![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
রাজার মৃত্যুতে এক নিশ্বাসেই এলান করা হয় ‘দ্য কিং ইজ ডেড, লং লিভ দ্য কিং’। পুরোনো রাজার মৃত্যু ঘোষণা আর নতুনকে এভাবে বরণের রীতি চালু আছে কোথাও কোথাও। তবে পাকিস্তান এমন এক আত্মঘাতী রাষ্ট্র, বারবার নিজেরই পরাজয় ঘোষণার পরিহাস যাকে করে যেতে হয়। পাকিস্তান যতবারই ১৯৭১-এ বাংলাদেশে চালানো যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দায় অস্বীকার করবে, ততবারই বাংলাদেশে তার পরাজয়ের পুনরুদ্যাপন হবে। মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান ইজ ডেড নাউ’। তিনি বলেছিলেন, ‘পাকিস্তান আজ মৃত এবং অসংখ্য আদমসন্তানের লাশের তলায় তার কবর রচিত হয়েছে।…পূর্বপরিকল্পিত গণহত্যায় মত্ত হয়ে ওঠার আগে ইয়াহিয়ার ভাবা উচিত ছিল, তিনি নিজেই পাকিস্তানের কবর রচনা করছেন।’
পূর্ব বাংলায় পাকিস্তানের মৃত্যু না হলে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হতো না। যে বঙ্গীয় মুসলমানের আন্দোলন ও ভোটের ভিত্তিতে পাকিস্তানের জন্ম, তাদের বঞ্চিত করা ও হত্যাই ছিল পাকিস্তানের আত্মঘাত। এর ৪৪ বছর পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলিয়ে, আদালতে শাস্তিপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে পাকিস্তান কেবল বাংলাদেশের পুরোনো ক্ষতকে আরও বিষাক্ত করছে না, নিজের ঘাকেও আরও পচাচ্ছে। ১৯৭১ সালে তাই পাকিস্তানের একটি অংশেরই মৃত্যু ঘটেনি, পাকিস্তান হয়ে পড়েছিল গণহত্যার দায়ে দাগি রাষ্ট্র। এই দায় তাদের নিতেই হবে এবং স্বদেশি জনগণ ও বাংলাদেশের জনগণের কাছে ক্ষমা চাইতেই হবে।
অতীতের স্মৃতি ও ইতিহাস কাউকে সজাগ করে আবার কাউকে তা ভূতগ্রস্তের মতো তাড়িয়ে বেড়ায়। পাকিস্তানের কাঁধে একাত্তরের ভূত সব সময়ই চেপে ছিল। তবে তা রাষ্ট্রটিকে নাড়ানো শুরু করল বাংলাদেশ যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করা মাত্রই। পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন ২০০৯ সালের ১৪ মে লেখে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ‘১৯৭১ সালে অভিযোগকৃত নৃশংসতার জন্য বাংলাদেশের তরফে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি প্রত্যাখ্যান করেছে।’ সেখানে আরও বলা হয়, বাংলাদেশের উচিত হবে ‘সময়ের মধ্যে বরফজমা’ হয়ে না থেকে সামনে এগোনো। পরিহাস হলো, বাংলাদেশ যখন এই ভূখণ্ডে করা সবচেয়ে বড় অপরাধের বিচার শেষ করে সামনে এগিয়ে যেতে চাইছে, তখন পাকিস্তান নিজেই অতীতের পরাজয়ের বরফ স্মৃতির মধ্যে জমে থাকতে ভালোবাসছে। এবং এই বিচার চলাকালে যতবারই পাকিস্তান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ের সমালোচনা করেছে, ততবারই (অন্তত চারবার) বাংলাদেশকে পাকিস্তানের হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ জানাতে হয়েছে। আর এবার গত ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া প্রতিবাদপত্রকে ‘ভিত্তিহীন দাবি’ আখ্যায়িত করে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়। এ ছাড়া গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধে মদদ দেওয়ার অভিযোগও পাকিস্তান প্রত্যাখ্যান করেছে (প্রথম আলো, ১ ডিসেম্বর)। তারা পাকিস্তানে নিযুক্ত বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারকে তলব করে এই প্রতিবাদপত্র ‘শুনিয়েও’ দিয়েছে।
এই প্রতিবাদের মাধ্যমে তিনটি জিনিস প্রমাণ করেছে পাকিস্তান। প্রথমত, যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি প্রত্যাখ্যানের সময় তাদের ‘পাকিস্তানপন্থী’ দাবি করে পাকিস্তান প্রমাণ করেছে যুদ্ধাপরাধ ও তা সংঘটনকারীদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক অতীতেও ছিল এবং এখনো রয়েছে। দ্বিতীয়ত, এর মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি বাহিনীর সহযোগীদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের সত্যতা তারাই প্রতিপাদন করে দিয়েছে। এবং তৃতীয়ত, অস্বীকারের ঐতিহ্যে শক্ত থেকে পাকিস্তান নিজের অতীতের কলঙ্কই কেবল নয়, খোলা করে দিয়েছে বর্তমানের প্রতিক্রিয়াশীলতাকেও। এ দিয়ে পাকিস্তান তার সব প্রতিপক্ষকেই সুবিধা করে দিয়েছে।
ওই প্রতিবাদপত্রে তারা ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পাদিত ১৯৭৪ সালের সিমলা চুক্তির অজুহাত তুলে দাবি করেছে যে বাংলাদেশ তো সে সময় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না করার কথা বলেছিল! সম্পূর্ণ মিথ্যা। ওই চুক্তিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপে বঙ্গবন্ধু ভারতের হাতে ধৃত ১৯৫ জন ছাড়া আর সব পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধী সেনার বিচার করার দাবি ছেড়ে দেন। তবে সেখানে শর্ত ছিল যে পাকিস্তান নিজেই ওই ১৯৫ জনের বিচার করবে। কিন্তু চুক্তি ভঙ্গ করে পাকিস্তান ‘বিচারে’ তাদের ‘নির্দোষ’ ঘোষণা করে। দ্বিতীয়ত, সেখানে বাংলাদেশি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার না-করার কোনো কথাই ছিল না। এবং মূলত ওই চুক্তিতে লিখিতভাবে পাকিস্তান ১৯৭১ সালে তাদের ভূমিকার জন্য ‘রিগ্রেট’ তথা অনুশোচনা জানিয়েছিল। অনুশোচনা আর ক্ষমা প্রার্থনা এক জিনিস নয় যদিও; তবু এর মাধ্যমে তারা তাদের অপরাধ একপ্রকারে স্বীকার করেছিল।
পাকিস্তান এমন এক আত্মঘাতী রাষ্ট্র, বারবার নিজেরই পরাজয় ঘোষণার পরিহাস যাকে করে যেতে হয়। পাকিস্তান যতবারই ১৯৭১-এর অপরাধের দায় অস্বীকার করবে, ততবারই বাংলাদেশে তার নতুন করে পরাজয় ঘটবে
ইতালীয় দার্শনিক জর্জ সান্তায়ানার একটি মূল্যবান কথা সবারই মনে রাখা উচিত। তিনি বলেছিলেন, যারা তাদের অতীতের ভুল মনে রাখে না, তারা সেই ভুলের পুনরাবৃত্তির অভিশাপে পতিত হতে বাধ্য। পাকিস্তানকে ছাড়াই বাংলাদেশ চলছে ও চলবে, কিন্তু বাংলাদেশের কাছ থেকে দায়মুক্তি ছাড়া পাকিস্তান চলতে পারবে না। পাকিস্তান যত দিন বাংলাদেশের প্রতি তাদের অপরাধ, দায়, দেনা অস্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনার দাবি বাতিল করবে, তত দিন সে বালুচদের নিপীড়ন করা বন্ধ করবে না। তত দিন পাকিস্তানের সমাজে শান্তি, গণতন্ত্র ও আইনের শাসন আসবে না। এ ধরনের আচরণের কারণেই কিন্তু ১৯৭১ ঘটেছিল। উগ্র জাতীয়তাবাদী দম্ভ দিয়ে হিটলার জার্মানিকে আরও তলিয়েই দিয়েছিলেন। করেছিলেন লজ্জিত, বিভক্ত ও পরাজিত। জার্মানি ও জাপান নিজেদের বদলে নিয়েছে। যেদিন পাকিস্তান ১৯৭১-এর দায় স্বীকার করবে, সেদিন থেকে পাকিস্তানের জনগণের লজ্জা ও অপরাধবোধ যেমন লাঘব হবে, তেমনি সেখানে বিকশিত হতে থাকবে গণতান্ত্রিক রাজনীতি ও ন্যায়ের বিচার। আর এ দুটি ছাড়া পাকিস্তান কেন, কোনো দেশই চলতে পারবে না।
এটা যেমন ইতিহাসের সঙ্গে ইতিহাসের লড়াই, তেমনি স্মৃতির বিরুদ্ধে স্মৃতিরও লড়াই। পাকিস্তানের নাগরিক সমাজ ও বুদ্ধিজীবীদের অনেকের মধ্যেই একাত্তর নিয়ে অনুশোচনা রয়েছে, অপরাধবোধ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে তার প্রকাশ আমরা দেখেছি। বাংলাদেশের ইতিহাসচর্চা ও পাঠ্যপুস্তকে ১৯৭১ হলো ‘গণহত্যা’ ও ‘স্বাধীনতার’ বছর। পাকিস্তানে নিচের ক্লাসে ইতিহাস পড়ানো হয় না, পড়ানো হয় ‘পাকিস্তান স্টাডিজ’। কিন্তু নিচের স্তরের পাঠ্যপুস্তকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে ‘পূর্ব পাকিস্তানের পতন’, ‘বিপর্যয়’ ও ‘ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখায়। অবশ্য ও লেভেলের ইংরেজিতে রচিত ইতিহাস বইয়ে লেখা আছে ‘নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের’ কথা। উপমহাদেশে ইতিহাস-লিখন অতিমাত্রায় রাজনীতি-জড়িত ব্যাপার হয়ে আছে। রাজনৈতিক সংঘাতের আগুনও ইতিহাসের বিতর্ক থেকেই বারুদ পেয়ে আসছে। সহনশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য এটা শুভ লক্ষণ নয়।
বুলগেরীয় বংশোদ্ভূত ফরাসি ইতিহাসের দার্শনিক যেভান টোডোরভ কয়েকটি দেশের গণহত্যার স্মৃতি নিয়ে একটা বই লিখেছেন: মেমরি অ্যাজ এ রিমেডি অব এভিল। স্মৃতি অশুভ’র প্রতিষেধক। পাশাপাশি তিনি সতর্ক করেছেন, যৌথস্মৃতি যেমন যৌথ বেদনার উপশম করে তেমনি তা অশুভর সেবাও করতে পারে এবং বয়ে আনতে পারে বিপর্যয়। গ্রিক উপকথার ইশপের কথা: এযাবৎকালের সবচেয়ে ভালো জিনিসটা কী? উত্তর: ভাষা। কারণ তা দিয়ে আমরা জানাতে পারি ভালোবাসা আবার ভাষাই প্রকাশ করে ঘৃণাকে। স্মৃতিও সে রকম। স্মৃতির ব্যবহার কেমন হবে, তা নির্ভর করবে কীভাবে ও কোন উদ্দেশ্যে আমরা একে জাগাচ্ছি, মনে করছি এবং ব্যবহার করছি। হিটলার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরাজয়ের স্মৃতিকে ঘৃণা ও প্রতিহিংসা জাগাতে ব্যবহার করেছিলেন। উপমহাদেশের সাম্প্রদায়িকতাবাদীদেরও হাতিয়ার হলো খণ্ডিত ইতিহাস আর বাছাই করা স্মৃতি। স্মৃতিকে প্রতিহিংসার জন্য চাঙা রাখার ফল অশুভই হয়। এটা মনে রাখতে হবে বাংলাদেশকে। হিটলার সর্বক্ষণ জার্মান জাতিকে অতীতের পরাজয়ের স্মৃতিতে আচ্ছন্ন করে রেখেছিলেন এবং জার্মানিকে টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন ভয়াবহতম গণহত্যা ও আরেকটি মর্মান্তিক পরাজয়ের দিকে। আমাদের ১৯৭১ তো বটেই, কমপক্ষে ৫০০ বছরের ঐতিহাসিক স্মৃতিকে দরকার। দরকার সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য, ভবিষ্যতের বিপদ এড়ানোর জন্য এবং মুক্তিকামী বাংলাদেশের স্বপ্ন জাগরূক রাখার জন্য।
বাংলাদেশের বিজয়ের মাসে বিজয়ের স্মৃতির যাপনের পাশাপাশি বারবার স্বপ্ন ভঙ্গ হওয়ার স্মৃতিরও চারণ হোক। Click This Link
২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
সাঈদ ফারুক বলেছেন: হ আর ভারত খালি বছর বছর কিলাই তাছে আর জিতাছে....আর আমরা দাঁত কেলাইয়া হারতাছি।
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩৬
রানার ব্লগ বলেছেন: সাঈদ ফারুক @ ঠিক বলছেন ভাই এর জন্য আপনাদের প্রধান কাজ ফাকি গো গাল চাটা। করন ভারোত মারে তাই ফাকি গো গাল চাইটা যদি মাইর ঠেকাইতে পারি।
সালার বোনলেস পাবলিক।
৪| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০১
প্রতিবিম্ব প্রতিচ্ছায়া বলেছেন: ফারুক, পাকিদের বিরুদ্ধে বললে আপনার কষ্ট লাগার কারন কী?
©somewhere in net ltd.
১|
০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৩০
রানার ব্লগ বলেছেন: পাকিস্থানী পতাকা টা নামিয়ে ফেলুন দয়া করে।