![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দেশের অন্যতম বৃহত্তম দল বিএনপি বর্তমানে চরম দুরবস্থায় নিপতিত হয়েছে। ৫ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে দলটি অংশ নেয়নি। সংসদ নির্বাচন বানচালের জন্য এমন কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- নেই যা জামায়াত-বিএনপি করেনি। কিন্তু বেগম জিয়ারা নির্বাচন বানচাল করা দূরের কথা এর ধারে কাছেও যেতে পারেনি। নির্বাচনের পর শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। সরকার গঠন করার পর নির্বাচন কমিশন তড়িঘড়ি করে ৫ দফায় উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের শিডিউল ঘোষণা করে। সংসদ নির্বাচন বানচালে চরমভাবে ব্যর্থ বিএনপির উপজেলা নির্বাচনে অংশ না নিয়ে কোন উপায় ছিল না। কারণ, সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে বিএনপির একটি বড় অংশ আগ্রহী ছিল। গত বছর ৫ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থীরা আওয়ামী লীগারদের বিশাল ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে জয়লাভ করেন। বিএনপির সিনিয়র নেতারাসহ দলের প্রায় অধিকাংশ নেতাকর্মী সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে তখন আগ্রহী হয়ে ওঠেন।
শুধু বিএনপি নেতারা নয়, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলেরও ধারণা ছিল, অংশ নিলে বিএনপি নির্বাচনে হয়তো জিতেই যেত। কিন্তু খালেদা জিয়ার জেদ যে শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখে তিনি নির্বাচনে যাবেন না। বিএনপি নেত্রীর আশঙ্কা ছিল, যদি কোন কারণে বিএনপি হেরে যায় এবং শেখ হাসিনা জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন, তাহলে যুবরাজকে মসনদে বসানোর স্বপ্ন চুরমার হয়ে যাবে। কারণ বিএনপি প্রধানের একমাত্র লক্ষ্য দুর্নীতিবাজ পুত্রকে ক্ষমতায় বসানো। তবে তথাকথিত আপসহীন নেত্রীর জেদ শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়নি।
উপজেলা নির্বাচনে ৫ দফার মধ্যে প্রথম দুই দফায় বিএনপি ভালো করলেও শেষের তিন দফায় পর্যায়ক্রমে খারাপ করেছে। অবশ্য শেষের দুই ধাপ অর্থাৎ চতুর্থ ও পঞ্চম ধাপে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়নি বলে পত্রপত্রিকায় ব্যাপকভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনের পর বিএনপি নামের দলটি বলতে গেলে স্থবির হয়ে পড়ে। সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করার মুরোদ যে বিএনপির নেই তা তো বারবার প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি নামের দলটিতো আসলেই কোন রাজনৈতিক দল নয়। কোন লক্ষ্য-আদর্শ নিয়ে এই দল গঠিত হয়নি। স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্য নিয়েই অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা ছিনতাইকারী দেশের প্রথম সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান সেনা ছাউনিতে থেকেই ১৯৭৮ সালে বিএনপি নামের দলটি গঠন করেন। কাদের নিয়ে গঠিত হয়েছিল ওই দল? বিভিন্ন দলের সুবিধাবাদীদের মধ্যে রাষ্ট্রের উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে নীতি-আদর্শ-চরিত্রহীন লোকদের ওই দলে ভাগিয়ে নিয়ে আসেন জে. জিয়া। আমি বহুবার লিখেছি_ বিএনপি কোন রাজনৈতিক দল নয়, এটা বহু মত-পথে বিভক্ত নীতি-আদর্শহীন সুবিধাবাদীদের আড্ডাখানা।
এই অবস্থায় আন্দোলন করতে ব্যর্থ বিএনপি উপজেলা নির্বাচনের পর বলা শুরু করে দল গুছিয়ে তারা সরকার পতনের আন্দোলন শুরু করবে। ঢাকা মহানগর পুনর্গঠন করতে গিয়ে শুরুতেই হোঁচট খেলেন বিএনপি চেয়ারপারসন। সাদেক হোসেন খোকাকে বাদ দিয়ে ব্রিগেডিয়ার (অব.) হান্নান শাহকে আহ্বায়ক করা সংক্রান্ত খবর প্রকাশের পর পদত্যাগ করেন খোকা। পদত্যাগের এক মাস পরেও ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন করতে পারেননি ব্যর্থ নেত্রী। বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে বহু মামলা বিচারাধীন রয়েছে। খালেদা, তারেক, মওদুদ ও ড. মোশাররফের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলার বিচার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ড. মোশাররফকে বিরাট অংকের টাকা পাচারের মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। বহু গড়িমসির পর ম্যাডামের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটিও সক্রিয় হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া তারেকের ওই মামলার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল হয়েছে। অন্যদিকে গ্রেনেড হামলা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হচ্ছেন তারেক রহমান। এ বছরই ওই মামলার রায় হতে পারে। এসব কারণে বিএনপি যখন চরম ল-ভ- অবস্থায় নিপতিত, ঠিক তখনই আজগুবি তত্ত্ব নিয়ে হাজির হয়েছেন রাজনীতির আবর্জনা তারেক রহমান।
২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে তারেক রহমান লন্ডনে বসে বললেন, 'জিয়াউর রহমানই বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ও স্বাধীনতার ঘোষক।' গুণধর পুত্রের ওই বক্তব্যের দু'দিনের মাথায় বেগম জিয়া ২৭ মার্চ ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, 'স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান। তারা যতই বলুন না কেন জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি, কিন্তু প্রকৃত ইতিহাস হচ্ছে স্বাধীনতার ঘোষক ও প্রথম রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন জিয়াউর রহমান।' খালেদা-তারেকের নির্জলা মিথ্যাচারের পর প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, দলীয় নেতারা এর জবাব দেয়া শুরু করেন। সংসদে মন্ত্রী-এমপিরা এর ওপর বহু ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন। দেশের সব টিভি-পত্রপত্রিকা সর্বত্র তারেক-খালেদা ও বিএনপি খবরের হেডলাইন হয়ে গেলেন। দেশের প্রধানমন্ত্রী যদি কোন চোর-ছেঁচড় বা সন্ত্রাসীকে নিয়েও বক্তব্য দেন, তখন ওই বক্তব্য প্রচার মাধ্যমে যথেষ্ট গুরুত্ব পায়। একটি পত্রিকায় লিড নিউজ হলো, 'সংসদে না থেকেও আলোচনায় বিএনপি'। তারেক রহমান দেখলেন তার অপকৌশলে কাজ হয়েছে। একটি মিথ্যা কথা বলে যেভাবে তিনি ও বিএনপি প্রচার মাধ্যমে খবরের শিরোনাম হয়েছেন, এর কোন তুলনা হয় না। তারেক ও বিএনপিকে খবরের হেডলাইন বানানোর সব কৃতিত্ব অবশ্য আওয়ামী লীগ মন্ত্রী-নেতাদের।
আন্দোলনে ব্যর্থ, মামলায় বিপর্যস্ত বিএনপি যখন অস্তিত্ব সংকটে নিপতিত, এই অবস্থায় তারেকের এক দেশদ্রোহী বক্তব্যকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও তারেককে আলোচনার পাদপ্রদীপে নিয়ে এলেন আমাদের প-িত আওয়ামী নেতারা। অপকৌশলে খুশি তারেক দেখলেন, বিপর্যস্ত বিএনপিকে চাঙা করে আলোচনায় রাখতে এই মহাসুযোগকে আরও কাজে লাগাতে হবে। দু'সপ্তাহের মাথায় আরেকটি জঘন্য মিথ্যাচার নিয়ে হাজির হলেন পলাতক তারেক রহমান। ৮ এপ্রিল রাতে লন্ডনে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে তারেক বলেন, '৭২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। বর্তমানে তার কন্যা শেখ হাসিনাও জোর করে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে পাকিস্তানের পাসপোর্টে দেশে ফিরে আসেন। পাকিস্তানের নাগরিক হিসেবে এসে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেন।' ১০ এপ্রিল প্রথম আলোতে প্রকাশিত ওই খবরে এক পর্যায়ে তারেক বলেন, 'শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি।'
দ্বিতীয় পর্যায়ে তারেকের মিথ্যাচারের পরেও আওয়ামী লীগ নেতারা এর প্রতিবাদ করে চলেছেন। কেউ বলেছেন, অর্বাচীন, কেউ বলছেন আহাম্মক, কেউ বলছেন মূর্খ, আবার কেউ বা বলছেন রাষ্ট্রদ্রোহী। তারেক বোধহয় এটাই চেয়েছিলেন। কারণ একজন রাজনীতিবিদের জন্য রাষ্ট্রদ্রোহী খেতাবটি বেশ লোভনীয়। দ্বিতীয়বারের মিথ্যাচারের পরেও জিয়া পুত্র বেশ ভালো প্রচার পেয়েছেন। দেশ-বিদেশে দুর্নীতির প্রতীক হিসেবে পরিচিত পলাতক তারেকের নাম প্রচার মাধ্যমে গত দুই সপ্তাহ ধরে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। দুর্নীতি ও গ্রেনেড হামলা-মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে দুটি বক্তব্য দিয়ে মাত্র ২ সপ্তাহে প্রচার মাধ্যমের পাদপীঠে এসে গেছেন। তারেক হয়তো সহসাই বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে আরেকটি বক্তব্য নিয়ে হাজির হবেন। আওয়ামী নেতারা আবারও ওই মিথ্যা বক্তব্য লুফে নিয়ে তারেকবিরোধী প্রচারণায় নেমে পড়বেন।
এখন প্রশ্ন হলো, তারেকের মিথ্যাচারের কি জবাব দেয়া হবে না? এর স্পষ্ট উত্তর হলো, বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে জড়িত তারেকের বাবা অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জে. জিয়া, তারেকের চাচা আরেক অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলকারী জে. এরশাদ এবং তারেক মাতা বেগম খালেদা জিয়া '৭৫ থেকে '৯৬ পর্যন্ত ২১ বছর রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে অপপ্রচার চালিয়ে ইতিহাসের মহানায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা, বাংলা ও বাঙালির আদরের দুলাল বঙ্গবন্ধু মুজিবের ভাবমূর্তি সামান্যতম বিনষ্ট করতে পারেনি। এই অবস্থায় সন্ত্রাস ও দুর্নীতির রূপকার, একজন মূর্খ, অর্বাচীন, বেকুব, পলাতক আসামির মিথ্যাচারকে কোন প্রকার আমলে না নেয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, 'কুকুর মানুষকে কামড়ায়_ মানুষ কুকুরকে কামড়ায় না।' কুকুরকে অন্যভাবে মোকাবিলা করতে হয়। তাছাড়া তারেকের মতো একজন পলাতক আসামির কোন বক্তব্যের জবাব দেয়ার জন্য আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক ও উপ-দফতর সম্পাদকই যথেষ্ট। জাতির জনক বা জাতীয় নেতাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়া অব্যাহত রাখলে একদিন দেখা যাবে তিনি গণধোলাই খেয়ে গেছেন। এই ধরনের মিথ্যাচারে ভবিষ্যতে প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী-এমপিরা হৈহৈ-রৈরৈ করে কোন ক্রিমিনালকে জাতে উঠাবেন না_ এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তাস খেলায় একটা কথা চালু আছে_ 'অনার্স মাস্ট বি কভারড্ বাই অনার্স'। তেমনিভাবে একজন চিহ্নিত ক্রিমিনালকে ক্রিমিনালি মোকাবিলা করতে হবে। 'কুকুরকে ঘেউ ঘেউ করতে দাও'। ওই প্রবাদবাক্যটি আওয়ামী লীগ নেতারা মেনে চললে বুদ্ধিমানের কাজ করবেন। ক্রিমিনালের ফাঁদে পা দিলে আখেরে ক্রিমিনালেরই লাভ হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীনতা চাননি, বঙ্গবন্ধু অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, বঙ্গবন্ধু প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন না, তারেকের বাবা জিয়াউর রহমান দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ছিলেন, একজন চিহ্নিত ক্রিমিনালের এসব প্রশ্নের জবাব দিতে রীতিমতো আমার ঘৃণা লাগে। তারেকের মতো একজন মূর্খ, দুর্নীতিবাজ ও ক্রিমিনাল না জানলেও বিশ্ববাসী জানেন, সত্তরের নির্বাচনে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের বিজয়ী নেতা হিসেবেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুদ্ধকালীন সরকার গঠন করা হয়। যুদ্ধকালীন সরকারের রাজধানীর নাম কি তারেকের বাবার নামে নামকরণ করা হয়েছিল? জাতির পিতা মুজিবের নামেই মুজিবনগর নামকরণ করা হয়। ইতিহাস সাক্ষী, '১ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ অসহযোগ আন্দোলন চলাকালে বঙ্গবন্ধু ২৫ দিন স্বাধীন দেশের শাসক হিসেবে পূর্ব বাংলা শাসন করেন। ৭ মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন_ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। ইয়াহিয়া খান একাত্তরের মার্চে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গেই আলোচনা করেছিলেন। মুক্তিযোদ্ধারা বঙ্গবন্ধুর নামেই মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য '৭১-এর ২৬ মার্চ প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবকেই রাষ্ট্রদ্রোহী বলেছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার আগে ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন।' ওই সময় কোথায় ছিলেন তারেকের বাবা মেজর জিয়া? তারেকের বাবা প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকলে ৪০০ টাকা বেতনে মুজিবনগর সরকারের অধীনে সেক্টর কমান্ডারের চাকরি করেছিলেন কেন?
তারেক রহমান বঙ্গবন্ধুকে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। তারেকের কথিত অবৈধ প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবই তার বাবা জিয়াউর রহমানকে ১৯৭২-এর এপ্রিলে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিয়োগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুই তার পিতাকে ১৯৭৩ সালে ব্রিগেডিয়ার এবং ১৯৭৪-এর ১৪ সেপ্টেম্বর মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি দিয়েছিলেন। তারেকের বাবা একাত্তরে প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে পরবর্তীকালে ব্রিগেডিয়ার ও মেজর জেনারেলের পদে পদোন্নতি নিলেন কিভাবে? ওই মূর্খ কি জবাব দেবেন, তার পিতা যদি ১৯৭১ সালে দেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হয়ে থাকেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর সরকারে ১৯৭২ সালে মাত্র এক বছরের মাথায় সেনাবাহিনীর উপপ্রধান নিযুক্ত হলেন কিভাবে? তারেক মূর্খ বলে আমরা সমগ্র জাতিই কি মূর্খ হয়ে গেলাম? অন্ধ হলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।
এটা সবাই জানেন, প্রধান সেনাপতি ওসমানী একাত্তরে যুদ্ধকালীন সময়ে জিয়াকে তিনবার গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মেজর জিয়া ২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার কিছু আগে অর্থাৎ রাত ১১টার পর পাকিস্তানি কর্নেলের নির্দেশে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে চট্টগ্রাম বন্দরে যাচ্ছিলেন। এটা ঠিক, ২৭ মার্চ মেজর জিয়া নিজেকে অস্থায়ী সরকার প্রধান দাবি করে তার নিজের নামেই স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। পরে আওয়ামী লীগ নেতাদের ধমক খেয়ে ২৮ মার্চ মতান্তরে ২৯ মার্চ বঙ্গবন্ধুর নামে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন। নিজেকে রাষ্ট্রপ্রধান দাবি করে তার নামে স্বাধীনতা ঘোষণার জন্য পরবর্তীকালে মেজর জিয়ার কোর্ট মার্শাল করা হলে আজকে খালেদা-তারেকরা স্বাধীনতার ইতিহাস এভাবে বিকৃত করতে পারতেন না।
মেজর জিয়া একাত্তরে অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। আবার এই মুক্তিযোদ্ধা জিয়াই স্বাধীনতার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু হত্যা-ষড়যন্ত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। এই সেই জিয়া যিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে স্বাধীনতাবিরোধী শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত করেন। তিনি ঘাতক সর্দার গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলায় ফিরিয়ে আনেন। এক কথায় স্বাধীন বাংলাদেশে স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেন মুক্তিযোদ্ধা জিয়া। মিনা ফারাহ তার 'হিটলার থেকে জিয়া' গ্রন্থে ১৭৮টি কারণ উল্লেখ করে লিখেছেন জিয়া মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তাহের হত্যা মামলার পুনঃবিচারকালে উচ্চ আদালত বলেছে জিয়া মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ২৩ বছরের আন্দোলন সংগ্রামের ফসল হচ্ছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। ড. রেহমান সোবহান লিখেছেন, '১৯৭১ সালের ১ মার্চ থেকে ২৬ মার্চই বাংলাদেশ স্বাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছিল। যার ফলে কখন স্বাধীনতা ঘোষিত হয়েছিল বা কে তা ঘোষণা করেছিলেন এই প্রশ্নটি অবান্তর। গোটা মার্চ মাসজুড়ে বঙ্গবন্ধু যা এবং যতটা সাধন করেছিলেন জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের কোন ইতিহাসে অন্য কোন নেতাই সেরকমটি করতে পারেননি।' বঙ্গবন্ধুবিরোধী হিসেবে পরিচিত বর্তমানে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ লিখেছেন, 'স্বাধীন বাংলাদেশ চিরদিন শেখ মুজিবের কীর্তি হিসেবে ইতিহাসের পাতায় অমলিন হয়ে থাকবে।' আসলে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ, বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধ একে অপরের পরিপূরক। আর এ জন্যই ড. আতিউর রহমান লিখেছেন, 'বাংলাদেশের অপর নাম শেখ মুজিবুর রহমান'। অন্নদা শঙ্কর রায় যথাথই লিখেছেন_ 'যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা যমুনা বহমান, ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।'
©somewhere in net ltd.