নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা জানালায় নেই প্রিয় মুখ

চেনা দুঃখ চেনা সুখ চেনা চেনা হাসি মুখ

অচীনপুরের চেনা মুখ

অচীনপুরের চেনা মুখ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভাগ্য প্রবঞ্চিত আমি ঈদিপাসের তুলনায় ধূলিকনা সম

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৬:১৪





যখন জীবনকে মনে হয় অর্থহীন, নিজেকে মনে হয় ভাগ্য বিড়ম্বিত। জগতের সবকিছু মনে হয় উপহাস। অন্তরে অস্থীরতার ঝড় উঠে তোলপাড়। গুমড়ে ওঠা কান্না চেপে নিজেকে স্বান্তনা দেই, পৃথিবীর সেরা দূর্ভাগা আমি নই।



যুগে যুগে সব হতভাগাকে ছাড়িয়ে গেছে এক ঈদিপাস।

কিং ঈদিপাস।




ভাগ্য প্রবঞ্চিত আমি তার তুলনায় ধূলিকনা সম। মনকে প্রবোধ দিতে স্মরণ করি জগৎশ্রেষ্ঠ ভাগ্যহত রাজা ঈদিপাসকে। প্রাচীন গ্রীসের রাজা ঈদিপাসের মিথ সবারই জানা। প্রতিটি মিথের পেছনে থাকে কিছু না কিছু দুর্বার সত্য। তাই ঈদিপাসের কাহিনী কল্প নয়, সত্য বলেই মানি। ভাঙা মন নিয়ে এ মুহূর্তে তাই স্মরণ করছি রাজা ঈদিপাসকে।









শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে দুনিয়ার সব প্রান্তে প্রচলিত আছে প্রাচীন গ্রীসের রাজা ঈদিপামে জীবন-বঞ্চনার কাব্য। খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতকে সে যুগের প্রধান গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিস ঐ কাহিনীর উপর নির্ভর করে একটা নাটক রচনা করেন। এ পর্যন্ত বহু দেশের বহু ভাষায় এই নাটকের অনূবাদ হয়েছে এবং বহু যুগ ধরে বহু দেশের পেশাদার নাট্যমঞ্চে এটি অভিনীত হয়েছে। বাংলাতেও এটি একাধিক লেখক অনুবাদ করেছেন। তবে প্রফেসর কবীর চৌধুরীর ‌'ঈদিপাস' বাংলাদেশে সম্ভবত সর্বাধিক পঠিত।







প্রাচীন গ্রীসের ক্ষুদ্র রাজ্য থিবিসে গড়ে ওঠেছে নাটকের পটভূমি। সেসময় থিবিসের রাজার নাম ছিল লাইআস, তার আরেকটি নাম হল ক্রেয়ন। সেখানকার রানীর নাম জোকাস্টা। বহুদিন যাবৎ রাজা-রাণী নিঃসন্তান থাকায়, ক্ষুদ্ধ থিবিসরাজ ডেলফিআন অ্যাপোলোর মন্দিরে গিয়ে আর্চনা দেন । দেবতাদের কাছে তিনি একটি পুত্র সন্তান পাওয়ার জন্য আকুতি জানান।



পুত্র সন্তান কামনায় দিনের পর দিন লাইআস দেবতাদের তুষ্ট করতে মন্দিরে যাওয়া আসা করতে থাকেন। রাজসভার চেয়ে তিনি মন্দিরেই বেশি সময় পড়ে থাকা শুরু করলেন। অনেক প্রার্থনা শেষে দেবতাদের প্রত্যাদেশ পাওয়া যায়- ‘তোমার কামনা আমাদের কর্ণগোচর হয়েছে। অচিরেই তুমি লাভ করবে এক রূপবান শক্তিমান পুত্রসন্তান। কিন্তু একদা তুমি ধর্মযাজক পেলেপ্সের পুত্র অপহরণ করেছিলে। তার ফলে পেলেপ্স তোমায় অভিশাপ দিয়েছিলো। স্বর্গরাজ জিউস সেই অভিশাপ পরিপূরণ করবেন। তুমি তোমার সন্তানের হাতে নিহত হবে! তোমার স্ত্রী হবে তার সহধর্মিনী’।



হায় হায় করতে লাগলো লাইআস। কিন্তু দেবতার আদেশ না গেল খন্ডানো।



দেবতাদের আশির্বাদ নাকি অভিশাপে শেষপর্যন্ত রানী জোকাস্টার গর্ভে অপূর্ব রূপবান এক পুত্রসন্তান জন্মলাভ করল। কিন্তু লাইআসের মনে দেবতাদের সেই সতর্ক বার্তা।







রাজার আদেশে সদ্যজাত শিশুটিকে সূতিকাগার থেকে টেনে নিয়ে আসা হলো। জ্যোতিষি গননা করে জানালো, এই ছেলের ললাটে আছে পিতৃঘাতি ও মাতৃ-ভোগের চিহ্ন। লাইআস তার এক বিশ্বাসী ভৃত্যের হাতে নবজাতককে তুলে দিয়ে আদেশ দিলেন, এই শিশুটির হস্তপদ বিদ্ধ করে ও রজ্জু দ্বারা বেঁধে রাজ্যসীমা থেকে দূরে তপ্তবালুকাময় জনশূণ্য পার্বত্য মরুভূমিতে নিয়ে যেন হত্যা করা হয়। যাতে অঙ্কুরেই এই অনিষ্ট ধ্বংস হয়ে যায়।



মরুভূমিতে নিয়ে যাওয়ার সময় পথশ্রান্ত হয়ে রাজভৃত্যটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাছাড়া সদ্যজাত সুদর্শন রাজপুত্রের হাসি তাকে দুর্বল করে দেয়। সে নিজের হাতে শিশুটিকে হত্যা করতে গিয়েও ক্ষান্ত হয়। মরুভূতির এক মেষপালকের কাছে বাচ্চাটিকে হস্তান্তর করে তাকে হত্যা করার অনুরোধ জানিয়ে সেখান থেকে রাজভৃত্যটি আবার রাজ্যাভিমুখে যাত্রা করে। মেষপালকটি সানন্দে রাজভৃত্যের হয়ে কাজটি করতে রাজি হয়, নগদ স্বর্ণমূদ্রার লোভে।



এখানেও শিশুর অনাবিল হাসি বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। মেষপালকটি রাজভৃত্যের কাছ থেকে পাওয়া দায়িত্ব পালন করতে পারে না । শিশুর প্রকৃত পরিচয় সে জানতে না পারলেও বাচ্চাটির অনিন্দ্যরূপ আর তার স্বাস্থ্যদর্শনে মুগ্ধ হয়ে সে তাকে কোলে করে পার্শ্বস্থ রাজ্য করিন্থরাজ পলিবাসের দরবারে গিয়ে হাজির হয়। পলিবাস ছিলেন অপুত্রক। তিনি তৎক্ষনাত এই শিশুটিকে দত্তকরূপে গ্রহণ করে নেন। আর তার নাম রাখেন ‘ঈদিপাস’।









ঈদিপাস পলিবাসকে নিজের পিতা ও তৎপত্নীকে তার গর্ভধারণী মা জ্ঞান করে বড় হতে লাগল। তাকে জানতে দেওয়া হলো না যে, সে আসলে পালক। ধীরে ধীরে ঈদিপাস শৈশব-কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পা রাখলো। শৌর্যে-নৈপূণ্যে সে হয়ে উঠলো অতুলনীয়। একদিন ঈদিপাস দেবমন্দিরে পূজো করতে গিয়ে দৈববাণী শুনতে পেল।



-‘সাবধান যুবক! তোমার অদৃষ্টে পিতৃহত্যা ও মাতৃপরিণয় লেখা রয়েছে!’



এই দৈববাণী শুনে ঈদিপাস হতভম্ব হয়ে গেল। সে আর ঘরে অর্থাৎ পলিবাসের রাজপ্রাসাদে ফিরলো না। কারণ করিন্থরাজ পলিবাস ও তার স্ত্রীতকই সে আপন বাবা-মা বলে জানে। পাছে এই দৈববাণী সত্যে পরিণত হয়, এই ভয়ে ঈদিপাস করিন্থ ছেড়ে এক নির্জন পার্বত্য প্রদেশাভিমুখে রওনা হলো।



দৈববানী এড়াতে ঈদিপাস দ্রুত গতিতে পথ চলতে লাগলো। যতো দ্রুত পারে সে করিন্থ রাজ্য থেকে দূরে সরে যেতে চায়। য়েতে যেতে এক সংকীর্ণ গিরিসংকটের প্রবেশ মুখে এসে দেখে যে এক সম্ভ্রান্ত বৃদ্ধ একটি জমকালো রথে উপবেশন করে আছে। বৃদ্ধার রথ সমস্ত পথ জুড়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই গিরিসংকট দিয়েই থিবিসে যাওয়ার রাস্তা।





নিজের সম্পূর্ণ অজ্ঞাতসারে ঈদিপাস আপন জন্মভূমির দিকেই পা বাড়িয়েছিলো। বৃদ্ধকে সে পথ থেকে রথ নিয়ে সরে দাঁড়াতে বলে। আভিজাত্ সেই বৃদ্ধ এই স্পর্ধিত যুবককে রাস্তা ছেড়ে দিতে সম্মত না হওয়ায় সে তার সাথে সরোষে একটা ঝগড়া বাঁধিয়ে দিলো। একসময় ক্রোধান্ধ হয়ে ঈদিপাস সেই বৃদ্ধকে আঘাত করলে সেই ঘটনাস্থলে বৃদ্ধ মৃত্যুবরণ করে। এই বৃদ্ধটি আর কেউ নয়, ইদিপাসের প্রকৃত বাবা- থিবিসরাজ লাইআস। রাক্ষুসী স্ফিংসের কোপানল থেকে বাঁচতে লাইআসি থিবির রাজপ্রাসাদ ছেড়ে পথে বেরিয়ে পড়েছিল।





ঈদিপাস থিবিস নগরের দিকে অগ্রসর হয়ে একসময় নগরতোরণের সম্মুখভাগে এসে উপস্থিত হয়। এদিকে প্রকান্ড রাক্ষুসী স্ফিংসের কবলে পড়ে সমগ্র থিবিসে সে সময় চলছিল দূর্যোগ আর হাহাকার। স্ফিংক্স নামের এই রাক্ষুসীর দেহের উপরিভাগ মানবীর আর বাকী অংশ সিংহীর । এর অত্যাচারেই জর্জরিত হয়ে নৃপতি লাইআস রাজ্য ছেড়ে পলায়ন করছিলেন-আর সেই পালানোর সময়ই পুত্র ইদিপাসের হাতে তিনি নিহত হন। এই স্ফিংক্স দানবী এরই মধ্যে থিবিসের রাজধানী আর রাজপ্রাসাদ অধিকার করে বসে আছে। প্রতিদিন সে এক-একজনকে ডেকে এক অদ্ভুত প্রশ্ন করে। সেই প্রশ্নের উত্তর দিতে যারা অসমর্থ্য হয়- তাদেরকেই প্রাণ দিতে হয় স্ফিংক্সের হাতে।



এই প্রশ্নটি বর্তমান যুগে যদিও একবারেই পানির চেয়েও সহজ। কিন্তু সেকালের থিবিসে ছিল সবার অজানা। প্রশ্নটি হলো- কোন জীব প্রভাতে চারি পায়ে, মধ্যাহ্নে দুই পায়ে এবং সন্ধ্যায় তিন পায়ে চলে?







অকুতোভয় ঈদিপাস ভয়াবহ স্ফিংক্সের মুখোমুখিহয়ে অনায়াসে সেই ধাঁধার জবাব দিয়ে দেয়। স্ফিংক্স পরাস্ত হয়ে পূর্বপ্রতিশ্রুতি মতো রাজ্য ছেড়ে সমুদ্রজলে ঝাঁপিয়ে পড়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। থিবিসবাসীর আনন্দ তখন আর ধরে না। তারা তাদের উদ্ধারকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতাপরবশ হয়ে- তাকে সসম্মানে রাজপদে বরণ করে নেয় আর রাজ্যের নিয়মানুসারে বিধবা রাণী জোকাস্টার সাথে মহাসমারোহে তার বিয়ে দিয়ে দেয়।

নিজের অজান্তেই ভাগ্য প্রবঞ্চিত ঈদিপাস হলো একই সঙ্গে পিতৃ-ঘাতক আর মাতৃ-ভোক্তা।

এইভাবেই দৈববাণীর শেষাংশও সত্য হয়ে যায়।



কিছুকাল থিবিসের নতুন রাজা আর পুরাতন রাণীর সংসার সুখে শান্তিতে কাটতে থাকে। মাতাপুত্র পরষ্পর কেউ কাউকে চিনতে পারে না। চিনতে না পারটাই স্বাভাবিক- সেই কবে ছোটবেলায় জন্ম নেওয়ার পরপরই রাজা তার ভৃত্যকে দিয়ে হত্যা করতে পাঠিয়ে দেন আপণ পুত্রকে রাজ্য-সিংহাসন বাচাবার জন্য, সেই থেকে তো আর মা-পুত্রের মধ্যে কোন যোগাযোগ ছিলো না।



তাদের এই সম্পূর্ন দৈবঘটিত কলঙ্কিত দাম্পত্য জীবন যাপনের ফলে দুটি পুত্র ও দুটি কন্যা তাদের ঘরে জন্মলাভ করে। কিন্তু কিছুকাল পরে সেই রাজ্যে এক ভয়াবহ মহামারি দেখা দেয়। দলে দলে দেশের লোকজন একমাত্র ভরসার জায়গা দেব-মন্দিরে গিয়ে দৈববাণীর জন্য ধর্না দিয়ে দিন রাত পার করে দিতে থাকে।







দৈববাণীর আদেশ আসে এই রূপ যে, থিবিসরাজ লাইআসের হত্যাকারি আর মাতৃগমণকারী মহাপাতককারী যে ব্যাক্তিটি রাজ্যে আছে, তাকে অনুসন্ধান করে বের করে দিতে পারলে এই সংকট কেটে যাবে। আর যতক্ষন পর্যন্ত একটি লোকও জীবত থাকবে ততক্ষন মহামারী থামবে না। মহাজ্ঞানী ঋষিতুল্য টাইরেসিআস ব্যাকুল প্রজাকুলের অনুরোধে ইদিপাসকে খুঁজে তার জন্মোতিহাস খুঁড়ে বের করলো সেই জীবত ভৃত্যের জবানবন্দী, মেষপালকের জবানবন্দী আর ঈদিপাসের কথিত পিতা-মাতার জবানবন্দী থেকে।





ঈদিপাসের সত্যিকার পরিচয় জানার পর রাণী জোকাস্টা লজ্জায়-ক্ষোভে আত্মহত্যা করেব।

সমস্ত রহস্য উদঘাটন হয়ে যাওয়ার পর জন্মাভিশপ্ত, মহাপাতকি, ঈদিপাস রানী জোকাস্টার মাথার চুলের কাটা দিয়ে উপড়ে ফেলে নিজের দুচোখ। থিবিস রাজ্য আর সিংহাসন পরিত্যাগ করে অন্ধ ও পথের ভিখারী ঈদিপাস দূর বনবাসে চলে যায়।







মন্তব্য ৫ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০১

বেবিফেস বলেছেন: সত্যিই কি ঈদিপাস কে স্মরণ করার মত দুঃখ আপনার? দোয়া করি আপনার ভাগ্য বদল হোক।

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৭:০৬

অচীনপুরের চেনা মুখ বলেছেন: আমি ধূলিকণা সম..।

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:১৭

ফারজানা শিরিন বলেছেন: :|

৪| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:১৬

ক্ষয়রোগ বলেছেন: A++

৫| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:৪২

লতিফা লতা বলেছেন: aha

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.