নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-১৪)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৫:৫৩



আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-১৩)

সব প্রেম প্রেম নয়, ছিল না তো সে সংশয়
যে আমারে কাছে টানে তারে কাছে টানি।

সারা জ্যৈষ্ঠ মাস ধরে থেমে থেমে বৃষ্টি হলো। আকাশে সব সময় কালো মেঘের আনাগোনা। আষাঢ় মাসে শুরু হলো টানা বর্ষণ। একটানা তিনদিন, চারদিন এমনকি সাতদিন পর্যন্ত। ইংরেজি মাসের হিসাবে সেটা জুন মাসের শেষ ভাগ। বিরামহীন বর্ষণে মাঠ ঘাট পানিতে সয়লাব। খাল বিল উপচে পানিতে ভেসে গেল চারদিক।

মধুপুর গ্রামে উঁচু ভিটার বাড়ি ঘরই বেশি। আত্রাই নদীর শাখা বারানই থেকে মধুপুর অনেক দূরের গ্রাম। তাই এ গ্রামে কখনো বন্যা হয়েছে বলে শোনা যায়নি। তবে এ বছর মাত্রাতিরিক্ত বর্ষণে গ্রামের প্রবীণদের মুখেও আতংকের ছায়া পড়লো। ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। নিচু ভিটার বাড়ি ঘরে পানি ঢুকেছে। পানের বরজ সব সময় মাটি কেটে উঁচু করে তৈরি করা হয় বলে সেখানে পানি ওঠে না। কিন্তু অতিরিক্ত বর্ষণে এ অঞ্চলের প্রধান এই আয়ের উৎসটিও এবার হুমকির মুখে। দাদাজানের হুকুমে কামলারা পানের বরজে ঢুকে সারাদিন গাছের গোড়ায় মাটি কেটে উঁচু করা আর নালা কেটে পানি বের করে দেওয়ার কাজে ব্যস্ত। পান গাছের গোড়ায় পানি জমে থাকলে খুব দ্রুত গাছে পচন ধরে। পান পাতা পচে যায়।

দরিদ্র চাষি ও ক্ষেতমজুর শ্রেনির মানুষরা পড়লো সবচেয়ে বিপদে। তাদের কাজ কাম নাই, ঘর থেকে বেরনো বিপদ, ঘরে চাল বাড়ন্ত। ছেলেমেয়ে নিয়ে তাদের অনাহারে থাকার থাকার দশা। প্রতিবেশি এরকম কিছু বাড়ির মহিলারা সরকার বাড়ি থেকে দু’চার কাঠা করে ধান কর্জ নিয়ে গেল। তাদের স্বামীরা পরে সরকারদের জমিতে কাজ করে কর্জ শোধ করে দেবে। বড় চাচীমা কর্জ ছাড়াও গোপনে আরো কিছু ধান একে ওকে দিয়ে সাহায্য করলেন। সরকার বাড়ির গোলা থেকে ধান চুরি করে দুই সইয়ের বাড়িতে পাচার করে দিল আলেয়া।

হাটে ধান ও পান দু’টোর দামই পড়তি। দাদাজানের হুকুমে বড় চাচা হাট থেকে কুড়ি টাকা মণ দরে চল্লিশ মণ ধান কিনে গোলায় তুললেন। আপতকালীন সতর্কতা। দাদাজান বিচক্ষণ মানুষ। তাঁর মতে, শ্রাবন মাস পার হলে ধানের দাম বাড়বে। একে তো দেশে যুদ্ধাবস্থা, তার ওপর এবার ভয়াবহ বর্ষণ। পানের দামও পড়ে যেতে পারে। বাড়িতে সদস্য সংখ্যা বেশি। বড় ছেলে সপরিবারে অনির্দিষ্টকালের জন্য এখন গ্রামে। শহরে ফিরে যাওয়া অনিশ্চিত। দাদাজান ঝুঁকি নিতে রাজী নন। তা’ছাড়া সরকার বাড়িতে খেটে খাওয়া লোকদেরও বাঁচিয়ে রাখতে হবে। বর্ষণের ভাবগতিক ভালো নয়। এত বৃষ্টি কেউ কখনো দেখেনি। বোরো ধান গোলায় তোলা সম্ভব হলেও আউশের কোন ভরসা নাই। আউশের ক্ষেত পানিতে সয়লাব। সবুজ ধানের চারাগুলো পানিতে ডুবে গেছে। বীজতলা প্রায় সবই শেষ। অধিকাংশ গৃহস্থের মাথায় হাত।

মায়ের পাড়া বেড়ানো বন্ধ। মিলিটারিদের অত্যাচারের কাহিনী অবশ্য থেমে নেই। বহুবার শোনা সেসব কাহিনীর নিবিষ্ট শ্রোতা এখন তিন চাচীমা। ছটফটে আলেয়া ঘরে বসে বসে আকাশের মুণ্ডপাত করছে। বলছে, ‘আকাশ ফুটো হয়ে গেছে।’
আমি বললাম, ‘এই গাধা, আকাশ আবার ফুটো হয় কী করে?’
আলেয়ার জ্ঞানগর্ভ অভিমত হলো, আকাশের ওপর বড় বড় সাগর আছে। সেসব সাগরে ধারালো দাঁতওয়ালা হাঙ্গরের রাজত্ব। বর্ষাকালে ওরা খাবারের জন্য নিজেদের মধ্যে মারামারি করতে গিয়ে আকাশের পর্দা ফুটো করে ফেলে। তখন সেই ফুটো দিয়ে সাগরের পানি বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে দুনিয়ায়। ফুটো বড় হলে বৃষ্টি থামতে চায় না। আমি কলেজে পড়ি, অথচ এই সামান্য ব্যাপারটা জানি না! তা’ হলে এত লেখাপড়া করে কী লাভ হলো?
আমি বললাম, ‘আকাশের ফুটো বন্ধ হয় কিভাবে?’
‘ওই হয়ে যায়।’ নিজের উত্তরে আলেয়া নিজেই তেমন সন্তুষ্ট নয় বলে মনে হলো।
‘ঠিক করে বল্। ফুটোতে তালি দেওয়ার কাজটা কে করে? ফেরেশতারা?’
‘ধুর! আমি অত জানি নাকি? তুমি না মেজভাই শুধু কঠিন কঠিন প্রশ্ন করো। তোমার মতো লেখাপড়া জানলে আমিও এমন কঠিন কঠিন প্রশ্ন করতাম যে তোমার হালুয়া টাইট হয়ে যেত।’
‘আমি তো সুজির হালুয়া, গাজরের হালুয়া, পেঁপের হালুয়ার কথা জানি। শবে বরাতের সময় বানানো হয়। মানুষের হালুয়ার কথা তো শুনিনি।’
‘আমি তোমার থেকে চার ক্লাস নিচে পড়ি বলে তুমি আমার সাথে মশকরা করছো? আচ্ছা ঠিক আছে, মানুষের হালুয়া হয় কী না বিয়ের পরে বুঝিয়ে দেব।’
বলে রাগ করে চলে যাচ্ছিল আলেয়া। আমি ওর একটা হাত ধরে টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে এলাম। ফিস ফিস করে বললাম, ‘বিয়ের পর সব স্বামীরাই বউদের কাছে হালুয়া হয়ে যায়। আমি হালুয়া হতে রাজী আছি।’
‘ছাড়ো, কেউ দেখে ফেলবে।’
‘দেখুক। দেখলে ভাববে, আমি তোর কাছে হালুয়া হচ্ছি।’
আলেয়া এক ঝটকায় নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মুচকি হেসে পালিয়ে গেল। মেয়েটা অদ্ভুত। খুনসুটি করলে রাগ করে, আবার মজাও পায়। মেয়ে মানুষের মন। হাসি কান্নার ককটেল।

মেঘের গর্জন শুনে বিলের কই মাছ ডাঙ্গায় উঠে আসে। টিপ টিপ বৃষ্টির মধ্যে সে এক দর্শনীয় দৃশ্য। ঝাঁকে ঝাঁকে কই মাছ পানি ছেড়ে উঠে আসছে ডাঙ্গায়। চাচারা বাড়ির চাকর বাকরদের সাথে নিয়ে প্রতিদিন বিলে গিয়ে সেই কই মাছ ধরে খলুই ভর্তি করে বাড়ি নিয়ে আসেন। সাথে কিছু শিং, মাগুর আর বাইন মাছও ধরা পড়ে। কই মাছ ভাজার গন্ধে সারা বাড়ি ম’ ম’ করে। খেতে খেতে অরুচি ধরে যায়।
ঘন বর্ষায় বাইরে যাওয়ার উপায় নাই। বড়ভাই চাচাদের সাথে বৈঠকঘরে বসে তাস দাবা খেলেন। আমার বড় বোনটি নিরীহ স্বভাবের। মেজ ও ছোট চাচীমার সাথে তার খুব ভাব। তাদের সাথেই তার সারাদিন কাটে। ছোট ভাইয়েরা চাচাতো ভাই বোনদের সাথে ঘরে বা বারান্দায় খেলা করে দিন কাটায়। বৃষ্টিতে ঘরে আটকা পড়লেও তাদের খেলাধুলার বিরাম নাই। ওদের ছুটাছুটি হুড়াহুড়িতে বড়রা বিরক্ত। কিন্তু ওদের ক্লান্তি নাই। আকাশের কালো মেঘের মতো আলেয়ার মুখ কালো। ঘরে বসে থাকতে থাকতে সে বিরক্ত হয়ে গেছে। আমার আশে পাশে সে ঘুর ঘুর করে ঠিকই, কিন্তু খাঁচাবন্দী পাখির মতো মনমরা। এতদিনে ওকে আমার চেনা হয়ে গেছে। ওর মন ভালো করার জন্য একটা কিছু তো করতে হয়। ওকে ডেকে বললাম, ‘আলেয়া চল, আমার ঘরে বসে লুডু খেলি।’

আলেয়া যেন আকাশের চাঁদ হাতে পেল। চট্ জলদি কোত্থেকে সে লুডু খেলার সাজ সরঞ্জাম নিয়ে হাজির। খেলতে বসে পর পর দু’বার আমি হেরে গেলাম ওর কাছে। হাত তালি দিয়ে প্রাণখোলা হাসির সাথে জয়ের আনন্দ উপভোগ করলো আলেয়া। তৃতীয়বার পাঞ্জাকে ছক্কা বানিয়ে চাল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়লাম ওর হাতে। আলেয়া বললো, ‘ছি, ছি, মেজভাই! তুমি এমন চোর আগে তো জানতাম না।’
সেবারও হেরে গেলাম ওর কাছে। এরপর ওর ফুর্তি দেখে কে? বললো, ‘চুরি করেও জিততে পারলে না? হায়, হায়! আমার সাথে তুমি পারবে না।’
আমি শয়তানি করার জন্য বললাম, ‘তোর সাথে আমি কবে পেরেছি বল? সেদিন বাঁশঝাড়ের মধ্যে তোর কাছে আমি যে হারা হেরেছি, তারপরে কী আর জেতা যায়? বউয়ের কাছে স্বামীরা সব সময়ই হারে।’
লজ্জায় লাল হয়ে গেল আলেয়া। ওড়নার এক প্রান্ত দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে উল্টো হয়ে মাথা নিচু করে চুপচাপ বসে রইল সে। আমি বললাম, ‘কী হলো রে? আয় খেলি।’
‘না, আমি তোমার সাথে খেলবো না।’
‘কেন?’
‘তুমি খুব ফাজিল। এমন ফাজিল ছেলের সাথে আমি খেলি না।’
‘আচ্ছা বেশ, ও কথা আর বলবো না কোনদিন।’
আলেয়া নিরুত্তর। মাথা নিচু করে বসে আঙ্গুলের ডগায় ওড়না পেঁচিয়ে রাগ কমানোর চেষ্টা করছে সে। আমি বললাম, ‘স্বামী কিন্তু বউয়ের কাছে মাফ চাচ্ছে। মাফ করে দিলে তোর অনেক সওয়াব হবে।’
এরপর আরো একদান খেলা হলো বটে, তবে আলেয়ার মনোযোগ যত না খেলার দিকে, তারচে’ বেশি আমার দিকে। আমি চাল দেবার পর যতবার ওর দিকে তাকাই, ততবারই দেখি চোরা চোখে আমাকে দেখছে সে। আমি তাকালেই মাথা নিচু করে ফেলছে।

আলেয়ার মধ্যে একটা দ্বৈত নারী স্বত্বার অবস্থান অনুভব করতাম আমি। একদিকে যৌবনের দরজায় পা বাড়িয়ে রাখা এক চঞ্চলা কিশোরী, অন্যদিকে প্রেম ভালোবাসা, মায়া মমতাময় এক পূর্ণাঙ্গ নারী। জ্ঞান হওয়ার পর থেকে শুধু আমার সঙ্গে তার বিয়ে হবে জেনেই বউয়ের অধিকারটুকু সে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে নিজের মধ্যে। আমি বুঝতে পারি, বাঁশঝাড়ের কাণ্ডটা সে শুধু আবেগের বশে করে ফেলেনি। স্বামীর প্রতি বউয়ের দখলদারি মানসিকতাও এর একটা কারণ ছিল। তা’ না হলে তখনকার রক্ষণশীল গ্রাম্য সংস্কৃতিতে ঐ বয়সী একটা অর্ধ শিক্ষিত মেয়ের পক্ষে কাজটা ছিল বড় বেশি সাহসের। কেননা আমরা তখনো স্বামী-স্ত্রী হইনি। পুরুষ হলেও আমার অত সাহস ছিল না। মানসিক পরিপক্কতার অভাবে কাজটা করতে তার কোন দ্বিধাবোধ হয়নি। এখন সে তার পূর্ণাঙ্গ নারী স্বত্বার মাঝে লজ্জায় মুখ লুকানোর চেষ্টা করছে।

আমি ওকে সহজ করার জন্য বললাম, ‘তুই কোন অন্যায় বা পাপ করিসনি, আলেয়া। এতে লজ্জা পাওয়ার কিছু নাই। আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি বলে যতটা সম্ভব সংযত হয়ে চলতে হবে, এই যা। সেদিনের ঘটনার জন্য তোকে বরং অনেক অনেক ধন্যবাদ।’
আলেয়া আমার পিঠে দুম করে একটা কিল মেরে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। কিন্তু এক মিনিট যেতে না যেতেই সে উত্তেজিত হয়ে আবার আমার ঘরে ঢুকে বললো, ‘মেজভাই, আকাশে রংধনু উঠেছে। চলো, চলো, বাইরে চলো।’

আমার হাত ধরে বাড়ির বাইরে পশ্চিম ভিটায় আউড়ের পালার পাশে একটা উঁচু জায়গায় এসে দাঁড়ালো আলেয়া। কিছুক্ষণ আগে বৃষ্টি থেমেছে। আকাশের পূর্ব দক্ষিণ কোনে সাত রঙে বর্ণিল অপূর্বদর্শন এক বিশাল রংধনু। মনে হয় বিধাতা তাঁর সৃষ্ট ব্রহ্মাণ্ডের এই অপরূপ সুন্দর নিদর্শনটি তাঁর অপরাপর সৃষ্টির সামনে মেলে ধরে কিছু বলতে চাইছেন। হয়তো তাঁর সৃষ্টির সেরা জীবকে তিনি বোঝাতে চাইছেন যে, দেখ এমন বর্ণিল সৌন্দর্য আমি লুকিয়ে রেখেছি তোমার মধ্যেও। তুমি অমৃতের সন্তান। রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ, প্রেম, ভালোবাসা আর মায়া মমতার সপ্ত রঙে রঙিন তোমার অন্তর। দৃশ্যমান সৌন্দর্যের চেয়েও বেশি অপরূপ, বেশি মনোলোভা তোমার অন্তরের সেই সৌন্দর্য। তোমরা তোমাদের অজ্ঞতা, স্বার্থপরতা ও অহমিকাবোধের কারণে সেই সৌন্দর্যের খোঁজ পাও না।

আমার ও আলেয়ার মতো বাড়ির ছোটরাও রংধনু দেখার জন্য ভিড় জমিয়েছে সেখানে। তারা হৈ চৈ করে আনন্দ প্রকাশ করছে। আলেয়ার চোখে মুখে ওদের মতোই আনন্দের ঝিলিক। ওর চেহারার মেঘ কেটে গিয়ে হেসে উঠেছে বর্ণালি সূর্যের আলো। ময়ূরের পেখমের মতো ঘন কালো মেঘলা চুলের মাঝে আলেয়ার মুখটা যেন আরো বর্ণিল, আরো সুন্দর এক অপরূপ রংধনু। তাকালে চোখ ফেরানো কঠিন। আমি আকাশের রংধনুর চেয়ে এই নারী রংধনুকেই আড়চোখে বেশি বেশি করে দেখছি। শুধু ওর এই সৌন্দর্য দেখার জন্যই ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকা যায়।
আলেয়া উচ্ছসিত হয়ে বললো, ‘মেজভাই, তোমাদের শহরের আকাশে এমন সুন্দর রংধনু দেখা যায়?’
আমি বললাম, ‘না রে, আমার জীবনে তো কখনো দেখিনি।’
‘তাই না?’ আলেয়ার সহজ সরল মনে আমার কথার আড়ালে লুকানো কথাটা ধরা পড়েনি। সে রংধনুর সৌন্দর্যে উত্তেজিত। আমার ডান হাতের একটা আঙ্গুল নিজের অজান্তেই ওর বাম হাতের মুঠোয় ধরে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে আছে সে আকাশের দিকে।
‘আলেয়া, আমার হাত ছাড়। আব্বা আসছে।’
বাড়ির ভেতর থেকে আব্বাকে বেরোতে দেখে আলেয়া থতমত খেয়ে আমার হাত ছেড়ে দিল। আব্বার সাথে সাথে বেরিয়ে এলেন চাচারাও। আলেয়া আমার পাশ থেকে দু’পা সরে গিয়ে তাকিয়ে রইল আকাশের দিকে। ছোটরা হৈ চৈ করছে। আমিও ওদের মতো উচ্ছসিত হয়ে আকাশে রংধনু দেখার ভান করছি। আব্বা-চাচারা হাসি মুখে আকাশের দিকে দু’একবার তাকিয়ে ‘কী, তোমরা রংধনু দেখছো?’ বলে চলে গেলেন উত্তর ভিটায় পানের বরজের দিকে। তাঁরা অদৃশ্য হতেই আলেয়া আবার আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।
আমি বললাম, ‘এভাবে সরে গেলি কেন?’
‘ওমা! বড় আব্বা, আব্বা, চাচা সবার সামনে আমি তোমার হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকবো? ছি, ছি, কী লজ্জার কথা! আমি ভুল করে সেদিন তোমার সাথে একটু বেহায়াপনা করে ফেলেছি, কিন্তু তাই বলে আমি অত নির্লজ্জ না, বুঝেছ?’
আলেয়া যে নির্লজ্জ না, সেটা বোঝাতে সে আবার আমার কাছ থেকে একটু দূরে সরে দাঁড়ালো। আমি ওকে নির্দেশের সুরে বললাম, ‘কাছে আয়, আমার হাত ধর।’
‘না, বাড়ির এত কাছে এসব আবদার করোনা তো মেজভাই।’
‘কেন, তাতে কী হবে? আয় আমার হাত ধর।’
‘না মেজভাই, জেদ করোনা তো! কেউ দেখে ফেললে ভীষণ লজ্জার ব্যাপার হবে।’
‘হবে, হবে।’ বলে আমি নিজেই খপ্ করে ওর একটা হাত ধরে ফেললাম। আলেয়া আতংকিত চোখে এদিক ওদিক তাকিয়ে এক ঝটকায় হাত ছাড়িয়ে নিয়ে খরগোশের মতো ছুটে পালালো। আমি পিছে পিছে দৌড়ে গিয়েও ওকে ধরতে পারলাম না। মুহূর্তের মধ্যে কোথায় যে সে হারালো কে জানে?

সরকার বাড়ির পেছন দিকে পুরু মাটির দেয়ালের উপরিভাগে টিনের চালার নিচে ছোট ছোট খোপে কবুতর পোষা হয়। আমি আলেয়ার পালিয়ে যাবার গতিপথ আন্দাজ করে কবুতরের খোপগুলো পার হয়ে একটু এগিয়ে যাবার পর গম্বুজ আকৃতির দুটো আউড়ের পালার ফাঁকে ওর কামিজের অংশবিশেষ দেখতে পেলাম। জায়গাটা একেবারে নির্জন। সাধারনত এদিকে কেউ আসে না। আমি পা টিপে টিপে ওর পেছনে গিয়ে দাঁড়াতেই ও টের পেয়ে গেল। বললো, ‘মেজভাই, তুমি বাড়ি যাও। আমি আসছি।’
আমি ঘুরে ওর সামনে এসে দাঁড়ালাম। বললাম, ‘কী করছিস এখানে?’
‘কিছু না।’ আলেয়া দাঁত দিয়ে আঙ্গুলের নখ খুঁটছে আর আতংকিত চোখে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। আশে পাশে কেউ নেই। আমি ওর চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘এখন যদি তোর মতো ভুল করে আমিও একটু বেহায়াপনা করে ফেলি, তখন কী হবে?’
‘মেজভাই!’ আলেয়ার কণ্ঠে চাপা আর্তনাদ। ভয়ে ভয়ে দু’পা সরে গেল সে। আতংকিত কণ্ঠে বললো, ‘তোমার পায়ে পড়ি, এসব করোনা।’ বলতে বলতে কেঁদে ফেললো সে।
ওর কান্না দেখে আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। কী করবো বা বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না। মনে মনে একটু অনুতপ্ত হলাম। শেষে ওকে শান্ত করার জন্য বললাম, ‘আচ্ছা, আচ্ছা, ঠিক আছে বাবা। ওসব হবে না। এখন কাঁদাকাটি বন্ধ কর তো।’

প্রবল বর্ষণের মধ্যে রাখাল না আসায় সকালে গরুর দুধ দোয়ানো হয়নি। বিকেলে সে দুধ দুইয়ে দিয়ে গেছে। সেই দুধ জ্বাল দিয়ে আমাকে খেতে দেওয়া হলো রাতে ভাত খাওয়ার পর। এমনিতে দুধ দেখলে আমার জ্বর আসে, তার ওপর ভরা পেটে সেই দুধ খেতে হবে শুনে আমি আতংকিত হয়ে পড়লাম। আলেয়াকে দুধটা আমার ঘরে পৌঁছে দিতে বলে আমি ঘরে চলে এলাম। আলেয়া গ্লাস ভর্তি গরম দুধ হাতে আমার ঘরে ঢুকে বললো, ‘দুধ খেলে শক্তি হয়, শক্তি হলে সাহস হয়, সাহস হলে বউয়ের কান্না দেখে স্বামীরা ঘাবড়ে যায় না, বুঝেছ দুর্বল আলী? এখন ভালো ছেলের মতো দুধটা ঝট্ পট্ খেয়ে ফেলো তো সোনা। আমার সামনে খেতে হবে। মায়ের হুকুম।’
‘কী বললি, কী বললি? আবার বল তো!’
আলেয়া হেসে কুটি কুটি। তার হাতের গ্লাস থেকে দুধ ছলকে পড়লো মেঝেতে। বললো, ‘নাও ধরো।’
‘না, আগে বল তুই কী বললি?’
আলেয়া হাসি থামিয়ে বললো, ‘বলতে পারি। তবে আগে দুধটা খাও, তারপর।’
আমি প্রায় কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, ‘ভরা পেটে এত দুধ আমি খাবো কী করে?’
‘আচ্ছা বেশ। আমি সাহায্য করছি।’ বলে গ্লাসের অর্ধেক দুধ ঢক ঢক করে খেয়ে ফেললো আলেয়া। তারপর ওড়না দিয়ে মুখ মুছে বললো, ‘এখন তো আর অসুবিধা নাই। এখন খেয়ে ফেলো।’
আমি গ্লাসটা হাতে নিয়ে বললাম, ‘আর একটু খা না বোন।’
‘বোন?’ আলেয়া চোখ বড় বড় করে বললো, ‘আমি তোমার বোন না বউ?’
‘এখন তো দুটোই। বিয়ের পরে শুধু বউ হবি। ঠিক আছে? বউ হিসাবে অর্ধেক খেয়েছিস, এখন বোন হিসাবে বাকি অর্ধেকটা খেয়ে ফেল।’
আলেয়া আমার পিঠে হালকা করে একটা কিল মেরে বললো, ‘ওসব আবদার ছাড়ো। ভদ্রলোকের মতো দুধটুকু খেয়ে নাও। নাহলে আমি এখনই গিয়ে মাকে বলছি।’
‘এই থাম্, থাম্।’ বলে আমি বহু কষ্টে দুধটুকু খেয়ে গ্লাসটা আলেয়ার হাতে ফেরত দিয়ে মুখ মুছে বললাম, ‘এখন বল, ঐ যে দুধ খেলে শক্তি হয়, শক্তি হলে সাহস হয়, তারপর আর একটা কথা কী যেন বললি! বউয়ের কান্না দেখে স্বামীর কী যেন হয়?’
আলেয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বললো, ‘বলবো না। বললে তুমি বেয়াদব হয়ে যাবে। এমনিতে তোমার ভাব গতিক ভালো ঠেকছে না। ভাত খাওয়া হলো, ফিডারে দুধ খাওয়া হলো, এখন আমার মায়ের বুড়োখোকা শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড় তো! আমি গেলাম।’

সারা জীবন মনে রাখার মতো একটা হাসি দিয়ে ঘর থেকে ছুটে পালালো আলেয়া। এই মেয়ে সত্যিই দুর্বোধ্য। হয়তো সব মেয়েই তাই। মেয়েদের মনে বিধাতা এমন কিছু দিয়ে রেখেছেন, যা তিনি ছেলেদের দেননি।
***********************************************************
আত্মজৈবনিক উপন্যাসঃ স্বপ্ন বাসর (পর্ব-১৫)

মন্তব্য ২৪ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:০৩

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: কথায় বলে নারীমন বিধাতা না জানন্তি
তাই সকলেই তা জানবে কেমন করে।
মেয়েরা সত্যিই বেশ দুর্বোদ্ধ।
ভাললাগল এ পর্ব।
পরে সময় নিয়ে আবার একবার
আসার প্রচেষ্টা নিব ।
শুভেচ্ছা রইল।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার মন্তব্য ১০০% খাঁটি। মেয়েদের মন বুঝা খুব কঠিন। ক্ষেত্রবিশেষে প্রায় অসম্ভব। তবে আমার মনে হয়, আল্লাহ তা'য়ালা ইচ্ছা করেই এরকম করেছেন। মেয়েদের মনকে যদি ছেলেরা খোলা বইয়ের পাতার মতো পড়তে পারতো, তাহলে হয়তো মেয়েদের প্রতি ছেলেদের আগ্রহ ও আকর্ষণ শেষ হয়ে যেত। এতে মানব সৃষ্টির ধারাবাহিকতায় বিঘ্ন ঘটতো।

ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৪

ইসিয়াক বলেছেন: আবারো ভালো আবারো লাগলো।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:২৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ইসিয়াক। কিছু মনে করবেন না। আপনি কী এই উপন্যাসটির এ পর্যন্ত প্রকাশিত ১৪টি পর্বই পড়েছেন?

৩| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪১

ইসিয়াক বলেছেন: হ্যাঁ পড়েছি ......একবারে মন্তব্যে আসবো .......খুব ভালো লাগছে।
চমৎকার ঝরঝরে লেখা।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ ভাই ইসিয়াক।

৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:৪৬

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:
বিধাতা নয় কথাটা হবে দেবতা না জানন্তি
গ্রেট টাইপিং এরর হয়েছিল। মন্তব্যের ঘরে
সংশোধনের উপায় নেই বলে যা হয় ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এ ধরণের মিসটেক কিছু না আলী ভাই। আমার কত ভুল হয়। আমি নির্লজ্জের মতো কিছু মনে করিনা। ম্যান ইজ মর্টাল। মানুষ মাত্রেই ভুল করে। হাঃ হাঃ হাঃ।

৫| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৮:৩২

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: একটা রুটি আর ডিম হলে ব্রেকফাষ্ট টা সেরে নিতাম B-)

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:০৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: এইমাত্র নাস্তা খেয়ে ঢেকুর তুললাম। ডিম রুটি সব শেষ। আপনার কপাল খারাপ।

৬| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ৯:৩০

রাজীব নুর বলেছেন: এ পর্ব টা খুব বেশি ভালো লাগলো।

লিখতে থাকুন। সাথে আছি।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০০

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

৭| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:১৩

মা.হাসান বলেছেন: হালুয়া আমারো খুব ভালো লাগে, তবে আমার উনি দয়া করে আমাকে অনেক দিন হালুয়া বানান নি।

যা হোক, ভাবি দুর্বল আলীকে দুধ খাইয়ে সবল বানাক।

লাজ, শংকা, প্রত্যশা-- সব কিছুর মিশেলে কিশোর প্রেম চমৎকার ফুটিয়ে তুলেছেন। ++

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হালুয়া আমারো খুব ভালো লাগে, তবে আমার উনি দয়া করে আমাকে অনেক দিন হালুয়া বানান নি।



হাঃ হাঃ হাঃ। আপনার উনি মনে হয় হালুয়া বানানোর রেসিপি ভুলে গেছেন। উনাকে আমার সালাম জানাবেন। রেসিপি ভুলে যাওয়ার জন্য নয়। আপনার মতো রসিক মানুষের সাথে আছেন বলে।

ধন্যবাদ ভাই মা, হাসান।

৮| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:০০

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন:
শুধুই মুগ্ধতা ।

লজ্জা, ভালবাসা, শ্রদ্ধা, প্রত্যাশা । অবশেষে সুখী ভবিষ্যতের জন্য অপেক্ষা সব এই অংশে বর্তমান ।

"সমস্ত পুরুষই তার স্ত্রীর কাছে হালুয়া হবে"যে এই হালয়া হয়েছে ,সেই জানে এই হালুয়া কত মজা :-B "

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঃ হাঃ হাঃ। সেই জন্যেই তো আমি আলেয়ার কাছে হালুয়া হতে চেয়েছিলাম।


ধন্যবাদ ভাই মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

৯| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৩৫

অন্তরন্তর বলেছেন: হেনা ভাই প্রতিটা পর্ব পড়েছি। মোবাইল এ পড়া হয় বলে কমেন্ট করা হয়ে উঠেনি সব পর্বের। কিশোর কিশোরীর প্রেম, খুনসুটি এবং তার সাথে গ্রামের সেই চিরন্তন মায়া, মমতা ও আত্মীয়তার বন্ধন খুব সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছেন। চলুক---। শুভ কামনা।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ২:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: প্রতিটি পর্ব পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। মোবাইলে পড়া ও কমেন্ট করা দুটোই সমস্যা। আমি সেটা বুঝি। মন্তব্য করা মোটেই কোন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। পড়াটাই গুরুত্বপূর্ণ।

শুভকামনা আপনার জন্যেও ভাই অন্তরন্তর।

১০| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৩:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

স্মৃতি বড়ই নিষ্ঠুর...
কাঁদায় রাত দুপুর...
তবুও স্মৃতি মধুর...

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৪৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: স্মৃতি বড়ই নিষ্ঠুর...
কাঁদায় রাত দুপুর...
তবুও স্মৃতি মধুর...


স্মৃতি মধুর, স্মৃতি বেদনার। ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

১১| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৪৩

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আহা খুনসুটি!
মন ভরে যায় :)

সব কান্না যে কান্না নয়, ছেলেরা এটা বুঝতে বুঝতে মেয়েরা মা হয়ে যায় :P
হা হা হা

ফারাক্কাতে বাঁধ দিল! নদী গুলোও মরে গলে! বর্ষাটাও তার চেনা রুপ হারিয়ে ফেললো!
আহা!
অমন ভরা বর্ষায় মাঠে জমা জলে জাম্বুরা ফুটবল খেলায় যে কি মজা হতো!
বলের চেয়ে জলেই লাথী বেশি মারা!
ঝল ছিটাছিটি খেলা!
হাটু জলে সমুদ্দুরে অনুভব ;) - আহা আহা

++++++



১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ১৯৭১ সালের পরে অমন একটানা প্রবল বৃষ্টি আমি আর কোনদিন দেখিনি। আগেও দেখিনি। ফারাক্কার (১৯৭৬) প্রভাব তো আছেই, বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনেরও শিকার আমরা। জলে ডুবে থাকা মাঠে আমরাও ফুটবল খেলেছি ভাই। সে কী আনন্দের দিন ছিল সেসব! মনে হলে সেই সব দিনে ফিরে যেতে মন চায়।

ধন্যবাদ ভাই বিদ্রোহী ভৃগু।

১২| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৫৯

করুণাধারা বলেছেন: আপনি এত খুঁটিনাটি জিনিসের বর্ণনা দিয়েছেন, আমার মনে হয় ৪০ বছরে আপনি কিছুই ভুলতে পারেননি।

বরাবরের মতোই, এই পর্ব পাঠেও মুগ্ধতা।

১৮ ই নভেম্বর, ২০১৯ ভোর ৬:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার জীবনে এমন কিছু ঘটনা আছে, যা কোনদিনই ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়। এই উপন্যাসে বর্ণিত সময়ের ঘটনাগুলো আমার চোখের সামনে আজও জীবন্ত হয়ে আছে। আমি জানি আমার মৃত্যু পর্যন্ত এরকমই থাকবে।

আর আল্লাহর অশেষ রহমতে স্ট্রোক হবার পরেও আমার স্মরণ শক্তির কোন ঘাটতি হয়নি। ত্রিশ, চল্লিশ, পঞ্চাশ বছর আগের ঘটনাগুলো হুবহু মনে করতে পারি। তবে শর্ট টার্ম মেমোরি কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে বলে মনে হয়। লং টার্ম মেমোরি খুবই ভালো আছে।

ধন্যবাদ বোন করুণাধারা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.