![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।
(ইমামতঃশিয়া ও সুন্নীর মধ্যে অন্যতম পার্থক্যের বিষয়)
আয়াতুল্লাহ মুঃ তাকী মিসবাহ ইয়াজদী
ভুমিকা
মহানবী(সাঃ)এর মদীনায় প্রত্যাবর্তনের পর এ শহরের জনগনের স্বতস্ফুর্ত সমর্থন(যার ফলে সম্মানার্থে ‘আনসার’ নামে ভুষিত হয়েছিলেন) এবং মক্কা থেকে হিজরতকারী মুসলমানদের(মুহাজির) নিয়ে একটি ইসলামি সমাজ প্রতিষ্টা করে এর পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহন করেছিলেন।আর মাসজিদুন্নাবী একদিকে যেমন উপাসনালয় ও ঐশী রিসালাতের প্রচার,প্রশিক্ষন ও আধ্যাত্নিক পরিচযার কেন্দ্র ছিল।অপরদিকে তেমনি মুহাজির ও সমাজের বঞ্চিত,নিগঘিত মানুষের আশ্রয়স্থলও ছিল।এ মসজিদেই তাঁদের অর্থনৈ্তিক অবস্থার উন্নয়ন ও জীবিকা নির্বাহের কর্মসুচি নেয়া হতো।এখানেই বিচার-বিবাদের মীমাংসা এবং সামরিক স্বদ্বান্ত,যুদ্বের জন্য সৈ্ন্য প্রেরন,যুদ্বের পৃষ্টপোষকতা ও অন্যান্য রাষ্ট্রিয় সিদ্বান্ত গঘীত হতো।মোটকথা মানুষের ধর্মীয় ও পার্থিব সকল বিষয়ে মহানবীর(সা মাধ্যমেই পরিচালিত হতো।মুসলমানরাও রাসুলের(সা
আদেশের আজ্ঞাবাহ হওয়াটা নিজেদের নৈ্তিক দায়িত্ব মনে করতেন।কারন মহান আল্লাহ রাজনৈ্তিক বিচার ও রাষ্ট্রিয় বিষয়ে রাসুলের(সা
নিঃশর্ত আনুগত্য করার আদেশ প্রদান(সুরা আলে-ইম্রানঃ৩২, ১৩২,নিসাঃ১২,১৪,৬৯,৮০) ছাড়াও গুরুত্বপুর্ন বিষয়সমুহেও তাঁর আজ্ঞাবহ হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন(আলে-ইম্রানঃ১৫২,নিসাঃ৪২,৫৯,৬৫,১০৫)।
অন্য কথায়ঃমহানবী(সাঃ) নবুয়ত,রিসালাত এবং ইসলামের আহকাম প্রচার ও প্রশিক্ষনের দায়িত্ব ছাড়াও ইসলামী সমাজের নেতৃত্বের দায়িত্বেও নিয়োজিত ছিলেন।বিচারকার্য ও সামরিক নেতৃত্ব ইত্যাদি এ থেকেই অনুমোদন হতো।যেমনি করে ইসলামে ইবাদাত ও আচরনগত দায়িত্ব ছাড়াও রাজনৈ্তিক,অর্থনৈ্তিক ও অধিকারগত ইত্যাদি কর্তব্য বিদ্যমান,তেমনি করেইসলামের নবী(সাঃ) প্রচার,প্রশিক্ষন ও আধাত্নিক পরিচর্যার দায়িত্ব ছাড়াও মহান আল্লাহর নিকট থেকে ঐশী বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রেও দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছিলেন এবং সকল প্রকার প্রশাসনিক মর্যাদার অধিকারি ছিলেন।
এটা অনস্বীকার্য যে,যদি কোন দ্বীন বিশ্বের শেষাবধি সকল প্রকার সামাজিক কর্তব্য পালনের দাবী করে তবে এধরনের বষয়াদি সম্পর্কে উদাসীন থাকতে পারে না।অনুরুপ যে সমাজে এ দ্বীনের ভিত্তিতে প্রতিষ্টিত হয়, সে সমাজে এ ধরনের কোন রাজনৈ্তিক ও প্রশাসনিক কর্তব্য থেকে নিরুদ্দিষ্ট থাকবে,যা ইমামত নামে অভিহিত,তাও হতে পারে না।
কিন্তু কথা হল মহানবীর(সাঃ) ইন্তেকালের পর,কে এ দায়িত্ব লাভ করবেন?এবং কার কাছ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন?মহান আল্লাহতায়ালা এ মর্যাদা যেরুপ মহানবীকে(সাঃ) দিয়েছিলেন সেরুপে অন্য কাউকেও কি দিয়েছেন? এ দায়িত্বভার অন্য কারও গ্রহনের কোন বৈধতা রয়েছে কি?নাকি মহান আল্লাহ দ্বারা প্রদত্ত এ মর্যাদা মহানবী(সাঃ)এর জন্যই নির্ধারিত ছিল এবং অতঃপর মুসলিম জনতাই তাদের ইমাম নির্বাচন করবে ও তাকে নিজেদের পৃষ্টপোষক হিসাবে স্থান দিবে,ত-ও বিধি সম্মত?মানুষের কি এধরনের কোন অধিকার আঁছে ? না নেই?
আর এটি হল শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে মুল বিরোধের বিষয়।অর্থাৎ একদিকে শিয়াদের বিশ্বাস যে ইমামত হল একটি ঐশী মর্যাদা,যা মহান আল্লাহ দ্বারাই যঠপযুক্ত ও যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে প্রদান করা আবশ্যক।আর মহান আল্লাহতায়ালা, মহানবী(সাঃ)এর মাধ্যমে এ কাজটি সম্পাদন করেছেন এবং আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলীকে(আঃ) তাঁর উত্তরাধিকারী ঘোষনা করেছেন।ওতঃপর তারই সন্তানদের মধ্য হতে পরম্পরায় ১২জনকে ইমামতের দায়িত্বে নিযুক্ত করেছেন।অপরদিকে সুন্নী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস যে,ইমামত নবীর ইন্তেকালের সাথে সাথে নবুয়্যত ও রিসালাতের মতই শেষ হয়েছে এবং এরপর থেকে ইমাম নির্বাচনের দায়িত্ব মানুষের উপর অর্পন করা হয়েছে।এমনকি আহলে সুন্নাতের কোন কোন বিজ্ঞজন সুষ্পষ্ট ভাষায় বলেছেন যে,যদি কেউ অস্ত্রের ভয় দেখিয়েও ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়,তবে তার আনুগত্য করা ও অন্যান্যদের জন্য অপরিহার্য!(আল আহকামুল সালতানিয়াহ,লেখকঃআবু ইয়ালা এবং ‘আস ‘সাওয়াদুল আ’যাম’,লেখকঃআবুল কাশেম সামারকান্দি,পৃঃ ৪০-৪২)।ষ্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, এধরনের দৃষ্টিভঙ্গি স্বৈরাচারী,অত্যাচারী ও প্রতারকদের জন্যে কতটা পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে এবং মুসলমানদের অবক্ষয় ও বিভেদের পথে কতটা সহায়ক হয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে আহলে সুন্নাত ঐশী সম্পর্কাধীন ইমামতের বৈধতা দিয়ে রাজনীতি থেকে ধর্মের পৃ্থকীকরনের প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছেন।আর শিয়া সম্প্রদায়ের বিশ্বাস,এটাই হচ্ছে ইসলামের সঠিক ও সত্যসুন্দর পথ থেকে এবং মহান আল্লাহর আনুগত্যের পথ থেকে বিচ্যুতির কারন।অনুরুপ শতসহস্ত্র ধরনের বিচ্যুতি ও বিপথগামীতার সুতিকাগারও এখানেই,যেগুলো মহানবীর(সাঃ) পরলোকগমনের পর থেকে মুসলমানদের মাঝে রুপ পরিগ্রহ করেছে এবং করবে।
অতএব প্রতিটি মুসলমানদের জন্যেই কোন প্রকার অন্দ্ব অনুকরন ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব ব্যতিরেকে এ বিষয়টির উপর পরিপুর্ন গবেষনা ও অনুস্নদ্বান চালান অপরিহার্য(এ বিষয়ে জানতে পড়ুনঃআবাকাতুল আনওয়ার,আল গাদীর,দালায়িলুস সিদক,গায়াতুল মারাম এবং ইসবাতুল হুদাহ ইত্যাদি গ্রন্থ।‘আল মুরাজায়াত’ নামে একটি বই বাংলায় অনুদিত হয়েছে যা শিয়া ও সুন্নী ২ মনীষির মধ্যে বিনিময়কৃত পত্রসমুহের সমাহার)।আর সেই সাথে সত্য ও সঠিক মাযহাবের শনাক্তকরনের মাধ্যমে এর প্রচার ও প্রসারে সর্বশক্তি নিয়োগ করা উচিত।
উল্লেখ্য এ ব্যাপারে ইসলামী বিশ্বের সামগ্রিক কল্যানের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বিভিন্ন মাযহাবের মধ্যে মতবিরোধ সৃষ্টি করে ইসলামের শত্রুদের জন্যে সুযোগ করে দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।এমন কোন কাজ করা যাবে না যা ইসলামী সমাজে ফাটল সৃষ্টি করবে এবং কাফেরদের বিরুদ্বে নিজেদের পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র বিনষ্ট হবে।আর এ ক্ষতির অংশীদার মুসলমানরাই হবে,যার ফলশ্রুতি মুসলিম সমাজব্যবস্থার দুর্বলতা বৃ্দ্বি ছাড়া কিছুই নয়।কিন্তু মুসলমানদের পারস্পরিক সহযোগিতা ও ঐক্য সংরক্ষন যেন সঠিক ও সত্য মাযহাবের অনুসান্দ্বান ও শনাক্তকরনের জন্যে,অনুসন্দ্বান ও গবেষনার সুষ্ট পথকে রুদ্ব না করে ফেলে।আর ইমামতেরবিষয়সমুহের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষনের সুষ্টু পরিবেশ যেন ব্যাহত না হয় সেদিকে পক্ষ্য রাখতে হবে।মনে রাখতে হবে,এ বিষয়গুলোর সথিক সমাধানের উপর মুসলমানদের ভাগ্য এবং ইহ ও পারলৌ্কিক কল্যান নির্ভর করে।
ইমামতের তাৎপর্যঃ
ইমামতের আভিধানিক অর্থ হল নেতা,পথ প্রদর্শক এবং যে কেউ কোন জনসমষ্টির নেতৃত্ত্বের দায়িত্ব গ্রহন করবে তাকেই ইমাম বলা হয়ে থাকে-হোক সে সত্য পথের অনুসারী কংবা মিথ্যা পথের।যেমনঃপবিত্র কোরানে কাফেরদের পৃষ্টপোষকদের সম্পর্কে অর্থাৎ কাফেরদের নেতারা(সুরা তাওবাহ-১২) কথাটি ব্যাবহার করা হয়েছে।তদনুরুপ মুসল্লীরা নামাজের জন্যে যার পিছনে সমবেত হয়ে থাকেন,তাকে ‘ইমামুল জামাত’ নামকরন করা হয়।
কিন্তু কালামশাস্ত্রের পরিভাষায় ইমামত হল ইহ ও পারলৌ্কিক সকল বিষয়ে ইসলামী সমাজের সর্বময় ও বিস্ত্রৃত নেতৃত্ব প্রদান।ইহলৌ্কিক শব্দটি ইমামতের পরিসীমার ব্যাপকতা বুঝাতে ব্যবহ্রত হয়েছে।নতুবা ইসলামী সমাজে ইহলৌ্কিক বিষ্যাদিও দ্বীন ইসলামের অন্তর্ভুক্ত।
শিয়া সম্প্রদায়ের মতে এ ধরনের নেতৃত্ব কেবলমাত্র তখনই বৈধ হবে,যখন তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদিত হবে।আর প্রকৃতপক্ষে(সহকারী হিসাবে নয়)যিনি এ মর্যাদার অধিকারী হবেন,তিনি আহকাম ও ইসলাম পরিচিতির বর্ননার ক্ষেত্রে সকল প্রকার ভুল-ভ্রান্তি থেকে দূরে থাকবেন।অনুরুপ তিনি সকল প্রকার গুনাহ থেকে দূরে থাকবেন।বস্তুত পবিত্র ইমাম,একমাত্র নব্যুয়ত ও রিসালাত ছাড়া মহানবীকে(সাঃ),মহান আল্লাহ প্রদত্ত সকল প্রকার মর্যাদার অধিকারী হবেন।ইসলামের বভিন্ন নিয়ম কানুন বর্ননার ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য যেমন নিঃশর্তভাবে গ্রহনযোগ্য,তেমনি প্রশাসনের বিভিন্ন বিষয়েও তাঁর আদেশ পালন করা অপরিহার্য।
এভাবে শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের মধ্যে ইমামতের ক্ষেত্রে ৩টি পারথক্য পরিলক্ষিত হয়ঃ
প্রথমতঃ ইমামকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে হবে।দ্বিতিয়তঃইমামকে আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে এবং সকল প্রকার ভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকতে হবে।তৃ্তীয়তঃইমামকে গুনাহ থেকে পবিত্র থাকতে হবে।
তবে মাসুম হও্য়াটা ইমামতের সমকক্ষ নয়।কারন শিয়া মাযহাবের মতে হযরত ফাতিমা যাহরাও(সা আ) মাসুম ছিলেন কিন্তু তিনি ইমামতের অধিকারিনী ছিলেন না।অনুরুপ হযরত মরিয়াম(আঃ)ও ইসমাতের অধিকারিনী ছিলেন,যদিও আমরা তাঁদের সম্পর্কে অবগত নই।বস্তুতঃমাসুম ব্যক্তিগনের পরিচয় মহান আল্লাহ কতৃক উপস্থাপিত না হলে তাঁদেরকে চেনা সম্ভব নয়।
ইমাম থাকার প্রয়োজনীয়তা
বিশ্বাসগত বিষয়ে গভীর জ্ঞান রাখেন না এমন অধিকাংশ মানুষ মনে করেন যে, শিয়া সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে ইমামত প্রসঙ্গে বিরোধ এ ছাড়া আর কিছুই নয় যে শুয়াদের বিশ্বাসঃ মহানবী(সাঃ) ‘হযরত আলী ইবনে আবি তালিবকে’(আঃ) ইসলামী সমাজের পরিচালনার জন্য উত্তরাধীকারী নির্বাচন করেছিলেন।কিন্তু আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস যে এধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি এবং জনগন তাদের পছন্দমত নেতা নির্বাচন করেছিলেন।তিনি(জনগন দ্বারা নির্বাচিত নেতা) তাঁর উত্তরাধিকারীকে ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচন করেছিলেন।তৃ্তীয় পর্যায়ে নেতা নির্বাচনের দায়িত্ব ৬ সদস্য বিশিষ্ট গোষ্টীর নিকত অর্পন করা হয়েছিল।অপরদিকে ৪র্থ খলিফার পর যার সামরিক শক্তি বেশী ছিল,সে-ই এ স্থান দখল করেছিল,যেমনঃঅনৈ্সলামিক দেশসমূহেও মোটামুটি এ প্রক্রিয়া বিদ্যমান।
অন্যকথায়,তারা এরকম মনে করেন যে,১ম ইমাম নির্বাচনের ক্ষেত্রে শীয়াদের বিশ্বাস সেরুপ,যেরুপ আহলে সুন্নাত ১ম খলিফা দ্বারা ২য় খলিফার নির্বাচনের ক্ষেত্রে বিশ্বাস করেন,পার্থক্য শুধু এটুকুই যে,মহানবী(সাঃ)এর বক্তব্য মানুষ গ্রহন করেছিল!
কিন্তু প্রশ্ন হলো,১ম খলিফা এ অধিকার কোথা থেকে পেয়েছিলেন?আল্লাহর রাসুল(সাঃ)(আহলে সুন্নাতের বিশ্বাস মতে) ইসলামের জন্য কেন তার(১ম খলিফা) মত আন্তরিকতা প্রদর্শন করেননি এবং নব গঠিত ইসলামী সমাজকে অভিভাবকহীন অবস্থায় রেখে গেলেন অথচ যুদ্বের জন্য মদীনা থেকে অন্যত্র যাওয়ার সম্যেও একজনকে নিজের স্থলাভিষিক্ত করে যেতেন এবং যেখানে স্বয়ং তিনিই (এ বিষয়ের উপর) তাঁর উম্মতদের মধ্যে মতবিরোধ ও বিভ্রান্তির সংবাদ দিয়েছিলেন?এ ছাড়াও লক্ষ্যনীয় বিষয় হল,শিয়া ও সুন্নী সম্প্রদায়ের মধ্যে মুলত মতবিরোধ সর্বাগ্রে এখানেই যে,ইমামত কি এক ধর্মীয় মর্যাদা,যা ঐশী বিধানের অনুগামী ও আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত বিষয়?নাকি পার্থিব রাজকীয় মর্যাদা,যা সামাজিক নির্বাহকের অনুগামী?শিয়াদের বিশ্বাস যে,স্বয়ং মহানবীও(সাঃ) নিজ থেকে তাঁর উত্তরাধিকারী নির্বাচন করেননি।বরং মহান আল্লাহ কর্তৃক আদিষ্ট হয়েই এ কর্ম সম্পাদন করেছেন।প্রকৃত পক্ষে নবুয়তের পরিসমাপ্তির পর দর্শন পবিত্র ইমামগনের নিয়োগদানের সাথে সম্পর্কযুক্ত।আর এধরনের ইমামের উপস্থিতিতেই রাসুল(সাঃ)এর ইন্তেকালের পর ইসলামী সমাজের অপরিহার্য বিষয়াদির নিশ্চয়তা প্রদান করা যেতে পারে।
এখানেই পরিস্কার হয়ে যায় যে,কেন শিয়া সম্প্রদায়ের মতে ইমামত ‘মুল বিশ্বাসগত’ বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হয়-শুধুমাত্র একটি ফিকাহগত গৌন বিষয় নয়।আর সেই সাথে ষ্পষ্ট হয়ে যায় যে,কেন তারা ৩টি শর্ত(ঐশী জ্ঞান,ইসমাত ও আল্লাহ কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত) বিবেচ্য বলে মনে করেন এবং কেন শিয়া সাধারনের মধ্যে এ ভাবার্থগুলো ঐশী আহকাম,প্রশাসন ও ইসলামী সমাজের নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ধর্মীয় নেতৃ্ত্বের ধারনার সাথে এমনভাবে মিশে আছে,যেন ইমামত শব্দটি এ ভাবার্থগুলোর সবগুলোকেই সমন্বিত করে।
এখানে শিয়াদের সামগ্রিক বিশ্বাসের ক্ষেত্রে,ইমামতের তাৎপর্য ও মর্যাদার আলোকেবৈ্ধতা সম্পর্কে আলোচনা করব।
২য় খন্ডের ২তম পাঠে সুষ্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয়েছে যে,মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের সফলতা,ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ কর্তৃক পথ প্রদর্শনের সাথে সম্পর্কিত।আর প্রভুর প্রজ্ঞার দাবি হলো এই যে,কোন নবী প্রেরন করবেন যাতে ইহ ও পরলৌকিক কল্যানের পথ সম্পর্কে মানুষকে জ্ঞান দান করতে পারেন এবং মানুষের প্রশ্নের জবাব দিতে পারেন,আর সেই সাথে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে(আধ্যাত্নিক) পরিচর্যা করতে পারেন এবং তাদের যোগ্যতা অনুসারে পুর্নতার সর্বোচ্চ শিখরে তাদেরকে পৌঁছতে সচেষ্ট হতে পারেন।অনুরুপ তারা উপযুক্ত সামাজিক পরিবেশে ইসলামের সামাজিক বিধানের প্রয়োগের দায়িত্বও নিবেন।
২য় খন্ডের ১৪তম ও ১৫তম পাঠে আমরা আলোচনা করেছি যে,ইসলাম হলো পবিত্র,সার্বজনীন ও অবিস্মৃত ধর্ম এবং ইসলামের নবী(সাঃ)এর পর আর কোন নবীর আবির্ভাব ঘটবে না।নবুয়্যতের পরিসমাপ্তির দর্শন,তখনই কেবল্মাত্র নবীগনের আবির্ভাবের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করবে, যখন সর্বশেষ ঐশী শরীয়ত মানব সম্প্রদায়ের সকল প্রশ্নের জবাব প্রদানে সক্ষম হবে এবং বিশ্বের অন্তিমলগ্ন পর্যন্ত এ শরীয়ত অটুট থাকার নিশ্চয়তা থাকবে।
উল্লেখিত নিশ্চয়তা পবিত্র কোরানের রয়েছে এবং মহান আল্লাহ স্বয়ং সকল প্রকার বিকৃতি ও বিচ্যুতি থেকে প্রিয় গ্রন্থের সংরক্ষিত থাকার নিশ্চয়তা বিধানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।কিন্তু ইসলামের সকল বিধি-বিধান কোরানের আয়াতের বাহ্যিক যুক্তি থেকে প্রকাশ পায় না।যেমনঃনামাযের রাকাত সংখ্যা ও পদ্বতি এবং আবশ্যকীয় ও অনাবশ্যকীয় এমন অসংখ্য বিধান রয়েছে যেগুলো পবিত্র কোরান থেকে উদঘাটন করা অসম্ভব।সাধারনত পবিত্র কোরানে আহকাম ও কানুন বিশদভাবে বর্নিত হয়নি।ফলে এগুলোর প্রশিক্ষন ও সুষ্পষ্ট বর্ননার দায়িত্ব মহানবী(সাঃ)এর উপর অর্পন করা হয়েছে,যাতে তিনি মহান আল্লাহর প্রদত্ত জ্ঞানের(কোরানের ওহী ছাড়া) মাধ্যমে ঐগুলোকে মানুষের জন্য বর্ননা করেন(সুরা বাকারাহঃ১৫১,আল-ইমরানঃ১৬৪,জুময়াঃ২,।আর এভাবে ইসলাম পরিচিতির প্রকৃত উৎস হিসাবে তাঁর সুন্নাহ বিশ্বস্ত ও প্রামান্যরুপে প্রতিষ্টিত হয়।
কিন্তু হযরতের(সাঃ) শে’বে আবি তালিবের কয়েক বছরের বন্দীদশা, শত্রুদের সাথে একদশকাব্দী যুদ্ব ইত্যাদির মত জীবনের সংকটময় মুহুর্তগুলো সাধরন মানুষের জন্যে ইসলামের বিভিন্ন আহকাম,বর্ননার পথে ছিল প্রধান অন্তরায়।অপরদিকে সাহাবাগন যা শিখতেন তা সংরক্ষিত থাকারও কোন নিশ্চয়তা ছিল না।এমনকি অজু করার প্রক্রিয়া যা বর্ষ পরম্পরায় মানুষের দূষ্টি সীমায় সম্পাদিত হত তাও বিরোধপুর্ন বিষয়ে পরিনত হয়েছে।অতএব যেখানে এ সুষ্পষ্ট বিষয়টি(যা মুসলমানদের নিত্য দিনের কর্মকান্ডের সাথে ওতোপ্রতভাবে জড়িত ছিল বা আছে এবং এর পরিবর্তন ও বিকৃ্তির মধ্যে কোন ব্যক্তিগত উদ্দেশ্য জড়িত ছিল না) বিরোধপুর্ন বিষয়ে পরিনত হয়েছে,সেখানে মানুষের ব্যক্তিগত ও গোত্রীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট জটিল ও সুক্ষ নিয়মসমুহের বর্ননার ক্ষেত্রে বিকৃতি ও ভ্রান্তির সিম্ভাবনা অবশ্যই অধিকতর(আল্লামা আমিনি রঃ ৭০০জন মিথ্যা হাদিস বর্ননাকারীর নাম তার “ আল গাদীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।তাদের মধ্যে কেউ কেউ এক লক্ষেরও অধিক বর্ননাকারী রয়েছে)(আল গাদীর,খন্ড-৫,পৃঃ২০৮)।
এ বিষয়টির আলোকে সুষ্পষ্ট হয়েছে যে,ইসলাম ধর্ম কেবলমাত্র তখনই এক পুর্নাংগ ও পরিপুর্ন ধর্ম হিসাবে পৃথিবীর অন্তিম্লগ্ন পর্যন্ত মানুষের সকল প্রয়োজন ও প্রশ্নের জবাব দানে সক্ষম হবে যখন দ্বীনের মুল ভাষ্যে,সমাজের এ সকল কল্যানের নিশ্চয়তা বিধিত হবে,যেগুলো মহানবী(সাঃ)এর ইন্তেকালের পর সংকট ও হুমকীর সম্মুখীন হয়েছিল।আর এ নিশ্চয়তা বিধানের পথ মহানবী(সাঃ)এর যোগ্য উত্তরসুরী নির্বাচন ছাড়া কিছুই নয়।এ উত্তরসুরীকে একদিকে যেমন ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে,যাতে দ্বীনকে এর সকল দৃষ্টিকোন থেকেউত্তম্রুপে বর্ননা করতে পারেন।অপরদিকে তেমনি দৃঢ়রুপে পবিত্রতার অধিকারী হতে হবে,যাতে কুপ্রবৃত্তি ও শয়তানী প্ররোচনায় প্রভাবিত না হন এবং ইচ্ছাকৃতভাবে দ্বীনের বিকৃতিতে লিপ্ত না হন।অনুরুপ মানব সম্প্রদায়ের আধ্যাত্নিক পরিচরযার ক্ষেত্রে মহানবী(সাঃ)এর দায়িত্ব স্বীয় স্কন্ধ্বে তুলে নেয়,উৎকর্ষের সর্বোচ্চ শিখরে যোগ্যতম ব্যক্তিদেরকে পৌছে দিতেও তাঁরা বদ্বপরিকর।আর অনুকুল পরিস্থিতিতে সমাজের শাসন পরিচালনা এবং ইসলামী বিধানকে সমাজে প্রতিষ্টা করা,বিশ্বে ন্যায়বিচার ও সত্য প্রতিষ্টা ইত্যাদির দায়িত্বও তাঁরা গ্রহন করে থাকেন।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা এ সিদ্বান্তে পৌছতে পারি যে, নবুয়তের পরিসমাপ্তি কেবল্মাত্র তখনই প্রভুর জ্ঞানের সাথে সাযুজ্যপুর্ন হতে পারে,যখন এমন পবিত্র ইমামগনকে নিয়োগ করা হবে,যাঁরা একমাত্র নবুয়ত ছাড়া মহানবীর(সাঃ) সকল গুন ও বৈশিষ্টের অধিকারী হবেন।
আর এভাবেই একদিকে যেমন সমাজে ইমাম থাকার প্রয়োজনীয়তা প্রতিভাত হয়,অপরদিকে তেমনি তাঁদের ঐঐশী জ্ঞান ও পবিত্র মর্যাদাও। অনুরুপ মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারটিও ষ্পষ্ট রুপে প্রতীয়মান হয়।কারন একমাত্র তিনিই জানেন এ ধরনের জ্ঞান ও মর্যাদা কাকে দিয়েছেন এবং তিনিই বস্তুত তাঁর বান্দাগনের উপর বিলায়েত ও কর্তৃ্ত্বের অধিকার রাখেন।আর তিনিই এর অধিকার অপেক্ষাকৃত হ্রাসকৃত মাত্রায় উপযুক্ত ব্যক্তিগনকে প্রদান করতে সক্ষম।
এখানে স্মরনযোগ্য যে, আহলে সুন্নাত কোন খলিফার ক্ষেত্রে উল্লেখিত বৈশিষ্টগুলো স্বীকার করেন না।মহান আল্লাহ ও রাসুলের(সাঃ) পক্ষ থেকে নির্বাচিত হওয়ার দাবি যেমন তারা তুলেন না,তেমনি খলিফাগনের(১ম ৩ খলিফা) ঐশী জ্ঞান ও পবিত্রতার প্রসংগও তুলেন না।বরং মানুষের বিভিন্ন ধর্মীয় প্রশ্নের জবাব দানের ক্ষেত্রে তাদের অসংখ্য ভুল-ভ্রান্তি ও অযোগ্যতার দৃষ্টান্ত তারা তাদের বিস্বস্ত গ্রন্থসমুহে তুলে ধরেছেন।উদাহরনস্বরুপ,১ম খলিফা প্রসঙ্গে উদ্বৃত হয়েছে যে,তিনি বলেছিলেনঃ
‘আমার পশ্চাতে এমন একজন শয়তান বিদ্যমান যে আমাকে বিব্রান্ত করে’(শারহে নাহজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,খন্ড-১,পৃঃ৮৫;খন্ড-৪,পৃঃ২৩১-২৬২ এবং আল-গাদীরঃখন্ড-১,পৃঃ১০২-১৮০)।
অনুরুপভাবে ২য় খলিফার প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তিনি ১ম খলিফার আনুগত্য স্বীকারকে ‘অবিলম্বকর্ম ও অবিবেচনাপুর্ন কর্ম’ নামকরন করেছেন(শারহে নাহজুল বালাগাহঃখন্ডঃ১,পৃঃ১৪২-১৫৮,খন্ড-৩,পৃঃ৫৭)।অনুরুপ ২য় খলিফা অসংখ্য বার স্বীয় কন্ঠে উচ্চারন করেছিলেনঃ
‘যদি আলী না থাকতেন,তবে ওমর ধ্বংশ হয়ে ।অর্থাৎ যদি আলি(আঃ) না থকতে তবে ওমর ধ্বংশ হয়ে যেতেন।‘(আল-গাদীরঃখন্ড-৬,পৃঃ৯৩ ও পরবর্তী পৃষ্টাগুলো)।এ ছাড়া ৩য় খলিফা(আল-গাদীরঃখন্ড-৬,পৃঃ৯৭ ও পরবর্তী পৃষ্টাগুলো) এবং বনি উমাইয়া ও বনি আব্বাসের ভুল-ভ্রান্তির কথাতো বলারই অপেক্ষা রাখে না।ইসলামের ইতিহাস সম্পর্কে কেউ ন্যুনতম ধারনা নিলেই এ সম্পর্কে উত্তম রুপে পরিজ্ঞাত হতে পারবেন।
একমাত্র শিয়া সম্প্রদায়ই ১২জন ইমামের ক্ষেত্রে এ শর্ত ত্রয়ে বিশ্বাসী।উপরোক্ত আলোচনার আলোকে ইমামত প্রসঙ্গে তাদের বিশ্বাসের বৈ্ধতা প্রমানিত হয় এবং এব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখ্যার দরকার নেই।তথাপিও পরবর্তী পাঠে কিতাব ও সুন্নাহ থেকে কিছু কিছু দলিলের উদ্বৃতি দেয়ার আশা রাখি।
চলবে.........।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৫
আল-মুনতাজার বলেছেন: রাসুল(সাঃ) ঘোষিত জ্ঞানের নগরীর দরজা হযরত আলীর(আঃ) অবিস্মরনীয় খোতবা ও চিঠি সমুহএর বই " নাহজুল বালাগ" পেতে ক্লিক করুনঃ
Click This Link