নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লেখালেখি

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মৃতিচারণঃ ঠিকানা

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:১৩


আমাদের শহরে গনকপাড়া নামে একটা বাণিজ্যিক এলাকা আছে। পুরাতন ও নতুন অবকাঠামো মিলিয়ে জায়গাটা ব্যাবসা বাণিজ্যের জন্য বেশ জমজমাট স্থান। ব্যাংক, বীমা, গার্মেন্টস, ইলেকট্রনিক্স, ফার্মেসী, হোটেল, রেস্তোরাঁ ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডের হাঁক ডাকে এলাকাটি সারাদিন গম গম করে। স্বাধীনতার আগে গনকপাড়ার কয়েকটি ছোট ছোট চায়ের দোকান খুব বিখ্যাত ছিল। সে সময় এই চায়ের দোকানগুলো শুধু চা আর বিস্কুট বিক্রি করতো। মোষের ঘন দুধ মিশিয়ে উন্নতমানের চা-পাতা দিয়ে তৈরি করা এসব দোকানের চা ছিল খুবই সুস্বাদু। এই চা খাওয়ার জন্য শহরের প্রায় সব এলাকার মানুষ সকাল থেকে রাত নটা দশটা পর্যন্ত দোকানগুলোর সামনে ভিড় জমাতো। দোকানদাররাও ভিড় সামলাতে হিমশিম খেত। স্বাধীনতার পরেও কয়েক বছর এই অবস্থা বজায় ছিল। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে আমাদের মহল্লার সমবয়সী বন্ধুদের সাথে আমিও নিয়মিত বিকেলবেলা সেখানে চা খেতে যেতাম। তখন আমি কলেজের ছাত্র। সেই ১৯৭২ সাল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত আমি গনকপাড়ার চা (এই নামেই বিখ্যাত) খেতে যাই। তবে এখন আমার এই যাওয়াটা অনিয়মিত হয়ে গেছে। আগের মত আর রোজ রোজ যাওয়া হয়না। হয়তো সপ্তাহে একদিন বা মাসে দু’মাসে একদিন যাওয়া হয়।

চল্লিশ বছরে অনেক কিছু বদলে গেছে। দোকানগুলোর মালিক ছিল প্রধানতঃ ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশ থেকে আসা উর্দুভাষী মোহাজিররা। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারা অনেকেই পাকিস্তান চলে যায়। রাস্তা চওড়া করার জন্য ভাংচুর হওয়ায় অনেকেই তাদের দোকান হারিয়ে অন্য পেশায় চলে যায়। অনেকে এই চল্লিশ বছরে মারাও গেছে। সর্বশেষ যে দু’তিনটি দোকান ছিল, সেগুলোর এখন বেহাল অবস্থা। চায়ের স্বাদ আর আগের মত নেই। ফলে সেই রমরমা ব্যবসাও আর নেই। আমরা যে দোকানে চা খেতে যেতাম, সৌভাগ্যক্রমে সেটি এখনও টিকে আছে। এই দোকানের মালিক রহমতুল্লাহ মারা যাওয়ার পর তার ছেলে বরকতুল্লাহ দোকানের হাল ধরেছে। সেও প্রায় তিরিশ বছর আগের কথা। বাহাত্তর সালে আমরা যখন গনকপাড়ায় চা খেতে যেতাম, তখন বরকতুল্লাহর বয়স ছিল বার তের বছর। সে তার বাবাকে দোকানের কাজে সাহায্য করতো। তিনটি বড় বড় লাকড়ির চুলার একটিতে বিশাল হাঁড়িতে সারাদিন পানি ফুটতো, একটিতে বড় সসপ্যান ভর্তি ঘন দুধ জ্বাল হতে হতে লাল হয়ে যেতো আর একটিতে ফোটানো পানি ভর্তি বড় বড় তিনটি কেটলি বিরামহীনভাবে রহমতুল্লাহর হাতে ওঠা নামা করতো। টিনের তৈরি বিশাল ট্রেতে করে চা নিয়ে বরকতুল্লাহ দোকানের সামনে ভিড় জমানো খদ্দেরদের কাছে পৌঁছে দিতো। কেউ চাইলে সাথে একটা বা দু’টা নোনতা বিস্কুট। পর্যাপ্ত বসার জায়গা না থাকায় অধিকাংশ খদ্দেরই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে চা খেয়ে চলে যেতো। বরকতুল্লাহর বয়সী একজন কর্মচারী ছোকরাও কাজ করতো দোকানে। রমরমা বেচাকেনা। রহমতুল্লাহর সাহায্যকারী না হলে চলবে কেন? দোকানের কোন সাইনবোর্ড ছিলনা। রহমতুল্লাহর চা বললেই সবাই চিনে ফেলতো।

সেই দোকান এখন চালায় তার ছেলে বরকতুল্লাহ। কিন্তু দোকানের সেই রমরমা দিন আর নেই। লাকড়ির চুলা উঠে গিয়ে একটা মাত্র পাম্প করা কেরোসিনের চুলা জ্বলে। সেই চুলার এক পাশে গরম পানির জন্য একটা আর এক পাশে গরুর দুধের জন্য একটা কেটলি। কনডেনসড্ মিল্কের কৌটাও রয়েছে। তবে অনেকে কনডেনসড্ মিল্কের চা খেতে চায়না বলে কেটলিতে সামান্য কিছু দুধ রাখা হয়।

বরকতুল্লাহ ইতিমধ্যে বুড়ো হয়ে গেছে। তার চুল দাড়িতে পাক ধরেছে। বরকতুল্লাহর বউ ছেলে নাই। বাবা মা তো অনেক আগেই দুনিয়াছাড়া। একজন বাঙালী ছেলেকে পেটে ভাতে কর্মচারী নিয়ে সে দোকান চালায়। চায়ের মান একেবারে জাহান্নামে গেছে। অন্ততঃ তার বাবার আমলের তুলনায়। তবু নস্টালজিয়ার টানে আমি এখনও মাঝে মধ্যে সেই দোকানে চা খেতে যাই আর চা খাওয়ার সময়টুকু বরকতুল্লাহর সাথে গল্প করি। বিস্বাদ চা খাওয়ার পরেও আগের সেই চা খাওয়ার অনুভূতি হয়। গনকপাড়ার চা।

আমি নিজেও বুড়ো হয়ে গেছি। তবু বরকতুল্লাহ আমাকে চিনতে পেরে এখনও সমাদর করে বসায়। গরম পানি দিয়ে ভালো করে কাপ ধুয়ে চা দেয়। ওর চোখের সামনেই দিনে দিনে বুড়িয়ে গেলাম বলে আমাকে চিনতে ওর কখনো ভুল হয়না। আমি জিজ্ঞেস করলে বলে, না স্যার, আপনার বন্ধুদের কেউ আর এখন আসেনা। শুধু আপনিই আসেন।

আচ্ছা বরকত মিয়া, তোমার কি মনে আছে আমরা আট দশ জন বন্ধু মিলে দল বেঁধে আসতাম আর হৈ চৈ করতে করতে তোমার বাবার হাতের চা খেতাম?

বরকতুল্লাহ ম্লান হেসে বলে, মনে থাকবেনা স্যার? খুব মনে আছে। আপনারা চা খেয়ে মাঝে মাঝে আমাকে দু’এক আনা বখশিশ দিয়ে যেতেন। সেসব দিনের কথা কি ভোলা যায়, স্যার?

বরকত মিয়া, তুমি কি এখনও উর্দুতে কথা বলতে পারো?

বোলনা ঠিক সে আতা নেহি স্যার। বিহারী লোগ সব চলে গ্যায়ে। মেরা আপনা তো কোই নেহি। বোলনে কা মওকা কাহাঁ?

তা তুমিও তো ওদের মতো পাকিস্তান চলে যেতে পারতে!
বরকতুল্লাহ এ কথার কোন জবাব দেয়না।

একই প্রশ্ন আর একদিন করায় সে মৃদু হেসে বলে, স্যার আমরা হলাম না ঘরকা, না ঘাটকা। আমার জন্ম তো এ দেশেই। জন্মভূমি ছেড়ে কোথায় যাবো, স্যার? জিনা ইঁহা, মরনা ভি ইঁহা। আমি বাংলাদেশের মাটিতেই মরতে চাই, স্যার। কাঁহি নেহি যানা।

এ বছর একুশের বইমেলা উপলক্ষে আমার একটি উপন্যাসের বিক্রয় কার্যক্রম তদারকির জন্য আমি পুরো ফেব্রুয়ারি মাস ঢাকায় ছিলাম। সেখান থেকে ফিরে মার্চের মাঝামাঝি একবার গনকপাড়ায় চা খেতে যাওয়ার সুযোগ হলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, বরকতুল্লাহর দোকান বন্ধ। আশেপাশের দোকান গুলোতে জিজ্ঞেস করে জানা গেল, বরকত মিয়া মারা গেছে। শেষের দিকে তার আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ ছিল। ধার দেনা করে চিনি, চা-পাতা আর দুধ কিনে সে দোকান চালাতো। মারা যাওয়ার সময় তার ক্যাশ বাক্সে টাকা পয়সা তেমন ছিলনা। এই গনকপাড়ার দোকানদাররাই চাঁদা তুলে তার দাফন কাফনের ব্যবস্থা করেছে। টিকাপাড়া গোরস্থানে তার মাটি হয়েছে।

চা না খেয়ে ফিরে আসার সময় রিক্সায় বসে আমার কেন যেন মনে হলো, বরকতুল্লাহ তার স্বজাতির লোকদের মতো হেরে যায়নি। এদেশে জন্মে এদেশের মাটিতেই সে তার চিরস্থায়ী ঠিকানা করে নিয়েছে। হ্যাটস্ অফ টু ইউ, বরকত মিয়া।
************************************************************************************************************************
[ এই গল্পটি সাপ্তাহিক রাজশাহী বার্তার আগস্ট/ ২০১২ সংখ্যায় প্রকাশিত। ব্লগার বন্ধুরা যারা পড়েননি, তাদের জন্য ব্লগে প্রকাশ করলাম। ]
রি-পোস্ট।
ছবিঃ নেট।

মন্তব্য ২৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১২:৫৯

অজ্ঞ বালক বলেছেন: সুন্দর লেখসেন। বিহারী বা উর্দুভাষি জনসংখ্যা একটা বিশাল ইস্যু এই দেশে। এগোরে পুশ ইনেরও অবস্থা নাই। আবার নাগরিকত্ব দেয়ার কথা মন থেইকা আসে না। এরা আসলেই না ঘরকা, না ঘাটকা।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: দেশভাগের সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হলে এদের বেশিরভাগই থেকে যেত ভারতে। এ দেশে আসতো না। ওদের সবচেয়ে বড় ভুল হলো ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করা। এই ভুলই ওদেরকে ডুবিয়েছে। বর্তমানে ওদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।

ধন্যবাদ ভাই অজ্ঞ বালক।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:২৯

নেওয়াজ আলি বলেছেন: পাকিস্তানের উচিত তাদের লোক ফেরত নেওয়া । এই বিহারিরা অনেক অপকর্মে সংবাদ শিরোনাম হয়

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: পাকিস্তান কখনোই ওদেরকে ফেরত নেবে না। রিফিউজিদের প্রতি পাকিস্তানিদের মনোভাব ইতিবাচক নয়।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:২৩

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নেওয়াজ আলি।

৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:১১

শাহ আজিজ বলেছেন: হটাত বরকত মারা গেল । পড়তে গিয়ে হোঁচট খেলাম ।

আমি সম্ভবত সাহেব বাজার দিয়ে গলিতে ঢুকে পদ্মার পাড়ে যেতাম । ওখানে এক পুরাতন বাড়ির দেওয়াল ঘেঁষে চায়ের দোকান ছিল । পঞ্চাশ কাপ চা একবারে , মশারি দিয়ে তৈরি বিশাল ছাকনি , প্রচুর লোক দাড়িয়ে - এটাই কি ঐ দোকান ?

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ দুপুর ২:৩২

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ, আজিজ ভাই, আপনি প্রায় সঠিক অনুমানই করেছেন। সাহেব বাজারের উত্তর অংশটাই গনকপাড়া। আর দোকানের যে বর্ণনা দিলেন, ওই রকম কয়েকটা দোকান ছিল সেখানে। দেশ স্বাধীন হওয়ার কয়েক বছর পর দোকানের সংখ্যা কমতে কমতে শেষ পর্যন্ত রহমতুল্লাহর দোকানটাই শুধু ছিল।

ধন্যবাদ ভাই শাহ আজিজ।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩১

রাজীব নুর বলেছেন: সব কিছুই বদলে যায়।

পোস্ট পড়ে ভালো লাগলো।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৩৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: হাঁ ভাই, সময়ের বিবর্তনে সব কিছুই বদলে যায়।


ধন্যবাদ ভাই রাজীব নুর।

৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:৩৫

শুভ_ঢাকা বলেছেন: রিপোস্টের কল্যাণে না পড়া 'স্মৃতিচারণ: ঠিকানা' পড়ার সুযোগ হলো। হেনা ভাই, আপনি কোন এক কমেন্টে লিখেছিলেন এই উপমহাদেশ বিভক্তির পিছনে জিন্নাহ, নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধী দায়ী। আমি আপনার সাথে সহমত। এদের সাথে যুক্ত ছিল ইংরেজদের দুরভিসন্ধি ও আরও কিছু স্টেকহোল্ডার। মোহাজেররা যারা পাকিস্তান বানানো জন্য বড় ভূমিকা রেখেছিল এবং পাকিস্তান বাঁচানের জন্য যারা বাংলাদেশে বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর তারাই পাকিস্তানের কাছে অপাংতেও ও ব্রাত্য হয়ে গেল। এরই নাম রাজনীতি।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমিও আপনার সাথে একমত। ইংরেজরা তো চিরকালই কানিং ফক্স। ওরা আমাদের উপমহাদেশের জনগনের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। শাসন শোষণ ছাড়াও ওরা আমাদের মারাত্মক যে ক্ষতিটা করেছে, সেটা হলো ওরা আমাদের ভেতর সাম্প্রদায়িকতার বীজ বুনে দিয়ে গেছে। এটা এত বেশি ভয়ানক যে দীর্ঘমেয়াদে এর ধংসাত্মক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। ভারত বিভক্ত হওয়ার পেছনে এই সাম্প্রদায়িকতাই মূল কারণ। ইংরেজরা আমাদের ভাবতে শিখিয়েছে যে ওরা হিন্দু, আমরা মুসলমান। মানুষ হয়েও আমরা আমাদের মানবিক পরিচয় হারিয়ে ফেলেছি। আমাদের এই ভাবনা যে কত ভুল ছিল, সেটা বুঝা যায় আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়। তখন মুসলমানরাই মুসলমানদেরকে মেরেছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে ইংরেজদের এই নোংরা পলিসিকে চরমভাবে ঘৃণা করি।

ধন্যবাদ ভাই শুভ_ঢাকা।

৬| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৩২

চাঁদগাজী বলেছেন:



বরকতুল্লার জন্য চোখে পানি এলো

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: স্বাভাবিক। ধন্যবাদ ভাই চাঁদগাজী। ভালো থাকবেন।

৭| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৫:৪১

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: এদের অধিকাংশ বাংলাদেশকে মেনে নিতে পারে নি এখনও। বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের খেলা হলে পাকিস্তানকে সমর্থন করে।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১১

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: কিন্তু সেটা প্রকাশ করে না। বরকতুল্লাহর মতো সবাই বাংলাদেশকে নিজের দেশ মনে করে না। ওরা বাংলাদেশটাকেই তো চায়নি।


ধন্যবাদ ভাই সাড়ে চুয়াত্তর।

৮| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৪৪

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:




গল্পটি মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে পাঠ করলাম।অসাধরণ দক্ষতায় ও সূক্ষ্ম রসবোধ মিলিয়ে কথাসাহিত্যে নিজেকে এবং প্রিয় বাংলাদেশ ও পরিবর্তমান বাঙালি সমাজকে এই উত্তাল বাংগালীপনার ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে নানা রঙে নানা ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন। মনন ও অভিজ্ঞতায় বাংলাদেশের নাগরিক বৃত্তের উচ্চমহল থেকে নিন্মমহল সম্বন্ধে বিশদ ও প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ লেখক হিসাবে বরকতুল্লার চায়ের পাত্রের মত তাঁর জীবনপাত্র উছলে উঠেছে লেখাটিতে । এক স্বতন্ত্র মাধুরীর ছবি ফুটিয়ে তুলেছেন এই গল্পটিতে। আপনার সকল গল্প-উপন্যাস, বিশেষত রমণীয় রচনার ছোটগল্পরূপ উপস্থাপনায় এক অনন্যস্বকীয়তার স্বাক্ষর রেখে চলেছেন প্রজ্ঞার এক দীপ্তিমান পরিসরে। মানুষের প্রতি গভীর ভালবাসা, সংসারের তুচ্ছাতিতুচ্ছ ঘটনাকে গভীর অন্তর্দৃষ্টির সাহায্যে অসামান্য তাৎপর্যময় করে তোলেছেন। আপনার যে কয়টি গল্প , উপন্যাস ও লেখা পাঠের সৌভাগ্য হয়েছে তাতে দেখতে পেয়েছি সেগুলি পুঙ্খানুপুঙ্খ উপস্থাপনার নির্মোহ দার্শনিকতায় আপনার রচনাকে একান্তই নিজস্ব করে তুলেছে। আমাদের চেনা সমাজের অনেক অন্তঃসারশূন্যতা ও স্ববিরোধিতা নির্দ্বিধায় অনাবৃত করেছেন কিন্তু নগ্ন বীভৎসতায় নামিয়ে আনেননি কখনো বরঞ্চ সংবেদনশীলতার নক্সাকাটা চাদরে তাকে আদরে ঢেকে দিয়েছেন। কথা সাহিত্যে এমন অসাসাধারন সাফল্যের ধারা অক্ষুন্ন থাকুক এ কামনাই রইল ।লেখাটি প্রিয়তে তুলে রাখলাম।

অনেক অনেক শুভেচ্ছা রইল

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:০৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আপনার প্রশংসা ধারণ করবার মতো যোগ্যতা আমার নাই। কেননা আপনার জ্ঞান, বিদ্যা ও জানাশোনার পরিধি শুধু আমার নয়, ব্লগের অনেকের চাইতে অনেক অনেক বেশি। আর শ্রমসাধ্য পোস্টগুলোর কথা নাই বা বললাম।

যাই হোক, আপনার শরীর এখন কেমন? আশা করি, আগের চেয়ে ভালো আছেন। ধন্যবাদ ডঃ এম এ আলী।

৯| ১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:২৪

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বিহারী বাংগালী পাঞ্জাবী এসব কিছুর মূলে আছে ধর্ম।ধর্মের জন্য রাষ্ট্র ভাগ হওয়া।

১৭ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই নুরুলইসলা০৬০৪।


ভালো থাকুন।

১০| ১৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৩৫

মা.হাসান বলেছেন: অভাগা বরকতুল্লাহর জন্য মনটা একটু খারাপ লাগলো।

আমি যে শহরে বেড়ে উঠেছি ওখানে অনেক অবাঙালি ছিলো। ৮০-৯০এর দশকে দেখেছি এদের মধ্যে অনেকেই বাংলাদেশকে নিজেদের দেশ মনে করতো না। সব সময়ের চেষ্টা থাকতো পাকিস্তান কি ভাবে যাবো। এই দেশ থেকে যা সম্ভব , যে ভাবে সম্ভব কামাই করে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেবার চেষ্টা ছিলো। লোক মুখে যা শুনেছি, পাকিস্তানে যারা গিয়েছে, ভালো থাকতে পারে নি। পাকিস্তানে এদের মোহাজের বলে খুব হেয় করা হয়।

আরেকটা শ্রেণী দেখেছি, যারা এখানকার লোকদের সাথে পুরো মিশে গেছে। কেউ কেউ এমনকি গ্রাম্য আঞ্চলিক বাঙলায় কথা বলে। আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে দুজনের বাবা ছিলো যারা ১৯৭১এ বাঙালীদের বাঁচানোর জন্য প্রচন্ড চেষ্টা করেছে। অনেক লোক- যাদের পাকিস্তানি সেনাদের হাতে মৃত্যু নিশ্চিত ছিলো, ওনাদের কারনে বেঁচে গেছে।

আমি জেনারেলাইজ করে সকলকে খারাপ বলবো না। অনেক ভালো মানুষ আছে।

৯০এর দশকে বেনজির ভুট্টো বাংলাদেশে আসলে সেই সময়ের সরকার আটকে পড়া বিহারিদের ফেরৎ নেবার বিষয়টি আলোচনায় তুলেছিলো। বেনজির এক কথায় বলেছিলেন- আটকে পড়ারা পাকিস্তানি না, বিহারি। এদের ফেরৎ নেয়া হবে না।

পশ্চিম বাংলায় মাঝে মাঝে যাওয়া হয়। ওখানে প্রচুর অবাঙালি মুসলমান দেখি। বাঙলাভাষি মুসলমানদের তুলনায় এদেো অনেক অনুদার, উগ্র বলে মনে হয়েছে। তবে ঐ একই কথা, সবাই সমান না, জেনারেলাইজ করবো না।

১৯ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৩৯

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: খুব ভালো বিশ্লেষণ করেছেন। হুবহু চিত্র আমার চোখেও পড়েছে। এমনকি রাজশাহীতে একজন বিহারী লোক বিবেকের তাড়নায় স্বজাতির বিরুদ্ধে গিয়ে বাঙ্গালীদের সাথে মুক্তিযুদ্ধেও যোগ দিয়েছিলেন। এখন আর তার নাম মনে করতে পারি না। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ছবিসহ মুক্তিযুদ্ধে তার অসম সাহসিকতার কথা বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় ছাপাও হয়েছিল।

ধন্যবাদ ভাই মা, হাসান।

১১| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৪৮

পুলক ঢালী বলেছেন: মুগ্ধ হয়ে লেখাটা পড়লাম ।
আমরা বলি বিহারী পাকিস্তানে বলে মোহাজির ।
ওদের মোহাজির কওমি মুভমেন্টের যন্ত্রনায় পাকিস্তান এদের উপর বিরক্ত।
পাকিস্তান আমলে পাঞ্জাবীদের পরই এরা ছিলো দ্বিতীয় অভিজাত শ্রেনী। তারা বাঙ্গালীকে বলতো ছালে বঙ্গাল (শালা বাঙ্গালী) ।পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হবে উর্দূ এই ঘোষনা এবং আইয়ুব খান এদের জন্য বিভিন্ন জেলায় উপশহর তৈরী করে দিয়ে এদের আরো উচ্চমার্গে নিয়ে যায়।
মুক্তিযুদ্ধে তাই বঙ্গালদের পক্ষ নেওয়ার কোন কারনই ছিলনা।
ঢাকার জেনেভা ক্যাম্পে থেকে এখনও ওরা পাকিস্তানকে ভোট দেয় । আগে শুনেছিলাম ৫ লাখ বিহারী আছে এদেশে এখন মনে হয় ২৫/৩০ লাখ আছে। অনেকেই মূলধারার (বাঙ্গালী) সাথে মিশে গেছে বিয়েশাদী করে। রংপুরের সৈয়দপুর পুরোটাই বিহারী অধ্যুষিত ছিলো।
ওরা অনেক নির্মমতা করেছে আবার নির্মমতার শিকারও হয়েছে। এরা এবং রোহিঙ্গারা মনে হয় এদেশে বোঝা হয়েই থাকবে।

আপনার মত এভারগ্রীন মানুষ ভুলভাল বকলে ভাল লাগেনা। আপনি বুড়ো হয়েছেন এমন ভুল ধারনা আপনার কানে কে দিলো বুঝতে পারছিনা।

আপনি দুটো কাজ করবেন।
১। স্কুলের মেয়েদের সাথে যে টল্টিং করতেন ঐ বিষয় নিয়ে একটা পোষ্ট দেন। :D
২। পাখীভাই হিসাবে ফাহিমের একটা ব্যবস্থা করেন। ;)
শুনলাম মেসেঞ্জারে আপনার সাথে তার ভালই আলাপ আছে।

আমাদের পিচ্চি ডার্লিং দুজন কেমন আছে?? এখানে ছবি দিয়ে জানাবেন।
আপনাকে ব্লগে দেখলে ভাল লাগে।
বুড়ী ভাবী কেমন আছেন, আমার ছালাম জানাবেন।
ভাল থাকুন হেনা ভাই।

১২| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৩:১৮

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার বুড়ি এ কথা আমার কানে দিয়েছে। একটু রোমান্স করার চেষ্টা করলে বলে, বুড়া হয়ে গেলে, এখনো স্বভাবটা ভালো হলো না।

হাঁ, ফাহিমের সাথে মাঝে মাঝে কথা হয়। ওর ঘটকালি ও নিজেই করবে। কথাবার্তা শুনে এরকমই মনে হয়। নয়নতারা আর ওর ছোট বোন তাইজা ওদের মায়ের সাথে এ মাসের তিন তারিখে নানু বাড়ি বেড়াতে গেছে। সম্ভবত আজ ফিরবে। আমি একটু পরে গাড়ি পাঠাবো। ওদের বাবা নিয়ে আসবে। ছবি দেখুন।

১৩| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৪৭

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: Click This Link

১৪| ২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৮:৩৭

পুলক ঢালী বলেছেন: দীর্ঘ প্রায় ১৮দিন আপনার পাড় করতে বেশ কষ্ট হয়েছে তাহলে! আজ প্রতীক্ষার পালা শেষ হলো আপনাদের ওদিকে ঘর খালি হয়ে আবার কবে আসবে সেই প্রতীক্ষার পালা শুরু হলো ওনাদের মানে নানা নানীদের। এই তো জীবন।

আমার বুড়ি এ কথা আমার কানে দিয়েছে। একটু রোমান্স করার চেষ্টা করলে বলে, বুড়া হয়ে গেলে, এখনো স্বভাবটা ভালো হলো না।
হা হা হা হেনা ভাই আপনি পারেনও বটে! জবাব নাই! তবে, ভাবী বলেছেন, 'এখনও স্বভাবটা ভাল হলোনা' তার মানে আগে থেকেই ------- হা হা হা।
তানিশার আর তাইজার ভিডিও দেখে মাথা নষ্ট। তানিশার দাদার জন্য রুটি বেলার কসরৎ তাইজার গুল্লু গুল্লু মিষ্টি মিষ্টি হাসি দেখে পাগল হয়ে গেলাম। ওদের সুন্দরভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অনেক অনেক দোয়া রইলো, ভাল থাকুক সুস্থ্য থাকুক পিচ্চী মনিরা।
আপনি, বুড়ীভাবী আপনারাও ভাল থাকুন সুস্থ্য থাকুন এই কামনা রইলো।

২১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৬

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: নয়নতারার রুটি বেলার ভিডিওটি অবশ্য সম্প্রতি তোলা নয়। এটি গত ডিসেম্বরে ওর বাবা তুলে রেখেছিল। তখন ওর বয়স এক বছর দশ মাস ছিল। ওই বয়সেই কী ছিল পিচ্চিটা ভাবলে আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই। তাইজাও ওর বড় বোনের চেহারার আদল পেয়েছে।

সন্ধ্যে সাড়ে সাতটায় ওরা ওদের নানু বাড়ি থেকে ফিরেছে। ওরা ফেরার পর আমার বাড়িতে রীতিমতো উৎসব চলছে। আর আমার যে কী ভালো লাগছে, বুঝিয়ে বলতে পারবো না।

আপনার নিজের নাতনির মতো করেই উপরের মন্তব্যটি করেছেন। আমি কৃতজ্ঞ। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই পুলক ঢালী। ভালো থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.