নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৮)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:১৬



আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৭)

ডাকো মোরে, বলো প্রিয়, বলো প্রিয়তম
কুন্তল-আকুল মুখ বক্ষে রাখি মম

মে মাসের মাঝামাঝি একদিন খবর পাওয়া গেল, আমাদের গ্রাম থেকে ছয় ক্রোশ দূরে হরিপুর নামে ছোট্ট একটা হিন্দু প্রধান গ্রামে পাকিস্তানি সৈন্যরা হামলা চালিয়ে বহু হিন্দুকে মেরে ফেলেছে এবং নির্বিচারে লুটপাট করে বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
প্রতিদিন সন্ধ্যের পর গাঁয়ের লোকজন এসে সরকার বাড়ির বৈঠক ঘরে বসে আসরের মতো করতো। সেখানে আব্বা তাঁর ট্রানজিস্টার বাজিয়ে তাদেরকে বিবিসির খবর আর স্বাধীন বাংলা বেতারের দেশপ্রেমমূলক গান শোনাতেন। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে সেখানে অনেক রাতভর তর্ক বিতর্ক চলতো। সেদিন হরিপুর গ্রামের এত বড় ঘটনার খবর রেডিওতে শুনতে না পেয়ে সবাই খুব ক্ষুব্ধ হলো। বিশেষত আসরে উপস্থিত দু’চারজন সদস্য যারা ঘটনার পরদিন নিজ চোখে হরিপুরের এই ধ্বংসযজ্ঞ দেখে এসেছে, তারা খুব উত্তেজিত হয়ে পড়লো। আব্বা তাদের এই বলে শান্ত করলেন যে, ‘দেখো, সারা দেশে মিলিটারিরা মানুষ মারছে। খোদ রাজশাহী শহরে এখনো কারফিউ চলছে। কারফিউর মধ্যে উপায়ান্তর না পেয়ে এখনো যারা শহরে আছে, রাতের বেলা তাদের অনেককে মিলিটারিরা ধরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলছে। এসব খবর তো ঠিক মতো রেডিওতে পৌঁছায় না। রাজশাহী পুলিশ লাইনে মিলিটারিদের অতবড় হত্যাকাণ্ড ও অগ্নিসংযোগের খবর বিবিসি প্রচার করলো তিনদিন পর। শহরের খবর পেতেই যেখানে এত সময় লাগে, সেখানে হরিপুরের মতো এত অজ পাড়াগাঁয়ের খবর বিবিসি বা স্বাধীন বাংলা বেতারে পৌঁছাতে সময় লাগবে না?’
একজন ক্ষেতমজুর শ্রেনির লোক বললো, ‘ঠিক, ঠিক। এখান থেকে বিবিসির শহর অনেক দূর। সাগর পার হয়ে যেতে হয়। সময় তো লাগবেই।’

আব্বা গোপনে লোক পাঠিয়ে মাঝে মাঝে রাজশাহী শহরের খোঁজ খবর নিতেন। শহরে এখনো সারারাত কারফিউ বলবৎ থাকে। তবে দিনের বেলা কারফিউ থাকে না। স্কুল কলেজ কোর্ট কাচারি এখনও বন্ধ। খুব সীমিতসংখ্যক লোকজন দিয়ে কিছু সরকারি অফিস চলছে। রেডিও পাকিস্তান থেকে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে বার বার ঘোষণা দেওয়া হলেও আসলে পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। বীরেন সরকার, সুরেশ পাণ্ডে, নওরোজ উদ দৌলা, মকবুল চৌধুরী ইত্যাদি বিখ্যাত লোকজনসহ শহরের গন্যমান্য অনেক উকিল, অধ্যাপক, ডাক্তার, ব্যবসায়ী ও সাধারণ লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে পদ্মা নদী পার হয়ে চলে গেছে ভারতে। আমাদের মতো যাদের গ্রামে আশ্রয় আছে তারা শহর ছেড়ে পালিয়েছে। আর যাদের অন্য কোথাও যাওয়ার উপায় নাই, তারা আতংকের মধ্যে বাস করছে শহরে। তবে তাদের সংখ্যা খুবই কম। রাজশাহী শহর এখন প্রায় জনবিরল এক ভুতুড়ে জনপদ। শহরে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা তৎপরতার খবরও কানে আসে। শহরের বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রে গেরিলাদের বোমা হামলা এবং ফুদকিপাড়া মহল্লায় মুক্তিযোদ্ধাদের এ্যামবুশ গ্রুপের গ্রেনেড হামলায় পাকিস্তানি বেলুচ রেজিমেন্টের চারজন সৈন্যের মৃত্যুর খবরে প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার সাধারণ মানুষও উল্লাসে ফেটে পড়ে।

সেদিন রাতে খেতে বসে দাদাজান আব্বাকে বললেন, ‘হামিদ, একটা কথা বলি। মনোযোগ দিয়ে শোন। এতদিন মিলিটারিরা রাজশাহী শহর এবং এর আশে পাশে মানুষ মারছিল। এখন তারা গ্রামেও ঢুকে পড়েছে। রাস্তা নেই, ঘাট নেই এমন সব গণ্ডগ্রামে ঢুকে তারা মানুষ মারা শুরু করেছে। আমাদের মধুপুর গ্রামে কোনদিন যে তারা এসে হাজির হবে না সে কথা বলা যাবে না। তা’ ছাড়া ব্রম্মপুর গ্রামের শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান আয়েনউদ্দিন লোক মোটেই সুবিধার না। গ্রামেও শত্রু আছে। সরকার বাড়ির বৈঠক ঘরে প্রতিদিন গ্রামের লোকজন নিয়ে আসর বসে, স্বাধীন বাংলা, বিবিসি এসব শোনা হয়, এ খবর আয়েনউদ্দিনের কানে গেলে সমস্যা হবে। বুঝতে পারছো, আমি কী বলতে চাচ্ছি?’
আব্বা উকিল মানুষ। বুঝতে সময় নিলেন না। পরদিন থেকে বৈঠক ঘরের আসর বন্ধ হয়ে গেল। আব্বা রেডিওর ব্যাটারি খুলে রেখে লোকজনকে বোঝালেন যে, হাত থেকে পড়ে রেডিওটা নষ্ট হয়ে গেছে। শহরে না নিলে মেরামত করা যাবে না। কিন্তু শহরের যা অবস্থা, কে যাবে রেডিও নিয়ে? তা’ ছাড়া রেডিও মেরামতের দোকানদাররা কেউ দোকান খুলে বসে নেই। তাদেরও জানের ভয় আছে। অতএব, আজ থেকে খবর টবর শোনা বন্ধ।

দিনের বেলা বৈঠক ঘরে চাচাদের সাথে বসে বড়ভাই তাস খেলেন। কামলারা পান গুছিয়ে নিয়ে হাটে যায়। সন্ধ্যের পর অত বড় বৈঠকখানা অন্ধকারে নিঝুম হয়ে যায়। আব্বা ঘরে বসে একা একা গোপনে খুব নিচু ভলিউমে বিবিসি শোনেন। দেশের বড় বড় শহরগুলোতে এখনো কারফিউ চলছে। হত্যা, ধর্ষণ, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামাঞ্চলেও। কোথাও আর মানুষ নিরাপদ নয়। পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে রাজাকার, আলবদর, আল-শামস, শান্তি কমিটি নামের ধর্ম ব্যবসায়ী মীর জাফরের বংশধররা। মিলিটারিরা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কোয়ার্টার থেকে কয়েকজন শিক্ষককে ধরে নিয়ে গিয়ে পদ্মার পাড়ে হত্যা করে নদীতে ফেলে দিয়েছে। বিবিসিতে এ খবর শুনে আব্বা খুব উদ্বিগ্ন হয়ে পড়লেন। সামনের দিনগুলোতে আরো কী ঘটতে যাচ্ছে, কে জানে?
পেশাগত কারণে আব্বার বেশি কথা বলার অভ্যাস। চুপ করে থাকতে থাকতেও এসব খবর মুখ ফসকে দু’একজনকে বলে ফেলেন তিনি। হয়তো মনের মধ্যে চেপে রাখা ক্ষোভ এভাবে উগরে দিয়ে তিনি কষ্ট থেকে রেহাই পাবার চেষ্টা করেন। যারা শোনে, তারা খবরের উৎস জানতে চাইলে আব্বা বলেন, ‘রেডিও নাই তো কী হয়েছে? খবর কী আর পাওয়া যায় না? তোমরা গাঁও গেরামের উম্মী মানুষ, তোমরা এসব জানবে কোত্থেকে?’
তা’ ঠিক। আদার ব্যাপারী জাহাজের খবর পাবে কিভাবে? শ্রোতারা নির্দ্বিধায় আব্বার কথা মেনে নিয়ে হা হুতাশ করতে করতে চলে যায়। দাদাজান আব্বাকে ডেকে নিয়ে এসব কথা বলতেও বারণ করে দিলেন। বললেন, ‘হামিদ, সময়টা খারাপ। বুঝে সমঝে চলো। তোমার একটা ভুলে সবার জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।’
ছেলে শিক্ষিত হলেও অশিক্ষিত বাবার অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার ভাণ্ডার থেকে তার অনেক কিছু শেখার থাকে। ১৯৭১ সালে আমার দাদাজান ও আব্বার মধ্যে যেসব কথাবার্তা হতো, তা’ পরবর্তীতে আমার নিজের জীবনেও অনেক আলোর দিশা দেখিয়েছে। আমার ঘটনাবহুল জীবনে অনেক বিপজ্জনক পরিস্থিতির শিকার হয়েও হয়তো আমি সে কারণেই আজো বেঁচে আছি। দাদাজানের কাছে শিখেছি কখন মুখ বন্ধ রাখতে হয় আর কখন ধৈর্য ধারণ করতে হয়। অভিজ্ঞতা ও বিচক্ষণতার কোন বিকল্প নেই।

হরিপুর ঘটনার সপ্তাহ খানেক পর বিকেল বেলা আমি আর আলেয়া বেড়াতে বেড়াতে আমাদের পদ্মপুকুরের পাড়ে গিয়ে বসলাম। বড় চাচীমা আমাদের খাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে মুড়ির মোয়া বানিয়ে দিয়েছেন। মোয়া বাঁধা গামছার গিঁট খোলা হয়নি তখনও। আলেয়া কঠিন কঠিন প্রশ্ন করছে আমাকে, আর সেসব প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছি আমি।
‘আচ্ছা মেজভাই, মেলেটারিরা শুধু শুধু মানুষ মারছে কেন?’
‘ও তুই বুঝবি না।’
‘কেন বুঝবো না? আমি কী বড় হইনি? তা’ ছাড়া আমি এখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।’
‘সে ক্লাসে তো দু’বার ফেল করেছিস।’
‘ছি, ছি, মেজভাই। তুমি যে কী বল না! ওটাকে ফেল করা বলে? সেদিন বললাম না তোমাকে.........।’
‘তাহলে এক ক্লাসে তিন বছর ধরে পড়লে সেটাকে কী করা বলে? তুইই বল।’
আলেয়া গামছার গিঁট খুলে একটা মোয়া তুলে আমার মুখে দিতে দিতে বললো, ‘আসলে তোমার ক্ষিধে পেয়েছে তো, তাই আবোল তাবোল বকছো। আগে খেয়ে নাও, তারপর কথা বলো। দেখবে তোমার কথা তখন কী সুন্দর মিষ্টি মিষ্টি লাগছে শুনতে।’ আমি মোয়া চিবোতে চিবোতে বললাম, ‘শোন, তোর মতো একটা মেয়ে লেখাপড়ায় এমন গান্ডু জানলে আমি তোর স্বামীই হতাম না।’
আলেয়া হেসে কুটি কুটি। সে বললো, ‘এখনো বিয়েই হলো না, আর তুমি আমার স্বামী হয়ে গেলে?’
মেয়েটা বলে কী? আমি একটু থতমত খেয়ে বললাম, ‘বিয়ে তো হবেই। হবে না বল?’
আগেই বলেছি আলেয়ার চরিত্রে একটা বৈপরীত্য ছিল এবং ওকে মাঝে মাঝে আমার দুর্বোধ্য মনে হতো। বয়সে নাবালিকা, লেখাপড়ায় দুর্বল, গ্রাম্য মেয়ে, অথচ মাঝে মধ্যে এমন সব কথা সে বলতো যে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যেতাম। হাসি থামিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে সে বললো, ‘হবে কী না আল্লাহই ভালো জানে।’
‘এ সব তুই কী বলছিস আলেয়া? সেদিন পানের বরজেও একই কথা বললি। ব্যাপার কী? বাড়িতে কিছু হয়েছে নাকি?’
এবার হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার দশা আলেয়ার। বললো, ‘আমি তোমার সঙ্গে ঠাট্টা করছিলাম মেজভাই। বিয়ে তো হবেই। বড় মা কথা দিয়েছে না!’
এরপর আমার কাছে একটু সরে এসে ফিস ফিস করে সে বললো, ‘আসলে আমি পরীক্ষা করছিলাম তুমি আমাকে ভালোবাসো কী না!’
‘পরীক্ষা করে কী বুঝলি?’
আলেয়া একটু মুড নিয়ে বললো, ‘বলা যাবে না।’
আমি পুকুরের চারদিকে তাকিয়ে দেখলাম কেউ আছে কিনা। না, কেউ নাই। আলেয়ার লম্বা চুলগুলো দু’হাতের মুঠোয় খামচে ধরে বললাম, ‘না বললে তোর এই চুলগুলো আমি একটা একটা করে ছিঁড়বো।’
‘বলছি বাবা বলছি। চুলগুলো ছাড়ো। ও মাগো! লাগছে তো!’
‘না, ছাড়বো না। আগে বল।’
‘হাঁ, হাঁ, তুমি আমাকে ভালোবাসো।’
‘এই তো লক্ষী মেয়ে। সত্যি কথাটা বলেছিস।’ ওর চুল ছেড়ে দিয়ে বললাম, ‘এখন বল, তুই আমাকে ভালোবাসিস কী না।’
আলেয়া ওর অগোছালো চুলগুলো সামলাতে সামলাতে বাঁকা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘বুঝতে পারো না?’
আমি বললাম, ‘একটু একটু পারি। তবে তোর মুখ থেকে শুনলে আরো ভালো হয়। তখন বিয়ে করার ইচ্ছাটা আরো বেড়ে যাবে।’
‘কেন, এখন কী ইচ্ছাটা কম?’
‘জানি না। তবে মা যখন কথা দিয়েছে, তখন বিয়ে করতেই হবে।’
‘এই তো লক্ষী ছেলে। সব বুঝতে পারছো। এখন চলো, বাড়ি যাই। অনেক হয়েছে। উঠতি বয়সের ছেলেমেয়েদের এত মাখামাখি করা ভালো না।’
যাহ্‌ বাবা! ভুতের মুখে রামনাম! আমি বললাম, ‘বাড়ি যাবো কী, আসল কথাটাই তো এখনো জানা হয়নি।’
‘কী কথা?’
‘ওই যে, তুই আমাকে ভালোবাসিস কী না।’
‘হায় আল্লারে!’ আলেয়া অসহায়ের মতো হতাশা প্রকাশ করে বললো, ‘বলতেই হবে? না বললে হয় না?’
‘না’ আমার সোজাসাপ্টা জবাব।

আলেয়া কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে। তারপর আমার মতো সেও পুকুরের চারদিক দেখে নিয়ে বললো, ‘বলতে পারি, তবে এখানে না।’
‘কেন, এখানে অসুবিধা কী? এখানে তো কেউ নাই।’
আলেয়া হাত তুলে পুকুরের উল্টো পাড়ে একটা ঘন বাঁশঝাড়ের দিকে ইশারা করে বললো, ‘ওখানে চলো, বলছি।’
বলেই উঠে পড়লো সে। আমার দিকে না তাকিয়ে পুকুরের পাড় ধরে সোজা হাঁটা দিল বাঁশ ঝাড়ের দিকে। আমি বললাম, ‘এই আলেয়া, শোন শোন। ওখানে যেতে হবে কেন? এখানেই বল না।’
আলেয়া হাঁটা না থামিয়ে পেছন ফিরে আমাকে লক্ষ্য করে বললো, ‘তোমার প্রশ্নের উত্তর শুনতে চাইলে এসো। না চাইলে বসে থাকো।’
এই পাগলিকে নিয়ে ভীষণ জ্বালা হলো দেখছি। বাঁশের ঝাড়ে গিয়ে এ কথা বলতে হবে কেন কিছুই বুঝতে পারছি না। অনিচ্ছা সত্ত্বেও আমি উঠে রওনা দিলাম সেদিকে। দেখা যাক, পাগলির মতলব কী!

নির্জন নিস্তব্ধ ঘন বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে আমি আর আলেয়া তাকিয়ে আছি পরস্পরের দিকে। কারো মুখে কোন কথা নেই। আমার একটু ভয় ভয়ও করছে। আলেয়ার টানা টানা দুই চোখে স্থির দৃষ্টি। ওর ভারি নিঃশ্বাসের সাথে সাথে বুকের ওঠানামা স্পষ্ট। কী ঘটতে যাচ্ছে বুঝতে না পেরে আমি একটু অস্বস্তিতে ভুগছি। শেষে অস্থির হয়ে বললাম, ‘কী হলো, বল। চুপ করে আছিস কেন?’
আলেয়া তবুও চুপচাপ। এক দৃষ্টিতে সে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আমার অস্বস্তি আরো বেড়ে গেল। আজ কী হয়েছে আলেয়ার? এমন করছে কেন?
হঠাৎ দু’হাত বাড়িয়ে আমার বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে আশ্রয় নিল আলেয়া। এরপর যা ঘটলো তার জন্য মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না আমি। দু’পায়ের আঙ্গুলের ওপর ভর দিয়ে উঁচু হয়ে আচমকা সে আমার ঠোঁটে আলতো করে চুমু দিয়ে বসলো। আর তার পর পরই লজ্জায় লাল হয়ে গেল সে। লজ্জা ঢাকার জন্য আবার আমার বুকের মধ্যে মুখ লুকালো মেয়েটা। আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি, থর থর করে কাঁপছে সে। দুনিয়ার সমস্ত লজ্জা শরম এসে গ্রাস করেছে ওকে।
আমি পুরোপুরি হতভম্ব। আনাড়ির মতো ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। কী করবো বা কী বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। যৌবনের দরজায় কড়া নাড়তে থাকা আমার মতো একজন কিশোরের জন্য এ এক নতুন অভিজ্ঞতা। এরকম কিছু ঘটলে কী করতে হয় জানি না। সম্ভবত আলেয়ারও একই অবস্থা। ঝোঁকের মাথায় এরকম একটা অপ্রত্যাশিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে ভীষণ লজ্জায় পড়ে গেছে সে।

এভাবে কতক্ষণ আমরা পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলাম জানি না। এক সময় আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আলেয়া ফিস ফিস করে বললো, ‘তোমার পেছন দিক থেকে লোক আসছে।’ বলেই এক ছুটে বাঁশ ঝাড় থেকে বেরিয়ে পুকুরের পাড় ধরে দৌড় দিল সে।
আমি পেছন ফিরে কাউকে দেখতে পেলাম না। কিছুক্ষণ ভালো করে লক্ষ্য করলাম। ডানে বাঁয়ে সামনে পেছনে চারদিকেই দেখলাম। কিন্তু না, কাউকে দেখা গেল না। একেবারে নির্জন নিস্তব্ধ চারদিক। কোথাও কেউ নেই। বুঝলাম, আলেয়া ফাঁকি দিয়ে পালিয়েছে।

পুকুরের ঘাটে বসে দু’পায়ের হাঁটু পর্যন্ত পানিতে ডুবিয়ে চোখে মুখে পানি ছিটাচ্ছে আলেয়া। আমি ওর কাছে যেতেই এক আঁজলা পানি তুলে আমার গায়ে ছিটিয়ে দিয়ে প্রাণখোলা হাসিতে ফেটে পড়লো সে। হাসতে হাসতে আরো এক আঁজলা পানি তুলে আমার গায়ে ছিটাতে গিয়েও সে থেমে গেল। বললো, ‘না বাবা, তোমাকে ভেজানো যাবে না। তুমি যে মোমের পুতুল, পানিতে ভিজে আবার যদি তোমার জ্বর আসে তো সব দোষ হবে আমার। মা তখন আমাকে কান ধরে বাড়ি থেকে বের করে দেবে। তার চেয়ে চলো বাড়ি যাই। সন্ধ্যে হয়ে এল।’
পুকুরের ঘাট থেকে উঠে এসে ওড়না দিয়ে আমার গায়ের পানি মুছে দিল আলেয়া। তারপর আমাকে ছাড়িয়ে ঘাটের এক ধাপ ওপরে উঠে পেছন ফিরে জিজ্ঞেস করলো, ‘উত্তর পেয়েছ?’
আমি থতমত খেয়ে তড়িঘড়ি করে বললাম, ‘হাঁ।’
******************************************************
আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-৯)

মন্তব্য ৪০ টি রেটিং +১১/-০

মন্তব্য (৪০) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৪

ইসিয়াক বলেছেন: আজ আমি প্রথম হলাম....।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ইসিয়াক।

২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩৫

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমি ২য় :D

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ক্লাসে ১ম ছাড়া তো ২য় হন নাই কোনদিন। আজ ২য় হইলেন ক্যামনে? পড়াশুনায় ফাঁকি দিচ্ছেন নাকি?

৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: ফাঁকি তো স্ত্রীলিঙ্গ আমার ক্ষেত্রে হয়তো ফাঁক হবে (গেয়ানী লুকের ইমু হবে)

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হে হে হে। আপনার লিঙ্গজ্ঞান খুবই ভালো।

৪| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:১০

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আপনার শিশ্য বলে কথা =p~

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: শিস্য যদি এরকম হয় তাহলে গুরুর লিঙ্গজ্ঞান আরো কত ভালো ভেবে দেখেছেন কোনদিন?

৫| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৫৭

ঢাবিয়ান বলেছেন: আগের দুটো পর্ব মিস গেছে। সময় নিয়ে দুটো পর্ব একসাথে পড়ব।+++++++++++++++++++++++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধারাবাহিকভাবে না পড়লে অনেক কিছু বুঝতে পারবেন না। ভালোও লাগবে না। কারণ, এটা ছোটগল্প নয়, উপন্যাস। এবং ব্লগে তা' ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে।

ধন্যবাদ ভাই ঢাবিয়ান।

৬| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:৩৩

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: আমার শিস্য বানানটা কিন্তু খুব কড়া হইছে গুরু :-B

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১১:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: বুলবুলের প্রভাব।

৭| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪

করুণাধারা বলেছেন: মধুপুরের এত কাছে পাক আর্মি চলে এসেছিল!! দেখা যাক মধুপুরের কি হয়।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৫৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: দয়া করে পড়তে থাকুন।


ধন্যবাদ বোন করুণাধারা।

৮| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৩

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: আমি মনে করি, প্রথম চুম্বনের পরে সবার এরকম ই অভিজ্ঞতা হয়, B-)) নির্বাক ।এই আবেগ ,এর অনুভূতি কখনও প্রকাশ করা যায়না ।
কারণ এই সম্পর্কে আমার ও সামান্য অভিজ্ঞতা আছে :P
এক দিক এটি খুব আন্তঃসম্পর্কীয় এবং অপ্রত্যাশিত,অন্য পক্ষে, উভয়ের জন্য খুব লজ্জাজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।কারণ, উভয়েই বিভ্রান্ত থাকে কিভাবে অপরজন এটির প্রতিক্রিয়া জানায় এই ভেবে ।
প্রেম এখন পর্যন্ত অবধি সঠিক পথেই আছে এবং সমস্ত উপাদান উপস্থিত যেগুলি ভালবাসার সাফল্যের জন্য অপরিহার্য।

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:০১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমি মনে করি, প্রথম চুম্বনের পরে সবার এরকম ই অভিজ্ঞতা হয়, B-)) নির্বাক ।এই আবেগ ,এর অনুভূতি কখনও প্রকাশ করা যায়না ।


এ্যাবসলিউটলি রাইট। ধন্যবাদ ভাই মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

৯| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: যুদ্ধেনা গিয়া প্রেম পিরীতি! খারান
নতুন তালিকা বানাইতে হইপো ;) হা হা হা


আহা! রোমান্টিকতা!
আহা ভালবাসা!
আহা ! স্মৃতি ;)

অমন করে ভালবাসি আর কেউ বলেনা কেনু :(( হায়রে গেবন :P B-)

++++

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। স্বপ্ন বাসর পড়তে পড়তে আপনি রোমান্টিক হয়ে উঠছেন। ভালো লক্ষণ। মেয়েরা রোমান্টিক পুরুষদের পছন্দ করে।


ধন্যবাদ ভাই বিদ্রোহী ভৃগু।

১০| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:২৮

কিরমানী লিটন বলেছেন: এক নিশ্বাসে পড়লাম। আগের পর্ব দুটি পড়ার ইচ্ছা তীব্র হলো.....

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধারাবাহিক উপন্যাসের মাঝখান থেকে একটা পর্ব পড়লে কাহিনীর ঘটনাক্রম বুঝতে পারবেন না। প্রথম পর্ব থেকে ধারাবাহিকভাবে পড়ে আসা উচিৎ।


ধন্যবাদ ভাই কিরমানী লিটন।

১১| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমি এগারতম !! :D

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৪৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার একই মন্তব্য দু'বার এসেছে। একটা মুছে দিলাম।



ধন্যবাদ ভাই গিয়াস উদ্দিন লিটন।

১২| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:১২

হাবিব বলেছেন: এক পর্বও পড়িনি। পড়ার ইচ্ছে জিইয়ে রাখলাম

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ।

১৩| ১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:৪৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম,




ধারাবাহিক ভাবে সব পর্বই পড়ে এসেছি। একটি সময়কালের ইতিহাস, গ্রামবাংলার সনাতন রূপে খোলতাই হয়েছে বেশ। গ্রামীন সামাজিকতা, একান্নবর্তী পরিবারের অন্দর মহলের স্নেহময়ী রূপ আর গ্রামীন চিত্রপটে একাত্তুরের অনেক স্মৃতিময় ছবি এঁকে গেছেন দারুন ভাবে।

লাইকড.............

১১ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৫২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধারাবাহিকভাবে সব পর্ব পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ ভাই আহমেদ জী এস।

১৪| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫৮

ওমেরা বলেছেন: গোপনে গোপনে সব পর্বই পড়ে যাচ্ছি।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: গোপনে পড়ছো কেন? প্রকাশ্যে পড়ো। লাভ স্টোরি বলে লজ্জা পাচ্ছো নাকি? হাঃ হাঃ হাঃ।


ধন্যবাদ ওমেরা বুবু।

১৫| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১:০৯

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: এই পর্বেও দারুণ রোমান্স। ভাল থাকবেন গুরুজী।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৩১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই মাহমুদুর রহমান সুজন।

১৬| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:০১

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: যাহ বাবা! কোনো প্রশ্নের এমন উত্তর হতে পারে ভাবা যায় না! হেনা ভাইয়ের জন্য শুভকামনা! ;)

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, আমি নিজেও হতভম্ব হয়ে গিয়েছিলাম।


ধন্যবাদ ভাই সম্রাট ইজ বেস্ট।

১৭| ১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৫:৪৩

মা.হাসান বলেছেন: ভালোবাসার পরীক্ষা পদ্ধতির নতুন প্রশ্ন ও উত্তর জানা থাকলো, তবে আরো কুড়ি বছর আগে জানলে কাজে লাগতো।
:`>
অনেক ভালো লাগা।

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:১৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। কুড়ি বছর আগে? এখন একবার পদ্ধতিটা যাচাই করে দেখুন না।


ধন্যবাদ ভাই মা, হাসান।

১৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:০৮

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: আজকে আমি লাস্টো তবে এক টানা পড়েছি ।
এ পর্ব অসাধরণ হযেছে । বালিকা আর বালিকা নেই
একেবারে কিশোরি বনে গেছে । এখন ঠেলা সামলান
বুঝবেন পিরিতির কি জ্বালা ।

শুভেচ্ছা রইল

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ তাই। মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে আগেই পরিণত হয়।


আপনার শরীর কেমন আছে? চিকিৎসা নিয়মিত চলছে তো?

ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

১৯| ১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৭:০৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: দিন কয়েক বিশ্রামের পর
এখন একটু ভাল আছি ।
চিকিতসা আর নিতে পারছি কই
লেখার ছটফটানির জ্বালায় অস্থির
কত লেখা যে জমে আছে ।
দোয়া করবেন ।
শুভেচ্ছা রইল

১৪ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৩৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: না, না, আলী ভাই, আপনি লেখালেখি নিয়ে অস্থির হবেন না প্লিজ! আগে চিকিৎসা করে সুস্থ হয়ে উঠুন, তারপরে লিখবেন। আপনি যে ধরনের লেখা লিখেন, তাতে ভীষণ পরিশ্রম হয়। এ জন্য শারীরিক সুস্থতা খুবই জরুরী।


ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

২০| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:৩৮

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট এবং সবার মন্তব্য গুলো পড়লাম।

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৫০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.