নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নচূর আকাশচারী

থাকি আমি নিজের ভুবনে, এক হেঁটে বেড়ানো আমার নেশা। যোজন যোজন দূরের নখত্রলোক আমার আবাস।প্রকৃতির রং ও রুপে আমি সর্বদা মুগ্ধ। আমি জানতে চাই , জানাতে চাই।

সপ্নচূর আকাশচারী

থাকি আমি নিজের ভুবনে, এক হেঁটে বেড়ানো আমার নেশা। যোজন যোজন দূরের নখত্রলোক আমার আবাস।

সপ্নচূর আকাশচারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন হুমায়ুন এবং একগুচ্ছ কদম ফুল ও একটি স্বপ্ন

২০ শে জুলাই, ২০১৩ বিকাল ৫:৫১



হিমুর হলুদ পাঞ্জিবিটা অনেকদিন ধরে ধোওয়া হচ্ছেনা , বেশ কিছুদিন ধরে তাকে রাত-বিরাতে শহীদ মিনারের সামনে ঘুর ঘুর করতে দেখা যাচ্ছে।সবায় যখন তার দিকে সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকাচ্ছিলো তার জরাজীর্ণ মুখখানি থেকে শুধু ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশই লক্ষ করা যাচ্ছিল। কি জানি একটা অজানা ভয় তার বুকের মদ্ধে জায়গা করে নিয়েছে। হঠাৎ করেই নিজের নিশ্বাস তার কছে অসহ্য মনে হতে লাগলো তখনই মনে পড়লো দুই দিন যাবত সে ব্রাশ করেনি। ইদানিং কোন কিছুই নিয়ম মত হচ্ছেনা।সে দীর্ঘ ২ ঘণ্টা যাবত শহীদ মিনারের একপার থেকে অপরপার ব্যস্ত ভাবে পায়চারী করতেছে। দূর মসজিদ থেকে আজান শুনা যাচ্ছে। আজান শুনে হিমু খুব উত্তেজিত হয়ে উঠলো।

একজন বিশেষ মানুষের জন্য সে অপেক্ষা করতেছে সেই ২ ঘণ্টা যাবত কিন্তু আজান শুনার পড়ে নিজের প্রতি একটা তিব্র ক্ষোভ সে অনুভব করলো। তার শহীদ মিনারে আসার কথা দুপুর ৩ টায় কিন্তু সে সকাল এগারোটায় শহীদ মিনারে চলে এসেছে। আসলে এই সময়টাতে কারো মাথা ঠিক থাকেন সব কিছুই উল্টা পাল্টা হওয়ার কথা কিন্তু না হিমুর মাথা ঠিকই আছে। সে ইচ্ছা করেই ৪ ঘণ্টা আগে শহীদ মিনারে চলে এসেছে, তার বিশ্বাস সেই বিশেষ মানুষটিও তার মতই ব্যাকুল হয়ে আছে এবং সেও আগেই চলে আসবে। কিন্তু না সেই বিশেষ মানুষটি আসেনি। হিমুর হাতে এখনো ২ ঘণ্টা সময়।তাই কয়েক সেকেন্ড চিন্তা করে সে সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেললো , সে হেঁটে হেঁটেই যাবে। তাই সে হাঁটা শুরু করলো। কিছুক্ষণ হাঁটার পর সাদা মার্বেল পাথরের প্রাচীর দেওয়া একটা দোতলা বাড়ির সামনে এসে হাজির হল। পাকিস্তানী গোঁফওয়ালা দারোয়ান তাকে কোনোদিন দেখিনি, তার কথা শুনেছে বলেও মনে হয়না, চিনার কথাও না। কিন্ত কি এক অজানা কারনে দারোয়ান তাকে দেখেই মুচকি হেঁসে বিশাল বড় গেঁটের দরজা খুলে দিলো। দারোয়ান বললো , দোতলায় ছোট সাহেব বসে আছেন।আলাদা কেও হলে অবাক হতো কিন্তু হিমু বিন্দু মাত্র অবাক হয়নি, সে জানে এই সময়টাতে সবার মাথা জুড়ে শুধু একটি জিনিসই কাজ করে এবং অনেকে যা ভবিষ্যৎবানী করে তা অক্ষরে অক্ষরে পূরণ হয়। হিমু গেট পার হয়ে দেখে যে দোতলার বেলকনিতে ছোট সাহেব বসে আছে। হিমুকে দেখেই সে একলাফে উঠে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো, হিমুর বুঝতে বাকি রইলানা যে হিমুর জন্যই সে অপেক্ষা করতেছিল। হিমু বাড়ির ভিতরে গেলো এবং দরজার কাছাকাছি যাওয়ার সাথে সাথে দরজাটা খুলে গেলো।হিমু বুঝতে পারলো, দরজাটা স্বয়ংক্রিয় ভাবে কাজ করে। এই রকম দরজার কথা মাজেদা খালার কাছে সে শুনেছিল।

ভিতরে ঢুকতেই হিমু বিশাল পাহাড়ি আকৃতির সিঁড়ি বেয়ে ছোট সাহেবকে তাড়াহুড়ো করে নামতে দেখলো। কিন্তু হঠাৎ করেই একটা দুর্ঘটনা হয়ে গেলো।শেষ সিঁড়ি দিয়ে নামার পর ছোট সাহেবের পা সিঁড়ির পাশে রাখা একটি ফুলের টবে বাড়ি খেলো, বাম পায়ের শেষ আঙুলের নখটা কোথায় যে ছিটকে পড়লো সেটা আর কারো চোখে পড়লোনা। ঝরঝর করে রক্ত পরতে লাগলো। কিন্তু ছোট সাহেবের সেদিকে মাথা ব্যথা নেই। সে হিমুকে দেখেই চোখ দিয়ে নিঃশব্দে পানি ফেলতে লাগলো।

হিমু তার কাছে এগিয়ে বললো, শুভ্র তোমার পা দিয়ে রক্ত পড়ছে।

শুভ্র জবাব দিলো, এটা কোন ব্যপার না। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে চশমাটা ফেলে এসেছিতো তাই ফুলের টবটা খেয়াল করিনি। আপনি আসতে এতো দেরি করলেন কেন? অনেকটা অভিমানের সাথেই শুভ্র হিমুকে এই প্রশ্নটা করলো।

হিমুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই শুভ্র আবার বললো উনি কোথায়?

হিমু এইবার জবাব দিলো, উনার ৩ টার দিকে শহীদমিনারে আসার কথা।

শুভ্র বললো তাইলে দেরি করা যাবেনা, চলেন রওনা হই।

হিমু আর শুভ্র দুজনেই খালি পায়ে বাড়ি থেকে শহীদমিনারের উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো। দারোয়ান আলাদা কোন দিন হলে এগিয়ে এসে শুভ্রকে অবশ্যই বলতো, শুভ্র বাবা গাড়ি বের করবো? কিন্তু না আজকে সেও গাড়ির পাশে নিসচুপ ভাবে দাড়িয়ে রইল।প্রকৃতির এটা একটা অনন্য নিয়ম, যখন কিছু হয় তখন সবার মনের মদ্ধে অজান্তেই সেই খবরের প্রভাব পরতে থাকে। হিমু আর শুভ্র খালি পায়ে হেঁটে যাচ্ছে শহীদমিনারের দিকে.........



মিসির আলি সকাল সকালই বের হওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। তিনি জানতেন , ৩ টার দিকে হিমুকে আসতে বলা হলেও সে সকাল সকাল শহীদ মিনারে চলে আসবে। কিন্তু ব্যাঘাত ঘটলো ঘুম ভাঙ্গার পর। তিনি ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার ঘরের বেশির ভাগ জিনিসপত্রই অগোছালো। তার বুঝতে বাকি রইলানা যে, গত ২ দিন আগে নতুন যে কাজের ছেলেটাকে তিনি রাস্তা থেকে উঠায় নিয়ে এসেছিলেন সেই এই অকাজ করে চলে গেছে। আলাদা কোন দিন হলে তিন দেখতেন কি কি চুরি হয়েছে।কিন্তু আজ তিনি কিছু না দেখেই নিজ হাতে খিচুড়ি চড়ায় দিলেন এবং কয়েকটা পিয়াজ কাটতে লাগলেন। পিয়াজ ভর্তা আর খিচুড়ি খাবারটা মন্দ না, মনে মনেই তিনি বললেন। রান্না করতে করতে হঠাৎ তিনি থেমে গেলেন। তিনি কিছু একটা পেয়েছেন । হে তিনি পেয়েছেন। গত ২০ দিন ধরে তার বাসায় একজন মধ্যবয়সি ভদ্রলোক আসছেন।ভদ্রলোক নাকি মাঝে মদ্ধে অদৃশ্য হয়ে যান। কোথায় যান তিনি মনে করতে পারেননা।কিন্তু ফিরে এসে দেখেন যে, তিনি আগের চেয়ে যুবক হয়ে যাচ্ছে। তার বয়স দিনে দিনে বাড়ার চেয়ে কমে যাচ্ছে।তাই সে মিসিরআলির কাছে এর ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য এসেছিল। মিসির আলি এই রহস্যের কোন কূল কিনারায় খুঁজে পাচ্ছিলেননা। কিন্তু হঠাৎ করে পিয়াজ কাটতে গিয়ে চোখ দিয়ে পানি বের হওয়ার সময় তিনি সেই রহস্যের সমাধান বের করে ফেললেন। কিন্তু অবাক ব্যাপার আলাদা দিন গুলোতে রহস্য সমাধানের পর যে আত্মতৃপ্তি তার চোখে মুখে ফুটে উঠতো তার বিন্দু মাত্র লেশ আজ মিসির আলির মাঝে নেই। তিনি খিচুড়ি রান্না বাদ দিয়ে সাদা রংয়ের চাঁদরটা গায়ে দিয়ে বাড়ি থেকে খালি পায়ে বের হয়ে গেলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, যে করেই হোক ক্যান্সার হাঁসপাতাল বানানোর জন্য তিনি পথে নামবেন। ঢাকা ভার্সিটির কয়েকজন কলিগ তার সাথে থাকবেন বলে কথা দিয়েছিল, কাজের সময় তাদের পেলেই হয়। কিন্তু একটা ভায় তার মাঝে কাজ করলো, প্রোফেসর সাহেব আমেরিকায় ক্যান্সারের চিকিৎসা নিতে যাওয়ার আগেই যদি তাদের বলে যেতেন ক্যান্সার হাসপাতালের কথা তাইলে এতদিনে অনেক কিছুই হয়ে যেত। তিনি ভাবছেন আর খালি পায়ে হেঁটে চলেছেন..........................................................................................

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.