নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৩)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:২৯


আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-২)

যেদিন সে প্রথম দেখিনু
সে তখন প্রথম যৌবন।
প্রথম জীবনপথে-বাহিরিয়া এ জগতে
কেমনে বাঁধিয়া গেল নয়নে নয়ন।


হাট দেখার খুব শখ ছিল। আমরা শহরের ছেলে মেয়েরা কোনদিন হাট দেখিনি। অথচ গ্রামের লোকেদের কাছে হাটের গুরুত্ব খুব। একদিন ঠিক হলো আমরা সব ভাই বোন মিলে হাট দেখতে যাবো। হাটে নাকি হরেক রকম জিনিস ওঠে। তিলের খাজা, গুড়ের জিলাপী, ভুট্টার খই, খাগড়াই, বাতাসা, কদমা, লাড্ডু, বেলুন, বাঁশি, নাটাই, ঘুড়ি ইত্যাদি এমন কিছু নাই, যা হাটে ওঠে না। মেয়েদের চুলের ফিতা, রেশমি চুড়ি, স্নো, পাউডার, লিপস্টিক সবই পাওয়া যায়। লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা, চপ্পল এসবেরও দোকান বসে। হাটের একদিকে ধান, পান, আখ, পাট ইত্যাদি এবং অন্যদিকে গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি এসবের বেঁচাকেনা হয়, আরেক দিকে খাবার জিনিস, কসমেটিক্স ও কাপড় চোপড়ের বেঁচাকেনা চলে। বহু লোকের সমাগমে হাট গম গম করে।
এত রাস্তা আমরা হেঁটে যেতে পারবো না বলে আমাদের জন্য গরুর গাড়ির ব্যবস্থা করা হলো। কিন্তু সকালে ঘুম থেকে উঠে বড়ভাই ঘোষণা দিলেন, তিনি হাটে যাচ্ছেন না। তাঁর মতে, হাটে আবার দেখার কী আছে? শহরের বাজারও যা, গ্রামের হাটও তাই। শহরের বাজার প্রতিদিন বসে, গ্রামের হাট সপ্তাহে একদিন বসে। এই তো ফারাক। অতএব শুধু শুধু গরুর গাড়িতে ঝাঁকুনি খেয়ে কোমর পিঠ ব্যথা করার কোন দরকার আছে?
মাছের মাথা যায় যেদিকে, লেজও যায় সেদিকে। আমার অন্যান্য ভাইবোনরাও বড়ভাইয়ের পদাংক অনুসরণ করলো। তারা কেউ যাবে না। এদিকে আমার হাট দেখতে যাওয়ার খুব ইচ্ছা। আলেয়ার সাথে বনে বাদাড়ে ঘুরে ঘুরে আমার আর ঘরে বসে থাকতে ভালো লাগে না। আমার মনোভাব বুঝতে পেরে বড় চাচা বললেন, ‘তুমি চলো।’
আমি বললাম, ‘কিন্তু আমার একার জন্য গরুর গাড়ি.........।’
‘আরে বাবা, বাড়ির গাড়ি যাবে আসবে, তাতে অসুবিধা কী? যাও, যাও, গাড়িতে ওঠো।’
আলেয়া আবদার করলো, সেও যাবে। বড় চাচা বললেন, ‘তুই মেয়েমানুষ হাটে গিয়ে কী করবি?’
বড় চাচীমা তড়িঘড়ি করে বললেন, ‘ওর মেজ ভাইয়ের সাথে যেতে চাচ্ছে, যাক না!’
বড় চাচা রাজী হলেন। বললেন, ‘যা তাড়াতাড়ি বোরখা পরে আয়।’

বড় চাচার সাথে পানের টুকরি মাথায় নিয়ে ছয় সাত জন কামলা হেঁটে চলে গেছে আগেই। ঢিমে তালের গরুর গাড়িতে বসে আমি আর আলেয়া গল্প করতে করতে যাচ্ছি। এসব গল্পেরও কোন ঠাঁই ঠিকানা নাই। কলেজে আমরা ছেলেমেয়ে একসাথে পড়ি শুনে আলেয়ার আক্কেল গুড়ুম।
‘ওমা, এত বড় বড় ছেলেমেয়ে একসাথে পড়ে?’
‘হাঁ, পড়ে।’
‘মেয়েরা কী বোরখা পরে কলেজে আসে?’
‘না।’
‘অত বড় ধিঙ্গি ধিঙ্গি মেয়ে আমাদের মতো সালোয়ার কামিজ ফ্রক প্যান্ট পরে কলেজে যায়?’
‘হাঁ, যায়। তবে ফ্রক প্যান্ট পরেনা। ফ্রক প্যান্ট তো বাচ্চা মেয়েদের পোশাক।’
‘বাচ্চা মেয়েদের কী বলছেন মেজভাই? আমি তো এক দেড় বছর আগেও ফ্রক প্যান্ট পরেছি।’
‘তখন তো তুই বাচ্চাই ছিলি।’
এবার আমার প্রশ্ন, আলেয়ার উত্তর।
‘আচ্ছা, তোর মাথায় এত চুল পরিস্কার রাখিস কিভাবে? চুলে উকুন লাগেনা?’
‘মাঝে মাঝে লাগে। শরিফার বিচি গুঁড়ো করে নিমের তেলে ভিজিয়ে মাথায় লাগালে ভালো হয়ে যায়।’
হাটের কাছাকাছি এসে আলেয়া আমার হাতে কিছু সিকি আধুলি দিয়ে বললো, ‘মেজভাই, হাট থেকে আমার জন্যে একটা লিবিসটিক কিনবেন তো। আমার লিবিসটিকের খুব শখ। কিন্তু...।’ একটু চুপ করে থেকে আলেয়া আবার বললো, ‘অবশ্য আপনি কিনে দিলে কেউ কিছু বলবে না।’
হাটে আসার আগে মা আমার হাতে কিছু টাকা দিয়েছিলেন। আমি আলেয়ার সিকি আধুলি ফিরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘এগুলো রাখ, আমার কাছে টাকা আছে। তোকে সাথে নিয়ে কিনবো। তোর পছন্দ মতো কিনতে পারবি।’
আলেয়া ঘাবড়ে গিয়ে বললো, ‘আব্বা তো আমাকে হাটের মধ্যে যেতে দেবে না।’
‘আচ্ছা, যেতে না দিলে তখন দেখা যাবে। তুই ভাবিস না। লিপস্টিক পেলেই তো হলো।’
হাটে পৌঁছে দেখি, বড় চাচা পান বিক্রির কাজ শেষ করে বাড়ির জন্য রসগোল্লা, গুড়ের জিলাপী আর তিলের খাজা কিনে একটা ছাতিয়ান গাছের নিচে বসে আছেন। পরিশ্রান্ত কামলারা বসে বসে বিড়ি ফুঁকছে।
আমি গাড়ি থেকে নেমে বড় চাচাকে বললাম, ‘চাচা, আলেয়া আমার সাথে একটু হাটে বেড়াতে যেতে চাচ্ছে। বোরখা পরেই যাবে। নিয়ে যাবো?’
বড় চাচা একটু অপ্রস্তুত হলেন। বললেন, ‘আচ্ছা যাক, তবে তোমরা বেশি দেরি করো না বাবা। বাড়ি ফিরতে ফিরতে সন্ধ্যে পার হয়ে যাবে।’
বড় চাচা গাইড হিসাবে একজন কামলাকে আমাদের সাথে দিয়ে দিলেন। আলেয়া মহা খুশি। জীবনে কখনো এভাবে হাটে বেড়ানোর সুযোগ পায়নি সে। আমার গায়ে গায়ে ঘেঁষে সারা হাট ঘুরে বেড়ালো সে। তার লিপস্টিক (আলেয়ার উচ্চারণে লিবিসটিক) কেনা হলো। লিপস্টিকের রং টকটকে লাল। সাথে কয়েক গাছি রেশমি চুড়ি, চুলের ফিতা আর স্নো-পাউডারও কেনা হলো। মেজ ভাইয়ের অনেক পয়সা খরচ হয়ে গেল বলে আলেয়া আনন্দের সাথে দুঃখ প্রকাশ করলো। ওর এই ছেলেমানুষি আনন্দ দেখে আমারও আনন্দ হলো। হাটের এক দোকানে বসে আমরা দু’জন আলু পটলের তরকারি দিয়ে গরম গরম লুচি খেলাম। বোরখা পরা মহিলা খদ্দের পেয়ে দোকানদার খুব খাতির করলো। আমাদের কামলার কাছে সরকার বাড়ির নাতি নাতনির পরিচয় পেয়ে তার খাতির আরো বেড়ে গেল। খাওয়া শেষে দাম দেওয়ার সময় দোকানদার দাম না নিয়ে হাত গুটিয়ে হাসি হাসি মুখ করে বসে রইল। আমি বললাম, ‘দাম নিচ্ছেন না কেন?’
জানা গেল, বড় চাচার তরফ থেকে ইতিমধ্যেই খাবারের দাম পরিশোধ করা হয়ে গেছে। বড় চাচা আমাদের সাথে আসেননি, অথচ দাম শোধ করা হয়ে গেল! এই গায়েবী পেমেন্টের শানে নজুল ঠিক বোঝা গেল না। আমি বোকার মতো আলেয়ার হাত ধরে বেরিয়ে এলাম দোকান থেকে।
যাই হোক, হাট বেড়িয়ে ফেরার পথে আমাদের গাড়ির কাছাকাছি এসে এক আইসক্রিমওয়ালাকে পাওয়া গেল। আমি বললাম, ‘আলেয়া, আইসক্রিম খাবি?’
আলেয়া ওর বাপের দিকে তাকিয়ে হাঁ বা না কিছুই বললো না। আমি দু’আনা দামের দুটো আইসক্রিম একটা ওর হাতে দিলাম, আর একটা নিজে চুষতে চুষতে দাম দিতে গিয়ে দেখি বড় চাচা একজন কামলার হাত দিয়ে দাম পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আলেয়া বোরখার নেকাব তুলে মহা আনন্দে আইসক্রিম খাচ্ছে। আমিও খাচ্ছি। গরমে আইসক্রিম গলে রঙিন পানিতে আমার জামা আর আলেয়ার বোরখা রঙিন হয়ে যাচ্ছে। বড় চাচা আমাদের দু’জনকে এ অবস্থায় দেখে একটু বিব্রত। তিনি গাড়োয়ানদের তাড়া দিলেন গরু জুড়ে গাড়ি প্রস্তুত করতে।
হাট থেকে মধুপুর চার ক্রোশ রাস্তা। অর্ধেকটা পথ আসার পর ভুলে যাওয়া কথাটা আমার মনে পড়ে গেল। এই কথাটা আলেয়াকে জিজ্ঞেস করবো বলে অনেকক্ষণ থেকে ভাবছিলাম। কিন্তু হাটে ঘুরাঘুরি করতে গিয়ে আর মনে ছিল না।
‘আচ্ছা আলেয়া, তোকে একটা কথা বলি।’
‘কী কথা মেজভাই?’
‘এই যে তুই হাটে আসার সময় বললি যে, আমি তোকে লিপস্টিক কিনে দিলে কেউ কিছু বলবে না। আমি কিনে দিলে কেউ কিছু বলবে না কেন?’
আলেয়া মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল। আমি একটু অপেক্ষা করে বললাম, ‘কি রে কিছু বলছিস না যে!’
‘আপনি যদি রাগ না করেন তো বলতে পারি।’ আলেয়ার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম।
‘আচ্ছা বেশ, রাগ করবো না। তুই বল।’
গাড়োয়ান যাতে শুনতে না পায় সে জন্য আলেয়া আমার দিকে ঝুঁকে পড়ে ফিস ফিস করে বললো, ‘আপনার সঙ্গে আমার বিয়ে হবে তো, তাই।’
‘কী বলছিস তুই?’ আমি আঁতকে উঠে বললাম, ‘এ কথা তোকে কে বলেছে?’
‘হু শ্ শ্!’ আলেয়া ঠোঁটের ওপর আঙ্গুল রেখে গাড়োয়ানের দিকে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইশারায় আস্তে কথা বলতে বললো। তারপর সে নিজে ফিস ফিস করে যা বললো, তা’ শুনে আমি প্রায় নির্বাক হয়ে গেলাম। মনে হলো আমার শরীরটা যেন অবশ হয়ে গেছে। শুনলাম আমার জন্মের পর আমার আর আমার মায়ের বেঁচে থাকার সংগ্রামের কাহিনী।

আমাকে জন্ম দিতে গিয়ে মাত্রাতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মা প্রায় মরতে বসেছিলেন। সে যুগে সেই অজ পাড়াগাঁয়ে না ছিল ডাক্তার, না ছিল ওষুধ। তিন মাস আমার মা জীবন্মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন বিছানায়। সে সময় হুঁশ জ্ঞান ছাড়া কোন রকমে শুধু বেঁচে ছিলেন তিনি। কবিরাজি শিঁকড় বাকড় দিয়ে চিকিৎসা হতো তাঁর।
এদিকে আমি ছিলাম অপরিণত শিশু। নির্ধারিত সময়ের প্রায় এক মাস আগে আমার জন্ম হয়। ফলে তখনকার দিনে মধুপুরের মতো গণ্ডগ্রামে আমারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছিল প্রায় শুন্য। আলেয়ার মা তখন সরকার বাড়িতে নতুন বউ। পল্লী সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় তাঁরও বিয়ে হয়েছিল খুব কম বয়সে। তা’ সত্ত্বেও তিনি আমাকে ও আমার মাকে বাঁচানোর সব দায়িত্ব তুলে নিলেন নিজের কাঁধে। অচেতন অবস্থায় মায়ের কাপড় বদলানো, মাথার চাঁদিতে তেল ঘষে চুল আঁচড়ে দেওয়া, মায়ের নোংরা পরিস্কার করা, মাঝে মাঝে মায়ের হুঁশ ফিরলে আতপ চালের পাতলা জাউ খাওয়ানো-কী করেননি তিনি?
আমার বড়ভাই ও বড়বোন তখন খুব ছোট। তাদের গোসল, খাওয়া, ঘুম সব কিছু করতে হতো বড় চাচীমাকে। মা রাতে নিষ্প্রাণ পড়ে থাকতেন খাটে, আর বড় চাচীমা আমাকেসহ আমার দুই ভাইবোনকে নিয়ে শুয়ে থাকতেন মেঝেতে। মা-ছেলে দু’জনের যত্ন নিতে গিয়ে রাতের পর রাত নির্ঘুম কাটিয়ে দিতেন তিনি।

আমার জন্মের পর আমি নাকি কাঁদিনি। এ নিয়ে সরকার বাড়ির সবাই খুব উদ্বিগ্ন ছিল সে সময়। অপরিণত অবস্থায় জন্মের কারণে আমার চোখ ফুটতেও দেরি হয়। বড় চাচীমার আপ্রাণ চেষ্টায় আর দাদাজানের দোয়া দরূদ পাঠের কল্যাণে দুই দিন পর আমি নাকি হঠাৎ চিৎকার করে নবজাতকের কান্না কেঁদে উঠি। আমাকে বুকে নিয়ে বড় চাচীমাও শিশুর মতো কাঁদতে থাকেন। কাঁদতে কাঁদতে সাফল্যের আনন্দে তিনি হাসতে থাকেন। আমি যত কাঁদি, বড় চাচীমা তত হাসেন। স্বর্গ থেকে নেমে আসা মাতৃস্নেহে উতলে ওঠে বড় চাচীমার মন।
মায়ের বুকে পর্যাপ্ত দুধ ছিল না। আমাকে দুধ খাওয়ানোর জন্য মায়ের কাছে নেওয়া হলে দুধের অভাবে আমার পেট ভরতো না। আমি কান্নাকাটি করতাম। বড় চাচীমা গরুর দুধে পানি মিশিয়ে পাতলা করে কাঁচের ফিডারে ভরে আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। আমি হাত পা ছুঁড়তাম, পেশাব পায়খানা করে বড় চাচীমার গা নোংরা করে দিতাম। বড় চাচীমা হাসিমুখে সব সহ্য করতেন। কাঁথায় জড়িয়ে আমাকে সব সময় তাঁর বুকের মধ্যে ধরে রাখতেন। আমার যেন ঠাণ্ডা না লাগে, ক্ষিধেয় কষ্ট না পাই এসব দিকে তাঁর ছিল সার্বক্ষণিক নজর। যেন আমি ছিলাম তাঁরই সন্তান। মা একটু সুস্থ হওয়ার আগে পর্যন্ত পুরো তিনটি মাস আমার মা হয়ে বড় চাচীমা এভাবেই আমাকে বুকে নিয়ে কাটিয়ে দেন।
ইতিমধ্যে আব্বা ওকালতি পরীক্ষায় পাশ করে রাজশাহী বারে প্র্যাকটিস শুরু করেছেন। রাজশাহী শহরে তিনি বাড়ি ভাড়া নিলেন এবং আমাদের সেখানে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। দাদাজান বলেছিলেন, ‘বউমার শরীরটা আর একটু সেরে উঠলে তখন নিয়ে গেলে ভালো হতো না?’
আব্বা বলেছিলেন, ‘বাপজান, ওর শরীরের দিকে তাকিয়েই তো তাড়াতাড়ি যেতে চাচ্ছি। রাজশাহী শহরে আধুনিক চিকিৎসার ব্যবস্থা আছে। সেখানে পাশ করা ডাক্তার, ওষুধপত্র সবই আছে। আপনার বউমা তাড়াতাড়ি ভালো হয়ে যাবে।’
দাদাজান বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন। উকিল ছেলের কথা তাঁর মনে ধরলো। তিনি রাজী হয়ে গেলেন।

শহরে রওনা হওয়ার তিনদিন আগে থেকে বড় চাচীমা শুধু কাঁদেন আর কাঁদেন। আমার গায়ে তেল মাখানোর সময় কাঁদেন, কপালে কাজলের টিপ দেয়ার সময় কাঁদেন, ফিডারে দুধ খাওয়ানোর সময় কাঁদেন। কাঁথায় জড়িয়ে ধরে বুকে নিয়ে আদর করতে করতে কাঁদেন। আমি তখন একটু একটু হাসি মুখ করতে শিখেছি। বড় চাচীমা আমাকে তাঁর পায়ের ওপর শুইয়ে পা ঝাঁকিয়ে ঘুম দিতে দিতে কাঁদেন আর বলেন, ‘আমাকে কাঁদিয়ে তুই হাসতে হাসতে চলে যাচ্ছিস আব্বা? তোর জানে কী একটু রহম নাই?’
বিদায়ের দিন মাকে জড়িয়ে ধরে বড় চাচীমার কান্না আল্লাহর আরশ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিল। মাও কাঁদছেন ছোট শিশুর মতো। বাড়ির সবার চোখে পানি। মা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, ‘আমার আর আমার এই ছেলের জন্য তুই যে কষ্ট করলি, নিজের বোন হলেও কেউ করতো না। তুই না থাকলে আমার এই ছেলে বাঁচতো না। আমি আজ সবার সামনে শপথ করে বলছি, তোর মেয়ে হলে তার সাথে এই ছেলের বিয়ে দিয়ে আমি তোর ছেলে তোর কাছেই ফিরিয়ে দেব। এই ছেলে জামাই হলেও তোর, ছেলে হলেও তোর। আমি এই ছেলেকে শুধু জন্মই দিয়েছি, কিন্তু তুইই ওর মা।’
বড় চাচীমা কাঁদতে কাঁদতে মায়ের পা জড়িয়ে ধরে পড়ে রইলেন। দাদীমা ও উপস্থিত প্রতিবেশী মহিলারাও কাঁদছেন। দাদাজান বড় চাচীমাকে বললেন, ‘ওদের ছেড়ে দাও মা। অনেক পথ যেতে হবে। বেলা হয়ে যাচ্ছে।’
বড় চাচীমাকে এক রকম জোর করে ওঠানো হলো মায়ের পা থেকে। মোষের গাড়িতে চড়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওনা হলাম আমরা। বড় চাচীমা গাড়ির পিছে পিছে পাগলের মতো ছুটতে ছুটতে আসছেন। হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেও উঠে দাঁড়িয়ে আবার ছুটে আসছেন তিনি। মনে হচ্ছে যেন তাঁর সন্তানকে কেউ ছিনিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর কাছ থেকে। প্রতিবেশী মহিলারা আপ্রাণ চেষ্টা করেও তাঁকে থামাতে পারছে না। মা গাড়িতে বসে হাউ মাউ করে কাঁদছেন। তিনি কাঁদতে কাঁদতে চিৎকার করে বলছেন, ‘তোর ছেলেকে আমি তোর কাছে ফিরিয়ে দেব রে, আল্লাহর কসম। এখন শান্ত হয়ে বাড়ি ফিরে যা বোন।’
তারপর ধীরে ধীরে সব কিছু নিস্তব্ধ হয়ে গেল। কাঁচা রাস্তায় মোষের গাড়ির চাকায় ক্যাঁচ ক্যাঁচ আওয়াজ ছাড়া আর কোন শব্দ নাই। আমি আমার তিন মাসের পালক মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গর্ভধারিণী মায়ের কোলে শুয়ে রওনা হলাম শহরের দিকে।
******************************************************
আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৪)


মন্তব্য ৩৯ টি রেটিং +১২/-০

মন্তব্য (৩৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৪৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: দুইবার আগের পর্বের লিংক দেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হলাম না। দুঃখিত। পরে আর একবার চেষ্টা করবো।

২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:০২

ময়না বলেছেন: সুন্দর।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ময়না।

৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১১

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-১)

আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-২)

এই নিন আেগর দুই পর্বের লিংক :)

দেহেন দি কল্লেন কি?
হুদাই চউখ ঝাপসা হয় ক্যারে??? কি সুমস্যা!

এক্কেবারে কইলজায় ঘাও মারছেন এই পর্বে!
আহা এমন বড় চাচীমা বড় ভাগ্যির ব্যপার। এমন মাতৃত্ব, এমন নি:স্বার্থ প্রেমইতো
একান্নবর্তী পরিবারগুলোর সবচে বড় বাঁধন ছিল।
হৃদয় ছুঁয়ে না - একবারে গভীরে ঢুকে যাচ্ছে ভায়া!

++++++++++++

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এক্কেবারে কইলজায় ঘাও মারছেন এই পর্বে!
আহা এমন বড় চাচীমা বড় ভাগ্যির ব্যপার। এমন মাতৃত্ব, এমন নি:স্বার্থ প্রেমইতো
একান্নবর্তী পরিবারগুলোর সবচে বড় বাঁধন ছিল।
হৃদয় ছুঁয়ে না - একবারে গভীরে ঢুকে যাচ্ছে ভায়া!

যারা এর আগে হার্ড কপি পড়েছেন, তাদের প্রায় সকলের একই অনুভূতি ছিল। কেউ কেউ রাতে ঘুমাতে পারেননি। আমার লেখার কোন কৃতিত্ব নাই ভাই। তখনকার সময়ে ঘটে যাওয়া এই সত্য ঘটনাগুলোই পাঠকদেরকে চুম্বকের মত আটকে রেখেছে এই উপন্যাসের সাথে। কষ্ট করে লিংক করে দেওয়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। এমন কোন প্রযুক্তি আছে কী যার সাহায্যে আপনার দেওয়া লিংক গুলোকে উপরে লেখার নিচে আমি তুলে দিতে পারি? তাহলে আপনি কষ্ট করে প্রতিটি পর্ব পড়ে লিংক করে দেবেন, আর আমি বিনা পরিশ্রমে উপরে লেখার নিচে সেটা তুলে দেব। হাঃ হাঃ হাঃ। বুড়ো বয়সে প্রযুক্তিকে ঠিকমতো কব্জা করতে পারছি না ভাই।
ধন্যবাদ ভাই বিদ্রোহী ভৃগু।

৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৩৭

নতুন নকিব বলেছেন:



হৃদয় ছোঁয়া বর্ণনা! আমার চোখ তো অজান্তেই অশ্রুসজল হয়ে গেল! অসাধারণ! +++

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: সংবেদনশীল মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ভাই নতুন নকিব।

৫| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নাহ! তৃতীয় বার চেষ্টা করেও আগের পর্বের লিংক দিতে পারলাম না। সত্যিই দুঃখিত।

৬| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৪

করুণাধারা বলেছেন: ঠিক আছে লিংক না দিতে পারলে অসুবিধা নেই, আপনি যেহেতু পরপর পর্বগুলো দিয়ে যাচ্ছেন, তখন আপনার ব্লগে গিয়ে অনায়াসে আগের পর্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে পড়তে পড়তে আমার মনে হচ্ছে একবারে বইটা পড়তে পারলে ভালো হতো। বইটা আর নতুন সংস্করণ করায় অসুবিধা ছিল কিছু??

এই কাহিনীর সবচেয়ে যা ভালো লেগেছে, একজন নারীর মাতৃত্ব আর ভালোবাসা চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। নিজের কোন সন্তান জন্ম দেননি তখনো, অথচ একটি অসুস্থ নবজাতককে সম্পূর্ণ নিঃস্বার্থভাবে যেভাবে যত্ন করেছেন, সাথে সাথে আপনার অসুস্থ মাকেও- এই ভালোবাসা দেখে খুবই ভালো লাগলো। আজকালকার দিনে এমনটা চিন্তাও করা যায় না।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রথমেই বলে রাখি, এই উপন্যাসটি আমি নিজেই আমার প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান 'কেয়া পাবলিশার্স' থেকে ২০১১ সালে প্রকাশ করেছিলাম। উপন্যাসটির এক হাজার কপি শেষ হয়ে যাওয়ার পর দ্বিতীয় মুদ্রণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। ঠিক এই সময় আমার একটা স্ট্রোক হয়। তার আগে ২০০৯ সালে আমার একবার হার্ট এ্যাটাকও হয়। স্ট্রোকের পর আমার বাঁ দিকটা প্রায় অবশ হয়ে যায়। দীর্ঘদিন ফিজিওথেরাপী ও মেডিসিন নেওয়ার পর অনেকটাই উন্নতি হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত পুরোপুরি সুস্থ হতে পারিনি। বাঁ হাতের আঙ্গুলগুলো এখনো অসাড় অবস্থায় আছে। ফলে কম্পিউটারে এক হাতে টাইপ করতে হয়। এই উপন্যাসটির প্রথম মুদ্রণের সময় ফাইনাল কপি একটা সিডি করে রেখেছিলাম। কিন্তু সেটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে ব্লগে এখন বই দেখে টাইপ করে পোস্ট দিচ্ছি। আসলে আমি কিন্তু বইটি বিক্রি করে টাকা রোজগার করবো এই উদ্দেশ্যে বইটি প্রকাশ করিনি। ব্লগে ধারাবাহিকভাবে পোস্ট দিচ্ছি এই কারণে যে অধিক সংখ্যক মানুষ যেন উপন্যাসটি পড়তে পারেন। প্রথম প্রকাশের সময় ঢাকার বাংলাবাজারে একজন প্রকাশককে ডিস্ট্রিবিউটর নিয়োগ দিয়েছিলাম। তা' ছাড়া আমি নিজেও উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বইটির বিপনন কাজে বিভিন্ন লাইব্রেরিতে ছুটোছুটি করেছি।
কিন্তু এখন আমার যা শারীরিক অবস্থা তাতে এসব কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। ২য় মুদ্রণের জন্য ঢাকার কয়েকজন প্রকাশককে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তাদের নানারকম অনৈতিক শর্তের কারণে সে চেষ্টাও বাদ দিতে হয়েছে।

যাই হোক, এই পর্বটি আপনার কাছে ভালো লাগায় অসংখ্য ধন্যবাদ।

৭| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ভায়া প্রথমে আপনার গল্পের দুই পর্বই আলাদা ট্যাবে ওপেন করুন।
করেছেন?
এবার যে পর্বে লিংক গুলো এড করতে চান তার এডিট মুডে যান।
লিংকে ( শিকলে) ক্লিক করুন।
একটা আলাদা উইন্ডো খুলেছে?
ব্যাস শিরোনামের ঘরে আপনার আলাদা ট্যাবে খোলা উ্ইন্ডো থেকে পর্বের নামটা কপি করে পেষ্ট করুন।
এবার নীচের লিংক পোষ্টে কার্সর রাখুন।

আবার আপনার খোলা ট্যাবে যান। ট্যাবের ইউআরএল ( এড্রেসবারে যা থাকে) পুরোাটা কপি করুন
এডিট পোষ্টের লিংকের ঘরে পেস্ট করে দিন।
লিংক এড বরুন এ ক্লিক করুন।
পোষ্ট সেভ করে আপডেট দিয়ে দিন।
ব্যাস! :)

আশা করি হয়ে যাবে।

আর আপনি চাইলে অবশ্যই লিংক করে দিতে পারবো।
আগে চেষ্টা করুন আরেকবার। না হলে আমি ম্যাসেঞ্জারে আপনাকে নক করবো খন। :)

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভাই বিদ্রোহী ভৃগু, আপনি যথেষ্ট আন্তরিকতার সাথে আমাকে সহযোগিতা করতে চেষ্টা করছেন, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু কতটুকু কী করতে পারবো বুঝতে পারছি না। তবু চেষ্টা করবো। মনঃক্ষুণ্ণ হবেন না প্লিজ! আমার মতো ৬৫ বছর বয়সের বৃদ্ধ তো সমাজের আবর্জনাই, তাই না?

অনেক অনেক ধন্যবাদ।

৮| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৬

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: অশ্রু নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হলাম না ।
আপনি খুব ভাগ্যবান যে, আপনি একজন ফেরেশতার মত মানুসকে আন্টি (দ্বিতীয় মা) হিসাবে পেয়েছিলেন ।
এটাই যৌথ পরিবারের সুবিধা ।সবাই সবার জন্য ।
আন্টিকে সালাম ।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:২৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, আমার বড় চাচীমা তো আমার মা-ই। উপন্যাসটি পড়তে থাকুন। সব কিছু বুঝতে পারবেন।


ধন্যবাদ মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

৯| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:১৪

মা.হাসান বলেছেন: মেয়েদের বাল্য বিবাহের কথা পড়েছি, ছেলেদের বাল্য বিবাহের ঘটনা দেখিতেছি!!

ঐ চাচা তো বাড়ির বড় ছেলে না, আপনার বাবাই বড় ছেলে। এর পরেও ওনাকে বড় চাচা বলছেন। সম্ভবত উনিই চাচাদের মাঝে বড় বলে এরকম। কিন্তু অন্য চাচাদের ছেলে মেয়েরা সম্ভবত আপনার বাবাকেই বড় চাচা বলতেন।

আপনার দাদি যেরকম মাতৃস্নেহে অপর পক্ষের ছেলেমেয়েদের মানুষ করেছেন, চাচি মনে হয় তারো বেশিই করেছেন। চোখ ভেজার কারন মনে হয় ঢাকার পলিউশন না, অন্য কিছু।

লিংকের জন্য নিচের বোল্ড করা লেখাটা কপি করে পেস্ট করুন:

১ম পর্ব [link|https://www.somewhereinblog.net/blog/aihena039/30282932|আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-১)


২য় পর্ব [link|https://www.somewhereinblog.net/blog/aihena039/30283048|আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-২)

৩য় পর্ব [link|https://www.somewhereinblog.net/blog/aihena039/30283157|আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৩)

এর পর (পর্ব-১), (পর্ব-২) এবং (পর্ব-৩) -- তিন জায়গায় আলাদা আলাদা করে থার্ড ব্রাকেটের শেষেরটা ']' দেবেন।

শেষটা দেখতে এরকম হবে -- ...বাসর (পর্ব-৩)]

আশা করি কাজ করবে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমাদের এই অঞ্চলে (মধুপুরসহ আশেপাশে প্রায় সব গ্রামে) ভাইদের ছেলেমেয়েরা সব বড় ভাইকে 'বড় আব্বা' বলে ডাকে। যেমন আমার আব্বারা ছিলেন চার ভাই। আব্বা সবার বড় হবার কারণে অন্য তিন ভাইয়ের ছেলেমেয়েরা তাঁকে 'বড় আব্বা' বলে ডাকে। নিজের বাবাকে 'আব্বা' এবং অন্যান্য চাচাদেরকে জ্যেষ্ঠতা অনুসারে 'মেজ আব্বা', 'সেজ আব্বা', 'ছোট আব্বা' এইভাবে ডাকে। এটা এই অঞ্চলের দীর্ঘদিনের রেওয়াজ। অতএব, আলেয়া আমার আব্বাকে ডাকতো 'বড় আব্বা' বলে। কিন্তু আমরা শহরে থাকতাম বলে এই কালচারের সাথে পরিচিত নই। আমরা বড় চাচা, মেজ চাচা, সেজ চাচা, ছোট চাচা এরকম ডাকেই অভ্যস্ত। কেননা, শহরে এবং আমার নানার বাড়ির গ্রামে চাচাদেরকে এভাবেই ডাকতে দেখেছি। মধুপুরে গিয়েও আমরা চাচাদেরকে এভাবেই ডেকেছি।

লিংকের পদ্ধতি শিখিয়ে দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই মা, হাসান।

১০| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:০২

অন্তরন্তর বলেছেন: লিংক দিতে পারছেন না কোন সমস্যা নেই। আপনি যে বই দেখে এক হাতে আবার টাইপ করে উপন্যাসটি লিখছেন তা অনেক কষ্টকর তা বুঝতে পারছি। লিখতে থাকুন আমাদের জন্য যতই কষ্ট হউক। আমি আপনার এই কষ্ট এপ্রিসিএট করি স্যার।
এ পর্বে আগের দিনের মানুষের নিখাদ ভালবাসা, মায়া, মমতা দেখে আমার মত বুড়ো মানুষের চোখে অশ্রু এসেছে যার কৃতিত্ব আপনার। লিখা চলুক ভাই। শুভ কামনা।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: না, না, আমার কোন কৃতিত্ব নাই ভাই। সময় এবং মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কটাই যে ছিল এরকম। আমি শুধু বই লিখে এগুলোকে ধরে রাখতে চেষ্টা করেছি মাত্র। লিখে রেখে না গেলে একদিন মানুষ সব ভুলে যাবে।

ধন্যবাদ ভাই অন্তরন্তর।

১১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:২২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এই পর্ব পাঠে সেই আবার আগের মতো আপ্লুত হলাম, কি যে দারুণ রুচিশীল বর্ণনা। পাঠক সামনে যাবেন আরো গভীরে একটি স্বার্থক গল্পের সবি উপভোগ করতে পারবে। গুরুজীকে অনেক শ্রদ্ধা। ভাল থাকুন সদায়।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মাহমুদুর রহমান সুজন।

১২| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: গ্রামের হাঁট গুলো আমার ভীষন পছন্দ।
গ্রামের কি এখনও কামলা পাওয়া যায়?
আজও বহু গ্রাম আছে- একজন গর্ভবতি নারীকে ভ্যানে করে শহরের হাসপাতালে নিতে হয়।
কালিজিরা ভর্তা খেলে শিশু ভালো দুধ পায়। অবশ্যই পেট ভরবে।

লেখা খুব সুন্দর এগিয়ে যাচ্ছে।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, গ্রামে এখনো কামলা পাওয়া যায়।


ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

১৩| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৫১

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: তিনটি পর্বই পড়লাম। যদিও এর আগের পর্বগুলোতে সময়াভাবে শুধু লাইক দিয়েই কাজ সেরেছি কিন্তু এই পর্বটা পড়তে গিয়ে দেখি চোখে অশ্রু আর বাধ মানছে না। তাই কমেন্ট না করে থাকতে পারলাম না। কাঁদিয়ে দিলেন।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পরের পর্বগুলিও পড়বেন আশা করি।


ধন্যবাদ ভাই সম্রাট ইজ বেস্ট।

১৪| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:১৬

ধ্যত্তেরিকাষতড়এএতধ্যত্তেরিকা বলেছেন: পর্ব ভালো হচ্ছে। চোখে আজকাল খুবই অসুবিধা বোধ করছি পাঠে। তবু আগ্রহ নিয়েই পড়লাম।

০৬ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: চোখে সমস্যা থাকলে না পড়াই ভালো। কষ্ট করে পড়েছেন বলে আমি কৃতজ্ঞ।


ধন্যবাদ ভাই ধ্যত্তেরিকাষতড়এএতধ্যত্তেরিকা।

১৫| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৭

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: দিলেনতো পাঠকের আগ্রহ বাড়িয়ে!আলেয়া,লিখকের কি গতি হয়েছিল জানার জন্য মুখিয়ে আছি।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পর্যায়ক্রমে জানতে পারবেন নিশ্চয়।


ধন্যবাদ ভাই গিয়াস উদ্দিন লিটন।

১৬| ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৫১

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: বাহ অনেক সুন্দর, দেখি পরের পর্বে কি হয়।

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নিশ্চয়। পর্বগুলো পড়তে থাকুন। আশা করি, ভালো লাগবে।


ধন্যবাদ ভাই তারেক_মাহমুদ।

১৭| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩৪

সোহানী বলেছেন: একটু হোছট খেলাম কারন প্রথম পর্বেই সে জানতো তার সাথে আলেয়ার বিয়ে। কিন্তু এখন হেনা সাহেব কেন আতংকিত হলেন একই কথা শুনে তা বুঝতে পারলাম না...... ;)

চলুক প্রেম পর্ব.......

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার তিন মাস বয়সের সময় আমার মা বড় চাচীমাকে যে কথা দিয়েছিলেন, তা' প্রায় সবাই জানলেও আমি জানতাম না। গ্রামে যাতায়াত না থাকায় গ্রামের কারো কাছ থেকে জানার সুযোগ ছিল না। আর আমার ভাই বোনদেরও ব্যাপারটা জানা ছিল না বলে মনে হয়। মা যখন বড় চাচীমাকে তাঁর মেয়ে হলে আমাকে সেই মেয়ের সাথে বিয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তখন আমার বড় দুই ভাই বোন খুবই ছোট ছিলেন। অত ছোট বয়সের কথা তাদের মনে না থাকারই কথা। আর আমার মা বাবার কাছ থেকে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে জানার প্রশ্নই উঠে না। অর্থাৎ সব মিলিয়ে আমার মায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমার কাছে সম্পূর্ণ অজ্ঞাত ছিল।
আলেয়ার কাছে শোনার আগে পর্যন্ত আমি কিছুই জানতাম না। ওর কাছে শোনার পর থেকে ওর প্রতি এক ধরণের টান অনুভব করি এবং ভালোবাসার উন্মেষ হয়। মায়ের দেওয়া প্রতিশ্রুতি আমাকে রক্ষা করতেই হবে, এমন বাধ্যবাধকতাও এসে যায়। মধুপুরে আলেয়া যে বাড়িতে আমার সব রকম দেখাশুনা করতো এবং এতে কেউ কিছু মনে করতো না, বরং এটা স্বাভাবিক বলেই সবাই মেনে নিত, তার কারণ তখন বুঝতে পারি। ব্যাপারটা আলেয়ার কাছে শোনার আগে পর্যন্ত সে আমার কাছে কাজিন স্রেফ ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
তাই গরুর গাড়ির ভেতরে আলেয়া যখন বলেছিল, আপনার সাথে আমার বিয়ে হবে, তখন সত্যিই আমি চমকে গিয়েছিলাম।

আশা করি, ব্যাপারটা আপনাকে বোঝাতে পেরেছি। ধন্যবাদ বোন সোহানী।

১৮| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ২:৩৬

সোহানী বলেছেন: ওওও আমার ভুল.. পরের পর্ব আগে পড়ায় এ ঝামেলা তৈরী হয়েছে :((

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ঠিক আছে। ইট'স ওকে। এমন হতেই পারে।

১৯| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৪:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে পাঠ করলাম ।
যাবার বেলায় প্রিয়তে নিয়ে গেলাম ।
শুভেচ্ছা রইল

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

২০| ২১ শে জুন, ২০২০ রাত ১১:৫৫

খায়রুল আহসান বলেছেন: পালক মায়ের কোল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গর্ভধারিণী মায়ের কোলে শুয়ে তিন মাস বয়সী লেখকের রাজশাহী শহরের উদ্দেশ্যে যাত্রার দৃশ্যটি হৃদয়বিদারক!
মায়ের শপথ শেষ পর্যন্ত রক্ষা হয় নাই, তা তো বুঝতেই পারছি। যথাসময়ে এর কারণ জানতে পারবো, তাই এ নিয়ে আর তেমন কিছু ভাবছি না। তবে আলেয়ার জন্য খারাপ লাগছে।
আপনার বড় চাচীর মত অসাধারণ স্নেহবতী নারী আমিও দেখেছি।
৬ এবং ১৭ নং মন্তব্য ও প্রতিমন্তব্য ভাল লেগেছে।
পোস্টে ভাল লাগা + +।

২২ শে জুন, ২০২০ সকাল ৮:৩৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনি যে স্নেহবতী নারীর কথা বলছেন, তার ব্যাপারে বলি, আমাদের মতো বয়স্ক মানুষদের অভিজ্ঞতা প্রায় একই রকম হয়ে থাকে।

ধন্যবাদ ভাই খায়রুল আহসান।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.