![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
অধ্যায় ৯
আল্লাহর “দর্শন”
খলিফাদের(১ম ৩ খলিফা)মতাবলম্বীরা যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন
খলিফাদের মতাবলম্বীরা আল্লাহর দর্শনকে তিনভাবে ব্যাখ্যা করেছেন:
১. আমাদের নবীজী (সঃ) তাঁর নিজের জীবদ্দশায় আল্লাহকে যেভাবে দেখেছেন।
২. শেষ বিচারের দিন বিশ্বাসীরা বেহেশতে প্রবেশ করার আগে আল্লাহকে যেভাবে দেখবেন।
৩. বিশ্বাসীরা বেহেশতে থাকাকালীন সময়ে আল্লাহকে যেভাবে দেখবেন।
ইবনে খুজাইমাহ তাঁর ‘তাওহিদ’ বইটিতে ইবনে আব্বাস, আবু জর এবং আনাস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রমান করতে চেয়েছেন যে নবীজী (সঃ) আল্লাহকে দেখেছেন। উদাহরণস্বরূপ, ইবনে আব্বাসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেছেন যে আল্লাহ আশীর্বাদ দিয়েছেন নবী ইবরাহিম (আঃ)-কে তার সাথে বন্ধুর মতো কথা বলে, নবী মুসা (আঃ)-কে তার সাথে কথা বলে, এবং নবী মুহাম্মদ (সঃ)-কে তার সামনে দেখা দিয়ে। এইসব হাদীসের বেশির ভাগেই ইবনে আব্বাসের মুক্ত করে দেয়া এক দাস, ইকরামাহ-এর নাম উল্লেখ করা আছে। একথাটা প্রচলিত আছে যে ইকরামাহ বিভিন্ন সময়ে ইবনে আব্বাসের উদ্ধৃতি দিয়ে ভুল হাদীস প্রচার করতো।
অন্যদিকে, আমরা জানি যে ইবনে আব্বাস ছিলেন আলী বিন আবি তালিব (আঃ)-এর খুব ঘনিষ্ঠ একজন সহচর ও ছাত্র। এটার অকল্পনীয় যে ইবনে আব্বাস এমন কিছু বলবেন যেটা আহলে বায়াত (আঃ)-এর শিক্ষার বিরুদ্ধে যাবে। আসল কথাটা হলো, ইবনে খুজাইমাহ ছিলেন কা‘ব আল আহবার দ্বারা প্রভাবিত। তিনি কা‘ব-এর উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন:
“আল্লাহ তাঁর বিশেষ দুইটি আশীর্বাদ মুসা ও মুহাম্মদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। একটা হলো সরাসরি তাঁর সাথে যোগাযোগ করা, আরেকটি হলো তাঁর দর্শন লাভ করা। মুহাম্মদ (সঃ) তাঁকে দুইবার দেখেছেন। মুসা (আঃ) তাঁর সাথে দুইবার কথা বলেছেন।”৩৬
এখানে এটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন যে খলিফাদের মতাবলম্বীদের মাঝেও অনেক বিশেষজ্ঞ একথার তীব্র প্রতিবাদ করেছেন যে নবীজী (সঃ) আল্লাহকে দেখেছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নবীজী (সঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা (রঃ)। কিন্তু ইবনে খুজাইমাহ এখানে কা’ব আল আহবারের বর্ণনাটাকেই গ্রহণ করেছেন। আয়েশার বর্ণনাটাকে তিনি গুরুত্ব দেননি।
নীচের হাদীসটির বর্ণনা দিয়েছেন আবু হুরায়রা। তাঁর উদ্ধৃতি দিয়ে বুখারী, মুসলিম, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, আহমাদ বিন হাম্বল এবং সুরতীও এই হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। এখানে শেষ বিচারের দিনের একটি বিশেষ ঘটনার কথা বলা হয়েছে।
আবু হুরায়রা বলেছেন:
“কিছু লোক নবীজী (সঃ)-কে প্রশ্ন করলো: ‘হে আল্লাহর নবী! আমরা কি আমাদের প্রতিপালককে শেষ বিচারের দিনে দেখতে পাবো?’
নবীজী (সঃ) উত্তর দিলেন: ‘পরিষ্কার দিনে সূর্যকে দেখতে পাবে, এটা নিয়ে কোনো সংশয় আছে?’
তারা বললো: ‘কখনোই না, হে নবী!’
নবীজী (সঃ) বললেন: ‘পরিষ্কার রাতে চাঁদকে দেখতে পাবে, এটা নিয়ে কোনো সংশয় আছে?’
তারা বললো: ‘কখনোই না, হে নবী!’
নবীজী (সঃ) তখন বললেন: একইভাবে শেষ বিচারের দিন তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে। আল্লাহ সব মানুষকে একত্রিত করে ঘোষণা করবেন: ‘তোমরা যার উপাসনা করতে, তার পেছনে সারিবদ্ধ হয়ে দাঁড়াও।’ কেউ সূর্যের পেছনে দাঁড়াবে, কেউ চাঁদের পেছনে দাঁড়াবে, অল্প কিছু লোক শয়তানের পেছনে দাঁড়াবে। তখনও আমার উম্মাহর লোকজন দাঁড়িয়ে থাকবে। আর তাদের মধ্যে ভন্ড লোকও থাকবে। আল্লাহ তখন নিজেকে প্রকাশ করবেন, এমন এক চেহারা নিয়ে যেটা তাদের কাছে অপরিচিত। তারপর তিনি বলবেন: ‘আমিই তোমাদের প্রতিপালক!’
তখন তারা চিৎকার করে উঠবে: “আমরা তোমার কাছ থেকে পরিত্রাণের জন্য আমাদের প্রতিপালকের আশ্রয় চাই। আমাদের প্রতিপালক না আসা পর্যন্ত আমরা এখানে অপেক্ষা করবো। আর তিনি যখন আসবেন, আমরা তাঁকে চিনতে পারবো।”
তখন আল্লাহ তাঁর পরিচিত মুখভাব ধারণ করে বলবেন: “আমিই তোমাদের প্রতিপালক!”
তারা বলবে: “হ্যা, নিশ্চয় তুমিই আমাদের প্রতিপালক।”
তারা আল্লাহকে অনুসরণ করবে। আল্লাহ তাদের দোজখের সেতুর উপর দিয়ে নিয়ে যাবেন।”
এরপর আবু হুরায়রা দোজখের আগুন সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন, আর বর্ণনা করেছেন কিভাবে বিশ্বাসীরা সেই আগুন থেকে রেহাই পাবেন। তারপর তিনি বলেছেন:
“একজন মানুষ তখনো দোজখের আগুনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকবে। সে তখন বলবে: ‘হে আমার প্রতিপালক! দোজখের দুর্গন্ধ আমাকে বিষাক্ত করে ফেলেছে। এর শিখা আমাকে দগ্ধ করেছে। আমার মুখ দোজখের দিক থেকে ঘুরিয়ে দাও।’ ”
সে বেশ কয়েকবার এই প্রার্থণা করবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবে: “যদি তোমার ইচ্ছা পূরণ করি, তুমি কি আর কিছু চাইবে?”
লোকটা তখন বলবে: “তোমার নামে শপথ করছি, আমি আর কিছুই প্রার্থণা করবোনা।”
আল্লাহ তখন লোকটার মুখ দোজখের দিক থেকে ঘুরিয়ে দেবেন। সাথে সাথে সেই লোক বলবে: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বেহেশতের দরজার কাছে নিয়ে যাও।”
আল্লাহ তখন বলবেন: “তুমি কি প্রতিজ্ঞা করোনি যে নতুন করে কিছুই প্রার্থণা করবেনা? ধিক তোমাকে, হে আদম সন্তান! তুমি প্রতারণা করছো।”
কিন্তু সেই লোকটি অনুনয় করেই চলবে। তখন আল্লাহ বলবেন: “তুমি কি নতুন করে আর কিছু চাইবে, যদি তোমার এই ইচ্ছাটা পূরণ করি?”
লোকটা তখন বলবে: “তোমার নামে শপথ করছি, আমি আর কিছুই প্রার্থণা করবোনা।”
লোকটা এই প্রতিজ্ঞা করার পর আল্লাহ তাকে বেহেশতের দরজার সামনে নিয়ে যাবেন। যখন লোকটা বেহেশতের ভেতরের সুখ-শান্তি দেখবে, তখন সে চুপ হয়ে যাবে। ভয়ের সাথে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর সে কাতরভাবে প্রার্থণা করবে: “হে আমার প্রতিপালক! আমাকে বেহেশতে প্রবেশ করার অনুমতি দাও।”
আল্লাহ তখন বলবেন: “তুমি না প্রতিজ্ঞা করেছিলে নতুন করে আর কিছুই চাইবেনা? ধিক তোমাকে, হে আদম সন্তান! তুমি অবশ্যই প্রতারণা করছো।” কিন্তু লোকটা কাতরভাবে অনুনয় বিনয় চালিয়ে যাবে। এক পর্যায়ে আল্লাহ হেসে উঠবেন। হাসি দিয়েই তাঁর সম্মতি বোঝাবেন। যখন এই লোকটি চুড়ান্তভাবে বেহেশতে প্রবেশ করবে, তার সব আশাই পূরণ হবে। নতুন করে তার চাওয়ার মতো আর কিছুই থাকবেনা।”
তখন আল্লাহ বলবেন: “এই সবকিছু ,আর এসবের দ্বিগুণ, সব তোমার জন্য।”
আবু হুরায়রা তারপর বলেছেন: “এই লোকটাই হবে বেহেশতে প্রবেশ করা শেষ ব্যক্তি।”
এই হলো খলিফাদের মতাবলম্বীদের গ্রহণ করা একটি হাদীসের বর্ণনা। এবারে দেখা যাক আহলে বায়াত (আঃ) এ ব্যাপারে কি বলেছেন।
আল্লাহকে দেখা যায়না
আহলে বায়াত (আঃ)-এর ইমামগণ আমাদের সবসমরেয়ই শিক্ষা দিয়েছেন যে দর্শন বা দেখা, এই বিষয়টা আল্লাহর উপর আরোপ করা যায়না। শেষ বিচারের দিনে তাঁকে দেখা যাবেনা। এমনকি পৃথিবীতেও তাঁকে দেখা যাবেনা।
১. ইমমি জা’ফর সাদিক বলেছেন:
“একবার আহলে কিতাবদের (ইহুদী ও খ্রীষ্টান) মধ্যে থেকে এক জ্ঞানী লোক ইমাম আলী (আঃ)-এর কাছে এসে প্রশ্ন করলেন: ‘হে আলী! আপনি কি কখনো ইবাদতের সময় আপনার প্রতিপালককে দেখেছেন?’
ইমাম আলী (আঃ) উত্তর দিলেন: ‘আমি কখনোই আমার প্রতিপালককে না দেখে ইবাদত করিনা।’
সেই জ্ঞানী লোক প্রশ্ন করলেন: ‘তাঁকে আপনি কেমন দেখলেন?’
ইমাম আলী (আঃ) উত্তর দিলেন: “মনে রাখবেন, আমাদের শারীরিক চোখ তাঁকে ধারণ করতে পারেনা। হৃদয়ে সত্যিকারের বিশ্বাস থাকলে তাঁকে দেখা যায়।”৩৭
২. সাফওয়ান বিন ইয়াহিয়া বর্ণনা করেছেন যে আবু কাররাহ, যিনি ছিলেন খলিফাদের মতাবলম্বীদের মধ্যে একজন হাদীসের বর্ণনাকারী, একবার ইমাম রিজা (আঃ)-এর সাথে দেখার করার অনুমতি জোগাড় করলেন। ইমাম (আঃ)-এর সামনে এসে তিনি ইসলামী আইনতত্ত্ব নিয়ে কিছু প্রশ্ন করলেন।
তারপর আবু কাররাহ বললেন:
“আমরা একটা হাদীস জানি যেটা বলছে যে আল্লাহ তাঁর আশীর্বাদ মুসা (আঃ) ও মুহাম্মদ (সঃ)-এর মধ্যে ভাগ করে দিয়েছেন। প্রথম জনের সাথে তিনি কথা বলেছেন, পরের জনকে তিনি দেখা দিয়েছেন।”
এই কথা শোনার পর ইমাম (আঃ) বললেন: “এটা যদি সত্যি হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহর এই বাণীগুলি কে প্রচার করেছেন?”
(ক) “দৃষ্টি তাঁকে অবধারণ করতে পারেনা, কিন্তু তিনি অবধারণ করেন সকল দৃষ্টি”
(সুরা আল আনআম: আয়াত ১০৩)
(খ) “তাদের সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে তা তিনি অবগত, কিন্তু তারা জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করতে পারেনা।”
(সুরা তা-হা: আয়াত ১১০)
(গ) “কোনো কিছুই তাঁর সদৃশ নয়”
(সুরা আল শুরা: আয়াত ১১)
“মুহাম্মদ (সঃ)-ই কি আল্লাহর এই বাণীগুলি প্রচার করেননি?”
আবু কাররাহ বললেন: “হ্যা, অবশ্যই। মুহাম্মদ (সঃ)-ই এই বাণীগুলি প্রচার করেছেন।”
ইমাম রিজা (আঃ) বললেন: “এটা কিভাবে হতে পারে যে একজন লোক মানুষজাতিকে শেখালেন যে আল্লাহকে দেখা যায়না, দৃষ্টিতে ধারণ করা যায়না, অথবা কোনো কিছুর সাথে তুলনাও করা যায়না, তারপর হঠাৎ করে সেই লোকই বললেন: ‘আমি আল্লাহকে দেখেছি। তাঁকে উপলব্ধি করতে পেরেছি। তাঁকে দেখতে অনেকটা মানুষের মতো’? অবিশ্বাসীরাও যেমনটা করেনা, তেমন মিথ্যা নবীজী (সঃ)-এর উপর আরোপ করতে আপনার কি লজ্জা বা দ্বিধা হচ্ছেনা?”
আবু কাররাহ বললেন: “কিন্তু কোরান বলছে নবীজী (সঃ) যেদিন মেরাজে গিয়েছিলেন, সেদিন আল্লাহকে দেখেছিলেন।”
তারপর তিনি কোরানের সেই আয়াতটি বললেন:
“নিশ্চয় সে তাকে আরেকবার দেখেছিলো।”
(সুরা আল নাজম: আয়াত ১৩)
(আবু কুররাহ মনে করেছিলেন যে এই আয়াতে উল্লিখিত ‘ইহা’ সর্বনামটি আল্লাহকে বোঝাচ্ছে)
ইমাম রিজা (আঃ) বললেন:
“আপনাকে অবশ্যই এর পরের আয়াতগুলি পড়তে হবে। সেখানেই ব্যাখ্যা করা আছে নবীজী (সঃ) কি দেখেছিলেন। এই একই সুরা’র ১৮ নং আয়াতে আপনি দেখবেন:
“সে তো তার প্রতিপালকের মহান নিদর্শনগুলি দেখেছিলো।”
(সুরা আল নাজম: আয়াত ১৮)
“আল্লাহর নিদর্শন আর আল্লাহ এক নন। আল্লাহকে দেখা যায়না, কারন দৃষ্টি তাঁকে ধারণ করতে পারেনা, জ্ঞান দ্বারা তাঁকে আয়ত্ত করা যায়না।”
আবু কুররাহ প্রতিবাদ জানিয়ে বললেন:
“তাহলে কি আমাদের এই হাদীসকে মিথ্যা বলবেন?”
ইমাম রিজা (আঃ) বললেন:
“যে হাদীস কোরানের বিরুদ্ধে যায় সেটা মিথ্যা। সেই মিথ্যাটা নবীজী (সঃ)-এর উপর আরোপ করা হয়েছে। এগুলোর উপর আমার কোনো আস্থা নেই।”৩৮
পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা
এখানে দুই প্রকারের দর্শনের কথা বলা হয়েছে:
১. আল্লাহকে দেখেছেন নবীজী (সঃ), এই পৃথিবীতে।
২. আল্লাহকে দেখবে মুসলিমরা, শেষ বিচারের দিনে।
প্রথম দর্শনের ব্যাপারে খলিফাদের মতাবলম্বীদের মধ্যেই দ্বিধা-বিভক্তি রয়েছে। কা’ব আল আহবার-এর বর্ণনায় নবীজী (সঃ) আল্লাহকে দুইবার দেখেছেন।
দ্বিতীয় প্রকারের দর্শনের ব্যাপারে আমরা আবু হুরায়রা বর্ণিত একটি হাদীস উল্লেখ করেছি।
আবু হুরায়রার বর্ণনার সারাংশ
(ক) শেষ বিচারের দিনে আল্লাহকে দেখা যাবে। পরিষ্কার আকাশে সূর্য বা চাঁদের মতোই উজ্জ্বল আর পরিষ্কারভাবে তাঁকে দেখা যাবে।
(খ) আল্লাহ প্রথমে একটা অপরিচিত রূপ নিয়ে আসবেন. মুসলিমরা তখন তাঁকে চিনতে পারবেনা। তারপর তিনি পরিচিত রূপ নিয়ে আসবেন, তখন বিশ্বাসীরা তাঁকে চিনতে পারবে।
(গ) দোজখের আগুনের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি আল্লাহর সাথে তিনবার প্রতারণা করবে।
(ঘ) আল্লাহ হেসে উঠবেন, যেভাবে আমরা মরণশীল মানুষরা হাসি।
আবু হুরায়রার বর্ণনা শুনলে মনে হতে পারে আল্লাহ যেনো একজন অভিনেতা যিনি পর্দার আড়ালে গিয়ে রূপ বদল করে আসেন। এখন আল্লাহর চেহারার মধ্যে এমন কি বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে যেটা দেখে মুসলিমরা তাঁকে চিনতে পারবে? তারা কি আল্লাহকে আগে কখনো দেখেছিলো? যদি দেখে থাকে, সেটা কখন? তখন আল্লাহ কেমন অবস্থায় ছিলেন? তরুণ, বৃদ্ধ, নাকি বয়সের ভারে একেবারে নুয়ে পড়েছেন?
যদি আল্লাহ মরণশীল মানুষের মতো হেসে উঠে একজন পাপীকে ক্ষমা করে দেন, তাহলে দিনটার নাম ‘শেষ বিচারের দিন’ হলো কেনো?
এমনকি খ্রীষ্টানদের বিকৃত হয়ে যাওয়া ওল্ড টেস্টামেন্ট বা নিউ টেস্টামেন্টেও এ ধরনের কাল্পনিক গল্প পাওয়া যায়না। এটা অনেকটা শীতের রাতে দাদীর মুখে শোনা গল্পের মতো। তবে পার্থক্য একটাই। দাদীর বলা গল্পের নায়ক একজন মানুষ। আর আমাদের এই গল্পের নায়ক স্বয়ং আল্লাহ। এটা খুবই দুঃখজনক যে খলিফাদের মতাবলম্বীদের মাঝে হাদীসের উপর বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের গল্পগুলি তাঁদের ‘ঈমান’ ও ‘তাওহিদ’-এর পাঠ্যবইয়ে উল্লেখ করেছেন। আর এই ধরনের গল্পগুলির প্রভাবও অনেক সুদূরপ্রসারী।
আহলে বায়াত (আঃ)-এর ব্যাখ্যার সারাংশ
প্রথম ব্যাখ্যাটা করেছেন আলী বিন আবি তালিব (আঃ)। তিনি বলেছেন: ‘হৃদয়ে সত্যিকারের বিশ্বাস থাকলে তাঁকে দেখা যায়।’ এছাড়াও তিনি বলেছেন: ‘আমি কখনোই আমার প্রতিপালককে না দেখে ইবাদত করিনা।’
আরেকটা ব্যাখ্যা করেছেন ইমাম রিজা (আঃ)। তিনি বলেছেন যে, নবীজী (সঃ) পবিত্র কোরানের বহু আয়াত মানুষকে বলেছেন, যেগুলো বলছে যে আল্লাহকে দেখা যায়না। হঠাৎ করে তিনি কেনো তাঁর বলা এই কথার সাথে পরষ্পরবিরোধী কোনো মন্তব্য করবেন?
এখানে একটা কথা উল্লেখ করতে পারি যে, সবকিছুরই একটা নির্দিষ্ট ভূমিকা আছে। সেটা দিয়েই তাকে পরিমাপ করা হয়। যেমন, দৈর্ঘ্য বা ওজন মাপার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। কবিতাকে পরিমাপ করার জন্য ছন্দ আছে। যখন এই নিয়ম আর ছন্দগুলো ভেঙ্গে পড়ে, ভালো-মন্দের প্রভেদ ঘুচে যায়, তখন মানুষের সামনে আসে ঘোর অমানিশা।
নবীজী (সঃ) মনোনীত করে গেছেন পবিত্র কোরান ও আহলে বায়াত (আঃ)-কে, ইসলাম ধর্মের ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য। আহলে বায়াত (আঃ)-কে অনেক মুসলিমই ত্যাগ করেছেন। তবে সব মুসলিমই পবিত্র কোরান মানেন। ফলাফল যেটা দাঁড়ালো, খলিফাদের মতাবলম্বীরা তাঁদের বর্ণিত কিছু হাদীসের আলোকে কোরানের ব্যাখ্যা দিতে লাগলেন। এমনকি মাঝে মধ্যে সেই ব্যাখ্যাগুলো কোরানের সঠিক ব্যাখ্যার বিরুদ্ধে যেতে লাগলো। আবু হুরায়রা এবং তাঁর মতো আরো অনেকের বর্ণিত হাদীস আছে যেগুলো দুর্বল আর অগ্রহণযোগ্য। কিন্তু এই হাদীসগুলি দিয়েই পরবর্তীতে কোরানের ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
উপসংহার
(ক) দৃষ্টি কেবলমাত্র তাকেই ধারণ করতে পারবে যার শরীর আছে, অথবা যেটা একটা বস্তু।
(খ) যে জিনিসের শরীর নেই, তাকে দেখা যাবেনা। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে: আত্মা, আলো, বা বিদ্যুৎ। এধরনের কোনো কিছু দেখার কথা বলাটাই অপ্রাসঙ্গিক।
(গ) আল্লাহর কোনো শরীর নেই, তিনি বস্তু নন। তিনি বস্তুর স্রষ্টা। আমরা তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে তাঁকে দেখতে (উপলব্ধি করতে) পারি।
(ঘ) আল্লাহর সমতুল্য বা সদৃশ কোনো কিছুই নেই। তাই তাঁকে কোনো কিছুর সাথে তুলনা করা যাবেনা।
(ঙ) যে হাদীসের বর্ণনা কোরানের বিরুদ্ধে যাবে, সেটাকে অবশ্যই মিথ্যা বলে বাতিল করে দিতে হবে।
চলবে.........।
©somewhere in net ltd.