নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৭)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৪৭



আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৬)

আমরা দুজনে ভাসিয়া এসেছি যুগল প্রেমের স্রোতে
অনাদি কালের হৃদয়-উৎস হতে।

চঞ্চল প্রকৃতির কারণে ঘরে বসে থাকা আলেয়ার স্বভাব বিরুদ্ধ। গাঁয়ের মাঠে ঘাটে বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়ানোতেই তার স্বস্তি। আমরা মধুপুরে আসার পর থেকে স্কুলের সঙ্গেও তার আড়ি। ইচ্ছা হলে কোনদিন যায়, কোনদিন যায় না। গাঁয়ে পড়ালেখার অবস্থা এমনিতেই বেহাল। মেয়েদের বেলায় সেটা বোঝার ওপর শাকের আঁটি। সে যুগে কায়দা-আমপারা শেষ করে স্কুলে দু’ ক্লাস পড়ে নাম সই করতে পারলেই মেয়েদের অনেক পড়া হয়েছে বলে মনে করা হতো। এই কারণে বাড়িতেও পড়ালেখার ব্যাপারে অনুশাসন ছিল খুবই ঢিলে ঢালা। স্কুলে যাওয়া না যাওয়ার ব্যাপারে আলেয়ার নিজের ইচ্ছাই সব। তার ওপর আবার আমরা এসেছি, বিশেষ করে আমি। একে তো নাচুনে বুড়ি, তার ওপর ঢোলের বাড়ি। আলেয়ার স্কুলে যাওয়া শিকেয় উঠলো।

পুরোপুরি সুস্থ হবার পর আমি আবার ওর সাথে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলাম। তবে যথাসম্ভব রোদ বৃষ্টি এড়িয়ে এবং গ্রাম থেকে বেশি দূরে নয়। সঙ্গত কারণে কিছুটা লোকচক্ষুর আড়ালে থাকারও চেষ্টা করি আমরা। মধুপুর গ্রামে সরকার বাড়ির সামাজিক অবস্থান যথেষ্ট শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও গ্রাম্য সংস্কৃতিতে রক্ষণশীলতার প্রভাবকে তো অস্বীকার করা যায় না। সৌভাগ্যক্রমে জনবিরল এই পল্লী জনপদে কারো সাথে আমাদের দেখা হয়ে যাওয়াটাও ছিল বিরল ঘটনা। বাংলাদেশের কোন গ্রামে আজ বোধহয় সে অবস্থা আর নাই।

অবারিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়া এই গ্রামে দেখার মতো বিশেষ কিছু নাই। তবু বাড়িতে শুয়ে বসে থাকার চেয়ে বনে বাদাড়ে, খালে বিলে, পানের বরজে আর বাঁশের ঝাড়ে ঘুরে বেড়াতে ভালোই লাগে। মাঠে মাঠে ঢেউ খেলানো সবুজ ধানের নাচানাচি, জানা অজানা পাখির ডাক, বিলের জলে গামছা পেতে ছেলেমেয়েদের দাঁড়কানা মাছ ধরা আর সারি সারি তাল নারকেল গাছের আড়ালে ছোট ছোট মাটির কুঁড়েঘর। শহুরে চোখে এসব দৃশ্য অপূর্বই বটে। তবে সঙ্গে আলেয়া না থাকলে সেই সাদাকালোর যুগে সব কিছু এত রঙিন মনে হতো কী না জানিনা। শহরে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের কাছে দীর্ঘদিন গ্রামে থাকতে ভালো লাগার কথা না। আমি ছাড়া আমার অন্যান্য ভাই বোনরা স্বভাবতই মনমরা।

জন্মের পর এত বছর চলে গেছে, কিন্তু আমার মায়ের কাছে বা পরিবারের অন্য কারো কাছে আমি কোনদিন এমন কথা শুনিনি যে আলেয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে। এবার মধুপুর আসার আগে অনেক কিছুই ছিল আমার অজানা। আমার যে আরো একজন মা আছে, আমি যে দুই মায়ের এক সন্তান, এখানে আসার আগে তাও সেভাবে জানতাম না। আমার জন্মের তিন চার বছর পর আলেয়ার জন্ম। অথচ আমার জন্মের মাত্র তিন মাস পরেই মা নাকি বড় চাচীমাকে কথা দিয়েছিলেন তাঁর মেয়ে হলে সেই মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দেবেন। আগের দিনের গল্প কাহিনীতে এমন ঘটনার কথা অনেক শোনা যায়। কিন্তু আমার জীবনেই যে এমন ঘটনা ঘটে বসে আছে, আমার জানাই ছিল না।

আমার জন্মের পর ওই তিন মাস মা ছিলেন মরণাপন্ন অবস্থায়। চরম অসুস্থতার কারণে মায়ের বুকের সামান্য দুধ ছাড়া আমি আর কিছু খেতে পাইনি। অর্ধমৃত মায়ের বুকে যথেষ্ট দুধ ছিল না। বড় চাচীমা পানি মিশিয়ে পাতলা গরুর দুধ ও পাতলা বার্লি আমাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করতেন। আমি সেসব খেতে চাইতাম না। হাত পা ছুঁড়ে কাঁদতাম। সেই দুধ বা বার্লি দু’চার ফোঁটাও যদি আমার পেটে যায় সেই আশায় বড় চাচীমা ঘণ্টার পর ঘণ্টা পাগলের মতো চেষ্টা করতেন। আমার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ঘাটতি সম্ভবত তখন থেকেই। মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় না হলে আমাকে মায়ের কাছে নেয়া হতো না। মা অধিকাংশ সময় আধা অচেতন অবস্থায় বিছানায় পড়ে থাকতেন। অজ পাড়াগাঁয়ে সে সময় ডাক্তার ওষুধ কিছুই ছিল না। কবিরাজি শিঁকড় বাকড়ে মায়ের চিকিৎসা হতো। আমার পেশাব পায়খানা পরিস্কার করা, গায়ে তেল মাখানো, নতুন কাঁথায় জড়িয়ে কোলে নিয়ে ঘুম পাড়ানো-নবজাতকের এমন সব কাজ করতে হতো বড় চাচীমাকে। তার ওপর মায়ের সেবা যত্ন, আমার বড় দুই ভাইবোনের দেখভাল এসব তো ছিলই।

বড় চাচীমা তখন নব বিবাহিতা, সরকার বাড়ির দ্বিতীয় বউ। অন্য দুই চাচা তখনো বেশ ছোট। সরকার বাড়ির বড় বউ মানে আমার মা সন্তান প্রসবের পর থেকে শয্যাশায়ী। তখনকার ছোট বউ মানে এখনকার বড় চাচীমাই তখন আমার মা। দাদীমা বরাবরই একটু নিরিবিলি স্বভাবের মানুষ ছিলেন। তখনকার সেই সংকটে দাদীমা ছিলেন অসহায়। যা করার সব বড় চাচীমাকেই করতে হতো। আলেয়ার এখন যে বয়স, তার মায়ের হয়তো তখন সেই বয়সই ছিল অথবা দু’ একবছর বেশি ছিল। অতটুকু বয়সেই বড় চাচীমা আমার মা হলেন। শীতের দিন আমাকে রোদে নিয়ে কুসুম কুসুম গরম পানিতে গোসল করিয়ে জামা পরিয়ে কপালে কাজলের টিপ দিয়ে দিতেন। তারপর কাঁথায় জড়িয়ে ফিডারে দুধ খাইয়ে তাঁর দু’পায়ের ওপর আমাকে শুইয়ে সন্তানের মঙ্গল কামনায় গ্রাম্য গান গেয়ে ঘুম পাড়াতেন। মায়ের ননদ অর্থাৎ আমার ফুপু নাকি একবার বড় চাচীমাকে বলেছিলেন, ‘ভাবীর তো আরো দুটো ছেলেমেয়ে আছে। এই ছেলেটাকে তুমি নিয়ে নাও।’
বড় চাচীমা বলেছিলেন, ‘এ ছেলে তো আমারই। আমিই তো ওর মা।’
এখন যেমন আলেয়া গোপনে আমার কানে কানে বলে, ‘তুমি তো আমারই। আমিই তো তোমার বউ।’
কী বিচিত্র এই পৃথিবী! ষোলো সতের বছরের ব্যবধানে আমার ওপর তাদের নিজ নিজ অধিকার নিয়ে মা আর মেয়ের কণ্ঠে একই আত্মপ্রত্যয়ী সুর। ভালোবাসা ও মায়া মমতার জীবন পণ দাবী।

আমার জীবনে কত কিছুই ছিল অজানা। আলেয়া আমার ছায়াসঙ্গী হয়ে ঘরে বাইরে ঘুরে বেড়ায়, আমার সকল প্রয়োজনে সব সময় হাজির থাকে-এই ব্যাপারটা মোটেই স্বাভাবিক নয়। অন্তত আজ থেকে চল্লিশ বছর (এই উপন্যাসটি লেখা হয়েছে ২০১১ সালে। সেই হিসাবে চল্লিশ বছর-লেখক) আগে শহুরে সংস্কৃতির সাথে সম্পূর্ণ বেমানান দুর্গম অজ পাড়াগাঁয়ের রক্ষণশীল সমাজে এমনটা কল্পনা করাও কঠিন ছিল। কিন্তু তারপরেও আমি খেয়াল করে দেখেছি, অন্তত সরকার বাড়িতে ব্যাপারটা যেন সবার কাছে ছিল খুব স্বাভাবিক। হেনার জ্বর হলে আলেয়াই তো সেবা করবে, হেনা খেতে বসলে আলেয়াই তো হাত পাখা দিয়ে বাতাস করবে, গ্রামের খোলা মাঠে, খালে বিলে, ফসলের ভুঁয়ে, পানের বরজে, পুকুর পাড়ে, বাঁশের ঝাড়ে হেনা যদি ঘুরে বেড়ায় তো আলেয়াই তার সঙ্গী হবে-ব্যাপারটা যেন এমনই। সরকার বাড়ির বাইরের লোকেরা কে কী ভাবতো তা’ জানার সুযোগ আমার হয়নি। সে সময় আমাদের মধুপুর গ্রামে এত ঘন বসতি ছিল না। ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা জনবিরল বসতি গুলোর লোকজন সরকার বাড়ির নাতি নাতনিদের দেখলে ভয় মেশানো সম্মান দেখিয়ে যথাসম্ভব একটু দূরে দূরেই থাকতো। আমি আর আলেয়া ঘুরে বেড়াবার সময় কারো সাথে দেখা হয়ে গেলে ‘এই তুই কোথায় যাচ্ছিস, এটা আমার মেজভাই, রাজশাহী থেকে এসেছে, চিনিস না?’ অথবা মুরুব্বী শ্রেনির কাউকে দেখলে সালাম দিয়ে ‘চাচা, এটা আমার মেজভাই, বড় আব্বার ছেলে, চেনেন তো!-এই জাতীয় কথাবার্তা বলে আলেয়া একাই আমাকে পরিচয় করিয়ে দিতো।’ শ্রোতারা বড় জোর হুঁ হাঁ করে নিজ নিজ কাজে চলে যেতো। আলেয়ার সমবয়সী দু’একজন সইয়ের সাথে দেখা হয়ে গেলে তারা কথা না বলে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করে সরে যেতো। আলেয়া তখন চোখ মুখ কঠিন করে বলতো, ‘মেজভাই, এরা কত বদমাশ তুমি জানো? তোমরা আসার আগে এরা সারাদিন আমার পিছে ঘুর ঘুর করতো। আর এখন আমাকে দেখলে যেন চিনতেই পারছে না। এই মাগীরা............।’
‘এই! এসব কী নোংরা ভাষা তোর মুখে?’
আলেয়া দাঁতে জিভ কেটে দু’হাতে কান ধরে ক্ষমা চাওয়ার ভঙ্গি করতো। আমি কঠিন চোখে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলে ও নিজে থেকেই কান ধরে উঠ বস করা শুরু করে দিতো।
‘এই, তোকে আমি কান ধরে উঠ বস করতে বলেছি?’
‘স্কুলে তো প্রতিদিনই আমাকে এই কাজ করতে হয়। ও আমার অভ্যাস আছে। এখন তুমি আমাকে মাফ করেছ কী না তাই বলো।’
‘খারাপ কথা বললে কোন মাফ নাই।’
‘আচ্ছা, আর কোনদিন বলবো না।’
‘সত্যি?’
আলেয়া ওর ডান হাত দিয়ে বাম হাতের সব ক’টা আঙ্গুল একটা একটা করে মটকে দিয়ে বলতো, ‘এক সত্যি, দুই সত্যি, তিন সত্যি, চার সত্যি, পাঁচ সত্যি। এবার হয়েছে তো?’
‘না, হয়নি। এবার তোর ডান হাতেরগুলো কর।’
‘ওমা! তুমি এটাও জানো না? ডান হাতের আঙ্গুল মটকাতে হয় না।’
‘কেন?’
‘এতে ডান বাম কাটাকাটি হয়ে দুই কাঁধের দুই ফেরেশতার মধ্যে ঝগড়া লাগে।’
‘তাই নাকি?’
‘হাঁ, তোমরা শহরের লোক এসব জানো না।’
‘তুই ঠিকই বলেছিস। আচ্ছা, দুই ফেরেশতার মধ্যে মধ্যে ঝগড়া হলে কী হয়?’
‘ওমা! এটাও জানো না? দুই ফেরেশতার একজন মানুষের সওয়াব লেখে আর একজন গুনাহ লেখে। ঝগড়া হলে সওয়াবের ফেরেশতা যদি রাগ করে লেখালেখি বন্ধ করে দেয় তো তখন কী হবে, বোঝো! তোমার কপালে শুধু গুনাহ আর গুনাহ। দোজখে যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নাই।’
‘বুঝলাম। কিন্তু উল্টোটাও তো হতে পারে। অর্থাৎ রাগ করে গুনাহর ফেরেশতা লেখালেখি বন্ধ করে দিল। তখন শুধু সওয়াব আর সওয়াব।’
‘জি না হুজুর, অত শস্তা নয়। আল্লাহ গুনাহর ফেরেশতাকে দিয়েছে তাল গাছের মতো বিরাট কলম। সেই কলমের কালি শেষ না করে গেলে তার ফেরেশতাগিরি ছুটে যাবে। আর সওয়াবের ফেরেশতার হাতে থাকে আমাদের মতো ছোট কলম। তার কলমের কালি তো এমনিতেই ফুরায় না। সে যদি লেখালেখি বন্ধ করে আল্লাহর কাছে কলম ফেরত দেয় তো আল্লাহ বুঝবে তুমি জীবনে সওয়াবের কাজ খুব কম করেছ। তখন কী হবে বুঝতেই পারছো!’
‘হুম! বুঝতে পারছি। থাক, তোকে আর ডান হাতের আঙ্গুল মটকাতে হবে না।’

একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি, আমার বালিশের পাশে দুটো লাল জবা ফুলের সাথে ভুলভাল বানানে লেখা একটা চিঠি।
“মেজভাই, নাস্তা খেয়ে উত্তর ভিটায় আমাদের পানের বরজে চলে আসো। আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।”
ব্যাপার কী? এই পাগলির মাথায় আবার কিসের পোকা ঢুকলো? আমি হাত মুখ ধুয়ে নাস্তা খেয়ে চিঠি আর জবা ফুল দুটো পকেটে ভরে রওনা হলাম উত্তর ভিটায়। সেখানে প্রায় পাঁচ বিঘা উঁচু জমির ওপর সরকারদের বিশাল পানের বরজ। এই বরজের এক মাথা থেকে আরেক মাথা দেখা যায় না। চার দিকে নির্দিষ্ট দূরত্বে বাঁশের খুঁটি পুঁতে বাঁশের কঞ্চি, পাটকাঠি আর ছন দিয়ে আপাদমস্তক ঘন করে ঘেরা এসব বরজের ভেতর কেউ আছে কী না বাইরে থেকে বোঝা মুশকিল। বাঁশের চিকন চিকন বাতা বেয়ে সারি সারি লতিয়ে ওঠা লকলকে সবুজ পানের পাতায় বরজের ভেতর আলো আঁধারির মায়াবী ছায়া। ভেতরে ঢুকলে সারিবদ্ধ পান পাতার মিছিলে দৃষ্টি সীমা বাধা পায়। দশ বিশ হাত দূরেও কেউ আছে কী না ঠাহর করা যায় না।
আমি বরজের ভেতর ঢুকে আলোছায়া আঁধারির মাঝে সারি সারি পান গাছের ফাঁক দিয়ে সরু পথে হাঁটতে হাঁটতে আলেয়াকে খুঁজছি। নিস্তব্ধ নির্জনতা গ্রাস করে আছে চার দিক। হঠাৎ দূর থেকে ভেসে এল কোকিলের মিষ্টি ডাক, ‘কুহু......।’

বৈশাখ শেষ হয়ে জ্যৈষ্ঠ মাস পড়েছে। এখনও মাঝে মাঝে ঝড় বৃষ্টি হচ্ছে। এ সময় কোকিলের ডাক শুনতে পাওয়ার কথা নয়। ব্যাপার কী? বসন্তের কোকিল কী গ্রীষ্মকালেও ডাকে? আমি শহরের মানুষ। প্রকৃতি থেকে বহুদূরে আমার বসবাস। এসব ব্যাপারে আমার জ্ঞান গম্যি সীমিত বলে তেমন একটা গুরুত্ব দিলাম না। কিন্তু কোকিল কুহু কুহু করে ডেকেই চলেছে। প্রথমে মনে হয়েছিল, ডাকটা ভেসে আসছে বহুদূর থেকে। কিন্তু আলেয়ার সন্ধানে আমি যত ভেতরের দিকে ঢুকছি ডাকটা যেন ততই এগিয়ে আসছে আমার দিকে। মনে হচ্ছে বরজের ভেতরে যেন কোকিল ডাকছে। কোকিল তো বট, পাকুড়, কৃষ্ণচূড়ার মতো উঁচু উঁচু গাছের ডালে বসে ডাকে। ওরা কী পানের বরজের মতো আবদ্ধ জায়গায় ঢোকে? ঢুকতেও পারে। আমি শহরের মানুষ, এতসব জানি না। একবার মনে হলো আলেয়ার নাম ধরে ডাকি। কিন্তু পানের বরজে লোক থাকতে পারে। সারিবদ্ধ ঘন পানের গাছে মানুষের অস্তিত্ব বোঝা যায় না।

কোথাও কোন সাড়া শব্দ নেই। নিঃসীম নিস্তব্ধতার চাদরে মোড়া চারদিক। আমি অসহায়ের মতো পান পাতার সারিগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে আলেয়াকে খুঁজতে খুঁজতে ওকে ডাকবো কী না ভাবছি। এভাবে অন্ধের মতো ঘুরে বেড়ানোর কোন মানে হয় না। কিন্তু পানের বরজে পরিচর্যার কাজে প্রায় সব সময়ই দু’চারজন কামলা থাকে। পান পাতার ঘন গুচ্ছের কারণে তাদের ঠিকমতো দেখা যায় না। আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, সেখান থেকে হয়তো দশ পনের হাত দূরেই কোন শ্রমিক কাজ করছে। তাই আলেয়ার নাম ধরে ডাকার চিন্তাটা বাদ দিয়ে আর একটু খুঁজে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম।
হঠাৎ পেছন থেকে আমার দুই চোখ দু’হাতে চেপে ধরে আলেয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে অবিকল কোকিলের ডাক নকল করে ডেকে উঠলো, ‘কুহু......।’
আমি ওর দু’হাত চোখ থেকে সরিয়ে দিয়ে বললাম, ‘আচ্ছা, তাহলে তুই?’
‘কেমন চমকে দিলাম তোমাকে?’ আলেয়া আনন্দে উচ্ছল।
আমি বললাম, ‘আমি একটুও চমকাই নি। তবে তুই কোকিলের ডাক শিখলি কোত্থেকে? আমি তো ভাবলাম সত্যি সত্যিই কোকিল ডাকছে।’
আলেয়া হাসতে হাসতে বললো, ‘শুধু কোকিল না, আমি ডাহুক, পেঁচা, ময়না, শালিক সব পাখির ডাক জানি। একদিন আড়াল থেকে শোনাবো তোমাকে। তুমি বুঝতেই পারবেনা আসল না নকল।’
‘বুঝেছি।’ আমি পকেট থেকে চিঠি আর জবা ফুল দুটো বের করে ওর হাতে দিয়ে বললাম, ‘এখন বল, এসবের মানে কী? তোর মাথায় নতুন কী মতলব ঢুকেছে বল তো!’
‘মতলব আবার কী? বউ তার স্বামীকে ফুল দিতে পারে না? তবে দুটো ফুলই তোমার না। একটা তোমার, আর একটা তুমি আমাকে উপহার দেবে। ঠিক আছে? এখান থেকে একটা ফুল তুমি নাও, আর একটা ফুল তুমি আমাকে উপহার দাও। নাও তোলো।’
মাশাল্লাহ, এই না হলে প্রেম? মনের মানুষকে যে ফুল উপহার দিতে হয়, সেদিনই প্রথম শিখলাম আলেয়ার কাছ থেকে। আজ চল্লিশ বছর পরে এসব কথা শুনে মানুষ হয়তো হাসবে, কিন্তু তখন এটাই ছিল বাস্তবতা। গণ্ডগ্রামের এক অর্ধশিক্ষিতা নাবালিকা মেয়ে তার হবু স্বামীকে ফুল বিনিময়ের মাধ্যমে ভালোবাসার সবক দিচ্ছে। তখনকার সামাজিক ও পারিবারিক জীবনের বাস্তবতায় বিশেষ করে অনগ্রসর গ্রামীন সংস্কৃতিতে এটা খুব সাহসের কাজ ছিল। কিন্তু আলেয়া বয়সে ছোট হলেও একদিকে ছিল যেমন জেদী ও সাহসী, তেমনি অন্যদিকে আমার বউ হিসাবে স্বীকৃতি আদায়ে ছিল সদা তৎপর। বয়সের অপরিপক্কতার কারণেই হোক অথবা আমার প্রতি তার অন্ধ ভালোবাসা ও বিশ্বাসের কারণেই হোক, তার এই মনস্তত্ত্ব তার সকল কার্যকলাপ ও কথাবার্তায় ছিল স্পষ্ট।

বিশাল অবাধ্য চুলে খোঁপা করেছে আলেয়া। আমার কাছ থেকে ফুল নিয়ে খোঁপায় গুঁজে সে মিষ্টি করে হাসলো। বললো, ‘শহরের ছেলেরা যে এত বোকা হয় জানতাম না।’
আমি বললাম, ‘কী রকম?’
‘আমি আজ চুলে খোঁপা বেধেছি কেন?’
‘তা’ আমি কী করে বলবো?’
‘এই জন্যেই তো বললাম শহরের ছেলেরা বোকা। স্বামীরা ফুল এনে তাদের বউয়ের হাতে দেয় না, খোঁপায় গুঁজে দেয়। বুঝেছেন জনাব?’
‘ও!’ বলে আমি আমার ফুলটাও তড়িঘড়ি করে আলেয়ার খোঁপায় আগের ফুলটার পাশে গুঁজে দিয়ে বললাম, ‘এবার হয়েছে?’
আলেয়া মহা খুশি। হাত দিয়ে খোঁপার ফুল দুটো ঠিকঠাক করে নিতে নিতে সে বললো, ‘তোমার ফুলটাও আমাকে দিয়ে দিলে?’
আমি হেসে বললাম, ‘ফুলের থেকে বড় যে মন সেটা তো তোকে আগেই দিয়ে দিয়েছি। ফুলটা আর নিজের কাছে রেখে কী হবে? তাই ওটাও দিলাম তোকে।’
কাজল টানা দীঘল কালো চোখ মেলে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল আলেয়া। যেন চোখে চোখ রেখে সে ভালোবাসা খুঁজছে। তারপর হঠাৎ আবার চঞ্চল হয়ে উঠলো সে। বললো, ‘মেজভাই, চলো আমরা এখন ওই দিকে যাবো। এদিকে কামলারা কাজ করছে।’
আমি চারদিকে তাকিয়ে কাউকে দেখতে না পেয়ে বললাম, ‘কোথায়? আমি তো কাউকে দেখতে পাচ্ছি না।’
আলেয়া একগুচ্ছ পানের পাতা সরিয়ে আমাকে উঁকি দিতে ইশারা করে বললো, ‘ঐ যে ধোঁয়া দেখছো না। কামলারা বিড়ি খাচ্ছে।’
আমি ধোঁয়া দেখলাম বটে, তবে কোন মানুষকে দেখতে পেলাম না। বললাম, ‘ওরা কী কাজ করছে?’
‘ঘাস তুলছে, গাছের গোড়ায় খৈল দিচ্ছে,আলগা বাঁধনগুলো শক্ত করে বাধছে এসব হরেক রকম কাজ। তুমি এত সব বুঝবে না। চলো তো!’

এত বড় পানের বরজ। আলেয়ার পিছে পিছে হাঁটতে হাঁটতে আমি কোথায় কোন দিকে যাচ্ছি কিছুই বুঝতে পারছি না। বেশ খানিকটা হাঁটার পর অপেক্ষাকৃত একটা ফাঁকা জায়গায় এসে দাঁড়ালাম আমরা। এদিকটায় পান গাছের সারি অত ঘন নয়। আলো আছে, ছায়াঘন আঁধার ভাবটা কম। আমাদের বসার জন্য একটা খেজুরের পাটি আগে থেকেই সেখানে বিছিয়ে রেখেছে আলেয়া। পাটির ওপর সদ্য গাছ থেকে পাড়া পেয়ারা আর কয়েকটা কাঁচা আম রাখা। পাশে সন্ধব লবনের সাথে ধনে আর মরিচের গুঁড়ো মিশিয়ে তৈরি করা মশলা ভর্তি মাটির খুরি।
আমার হাত ধরে পাটির ওপর বসে পড়ে আলেয়া ঘোষণা দিল, ‘আমরা এসব খাবো আর গল্প করবো।’

শুধু গল্প করার জন্য এত আয়োজন? মেয়েটা পারেও বটে। কমবয়সী ছটফটে মেয়ে, কখন মাথায় কী ঢোকে আর সাথে সাথে তা’ করা চাই। সরকার বাড়ির আদুরে নাতনি, বড় চাচার চোখের মনি। তার ওপর জেদী আর একরোখা মেয়ে। সরকার বংশে এমনিতে মেয়ের সংখ্যা কম। আলেয়াকে তার কাজে বাধা দেয়, এমন কেউ নেই। তার হবু স্বামী আসায় সে তো এখন প্রজাপতির মতো উড়বেই। ওর কাণ্ড কীর্তি দেখে আমি নিজেই মাঝে মাঝে সমঝে চলি। জানি, ওকে বকা ঝকা করলে এমন করুণ চোখে আমার দিকে তাকাবে যে তখন আমার নিজেরই কষ্ট হবে। মনের মানুষকে দুঃখ দিলে যদি কষ্ট হয় তো সেটাকেই বলে ভালোবাসা। আমি বোধহয় ভালোবেসে ফেলেছি ওকে। শত হলেও জন্ম থেকে সে আমার জীবনের সাথে বাঁধা। ওকে ভালো না বেসে আমার উপায় আছে?
আলেয়ার এসব বিদঘুটে আয়োজনে আমি বিরক্ত না হয়ে বরং হাসলাম। বললাম, ‘পেয়ারা একটা খেতে পারি। তবে কাঁচা আম খাবো না। আমি টক খেতে পারি না।’
আলেয়া ‘হায় আল্লাহ’ বলে একটা আম তুলে আমার হাতে দিয়ে বললো, ‘এই আম টক না। এটা হলো কাঁচামিঠা আম। এই আম কাঁচা থাকতেই মিষ্টি হয়, পাকলে টক হয়ে যায়। তোমরা শহরের লোক তো তাই চেনো না। একটা খেয়ে দেখ। আমি সত্যি বলছি কী না বুঝতে পারবে।’
আমটা খাবো কী না ভাবছি। আলেয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি, সে করুণ চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। যেন আমি আমটা খেলেই দুনিয়ার সকল সুখ এসে ভর করবে ওর মনে। আর না খেলে বিরাট কষ্ট। ওর কষ্ট লাঘবের জন্য আমটাতে একটা কামড় দিলাম।
‘মিষ্টি না?’ আলেয়ার চোখ চক চক করছে। যেন আমি হাঁ বললে ওর রাজ্য জেতা হয়।
‘হুঁ, মিষ্টিই তো! এই আমটার নাম কী বললি তুই?’
আলেয়া আনন্দে আটখানা হয়ে বললো, ‘কাঁচামিঠা।’
‘ও! তার মানে এই আমটা তোর মতো, তাই না?’
আলেয়া বুঝতে না পেরে বললো, ‘আমার মতো মানে? আম আবার মানুষের মতো হয় নাকি?’
‘হয়, হয়। এই আমের মতো তুইও তো কাঁচা বয়সে খুব মিষ্টি। তা’ না হলে আমার মতো পিঁপড়া তোর পিছে ঘুর ঘুর করবে কেন?’
আলেয়া খুব লজ্জা পেল। ফর্সা মুখটা সিঁদুরের মতো লাল হয়ে গেল। মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল সে। আমি নুন মরিচের গুঁড়ো মাখিয়ে আম খেতে খেতে বললাম, ‘তবে এই আমের মতো তুইও যদি পেকে টক হয়ে যাস তো আমার ভবিষ্যৎ ফকফকা।’
কথায় হেরে যাবে এমন মেয়ে আলেয়া নয়। সে বললো, ‘এ জন্যেই তো মানুষ আমের মতো নয়।’
‘আচ্ছা! ভালো বলেছিস তো! কে বলে তুই পাগলি? তোর মাথায় অনেক বুদ্ধি।’
আলেয়া একটা আম তুলে মশলা মাখিয়ে খেতে খেতে বললো, ‘পড়ালেখায় যদি একটু ভালো হতে পারতাম, তাহলে আমার আরো অনেক বুদ্ধি হতো।’
‘তাই? তাহলে বিয়ের পরে আমি তোকে অনেক পড়াবো। তুই বি,এ, এম,এ পাশ করবি। তোর ছেলেমেয়েরা গর্ব করে সবাইকে বলবে, আমাদের মা এম,এ পাশ।’
আলেয়ার মুখ কালো হয়ে গেল। সে করুণ সুরে বললো, ‘এই কথাটা বলো না তো মেজভাই। বিয়ের পরে কী আর পড়াশুনা হয়? তখন ছেলেপুলে মানুষ করবো, না ওদের ফেলে রেখে কলেজে যাবো, বলো?’
‘তা’ তো ঠিকই রে!’
আলেয়ার পড়াশুনার ভীতি ওপেন সিক্রেট। আমি মুচকি হেসে বললাম, ‘পড়া লেখা করার চেয়ে ছেলেমেয়ে মানুষ করা অনেক বড় কাজ। ঠিক আছে, বিয়ের পরে তোকে আর পড়তে হবে না।’
‘এই তো মেজভাই, এবার তুমি ঠিক বুঝেছ।’
আমি যা বুঝেছি, তা’ আমিই জানি। ওকে আর সেটা বললাম না। তবে কথাবার্তার ফাঁকে ফাঁকে আমি ফিক ফিক করে হাসছি দেখে আলেয়া একটু বিভ্রান্ত হলো। বললো, ‘তুমি হাসছো কেন মেজভাই?’
আমি গম্ভীর হবার ভান করে বললাম, ‘আচ্ছা, বিয়ের পরেও কী তুই আমাকে মেজভাই বলে ডাকবি?’
‘না, না, তাই ডাকা যায় নাকি? লোকে কী বলবে? তখন অন্য কিছু বলে ডাকবো।’
‘আমার নাম ধরে ডাকবি?’
আলেয়া জিভে কামড় দিয়ে বললো, ছি, ছি, তাই কখনো ডাকা যায়? তোমাদের শহরের মেয়েরা ডাকতে পারে। কিন্তু আমি বাবা গ্রামের মেয়ে। গ্রামের মেয়েরা স্বামীর নাম ধরে ডাকে না। দেখো না, মা আব্বাকে ডাকে, আলেয়ার আব্বা একটু শোন তো! দাদীমা দাদাজানকে ডাকে, হামিদের আব্বা আপনি কী এখন ভাত খাবেন?
আমি বললাম, ‘তাহলে তুই আমাকে কী বলে ডাকবি?’
‘আমাদের ছেলে মেয়ে হলে তাদের কারো আব্বা বলে ডাকবো।’
‘আরে সে তো দু’চার বছর পরের কথা। আগে তো ছেলে বা মেয়ের জন্ম হতে হবে, তারপর আকিকা দিয়ে তার নাম রাখতে হবে। তারপরে না তার আব্বা বলে ডাকা। এতদিন তুই আমাকে কী বলে ডাকবি?’
আলেয়ার মাথায় সব জট পাকিয়ে গেল। বিয়ে হবার পরদিনই তো সন্তান হচ্ছে না। তাহলে এতদিন স্বামীকে কী বলে ডাকা যাবে?
আমি বললাম, ‘শোন, তোর মাথার চেয়ে চুলের খোঁপা বড়। খোঁপার ভারে তোর ছোট মাথায় বুদ্ধি সুদ্ধি সব হালুয়া হয়ে গেছে। এই জন্য আমাকে কী বলে ডাকতে হবে তুই বুঝতে পারছিস না।’
আলেয়া এই কঠিন সমস্যায় আরো তালগোল পাকিয়ে ফেললো। সে শুকনো মুখে বললো, ‘সত্যিই তো মেজভাই, বিয়ের পরে তোমাকে আমি কী বলে ডাকবো?’
আমি ওকে আরো ধন্ধে ফেলে দেওয়ার জন্য বললাম, ‘আমি জানি না বাবা। তোর যা ইচ্ছা হয় তাই বলে ডাকিস।’

আলেয়া অনেকক্ষণ চুপচাপ বসে থেকে কী যেন ভাবলো। তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে বললো, ‘আগে বিয়ে তো হোক, তারপর দেখা যাবে। জন্ম মৃত্যু বিয়ে, আল্লাহর হাত দিয়ে। আমাদের যতই ইচ্ছা থাক, আল্লাহ না চাইলে কী বিয়ে হবে, বলো? বিয়ে হলে আল্লাহই ডাকার একটা ব্যবস্থা করে দেবেন। এখন এসব নিয়ে ভেবে লাভ নাই।’
আধ্যাত্মিক ধরনের কথাবার্তা। আলেয়াকে মাঝে মাঝে আমি সত্যিই বুঝে উঠতে পারি না। বিপরীতমুখী দুটো ক্রিয়া কাজ করে ওর মনে। আমি ওর স্বামী হবো এই বিশ্বাসে সে অটল, আবার আমাদের সম্পর্কের ব্যাপারে সে একই সাথে ভাগ্যের ওপরেও নির্ভরশীল। এত কম বয়সী একটা মেয়ে সচেতনভাবে এমন বৈপরীত্য নিজের মধ্যে লালন করে, এটা বিশ্বাস করা কঠিন। নারীর বয়স বা অবস্থান যাই হোক না কেন, পুরুষরা বোধহয় এই কারণেই তাদের বুঝতে পারে না। সৃষ্টিকর্তা হয়তো এভাবেই কুয়াশার চাদরে নারীর মনকে ঢেকে রাখতে ভালোবাসেন।
******************************************************
আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৮)

মন্তব্য ৩৫ টি রেটিং +৯/-০

মন্তব্য (৩৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩২

সৈয়দ তাজুল ইসলাম বলেছেন:
কুহু, কুহু, কুহু, কুহু আলেয়া কি সত্যি সত্যি ডাহুক পেঁচা শালিকের ডাক ডাকতে পারে! বিশ্বেস না হলেও করতে হয়। মেয়েটার যা বুদ্ধি। নিরিবিলি পরিবেশে প্রিয়কে নিয়ে মনের স্বাদ মিটিয়ে কথা বলার কৌশল আর কথাবার্তায় নিপুণতা মনে হয় না সে নাবালেগা ;) কিন্তু তার আত্মবিশ্বাসের পাশাপাশি তকদিরের উপর নির্ভরশীলতা আসলেই তার জন্য প্রশংসার পবিত্রতা উৎসর্গিত৷

দেখা যাক আলেয়ার স্বপ্ন কতটুকু সফলতা পায়।

ভালো লাগলো গুরুজি :)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই সৈয়দ তাজুল ইসলাম।

২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: দিনের বেলায় সময় হাতে নিয়ে পড়তে হবে ।
এক ঝলক দেখে গেলাম ঘুম কাতর চোখে ।
শুভেচ্ছা রইল

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:৫৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শুভকামনা আপনার জন্যেও আলী ভাই।

৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪৫

নুরহোসেন নুর বলেছেন: চলতে থাকুক ধারাবাহিক পর্ব অসাধারন লিখছেন।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নুর হোসেন নুর।

৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৪

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: শুভ সকাল

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গুড মর্নিং। আজকাল ইংরেজি ছাড়া কথা বলছি না। আপনার প্রো-পিকচার চেঞ্জ হলো কবে? র‍্যাবের মতো কালো জামা পরলেই র‍্যাব হওয়া যায় না। আগেরটাই তো ভালো ছিল।

৫| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৪৭

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আগের জামাটা ময়লা হয়ে গিয়েছিল, ওটা লন্ড্রিতে পাঠিয়েছি, ফিরে এলেই :D

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হে হে হে, বয়স কমিয়ে ছেলে ছোকরা হওয়ার ধান্ধা।

৬| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৫৩

হাবিব বলেছেন: এক পর্বও পড়া হয়নি। সময় করে পড়বো সবগুলো

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রথম থেকে পড়লে ভালো লাগবে। লিংক দেওয়া আছে। অথবা আমার ব্লগ বাড়িতে ঢুকেও পড়তে পারেন।


ধন্যবাদ ভাই হাবিব স্যার।

৭| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:৫৮

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: মনোযোগ দিয়ে পড়লাম।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই গিয়াস উদ্দিন লিটন।

৮| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৬

ধ্যত্তেরিকাষতড়এএতধ্যত্তেরিকা বলেছেন: পর্ব '৬' পড়া হয়নি। বেশ আগ্রহ বোধ করছি বলে সময় নিয়ে এসে দেখি পর্ব '৭' দেয়া হয়ে গেছে। লেখা কি রেডি? না প্রতিদিন লিখছেন? আপনাকে ইর্ষা। বয়েস আর সাপোর্ট করছে না আজকাল।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: উপন্যাসটির পরিচিতি পর্বে ব্লগার বন্ধুদের জানিয়েছিলাম, প্রতিদিন একটা করে পর্ব পোস্ট দেব। লেখা আগে থেকে রেডি করা নাই। আমি প্রতিদিন বই দেখে টাইপ করে পোস্ট দেই।


ধন্যবাদ ভাই ধ্যত্তেরিকাষতড়এএতধ্যত্তেরিকা ।

৯| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৭

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: যতটা পড়ছি ,ততটাই ভাল লাগায় হারিয়ে যেতে মন চায় ।তবে এখন এর জন্য আমার আর বয়স নেই X(
আপনি খুব ভাগ্যবান ।এই কারনে আল্লাহ আপনাকে কিশোর বয়সে এই স্বর্গি্য় অনুভূতি লাভের সুযোগ দিয়েছিলেন ।

মেয়েদের অবিশ্বাস্য শক্তি আছে ,এই শক্তিকে প্রেম শক্তি বলা যেতে পারে ।
কারণ ,মেয়েরা সুন্দর এবং তারা যাকে ভালোবাসেন তার জন্য তারা সবকিছু করতে পারেন এবং পুরুষদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আল্লাহ তাদের কিছু সুবিধা দিয়েছেন ।
ভালবাসা (কিছু মনে করবেন না ,বিনিময় ছাড়া ভালবাসা) এবং শ্রদ্ধা আলেয়ার জন্য :-P ।কারণ,তার জন্য, আমরা একটি ভালবাসার গল্প পেয়ে যাচ্ছি যা সত্যই সত্য ।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ,মেয়েরা সুন্দর এবং তারা যাকে ভালোবাসেন তার জন্য তারা সবকিছু করতে পারেন এবং পুরুষদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্যও আল্লাহ তাদের কিছু সুবিধা দিয়েছেন ।

একদম সত্য কথা। আমি বিশ্বাস করি।

ভালবাসা (কিছু মনে করবেন না ,বিনিময় ছাড়া ভালবাসা) এবং শ্রদ্ধা আলেয়ার জন্য

কিছু মনে করার প্রশ্নই ওঠে না। আলেয়ার মতো মেয়েকে কেউ ভালো না বেসে (প্রেম অর্থে নয়) পারেনা।

ধন্যবাদ ভাই মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

১০| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: পেচার ডাক নাকি বয়াবহ ডাক গুরুজী। তাও পারতো। আলেয়া বুবু অনেক গুনের অধিকারী ছিলেন। সবাই সুখী হউক।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আলেয়া সেটা বলেছিল আমাকে। কিন্তু আমি ওর এই দক্ষতা পরীক্ষা করে দেখিনি। শুধু কোকিলের ডাক ছাড়া।


ধন্যবাদ ভাই মাহমুদুর রহমান সুজন।

১১| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৯

মা.হাসান বলেছেন: প্রথম পত্রাঘাত তাহলে ভাবির তরফ থেকেই। খুব আফসোস যে প্রথম ফুল দেয়ার পর শুধু আপনাকে কি বলে উনি ডাকবেন এটা নিয়েই আলোচনা হলো, কটা ছেলে, কটা মেয়ে হবে, কার নাম কি হবে এসব কিছুই আলোচনা হলো না। আপনাকে কি পরে এসব নিয়ে খোটা সহ্য করতে হয় নি?

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। পড়তে থাকুন হাসান ভাই। অনেক প্রশ্নেরই উত্তর পেয়ে যাবেন।


ধন্যবাদ ভাই মা, হাসান।

১২| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৩২

করুণাধারা বলেছেন: কিছু ঝামেলার মধ্যে থাকায় সময়মতো পর্বগুলোতে মন্তব্য করতে পারিনি, কিন্তু ঠিকই পড়েছি সময়মতো। আপনি যেমন ফজরের নামাজ পড়েই পোস্ট দেন, আমিও তেমনি নামাজ পড়ার কিছুক্ষণ পরেই আপনার গল্প পড়ে ফেলি।

এই পর্ব পড়ে বরাবরের মতই ভাল লেগেছে। কিন্তু কয়েকটা মন্তব্য পড়তে গিয়ে আপনাদের আড্ডার একজন মাহমুদুর রহমান সুজনের মন্তব্য পড়ে মন খারাপ হয়ে গেল। আলেয়া বুবু!!! ভেবেছিলাম পড়তে পড়তে কান্নার পালা গত পর্বেই শেষ হয়ে গেছে...

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনি ঠিক বলেছেন। সাধারণত আমি ফজরের নামাজ পড়ে পোস্ট দিই। টাইপের কাজ বাকি থাকলে সেদিন একটু দেরি হয়, অন্যথায় ভোর ছয়টার আশে পাশে লেখা প্রকাশিত হয়ে যায়। বিলম্ব হলে মন খারাপ করবেন না প্লিজ!

জনৈক ব্লগারের মন্তব্যের ব্যাপারে আপনি মন খারাপ করে যা বলেছেন, সেটা আমার কাছেও ভালো লাগেনি। কিন্তু কী আর করা! সবাই তো বিশুদ্ধ পাঠক নয়, লেখকও নয়। শব্দচয়নের ব্যাপারে অনেকেরই সচেতনতা থাকে না। আর সাহিত্য বুঝার ক্ষমতাও অনেকের থাকে না। এসব মেনে নিয়েই আমাকে লিখতে হয়। শুধু একটা কথা বলে রাখি। আলেয়ার কোনরকম অসম্মান আমাকে খুব কষ্ট দেয়। দুনিয়াতে তার চেয়ে প্রিয় মানুষ অন্তত আমার কাছে আর কেউ নয়।

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ বোন করুণাধারা।

১৩| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৪৫

ভুয়া মফিজ বলেছেন: আপনার এই পর্বগুলো পড়তে পড়তে মনের মধ্যে একটা অতৃপ্তি দিনকে দিন মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। মনে হচ্ছে, গ্রামের একজন সহজ সরল মেয়েকে যদি বিয়ে করতাম, তাহলে হয়তোবা এমন আদর-যত্ন পাওয়া যেত!! :)

কি আর করা......এখন তো আর কিছু করার নাই! মনের মধ্যে তখন থেকে একটা গান বেজে চলছে.....

কারে দেখাবো মনের দুঃখ গো আমি বুক চিরিয়া...আ...আ....আ..... :((

১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার লেখা 'তেতো সন্দেশ' নামের আত্মজৈবনিক গল্পে কেন সেই বোবা মেয়েটির (নার্গিস) ভালোবাসাকে আমি রেসপন্স করিনি, এখন নিশ্চয় বুঝতে পারছেন।

আপনি কী ধারাবাহিকভাবে এই উপন্যাসটি পড়ছেন?

ধন্যবাদ ভাই ভুয়া মফিজ।

১৪| ১০ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:০৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: প্রেমের নদী বইছে ধীরে
আসেব কি ঝড় তুফান তাতে?

কেমন একটা ভয়ের গন্দ পাচ্ছি মনে হচ্ছে :P

++++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:০৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পড়তে থাকুন। এমন কিছু ঘটনা আপনার সামনে আসবে, যা আমার বিশ্বাস শুধু আপনি কেন, অনেকেরই কল্পনার বাইরে। এই কারনে আগে যারা উপন্যাসটির হার্ড কপি পড়েছেন, তারা পড়া শেষ করে রীতিমতো ঘোরের মধ্যে ছিলেন দিনের পর দিন।

ধন্যবাদ ভাই বিদ্রোহী ভৃগু।

১৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০৯

ভুয়া মফিজ বলেছেন: 'তেতো সন্দেশ' এর ব্যাপারটাতে আপনার হৃদয়হীনতায় এতোটাই দুঃখ পেয়েছিলাম যে, আমার একটা টাইম মেশিন থাকলে আমিই গিয়ে ওই মেয়েটার দুঃখ ঘোচাতাম। এতোদিনে বুঝলাম, আসল ঘটনা কি! :P

আপনি কী ধারাবাহিকভাবে এই উপন্যাসটি পড়ছেন? অবশ্যই। আপনার এতো চমৎকার আত্মজৈবনিক গল্প পড়বো না, এটা কি হতে পারে হেনা ভাই!! তবে কয়েকটা পর্ব এক করে পড়ি। ছোট ছোট একেকটা পর্ব পড়ে মজা পাইনা। :)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:২০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ভুয়া মফিজ।

১৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৩

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: নারী সবসময়ই রহস্যময়ী। ভালই এগোচ্ছে হেনা ভাই। কাঁচা আম মরিচের গুঁড়ো দিয়ে খেতে কিন্তু খারাপ লাগে না।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নারী সবসময়ই রহস্যময়ী।

একটা চিরন্তন সত্য কথা বলেছেন। ধন্যবাদ ভাই সম্রাট ইজ বেস্ট।

১৭| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:১১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি কি আলেয়া চরিত্রটিকে মহৎ করতে চাচ্ছেন???

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: দেখা যাক। উপন্যাসটি ২০১১ সালে বই আকারে প্রকাশিত। সেখানে আলেয়াকে যেভাবে দেখানো হয়েছে, এখানে ধারাবাহিক পর্বগুলোতে হুবহু তাই দেখানো হচ্ছে। রদবদলের কোন অবকাশই নাই।


ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.