নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ এক ডজন কষ্ট

০১ লা মে, ২০১৪ রাত ৮:৪১



জব্বার আলির মেয়েটা জন্ম থেকেই কুৎসিত। একে তো সে বাবার মতো ঘোর কালো, তার ওপর তার বাঁ চোখটা যাচ্ছে তাই ট্যারা। স্কুলে যাওয়ার আগে পর্যন্ত মহল্লার ছেলেমেয়েরা তাকে খেলতে নেয় না। মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে ছুটে এসে বাবার কোলে চড়ে বলে, ‘ওদের বকে দাও।’ জব্বার আলি মেয়েকে আদর করতে করতে নিজের চোখ মোছে।



স্কুলে যাওয়ার পর থেকে একদিনও মেয়েটা না কেঁদে স্কুল থেকে ফেরে না। স্কুলের সবাই তাকে দেখে ঠাট্টা তামাশা করে। জব্বার আলি ব্যবসায়ী মানুষ। বাজারে তার থান কাপড়ের দোকান। সে সকালে মেয়েকে স্কুলে দিয়ে দোকানে চলে যায়। বেলা বারোটার সময় মেয়েকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসায় খেতে আসে। তখন বাবা-মেয়ে দু’জনের চোখ থাকে ভেজা।



মেয়ে যখন প্রাইমারী পাশ করে ক্লাস সিক্সে উঠলো, তখন জব্বার আলি পুত্র সন্তানের পিতা হলো। ছেলেটি তার মায়ের মতো ফর্সা গোলগাল পুতুল পুতুল চেহারার। এমন সুন্দর ছোটভাই পেয়ে মেয়েটির খুশির সীমা নাই। জন্মের পর এই প্রথম মেয়েটির মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু সেই হাসিও কুচ্ছিত। মা বলে, ‘থাক, থাক, অমন মা-কালীর মতো চেহারা নিয়ে আর ভাইকে আদর করতে হবে না। ছেলে ভয় পাবে।’ জব্বার আলি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে জামার আস্তিনে চোখ মোছে।



মেয়ে বড় হয়ে কলেজে গেল। এস এস সির রেজাল্ট ভালো হলে কী হবে, কলেজে সহপাঠীদের ব্যবহার ভালো হলো না। তারা তাকে এড়িয়ে চলে। কথা বলতে চায় না। নিজেরা এক সাথে বা জোড়ায় জোড়ায় ঘুরে বেড়ালেও মেয়েটিকে সঙ্গে নিতে চায় না। মেয়েটি একা একা কলেজের কড়ই গাছের নিচে বসে থাকে। সে এসে বসলে অন্যেরা উঠে চলে যায়।



মেয়ে আরো বড় হলো। কুৎসিত মেয়েও যৌবনে সুন্দর হয়। কিন্তু মেয়েটির বেলায় তা’ হলো না। সে একটু মোটা হয়ে বরং আগের চেয়ে আরো কদাকার হয়ে গেল। বাবা জব্বার আলি মেয়ের জন্য পাত্র খুঁজে হয়রান। পেশাদার ঘটকরাও মেয়ের ছবি রাখতে চায় না। বলে, ‘ছেলের খোঁজ পেলে জানাবো।’ এমন মেয়েকে বিয়ে করবে কে? অনেক টাকা পয়সার লোভ দেখিয়েও ছেলে পাওয়া যায় না। আজকালকার পাত্ররা মনি কাঞ্চন একসাথে চায়। জব্বার আলি বৃদ্ধ বয়সে পাঞ্জাবির আস্তিনে চোখ মোছে।



এম এ পাশ দিয়ে চাকরির চেষ্টা করে ব্যর্থ হবার পর ঘরে বসে রইল মেয়েটি। ছোটভাইটি বি এ পড়তে পড়তে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে বাবার ব্যবসার হাল ধরলো। আর না ধরেই বা উপায় কী? বাবা জব্বার আলি অসুস্থ। ঠিক মতো ব্যবসার দেখাশুনা করতে পারে না। সে ছেলের হাতে ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে নিজের গতিবিধি বাড়ি আর মসজিদের মধ্যে সীমিত করে ফেললো। বাড়িতে সে যতক্ষণ থাকে, নিজের ঘর থেকে বের হয় না।



মেয়েটির মা মারা গেল। কিছুদিন পর বাবাও। বাড়িতে একা একা দম বন্ধ হয়ে আসে মেয়েটির। ভয়ে কাঁদতেও পারে না সে। ছোটভাই বলে, কাঁদলে তাকে নাকি দেখতে আরও ভয়ঙ্কর লাগে। ভাইয়ের সামনে কখনো কাঁদে না সে। ভাই না থাকলে কখনো কখনো ওর চোখ ভিজে ওঠে। তখন বারান্দার গ্রিল ধরে শুন্য দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে থাকে নীল আকাশের দিকে। রাস্তায় লোকজন দেখলে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়াতে মেয়েটির সংকোচ হয়। তখন সে ঘরে এসে বিছানার ওপর চুপচাপ বসে থাকে।



ছোটভাই বিয়ে করে বউ নিয়ে এলো। কী সুন্দর বউ! দুধে আলতা গায়ের রঙ, মাথা ভর্তি মেঘলা চুল, চপলা হরিণীর মতো দুই চোখ। ছোটভাইয়ের এত সুন্দর বউ দেখে অনেকদিন পর মেয়েটির মুখে হাসি ফোটে। কিন্তু বউ তার সাথে কথা বলতে চায় না। কিছু বললে হুঁ হাঁ করে এড়িয়ে যায়। বড় লোকের মেয়ে তো! তার ওপর সুন্দরী। একটু অহংকার তো থাকবেই!



বউ সন্তান সম্ভবা হলো। ছোট ভাই বললো, ‘বুবু, তুমি না হয় কিছুদিন যশোরে মামার বাড়ি গিয়ে থাকো। ছেলে হলে তারপরে এসো।’

১০

ভাইয়ের বাচ্চা দেখার সৌভাগ্য আর মেয়েটির হলো না। চার মাসের মাথায় সিঁড়ি থেকে পড়ে বউয়ের এ্যাবরশন হয়ে গেল। ছোট ভাই যশোরে খবর দিয়ে জানালো, ‘বুবু, তোমার আর আসার দরকার নাই। তুমি ওখানেই থাকো। টাকা পয়সার দরকার হলে পাঠিয়ে দেব বা আমি নিজে গিয়ে দেখা করে দিয়ে আসবো।’

১১

মেয়েটির টাকা পয়সার দরকার হয় না। ভাইটিও আর আসে না। বিধবা মামী ও মামাতো ভাইবোনদের একান্নবর্তী সংসারে তার টাকা পয়সার দরকারই বা কী? এই সংসারে আগে একজন কাজের বুয়া ছিল। মেয়েটি যাওয়ার পর তাকে ছাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন এই সংসারে সারাদিন রান্নাবান্না করা, বাসন কোসন ধোয়া, ঝাড় ঝাঁটা দেওয়া এসব কাজ করে তার ফুরসৎ হয় না। কীভাবে দিন কেটে যায়, টের পায় না সে। রাতে শোবার আগে মেয়েটি কী মনে করে খাটের নিচে রাখা ট্রাংক খুলে মাঝে মাঝে তার অনার্স ও মাস্টার্স পাশের সার্টিফিকেট গুলো বের করে দেখার চেষ্টা করে।

১২

কিন্তু সার্টিফিকেটের একটা লেখাও সে পড়তে পারে না। এ বাড়ির সদস্যদের হাতে সারাদিনে দলে মুচড়ে যাওয়া খবরের কাগজটা টান টান করে সে পড়ার চেষ্টা করে। কিন্তু খবরের কাগজের লেখা আরও ঝাপসা। বেশ কিছুদিন হলো চোখে ভালো দেখতে পায় না মেয়েটি। বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি হয়ে গেছে। এ সময় চোখে ভালো দেখার কথাও না। একটা চশমার বড় দরকার ছিল। কিন্তু.........।

*************************************************

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা মে, ২০১৪ রাত ১১:৪৯

মামুন রশিদ বলেছেন: আপনার গল্পগুলো বড়ই বিষাদের । মন খারাপ করে দেয় । গতকাল প্রথম আলো ব্লগে যে গল্পটা পড়লাম সেটাও ছিল বিষাদের ।

০২ রা মে, ২০১৪ দুপুর ২:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয় মামুন রশিদ ভাই, আপনার মন খারাপ করে দেওয়ার জন্য দুঃখিত। মন ভালো করার গল্প পোস্ট দেব ইনশাআল্লাহ্‌।

২| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১:৩০

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

মনকে নাড়িয়ে দেয়ার জন্য যথেষ্ট ++++++++

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয় কাণ্ডারি অথর্ব, আপনাকে ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

৩| ০২ রা মে, ২০১৪ রাত ১:৩৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাই এমন গল্প মাথায় যার থাকে,তাকে ধন্যবাদ না দিয়ে উপায় নেই।। বিশেষ করে- আজকালকার পাত্ররা মনি কাঞ্চন একসাথে চায়।

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয় সচেতনহ্যাপী, আপনাকে ধন্যবাদ। শুভেচ্ছা রইল।

৪| ০২ রা মে, ২০১৪ সকাল ১০:২৯

মাঈনউদ্দিন মইনুল বলেছেন:
এক ডজন কষ্ট কষ্ট মিলিয়ন কষ্টের সূত্রপাত করবে। বিষয়টি ঠিক এরকমই রুক্ষ। এখন হয়তো একটু রাখঢাক আছে। ভেতরকার বিষয়টি কোনভাবেই কম নয়।

শুভেচ্ছা জানবেন আবুহেনা ভাই :)

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, মইনুল ভাই। আপনি যথার্থই বলেছেন।
শুভেচ্ছা রইল।

৫| ০২ রা মে, ২০১৪ দুপুর ১২:০৮

মাহমুদ০০৭ বলেছেন: মাইনুদ্দিন ভাইয়ের সাথে একমত । গল্পে প্লাস ।
শুভকামনা জানবেন হেনা ভাই ।

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রিয় মাহমুদ০০৭, আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৬| ০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:০০

সিফাত সারা বলেছেন: দুঃখ পেলাম তবে ভাল লাগলো :(

০২ রা মে, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বোন সিফাত আরা, দুঃখ পেলেও গল্পটি যখন আপনার কাছে ভালো লেগেছে, তখন আমার শ্রম সার্থক মনে করছি। আপনাকে ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন। শুভকামনা রইল।

৭| ০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:০৯

তাসজিদ বলেছেন: মানুষের কেন যে এত কষ্ট? কষ্ট নিয়ে বাচা, কষ্ট নিয়ে দিন চলা, কষ্টের ফেরি করা, তারপর একদিন কষ্ট নিয়ে পরপারে চলে যাওয়া

০৩ রা মে, ২০১৪ রাত ৮:৪১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সংবেদনশীল মন্তব্য। ধন্যবাদ, ভাই তাসজিদ।

৮| ৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৪:৩৩

মূর্খ বলেছেন: দুঃখ পেলাম তবে ভাল লাগলো.................

৩০ শে মে, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ, মূর্খ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.