![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চট্টগ্রামের মিরসরাইতে সাগর-ঘেঁষে প্রায় ৩০ হাজার একর জমি নিয়ে দেশের বৃহত্তম শিল্পসিটি গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এই এক শিল্পসিটিতেই অন্তত ১০টি ইকোনমিক জোন নির্মাণ করা হবে, যার প্রতিটির আকার হবে ৩০০ থেকে ৫০০ একর। এর মধ্যে প্রথম ফেজের ভূমি উন্নয়নে অর্থ দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় ফেজের উন্নয়নেও প্রায় ১০০ মিলিয়ন ডলার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম করিডরে এটিই হবে দেশের শিল্পোৎপাদনের প্রাণকেন্দ্র। সম্ভাবনার এই শিল্পনগরীর দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ১৯ কিলোমিটার যা ফেনী পর্যন্ত বিস্তৃত। বিভিন্ন খাতের প্রায় ১২০০ শিল্প প্লট গড়ে তোলা হবে, যার মাধ্যমে অন্তত ১০ লাখ লোকের কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে মেরিন ড্রাইভ রোডে এই শিল্পসিটির দূরত্ব হবে ৫৫ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে থেকে দূরত্ব মাত্র ১০ কিলোমিটার। এ ছাড়া এই সিটিকে কেন্দ্র করে পৃথক সমুদ্রবন্দর করারও সুযোগ রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রবিবার যে ১০টি ইকোনমিক জোন উদ্বোধন করেছেন তার মধ্যে এটি একটি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এসব তথ্য জানিয়েছে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী জানান, প্রস্তাবিত মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলকে বহুমুখী শিল্পের জন্য একটি পরিকল্পিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। যেখানে তৈরি পোশাক ও পোশাক খাত সংশ্লিষ্ট শিল্প, মোটরবাইক, সিমেন্ট, জাহাজ নির্মাণ, অটোমোবাইল পার্টস ও স্টিল নির্মাণসহ বিভিন্ন ধরনের এক হাজারেরও বেশি শিল্প প্লট গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া সেখানে বিদ্যুেকন্দ্র, বন্দর জেটি, কম্পোজ প্লান্ট, আইটি পার্ক, টুরিজম পার্ক নির্মাণ করা হবে। ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের সঙ্গে থাকবে ফোর লেন সংযোগ সড়ক। এটিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম অর্থনৈতিক করিডর জোন হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। বেজার প্রকল্প পরিচালক (সাপোর্ট টু ক্যাপাসিটি বিল্ডিং অব বাংলাদেশ) মোহাম্মদ হারুনুর রশীদ বলেন, ‘দেশের বৃহত্তম এই শিল্পনগরীতে অন্তত ১০টি পৃথক অর্থনৈতিক জোন (৩০০ থেকে ৫০০ একর জমি নিয়ে) গড়ে তোলা হবে। বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় এরই মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে সাড়ে ৫০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে ভূমি উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। স্লুইসগেট, বাঁধ নির্মাণ, কালভার্টসহ বিভিন্ন কাজ চলছে। আতাউর রহমান খান অ্যান্ড সন্স নামে একটি কোম্পানি এই কাজ করছে।’ দুই বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ হওয়ার পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে বেজার কর্মকর্তারা জানান, ভূমি উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পাশাপাশি আগামী জুনে এ অর্থনৈতিক অঞ্চলের উন্নয়নে উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করা হবে। প্রতিযোগিতার মাধ্যমে নির্বাচিত কোম্পানির কাছে এই জোন ৫০ বছরের জন্য লিজ দেওয়া হবে, যেটি তাদের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এরই মধ্যে এই শিল্প প্লট উন্নয়নের কাজ পেতে ভারতের রিলায়েন্স গ্রুপসহ চীনের বেশ কয়েকটি কোম্পানি আগ্রহ দেখাচ্ছে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় আরও ৭ অর্থনৈতিক জোন : বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের প্রথম পর্যায়ের প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনে। পরবর্তী মেয়াদে আগামী অর্থবছর থেকে ১০৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ সহায়তায় আরও ৭টি জোনের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছে বেজা। কর্মকর্তারা বলেন, ওই অর্থে মিরসরাইয়ে দ্বিতীয় পর্যায়ে আরও দুটি অর্থনৈতিক জোন ছাড়াও টেকনাফের সাবরাং এলাকায় ১ হাজার ১৫০ একর জায়গা নিয়ে টুরিজম পার্ক, টেকনাফের জালিয়ার দ্বীপে ৩০০ একর জায়গায় আরও একটি টুরিজম পার্ক, সোনারগাঁ শীতলক্ষ্যা নদীতীরে ৮৫০ একর জায়গায় নারায়ণগঞ্জ ইকোনমিক জোন, ঢাকার কেরানীগঞ্জে ১০০ একর জায়গা নিয়ে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং সিলেটে ৩৫২ একর জমি নিয়ে শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোনের কাজ শুরু হবে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় করা এই অর্থনেতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে নারায়ণগঞ্জ এবং ঢাকারটি হবে খাতভিত্তিক বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল। এর মধ্যে নারায়ণগঞ্জে নিটওয়্যার শিল্প এবং ঢাকায় প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজেস শিল্প খাতের জন্য বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে। ভারত, চীন ও জাপানের জন্য চার অর্থনৈতিক জোন : বিদেশি বিনিয়োগের জন্য সরকারের অর্থনৈতিক জোনগুলো উন্মুক্ত থাকবে। এরপরও এশিয়ার তিন অর্থনৈতিক শক্তি ভারত, চীন ও জাপানের অনুরোধে দেশে চারটি অর্থনৈতিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের জন্য কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় ৪০০ একর জমিতে একটি ইকোনমিক জোন এবং বাগেরহাটের মংলায় আরও একটি জোন করা হবে। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান জানান, মংলার জোন নিয়ে আগামী ২২ মার্চ ভারতের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকায় বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। তারা সেখানে ২৫০ একর জমি চেয়েছে। আমাদের হাতে আছে ১১০ একর জমি। তাদের দাবি মেটাতে হলে বাকি জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। চীনের জন্য চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৭৭৪ একর জমি নিয়ে চাইনিজ ইকোনমিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন (আনোয়ারা-২) নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। চায়না হারবার অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এটি গড়ে তুলবে। এরই মধ্যে এই অর্থনৈতিক জোনের জন্য ২৯০ একর জমি পাওয়া গেছে। এ ছাড়া আরও ৪৮৪ একর জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে সংশোধিত বাজেটে ৪২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য অর্থ বিভাগে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেজা। জাপানের জন্য জাপানিজ ইকোনমিক জোন গড়ে তুলতে গাজীপুরের শ্রীপুরে জায়গা চিহ্নিত করা হয়েছে। ৫১০ একর জমি নিয়ে প্রস্তাবিত এই জোন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ফিজিবিলিটি স্টাডি করছে জাইকা। কর্তৃপক্ষ জানায়, বিদেশিদের জন্য প্রস্তাবিত এই অর্থনৈতিক জোনগুলোর জন্য জমি দেবে সরকার। সংশ্লিষ্ট দেশগুলো এর উন্নয়ন করে নেবে। তবে জমির মালিকানা স্বত্ব্ব হিসেবে এসব জোনের মাধ্যমে অর্জিত লভ্যাংশের ৩০ শতাংশ পাবে সরকার। গড়ে উঠছে বেসরকারি ইকোনমিক জোন : সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগেও অর্থনৈতিক জোন গড়ে উঠছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী যে ১০টি ইকোনমিক জোনের উদ্বোধন করেছেন তার মধ্যে চারটি সরকারি এবং ছয়টি বেসরকারি। বেসরকারি উদ্যোগে বাস্তবায়নাধীন ছয়টি জোন হলো— নরসিংদীর পলাশে এ কে খান গ্রুপের ‘এ কে খান ইকোনমিক জোন’, মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার চরবাউশিয়াতে আবদুল মোনেম লিমিটেডের ‘আবদুল মোনেম ইকোনমিক জোন’, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে মেঘনা গ্রুপের ‘মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোন’ ও ‘মেঘনা ইকোনমিক জোন’, গাজীপুরে বে গ্রুপের ‘বে ইকোনমিক জোন’ এবং নারায়ণগঞ্জে আমান গ্রুপের ‘আমান ইকোনমিক জোন’। এ ছাড়া আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ১০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হবে। যার মধ্যে সিটি গ্রুপ এবং আরিশাসহ ৬ থেকে ৭টি বেসরকারি ইকোনমিক জোন থাকবে বলে জানিয়েছে বেজা। এ ছাড়া উদ্বোধন হওয়া সরকারের জোনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রামের মিরসরাই ইকোনমিক জোন, মৌলভীবাজারের শ্রীহট্ট ইকোনমিক জোন, বাগেরহাটের মংলা ইকোনমিক জোন এবং কক্সবাজারের টেকনাফে সাবরাং টুরিজম পার্কের উন্নয়ন কার্যক্রম সরকারি-বেসরকারি (পিপিপি) উদ্যোগে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরই চালু হবে চার ইকোনমিক জোন : দেশের অর্থনীতিতে গতি আনতে সারা দেশে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে যে ১০০টি ইকোনমিক জোন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে তার মধ্যে ৪৬টির অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর অন্তত চারটি চলতি বছরই চালু হবে বলে আশা করছে বেজা। বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী আরও জানান, বেসরকারি ইকোনমিক জোনগুলোর প্রায় ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ। এর মধ্যে বে ইকোনমিক জোন এবং আমান ইকোনমিক জোনসহ অন্তত চারটিতে এ বছরই শিল্পোৎপাদন শুরু হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এগুলোতে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলছে। সংযোগ দেওয়ার পরই উৎপাদনে যেতে পারবে এসব ইকোনমিক জোনে স্থাপিত শিল্প-কারখানা।
©somewhere in net ltd.