নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সবার কথা

আহমেদ রশীদ

আহমেদ রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সম্পদই সমস্যা বিএনপির!!!!!!!!!!

১৯ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১০:১৬

নেতাদের অঢেল সম্পদই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে বিএনপির। দলের সিনিয়র নেতাসহ মধ্যমসারীর অনেক নেতারই নামে-বেনামে রয়েছে অনেক অর্থ-সম্পদ। আর এ সম্পদকে রক্ষার করতেই সরকার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে নামছে না দলটির সুবিধাবাদী এসব নেতারা। যার ফলে বিএনপির রাজপথের আন্দোলন ব্যর্থ হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।



নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির মধ্যম সারির এক নেতা বলেন, সম্পদই এক সময়ের তুখোর নেতাদেরকে আপোষকামী করেছে। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা সামনের কাতারে ছিলেন তারা এখন ম্রিয়মান। এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর তৎকালীন সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের মাঠে সক্রিয় থেকে যেসব বিএনপি নেতা পরবর্তী সময় সরকারে ও দলে বড় বড় পদ পেয়েছেন তারাও এখন নিজেদের গুটিয়ে রেখেছেন। আর ৯০ এর গণভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের অনেকেরই চরিত্র হনন হয়েছে। তিনি বলেন, নব্বই কিংবা তার পরবর্তি সময়ের রাজপথের বিপ্লবীরা আলাদিনের চ্যারাগের বদৌলতে প্রাপ্ত অঢেল সম্পদ আর আরাম-আয়েশী জীবন ছেড়ে রৌদ্র-ঝড় মাথায় নিয়ে রাজপথে বের হতে চাননি।



বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থকরা জানান, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য থেকে শুরু করে নির্বাহী কমিটির সদস্য এমনকি ছাত্রদল, যুবদল ও অন্যান্য অঙ্গসংগঠনের অনেক নেতা রাজনীতি থেকে সম্পদকে গুরুত্ত্ব দিয়ে অঢেল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। এর মধ্যে অনেকের বিরুদ্ধে দূর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) ইতিমধ্যেই মামলাও হয়েছে। নেতারা এসব মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানীমূলক মামলা বলে চালিয়ে দিলেও অনেকের বাস্তবতা ভিন্ন রয়েছে বলে মনে করছেন কর্মীরা। তাদের চোখের সামনে যেসকল নেতা রাতারাতি পরিবর্তন হয়েছেন, রিক্সা-বাস ছেড়ে যারা বিলাসবহুল গাড়ি হাকাচ্ছেন তাদের বিষয়ে আড়ালে-আবডালে ক্ষুব্ধ মন্তব্য করছেন। তারা জানান, নব্বই দশকের ডাকসুর ভিপি আমান উল্লাহ আমান কিংবা মোসাদ্দেক আলী ফালুর মতো নেতারা এখন ধনকুবের। তাদের মতো নেতারা ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন উৎস থেকে সম্পদের মালিক হলেও দলের প্রয়োজনে তাদেরকে কাছে পাওয়া যায়নি। এমনকি তাদের সম্পদ রক্ষার জন্য সরকারের সাথে গোপন আতাতের অভিযোগও করছেন কর্মীরা। এছাড়া এম এইচ সেলিমের (সিলভার সেলিম) মতো অনেক সুবিধাবাদী বিএনপি নেতা বিগত শাসনামলে অর্থ-বৈভবের মালিক হয়ে এখন রাজনীতি থেকেই নিস্ক্রিয় অবস্থায় রয়েছেন। তারা অপেক্ষা করছেন- আবার কখন দল ক্ষমতায় যায় তার জন্য।



এ ব্যাপারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, আমাদের দলের অনেক নেতার আর্থিক অবস্থান ভালো এটা সত্য। কিন্তু তার মানে সকলে যে দুর্নীতি করেছে তা নয়। আর সম্পদশালী এসব নেতা আন্দোলন থেকে দুরে ছিলো তাও সত্য নয়। বরং সরকারের নির্যাতনের কারনেই নেতারা আড়াল থেকে আন্দোলনকে পরিচালনা করেছে।



অভিযোগ রয়েছে ঢাকা মহানগর বিএনপির কতিপয় নেতাদের বিরুদ্ধেও। মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা অভিযোগ করে বলেন, অনেক ত্যাগী নেতাকে পাশ কাটিয়ে অতি ধনাঢ্য কাইয়ুমকে ঢাকা মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। বিএনপির সর্বশেষ শাসনামলে যেসব নেতা রীতিমতো আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন কাইয়ুম তাদের অন্যতম। বিএনপিকে ব্যবহার করে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামালেও খোদ বিএনপি চেয়ারপার্সনের চরম দুঃসময়ে দেখা মেলেনি কাইয়ুমের মতো অধিকাংশ বিএনপি নেতার। তাদের কাছে দল ও দলের চেয়ারপারসন বড় বিষয় নয়, নিজের সম্পদ বাঁচানোর কৌশলই ছিলো প্রধান বিষয়।



এসব বিষয়ে বিএনপির এক নেতা বলেন, সম্পদ রক্ষার জন্যই নেতাদের বিপ্লবী চরিত্র হারিয়ে ফেলেছেন। আর দলের মধ্যে রাতারাতি ধনাঢ্য নেতৃত্ত্বই রাজনৈতিক কর্মসূচিসহ ও সারাদেশে বিএনপির সাংগঠনিক দুরবস্থার জন্য দায়ী।



অপরদিকে ভিন্ন চিত্র বিরাজ করছে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পদ নিয়ে। দল বিভিন্ন সময়ে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে অনেক নেতা অর্থ-সম্পদ ও বিত্ত-বৈভবের মালিক হলেও দরিদ্র রয়ে গেছে বিএনপি। এসব বিষয়ে কর্মীরা জানান, আমাদের একজন ধনকুব নেতার নামে যে সম্পদ রয়েছে তা দলের নামেও নেই।



জানা গেছে, ১৯৭৮ থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন। ১৯৯১-৯৬ এবং ২০০১-০৭ মেয়াদে মোট ১০ বছর খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বিএনপি ক্ষমতায় ছিল। ১৯৯৬-২০০১ ও ২০০৮-২০১৩ পর্যন্ত তিনি বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন। দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকার পরও দলটির উল্লেখ করার মতো সম্পদ বলতে আছে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়টি এবং কয়েকটি গাড়ি। এর অতিরিক্ত যা আছে তা হল জাতীয়তাবাদী প্রকাশনার নামে দৈনিক দিনকাল পত্রিকা ও পত্রিকাটির নামে তেজগাঁওয়ে সাড়ে তিন কাঠা জায়গা। কিন্তু এই সম্পদ রক্ষনাবেক্ষন করার জন্য নেই সঠিক তদারকি। কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ যাবতীয় খরচ চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের।



অর্থনৈতিকভাবে দলের এমন অবস্থা হলেও এক-এগার সরকারের সময় নেতারা স্বেচ্ছায় দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) সম্পদের যে হিসাব জমা দিয়েছিলেন তাতে জানা যায়, কারও কারও ৬০-৬৫টি ফ্ল্যাট এবং ১০-২০টি পর্যন্ত বাড়ি আছে। যদিও এগুলো তাদের ছেলেমেয়ে কিংবা স্ত্রীর নামে। অথচ ছেলেমেয়ে বা স্ত্রীর নিজস্ব কোনো পেশার উলেখ ছিল না।



তবে এসব বিষয়ে অনেক নেতা দাবি করছেন, ১/১১-এর পরিবর্তীত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দলের সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য ও গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের অনেকেই অর্থকষ্টে রয়েছেন। অনেকের ব্যাংক হিসাব জব্দ রয়েছে। তাই দলের প্রয়োজনে আশানুরুপভাবে পাশে দাড়াতে পারেননি তারা।



দলের শীর্ষ নেতাদের নামে সম্পদের পাহাড় থাকলেও ব্যাতিক্রম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ক্ষেত্রে। সম্পদের মধ্যে তার একটি বাড়ি আছে। সেটিও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানিকে ভাড়া দেওয়া। ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করা হলে তিনি গুলশানে দলের সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব.) কামরুল ইসলামের দোতলা একটি বাড়ি ভাড়া নেন মাসিক দুই লাখ টাকায়।



সরকার বিরোধী আন্দোলন ব্যার্থতার কারনে দলের সিনিয়র নেতাদের দায়ি করে দলের তৃণমূল স্তরের নেতাকর্মীরা বলেন, দলকে পূনর্গঠন করতে হবে। আর এই পূনর্গঠনের জন্য কাইয়ুমের মতো নেতারাই যদি আবার প্রাধান্য পান তাহলে বেকায়দা অবস্থা থেকে বিএনপি বেরিয়ে আসতে পারবে না। আর এই জন্য শুধু ঢাকা মহানগর বিএনপির পুনর্গঠনই নয়, দলের নেতৃত্বই খোলনলচে পাল্টে ফেলা দরকার।



বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, অর্থ সম্পদ যে বিএনপির আন্দোলনের কারন তা ঠিক নয়। বর্তমানে সরকার বিরোধী দলকে ঠেকাতে যে নির্যাতন-জুলুম করেছে তার সামনে আমাদের নেতা কর্মীরা সংগঠিত হতে পারে নাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.