নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

রাজনৈতিক বিতর্কে তারেক রহমান : মনে হয় তারেকই অবৈধ

১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৭:৫৩

বিএনপিসহ তথাকথিত ১৮ দলের তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের দাবি নিয়ে হঠকারী আন্দোলনের মধ্যে হঠাৎ করেই তারেক রহমান বিতর্কের অনুপ্রবেশ ঘটল। ২৯ মে তার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার দাবিতে হরতাল হলো। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও অপপ্রচার বন্ধ না করলে আরও জোর আন্দোলন চালানো হবে। মুদ্রা পাচারের মামলায় অভিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে পরোয়ানা জারির পর বিভিন্ন জেলায় ২৮ মে হরতাল পালন করেছে বিএনপি। অথচ তারেক রহমানের অতীত কীর্তিকলাপ এদেশের জনগণ ভুলে যায়নি। বরং তাকে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার খলনায়ক ও খুনি এবং অর্থপাচারের প্রকৃত আসামি হিসেবেই জনগণ চিনেছে।



উল্লেখ্য, কেবল অর্থপাচার নয় মানুষ হত্যার আসামি বলেই তারেক রহমানের বিরুদ্ধে এ সরকারের আমলে মামলা পরিচালিত হচ্ছে। বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে ১৪টি মামলা দায়ের করা হয়। বর্তমান সরকারের আমলে অর্থপাচার ও আলোচিত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামি করে আরও দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তাকে গ্রেফতার করেছিল ২০০৭ সালে যৌথবাহিনী। ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর জামিনে মুক্তি পেয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য লন্ডনে গিয়ে আর ফিরে না এসে এখন বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে লন্ডনে রাজনৈতিক আশ্রয় পেয়েছেন তিনি। তারেক রহমান ও তার বন্ধু গিয়াস উদ্দিন মামুনের অর্থপাচারের মামলাটি হয় ২০০৯ সালে ২৬ অক্টোবর। মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামুনের সিটি ব্যাংকে ২টি অ্যাকাউন্ট ছিল। ওই অ্যাকাউন্টের বিপরীতে ২টি ভিসা ক্রেডিট কার্ড আছে। যার একটি মামুনের অন্যটি তারেকের। মামুন ও তারেক যথাক্রমে ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে ৭৯ হাজার ৫৪২ দশমিক ৭৮ ডলার এবং তারেক একই কার্ডের মাধ্যমে ৫৪ হাজার ৯৮২ দশমিক ৪২ ডলার ব্যয় করেন। ডলার তারা সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, জার্মানি, দুবাই ও গ্রিসে কেনাকাটা, ফূর্তিবাজ ও চিকিৎসায় ব্যয় করেন। বাংলাদেশি ব্যবসায়ী খাদিজা ইসলাম তার সিঙ্গাপুরের ওবিসিসি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে ৭ লাখ ৫০ হাজার ইউএসডলার টেলিগ্রাফ ট্রান্সফারের মাধ্যমে ২০০৩ সালের ১ আগস্ট মামুনের সিটি ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে জমা করেছিলেন।



বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর ২০০১-০৬ পর্যন্ত সারাদেশে জঙ্গিবাদের বিস্ময়কর উত্থান বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দেয়। কারণ জোট প্রশাসন জঙ্গিদের প্রত্যক্ষ সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিল। ২০০৫ সালের দেশব্যাপী বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা সবার জানা। সে সময় বিদেশি পত্রিকা থেকে আমরা জেনেছিলাম লাদেন এদেশে এসেছিল। শেখ হাসিনার ওপর গ্রেনেড হামলার কথা এ সূত্রে মনে রাখা দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২৯ মার্চ ২০০৭ সালে যে শীর্ষ জঙ্গিদের ফাঁসি কার্যকর করে তাদের সবারই তারেক রহমান ও জামাত-শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়। শায়খ আবদুর রহমান ও সিদ্দিকুল ইসলাম বাংলা ভাই অতীতে জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল। ১৫ জুন ২০০৭ সালে দৈনিক পত্রিকা থেকে জানা যায়, গ্রেফতারকৃত কয়েকজন জেএমবি সদস্য অতীতে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার কথা স্বীকার করেছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় গ্রেফতারকৃত হরকাতুল জিহাদের প্রধান মুফতি হান্নান তার ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হামলার সঙ্গে বিএনপি নেতা তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর এবং ইসলামী ঐক্য জোট নেতা মুফতি শহিদুল ইসলামের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। অর্থাৎ ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি লন্ডনে আশ্রিত তারেক রহমান।



২০১১ সালের ১০ অক্টোবর শুরু হওয়া রোডমার্চের পরের দিন সিলেটে চার দলের জনসভায় বিএনপি চেয়ারপারসন নিজে প্রধানমন্ত্রী না হওয়ার ঘোষণা দেন। সিলেটের আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে দেয়া খালেদা জিয়ার ভাষণটি ছিল- আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনেই হবে। নির্বাচনের পর দেশ পরিচালনার জন্য একটি সঠিক নীতিমালা তৈরি করে নতুনদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়া হবে। তিনি আরও বলেছেন-’আমি ও আমার দলে যারা সিনিয়র আছি, তারা সরকারকে (নতুনদের দ্বারা গঠিত) সহযোগিতা করব, সাহায্য ও বুদ্ধি-পরামর্শ দেব। নতুনরাই পারবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে।’ নতুনদের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার প্রসঙ্গটি নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছিল। কারণ সবাই জানেন তিনি নতুন নেতৃত্ব বলতে তার ছেলে তারেক রহমান ও তার বিশ্বস্ত সহচর বাবর, গিয়াসউদ্দিন মামুন প্রমুখকে বুঝিয়েছিলেন। এজন্যই বর্তমানে বিএনপিসহ বিরোধীদল তাকে ‘ভাবী প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে অভিহিত করছে।



‘নতুনদের নামে খালেদা জিয়া চোরতন্ত্র চান’- বলেছিলেন আওয়ামী লীগের মুখপাত্র মাহবুব-উল-আলম হানিফ।(বিডিনিউজ২৪, ১৩-১০-১১) খালেদা জিয়া নতুন প্রজন্মের নাম করে তার দুর্নীতিবাজ দুই পুত্রকে ক্ষমতায় বসাতে চান। খালেদা জিয়া জরিমানা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তার দুই ছেলে পিতার নামে অরফানেজ ট্রাস্ট করে এতিমদের জন্য বিদেশ থেকে পাওয়া টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এ দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতায় বসানোর মাধ্যমে দেশে তিনি চোরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। মুদ্রাপাচার মামলায় খালেদার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ইতিমধ্যে ছয়বছর কারাদ- দেয় ঢাকার জজ আদালত। বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও মামলা বিচারাধীন। তারা দুজনই বর্তমানে দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। আমরা জানি, নতুন বলতে যাদের বোঝানো হয়েছিল তারা আসলে গত জোট সরকারের আমলে নানা রকম অপকর্ম ও অপশাসনের মূল হোতা। এজন্য মাতৃত্বের কাছে বিএনপির নেতৃত্ব মার খাচ্ছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে।



২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হলে খালেদা জিয়া নিজে নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্রপতি হয়ে বড় ছেলেকে প্রধানমন্ত্রী পদে বসানোর কথা চিন্তা করেছিলেন। সেই সময় সিনিয়র নেতারা ভালো চোখে বিষয়টিকে দেখেননি। কারণ তারেক জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলে সিনিয়রদের কোন অবস্থান থাকবে না এটা তারা ভালো করে বুঝেছিলেন। উইকিলিকসের তথ্য মতে, তারেক রহমানের অপকর্মে সিনিয়র নেতারা যে বিরক্ত ছিলেন তা প্রকাশ পেয়েছে। ১/১১-এর পরে কিছু নেতার সংস্কারপন্থি ভূমিকার পেছনে তারেকদের দুষ্কর্ম থেকে মুক্ত হওয়ার বাসনা সক্রিয় ছিল। এছাড়া বিএনপির শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ কোন্দল তুঙ্গে। এ অবস্থায় নতুন নেতৃত্বের ঘোষণা ছিল সিনিয়র নেতাদের জন্য যেমন খারাপ খবর তেমনি আপামর দেশবাসীর জন্য অশনি সংকেত। কারণ প্রধানমন্ত্রী হলে তারেক রহমান মূলত দেশ চালাবেন ছাত্রদল ও যুবদলের ক্যাডারদের দিয়ে। দ্বিতীয় পর্বের রোডমার্চের বিভিন্ন ভাষণে খালেদা জিয়া দম্ভোক্তি করেছিলেন। স্বাধীনতাবিরোধী দলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিএনপি আন্দোলন করে ক্ষমতায় যাবে এটাও হাস্যকর। কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে এটা নিশ্চিত। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু তাদের মূল নয় বরং স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে বাঁচানোর প্রচেষ্টা গোপনে লালন করে যাচ্ছে তারা। আবার তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার অধীনে নির্বাচন হয়ে বিএনপি পরাজিত হলে পুনরায় দেশে যে তারা অরাজকতার সৃষ্টি করবে এটাও স্পষ্ট। অন্যদিকে নতুন কমিটি ঘোষিত হলেও নেতৃত্বের ক্ষেত্রে ছাত্রদলেও শূন্যতা দেখা যাচ্ছে; সেই জায়গা দখল করেছে ছাত্র শিবির। আমানউল্লাহ আমান ও নাসিরউদ্দিন পিন্টুর মতো সাবেক ছাত্রদল নেতা দুর্নীতি এবং অন্যান্য অপরাধের দায়ে মামলায় জর্জরিত। অথচ ছাত্রদল পরিচালনা থেকে তারা নেতা হয়েছিলেন। পরবর্তীতে নির্বাচনে জয়ী হয়ে দুর্নীতিতে অভিষিক্ত হন আমান। আর পিন্টু বিডিআর বিদ্রোহে সম্পৃক্ত থেকে হত্যাকা-ের আসামিতে পরিণত হয়েছেন। তবে বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার জামায়াতে ইসলামীর সংগঠন ছাত্র শিবির আসল নেতৃত্ব কুক্ষিগত করে নিয়েছে।



উইকিলিকস খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্কিত নানান বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেছে। তারেক রহমান জিয়ার নটরিয়াস জ্যেষ্ঠপুত্র এবং রাজনৈতিক উত্তরাধিকার। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের বিজয়ী হওয়ার কৃতিত্ব তার বলে মনে করা হয়। তাকে অনেকে বলে থাকেন দুর্নীতিবাজ, রাজনীতি ও ব্যবসায়ী ক্ষেত্রে অনভিজ্ঞ, অর্ধশিক্ষিত ও দুর্বিনীত। আবার কেউ কেউ তাকে ডায়নামিক, স্মার্ট ও নতুন প্রজন্মের নেতা হিসেবে বিবেচনা করেন। তিনি বিএনপির সিনিয়র পদে অভিষিক্ত হওয়ায় তার মা খালেদা জিয়া অধিকতর নিরাপদ অনুভব করেন। যদিও তারেক হাওয়া ভবন খ্যাত ছায়া সরকারের কর্মকা-ের মূল হোতা ছিলেন। উইকিলিকস রিপোর্টে মার্কিন তারাবার্তায় ভবিষ্যতে খালেদা জিয়া তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। পুত্রের গুণাবলি ও যোগ্যতা এবং মাতার প্রশ্রয় সম্পর্কে উইকিলিকস সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি, খালেদা জিয়া কেবল নিজের সন্তান তারেক-কোকোকে নিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্র গড়ে তোলেন। একজন মা হয়ে তার পুত্রের সুখকর ভবিষ্যৎ রচনার জন্য অন্যায়, অনিয়ম, দুর্নীতি করেছেন; রাষ্ট্রীয় প্রশাসনযন্ত্রকে ব্যবহার করেছেন নির্বিচারে। মা খালেদার পুত্রের অপকীর্তিকে প্রশ্রয় দেয়ার কারণে সংবাদ প্রকাশিত হয়- ‘কোকো মালয়েশিয়ায়, শ্রমিক বানিয়ে পার্সপোর্ট নবায়ন।’ পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত একটি স্যুটকেস ও ছেঁড়া গেঞ্জির চমক দেখাতে গিয়ে সন্তানরা দুর্নীতির চোরাগোপ্তা পথ বেছে নিলে তাদের নিষেধ করেননি তিনি? পুত্রের প্রতি অন্যায্য পক্ষপাত বর্তমানেও প্রকাশ পাচ্ছে বলে আমাদের ধারণা।



মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তার বরাত দিয়ে উইকিলিকস আরও জানিয়েছে, দুর্নীতি মামলায় দ-প্রাপ্ত তারেককে জামিনে মুক্তি দিয়ে চিকিৎসার জন্য ২০০৮-এর ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছে। তাকে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিক ভাবা হয়। এই তারেকই এরশাদকে হুমকি দিয়েছিলেন। এরশাদ আওয়ামী লীগের মহাজোটে গেলে তাকে আবারও কারাগারে পাঠানো হবে বলা হয়েছিল। ২০০৬ সালের ১৮ জুলাই এ তারবার্তাটি ঢাকা থেকে ওয়াশিংটন পাঠানো হয়। ২০০৮ সালের ২১ ডিসেম্বর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় আরও বলা হয়, তারেক রহমান কুখ্যাত লোকদের পছন্দ করেন। ২০০৯ সালের ১৪ মে অন্য একটি তারবার্তায় বিএনপিতে খালেদা জিয়ার একচ্ছত্র আধিপত্য থাকায় জ্যেষ্ঠপুত্র তার স্বাভাবিক উত্তরসূরিতে পরিণত হয়েছেন বলা হয়। এছাড়া উইকিলিকসে খালেদার আস্থাভাজন ও প্রভাবশালী যে ১৭ ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয় তার মধ্যে ১২ জনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল বলে মন্তব্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে মতিউর রহমান নিজামী মার্কিন সরকারের প্রতি বৈরী মনোভাব প্রকাশ করেন। ২০০৫ সালের ১১ মে রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসের পাঠানো নথিতে দেখা যায়, কাছের ক্ষমতাধর ব্যক্তিরা হলেন- তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, সাঈদ এস্কান্দার, লুৎফুজ্জামান বাবর, কামালউদ্দিন সিদ্দিকী, এম সাইফুর রহমান, খন্দকার মোশাররফ হোসেন। অতীতের এসব ক্ষমতাধর কেউই নতুন প্রজন্মের নেতা হওয়ার যোগ্যতা রাখেন না। কারণ তাদের সবার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ রয়েছে। এমনকি বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতির ভূরি ভূরি অভিযোগের ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কাছে শরিক দল জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতৃত্ব বিস্ময় প্রকাশ করেছিল। অথচ উইকিলিকসের তথ্যমতে তারেক, জামায়াত ও জেএমবি একসূত্রে জঙ্গি কর্মকা-ে সম্পৃক্ত।



অর্থাৎ জোট সরকারের আমলে বিএনপি রক্ষা করছিল জেএমবিকে এ সংবাদও উইকিলিকসের ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দিকীর জবানিতে আমরা জানতে পেরেছি। ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের সাবেক চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তিনি জানিয়েছিলেন, তারেক রহমান, জামায়াতে ইসলামী, জেএমবি পরস্পর সম্পর্কে জড়িত। ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর অনুরোধে গ্রেফতারকৃত জেএমবি প্রধান বাংলা ভাইয়ের ডেপুটি কামরুলকে ছেড়ে দিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরকে বাধ্য করেছিলেন তারেক রহমান। হাওয়া ভবনে তারেকের কতিপয় বিকারগ্রস্ত বন্ধু রয়েছে তাদের কথা তারেক গুরুত্ব দিয়ে শোনেন এবং সে মতো কাজ করেন- এ অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবের।



১৯৯১ সালে নির্বাচনের পর তারেক ও কোকো অবৈধ পন্থায় ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিষ্ঠিত হন। আর ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার গঠনের পর তারেক রহমানের হাতে বিএনপির নেতৃত্ব কুক্ষিগত হলে রাজনৈতিক বাণিজ্য তথা দুর্নীতির বদৌলতে নেতাকর্মীরা লাখ লাখ ছাড়িয়ে শত কোটি টাকার মালিক বনে যান। এসময় হাওয়া ভবন ধীরে ধীরে দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, বাণিজ্য সবকিছু নিয়ন্ত্রণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে; সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমতাধর হয়ে উঠতে থাকেন তারেক রহমানের সহযোগীরা। তার বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াসউদ্দিন মামুন ঢাকার এক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী থেকে হয়ে ওঠেন দেশের নৌবাণিজ্য, গার্মেন্ট, মিডিয়াসহ নানা রকম ব্যবসার মালিক। আর দেশের প্রশাসন, পুলিশসহ সর্বত্র পোস্টিং, পদোন্নতির সব মন্ত্রণালয়ের টেন্ডার, প্রজেক্ট সবকিছুর নিয়ন্ত্রক বনে যায় হাওয়া ভবন।



তারেকের কর্মকান্ডের জন্য প্রবীণ নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। খালেদা জিয়া পুত্রের কর্মকা- নিয়ে মাথা ঘামাতেন না। পূর্বেই বলা হয়েছে মায়ের প্রশ্রয়ে তারেক রহমান চালাতে থাকেন বিকল্প সরকার। বিএনপির বিদ্রোহী নেতা কর্নেল অলি আহমদ বেগম জিয়ার বাসায় গিয়ে ২০০২ সালে তারেক রহমানকে নিয়ন্ত্রণের জন্য বললে খালেদা জিয়া তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বলেছিলেন- ‘জিয়া পরিবারকে বাদ দিয়ে এদেশে কোন রাজনীতি হবে না।’ এভাবে রাজনৈতিক উত্তরাধিকার বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় জোট আমলে তারেক-মামুনের হাওয়া ভবনের দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়ন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিএনপির ক্ষমতাধর (প্রয়াত) মন্ত্রী সাইফুর রহমান, শাজাহান সিরাজ, ইকবাল হাসান মাহমুদ, বাবর, বাংলা ভাই থেকে শুরু করে পাতি নেতাদের বংশধররা সদম্ভে এ রাজনৈতিক বাণিজ্যের অংশীদারিত্বে পরিণত হন। এমনকি জিয়াউর রহমানের সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতাদের একজন কর্নেল (অব.) আকবর হোসেন নৌপরিবহনমন্ত্রী থাকাকালে নৌযান পরিচালনায় শৃক্সখলা আনতে গিয়ে মামুনের বিরোধিতা করায় হাওয়া ভবনের ধমকে উপলব্ধি করেছিলেন এটা জিয়ার বিএনপি নয়, তারেক জিয়ার বিএনপি। তিনি শেষ পর্যন্ত মামুন গংদের দুর্নীতির সাগরে নিমজ্জিত হন।



দেখা যাচ্ছে তারেক রহমান প্রবীণ নেতাদেরও নিজের দাপটে কাবু করে দুর্নীতিগ্রস্ত করেছিলেন। এজন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রসঙ্গে এ নামটি এখন বাতিলের তালিকায় রাখা যায়। তারেক ও তার বন্ধু মামুন, সহচর বাবর, মিলন, মিল্লাত কিংবা হাওয়া ভবনের আশিক, অপুদের চাইতেও দেশের জনগণই শক্তিশালী এটা সবাইকে বুঝতে হবে। বরং উইকিলিকসে প্রকাশিত বিএনপির নেতৃত্ব সম্পর্কে তারেকের মন্তব্য গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা দরকার। তিনি বলেছিলেন- ‘কেউই অপরিহার্য নন। কোন স্থান শূন্য হলে কেউ না কেউ এগিয়ে আসে।’ দেশের রাজনীতিতে তারেক রহমানের মতো দুর্নীতিগ্রস্ত ও খুনির পরিবর্তে সৎ, সাহসী ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তির এগিয়ে আসা খুব জরুরি হয়ে পড়েছে। আমরা সেই প্রত্যাশায় অপেক্ষায় রইলাম। অপরাধী তারেক রহমানের বিচার দ্রুত শেষ হওয়া দরকার।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৩৯

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: দারুন এক খান টপিক ধরাই্য়া দিছে.....

২| ১০ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৯:৪১

মো ঃ আবু সাঈদ বলেছেন: আমার ফাসি চাই বইতে কিন্তু হাসিনা মানুষ হত্য কাহীনি পাওয়া যায়......
উনি কিন্তু এখন প্রধান মন্ত্রী...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.