![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অনুজপ্রতিম বন্ধু-সহকর্মী মুনতাসীর মামুনের একটা বড় গুণ তিনি লেখেন তো ভালই, কোন রাখ-ঢাক না রেখেই বেশ সোজাসাপ্টা কথা বলেন। প্রয়োজনে বন্ধুদেরও খোঁচাতে পিছপা হন না। তার একাধিক উক্তি ইতোমধ্যে পাঠক সমাবেশে বেশ সমাদৃত হয়েছে। সদ্য অনুষ্ঠিত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর তার একটি পুরনো মন্তব্য নতুন করে মনে পড়ল। বেশ আগে কি এক প্রসঙ্গে মামুন মন্তব্য করেছিলেন বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকে স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন। গোলাম আযমের মামলার রায় বিলম্ব প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি তিনি আবার একই মন্তব্য করেছেন। বলা বাহুল্য, মামুন কথা ক’টি তার ব্যক্তিগত ক্ষোভ হতে বলেছিলেন। কারণ লাখো প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশে একশ্রেণীর মানুষের কাছে এখনও একাত্তরের ঘাতক এবং তাদের রাজনৈতিক দর্শন বেশ সমাদৃত। বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগে এক সাংবাদিক এক রিক্সাচালকের কাছে নির্বাচন সম্পর্কে তার বক্তব্য জানতে চাইলে উত্তরে সেই রিক্সাচালক অকপটে স্বীকার করেন-সদ্য বিদায়ী মেয়র হিরন বরিশাল শহরের জন্য যা কাজ করেছেন এর আগে কোন সময়ে বরিশালে এত উন্নয়নমূলক কাজে হয়নি। তার শেষ মন্তব্য ছিল ‘কিন্তু হিরন তো আওয়ামী লীগ করেন’! কী এক ভয়ঙ্কর মন্তব্য। যে দলটির নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হলো সে দল করার অপরাধে অনেক উন্নয়ন করা সত্ত্বেও হিরনকে একজন সাধারণ ভোটার ভোট দেবেন না? এমন মন্তব্য শুধু একটা রিক্সাওয়ালার নয়, আরও অনেকের আছে। তাদের কাছে আওয়ামী লীগের বিকল্প সেই সব দল বা ব্যক্তি যাদের নিত্যদিনের সঙ্গী সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদের অবাধ লুটপাট, মানি লন্ডারিং আর লাগামহীন দুর্নীতি। সংসদে মহিলা সদস্যরা যখন শুধু প্রাপ্ত- বয়স্কদের শ্রাব্য ভাষা ব্যবহার করেন তখন তারা তা বেশ উপভোগ করেন। এরা সম্ভবত ফ্রয়েডিয়ান (ফরাসী মনোবিজ্ঞানী) চিন্তাধারায় বিশ্বাস করেন। ১৯৮৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সুলতান মুহাম্মদ মনসুরের নেতৃত্বে ডাকসুতে ছাত্রলীগ বিজয়ী হয়েছিল। নির্বাচনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা একটি বিশাল বিজয় মিছিল বের করে। ছাত্রদলের ক্যাডাররা অতর্কিত সেই মিছিলে সশস্ত্র হামলা করে এবং অনেক ছাত্রীকে আহত করে। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পরের ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলসহ ডাকসুতে বিজয় লাভ করে। এর সহজ-সরল অর্থ করলে দাঁড়ায়-মামুনের কথাই সত্য। তিনি হয়ত বোঝাতে চেয়েছেন ‘বঙ্গবন্ধু একটি অনিচ্ছুক জাতিকেই একটি স্বাধীনতা দিয়ে গিয়েছিলেন’ মন্তব্যের অর্থ হচ্ছে সেই দেশের নাগরিকরা এখনও স্বাধীনতার অর্থ বা মূল্য কোনটাই বুঝতে সক্ষম নয়। তারা নিষ্পেষিত ও শোষিত হতে বেশি পছন্দ করেন। তবে মামুনের মন্তব্যটাকে আমি সর্বজনীন করতে রাজি নই। কারণ আমাদের প্রজন্মের যারা এখনও বেঁচে আছেন তাদের অনেকেই স্বাধীনতার মূল্যটা বোঝেন। তার মন্তব্যটা একাত্তর-পরবর্তী একটি বা দু’টি প্রজন্মের ক্ষেত্রে সত্য, যারা নিজেদের সাফারি আর মোবাইল জেনারেশন বলতে পছন্দ করেন এবং যাদের এক পা সব সময় দেশের বাইরে থাকে । সেই দেশটা পাকিস্তান হোক বা সুদান তাতে কিছু আসেযায় না। চাষাভুষাদের এই দেশ হতে পালাতে পারলে তারা বাঁচেন। এরা ইতিহাস হতে উৎখাত, শিখড়বিহীন একটি উদ্বাস্তু প্রজন্ম । এরা একটি ক্ষয়িষ্ণু জাতীয় মূল্যবোধের স্বীকার যার সৃষ্টির পেছনে রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রের বিরাট অবদান রয়েছে। তাদের পাশাপাশি আবার অন্য আর একটি প্রজন্ম আছে যারা নিজের জীবনবাজি রেখে শাহবাগ চত্বর সৃষ্টি করতে পারে, শত হুমকিধামকি সত্ত্বেও আওয়াজ তুলতে পারে: ‘জামায়াত-শিবির রাজাকার এই মুহূর্তে বাংলা ছাড় ।’ হয়ত এরাই জাতির শেষ ভরসা ।
সদ্য সমাপ্ত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সভানেত্রীকে তো বটেই স্বাভাবিক কারণেই দলটির অনেক শুভানুধ্যায়ীকে ভাবিয়ে তুলেছে। অন্যান্য নেতানেত্রীর কথা বাদ দিয়ে শুধু সভানেত্রীর কথা এই কারণেই উল্লেখ করলাম; কারণ, দলে আর যারা নীতিনির্ধারক পর্যায়ে আছেন তারা দল নিয়ে কতটুকুৃ ভাবেন তা নিয়ে জনমনে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। সত্যিই যদি ভাবতেন তা হলে তারা বাংলাদেশের বৃহত্তম এই দলটিকে সরকারের ভেতর বিলীন হয়ে যেতে দিতেন না। যেহেতু দল এখন ক্ষমতায় সেহেতু অনেকের ভাগ্যে নানা ধরনের পদ-পদবি জুটেছে, কপাল খুলেছে। এদের অনেকেই তাদের এই সব পদ-পদবির গুরুত্ব এবং দায়িত্বও সঠিকভাবে বোঝেন বলে মনে হয় না। বুঝলে সদ্য সমাপ্ত চারটি সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়কে কেন্দ্র করে আগামী নির্বাচন নিয়ে এত চিন্তা করতে হতো না। সব চেয়ে বড় কথা, সব ক’টি সিটি কর্পোরেশনে হারতেও হতো না। এই নির্বাচনে হারের পেছনে অনেক জাতীয় ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে বলে আমরা অনেকেই মনে করি। এই মনে করার পেছনে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু একটু যদি পেছনে ফিরে যাই, ২০১০ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের কথা চিন্তা করি তা হলে বিশ্লেষণগুলো হয়তো বা আরও একটু বস্তুনিষ্ঠ হবে। এই নির্বাচনটি হয়েছিল জাতীয় নির্বাচনের দেড় বছরের মাথায়। তখনও বিএনপি বা জামায়াত বাংলাদেশের রাজনীতিতে ২০০৮ জাতীয় নির্বাচনে ভরাডুবির পর তেমন একটা সক্রিয় হয়ে ওঠেনি। চট্টগ্রামের সেই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য তাদের কোন প্রার্থীকেও রাজি করানো যায়নি। কৌশল হিসেবে তারা ভাগিয়ে নিয়ে আসলেন আওয়ামী লীগের এক ওয়ার্ড কমিশনার মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকে যিনি কিনা ওয়ার্ড পর্যায়ে রাজনীতিতে এসেছিলেন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং তিনবার বিপুল ভোটে নির্বাচিত মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর হাত ধরে। মহিউদ্দিন চৌধুরীর চরম শত্রুও স্বীকার করবেন তিনি একজন জননন্দিত নেতা ছিলেন। এক এগারোর পর চট্টগ্রামে তিনিই একমাত্র প্রথমসারির নেতা যাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । তার সব ব্যাংক এ্যাকাউন্ট জব্দ করলে তার পরিবার তখন চরম আর্থিক কষ্টে পড়ে । তখন তার কন্যা টুম্পা দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ব্যাংককের একটি হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন। জেলে যাওয়ার আগে তিনি মেয়রের দায়িত্বটা অন্য কাউকে নয় মঞ্জুরুল আলম মঞ্জুকেই দিয়ে গিয়েছিলেন । প্রায় দেড় বছর পর ফখরুদ্দীন সরকারের শেষ সময়ে এসে তিনি জেল হতে ছাড়া পান। স্বাভাবিক কারণেই তিনি তার কন্যাকে দেখতে ব্যাংকক যেতে চাইলেন। সরকার তাকে অনুমতি দিতে গড়িমসি করলে তিনি আদালতের শরণাপন্ন হন। আদালতের রায়ের পর তিনি ছুটলেন বিমানবন্দরে। বিমানে ওঠার আগেই খবর এলো কন্যা টুম্পা তাদের ছেড়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছে।
২০১০ সালের নির্বাচনে মহিউদ্দিন চৌধুরী তার সাগরেদ মঞ্জুরুল আলমের কাছে প্রায় এক লাখ ভোটে পরাজিত হন । তখন কিন্তু কোন জাতীয় ইস্যু নির্বাচনে ছিল না। সেই নির্বাচনের প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ফলাফল আমার কাছে আছে। তার কিছুটা বিশ্লেষণ করার চেষ্টা আমি করেছি এবং আমি হলফ করে বলতে পারি, তেমন বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা পরাজিত প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউ করেননি। কারণ বাংলাদেশের রাজনীতিতে দল বা প্রার্থী বিজয়ী হলে বিজয় মিছল বের হয় আর পরাজিত হলে পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ করার প্রয়োজনীয়তা কেউ উপলব্ধি করেন না। এর ফলে কেউ পরাজয় হতে কখনও শিক্ষা নেন না। এই না নেয়ার ফলে নিজেরাই পরবর্তীকালে ক্ষতিগ্রস্ত হন। আওয়ামী লীগ ঐতিহাসিক কারণেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের ভোটব্যাংক হিসেবে ধরে নেয়। এক সময় তা ছিল, কিন্তু এখনও তা থাকবে তা মনে করা এক বড় রকমের আত্মঘাতী ভুল। সংখ্যালঘুরা মনে করতেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার ধারক আওয়ামী লীগ তাদের জন্য শেষ আশ্রয়স্থল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীর অপরিণামদর্শী কর্মকা- অথবা প্রয়োজনের সময় তাদের চরম নির্লিপ্ততা সেই ভোটব্যাংকের এখন আর কোন অস্তিত্ব নেই। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় তখন কক্সবাজারে রামুর ঘটনা ঘটে এবং সেখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের কিছু নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়। বাঁশখালী আর বগুড়ায় দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদ-কে পুঁজি করে জামায়াত-শিবির সংখ্যালঘু-অধ্যুষিত গ্রামে যখন তা-ব চালায় তখন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার একটি দৃশ্যের ছবি শেয়ার করেছিলাম। চট্টগ্রাম হতে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সরকারী কর্মকর্তা আমাকে তার উত্তরে জানিয়েছেন, ‘স্যার, এগুলো শেয়ার করে কি হবে? সংখ্যালঘু ভোটাররা কই?’ চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে তিনি এই মন্তব্য করেছিলেন । চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরশেন নির্বাচনে প্রায় সত্তরভাগ সংখ্যালঘু ভোটার আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হয় ভোট দেননি অথবা ভোটদানে বিরত থেকেছেন । তার অবশ্য নানাবিধ কারণও ছিল । ঠিক একই অবস্থা হয়েছে সদ্য সমাপ্ত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনেও । এই নির্বাচনে ত্রিশভাগ ভোটার ভোটকেন্দ্রে আসেননি । কারা আসেননি সেই হিসাব কেউ করেছেন? এককালের এসব ভোটব্যাংককে সঙ্গে রাখতে না পারার ব্যর্থতা তো দল হিসেবে আওয়ামী লীগেরই ।
বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে কানসাটে বিদ্যুতের দাবিতে বিক্ষোভরত এলাকাবাসীর ওপর পুলিশ গুলি করলে অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসে সেই কানসাটে বিদ্যুত সাবস্টেশন স্থাপন করে এলাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে সেচের ব্যবস্থাসহ বাসাবাড়িতে বিদ্যুত সংযোগ দেয়। সাঈদীর ফাঁসির রায়কে কেন্দ্র করে সারা দেশে জামায়াত-শিবির যে তা-ব চালিয়েছিল তা থেকে এই বিদ্যুত কেন্দ্রও রেহাই পায়নি। দুবৃর্ত্তরা শুধু এই কেন্দ্রটিকে ধ্বংস করেছে তাই নয়, ওই কেন্দ্রে কর্মরত প্রায় কুড়িটি পরিবারকে পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করেছিল। মোট ক্ষতি প্রায় দুই শ’ কোটি টাকা। এই ঘটনায় কি এটা ধরে নেয়া যায়Ñসামনের নির্বাচনে এই এলাকার জনগণ আওয়ামী লীগকে সমর্থন জানাবে? সদ্য সমাপ্ত চারটি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের অবস্থা দেখে তো তা মনে হচ্ছে না।
বর্তমান মহাজোটের সাড়ে চার বছরে ব্যস্টিক অর্থনীতির যে সার্বিক উন্নতি হয়েছে তা জামায়াত-বিএনপি’র একজন গোঁড়া সমর্থক ছাড়া কেউ অস্বীকার করবেন না। সাড়ে তিন বছরে জাতীয় গ্রীডে সরকার নতুন তিন হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত যোগ করতে পেরেছে। লোডশেডিং কিছুটা হলেও কমেছে। বর্তমানে দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই বিদ্যুত ঘাটতি একটি বড় সমস্যা। জানি সমালোচকরা বলবেন, এটা তো কুইক রেন্টালের অবদান। তা অবশ্যই সত্য। কিন্তু এই সমালোচকরাই শুরুতেই এই বলে মুখে ফেনা তুলেছিলেনÑ বিদ্যুত কোথা হতে আসবে তা শুনতে চাই না, আমরা বিদ্যুত চাই। সরকার কুইক রেন্টালের সমস্যা উপলব্ধি যে করে না তা নয়। এরই মধ্যে জ্বালানি মন্ত্রণালয় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। তাত্ত্বিক বামরা আবার এর বিরুদ্ধে। বিশ্ব যখন চরম অর্থনৈতিক মন্দায় পতিত তখন বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির হার ছয় শতাংশের ওপর ধরে রাখতে পেরেছে। বাংলাদেশের উপরে প্রবৃদ্ধি হার একমাত্র শ্রীলঙ্কার বেশি। এটি কখনও স্বীকৃত হবে না। স্বীকৃত হবে না এই সরকারের আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম সপ্তাহে হাতে বিনামূল্যে বই পায়। স্বীকৃত হবে না দুর্নীতির জন্য বর্তমান সরকারের আমলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যশনাল হতে বাংলাদেশকে প্রতিবছর চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়নি যা চারদলীয় জোট সরকারের আমলে হয়েছিল। এ রকম অনেক অর্জন আছে। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে উপরে উঠে আসবে পদ্মাসেতুর কথিত দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের বিষয়টি যা এখনও প্রমাণিত নয়। সঙ্গে আছে ডেসটিনি, হলমার্ক, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি। ডেসটিনি আর হলমার্ক উভয়ই বেসরকারী খাতের প্রতিষ্ঠান। তারা জালিয়াতি করে ব্যাংক ও জনগণ হতে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এমন ঘটনা বাংলাদেশে এই প্রথম বা শেষ নয়। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। শেয়ার মার্কেট বিশ্বের সব জায়গায় মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ কারবার। অনেকে একে জুয়ার সঙ্গে তুলনা করেন। এই জুয়া খেলার জন্য সরকার কিছু নিয়মনীতি বেঁধে দেয়। যে কোন কুবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি এই সব নিয়মনীতিকে সামনে রেখেও অনৈতিক উপায়ে আনাড়ি খেলোয়াড়দের ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন। ১৯৯২ সালে ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার দালাল হর্ষদ মেহতা শেয়ারবাজারকে নিপুণভাবে নিজের মতো করে কারসাজি বা ম্যানিপুলেট করে পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে সারা ভারতে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। মেহতা ভারতীয় ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন। সংবাদটি প্রথমে ফাঁস করে দেয় টাইমস অব ইন্ডিয়া পত্রিকা। হর্ষদ মেহতার বিরুদ্ধে ২৭টি ফৌজদারি মামলা করা হয় এবং শুধু একটি মামলা আদালতে এযাবত প্রমাণ করা সম্ভব হয় এবং তাও ব্যাংক আইন ভঙ্গের মামলা, শেয়ার মার্কেট জালিয়াতির বিষয় নয়। ইতোমধ্যে মেহতার মৃত্যু হয়েছে; কোন টাকা উদ্ধার হয়নি। বাংলাদেশে শেয়ার মার্কেট জালিয়াতির তদন্তের সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের একজনের কাছে বিষয়টা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আমাকে বলেছিলেন এই জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত ছিলেন তারা চরম অনৈতিক কাজ করেছেন, কিন্তু বেআইনী কাজ করেছেন তা বলা যাবে না; আর এর সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের মধ্যে যেমন আছেন সরকারীদলীয় ব্যক্তিরা তেমনি আছেন বিরোধীদলীয় অনেক রাঘব বোয়াল। কিন্তু সরকারে যেহেতু আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার সেহেতু দায়দায়িত্ব সব তার ওপরই পড়েছে। একজন নিম্ন আয়ের অফিস পিয়ন আমাকে জানিয়েছিল, সে তার সঞ্চিত অর্থের সবটুকু শেয়ার বাজারে খুইয়েছে। তাকে প্রশ্ন করি, তুমি শেয়ারবাজারের কী বুঝ? জবাবে সে জানায় তার অফিসের অন্য আর একজন স্টাফ তাকে শেয়ার কিনতে উদ্বুদ্ধ করেছিল। যে ত্রিশ লাখ মানুষ শেয়ার মার্কেটে সর্বস্ব খুইয়েছেন বলে দাবি করছেন তাদের বেশিরভাগই কিন্তু ওই অফিস পিয়নের সমগোত্রীয়। তাতে কী হলো? দোষ তো সব আওয়ামী লীগের।
হেফাজত মে মাসের ৫ তারিখ দেশের রাজধানীর কেন্দ্রস্থলে দিনভর তাণ্ডেব চালাল। পবিত্র কোরান শরীফে আর মসজিদে আগুন দিল। ব্যাংকের বুথ লুট করার চেষ্টা করল। দেশের বৃহত্তম ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের তালা ভেঙ্গে তার ভেতরে প্রবেশ করল। এই দৃশ্য সারা দেশের মানুষ তো বটেই, বহির্বিশের¦ মানুষ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বদৌলতে অবাক বিস্ময়ে দেখল। তাহলে কি বিন লাদেন বা মোল্লা ওমরের বাংলাদেশী সংস্করণ এই দেশটাকে দখল করে নিচ্ছে ? শেষ রাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দশ মিনিটের অভিযানে যখন হেফাজতীরা তাদের অবস্থান ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হলো তখন সকলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল । কিন্তু সেখানে বিরোধী দলের নেতারা আড়াইহাজার হেফাজতী আলেম-ওলামা হত্যা আবিষ্কার করলেন; যদিও আজ পর্যন্ত তারা একজনের নাম-ঠিকানাও প্রকাশ করতে পারেনি । কিন্তু ওই আড়াইহাজার আলেম- ওলামা হত্যা করা হয়েছে সেই তত্ত্ব তো এই চারটি সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা বিশ্বাস করেছেন। সুতরাং যারা আলেম-ওলামাদের নির্বিচারে হত্যা করে তাদের প্রার্থীকে তো ভোট দেয়া যায় না। রাজশাহীর সেই দৃশ্যগুলোর কথা কি মনে আছেÑযেখানে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে পুলিশ মেরে ফেলছে ? ভোটারদের কাছে এমন সন্ত্রাসী লালনকারী দলের প্রার্থীদের বেজায় পছন্দ। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অন্তত তাই প্রমাণিত। সুতরাং আওয়ামী লীগকেই ঠিক করতে হবে তারা তাদের প্রতিপক্ষের রাস্তা ধরবে নাকি দেশের যতটুকু উন্নয়ন কর্মকা- চলছে তা চালু রেখে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সামনের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, যারা দেশের স্বাধীনতার জন্য অনিচ্ছুক ছিলেন অথবা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নিজেদের পক্ষে আনার প্রচেষ্টা করছেন তা প-শ্রম ছাড়া আর কিছু নয়।
২| ২৬ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৩০
মদন বলেছেন: হ, স্বাধিনতা হইলো মুজিব স্যারের আম বাগানের আম। বাঙগালী চাইছে আর উনি পাইড়া দিছে।
৩| ২৬ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭
তুহিন সরকার বলেছেন: বিশ্লেষণ ধর্মী পোষ্ট। হয়ত মুনতাসীর মামুন সাহেবের কথাই ঠিক।
শুভকামনা সতত।
৪| ২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩
তিক্তভাষী বলেছেন: ভোট না দিলে জনগনকে গালি-গালাজ করা আওয়ামীদের রীতি!
৫| ২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৩০
বিকারগ্রস্থ মস্তিস্ক বলেছেন:
মুনতাসির মামুনও
যে কোন কুবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি এই সব নিয়মনীতিকে সামনে রেখেও অনৈতিক উপায়ে আনাড়ি খেলোয়াড়দের ঠকিয়ে হাজার হাজার টাকা হাতিয়ে নিতে পারেন ............... আর বারবার সেই আওমীলীগের বেলাই হইবোও আর ব্যাক্তিদের ব্যাপারে কোন টুট টুট শব্দ উচ্চারণ হবে না - এতে সরকারে কোন দায় নাই খিজ্জজ্জজ্জজ্জজ্জ
হাহাহাহা মজা পাইলাম এইটুকু পড়ে -
৬| ২৬ শে জুন, ২০১৩ দুপুর ১২:৫৩
নষ্ট ছেলে বলেছেন: ৭১ এর পর মুনতাসির মামুনের মত চাটুকার গুলাই বঙ্গবন্ধুকে ডুবিয়ে ছিল। এইবার হাসিনাকেও ডুবাচ্ছে। ভালই তো, ভাল না?
৭| ২৬ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৬
জাতির চাচা বলেছেন: স্বাধীনতা শেখ মুজিবের পকেটে ছিলো!
আমরা চাই নাই তবুও জোর কইরা দিছে!!
এইটা না দিয়া ওনার পকেটে রাখলেই ভালো ছিলো!!!
৮| ২৬ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:০৯
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ভাই, আর কী হবে এই আওয়ামী লীগের পক্ষে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে? বহুততো চেস্টা করলেন - কিছু কি হল? এই বোকা মুর্খ অভাগা জাতি আপনারা বা আওয়ামী লীগ তাদের যে কত ভাল চায় সেটাই বুঝল না? এদের আর কত বুঝাবেন, বাদ দেন - এইসব মুর্খদের কপালে যা আছে তাই হবে। আপনারা বরং এবার একটু রেস্ট নেন - চার বছর অনেক কাজ করেছেন, একটু রেস্টওতো নেওয়া দরকার - কী বলেন??
৯| ২৬ শে জুন, ২০১৩ বিকাল ৪:২৩
নীলতিমি বলেছেন: হ : বঙ্গবন্ধুর হাতের মোয়া স্বাধীনতা আমাগোরে এমনি এমনিই দিয়া গেছে !
আবাল !!
১০| ২৬ শে জুন, ২০১৩ রাত ৮:১৮
ভালোরনি বলেছেন: বিনুদুন মুলুক মিগাজিন উনুস্ঠান - ইত্যাদি, ইত্যাদি, ইত্যাদি।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০১৩ সকাল ১১:১২
কামাল উদ্দিন ফারুকী জুয়েল বলেছেন: মুনতাসির মামুনও বিরাট এক মুক্তিযোদ্ধা, আর আপনেও বিরাট এক বিশ্লেষক।
স্বাধীনতা কোন ব্যাক্তি বিশেষের দয়ার দান না, আর আপনেরাও ধোয়া তুলসিপাতা না।