নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মব্যবসার কাছে রাজনীতি ও উন্নয়নের পরাজয়

২০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ৮:১৬



চার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ধর্মীয় কার্ডের কাছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষ শক্তি হেরে গেছে। এই হেরে যাবার কারণ ইতোমধ্যে অনেক বিশ্লেষণ হয়েছে। যার মধ্যে সব থেকে বড় হয়ে দেখা দিয়েছে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক দুর্বলতা। নেতাদের সঙ্গে কর্মীর দূরত্ব। প্রচারে পিছিয়ে থাকা। অপপ্রচারকে রুখতে না পারা। সিভিল সোসাইটির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়া। ধর্র্মীয় কার্ডকে তোষামোদ করব না মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবিচল থাকব এ নিয়ে দোদুল্যমানতা। এমনি অনেক বিশ্লেষণ এসেছে।

এগুলোকে কাটিয়ে ওঠার জন্য কী করতে হবে সেটা আওয়ামী লীগের ও চৌদ্দ দলের বা সামগ্রিকভাবে মহাজোটের বিষয়। কিন্তু দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষের জন্য শুধু নয়, গোটা দেশের জন্য, প্রগতির জন্য সব থেকে ভয়াবহ হলো, এবার রাজনীতিতে ধর্মীয় কার্ড যেভাবে এসেছে এমনটি ১৯৪৭ সালেও আসেনি, ১৯৭১ সালেও আসেনি। এমনকি প্রতিটি নির্বাচনের আগে বিএনপি ও তার জোট ধর্মীয় স্লোগান তোলে কিন্তু তাও এতটা ভয়ঙ্কর নয়। আমরা যদি ১৯৪৭ থেকে আজ অবধির ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তাহলে বলা যায় এবার রাজনীতিতে ধর্মীয় ব্যবসাটা অনেক ভয়াবহভাবে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পরিণতি এখন স্পষ্ট। যদি এইভাবে এই ধর্ম ব্যবসা বা ধর্মীয় কার্ডকে রাজনীতির উপজীব্য করা হয়। এবং সেটা ব্যবহৃত হয় আগামী নির্বাচনে। দেশের সচেতন মহল যদি এখনই এটাকে বাধা না দেয়। নিষিদ্ধ না করে। তাহলে আগামী দিনে রাজনীতিবিদদের হাতে কোন রাজনীতি থাকবে না। ধর্মব্যবসায়ীদের কাছে সব কিছু চলে যাবে। তার পরিণতি কি সেটা আফগানিস্তানের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা বুঝতে পারি। তবে এটা বলা যায়, সাহস করে এখন এই ধর্ম ব্যবসায়ীদের বাধা দেবার মনে হয় কেউ নেই। বরং অনেক সময় শঙ্কিত হই যখন দেখি ভারতে অনেক প্রগতিশীলতার নামধারী পত্রিকা নরেদ্র মোদির প্রশংসা করে। আমাদের এখানেও কিন্তু বর্তমান তার ব্যতিক্রম নেই।

তবে এই নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগের অন্য যে যাই বলুক দু’ জনের মন্তব্য আমার কাছে ভালো লেগেছে। এক, ওবায়দুল কাদের। দুই, আবুল মাল আবদুল মুুহিত। ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সরকারের জন্য একটি সতর্কবার্তা। আর আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন অশনি সঙ্কেত। দুটোর ভিতর সামান্য পার্থক্য আছে। আবার বেশ বড় পার্থক্যও এখান থেকে বের করা যায়। কিন্তু সেই সব বিচারে না গিয়ে বলব, যেহেতু বর্তমান সরকার বলতে দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। তাই তারা যেন ওবায়দুল কাদেরের কথাটাকে অন্তত গুরুত্ব দেয়। কারণ, যদিও এই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল তাদের আরও আগে। কিন্তু তারপরেও আগামী নির্বাচন সামনে করে তাদের সামনে যে সময়টুকু আছে এর প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগিয়ে তারা সতর্ক হতে পারে। যে সব বিশ্লেষণ এসেছে এগুলো শুধু নয়, এখন যত দ্রুত সম্ভব তাদের চুলচেরা বিশ্লেষণ করে এগুতে হবে। যার জন্য প্রথম ও প্রধান কাজ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ও মহাজোটের ভিতর সকল ভুল ভ্রান্তি ভুলে একটা অনড় ঐক্য। আর এরই সমান গুরুত্ব দিতে হবে, আওয়ামী লীগের ভিতরের এই দলীয় কোন্দল। কেন নির্বাচনের সবখানে দল সঠিকভাবে নামল না? কেন সব জায়গাতে দল ঠিকমতো নামেনি এর অনেক কিছু হয়ত পেশাগত কারণে আমরা জানি। কিন্তু সে সব কথা লেখা আমাদের দায়িত্ব নয়, এগুলো দলের থেকেই খুঁজে বের করতে হবে। কারণ, এখন সব থেকে বড় বিষয়টি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে এখন রাজনীতি পরাজিত হবে কিনা ধর্মব্যবসার কাছে?

বাংলাদেশের রাজনীতি একটি সুস্থ ও সুন্দর লক্ষ্যে এগিয়েছিল। কিন্তু ওই লক্ষ্যে এগুতে গিয়ে হয়তো অনেকে বুঝতে পেরেছে বাংলাদেশে ১৯৭৫ এর পনেরো আগস্টের পর যে কাল সাপটি ধীরে ধীরে বড় হয়েছে সেটা কতটা বিষাক্ত। এদের বিষ দাঁতের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি রাজনৈতিক ও কৌশলগতভাবে কতটা শক্তিশালী? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে বাংলাদেশে নানানভাবে চিত্রিত করা হয়। কিন্তু কখনও এই সত্যটি বলা হয় না যারা রাজনীতিতে নানান বেশ ধরে ধর্মের নামে অপপ্রচার করছে তারা আসলে যে যে পোশাকেই থাকুক না কেন, সকলে এক। এবং সেটা বলা হবেও না। এরও বিশেষ কারণ আছে। অনেক স্বার্থ আছে। তবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জন্য এখন সব থেকে চ্যালেঞ্জ হলো রাজনৈতিকভাবে একটি ঐক্য গড়ে তোলা।

এই ঐক্যের জন্য মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের যে যেখানে আছেন না কেন, সকলের ঐক্যবদ্ধ হবার বিকল্প নেই। কেন এই ঐক্য হচ্ছে না বা এর ভিতর কেন দৃঢ়তা নেই এ নিয়ে অনেককে অনেক গাল-মন্দ করা যায়। একজন আরেকজনকে সমালোচনা করতে পারেন। কিন্তু কিছু কিছু সময় থাকে যখন এই সব সমালোচনা তুলে রাখতে হয়। এ সময়টা কেমন সেটা বলতে গেলে সৈয়দ মুজতবা আলীর কয়েকটি লাইন উল্লেখ করতে হয়। সৈয়দ মুজতবা আলীর লাইনগুলো ছিলো, ‘মুক্তিযুদ্ধ ডাক দিয়েছে কেমনে ঘরে রও/ গামছা দিয়ে পরানডারে বাইন্দা তুমি লও।’

তাই সময় কম কি বেশি সেটা বড় কথা নয়, আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি যে তরুণ, যুবা, বৃদ্ধ, নারী যেই হোন না কেন, এখন গামছা দিয়ে পরানডারে বাইন্দা বের হয়ে আসতে পারবে কি না? যেমন এই নির্বাচনে যখন ধর্মীয় অপপ্রচার হচ্ছিল, যখন বোঝা যাচ্ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে পরাজিত করতে ধর্মব্যবসায়ীরা এভাবে অপপ্রচার চালাচ্ছে তখন কিন্তু তরুণ মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সকলের বের হয়ে আসা উচিত ছিল এটা ঠেকানোর জন্য, তা হয়নি। বরং তার বদলে উপদলীয় কোন্দলসহ নানান কিছু দেখা গেছে। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির জাগ্রত তরুণ সম্প্রদায়কে নিষ্ক্রিয় করা হলো কেন, কাদের জন্যে সেটাও আজ বড় প্রশ্ন। অন্যদিকে সরকার প্রচারে এত দুর্বল কেন তা ভাবলে সত্যি কষ্ট হয়।

যেমন এই নির্বাচনের পরে খুলনার একজন সাংবাদিককে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম সাবেক মেয়র আবদুল খালেকের উন্নয়ন কেন প্রভাব ফেলল না। তার উত্তর ছিল, খালেকের উন্নয়ন স্থানীয় উন্নয়ন। কিন্তু জাতীয়ভাবে বর্তমান সরকার কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। যেমন পদ্মা সেতু হয়নি। গ্যাস লাইন গেলেও এখনও গ্যাস দেয়া হয়নি।

পদ্মা সেতু নিয়ে বর্তমান সরকার ভুল করেছে। প্রথমেই আবুল হোসেনকে সরিয়ে দিলে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু থেকে সরে যেত না। তাহলে এতদিনে এই সেতুর দৃশ্যপট ভিন্ন হতো। যাহোক, সরকার সে ভুলের মাসুল দেবার পরেও কিন্তু পদ্মা সেতু থেকে সরে আসেনি। দেশীয় উদ্যোগে পদ্মা সেতু হচ্ছে। আবার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক ভাল। পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক যে ১.২ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল সেটা তারা বাংলাদেশকে অন্য খাতে দেবে। এছাড়া গত তিন মাসে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ১.২ বিলিয়ন ডলারের বিভিন্ন প্রকল্পের চুক্তি হয়েছে। অন্যদিকে খুলনার বিদ্যুত সমস্যা অনেক কমিয়েছে এই সরকার। পাশাপাশি ১২শ’ মেগাওয়াটের কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র তৈরি করছে। এই কেন্দ্র নিয়ে অনেক অপপ্রচার আছে। গ্যাস সঞ্চালন লাইন নিয়েছে। কিন্তু এর বিপরীতে জামায়াত-বিএনপি যে পাঁচ বছর ক্ষমতায় ছিল তারা পদ্মা সেতুর জন্য কি করেছিল? শেখ হাসিনা তো তাঁর আগের টার্মে এটা উদ্বোধন করেন। বিএনপি তো পাঁচ বছরে কিছুই করতে পারেনি। গ্যাস লাইন নেয়নি। খুলনায় বিদ্যুত ছিল না। পাটকলগুলো সব বন্ধ করে দেয়। এ সব সত্যগুলো তুলে ধরার জন্য কিন্তু সরকারের কোন প্রচার মাধ্যম নেই।

এই সব দেখে মনে হয়, এই নির্বাচনের পরে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, এটা সরকারের জন্যে সতর্কবার্তা। কিন্তু সরকার সতর্ক হবে কিভাবে? সরকারের দল কিভাবে সতর্ক হবে। এই নির্বাচনে যাবার আগে প্রতিটি এলাকায় যে আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দল আছে এগুলো নিয়ে কি আওয়ামী লীগ সচেতন ছিল না? তারা কি এ নিয়ে অন্ধ ছিল? বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি ক্ষুদ্র নয়। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এর বিভেদ, দ্বন্দ্ব এবং ব্যক্তিস্বার্থের কাছে অনেক কিছু বলি দেয়? বরিশালের কোন্দল মিটল না কেন? কে জিইয়ে রাখলেন ওই কোন্দল?

যাহোক, এগুলো একটি দলীয় বিষয়। এ নিয়ে আমাদের লেখা উচিত নয়। কারণ, কোন রাজনৈতিক দল কি করবে না করবে সেটা তাদের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে সমস্যা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই বড় দলটি ও তার জোট এর বিপরীতে কি শক্তি তা ৫ মে ঢাকাতে বিশ্ববাসী বা সচেতন মানুষ দেখেছে। সেই শক্তি দেশের রাজনীতির ওপর আধিপত্য করার জন্য মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। রাজশাহীতে বোমা ফাটিয়ে উল্লাস করা হয়েছে। এভাবে দেশ এগুতে থাকলে দিন দিন এগুলো আরও বাড়বে। কিন্তু ততদিনে দেশের মানুষকে যে মূল্য দিতে হবে, যে প্রাণ দিতে হবে সেগুলো শোধ হবার কোন পথ নেই। সন্ত্রাসের কাছে, ধর্মব্যবসার কাছে পরাজিত হবে বাংলাদেশের রাজনীতি যদি না সম্মিলিতভাবে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি এখনই সচেতন না হয়। এখনই মুজতবা আলীর ভাষায় গামছা দিয়ে পরানডারে বাইন্দা তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষায় না নামে।



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১০:৪৮

নামগোত্রহীন বলেছেন: ভুল থেকে আওয়ামীলীগ শিক্ষা নেবে কিনা জানিনা। কারণ কোন রাজনৈতিক দলকেই তা করতে দেখিনা। বিএনপিকে ধন্যবাদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য। জয়ী হবার জন্য। সরকারকে ধন্যবাদ একটি সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করার জন্য। আওয়ামীলীগের মন খারাপ করার কিছু নেই। সময় এখনও শেষ হয়ে যায়নি। দূর্বলতা কাটিয়ে উঠার জন্য ৬ মাস অনেক সময়। আগামী সংসদ নির্বাচনে পরিপূর্ণ আওয়ামীলীগ ও পূর্নাঙ্গ শক্তির বিএনপিকে দেথতে চাই। সকলের মনে রাখা উচিত এক মুরগী এক বারই বিক্রি করা যায়। আগামী নির্বাচনে ধর্মীয় কার্ড কার্যকর হবে বলে আমার মনে হয় না। পাবলিক কিন্তু বেকুব না।

২| ২০ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:০৩

বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক বলেছেন:

ইহা ১৬ গুটির খেলা - যে যখন খুশি মন্ত্রি মিনিষ্টার ব্যবহার করবেই ---

চেতনা ব্যাবসায়ীদের পরাজয় ধর্মব্যবসার নিকট -- ফেরিওল্লারা ফেরি শুরু করতে হইবোওও জোড়ে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.