![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভ লোপাট, জিএসপি সুবিধা বাতিল, যুক্তরাজ্যে কার্গো বিমান নিষিদ্ধ, পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের মিথ্যা দুর্নীতির অভিযোগসহ সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো এক সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এসব কর্মকা- বাংলাদেশের অগ্রগতিকে পিছিয়ে দিতে দেশী-বিদেশী চক্রের ধারাবাহিক ষড়যন্ত্রে অংশ কিনা ত নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশ্লেষকরা সরকারকে সতর্কতার সঙ্গে এ জাতীয় কর্মকা- মোকাবেলায় পরামর্শ দিয়েছেন।
বিশ্লেষকরা বলেন, বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাকে পঙ্গু করতে দেশের বিপুল পরিমাণ রিজার্ভ লোপাট করেছে দেশী ও আন্তর্জাতিক চক্র। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আজ নতুন নয়। স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকে এই ষড়যন্ত্র মাথাচড়া দিয়ে ওঠে। মূলত ব্রিটিশ আমলে এ দেশে ষড়যন্ত্রে বীজ বপন হয়। এর পর ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে তার বহির্প্রকাশ ঘটে। এর পর স্বাধীনতা সংগ্রামে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র দানা বেঁধে ওঠে। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় থেকে বাংলাদেশ নিয়ে অনেক দেশ ষড়যন্ত্রে জড়িয়ে পড়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীরা পরাজিত হলেও তারা থেমে থাকেনি। বিভিন্ন সময়ে রূপ বদল করে তারা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ১৯৭৫ সালে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মাধ্যমে তারা বাংলাদেশে পুনরায় প্রকাশ্যে আসে। এর পর অনেক চড়াই-উতরাই করে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শুরু হয় আবার ষড়যন্ত্র। পরে ২০০১ সালে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের সিনিয়র নেতাদের মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হয়। ২১ আগস্টের ওই গ্রেনেট হামলায় কাকতালীয়ভাবে বেঁচে যান তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। পরে ‘ওয়ান ইলেভেনের’ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে আসতে বাধা প্রদান করা হয়। বোর্ডিং পাস ইস্যুর পরও তাকে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ বহন করে না।
এর পর ২০০৮ সালে ২৮ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়লাভের পর দায়িত্ব বুঝে নেয়ার প্রায় দেড় মাসের মাথায় ২০০৯ সালে ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিয়ার হত্যাকা- ঘটানো হয়। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই টালমাটাল পরিস্থিতি সামাল দেন। এর পর থেকে দেশে চলতে থাকে একের পর এক ঘটনা। এর অল্প দিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটানো হয়। একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। পাশাপাশি সরকারও একের পর এক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে এগিয়ে চলে। নির্বাচনী প্রধান এক এজেন্ডা যুদ্ধাপরাধীর বিচার শুরু করে। বিচার প্রক্রিয়া বানচাল করতে যুদ্ধাপরাধীরাও থেমে থাকেনি। তারাও নিয়মিত নানাবিধ কর্মকা- চালিয়ে যায়। ওই আমলে আর একটি বড় ঘটনা হেফাজতে ইসলামের আন্দালন। সরকার দক্ষতার সঙ্গে তাদের এই আন্দোলন মোকাবেলা করে রাজধানী থেকে সরিয়ে দেয়। এর পর থেকে শুরু হয় আর এক তা-ব। রাজনৈতিক কর্মকা-ের নামে চলে চরম নাশকতা। যত্রতত্র চলে পেট্রোলবোমা হামলা। রেললাইন উৎপাটন, অবাধে গাছ কাটা ইত্যাদি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও ব্যাপক ঝুঁকির মধ্য থেকে তা দমন করেন। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বেশকিছু সদস্য নিহতও হন। আগের আমলে প্রায় শুরু থেকে মহাজোট সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। বিশ্বব্যাংক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয়। কিন্তু দেশী ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে টাকা না দিয়ে বিশ্বব্যাংক এতে দুর্নীতির অভিযোগ তোলে। এতে সরকারকে শেষে পর্যন্ত্র তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আবুল হোসেনকে বলি দিতে হয়। কিন্তু তাদের তারা তুষ্ট হয় না। শেষ পর্যন্ত কোন ঋণই তারা দেয় না পদ্মা সেতুর জন্য। পরে অবশ্য তারা কোন দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি।
এর পর বাংলাদেশ অর্থনীতিতে একের পর এগিয়ে যাচ্ছে দেখে প্রবৃদ্ধি অর্জনের বড় খাত পোশাক শিল্পের ওপর থেকে জিএসপি সুবিধা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কারখানার কর্মপরিবেশের উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশের পণ্যে অগ্রাধিকারমূলক বাজার সুবিধা (জিএসপি) স্থগিত করে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল ফ্রোম্যান এক বিবৃৃতিতে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান।
বিবৃতিতে ফ্রোম্যান বলেন, প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আদেশে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী পণ্যের শুল্কমুক্ত সুবিধা স্থগিত করা হলো। প্রেসিডেন্ট ওবামার তার আদেশে বলেছেন, ‘আমি নিশ্চিত, বাংলাদেশের পাওয়া জিএসপি সুবিধা এখন স্থগিত করাই শ্রেয়। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত শ্রম অধিকারগুলো বাস্তবায়নে যথাযথ পদক্ষেপ বাংলাদেশ নেয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা অনুযায়ী তাদের যবতীয় শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ। কিন্তু তাতেও চিড়ে ভেজেনি। কোন কিছুতইে তাদের তুষ্ট করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা বাতিলই রয়ে গেল।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের ১০১ মিলিয়ন ডলার লোপাট হয়েছে। এর মধ্যে ৮১ মিলিয়ন ফিলিপিন্সে এবং ২০ মিলিয়ন ডলার শ্রীলঙ্কায় পাচার করা হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ৭ মার্চ এক বিবৃতিতে জানায়, শ্রীলঙ্কার ২০ মিলিয়ন ডলার ফেরত আনা হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ১৬০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, নিয়মানুসারে পাচার করা টাকা ফেরত আনতে হলে যে দেশে টাকা যায়, ওই দেশের আদালত রায় দিলে দুই দেশের এ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসের মাধ্যমে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত আনতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি সূত্র জানায়, শ্রীলঙ্কা থেকে কোন টাকা উদ্ধার হয়নি। তবে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্বীকার করেছে, তাদের দেশে বাংলাদেশের চুরি যাওয়া টাকা রয়েছে। এটি ফেরত পাওয়ার নিয়ম থাকলেও তা অনেক সময় লাগবে।
বিশ্লেষকরা বলেন, ২৪ জানুয়ারি টাকা লোপাট হলেও বাংলাদেশ এটি জানতে পারে মার্চ মাসে এসে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিদিনের লেনদেনের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো হয়। কিন্তু এটা তো সে দিন অথবা পরের দিন বুঝতে পারা কথা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক কেন তা বুঝতে পারেনি এটি একটি বিষয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফরেন এক্সচেঞ্জ’ দেখেন জামায়াতপন্থী এক কর্মকর্তা। এতে তার কোন কারসাজি রয়েছে কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জানুয়ারি মাসে রিজার্ভ লোপাট হলেও এতদিন তিনি কি করেছেন। জানা গেছে, শ্রীলঙ্কার রিপোর্টের পর বাংলাদেশ ব্যাংক এই লোপাটের বিষয় নিশ্চিত হয়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্বলতাও রয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলেন, আগে বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ভল্ট থেকে’ টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু তার দৃষ্টান্তমূলক কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অপরাধীরা পার পেয়ে যাওয়ায় এ কাজে দেশী কিছু ষড়যন্ত্রকারী সাহস পেয়েছে। এ ছাড়া অনলাইনের টাকা চুরি প্রতিরোধে ‘ফায়ার ওয়াল’ রাখা হয়নি। এর দায়-দায়িত্ব কে নেবে?
এদিতে দেশী পণ্যবাহী কার্গো বিমান সরাসরি যুক্তরাজ্যে অবতরণে অনির্দিষ্টকালের জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এতে বার্ষিক প্রায় ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার কৃষিপণ্য রফতানিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। ‘স্ক্যানিং দুর্বলতা ও নিরাপত্তার অজুহাতে বাংলাদেশ বিমান ও দুবাই এয়ারের ওপর এ নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এতে তৈরি পোশাকসহ অপচনশীল পণ্য বিকল্প পথে সরবরাহের সুযোগ থাকলেও সবজি ও ফল রফতানিতে ভয়াবহ সঙ্কট সৃষ্টি হবে। সবজি ও ফল রফতানির বড় বাজার যুক্তরাজ্য। এ বাজার হারালে রফতানির জাতীয় আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
জানা গেছে, গত অর্থবছরে ফল ও সবজি রফতানি থেকে আয় হয় ১৪ কোটি ১৬ লাখ মার্কিন ডলার। এর মধ্যে শুধু যুক্তরাজ্যের বাজার থেকেই আয় হয় ৪০ শতাংশ বা ৪০০ কোটি টাকা।
বর্তমানে দেশের প্রায় ২০০টি প্রতিষ্ঠান ৭০ থেকে ৮০ ধরনের সবজি ও ফল যুক্তরাজ্যে রফতানি করছে। বাংলাদেশ থেকে উড়োজাহাজে প্রতিদিন গড়ে ৩০ থেকে ৪০ টন এ পণ্য যুক্তরাজ্যে যায়। আকাশপথে পণ্য পাঠানোর সুযোগ না থাকলে রফতানিতে ধস নামবে। কারণ অন্য পণ্যের মতো পচনশীল পণ্য নৌপথে পাঠানোর সুযোগ নেই। গত শুক্রবার থেকে যুক্তরাজ্যে সবজি ও ফল রফতানি বন্ধ আছে।
পদ্মা সেতুর পর এবার বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে ‘নদী ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রকল্প নিয়ে নতুন করে টানাহেঁচড়া শুরু হয়েছে। ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প গত বছরের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে উপস্থাপন করা হলেও পাস হয়নি। ওই সময় প্রকল্পের পরামর্শক খাতে অস্বাভাবিক ব্যয় ও প্রয়োজনীয় অঙ্গ (কম্পোনেন্ট) সংস্থান না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ অবস্থায় উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (ডিপিপি) সংশোধন করে নতুন করে প্রকল্প আনার কথা বলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বব্যাংকের বাড়াবাড়িতে এই প্রকল্প আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে পরামর্শক ব্যয় কমানো ও অন্যান্য অঙ্গ যুক্ত করা নিয়ে দরকষাকষি করছে সংস্থাটি। তারা বলছে, এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপে (পর্ব-২) এসব বিষয়কে যথাযথভাবে আনা হবে। প্রথম ধাপে নয়।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্র জানায়, সম্প্রতি বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর দায়িত্ব গ্রহণ করে ইআরডির সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। সঙ্গে ছিলেন সংস্থাটির দক্ষিণ এশীয় বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট এ্যানেট ডিক্সন। এ সময় তারা প্রকল্পটি দ্রুত অনুমোদনের ব্যবস্থা করার তাগিদ দেন।
জানা যায়, ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে এই প্রকল্প নিয়ে জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার আলোকে প্রস্তাবিত প্রকল্পের অঙ্গভিত্তিক পরিকল্পনা (কম্পোনেন্ট) পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত করার জন্য বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে- বাঁধ নির্মাণ ও পুনর্র্নির্মাণ, নদী শাসন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নদী খনন ও ভূমি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত করা। ওই সভায় ক্যাপিটাল ড্রেজিং পাইলট প্রকল্পের সঙ্গে প্রস্তাবিত প্রকল্পের সমন্বয় সাধনের কথা বলা হয়। বিষয়টি বিস্তারিতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে অবহিত করার নির্দেশ দেয়া হয়।
এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক শুধু পরামর্শক ব্যয় হিসেবে ৭৬৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়ার শর্ত দিয়েছে। অন্যদিকে সরকার মনে করছে, এ প্রকল্পে পরামর্শক ব্যয় হিসেবে সর্বোচ্চ একশ’ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া যেতে পারে। নদী ব্যবস্থাপনায় উন্নয়ন কর্মসূচী শীর্ষক এ প্রকল্পে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় বিশ্বব্যাংক। এটি বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় অনুমোদন হওয়ার কথা। তবে সরকারের পক্ষ থেকে মৌখিকভাবে বলা হয়েছে, অস্বাভাবিক ওই শর্তে এ ঋণ নেবে না সরকার। এজন্য বিশ্বব্যাংকের বোর্ডকে এ ঋণ অনুমোদন না দেয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ৩ মার্চ বিশ্বব্যাংকের বোর্ড সভায় প্রকল্পটির ঋণ প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য উপস্থাপনের কথা থাকলেও সেটি হয়নি বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের ৪ হাজার ৬৫০ কোটি টাকা দেয়ার কথা। বাকি অর্থ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন থেকে ব্যয় হবে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় প্রকল্প প্রস্তাব সংশোধন করে পাঠালেও তাতেও আপত্তি জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। অনুমোদনের জন্য তৃতীয় দফা উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পাঠালে তাতেও কমিশনের প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটি (পিইসি) আপত্তি জানিয়েছে। এজন্য পুরো অনুমোদন প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নদী এবং পানি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে মডেল। কিন্তু বিশ্বব্যাংক নদী ব্যবস্থাপনায় মোটা বেতনে বিদেশী পরামর্শক নিয়োগে অতি আগ্রহী। পরামর্শক খাতে ব্যয় কমিয়ে তা অন্য খাতে ব্যয় করতে আগ্রহী সরকার। বাংলাদেশে পরামর্শক খাতে এত অর্থ ব্যয়ের কোন মানে হয় না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
এছাড়া বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগে আনুষ্ঠানিক স্থগিত ঘোষণা করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী দাতুক সেরি আহমাদ জাহিদ হামিদি শনিবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে বিদেশী কর্মী নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বর্তমানে দেশের যেসব প্রতিষ্ঠানে অনুমতিপত্র ছাড়া বিদেশী কর্মী কাজ করছেন অথবা যাদের অনুমতিপত্রের মেয়াদ পার হয়ে গেছে- তাদের বৈধতার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে আবেদন জানাতে হবে। আগামী ৩০ জুনের মধ্যে চাকরিদাতাদের বিদেশী কর্মীদের বৈধতা দেয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। কর্মীদের বৈধ করার বিষয়ে চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো সতর্ক না হলে শুধু জরিমানা দিয়ে পার পাওয়া যাবে না বলে সতর্কতা জারি করেছেন আহমাদ জাহিদ। প্রয়োজনে সরকার আরও কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে। মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণা দেশটির সংবাদমাধ্যমে শনিবার সকাল থেকেই প্রচার করা হয়েছে। মালয়েশিয়া থেকে টেলিফোনে এ খবর জানিয়েছেন বেশ কয়েক বাংলাদেশী।
গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী দাতোসিরি রিচার্ড রায়ট আনক জাইম। কিন্তু পরদিন সকালেই দেশটির উপ-প্রধানমন্ত্রী আহমাদ জাহিদ হামিদি এক অনুষ্ঠানে বলেন, আপাতত কোন দেশ থেকেই কর্মী নিয়োগ করা হচ্ছে না। এ ঘোষণার পর প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব শামসুন্নাহার বলেন, মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত অফিসিয়াল নয়। এ বক্তব্যে ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের কোন ক্ষতি হবে না। এটা দেশটির রাজনৈতিক অবস্থার ওপর দেয়া বক্তব্য। তবে আমরা আশাবাদী মালয়েশিয়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ করবে। বাংলাদেশের সঙ্গে কর্মী নিয়োগের জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছে। ২১ দিনের মধ্যে দেশটির মন্ত্রিসভার বৈঠকে একই সিদ্ধান্ত নেয়া হলো। দেশটি বিদেশ থেকে আপাতত কোন কর্মী নিয়োগ করবে না। বরং যেসব কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তাদের বৈধতা দেয়ার জন্য সময়সীমা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। প্রথমে অবৈধ কর্মী বৈধ হওয়ার সময় দেয়া হয়েছিল এ বছরের এপ্রিল পর্যন্ত। পরে মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এখন জুন মাস করা হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কর্মী বৈধ না হলে তাদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যেতে হবে। এরপরও যদি কেউ অবৈধভাবে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
মালয়েশিয়ায় শ্রমবাজার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে। সে অনুযায়ী শুধু সরকারীভাবে মালয়েশিয়ার প্ল্যান্টেশন খাতে কর্মী পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় ওই উদ্যোগে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পরে মালয়েশিয়ার জনশক্তির জন্য বাংলাদেশ ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকায় এলে সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতে বাংলাদেশী কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়। পরে মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারী-বেসরকারী পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জিটুজি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে ১৫ লাখ কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়েছিল। সেই চুক্তিও শনিবার আনুষ্ঠানিকভাবে দেশটির কর্তৃপক্ষ স্থগিত করেছে।
এসব ঘটনা একই সূত্রে গাঁথা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রে অংশ হিসেবে এ কর্মকা- ঘটছে বলে মনে হচ্ছে। সরকারকে অস্থির করে পছন্দের দলকে ক্ষমতায় বসাতে একের পর এক এই জাতীয় কর্মকা- ঘটানো হতে পারে। এছাড়া সরকারকে ভারতপ্রীতি থেকে অন্য পন্থী করতেও এই ষড়যন্ত্র হতে পারে। সরকারের উচিত কঠোর হস্তে এসব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করা। সরকার ইতোপূর্বে অবশ্য অনেক কঠিন ষড়যন্ত্র অনায়াসে মোকাবেলা করে এসেছে। পাশাপাশি সরকারের মধ্যে থাকা মনে প্রাণে সরকারবিরোধীদের চিহ্নিত করে তাদের প্রতি বিশেষ নজর রাখা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে না রেখে কম গুরুত্বে পদে পদায়ন করা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে এখনও সরকারবিরোধীরা ওঁৎ পেতে রয়েছে। তারা সুযোগ বুঝে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে অপতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। মাহবুবুল আলম চাষী মার্ক লোক সরকারের অতি ঘনিষ্ঠ হওয়ায় ষড়যন্ত্রকারীরা নির্বিঘেœ তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে। কখনও কখনও এরা সকলে চেয়ে বড় আওয়ামী লীগার সেজে সরকারের কাছাকাছি থাকছে। সরকারের আস্থাভাজন হয়ে এরা এত ক্ষমতাশালী যে কোন ক্ষেত্রে এরা মন্ত্রীদেরও পাত্তা দেন না। এদের দাপটে ক্ষেত্র বিশেষ মন্ত্রীরাও অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন। এ ক্ষেত্রে শীর্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে কর্মকর্তাদের অতীত দেখে পদায়ন করা উচিত।
সম্প্রতি কোন কোন ক্ষেত্রে পুলিশও বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অহেতুক সাধারণ মানুষের সঙ্গে খারাপ আচরণ, দেশের সাধারণ মানুষকে ভাবিয়ে তুলছে। এতে সরকারের প্রতি সাধারণ মানুষের খারাপ ধারণা পোষণ হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে বিএনপি-জামায়াত আমলের দাপুটে অনেককে দেখা যাচ্ছে এ আমলে সরকারের আস্থাভাজন বনে দাপটের সঙ্গে চাকরি করে যাচ্ছে। সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তারা ভোল পাল্টিয়ে আওয়ামী লীগপন্থী বনে যান। সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিশেষ পোশাকধারী বাহিনীর মূল কাজ হলো সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা। এরা যদি ‘পলিসি মেকার’ হতে যায় তা হলে তারা তো কাউকে পাত্তা দেবে না। তিনি বলেন, প্রতিটি বাহিনীর জন্য একটি মন্ত্রণালয় রয়েছে। তাদের কোন প্রস্তাব যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে হয়, তাহলে ওই মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যেতে হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে কোন কোন ফাইল সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়। এতে সরকারের বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে।
২| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:২৮
আহলান বলেছেন: ব্যাক্তিত্বহীন লোকের যেমন সমাজে দাম নেই, ব্যাক্তিত্বহীন রাষ্ট্রেরও তেমন বিশ্বের কাছে দাম নেই .... বর্হিবিশ্ব কি দেখছে না, কি চলছে এখানে .... ১৬ কোটি জনগনকে না হয় অন্ধ করে রাখা যেতে পারে, কিন্তু সারা বিশ্বের ৭.৯ বিলিয়ন মানুষকে তো নয় ....
৩| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৫৫
আহমেদ রশীদ বলেছেন: ইনশাল্লাহ! ধৈর্য় ধরেন
৪| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:০৭
হাসান নাঈম বলেছেন: আহ্ ষড়যন্ত্র!!
সারা বিশ্বের মানুষের আর কোন কাজ নাই, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা ছাড়া!
তও আবার এমন ষড়যন্ত্র যা এ'দেশের কিছু মানু্ষ সহজেই বুঝে ফেলে!
৫| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
ফাহিম আবু বলেছেন: যারা নিজেরা ষঢযন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতাই এসেছে ,তারা সবকিছুরই ভিতরে ষঢযন্ত্র গন্ধ খুজে পাই, কারন যে নিজে চোর সে সবাইকে চোর ভাবে, ঠিক তেমনি আওয়ামীলীগ নিজেরা হল ষঢযন্ত্রকারী , তাই সবাইকে ষঢযন্ত্রকারী ভাবে । আওয়ামীলীগের অতীত অতিহ্য হচ্ছে ব্যাংক ঢাকাতি, ভোট ঢাকাতি, চুরি, হত্যা , কিডনাপ, দর্ষন, খুন, গুম ইত্যাদি , সেই শেখ মুজিবের আমল থেকে ।
৬| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১০:৪২
হালি্ বলেছেন:
৭| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৩৯
বিপরীত বাক বলেছেন: বাপ রে। এত্ত এত্ত ষড়যন্ত্র?
৮| ১৪ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১:৩২
ফাহিম আবু বলেছেন: লেখক মনে অনেক বড জ্ঞানী !! কারন বের করে ফেলেছে !! তো আপনি এখানে কি করছেন ?? আপনার তো উচিত সরকারের গোয়েন্দা সংস্থায় যোগ দেওয়া , কারন সরকারের গোয়েন্দা সংস্থা এখনও কারন উদগাটন করতে পারে নাই । যারা আসলে কিছুই জানে না , তারাই এই ধরনের পন্ডিত হয় ।
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৫
বিজন রয় বলেছেন: ভাল কথা।
এখন ষড়যন্ত্র ধরে ফেলুন। শাস্তির ব্যবস্থা করুন।