নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

এত দূর্যোগের মধ্যেও দেশের উন্নয়নের অগ্রগতি কিভাবে সম্ভব!!!

০৯ ই জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩১



এ মুহূর্তে বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং আমাদের রফতানি আয় ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এখন বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ৭ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে এবং খাদ্যশস্য উৎপাদনে আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ, বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানির কোন প্রয়োজন নেই। এমনি একটি আর্থ-সামাজিক ভিত্তির ওপর আমাদের এবারের বাজেট (২০১৩-১৪) হলো দুই লাখ ২২ হাজার ৮৯১ কোটি টাকা এবং টোটাল বাজেটের শিক্ষা খাতে ১১ দশমিক ৩ শতাংশ, যোগাযোগ খাতে ৯ শতাংশ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন খাতে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কৃষি খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৩ দশমিক ৬ শতাংশ এবং স্বাস্থ্য খাতে ৪ দশমিক ১ শতাংশ।

একটা কথা আছে আমাদের বুদ্ধিজীবীরা দেশকে পেছনে টানেন আর কৃষক-শ্রমিক-সাধারণ মানুষ দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। এবারের বাজেটকেও হয়ত আমাদের বুদ্ধিজীবীগণ বলবেন- বাজেট, হ্যাঁ, হয়েছে এক রকম। তবে বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য হবে। মানুষ সুফল পাবে না। কথায় আছে না ‘যারে দেখতে নারী তার চলন বাঁকা।’ এরই মধ্যে পেছনে শেলফে এক গাদা বইয়ের সামনে ক্যামেরায় পোজ মেরে কেউ হয়ত বলেই দিয়েছেন বাস্তবায়ন দুঃসাধ্য হবে। বিএনপির এম কে আনোয়ার ব্যারিস্টার মওদুদকে পাশে বসিয়ে (সময় টিভি) বললেন, বাজেটের আকার অনেক বড় তা বলা যাবে না কারণ আমাদের প্রয়োজনই অনেক বড়। তবে প্রশাসনিক দুর্বলতা ও দুর্নীতির কারণে এর কতখানি বাস্তবায়ন করা যাবে সেটাই প্রশ্ন!

যারা এতদিন হতাশার বাণী শোনাচ্ছিলেন, কথায় কথায় যাকে- তাকে নষ্ট-ভ্রষ্ট-নাস্তিক, ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচারী, গণতন্ত্র হত্যাকারী বলে বর্তমান সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছিলেন তাদের জন্য রয়েছে হতাশার বাণী-‘আপনারা যাই বলুন, যে যা বলুক, দেশের অগ্রগতি ঠেকানো যাবে না, ঠিক তেমনি আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার রাস্তাও প্রশস্তই থাকবে।’ এই যেমন আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার কেউ কেউ বলবেন এটি জমেছে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আছে বলেই কালই আমরা পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করতে পারব, বিদ্যুত খাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে গোটা গ্রামীণ বাংলাকে আলোকিত করতে পারব। বস্তুত যারা হতাশার বাণী শোনান তাঁরা হলেন যারা ক্ষমতায় এলে খাদ্য, বিদ্যুত উৎপাদন কমে যায়, তাদের পক্ষের ভাড়াটে বুদ্ধিজীবী। এই যেমন খালেদা জিয়ার বিগত সরকারের সময় খাদ্য ঘাটতি ছিল প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন, আর এখন নেই; খালেদা জিয়ার বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট, আজ ৭ হাজার মেগাওয়াটের ওপরে যে কারণে মানুষ বলে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এলে দেশ পেছনে যায় আর শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এলে দেশ সামনে এগিয়ে যায়, এখন যেমন এগিয়ে চলেছে।

অবশ্য আনু মুহম্মদ-শহীদুল্লারা কোন কিছুতেই আমার কিছু দেখেন না। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের তরুণরা সামনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভবিষ্যত উন্নত বাংলাদেশে দেখে, দেখেন না শুধু আমাদের কতিপয় বুদ্ধিজীবী-শিক্ষক-সাংবাদিক নামধারীরা। আনু মুহম্মদকে প্রায়ই কুইক রেন্টাল বিদ্যুত উৎপাদনের বিরুদ্ধে কথা বলতে শুনি। আমরাও মনে করি কাপ্তাইর মতো পর্যাপ্তসংখ্যক এমনি জলবিদ্যুত প্রকল্প করতে পারলে আমাদের অনেক বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হতো। কিন্তু বিএনপি ২০০১-২০০৬ মেয়াদের যে জায়গায় বিদ্যুতকে রেখে গেলেন তা থেকে তুলে আনতে গেলে যে একটু বেশি খরচ করতে হয় বা ল্যাভিশলি বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে তা আনু মিয়াদের মাথায় ঢোকে না। রোগ যখন গুরুতর তখন বড় ডাক্তার নিয়োগ এবং প্রয়োজনে সিঙ্গাপুর-ব্যাঙ্কক-ভারত যে পাঠাতে হয় তা তারা অস্বীকার করবেন কি করে!

বাজেট বাস্তবায়নে যারা প্রশাসনিক দুর্নীতি দুর্বলতা দেখতে পান। অর্থাৎ তারা পদ্মা সেতু, হলমার্ক, ডেসটিনির দুর্নীতির উল্লেখ করতে চান। আমি এ ব্যাপারে দ্বিমত করব না। তবে একটা বিষয় অবশ্যই বলব পদ্মা সেতু দুর্নীতি আজও প্রমাণিত হয়নি। কোন এক ব্যক্তির ডায়েরিতে আমাদের দেশের কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে তাতেই বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধ করে দিয়েছে। অথচ ডায়েরির সেসব নামের মানুষরা কমিশন বা ঘুষ খেয়েছে এমন কোন তথ্য আজও আমরা জানতে পারিনি। অথচ তারা দুর্নীতি আবিষ্কার করলেন আর আমাদের বিরোধী নেত্রী ও তার সাঙ্গোপাঙ্গরা দুর্নীতির ঢ্যারা পেটাতে শুরু করলেন। জামায়াতীরা মিলিয়ন মিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করে বিদেশে লোক ভাড়া করে এবং কিছু মিডিয়াকে মাল খাইয়ে দুর্নীতির খবর ছাপিয়েছে। আমাদের সাহসী প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও ওইসব ষড়যন্ত্রকে তোয়াক্কা না করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করার জন্য এবারের বাজেটে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে অচিরেই টেন্ডার ইত্যাদি প্রক্রিয়া শেষ করে কাজ শুরু হবে।

এটাও দেখতে হবে যখনই পদ্মা সেতু দুর্নীতির কথা ওঠে সঙ্গে সঙ্গে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে শেখ হাসিনা যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দিয়েছেন, হলমার্ক এবং ডেসটিনির মালিকের বিরুদ্ধে গ্রেফতারসহ ব্যবস্থা নিয়েছেন। আমাদের সেই সব মধ্যরাতের গলাজীবীরা এসব কিন্তু দেখেন না। খালেদা জিয়ার গুণধর পুত্র সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়াটির ভাষায় ‘কষবঢ়ঃড়পৎধঃরপ’ অর্থাৎ ‘চরম চৌর্যোন্মাদ’ তারেক রহমানের দুর্নীতির কথা তো খালেদা জিয়ার সময়ই দেশে-বিদেশে উত্থাপিত হয়েছিল, খালেদা জিয়া কি কোন ব্যবস্থা নিয়েছিলেন? নেবেন কি করে, নিজেই যে ফাইন দিয়ে কালো টাকা সাদা করে প্রমাণ করেছেন তিনি তারেক রহমানের মা আর তারেক রহমান তার পুত্র। তাদের মতো পুত্রের মনোজগত এভাবেই গড়ে উঠেছিল। আমি একটা কথা বলি দুর্নীতি যে-ই করুক তার সাজা হওয়া উচিত, সে যদি আমার অতি আপনজনও হয়। কেননা, দুর্নীতিগ্রস্ত সমাজের অগ্রগতি শ্লথ হয়ে যায়। আমি মনে করি যে কোন দেশপ্রেমিক মানুষ তা-ই বিশ্বাস করে। কিন্তু একটা কথা অবশ্যই বলব, হাওয়া ভবন-খোয়াব ভবন দুর্নীতিকে যে স্তরে তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন তার তুলনায় পদ্মা সেতু (যা এখনও প্রমাণিত হয়নি) শেয়ার মার্কেটÑহলমার্ক- ডেসটিনির দুর্নীতি স্রেফ নস্যি।

প্রশাসনে দুর্নীতির ২টি চেহারা আছেÑ একটি হলো প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে ২-৫ টাকা দিয়ে মাখনটা তুলে নেন, অপরটি হলো প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্ষমতাসীন দলের বিরোধী কর্মচারীরা ফাইল আটকে টাকা ছিটিয়ে দুর্নীতি করে, তাদের উদ্দেশ্য হলো ক্ষমতাসীন দলকে জনসমক্ষে হেয়প্রতিপন্ন করা। এ শ্রেণীর প্রশাসনিক কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রামীণ প্রশাসনে বড় বেশি ফুরফুরে মেজাজে কাজগুলো করে। গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন বা অবস্থা দেখলে সহজেই ধরা পড়বে। এরা জামায়াত-শিবির বিএনপি-ছাত্রদল। এরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের অবৈধ কাজগুলো সহজেই করে দেয়, সরকারের গায়ে কালো দাগ লাগানোর জন্য। আর এদের ফাঁদে পা দেয় লোভী-অপদার্থ ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। অর্থাৎ তারা দলের ও সরকারের ভবিষ্যতের চেয়ে ‘নগদ নারায়ণে’ বিশ্বাস করে। বিশেষ করে যেসব ‘মহাচোর’ এদিক-ওদিক পয়সা ছিটিয়ে দলে ঢুকে পড়েছে এবং দলের নমিনেশন চেয়েও ব্যর্থ হচ্ছে তখন ‘আমিও গেছি তরেও খাইছি’ নীতি অবলম্বন করে। এক্ষেত্রে তারা নির্বাচনে সরাসরি দলের বিরুদ্ধে চলে গিয়ে ধানের শীষে ভোট দেয়ায়। এসব মহাচোর টাকাওয়ালা মনে করে টাকা নিয়ে দেশের পদবি, নমিনেশন, সব কেনা যায়। প্রশাসনে যেসব মুক্তিযোদ্ধা সন্তান বা ছাত্রলীগ ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছেন তাদের দিয়ে যখন চুরি-চামারি করাতে পারে না, তখন কোন মন্ত্রীর ডিও লেটারে তাদের ‘রাজাকার’ বলে শাস্তিমূলক বদলি করায়। কোন দুর্নীতিবাজ কর্মচারীকে প্রশাসন বদলি করলে কদিন পরই আবার ফিরে আসে। তবে হ্যাঁ, এসব দুর্নীতি অতীতেও ছিল, এখনও আছে এবং ভবিষ্যতেও যে একেবারে ক্লিন হয়ে যাবে তা কিন্তু বলা যাবে না। এদের মোকাবেলা করেই বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে, চলবে।

আমি জানি না অন্যান্য দেশে বাজেট দিলে জিনিসপত্রের দাম বাড়ে কি-না। আমাদের দেশে বাড়ে। একটা গল্প আছে, একবার সরকার তেলের দাম বাড়িয়েছে। এক যাত্রী একটা প্যাডেল অফিস যাওয়ার জন্য এক রিক্সার চালককে বললেন, অমুক জাগায় যাবেন? রিক্সাওয়ালা রাজি হলেন ঠিকই তবে বললেন ভাড়া বেশি লাগবে। যাত্রী জানতে চাইলেন হঠাৎ ভাড়া বেশি হবার কারণ কি? রিক্সাওয়ালা উত্তরে বললেন, সরকার যে তেলের দাম বাড়িয়েছেন তা-ই। যাত্রী আর কোন কথা বললেন না। কাওরান বাজারে এক পাল্লা (৫ কেজি) করল্লার দাম ৬০-৭০ টাকা হলে শান্তিনগর বাজারে এসে তা প্রতিকেজিই ৩০-৩৫ টাকাÑ এর জবাব কি? যে দেশে মানুষ খাবারের সঙ্গে ফরমালিনের মতো বিষ মেশায়, কারবাইডের মতো বিষ দিয়ে ফল-ফলাদি পাকায় এবং এজন্য তাদের মধ্যে কোন অপরাধ বোধ নেই। যে দেশের মানুষ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে এত দুর্বল, এককথায় যে দেশে এত খারাপ মানুষ বাস করে, সে দেশে প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের ওপরে, মূল্যস্ফীতি ৮-এর ঘরে, আমি মনে করি তা আমাদের ভাগ্যের ব্যাপার। আমি এ হার সমর্থন করছি না। বরং আমি মনে করি, আমাদের জিডিপি হওয়া উচিত ছিল আগামী বছরে ৮ শতাংশের ওপরে টার্গেট করে এবার ৭ শতাংশের ওপরে। তাহলেই আমরা ২০২১ সালের আগেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে পারতাম। তবে এখনও আশাবাদী।

হতাশ মানুষ নিয়ে দেশ, জাতি কারোই কিছু হয় না। এদিক থেকে বিএনপি-জামায়াত গোষ্ঠী চরমভাবে হতাশাগ্রস্ত এবং এই চরম হতাশাগ্রস্তদের মানুষ কেন ভোট দেবে? মানুষত ভোট দেয় তাকে তার স্বপ্নের ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাবার জন্য। আর হতাশাগ্রস্ত মানুষ কোন আশার আলো দেখতে পায় না। অথচ আজকের ঢাকা শহরকে দেখলে কার না আশা জাগবে? এই যেমন দেখুন না, বিএনপি হাতিরঝিলে গিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রমোদ ভ্রমণ করে তবু তাদের মধ্যে কোন আশার জন্ম নেয় না। যদি কেউ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শহরের দিকে আসেন তিনি দেখবেন কিভাবে উড়াল সেতুগুলো একটি মিরপুরের দিকে আরেকটি কুড়িলের দিকে হাত-পা ছড়িয়ে চলে গেছে, কিভাবে ক্যান্টনমেন্ট রেলক্রসিংয়ে এখন আর গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না, বাংলামোটর থেকে মগবাজার-মালিবাগের মোড়, কিংবা ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে গুলিস্তান-সায়েদাবাদ-যাত্রাবাড়ী নিচে ফেলে শনিরআখড়া পর্যন্ত যে উড়াল সেতুর নির্মাণ কাজ চলছে রাতদিন এবং যেদিন এগুলো উদ্বোধন হবে সেদিন কেমন দেখাবে আমাদের এই ঢাকা শহরকে! হাতিরঝিলের কথা বহুবার বলেছি।

এসবই হয়েছে শেখ হাসিনার সরকারের অতীতের উচ্চাভিলাষী বাজেটের ফলেই। বাংলাদেশের সাহসী ইংরেজী দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ (জুন ৭, ২০১৩) এবারের বাজেটকে বলেছেন ‘ল্যাভিশ’ (ষধারংয), অর্থাৎ অবাধ ব্যয়ের বাজেট এবং এই ‘ল্যাভিশ’ বা অবাধ ব্যয় কিভাবে করবেন, তেমন পরিকল্পনা দুর্বল। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ইওউঝ) মহাপরিচালক ড. মোস্তফা কামাল মুজেরী বলেছেন,Ñ ‘উচ্চাভিলাষী’। হ্যাঁ, বাজেট তো উচ্চাভিলাষী এবং ল্যাভিশই হতে হবে।’ ‘ল্যাভিশ’ এবং ‘উচ্চাভিলাষ’ শব্দ দুটি কেবল সাহসী মানুষেরই শোভা পায়। ‘চ্যালেঞ্জও’ সাহসী মানুষ গ্রহণ করতে পারে এবং বাংলাদেশে গত তিন দশক ধরে শেখ হাসিনা তা প্রমাণ করেছেন। ‘ল্যাভিশ’ বা ‘উচ্চাভিলাষী’ বা ‘চ্যালেঞ্জিং না হলে কি বিশ্ব অর্থনীতির মোড়ল বিশ্বব্যাংকের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে পদ্মা সেতুতে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করতে পারতেন! সাহসী বলেই কাজও শুরু করবেন। শেখ হাসিনা সাহসী বলেই এ মেয়াদেও ৫০ লাখ টন খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, ১০% দারিদ্র্য হ্রাস এবং সবাইকে তাক লাগিয়ে ২৬ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ ও এক লাখ ৪ হাজার শিক্ষককে সরকারীকরণ করেছেন। এ মেরুদ- তো আর কারও মধ্যে দেখলাম না। যারা দুর্বল তারা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে পারে না।

এই দুর্বলদের কথা বেশ সুন্দর উপমা দিয়ে বলেছেন দৈনিক জনকণ্ঠের কার্যনির্বাহী সম্পাদক প্রখ্যাত কলামিস্ট স্বদেশ রায়। গত বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠে ‘নন্দলালদের মোহ থেকে মুক্তি কবে’ শিরোনামে যে উপ-সম্পাদকীয় স্বদেশ রায় তাতে ডিএল রায়ের সেই নন্দলালের বেঁচে থাকার কথা মনে করিয়ে দিলেন। ‘নন্দলাল দেশ সেবা করতে চেয়েছেন। কিন্তু দেশ সেবা করতে হলে যে পথে নামতে হবে, আর পথে নামলে সর্পম দংশন, কুকুরের আক্রমণ এবং গাড়ি চাপা পড়ার শঙ্কা থাকে। কাজেই রাস্তায় নামা যাবে না। নন্দলাল ঘরেই শুয়ে জীবন বাঁচালেন, তাকে যে বেঁচে থাকতে হবে। পাছে মারা গেলে অভাগা দেশটির কী হবে? ‘স্বদেশ রায়কে ধন্যবাদ আমাদের দেশের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার জন্য। প্রত্যেকটি বাজেটের পরই আমরা নন্দলালদের মুখে একই হতাশার কথা শুনে আসছি। কিন্তু দেশবাসী তাদের কথা এতটুকু গ্রাহ্য না করে এগিয়ে গেছে। নন্দলালরা হতাশার বাণী শোনায় আর শেখ হাসিনা জাতিকে স্বপ্ন দেখান, জনগণ তা বাস্তবায়ন করে আশার আলো দেখান।

আমাদের বন্ধু শামসুদ্দিন পেয়ারা (অর্থনীতির ছাত্র এবং সাংবাদিক সম্প্রতি তাঁর একটি গবেষণা কাজে গ্রামবাংলা ঘুরে এসে প্রেসক্লাবের আড্ডায় বললেন, ‘দেশব্যাপী প্রতি ৬ হাজার মানুষের জন্য একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে যেভাবে গ্রামীণ হতদরিদ্র, দরিদ্র, নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেয়া হচ্ছে তাতে করে গ্রামবাংলায় বিপ্লব ঘটে গেছে এবং এই একটি মাত্র কর্মসূচীর জন্যই একটি সরকারের পরবর্তী নির্বাচনেও জয়লাভের জন্য যথেষ্ট।’ আমি প্রায়ই বলি আগামী নির্বাচনেও মহাজোট জয়লাভ করবে এবং শেখ হাসিনা আবারও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তথাকথিত বুদ্ধিজীবী-সাংবাদিক নামের নন্দলালরা যতই শেখ হাসিনার জন্য আগামী নির্বাচন ঝুঁকিপূর্ণ বলুন না কেন, শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিতে জানেন এবং তা থেকে উত্তরণের ক্ষমতাও শেখ হাসিনার মধ্যে রয়েছেÑ আর কারও মধ্যে নয়।

শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না বলেই জাতির জনকের হত্যার বিচার শেষ করে জাতিকে পাপমুক্ত করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছেন, এরই মধ্যে কয়েকজনের ফাঁসির রায়ও হয়ে গেছে, বাকিদেরও বিচার চলছে। শেখ হাসিনা ঝুঁকি নেন বলেই শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চকে সাহস যোগাতে পারেন। আবার ধর্মবিরোধী লেখা ব্লগে প্রচার করার অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদের গ্রেফতারও করতে পারেন, কোন্টা সত্য কোন্টা মিথ্যা তাঁর নির্দেশে তা অনুসন্ধানের কাজও চলছে। শেখ হাসিনা ঝুঁকি নিতে পারেন বলেই মাত্র ১০ মিনিটের অভিযানে হেজাবীদের (হেফাজত+জামায়াত+বিএনপি=হেজাবী-মুনতাসীর মামুনের দেয়া নাম) শাপলা চত্বর থেকে চলে যেতে বাধ্য করেছেন। শেখ হাসিনা সাহসী বলেই প্রথমবার সরকার গঠন করেই (১৯৯৬-২০০১) মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, বিনা মডগেজে কৃষি ঋণ এবং ১০ টাকায় ব্যাংক এ্যাকাউন্ট খোলা প্রভৃতি সামাজিক খাতের বাজেট বরাদ্দের কারণে গ্রামবাংলায় অর্থনৈতিক প্রাণচাঞ্চল্য এবং বিপ্লব ঘটে গেছে। গ্রামবাংলায় আজ আর কোন অভাব নেই। একজন ক্ষেতমজুর একদিন কাজ করে ৪-৫শ’ টাকা পান, অর্থাৎ ক্ষেতমজুরের রোজ ৪ থেকে ৫শ’ টাকা। তেমনি গ্রামের একজন নির্মাণকর্মী বা কাঠমিস্ত্রি দৈনিক ৬ থেকে ৮শ’ টাকা, এক রিক্সাচালক দিনে ৮শ’ থেকে এক হাজার টাকা রোজগার করে। যারা মূল্যস্ফীতি নিয়ে চিৎকার করেন তারা এগুলো ভাবেন না, হয় বাংলাদেশ চেনেন বইয়ের পাতায় নয়ত কথা বলেন মতলবে। পক্ষান্তরে আগামী নির্বাচনে যে এক কোটি নতুন তরুণ ভোটার তারা কেউ নন্দলালও নয়, মতলবিও নয়- তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ এবং সাহসী।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.