নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ব্লগে নিজেকে একজন পাঠক হিসেবে পরিচয় দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। যা সঠিক মনে করি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে, অবশ্যই দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে লিখতে চেষ্টা করি।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নতুন একটি মোড়ে প্রবেশ করেছে। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন শেষে পরিবর্তনের ফলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, এবং সামাজিক ক্ষেত্রে নানা পরিবর্তন আসতে পারে। সামনের দিনগুলোতে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কীভাবে গঠিত হতে পারে ?
১. অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রম ও চ্যালেঞ্জ
সরকার পরিবর্তনের পর সাধারণত একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করে, যার মূল লক্ষ্য হয় নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিশ্চিত করা। তবে তাদের সামনে কিছু বড় চ্যালেঞ্জ থাকবে—
(ক) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা
শাসন পরিবর্তনের ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও অশান্ত হতে পারে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
সরকারের প্রতি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিশ্চিত করতে হবে।
(খ) নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কার
নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা হতে পারে, যাতে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
সেনা মোতায়েন করা হবে কি না, সে বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য প্রয়োজন।
(গ) প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণ
দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসনে দলীয়করণ হয়েছে, সেটি দূর করতে উদ্যোগ নিতে হবে।
পুলিশের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা বাতিল করা হতে পারে।
সেনাবাহিনী ও অন্যান্য বাহিনীর ভূমিকা নিরপেক্ষ রাখতে হবে।
২. আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ রাজনীতি
সরকার থেকে বিদায় নেওয়ার পর আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে নীচের বিষয়গুলোর ওপর:
(ক) দলীয় পুনর্গঠন ও নেতৃত্ব পরিবর্তন
দীর্ঘ শাসনের ফলে দলীয় কাঠামো দুর্বল হয়ে পড়েছে।
শেখ হাসিনার পর দলের নেতৃত্ব কে নেবে, সেটি এখনো অনিশ্চিত।
নতুন নেতৃত্ব আসলে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না, তা দেখার বিষয়।
(খ) আওয়ামী লীগের অবস্থান
অনেকদিন পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নেবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।
সরকারের বিরুদ্ধে তারা কী ধরনের আন্দোলন করবে, সেটি তাদের কৌশলের ওপর নির্ভর করবে।
দলটি কি কঠোর আন্দোলনে যাবে, নাকি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় টিকে থাকার চেষ্টা করবে?
(গ) নতুন জোট গঠনের চেষ্টা
আওয়ামী লীগ বিকল্প শক্তিগুলোর সঙ্গে জোট গঠনের চেষ্টা করতে পারে।
জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট হতে পারে, যদিও এর সম্ভাবনা কম।
ওয়ার্কার্স পার্টি, জাসদের মতো বাম দলগুলোর সঙ্গে জোট গড়তে পারে।
৩. বিএনপির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ
আওয়ামী লীগের পতনের ফলে বিএনপি স্বাভাবিকভাবেই সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সুবিধা পাবে। তবে তাদের সামনে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে—
(ক) সরকার গঠনের সম্ভাবনা ও জোটের কৌশল
বিএনপি এককভাবে সরকার গঠন করতে পারবে কি না, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।
জামায়াত ও জাতীয় পার্টির সঙ্গে জোট হলে তাদের শক্তি বাড়বে।
তৃতীয় কোনো শক্তি যদি আবির্ভূত হয়, তাহলে বিএনপির ভোট ভাগ হয়ে যেতে পারে।
(খ) তারেক রহমানের ফেরা ও নেতৃত্ব
তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারবেন কি না, সেটি বড় প্রশ্ন।
যদি তিনি ফেরেন, তবে তার নেতৃত্ব জনগণের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে, তা ভাবার বিষয়।
যদি তারেক রহমান দেশে না ফেরেন, তাহলে বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে বিভক্তি দেখা দিতে পারে।
(গ) সরকারের সাথে সম্পর্ক ও নীতি নির্ধারণ
বিএনপি যদি সরকার গঠন করে, তবে তারা কি প্রতিশোধমূলক রাজনীতি করবে, নাকি সমঝোতার পথ নেবে?
প্রশাসনের ওপর তারা কেমন নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়?
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বজায় রাখবে কি না, সেটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হবে।
৪. জামায়াত-ই-ইসলামীর ভবিষ্যৎ
জামায়াত কি পুনরায় বৈধ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারবে?
তারা কি নতুন কোনো নামে রাজনীতি শুরু করবে?
ইসলামী রাজনীতির পুনর্জাগরণ কি সম্ভব?
৫. তৃতীয় শক্তির উত্থান
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে কোনো নতুন শক্তি গড়ে উঠবে কি না?
বিকল্পধারা, গণফোরাম বা নতুন কোনো দল কি নেতৃত্বের শূন্যতা পূরণ করতে পারবে?
বুদ্ধিজীবী ও সুশীল সমাজ কি কোনো বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি তৈরি করতে পারবে?
৬. সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা
যদি রাজনৈতিক অস্থিরতা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, তাহলে সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তবে আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে না। সেনাবাহিনী সম্ভবত "তত্ত্বাবধায়ক সরকার" বা "জাতীয় ঐক্য সরকার" গঠনের উদ্যোগ নিতে পারে।
৭. অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব
রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা না থাকলে বিনিয়োগ কমে যাবে।
ব্যবসা-বাণিজ্য সংকটে পড়তে পারে।
দুর্নীতি ও লুটপাট বন্ধ করা গেলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে সামাজিক স্থিতিশীলতা বাড়বে।
সংক্ষেপে ভবিষ্যতের চিত্র
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হতে পারে।
নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিএনপি বা নতুন কোনো শক্তি ক্ষমতায় আসতে পারে।
আওয়ামী লীগ পুনর্গঠিত হয়ে নতুন রাজনৈতিক কৌশল নিতে পারে।
সামরিক হস্তক্ষেপের আশঙ্কা থাকবে, তবে তা দীর্ঘস্থায়ী হবে না।
অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা থাকবে, তবে সুশাসন ফিরলে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
উপসংহার
২০২৫ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি মূলত নির্ভর করবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা, নির্বাচন ব্যবস্থার নিরপেক্ষতা, এবং জনগণের অংশগ্রহণের ওপর। যদি একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয়, তাহলে দেশ একটি নতুন রাজনৈতিক ধাপে প্রবেশ করতে পারে। কিন্তু যদি সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা বৃদ্ধি পায়, তাহলে রাজনৈতিক অচলাবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে।
এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪৫
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: আপনার সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।
লিখাটি পড়েছেন, অতঃপর ভালোলাগা জানিয়ে প্রথম মন্তব্য ও লাইক দিয়ে অনুপ্রাণিত করার জন্য
অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা!
২| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০২
কামাল১৮ বলেছেন: দ্রুত নির্বাচন দেয়াই দেশের জন্য মঙ্গল।কিন্তু এই মতলববাজ সরকার তা করবে না।এরা দেশে একটা অশান্তি লাগিয়ে ছাড়বে।এরা গৃহযুদ্ধের পায়তারা করছে।
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:১৮
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: পরিপূর্ণ গণতন্ত্র ছাড়া এ জাতির মুক্তি নাই। যারা এতদিন গণতন্ত্রের কথা বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলতো তারা মনে হয়ে এখন গণতন্ত্রের কথা ভুলে গেছে! কেউ কেউ নির্বাচনকেই মনে হয় মহাপাপ বিবেচনা করছে!
৩| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:০৯
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: কামাল১৮@ফারুক খানের স্টাটাস আসল নাকি নকল?
০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:২০
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: ফারুক খানের স্টাটাস আসল নাকি নকল? এটা আমাদের পক্ষে বুঝা মুশকিল, আমার ব্যাক্তিগত মত হচ্ছে উনার আইডি হ্যাক করে এটা কেউ করে থাকতে পারে।
৪| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৯:৩৮
শায়মা বলেছেন: আমার কাছে এখন মনে হয় সব কিছুই হ য ব র ল
৫| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১১:৫৮
কামাল১৮ বলেছেন: @ কুতুব,ফারুক খান কে?তার স্টাটাসই বা কি?
৬| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৫৮
দারুচিনি পাতা বলেছেন: ভাল লিখেছেন৷ধন্যবাদ।
ছাত্র আন্দোলন থেকে আসা নতুন কোন দলের সেইরকম গ্রহণযোগ্যতা শুরুতে হবে না আমার ধারণা। রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের একদম গোড়া থেকে শুরু করতে হবে। সময় লাগবে - সামনের নির্বাচনে একটা/দুইটা এর বেশি আসনে লড়বার ক্ষমতা নাই বলেই আমার ধারণা।
আর সরকার আসলে এই মুহূর্তে একদম টালমাটাল। এই অবস্থা হওয়ার কথা ছিল না, কারণ জনগণের সাপোর্ট ছিল শুরুতে। নিজেদের দোষেই লেজেগোবরে করে ফেলছে। হয়তো বলতে পারেন, আরো সময় দিতে- কিন্তু ৬ মাস একেবারে কম সময় না, আর যতই দিন যাচ্ছে নিজেরাই খেই হারিয়ে ফেলছে। সময় বসে থাকে না, বিনিয়োগ বসে থাকেনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া নিমিষেই গিলে নেবে আমাদের সব বিনিয়োগ, আর তৈরীপোষাক থেকে সব শিল্প। বিদেশী বিনিয়োগকারী কারোরই ঠেকা পড়ে নাই, কবে আমাদের রাজনৈতিক স্থিরতা ফিরবে তার জন্যে বসে থাকবে। কাজেই যত দ্রুত স্থিতিশীলতা ফিরবে ততই মঙ্গল।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ রাত ৮:৪০
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: যত সময় যাবে আন্দোলন তত বাড়বে। পুরো বছর অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাবে।