![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিখেত ,পড়তে আর ঘুরতে ভালোবাসি।
যতই দিন যাচ্ছে ততই যেন আপনজনহীন হয়ে যাচ্ছি। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ও আপনজনের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। অনেক চেনা মুখ কালের অতলে হারিয়ে গেছে; হয়তো তাদের আর কোনো দিনও দেখব না। কথা হবে না পাশাপাশা বসে। মুখোমুখি বসে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি হবে না সকাল-বিকেল। ছোট বেলা থেকে যে সকল আপনজনদের দেখতাম তাদের অনেকেই চলে গেছেন, না ফেরার দেশে। তাদের তো পাওয়ার কোনো সাধ্যই নেই। কাছের আপনজন বলতে নানা-নানী, দাদা-দাদী, মামা-মামী, চাচা-চাচী, ফুফু-ফুফা(জামাই)। আরো অনেক আপনজন জীবন যাপনে জড়িয়ে যায়, তবে আমার লেখা উল্লেখিত আপনজনদের নিয়ে।
নানার স্মৃতি আমার মনে নেই, নানাকে যতটুকু মনে পড়ে তাতে মনে দাগ কাটার মতো কিছু নেই। আমার নানার দুই বিয়ে। নানা ছোট নানীর কাছে থাকতেন। আমার নানী মামাদের নিয়ে আলাদা থাকতেন। দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য নানার মামাদের সাথে সম্পর্ক ভালো ছিলনা। নানা মাঝে মধ্যে এসে নানীকে দেখে যেতেন। মামারা সবাই চাকুরী করতেন তাই নানীর জীবন যাত্রায় কোনো সমস্যা হয়নি। মামারা নানীকে নিয়ে আরামবাগে ভাড়া বাড়ীতে থাকতেন। নানীর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগকরার আগ পর্যন্ত ছোট মামার সাথেই ছিলেন। আমার মামারা ছিলেন তিন ভাই। বড় এবং মেঝ মামা ইতিমধ্যে চিরস্থায়ী আবাসিক এলাকার প্লটে শুয়ে আছেন। অত্যান্ত আদরের ডাক মামা বলে ডাকার মতো আছেন কেবল ছোট মামা। মাঝে মাঝে বাসায় এসে আমাদের দেখে যান। এখনো মামা আমার হাতে দশ টাকার একটি নোট গুজে দেয় সবার অলক্ষ্যে। আমার ছোট বেলার স্মৃতি মামার মুখস্থ। মামা আমাকে অনেক অনেক ভালোবাসেন, তার চোখ-মুখ দেখলে আমি অনূভব করতে পারি। শৈশব থেকে ছোট মামাকেই বেশী কাছে পেয়েছি। মেঝ মামাকে মাঝে মাঝে কাছে পেতাম। মামাও খুব স্নেহ করতেন। আমি এখনও ভাত খেতে বসলে মেঝ মামার কথা মনে পড়ে। মামার সাথে খেতে বসলে কোনো কারণে যদি এক হাতে গ্লাস তুলে পানি খেতাম তাহলেই বাঁধা দিতেন। বলতেন এক হাতে পানি খেতে নেই, দুই হাত দিয়ে গ্লাস ধরে পানি খাবে। ভাত খাবার সময় ডান হাতের আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করবে। মামা সকল সময় জীবন চলার পথের নিয়ম নীতির কথা জানিয়ে দিতেন। যা আজও আমার চলার পথের সহায়ক। বড় মামা একটি আচার(জেলী ) ফ্যাক্টরীর বয়লার অপারেটর ছিলেন, আমি এবং মা দুজনে অনেকবার মামার সাথে দেখা করার জন্য আচার ফ্যাক্টরীতে গিয়েছি। সেখানে গেলেই মামা জেলী খেতে দিতেন, সেই জেলীর স্বাধ আজতক হাম নেহি ভুলেগা। নানী আমাকে অনেক ভালোবাসতেন। আমার মা একা তার কোন বোন নেই। এ কারণেও আমার আদর-সোহাগ নানী থেকে শুরু করে মামাদের কাছেও বেশী ছিল।
আমার শৈশব থেকেই দাদা ও দাদী দুজনকেই কাছে পেয়েছি। দাদা পাকিস্থান অমলের থ্রী বা ফোর কাশ পর্যন্তপড়া ছিলেন। কাপড়ের ব্যবসা ছিল হিসাব-নিকাশ সবই নিজে সামলাতেন। দেশ যখন ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যা মোকাবেলায় অস্থির। আমরা সবাই ওয়াপদার ভেরী বাঁধের উপর আশ্রয় নিয়েছিলাম। পানি এত পরিমাণ হয়েছিল যে ঘরে থাকা দায় হয়েছিল। এক সময় বন্যার পানি কমতে শুরু করলো, সকলে যার যার গৃহে যেতে শুরু করলো। আমরাও বাড়ী ফিরলাম। দাদার কাছে পরিচিতজনেরা জানতে চাইলো কবে বাড়ী যাবেন? দাদা উত্তর দিয়েছিলেন আগামীকাল, দাদা আগামীকালই বাড়ী ফিরে গিয়েছিলেন। তবে জীবিত নয়, মৃত। যে দিন দাদা বাড়ী ফিরে যাবার জন্য মনস্থির করেছিলেন, ঐ রাতে দাদার প্রেসার হঠাৎ করে বেড়ে যায় এবং মৃত্যু বরণ করেন। ইংরেজী তারিখটা মনে নেই, তবে বাংলা ১৭ ই আশ্বিন। আমি তখন চতুর্থ শ্রেনীর ছাত্র। মনে পড়ে আমি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ী ফিরলে, দাদা যে কাজেই থাকতেন না কেনো বলতেন-দেখি পরীক্ষার কোরশেন কই? দাদা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রকে সকল সময় কোরশেনই বলেছেন। দাদা অনেক কাজের কাজী ছিলেন। নিজ হাতে শীতকালে খেঁজুর গাছ কাটতেন, রস নামাতেন রস জ্বাল দিতেন ও বাটালী গুড় বানাতেন। আমি দাদার এসকল কাজ খুব কাছ থেকে দেখেছি। দাদা বর্ষায় যখন বাড়ীর আশপাশ পানিতে ভরপরপুর থাকতো, তখন গড়া দিতো। গড়া কি জিনিষ হয়তো শহুরেরা বুঝবেন না। গড়া হচ্ছে মাছ ধরার জন্য পানির মধ্যদিয়ে বাঁশ দিয়ে তৈরী পাতলা বেঁড়ার ফাঁদ। এই গড়ায় বাঁশ দিয়ে তৈরী চাই নামক এক ধরনের খাঁচা পাতা হয়, তাতে মাছ ঢুকলে আর বের হতে পারে না। দাদা ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরতেন, আমি তার সাথে পাতিল বহন করার জন্য গিয়েছি। গ্রামের বাড়ীতে গেলে খালের পাশদিয়ে যাওয়ার সময় এখনো দাদাকেই মনে পড়ে। দাদীকে হারেয়েছি গত ২০০৮সালের সেপ্টম্বর মাসের ২৪ তারিখ। দাদী আমাদের সংসারের অনেক কিছুই দেখেছেন। বাড়ীতে গেলেই দাদী কাছে ডেকে খুটিয়ে খুটিয়ে সব জানতে চাইতেন। তোর বাবা কেমন আছে? আমার ছোট ভাই দুজন কে কী করছে, মার শরীর কেমন আছে? সংসার কেমন চলছে। শেষের দিকে দাদী চোখে কম দেখতেন এবং কানে কম শুনতেন। খুব কাছে না গেলে কে ঝুঝতে পারতেন না। তারপরও সকলের খোঁজ-খবর নিয়েছেন। আমার বাপ চাচারা চারভাই এবং চার বোন। আমার বড় চাচা মারাগেছেন ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারী মাসের ২৮ তারিখ। চাচা ইউনিয়ন পরিষধের মেম্বর ছিলেন। বাড়ীতে গেলে চাচাও খোঁজ-খবর নিতেন। এই তো এপ্রিল মাসের ২৪ তাখির বাড়ী গিয়েছিলাম। দাদী ও বড় চাচা মৃত্যুর পর এই প্রথম বাড়ী গিয়ে বাড়ীটা অনেক ফাঁকা লেগেছে। অনেক অসহায় মনে হয়েছে নিজেকে। আপনজনহীন মনে হয়েছে। বাড়ীতে গেলেই দেখতাম দাদী বারান্দায় বসে বা শুয়ে আছেন। বড় চাচা হয়তো কাজ শেষে বাড়ী ফিরছেন। আমি আর কখনো সেই দৃশ্য দেখবনা।
সেজ চাচা আর ছোট চাচা গ্রামের বাড়ীতে থাকেন। বাড়ীতে গেলে ছোট চাচার কাছেই বেশী থাকা হয়। ছোট চাচাই আমাকে বড় হতে অনেক সাহায্য করেছেন। তিনিও আমাকে অনেক স্নেহ করেন। আমার বড় চাচাতো ভাই যে আমাকে খুব আদর করতো, সে থাকে তার শ্বশুর বাড়ীর কাছেই বাড়ী করে। তাই বাড়ীতে ঈদ উপলক্ষ্য ছাড়া গেলে দেখা হয়না। ফুফুরা আছেন ভালোই মাঝে মধ্যে খোঁজ খবর নেয়া হয়। তারপরও মনেহয় যতটুকু নেয়া দরকার তা নিতে পারি না। নানা-নানী, দাদা-দাদী, মামা-চাচা হরিয়ে অনেক আপনজনহীন হয়ে গেছি। সময়ের সাথে সাথে একে এক চলে যাবে সব আপনজন।
সব লোকজন অচেনা অপরিচিত। কেউ কাউকে কাছে ডাকে না, কুশল বিনিময় করে না। এসকল বিষয় চিন্তা করলেই অস্তিত্বহীন মনে হয় সবকিছু। যারা ছিল আমাদের হাসি আনন্দে তারা নেই, আর কখনো ফিরবেনা। আপনজনহীন একজন লোক ? কল্পনা করা যায়না। এরপর আমরা প্রতিদিন হারাচ্ছি কাউকে না কাউকেই...
০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৮
আহেমদ কায়সার নাসির বলেছেন: হয়তো হারিয়ে ফেলছি...
২| ০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৬
হাসান মাহবুব বলেছেন: সুন্দর লেখা। আমারো আপনজনের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। অনুভূতি ভাগাভাগির জন্যে কাউকে পাইনা আর।
০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৯
আহেমদ কায়সার নাসির বলেছেন: অনুভূতি ভাগাভাগির জন্যে আসুন, ভাগাভাগি করি...
৩| ০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:২৩
রাতমজুর বলেছেন: ডান
০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১১:৩২
আহেমদ কায়সার নাসির বলেছেন: টু
৪| ২৫ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১২:২২
হরিণ বলেছেন: আপনজনের সংখ্যা কমছে!
২৬ শে জুলাই, ২০০৯ রাত ১:০০
আহেমদ কায়সার নাসির বলেছেন: কমছে হয়তো কমেছে।
©somewhere in net ltd.
১|
০৩ রা জুলাই, ২০০৯ রাত ১০:৩৫
কালমেঘ বলেছেন: হারাচ্ছি।