![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮১ সালের ১৭ মে যেদিন শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসেন সেদিনকার ঢাকা শহরের কি অবস্থা হয়েছিল তা জানার জন্য পুরনো পত্রিকার সাহায্য নিতে পারি। ১৮ মে দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা হয়েছে, "... দীর্ঘ ছ'বছর বিদেশে অবস্থানের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জ্যেষ্ঠকন্যা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সতরই মে বাংলাদেশে ফিরে এসেছেন। লাখো জনতা অকৃপণ প্রাণঢালা অভ্যর্থনার মধ্য দিয়ে বরণ করে নেন তাদের নেত্রীকে। মধ্যাহ্ন থেকে লক্ষাধিক মানুষ কুর্মিটোলা বিমানবন্দর এলাকায় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলেন কখন শেখ হাসিনাকে বহনকারী বিমানটি অবতরণ করবে। বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে বিমানবন্দরে কোন নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। .....।' ওই সময়কার সরকারী দৈনিক 'দৈনিক বাংলা' ১৮ মে (১৯৮১) শেখ হাসিনার বিমানবন্দর সংবর্ধনা সংবাদে উল্লেখ করেছিল, ওইদিন কালবৈশাখী ঝড়ো হাওয়ার বেগ ছিল ৬৫ মাইল। এবং এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যে লাখো লাখো মানুষ শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য রাস্তায় ছিল। ১৯৮১ সালের ১৮ মে দৈনিক সংবাদের শিরোনাম সংবাদে উল্লেখ করা হয়, '... রাজধানী ঢাকা গতকাল (১৭ মে) মিছিলের শহরে পরিণত হয়েছিল। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মিছিল। শুধু মিছিল আর মিছিল। প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টিরও মিছিলের গতিরোধ করতে পারেনি। স্লোগানেও ভাটা পড়েনি। লাখো কণ্ঠের স্লোগান নগরীকে প্রকম্পিত করেছে। গতকালের ঢাকা ন'বছর আগের কথাই বার বার মনে করিয়ে দিয়েছে। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি যেদিন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে এসেছিলেন, সেদিন স্বজন হারানোর ব্যথা ভুলে গিয়েও লাখ লাখ জনতা রাস্তায় নেমে এসেছিল নেতাকে এক নজর দেখার জন্য। গতকালও হয়েছে তাই। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা শেখ হাসিনাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় মানুষের ঢল নেমেছিল। কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও শেরে বাংলা নগর পরিণত হয়েছিল জনসমুদ্রে। ফার্মগেট থেকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দর পর্যন্ত ট্রাফিক বন্ধ ছিল প্রায় ছ'ঘণ্টা।'
আজ ২০১০ সালে দেশে-বিদেশে রাজনীতিসংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ হাসিনার প্রাধান্যের কথা বলেন ও লেখেন। তিনি সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু, সব রাজনৈতিক আন্দোলন, তৎপরতা, প্রশংসা-নিন্দার লক্ষ্য এবং উপলক্ষ। এটাকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে নাম দেয়া যেতে পারে_"শেখ হাসিনা ফ্যাক্টর।" ২০০১ সালের নির্বাচন যে নীল নকশার নির্বাচন ছিল তা কিন্তু ওই সময় জ্ঞানী গুণীরাও মানতে চাননি। আজ নির্বাচন কমিশন সংস্কার কর্মসূচীতে জ্ঞানী গুণীদের সমর্থন প্রমাণ করে শেখ হাসিনাই সঠিক ছিল। তাছাড়া শেখ হাসিনা দেশে না এলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ব্রাকেটবন্দী হয়ে পড়ত। কোন স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন হতো না, সংসদীয় রাজনীতির কথা কেউ হয়ত বলত না। শেখ হাসিনা এদেশের প্রগতিশীল রাজনীতির পবসবহঃরহম নড়হফ এর মতো কাজ করেছেন।
২০ মে ১৯৮১ সালে শেখ হাসিনার সংবর্ধনার আয়োজনা করা হয়েছিল। সেই সংবর্ধনা সভায় শেখ হাসিনা বলেছিলেন, '... আমি সামান্য মেয়ে। সক্রিয় রাজনীতির দূরে থেকে আমি ঘরসংসার করছিলাম আপনাদের ডাকে সবকিছু ছেড়ে এসেছি। বাংলার দুঃখী মানুষের সেবায় আমি আমার এ জীবন দান করতে চাই।
ঈদগাহ ময়দানের সেই গণসংবর্ধনা সভায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, '... গত ৬ বছরে দেশের মানুষের কোন রকম উন্নতি তো আমি দেখিনি। মানুষ চরম দুর্দশার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। কৃষক-শ্রমিক তার ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষক তার উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য পাচ্ছে না। তিনি উত্তাল জনসমুদ্রের কাছে প্রশ্ন রেখে বলেন, তবে কেন বঙ্গবন্ধু শেখ মণি ও চার নেতাকে হত্যা করা হলো। ...।" (সংবাদ ২২ মে ১৯৮১ )
পরবর্তীতে এই বক্তব্যের প্রতিধ্বনি শুনতে পাই কবির কবিতায়। কবি মহাদেব সাহা তাঁর 'আমি কি বলতে পেরেছিলাম' দীর্ঘ কবিতায় এমন করে বলেছিলেন_
'... তোমার রক্ত নিয়েও বাংলায় চালের দাম কমেনি
তোমার বুকে গুলি চালিয়েও কাপড় সস্তা হয়নি এখানে,
দুধের শিশু এখনো না খেয়ে মরছে কেউ থামাতে পারেনি ....।'
আমাদের দেশে এখনও অতি বুদ্ধিমান লোক বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করে থাকেন। সুযোগ পেলেই তারা বলেন বঙ্গবন্ধু নেতা হিসেবে সফল, প্রশাসক হিসেবে নয়। বঙ্গবন্ধু প্রশাসক হিসেবে কতটা সফল ছিলেন সেটার জন্য দুই একটা প্রমাণ দিলেই বোঝা যায়। ১৯৭২ সালে জানুয়ারি মাসে ৪০ লাখ টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর এমনি এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি ছিল যে সরকারকে ৯০ হাজার পাকিস্তানী যুদ্ধবন্দী, আটককৃত ৩৭ হাজার রাজাকার ও দালাল এবং সোয়া লাখ ভারতীয় সৈন্য বাহিনীর খাদ্য সরবরাহের এক কঠিন দায়িত্ব পালন করতে হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১১,০০০ কোটি টাকার ধ্বংসস্তুপের ওপর আরও ১৩,০০০ কোটি টাকার উন্নয়ন দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন। তারপরও বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কিছু কিছু জ্ঞানপাপীরা এখনও বিভ্রান্ত ছড়িয়ে থাকে। ২০০২ সালে অধ্যাপক আবুল বারকাত এক অর্থনৈতিক সমীক্ষা প্রকাশ করেছিলেন। তার কিছুটা অংশ এই পরিসরে উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশ আর মালয়েশিয়ার মোট জাতীয় আয় ছিল প্রায় সমান, ১০৩৩ কোটি ডলার। তিরিশ বছর পরে মালয়েশিয়া জাতীয় নেতৃত্বে 'দেশের মাটি উত্থিত' অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণের পর তাদের মোট জাতীয় আয় এখন ৮,৬০০ কোটি ডলার, আর আমাদের ৪,৮০০ কোটি ডলার। অথচ বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে এবং যেসব নীতিমালা প্রথম পঞ্চম বার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় গ্রহণ করা হয়েছিল সেগুলো চলতে থাকলে বাংলাদেশের মোট জাতীয় আয় ( ২০০২ সালে ) হতে পারত ১৬,০০০ কোটি ডলার। স্বাধীন বাংলাদেশের উন্নয়নকে স্তব্ধ করার জন্য দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারী বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল। তারা কখনই চায়নি শেখ হাসিনা স্বদেশে মাটিতে ফিরে আসুক। তাই তো শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগ পর্যন্ত নানান কায়দায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আগমনকে বাধাগ্রস্ত করে এসেছে। এমন কি 'শেখ হাসিনা প্রতিরোধ কমিটি' পর্যন্ত করেছিল। ১৯৮১ সালের ১৬ মে সে সময়কার দৈনিক পত্রিকাগুলোয় এই অর্বাচীনদের নানান কথাবার্তা রয়েছে। পরদিন অর্থাৎ ১৭ মে সে সময়কার সরকারী মালিকানাধীন জাতীয় দৈনিক 'দৈনিক বাংলা'য় একটা সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদটি ছিল, 'শেখ হাসিনা প্রতিরোধ কমিটি সংঘর্ষ এড়ানোর জন্যই কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে প্রতিরোধ মিছিল ও বিক্ষোভ দেখানো কর্মসূচী প্রত্যাহার করেছে।' বোধকরি এটা উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই, সে সময়কার সরকারের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনার আগমন প্রতিরোধ কমিটি করা হয়েছিল। কিন্তু সে সময়টাতে বঙ্গবন্ধু কন্যার দেশে প্রত্যাবর্তনের সংবাদে গণসমুদ্রে প্রবল জোয়ারের পূর্বাভাস দেখা দিয়েছিল; অসম্ভব হয়ে উঠেছিল তাঁর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন প্রতিরোধ করা। কিন্তু ১৯৮১ সালে গড়া সেই প্রতিরোধ কমিটির পৃষ্ঠপোষকরা আজও প্রতিটি মুহূতে শেখ হাসিনাকে প্রতিরোধ করতে চক্রান্ত করে যাচ্ছে। এরাই শেখ হাসিনার প্রাণনাশের ব্যর্থ চেষ্টা করেছে এবং এরাই ২১ আগস্টের মতো ঘটনা ঘটিয়েছে।
শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলে শিল্পী, কবি ও সাহিত্যিকরা সাহসের একটা ঠিকানা পেয়েছিলেন। রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তকে বঙ্গবন্ধুর খুনী চক্র তথা তৎকালীন শাসকগোষ্ঠী ভুলিয়ে দিতে চেয়েছিল। বাঙালী সংস্কৃতির সব কিছুর উপর একটা অলিখিত নিষেধাজ্ঞা ছিল। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখা যাবে, হুসেন শাহীর সময়ে বাংলার রাজনৈতিক তথা আর্থসামাজিক অবস্থার অনেক উন্নতি সাধিত হয়েছিল। মহাপ্রভু চৈতন্য দেব ওই সময়টাতে প্রেমভক্তির ধর্মকে ভাবোম্মদনার মধ্য দিয়েই সাধারণের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। আবার হুসেন শাহীর দরবারে পারসিক ও আরবিক সংস্কৃতির প্রভাব ছিল প্রবল। সামগ্রিকভাবে ওই সময়টাতে মানুষের অনুভূতির সঙ্গে শিল্পানুভূতির এক যুগল বন্ধন ছিল। হুসেন শাহীর পর বঙ্গবন্ধুর সময়ে বাংলাদেশে এক লোকায়ত সংস্কৃতিক প্রভাব ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খুনীরা বাংলাদেশকে বিজাতীয় সংস্কৃতির চারণ ভূমিতে পরিণত করেছিল। যে কারণে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এলে সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছিল। শেখ হাসিনার মতো বাঙালী সংস্কৃতির পৃষ্ঠপোষক আর কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাবে না।
১৯৯৮ সালে এদেশে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। দেশী-বিদেশী সংবাদমাধ্যমগুলো এই বন্যায় ব্যাপক প্রাণহানির আশঙ্কা করেছিল। বিবিসির মতো সংবাদ মাধ্যমগুলো অন্তত ১০ লাখ লোক মারা যাবে বলে আশঙ্কা করেছিল। এই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অমানুষিক পরিশ্রম করেছিলেন। বন্যার পর ক্ষুদে কৃষক, বর্গাচাষী, ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ দেয়ার জন্য নয়া নীতিমালা তৈরি, আদেশ প্রদান, ব্যাংকের শাখায় কারা ঋণ পাচ্ছে তার তালিকা করা। এতসব যুগান্তকারী কাজকর্ম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই সম্ভব হয়েছিল। এগুলোকে আমরা যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত না বলে আর কি বলব। তাঁর কর্মনিষ্ঠার কারণে একজন মানুষও না খেয়ে মরেনি। আশ্চর্যজনকভাবে বন্যার পরের বছর বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদন বেড়ে ছিল।
বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পর মানুয়ের উপর ঋণের বোঝা বাড়ানো হয়েছে। ধনী আরও ধনী হয়েছে, গরিব আর গরিব হয়েছে। শেখ হাসিনা দেশে আসার পর থেকে ক্ষমতায় থাকুন আর নাই থাকুন সব সময় চেষ্টা করেছেন মানুয়ের কষ্ট লাঘব করা যায়। দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে সব সময় তাঁর চেষ্টা ছিল কীভাবে দেশের জনগণের ঋণের বোঝা কমানো যায়।
১৯৯৭ সালে মাইক্রোক্রেডিট সামিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করেন, সেই সময় তিনি হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ক্লিনটনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সেই সময় হোয়াইট হাউসের ওই সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কাছে দাবি করেছিলেন, বাংলাদেশ ওই সময় পর্যন্ত যে ঋণ নিয়েছিল তা যেন মওকুফ করে দেন। সেই সময় প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন মোট ঋণের একাংশ মওকুফ করে দেন। সেই মওকুফ করা অর্থ বাংলাদেশের পরিবেশ সংরক্ষণসহ বনাঞ্চল ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল।
বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন বঙ্গবন্ধু মৃত্যুর পর এক কল্পনাবিলাসী বিষয়ে পরিণত হয়েছিল। ২১ বছর শেখ হাসিনা সরকারের দায়িত্ব নিয়ে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছেন। যদি ১৯৭৫ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা না হতো তাহলে আরও অনেক আগেই আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারতাম। ক্ষুধা থেকে মুক্তি ও দারিদ্র্যের লজ্জা ঘুচিয়ে বাংলাদেশ অনেক আগেই বিশ্বের দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হতো। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরের স্বৈরশাসন ও তাদের শোষণ-বঞ্চনা-অবহেলা-লুটপাট কৃষিখাতসহ সব ধরনের উন্নয়ন সম্ভাবনাকে নস্যাৎ করে দিয়েছিল। বিশেষ করে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৫ সালের মার্চ পর্যন্ত বেগম জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপির শাসনামলে কৃষিখাতে নেমে এসেছিল সামগ্রিক স্থবিরতা। এমনকি প্রবৃদ্ধিও হার নেমে এসেছিল শূন্যের কোঠায়। সার, কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণ বিতরণে ক্ষমতার শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের দুর্নীতি, চরম অব্যবস্থা, মজুতদারি, চোরাকারবারি সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ফলে সারের দাম হয়েছিল আকাশচুম্বী, সৃষ্টি হয়েছিল ভয়াবহ সার সঙ্কটের। ডিজেল ও বিদ্যুতের অভাবে সেচ ব্যবস্থা পড়েছিল ভেঙে। সেচের অভাবে হাজার হাজার জমির ফসল মাঠেই শুকিয়ে গিয়েছিল। কৃষকের এই চরম দুরবস্থার সময়ও খালেদা জিয়ার সরকার ছিল নির্বিকার। অসহায় ও বিক্ষুব্ধ কৃষক ভাইয়েরা ন্যায্যমূল্যে সারের দাবি জানাতে গেলে সারের বদলে খালেদা জিয়া দেন গুলির নির্দেশ। নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয় ১৭ জন নিরীহ কৃষককে। রক্তে রঞ্জিত হয় বাংলার শ্যামল প্রান্তর সবুজ ধানের শীষ। এই পৈশাচিক বর্বরতা সমগ্র জাতিকে করে সস্তিত, শোকাহত ও ক্ষুব্ধ।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে জিতে জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ২১ বছরব্যাপী নব্য বর্গিদের শোষণ-বঞ্চনা-অবহেলার শিকার কৃষক ভাইদের সামনে নতুন করে আশার আলো জ্বলে ওঠে। সার সঙ্কটের নিরসন এবং সময়মত সব ধরনের কৃষি উপকরণ কৃষক ভাইদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার জন্য সরকার জরুরী ভিত্তিতে কর্মপরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণ করে। আন্তঃমন্ত্রণালয় ও বিভাগীয় সমন্বয়ের মাধ্যমে সারের বিতরণ ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানো হয়। তদুপরি দাতা দেশ ও সংস্থাগুলোর বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকার সারসহ কৃষি উপকরণে ভর্তুকি প্রদানের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ১৯৯৬-৯৭ অর্থ বছরেই ১০০ কোটি টাকার একটি ভর্তুকি তহবিল গঠন করেন। ভর্তুকি মূল্যে পর্যাপ্ত সার সরবরাহের পাশাপাশি সারের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির অপচেষ্টা রোধের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সারের বাফার স্টক গড়ে তোলা হয়।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫২
ভুয়া প্রেমিক বলেছেন: উনি এসেছিলেন বলেই আজকে বাংলাদেশের এই অবস্থা