নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইসলাম,রাজনীতি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি।

আল-মুনতাজার

আমি মুয়াবিয়ার আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াত পরিত্যাগকারী রাসুলের(সাঃ) শিয়া।শিয়া মানে অনুসারী।আমি আল্লাহর অনুসারী,রাসুলের(সাঃ) অনুসারী।ডঃ তিজানী সামাভী বলেন,শিয়ারা রাসুলের(সাঃ) সুন্নত পালন করছে।

আল-মুনতাজার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইমামত

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১১

ইমামের ইসমাত ও জ্ঞান

ভুমিকাঃ

২য় খন্ডের ১৬নং পাঠে আমরা উল্লেখ করেছিলাম যে, শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের মধ্যে বিরোধের কেন্দ্রবিন্দু হলো ৩টি।যথাঃ ইমামকে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্বাচিত হতে হবে,সুদৃঢ় ইসমাত বা পবিত্রতার অধিকারী হতে হবে এবং ঐশী জ্ঞানের অধিকারী হতে হবে।২য় খন্ডের ১৭ নং পাঠে উল্লেখিত বিষয়গুলিকে একটি বুদ্বিবৃত্তিক যুক্তির মাধ্যমে প্রমান করেছিলাম।৩৮নং পাঠে পবিত্র ইমামগনের(আঃ) আল্লাহ কর্তৃক নির্বাচিত হওয়ার স্বপক্ষে কিছু কিছু উদ্বৃতিগত দলিলের উল্লেখ করা হয়েছিল।আলোচ্য পাঠে এখন আমরা তাঁদের ইসমাত ও আল্লাহ প্রদত্ত জ্ঞান সম্পর্কে আলোকপাত করব।



ইমামের ইসমাতঃ

‘ইমামত হল আল্লাহ প্রদত্ত মর্যাদা যা মহান আল্লাহ আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ) ও তাঁর সন্তানদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন’,তা প্রমানের পর,তাঁদের ইসমাতকে নিম্নলিখিত আয়াত থেকে উদ্ভাবন করা যায়ঃ

“ আমার প্রতিশ্রুতি সীমালংঘনকারীদের জন্যে প্রযোজ্য নয়”(সুরা বাকার-১২৪)।

উপরোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রতিষ্টিত হয় যে,আল্লাহ প্রদত্ত এ মর্যাদা তাঁদের জন্যেই যারা গুনাহ দ্বারা কলুষিত নন।

অনুরুপ সুরা নিসার ৫৯নং আয়াতে উল্লেখিত ‘উলুল আমর’ প্রাসঙ্গিক আয়াতটি যাতে তাঁদের নিঃশর্ত আনুগত্য অপরিহার্য বলা হয়েছে এবং এ আনুগত্যকে রাসুলের(সাঃ) আনুগত্যের শামিল করা হয়েছে সে আয়াতটি থেকে আমরা দেখতে পাই যে,তাঁদের আনুগত্য মহান আল্লাহর আনুগত্যের সাথে কোন বিরোধ সৃষ্টি করে না।অতএব ইসমাতের নিশ্চয়তার অর্থ বহন করে।একইভাবে আহলে বাইত(আঃ) এর ইসমাতকে আয়াতে তাতহিরের মাধ্যমে প্রমান করা যায়।পবিত্র কোরানে উল্লেখ করা হয়েছেঃ

“হে নবীর আহলে বাইত!আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের হতে সকল অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পুর্ন্রুপে পবিত্র করতে”(সুরা আহযাব-৩৩)।

বান্দাগনের পবিত্রতার ব্যাপারে আল্লাহর বিধিগত ইরাদা কারো জন্য নির্ধারিত নয়।সুতরাং আল্লাহর যে ইরাদা আহলে বাইতগনের(আঃ) জন্যে নির্ধারিত হয়েছে,প্রকৃতপক্ষে তা হলো প্রভুর সুনির্ধারিত ইরাদা,যা অপরিবর্তনীয়; যেমনটি বলা হয়েছেঃ

“তাঁর ব্যাপার শুধু এই,তিনি যখন কোন কিছুর ইচ্ছা করেন,তিনি তাকে বলেন হও,ফলে তা হয়ে যায়”(সুরা ইয়াসিন-৮২)।

আর চুড়ান্তরুপে পবিত্রকরন ও সকল প্রকার কদর্য থেকে মুক্তকরনের অর্থই হলো পবিত্রতা ।অপরদিকে আমরা জানি যে, শিয়া সম্প্রদায় ছাড়া মুসলমনাদের কোন সম্প্রদায়ই রাসুলের(সাঃ) কোন নিকটাত্নীয়ের পবিত্রতার দাবী তুলে না।শিয়া সম্প্রদায় নবী কন্যা হযরত ফাতিমা যাহরা(সা আ) এবং দ্বাদশ ইমামের পবিত্রতায় বা ইসমাতে বিশ্বাস করে( এই আয়াতটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে পড়ুন ‘তাফসীরে আল মিজান’ এবং আল ইমামতু ওয়াল বিলায়াতু ফিল কুরানিল কারিম’)।

উল্লেখ্য যে সত্তরাধিক রেওয়ায়েত(যে গুলোর অধিকাংশই আহলে সুন্নাতের আলেমগন বর্ননা করেছেন) প্রমান করে যে, এ আয়াতটি ‘পাক পাঞ্জাতনের’ মর্যাদায় নাযিল হয়েছে( গায়াতুল মারাম,পৃঃ-২৮৭-২৯৩)।শেখ সাদুক ,আমিরুল মু’মিনিন থেকে বর্ননা করেছেন যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ হে আলী! এ আয়াতটি তোমার ,হাসান,হুসাইন এবং তাঁর বংশের ইমামদের প্রসঙ্গে অবতীর্ন হয়েছে।জিজ্ঞাসা করলামঃআপনার পর কয়জন ইমাম রয়েছেন? জবাবে তিনি বললেনঃহে আলী! তুমি,অতপর হাসান,অতপর হুসাইন এবং তাঁর সন্তান আলী,অতপর তাঁর সন্তান মুহাম্মাদ,অতপর তাঁর সন্তান জা’ফর,অতপর তাঁর সন্তান মুসা,অতপর তাঁর সন্তান আলী,অতপর তাঁর সন্তান মুহাম্মাদ,অতপর তাঁর সন্তান আলী,অতপর তাঁর সন্তান হাসান এবং তৎপর তাঁর সন্তান আল্লাহর হুজ্জাত(আঃ) ।অতপর মহানবী(সাঃ) বললেনঃএরুপেই তাঁদের নাম আল্লাহর আরশের পাতায় লিখা আছে এবং আমি মহান আল্লাহর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে,এগুলো কাদের নাম? তিনি বললেনঃ হে মিহাম্মাদ তোমার পর তাঁরা হলেন ইমাম,তাঁরা মাসুম ও পবিত্র হয়েছেন এবং তাঁদের শত্রুরা আমা কর্তৃক অভিশম্পাত হবে( গায়াতুল মারাম,পৃঃ-২৯৩,খ-৬)।

অনুরুপ ‘হাদিসে সাকালাইন’ যাতে মহানবী(সাঃ) তাঁর আহলে বাইত ও ইতরাতকে কোরানের সমকক্ষরুপে স্থান দিয়েছেন এবং এ নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে,কখনোই তারা( অর্থাৎ কোরান ও ইতরাত) পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন হবে না,সেটিও তাঁদের ইসমাতের স্বপক্ষে একটি সুষ্পষ্ট দলীল।কারন ক্ষুদ্রতম কোন পাপে লিপ্ত হওয়ার মানে( এমনকি ভুলক্রমে যদি হয়ে থাকে) কার্যক্ষেত্রে কোরান থেকে তাঁদের পৃথক হওয়া।

ইমামের জ্ঞানঃ

নিঃসন্দেহে নবী(সা;)এর আহলে বাইত(আঃ) তাঁর জ্ঞান থেকে অন্য সকলের চেয়ে অধিকতর লাভবান হয়েছিলেন।তাই তাঁদের সম্পর্কে তিনি বলেছিলেন,

“তাঁদেরকে অনুধাবন করা যায় না,সুতরাং তাঁরা তোমাদের চেয়ে অধিক জ্ঞানী”(গায়াতুল মারাম,পৃঃ-২৬৫,উসুলে কাফি,খ-১,পৃঃ-২৯৪)।

বিশেষ করে স্বয়ং আলী(আঃ) যিনি শৈশব থেকেই রাসুলের(সাঃ) আশ্রয়ে পরিচর্যিত হয়েছেন এবং হযরতের(সাঃ) জীবনের অন্তিম্লগ্ন পর্যন্ত তাঁর সংস্পর্শে থেকে সর্বদা জ্ঞান অর্জনে নিয়জিত ছিলেন।মহানবি(সাঃ) হযরত(আঃ) সম্পর্কে বলেনঃ

“আমি জ্ঞানের শহর আর আলী হল তার দ্বার”( মুস্তাদরাকে হাকেম,খ-৩,পৃঃ২২৬,বিস্ময়ের ব্যাপার হল আহলে সুন্নাতের একজন আলেম ‘ফাতহুল মুলকুল আলী বিসিহহাতি হাদিসে’ মাদিনাতিন এলমুল আলী যা ১৩৫৪ হিঃ কায়রো তঘেকে প্রকাশিত হয়েছে)।

অপরদিকে স্বয়ং আমিরুল মু’মিনিন(আঃ) থেকে বর্নিত হয়েছেঃ

“ আল্লহর রাসুল(সাঃ) জ্ঞানের সহস্ত্রটি দ্বার আমাকে শিক্ষা দিয়েছেন যাদের প্রতিটি আবার সহস্ত্র দ্বারে উন্মুক্ত হয়,ঐগুলোর প্রতিটি আবার সহস্ত্র সহস্ত্র দ্বারে উন্মুক্ত হয়, এমনকি আমি জানি,যা ছিল এবং কিয়ামত দিবস পর্যন্ত যা হবে তাও এবং আমি শিখেছি মৃত্যুসমুহ এবং বিপদ-আপদসমুহ এবং প্রকৃত বিচারের জ্ঞান(ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃঃ৮৮,উসুলে কাফি,খ-১,পৃঃ২৯৬)।

কিন্তু ইমামগনের(আঃ) জ্ঞান,নবী(সাঃ)এর নিকট থেকে(প্রত্যক্ষ ও পরক্ষভাবে) শ্রুত জ্ঞানের মধ্যেই সীমাবদ্ব ছিল না।বরং তাঁরা এক প্রকার অসাধারন জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন যা, ইলহাম ও তাহদীসরুপে তাঁদেরকে প্রদান করা হয়েছিল(উসুলে কাফিঃকিতাবুল হুজ্জাহ,পৃঃ-২৬৪,পৃঃ২৭০)।এধরনের ইলহাম হযরত খিজির ও যুলকারনাইন(উসুলে কাফি,খঃ১,পৃঃ২৬৮) এবং হযরত মারিয়াম ও মুসা(আঃ)এর মায়ের প্রতি(সুরা কাহাফঃ৬৫-৯৮,সুরা আলে ইম্রানঃ৪২,সুরা মারিয়ামঃ১৭-২১,সুরা ত্বাহা-৩৮,কাসাসঃ৭) করা হয়েছিলোীগুলোর কিছু কিছু পবিত্র কোরানে ওহী নামে উল্লেখিত হয়েছে।তবে এর অর্থ নবুওয়তের ওহী নয়।আর এধরনের জ্ঞানের ফলেই পবিত্র ইমামগনের কেউ কেউ শৈশবেই ইমামতের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হয়েছিলেন ও সকল কিছু জ্ঞাত ছিলেন এবং অন্য কারো নিকট জ্ঞানার্জন ও প্রশিক্ষনের দরকার তাঁদের ছিল না।

এ বিষয়টি স্বয়ং পবিত্র ইমামগন(আঃ) থেকে বর্নিত অসংখ্য রেওয়ায়েত থেকে(এবং তাঁদের প্রমানিত ইসমাত ও হুজ্জিয়াতের কথা বিবেচনা করে) প্রমানিত হয়।এগুলোর কোন কোনটির উপর আলোকপাত করার আগে পবিত্র কোরানের এমন একটি আয়াতের উল্লেখ করবো যাতে মহানবী(সাঃ)এর সত্যবাদীতার সাক্ষ্য স্বরুপ ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গকে(যার নিকট রয়েছে কিতাবের জ্ঞান) বলে পরিচয় দেয়া হয়েছে।আয়াতটি হলোঃ

“ বলুন,আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে,তারা আমার এবং তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট (সুরা রা’দ-৪৩)।

নিঃসন্দেহে এমন কেউ যার সাক্ষী মহান আল্লাহর সাক্ষীর নিকটবর্তী বলে পরিগনিত হয়েছে এবং কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী হওয়া,যাকে এরুপ সাক্ষী হওয়ার যোগ্যতা দিয়েছে তিনি মহা মর্যাদাপুর্ন স্থানের অধিকারী।

অপর একটি আয়াতেও এ সাক্ষীর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাকে রাসুল(সাঃ)এর পদাঙ্কনুসারীরুপে গননা করা হয়েছেঃ

“ তারা কি তাদের সমতুল্য যারা প্রতিষ্টিত তাদের প্রতিপালক প্রেরিত ষ্পষ্ট প্রমানের উপর,যার অনুসরন করে তাঁর প্রেরিত সাক্ষী”.........(সুরা হুদঃ১৭)।

আর ‘মিনহু’ শব্দটি প্রমান করে যে, এ সাক্ষী হলেন নবী(সাঃ)এর পরিবারের অন্তর্ভুক্ত এবং তাঁরই আহলে বাইত।শিয়া ও সুন্নী উৎসের একাধিক রেওয়ায়েত থেকে প্রমানিত হয় যে,এ সাক্ষী হলেন আলী ইবনে আবি তালিব(আঃ)।

উদাহরনস্বরুপ উল্লেখ্য যে,ইবনে মু’যিল শাফিয়ী আব্দুল্লাহ ইবনে আতা থেকে বর্ননা করেছেনঃএকদা ইমাম বাকির(আঃ)এ নিকট উপস্থিত ছিলাম,যখন আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের(আহলে কিতাবের আলেমদের মধ্যে এক ব্যক্তি,যিনি রাসুল(সাঃ)এর জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহন করেছিলেন)পুত্র অতিক্রম করছিল।হযরত বাক্কির(আঃ)এর কাছে জিজ্ঞাসা করলামঃ’যার নিকট কিতাবের জ্ঞান রয়েছে’ কি ঐ ব্যক্তির পিতাকে বুঝানো হয়েছে?জবাবে তিনি বললেনঃনা,বরং আলী ইবনে আবি তালিবকে(আঃ) বুঝানো হয়েছে।তেমনি ‘যার অনুসরন করে তাঁর প্রেরিত সাক্ষী’.... এবং ‘ নিশ্চয় তোমাদের ওয়ালী...সুরা মায়িদাহ-৫৫’ আয়াতদ্বয়ও তাঁর সম্মানে নাজিল হয়েছে।এছাড়াও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের উৎস থেকে বর্নিত একাধিক রেওয়ায়েত থেকে পাওয়া যায় যে,সুরা হুদে উল্লেখিত ‘শাহিদ’ হলেন আলী ইবনে আবি তালিব(গায়াতুল মারাম,পৃঃ৩৫৯-৩৬১)।তদুপরি ‘ মিনহু’ এর উল্লেখিত বিশেষত্বের আলোকে সুষ্পষ্টরুপে প্রতীয়মান হয় যে,এর উদাহরন হযরত আলী (আঃ) ছাড়া কেউ নন।

কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার গুরুত্ব তখনই সুষ্পষ্ট হয়,যখন হযরত সোলাইমান(আঃ)এর সময় বিলকিসের সিংহাসন আনয়নের ঘটনা পবিত্র কোরানে যেভাবে বর্ননা করা হয়েছে,তার প্রতি মনোযোগ দেয়া হয়ঃ

“ কিতাবের জ্ঞান যার ছিল,সে বললো, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দিব”(সুরা নামল-৪০)।

এ আয়াত থেকে প্রমানিত হয় যে, কিতাবের কিছু অংশের জ্ঞান থাকার ফলেই এ ধরনের বিস্ময়কর ঘটনা ঘটাতে সক্ষম হয়েছিলেন।এথেকে আমরা অনুমান করতে পারি যে,সমগ্র কিতাবের জ্ঞান কি ধরনের গুরতর প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে!আর এট হল তা-ই যা ইমাম সাদিক(আঃ) সুদাইর থেকে বর্ননা করেছিলেন। সুদাইর বলেনঃআমি আবু বাসির, ইয়াহিয়া বাযযায এবং দাউদ ইবনে কাছির,ইমাম সাদিক(আঃ)এর সভায় উপস্থিত ছিলাম;হযরত ক্রোধপুর্ন অবস্থায় সভাস্থলে প্রবেশ করলেন এবং আসন গ্রহনান্তে বললেনঃআশ্চর্য হই ঐ সকল লোকদের জন্যে,যারা মনে করে যে,আমরা অদৃশ্য-জ্ঞানের অধিকারী অথচ মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারী নন।আমি চেয়েছিলাম আমরা দাসীকে ভর্তসনা করব কিন্তু সে পলায়ন করেছে এবং আমি জানিনা কোন কক্ষে গিয়েছে( এ হাদিসটির বিশ্লেষনে সুষ্পষ্ট হয় যে, এ বক্তব্যগুলো অবিশ্বস্ত লোকের উপস্থিতির ফলে ব্যক্ত হয়েছে।স্মরন রাখা উচিত যে, অদৃশ্যের জ্ঞান যা একমাত্র মহান আল্লাহরই আওতাধীন তার মানে হল সেই জ্ঞান যে জ্ঞান প্রশিক্ষনের উপর নির্ভর করে না।যেমনঃআলী(আঃ) এক ব্যক্তির এ প্রশ্নের জবাবে যে, ‘আপনি কি অদৃশ্য জ্ঞানের অধিকারি’?বলেছিলেনঃ বস্তুত তা জ্ঞানের মালিকের কাছ থেকে লাভ করা হয়।নতুবা সকল নবী এবং আল্লাহর অধিকাংশ ওলী,ওহী বা ইলহামের মাধ্যমে যে অদৃশ্য জ্ঞান তাঁদেরকে প্রদান করা হত তা অবগত ছিলেন।এগুলোর সুনিশ্চিত উদাহরন হলো সে অদৃশ্য সংবাদ যাহযরত মুসার(আঃ) মায়ের প্রতি ইলহাম করা হয়েছিলঃ “ নিশ্চয়ই আমরা তাহাকে তোমার নিকট প্রত্যাবর্তন করাবো এবং প্রেরিত পুরুষগনের মধ্যে তাকে অন্ত্ররভুক্ত করবো(সুরা কাসাস-৭)।

সুদাইর বলেনঃযখন হযরত ঘরের ভিতরে প্রবেশে উদ্যত হলেন,আমি আবু বাসীর এবং মাইসার,তাঁর সাথে গেলাম এবং সবিনয়ে নিবেদন করলামঃআমরা আপনার জন্য উৎসর্গ হব,দাসী সম্পর্কে আপনার অভিব্যক্তি আমরা অনুধাবন করেছি;আমরা বিশ্বাস করি যে,আপনি অপরিসীম জ্ঞানের অধিকারী।কিন্তু কখনোই আপনার অদৃশ্য জ্ঞানের ব্যাপারে দাবি করি না।

হযরত বললেনঃওহে সুদাইর তুমি কি কোরান পড়নি?বললামঃপড়েছি।তিনি বললেনঃএই আয়াতটি কি পড়নি?”কিতাবের জ্ঞান যার ছিল,সে বললো, ‘আপনি চোখের পলক ফেলার আগেই আমি তা আপনাকে এনে দিব”।জবাবে বললামঃআপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গ হোক,পড়েছি।তিনি বললেনঃ তুমি জান,ঐ ব্যক্তি কিতাবের জ্ঞানের কতটুকু অবহিত ছিল?জবাবে নিবেদন করলামঃ অনুগ্রহপুর্বক আপনিই বলুন।তিনি বললেনঃপ্রশান্ত সমুদ্রের এক বিন্দু পরিমান!অতপর বললেনঃএ আয়তটি কি পড়েছ? বলুন,আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে,তারা আমার এবং তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট”।বললাম ঃজ্বী হ্যা।পুনরায় তিনি বললেনঃযিনি সমস্ত কিতাবের জ্ঞান রাখেন তিনি অধিক জ্ঞানী,যা যিনি কিতাবের কিছু জ্ঞানের অধিকারী।বললামঃযিনি সমস্ত কিতাবের জ্ঞানের অধিকারী!

অতপর স্বীয় বক্ষের দিকে ইঙ্গিত করে ইমাম(আ বল্লেনঃ

আল্লাহর শপথ সমস্ত কিতাবের জ্ঞান আমাদের কাছে বিদ্যমান আল্লাহর শপথ সমস্ত কিতাবের জ্ঞান আমাদের নিকট বিদ্যমান(উসুলে কাফি,খ-১,পৃঃ২৫৭;দারুল কুতুবুল ইসলামীয়া অনুসারে)।

এখন আহলে বাইতের(আঃ) জ্ঞান প্রসঙ্গে বর্নিত রেওয়ায়েত থেকে আর একটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করব।

হযরত ইমাম রেজা(আঃ) ইমামতের বিস্তারিত ব্যাখ্যায় বলেছিলেনঃ যখন মহান আল্লাহ কাউকে(ইমাম রুপে) মানুষের জন্যে নির্বাচন করেন,তখন তাঁকে অন্তরের প্রশস্ততা প্রদান করেন,প্রজ্ঞার ঝর্নাধারা তার অন্তরে স্থাপন করেন এবং তার প্রতি জ্ঞান ইলহাম করেন যাতে কোন প্রশ্নের উত্তর প্রদানেই অক্ষমতা প্রকাশ না করেন এবং সত্যকে শনাক্তকরনে বিব্রত না হন।অতএব তিনি পবিত্র এবং আল্লাহর অনুগ্রহ,অনুমোদন ও রক্ষনাবেক্ষনে সকল প্রকার ভুল-ত্রুটি থেকে নিরাপদ থাকবেন।মহান আল্লাহ তাঁকে এ বৈশিষ্টগুলো দান করেন,যাতে তাঁর বান্দাদের জন্যে চুড়ান্ত প্রমান ও সাক্ষী হতে পারেনার এটি হলো মহান আল্লাহরই অনুগ্রহ,যা তিনি যাকে ইচ্ছা প্রদান করেন।

অতপর তিনি বললেনঃমানুষ কি এমন কাউকে শনাক্ত ও নির্বাচন করতে সক্ষম?তাদের মাধ্যমে নির্বাচিত ব্যক্তি কি এধরনের বৈশিষ্টের অধিকারী?(উসুলে কাফি,খ-১,পৃঃ-১৯৮-২০৩)।

এছাড়া হাসান ইবনে ইয়াহিয়া মাদায়েনী থেকে বর্নিত হয়েছে যে,ইমাম সাদিক(আঃ)এর নিকট সবিনয়ে নিবেদন করেছিলামঃ যখন ইমামের(আঃ) নিকট কোন প্রশ্ন করা হয়,তখন তিনি কিরুপে(কোন জ্ঞানের মাধ্যমে) এর জবাব প্রদান করেন?জবাবে বললেনঃকখনো কখনো তাঁর প্রতি ইলহাম হয়,কখনো কখনো তিনি ফেরেস্তা হতে শুনে থাকেন আবার কখনো বা উভয় প্রক্রিয়ায়(বিহারুল আনোয়ার,খ-২৬,পৃঃ৫৮)।

অপর এক রেওয়ায়েতে ইমাম সাদিক(আঃ) বলেনঃ যদি কোন ইমাম না জানেন যে তাঁর উপর কি সংকট আপতিত হবে,তার কর্ম কোথায় সম্পন্ন হবে,তবে সে ইমাম মানুষের জন্যে আল্লাহর হুজ্জাত হতে পারে না(উসুলে কাফি,খঃ-১,পৃঃ২৫৮)।

অনুরুপ ইমাম সাদিক(আঃ) দ্বরা আরো বর্নিত হয়েছেঃযখন ইমাম কোন কিছুকে অনুধাবন করতে চান,তখন মহান আল্লাহ তাঁকে তা অবহিত করেন(উসুলে কাফি,খঃ-১,পৃঃ২৫৮)।

এছাড়া একাধিক রেওয়ায়েতে ইমাম সাদিক(আঃ) থেকে বর্নিত হয়েছে যে,তিনি বলেনঃরুহ এমন এক সৃষ্টি,যা জিব্রাইল ও মিকাইল(আঃ) অপেক্ষা সমুন্নত।আর তা মহানবী(সাঃ) নিকট ছিল এবং তাঁর পরে ইমামগনের নিকট বিদ্যমান থেকে তাঁদেরকে সংরক্ষন করে(উসুলে কাফি,খঃ১,পৃঃ-২৭৩)।





ইমাম মাহদী(আঃ)

ভুমিকাঃ

আগের পাঠসমুহে প্রসঙ্গক্রমে আমরা দ্বাদশ ইমামের(আঃ) নাম সম্বলিত কয়েকটি হাদীসের উদ্বৃতি দিয়েছিলাম।এছাড়াও শিয়া ও সুন্নী উৎস থেকে এমন অসং্খ্য রেওয়ায়েত রয়েছে যেগুলোর কোন কোনটিতে মহানবী(সাঃ) থেকে শুধুমাত্র তাঁদের সংখ্যা বর্নিত হয়েছে।আবার কোন কোনটিতে এ কথাটিও সংযুক্ত আছে যে,তাঁদের সকলেই কোরাইশ বংশ থেকে।অপর কিছুতে আবার তাঁদের সং্খ্যাকে বনি ইস্ত্রিলের গোত্রপতিদের সমসংখ্যক বলে উল্লেখ করা হয়েছে।আবার কোন কোনটিতে বর্নিত হয়েছে যে, তাঁদের মধ্যে ৯জন,ইমামহোসাইনের(আঃ০ সন্তান।অতঃপর আহলে সুন্নাতের কোন কোন রেওয়ায়েত এবং শিয়া উৎস থেকে বর্নিত কোন কোন মুতাওয়াতির হাদিসে তাঁদের প্রত্যেকের নাম বর্নিত হয়েছে (মুনতাখাবুল আছার ফিল ইমামিছ ছানিয়া আশার,খঃ-৩,পৃঃ-১০-১৪০)।অনুরুপ শিয়া উৎস থেকে আরও অনেক হাদিসে আছে যাতে প্রত্যেক ইমামের(আঃ) ইমামত সম্পর্কে বর্ননা করা হয়েছে।তবে এ ক্ষুদ্র পরিসরে এগুলোর দৃষ্টান্ত তুলে ধরা সম্ভব নয়(বিহারুল আনোয়ার,গায়াতুল মারাম,ইসবাতুল হুদাহ ও অন্যনায় হাদিস গ্রন্থ)।



বিশ্বব্যাপি ঐশী শাসনব্যাবস্থাঃ

ইতোমধ্যেই আমরা জেনেছি যে,নবীগনের(আঃ) আবির্ভাবের মুল ও প্রধান উদ্দ্বেশ্য হল সচেতন ও স্বাধীনভাবে বিকাশ ও পুর্নতা লাভের জন্য উপযুক্ত ক্ষেত্র সৃষ্ট করা যা ওহীর মাধ্যমে মহান আল্লাহ মানুষের জন্যে বাস্তবায়ন করেছেন।এছাড়া অপর কিছু উদ্দেশ্যও ছিল যেগুলোর মধ্যে যোগ্য ব্যক্তির বুদ্বিবৃত্তিক বিকাশ,আত্নিক ও মানসিক পরিচর্যার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।সর্বোপরি মহান নবীগন(আঃ) খোদাভিরুতা ও ঐশী মুল্যবোধের ভিত্তিতে আদর্শ সমাজ প্রতিষ্টা এবং সারা বিশ্বময় ন্যা-নীতির বিস্তারে সচেষ্ট ছিলেন।আর এপথে তাঁদের প্রত্যেকেই যথাসম্ভব পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ নির্দিষ্ট ভৌগলিক অবস্থান ও কালে আল্লাহর ঐশী শাসনব্যবস্থার প্রবর্তনে সক্ষম হয়েছিলেন।কিন্তু তাঁদের কারও জন্যেই সমগ্র বিশ্বব্যাপী ঐশী শাসনব্যবস্থা প্রচলনের ক্ষেত্র প্রস্তুত ছিল না।

তবে উপযুক্ত ক্ষেত্র সৃষ্টি না হওয়ার অর্থ,নবীগনের(আঃ) জ্ঞান ও কার্যক্রমের সীমাবদ্বতা অথবা পরিচালনা ও নের্তৃ্ত্বের ক্ষেত্রে অক্ষমতা নয়।অনুরুপ নবীগনের(আঃ) আবির্ভাবের পশ্চাতে প্রভুর উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত হয়নি তা_ও নয়।কারন,ইতোপুর্বেও উল্লেখ করা হয়েছে যে,মানব সম্রদায়ের মুক্ত বিকাশ ও পুর্নতার ক্ষেত্র প্রস্তুর করাই হল আল্লাহর উদ্দেশ্য।যেমনটি পবিত্র কোরানেও বর্নিত হয়েছেঃ

“যাতে রাসুলগন আসার পর আলাহর বিরুদ্বে মানুষের কোন অভিযোগ না থাকে”(সুরা নিসা-১৬৫)।

সুতরাং সত্য ধর্ম গ্রহনে ও ঐশী নে্তৃবরগকে অনুসরনে বাধ্য করা মহান আল্লাহর উদ্দেশ্য নয়।ফলে উপরোক্ত আওচনার ভিত্তিতে বলা যায়,আল্লাহর মুল উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।

অপরদিকে মহান আল্লাহ ঐশী গ্রন্থসমুহে বিশ্বের সর্বত্র ঐশী হুকুমতের বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যাকে মানব সম্প্রদায়ের বৃহত্তর পরিসরে সত্য দ্বীন গ্রহনের ক্ষেত্র সম্পর্কে এক প্রকার ভবিষদ্বানী বলা যেতে পারে।যখন মানব সম্প্রদায় সকল প্রতিষ্টান ও সকল শাসন ব্যাবস্থা থেকে নিরাশ হয়ে পড়বে তখন সুনির্বাচিত ব্যক্তি ও ব্যক্তিসমষ্টির মাধ্যমে আল্লাহর অদৃশ্য সাহায্যে,বিশ্বময় ঐশী শাসনব্যাবস্থা প্রতিষ্টা করার পথ থেকে সকল প্রকার অন্তরায় ও প্রতিবন্দ্বকতা দূর করতঃ অত্যাচারিত,নিপিড়িত ও বঞ্ছিত মানবতার দ্বারে ন্যায় ও সুবিচার পৌছে দেয়া হবে।বলা যেতে পারে তখন সর্বশেষ নবীকে(সাঃ) প্রেরন এবং তাঁর বিশ্বজনীন ও চিরন্তন ধর্মের প্রবর্তনের পশ্চাতে আল্লাহর চুড়ান্ত উদ্দেশ্য সফল হবে।কারন তাঁর সম্পর্কেই বলা হয়েছেঃ

“ অপর সমস্ত দ্বীনের উপর জয়যুক্ত করার জন্যে............”(সুরা তাওবাহ-৩৩,ফাতহ-২৮,সাফ-৯,বিহারুল আনোয়ার,খ-৫১,পৃঃ৫০,খ-২২,পৃঃ৬০,খ-৫৮ ও ৫৯।)

“ইমামত হলো নবুওয়তের পরিসমাপক এবং খাতামিয়াতের পশ্চাতে হিকমাত স্বরুপ”-এর ভিত্তিতে এ উপসংহারে উপনীত হওয়া যায় যে,আল্লাহর উদ্দেশ্য সর্বশেষ ইমামের মাধ্যমেই বাস্তবরুপ লাভ করবে।আর এটি হল,সে বিষয় যা মুতাওয়াতির হাদিসসমুহে ইমাম মাহদি(আঃ)(আমাদের আত্না তাঁর জন্যে উৎসর্গ হোক)সম্পর্কে গুরুত্বসহকারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এখানে সর্বপ্রথমে এ ধরনের হুকুমতের সুসংবাদবাহী আয়াতসমুহকে পবিত্র কোরান থেকে উল্লেখ করবো।অতঃপর এ সম্প্ররকিত কিছু রেওয়ায়েতের প্রতি ইঙ্গিত করবো।

আল্লাহর প্রতিশ্রুতিঃ

মহান আল্লাহ পবিত্র কোরানে উল্লেখ করেছেনঃ

“নিঃসন্দেহে আমরা যাবুরে লিখেছিলাম,তাওরাতের পর ঃ’নিশ্চই আমার ন্যায়নিষ্ট দাসগন পৃথিবীর উত্তরাধিকার লাভ করবে’(সুরা আম্বিয়া-১০৫)।

সুরা আ’রাফের অপর এক আয়াতে(১২৮নং) হযরত মুসা(আঃ)থেকে বর্নিত হয়েছে যে,মুসা তার জাতিকে বললো, ‘ আল্লাহর দিকে ফিরো সাহায্যের জন্য এবং ধৈ্ররয ধর।পৃথিবীর মালিকানা আল্লাহর, এবং তিনি এর উত্তরাধিকার দেন যাকে তাঁর ইচ্ছা হয় তাঁর দাসদের মাঝ থেকে, এবং ফলাফল হবে খোদা সম্পর্কে সতর্কদের পক্ষেই’।

অপর এক স্থানে ফিরাউন,যে মানুষকে হীনবল করে রেখেছিল,তার কাহিনী উল্লেখ পুর্বক বলা হয়েছেঃ

‘আমি ইচ্ছা করলাম,সে দেশে যাদেরকে হীনবল করা হয়েছিল,তাদেরকে অনুগ্রহ করতে,তাদেরকে ইমাম বানাতে এবং তাদেরকে উত্তরাধিকারী বানাতে এবং তাদেরক দেশে প্রতিষ্টা করতে, এবং দেখাতে,ফেরাউনকে ও হামানকে এবং তাদের বাহিনীগুলোকে তাদেরই মাঝ থেকে যে বিষয়ে তারা ছিল শঙ্কিত’(সুরা ক্কাসাস-৫-৬)।

এই আয়াতটি বনি ইস্ত্রাইল সম্পর্কে এবং ফিরাউনের থাবা থেকে মুক্তি লাভের পর ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সম্পর্কে নাযিল হলেও ‘ আমি ইচ্ছা করলাম’ কথাটি আল্লাহর অব্যাহত ইচ্ছা বা ইরাদার ইঙ্গিত বহন করে।আর এ দৃষ্টিকোন থেকে অধিকাংশ হাদিস অনুযায়ী উল্লেখিত আয়াতটি ইমাম মাহদীর(আঃ)(আল্লাহ তাঁর আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করুন) আগমনের প্রতি ইঙ্গিত বহন করে বলে বর্নিত হয়েছে।

অপর এক স্থানে মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছেঃ

‘ তোমাদের মধ্যে যারা ইমান আনে ও সৎ্কর্ম করে আল্লাহ তাদেরকে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, তিনি তাদেরকে পৃথিবীর উত্তরাধিকারী বানাবেন,ঠীক যেভাবে তিনি বানিয়েছিলেন তাদের আগে যারা উত্তরাধিকারী ছিল এবং অবশ্যই তিনি তাদের জন্য প্রতিষ্টা করবেন তাদের ধর্মকে যা তিনি তাদের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন, এবং যে, তিনি তাদের অবস্থাকে অবশ্যই পরিবর্তন করে দিবেন তাদের ভয়ের পর নিরাপত্তায়, যখন তারা আমার ইবাদাত করে আমার প্রতি কোন অংশীদার আরোপ না করে এবং যে-ই এরপর অকৃতজ্ঞ হয় তারাই হলো যারা সীমালঙ্ঘনকারী’(সুরা নুর-৫৫)।

আর হাদিসে এসেছে যে, এ প্রতিশ্রুতি পরিপুর্ন দৃষ্টান্ত সহকারে হযরত মাহদীর (আঃ) ( আল্লাহ তাঁর আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করুন) সময় বাস্তব রুপ লাভ করবে(বিহারুল আনোয়ার,খঃ৫১,পৃঃ৫৮,খ-৫০,পৃঃ৫৪,খ-৩৪ ও ৩৫)।অনুরুপ অপর এক শ্রেনীর হাদিস,কিছু আয়াতানুসারে( যেমন বাকিয়াতুল্লাহ তোমাদের জন্য উত্তম,যদি তোমরা মু’মিন হও, ) হযরত মাহদীর(আঃ) প্রসঙ্গে নাজিল হয়েছে।সংক্ষিপ্ততা বজায় রাখার স্বররথে ঐগুলোর উল্লেখকরন থেকে বিরত থাকবো(বিহারুল আনোয়ার,খ-৫১,পৃঃ৪৪-৬৪)।

রেওয়ায়েতসমুহঃ

ইমাম মাহদীর(আঃ)(আল্লাহ তাঁর আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করুন) সম্পর্কে শিয়া এনং সুন্নি উৎস থেকে হযরত মহানবি(সাঃ) থেকে যে সকল হাদিস বর্নিত হয়েছে, সেগুলো মুতাওয়াতিরের সীমানা ছাড়িয়ে গেছে।আর শুধুমাত্র যে সকল হাদিস আহলে সুন্নাতের মাধ্যমে বর্নিত হয়েছে সেগুলোর সত্যতা স্বীকার করার ক্ষেত্রে তাদের নিজেদের আলেমদের সংখ্যাও তাওয়াতুরের পর্যায়ে পৌছেছে তাদের একদল আলেমের বিশ্বাস যে, ইমাম মাহদীর(আঃ)(আল্লাহ তাঁর আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করুন) ব্যাপারে ইসলামের সকল মাযহাব ও ফিরকার মধ্যে মতৈক্য বিদ্যমান( নাহজুল বালাঘাহ-ইবনে আবিল হাদিদ,খ-২,পৃঃ৫৩৫,সাবায়িকুয যাহাব সুবাইদি,পৃঃ৮৭,গায়াতুল মা’মুল,খ-৫,পৃঃ৩৬২)।আহলে সুন্নাতের কোন কোন আলেম ইমাম মাহদী(আঃ)(আল্লাহ তাঁর আবির্ভাবকে ত্বরান্বিত করুন) ও তাঁর আবির্ভাবের আলামত সম্পর্কে গ্রন্থও লিখেছেন(যেমনঃ ‘আল ব্যান ফি আখবারি সাহিবিয যামান’,৭ম শতাব্দীর হাফিয মুঃ বিন গাঞ্জী শাফিয়ী আল বুরহান ফি আলামাতুল মাহদী আখিরিয জামান ১০ম শতাব্দীর মুত্তাকি হিন্দী দ্বারা সংকলিত)।এখন আহলে সুন্নাত দ্বারা বর্নিত কিছু হাদিস তুলে ধরবো। উদাহরনস্বরুপঃমহানবী(সাঃ) থেকে কিছু হাদিস বর্নিত হয়েছে ঃ যদিও পৃথিবীর আয়ুস্কাল একদিনের বেশী অবশিষ্ট না থাকে তবু মহান আল্লাহ ঐ দিনটিকে এমন সুদীর্ঘ করবেন,যাতে আমার আহলে বাইতের মধ্য থেকে আমার নামের অনুরুপ নামধারী এক ব্যক্তি হুকুমত প্রতিষ্টা করবে( এবং পৃথিবীকে তদনুরুপ ন্যায়নীতিতে পুর্ন করবে যদনুরুপ অন্যায় ও অত্যাচারে পরিপুর্ন ছিল)( সহি তিরমিযি,খ-২,পৃঃ৪৬,সহি আবু দাউদ,খ-২,পৃঃ২০৭,মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বল,খ-১,পৃঃ৩৭৮,ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃঃ-১৮৬,২৫৮,৪৪০,৪৮৮,৪৯০)।

উম্মে সালাম থেকে বর্নিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসুল(সাঃ) বলেছেনঃ ‘ মাহদী আমার বংশধর থেকে এবং ফাতিমার সন্তানদের অন্তর্ভুক্ত( সহি মুসলিম,আবু দাউদ,নাসায়ী,ইবনে মাজাহ ও বায়হাকী,আসয়াফুর রাগিবিন,পৃঃ১৩৪)।

আর ইবনে আব্বাস থেকে বর্নিত হয়েছে যে, মহানবি(সাঃ) বলেছেনঃ নিশ্চই আলী আমার পর উম্মতের ইমাম এবং তাঁর সন্তানদের মধ্যে কায়িমুল মুনিতাযার(ইমাম মাহদী আঃ) থাকবে।যখন তাঁর আবির্ভাব হবে তখন তিনি পৃথিবীকে ঔরুপ ন্যায়নীতিতে পরিপুর্ন করবেন যেরুপ অন্যেয়ে পরিপুর্ন ছিল( ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃঃ-৪৯৪)।

লোকান্তর/গায়বাত ও এর গুঢ় রহস্যঃ

দ্বাদশ্তম ইমামের বিশেষত্বসমুহের মধ্যে তার লোকান্তরিত হওয়ার ঘটনাটি অন্যতম,যা শিয়া মাযহাব দ্বারা আহলে বাইত(আঃ) থেকে বর্নিত রেওয়ায়েতে গুরুত্ব সহকারে উল্লেখ করা হয়েছে।উদাহরনতঃ হযরত আব্দুল আযিম হাসানী,ইমাম মুহাম্মাদ ত্বাকী(আঃ) থেকে,যিনি তাঁর পুর্বসুরিগন(আঃ) থেকে এবং তাঁর পুর্বসুরিগন(আঃ) আমিরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) থেকে বর্ননা করেছেনঃ আমাদের উত্তরাধিকারী সুদীর্ঘ যময় লোকান্তরিত থাকবে,তখন আমাদের অনুসারীগনকে দেখতে পাবে ক্ষুদার্ত যেরুপ চারনভুমির সন্দ্বানে ব্যস্ত হয়ে পড়ে,সেরুপ তাঁর সন্দ্বানে রত থাকবে কিন্তু তাঁর সন্দ্বান পাবে না।জেনে রাখ,তাদের মধ্যে যে কেউ তার দ্বীনের উপর থাকবে এবং তার ইমামের লোকান্তরের সময় আপনন্তরকে কলুষতা মুক্ত রাখবে কিয়ামতের দিনে আমার সাথে আমার মর্যাদায় অবস্থান করবে।অতঃপর তিনি বলেনঃ যখন আমাদের উত্তরাধিকারী আত্নপ্রকাশ করবে তখন তার উপর অন্য কারো অশিকার বহাল থাকবে না( অর্থাৎ অত্যাচারী শাসকের কোন আধিপত্য তার উপর বহাল থাকবে না)।আর এ কারনে গোপনে তাঁর জন্ম হবে এবং লোকচক্ষুর অন্তরালে থাকবে( মুন্তাখাবুল আছার,পৃঃ২৫৫)।

অনুরুপ ইমাম সাজ্জাদ(আঃ) তাঁর পিতা থেকে এবং তাঁর পিতা(ইমাম হুসাইন আঃ) থেকে আমিরুল মু’মিনিন(আঃ) থেকে বর্ননা করেছেনঃ

“ আমাদের উত্তরাধিকারীর ২টি গায়বাত রয়েছে যার একটি অপরতী অপেক্ষা দীর্ঘ এবং শুধুমাত্র যারা দৃঢ় বিশাস ও সঠিক জ্ঞানের অধিকারী হবে তারাই তাঁর ইমামতের উপর বিদ্যমান থাকবে”( মুন্তাখাবুল আছার,পৃঃ২৫১)।

এখন আমরা গায়বাতের রহস্য সুষ্পষ্ট রুপে প্রতীয়মান হওয়ার জন্যে পবিত্র ইমামগনের(আঃ০ অতীত ঘতনার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ব করবো।

আমরা জানি যে, রাসুলের(সাঃ) পর অধিকাংশ মানুষ,১মে আবুবকরের কাছে অতঃপর ওমরের কাছে এবং তারপর ওসমানের কাছে বায়াত করেছিলেন।তবে ওসমানের শাসনকালের শেষ দিকে অন্যায় বৈষম্যের ফলে সৃষ্ট ব্যাপক দুর্নীতির কারনে জনগন বিদ্রোহী হয়ে তাকে হত্যা করতঃ আমিরুল মু’মিনিন আলীর(আঃ) নিকট আনুগত্য প্রকাশ করেছিল।

হযরত আলী(আঃ) যিনি মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসুল(সাঃ) দ্বারা মনোনীত খলিফা ছিলেন,তিনি আগের খলিফাত্রয়ের শাসনামলে নবীন ইসলামী সমাজের কল্যানার্থে নীরব ভুমিকা পালন করেছিলেন এবং শুধুমাত্র কর্তব্য ও দায়িত্ববোধ ছাড়া কোন অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেননি।এমতাবস্থায় ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যানে কোন পদক্ষেপ নিতেও কুন্ঠাবোধ করেননি।অপরদিকে তাঁর কয়েক বছরের শাসনামলে জঙ্গে জামালের যুদ্ব, সিফফিনের যুদ্ব ও খাওয়ারেদের(নাহ্রাওয়ান) সাথে যুদ্বে অতিবাহিত হয়েছে।অবশেষে খাওয়ারেজদেরই একজনের মাধ্যমে শাহাদাত বরন করেন।

অনুরুপ ইমাম হাসানও(আঃ) মুয়াবিয়ার নির্দেশে বিষাক্রান্ত হন এবং মুয়াবিয়ার মরনের পর পুত্র ইয়াযিদ,যে ইসলামের সুষ্পষ্ট নিয়মের প্রতিও ভ্রুক্ষেপ করতো না,যে-ও উমাইয়াদের সিংহাসনে আরোহন করে ।আর এভাবে ক্রমান্বয়ে ইসলামের কোন নাম ঠিকানাও অবশিষ্ট ছিল না।আর এ কারনে ইমাম হুসাইনের(আঃ) পক্ষে,এর বিরুদ্বে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া কোন উপায় ছিল না। তিনি নিজের নির্মম শাহাদাতের মাধ্যমে মুসলমানদের মধ্যে কিছুটা হলেও সাবধানতা ও সচেতনতা সৃষ্ট করেছিলেন এবং ইসলামকে বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন।তথাপি ইসলামের ন্যায়নীতিপুর্ন শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্টার জন্যে সামাজিক পরিবেশ রুপ পরিগ্রহ করেনি।ফলে অন্যান্য ইমামগন(আঃ) ইসলামের মৌলিক বিশ্বাসের সশতকরন,ইসলামের বিধিবিধান,জ্ঞান ও আত্নিক পরিচর্যাগত দিকের প্রচার ও প্রসার এবং যোগ্য ব্যক্তিদের আত্নিক পরিশুদ্বিকরনে মনোনিবেশ করেছিলেন।আবার অনুকুল পরিস্থিতিতে গোপনে জনগনকে অত্যাচারী ও স্বেচ্ছাচারিদের বিরুদ্বে সংগ্রামের জন্য আহবান করতেন।আর একই সাথে তাদেরকে বিশ্বব্যাপী ঐশী শাসনব্যবস্থার বিষয়ে আশাবাদী করে তুলতেন।অবশেষে তাঁরা পরম্পরায় শাহাদাত বরন করেছিলেন।

যা হোক পবিত্র ইমামগন(আঃ) আড়াই শতাব্দী ধরে অবর্ননীয় সমস্যা ও সং্কটের মধ্যেও ইসলামের প্রকৃত শিক্ষাকে মানুষের নিকট তুলে ধরতে পেরেছিলেন-কিছুটা সাধারনভাবে,আবার কিছুটা বিশেষভাবে বিশ্বস্ত অনুসারী ও একান্ত ব্যক্তিবর্গের জন্যে।আর এভাবেই ইসলামী শিক্ষা,সমাজের সর্বস্তরে প্রচার ও প্রসার লাভ করেছিল এবং মুহাম্মাদী শরীয়তের নিশ্চয়তা বিধিত হয়েছিল।একই সাথে ইসলামী দেশসমুহের কোন কোন অংশে অত্যাচারী শাসকবর্গের বিরুদ্বে কিছুটা হলেও অত্যাচার ও স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্বে রুখে দাড়াতে পেরেছিলেন।

চলবে......

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.