আঃ) বলেছেন যে, কোরান সম্পর্কে কেউ যদি মতামত বা ব্যাখ্যা দিতে চায়, তাহলে আগে তাকে কোরানের শব্দগুলোর আক্ষরিক ও রূপক অর্থ বুঝতে হবে। তিনি তাঁর এই বক্তব্যটা ব্যাখ্যা করার জন্য কোরান থেকে দুইটি উদাহরন দেন।



যখন আমরা কোনো ভাষায় উঁচুমানের সাহিত্য পড়ি, তখন সেই ভাষার বাক্যে অলঙ্কার ব্যবহারের রীতি, শব্দের বিভিন্ন ব্যবহার ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে ভালো জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। এই চিরাচরিত রীতির উপর ভিত্তি করে তাহলে দেখা যাক, আহলে বায়াত (আঃ)-এর অনুসারীরা আল্লাহর “মুখমন্ডল”-এর ব্যাখ্যা কিভাবে দিচ্ছেন।



আবু হামজা বলেছেন:



“আমি ইমাম মুহাম্মদ আবু বকর-এর কাছে কোরানের এই আয়াতটার অর্থ জানতে চেয়েছিলাম:



“আল্লাহর মুখমন্ডল ব্যতীত সমস্ত কিছুই ধ্বংসশীল”

(সুরা আল কাসাস: আয়াত ৮৮)



“ইমাম (আঃ) বললেন: ‘তারা কি মনে করে যে আল্লাহর মুখমন্ডল আছে এবং তাঁর মুখমন্ডল ব্যতীত সবকিছু মারা যাবে আর ধ্বংস হয়ে যাবে? আল্লাহ কোনো মুখমন্ডল ধারণ করার অনেক উপরে অবস্থান করেন। এই আয়াতটার অর্থ হলো সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, শুধুমাত্র আল্লাহর ধর্ম ছাড়া, যে পথ ও দিক নির্দেশনায় আমরা আল্লাহর সান্নিধ্য পেতে পারি।’”



ইমাম জা’ফর সাদিক (আঃ)-এর বর্ণনায় এরকম আরেকটি হাদীসে এই আয়াতটার আরেকটা ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে:

“সবকিছুই ধ্বংস হয়ে যাবে, কেবলমাত্র সঠিক দিক নির্দেশনা ছাড়া।”



এই দুইটি ব্যাখ্যাই একটাই অর্থ নির্দেশ করছে, সঠিক পথের নির্দেশনা বা আল্লাহর ধর্ম। আহলে বায়াত (আঃ)-এর মতাবলম্বীরা এভাবেই আল্লাহর “মুখমন্ডল”-এর ব্যাখ্যা দেন।



কোরানে আল্লাহর “মুখমন্ডল” বোঝাতে যে আরবী শব্দটা ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা হলো ‘ওয়াজহা’। আসুন এবারে আমরা দেখি, আরবীতে এই ‘ওয়াজহা” শব্দটির কি কি অর্থ হতে পারে।



১. ‘ওয়াজহা’ অর্থ ‘শুরু’ বা ‘প্রারম্ভিক অংশ’। যেমন, ‘ওয়াজহুন নাহার’-এর অর্থ হলো ‘সকাল’।

২. ‘ওয়াজহা’ অর্থ ‘সত্য’ বা ‘কোনো বিষয়ের সারাংশ’। যেমন, ‘আসাবা ওয়াজহাল মাসা’লাহ’-এর অর্থ হলো ‘তিনি জটিল একটা বিষয়ের মুখোমুখি হলেন।’

৩. ‘ওয়াজহা’ অর্থ ‘দিক নির্দেশনা’ বা ‘লক্ষ্য’। যেমন, ‘ইত্তাজাহাত তিজারাহ’-এর অর্থ হলো ‘তিনি ব্যবসা করার জন্য লক্ষ্যস্থির করলেন।’১৮



এই অর্থগুলো বর্তমান সময়ের বিশেষজ্ঞরাও মেনে নেন। ১৩৯০ হিজরীতে মিশরে প্রকাশিত হওয়া “মু’জামু আলফাজিল কুরআন আল কারিম”-এর লেখকগণও এই অর্থগুলোর সাথে একমত।



‘ওয়াজহা’ শব্দটির এতোগুলি অর্থ থাকার পরও দেখা যায় যে খলিফাদের মতাবলম্বীরা শুধুমাত্র একটা অর্থের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন, যেটা নির্দেশ করে যে আমাদের মানুষদের মতোই আল্লাহর শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আছে। এটা একেবারেই পরিষ্কার যে তাঁরা সহী সিত্তাহ এবং এরকম আরো কিছু বই দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, যেগুলোর সাথে জড়িত রয়েছে আবু হুরায়রা-র মতো সাহাবীদের নাম।



এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় আমরা বুঝতে পারলাম যে, এই দুই মতের অনুসারীরা আল্লাহর সম্পর্কে সম্পূর্ণ বিপরীত ধারণা পোষণ করেন। এক দলের অনুসারীরা বিশ্বাস করেন যে আল্লাহ মানুষের রূপ নিতে পারেন, তিনি দেখতে আমাদের মতো, অথবা অন্য কোনো সৃষ্টির মতো। আর আল্লাহর শরীর ও অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ রয়েছে। আরেক দলের অনুসারীরা মনে করেন যে আল্লাহর অস্তিত্ব অনেক মর্যাদাপূর্ণ। সেটাকে তাঁর কোনো সৃষ্টির অস্তিতের¡ সাথে তুলনাই করা যায়না।



কোরানের এই আয়াতগুলি বোঝার জন্য আধ্যাত্মিক সাহায্যের প্রয়োজন। আর আমরা এ ধরনের সাহায্য পাবো রাসুল (সঃ) এবং তাঁর আহলে বায়াত (আঃ)-এর মাধ্যমে।



আল্লাহ বলেছেন:



“এই কিতাবের কিছু আয়াত ‘মুহকাম’ বা প্রতিষ্ঠিত, এইগুলি কিতাবের মূল। আর অন্যগুলি ‘মুতাশাবিহ’ বা রূপক। যাদের অন্তরে সত্য লংঘনের প্রবণতা আছে, শুধুমাত্র তারাই বিশৃঙ্খলা আর ভুল ব্যাখ্যার উদ্দেশ্যে মুতাশাবিহাতের অনুসরণ করে। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এর ব্যাখ্যা জানেনা।”

(সুরা আলে ইমরান: আয়াত ৭)



আল্লাহ নবীজী (সঃ)-কে কোরান সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার জন্য মনোনীত করেছেন।



“আমি তোমার প্রতি কোরান অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিলো, যাতে তারা চিন্তা করে।”

(সুরা আল নাহল: আয়াত ৪৪)



নবীজী (সঃ) তাঁর জীবদ্দশায় মুসলিমদের মাঝে এই প্রয়োজনীয় জ্ঞান প্রচার করেছেন। আর তিনি আলী বিন আবি তালিব (আঃ)-কে দিয়ে সেগুলো লিখিয়েছেন, যেগুলো আলী (আঃ) তাঁর লেখা বই ‘জামেয়া’-তে লিপিবদ্ধ করে গেছেন।



এছাড়াও নবীজী (সঃ)-এর নির্দেশনায় আলী বিন আবি তালিব (আঃ) কোরানের ব্যাখ্যা লিখেছেন, যাতে করে ভবিষ্যত প্রজন্ম কোরান সম্পর্কে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর পেতে পারে। নবীজী (সঃ)-এর ইন্তেকালের পরে মুসলিমরা যখনই কোরানের ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে কোনো অসুবিধায় পড়তো, তারা আলী (আঃ)-এর কাছে আসতো। আর তিনি সবসময়েই তাদের প্রশ্নগুলোর একটা সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দিতেন। আলী বিন আবি তালিব (আঃ) তাঁর এই কোরানের ব্যাখ্যামূলক বই ‘জামেয়া’ রেখে গিয়েছিলেন তাঁর পরবর্তী আহলে বায়াত (আঃ)-এর ১১ জন ইমামের জন্য। ইমামগণও কোরানের বিভিন্ন ব্যাখ্যায় এই বইয়ের সাহায্য নিতেন। আহলে বায়াত (আঃ)-এর এই জ্ঞান পবিত্র। এই জ্ঞান কোনো বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত মতামত বা ব্যাখ্যার উপর নির্ভর করেনা।



পরবর্তী অধ্যায়গুলোতে আমরা এই ধরনের পার্থক্যগুলো আরো ভালো করে দেখবো।

চলবে...............

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.