![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
থাকি আমি নিজের ভুবনে, এক হেঁটে বেড়ানো আমার নেশা। যোজন যোজন দূরের নখত্রলোক আমার আবাস।
পিয়াসীর মনটা আজকে মোটেও ভালো নেই, কিছুক্ষণ পরপর চা খাচ্ছে সে। কাজের বুয়া চা দিতে দিতে বিরক্ত হয়ে গেছে। শেষ বার চা দিয়ে যাওয়ার সময় বুয়া পিয়াসীকে শুনিয়ে বলল , মাইয়া মানুষের এতো চা খাওায়ন ভালো লক্ষন না।
পিয়াসীর বয়স ১৩ বছর।এই বয়সের মেয়েদের মাথা একটু গরমই থাকে। এই বয়সে ভালো লক্ষন না খারাপ লক্ষন সে বিষয়ে বেশি জানার কথা না তার। ইচ্ছা ছিল বুয়াকে ডেকে একটু ঝারি দিয়ে কিসের লক্ষন এইটা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করা। কিন্তু ডাকতে দিয়ে পরক্ষনেই ছোট মামার কথা মনে পড়লো তার। ঢাকা শহরে কাজের বুয়া পাওয়া কতটা যে কষ্টের তা পিয়াসীদের চেয়ে বেশি জানার কথাও নয়। ৭ দিন ধরে শুধু খিচুড়ি আর ডিম ভাঁজি খেয়ে ছিল তারা। এর আগের বুয়াটা পিয়াসীর জন্যই বাসা থেকে চলে গেছে। বেশি কথা বলতো , তাই পিয়াসী এমন ঝারি দিসলো তা নাকি বুয়ার মান সম্মানে লাগছিলো। আসলেই ১৩ বছরের একটা মেয়ের আবেগকে বুঝা বুয়ার পক্ষে সম্ভব না।
বুয়া বলে, এত্তো টুকুন একটা মাইয়ার মুখে এতো বড় কথা? আমি থাকুমনা।এই বলে চলে গিয়েছিল বুয়া।
কিছু দিন আগে ছোট মামা কোথা থেকে যে একটা বুয়া যোগার করে এনেছে তা শুধু মাত্র মামা জানে। পিয়াসীকে মামা বলে দিয়েছে, এইবার যদি কিছু হয় তাইলে তিনি জিবনো বুয়া যোগার করবেননা।
পিয়াসী রাস্তার ধারে তার মায়ের রুমের বেলকনিতে দারিয়ে আছে এবং রাস্তার ধারে ছোট্ট একটা চায়ের দোকানের দিকে তাকিয়ে আছে। তাকে বেশ কিছুদিন ধরে কয়েকটা বখাটে ছেলে বিরক্ত করতেছে। তাই তার মামা গেছে সে বখাটেদের ঝারি দিতে। মামা চ্যালেঞ্জ করেছে যে বখাটেদের গোটা মহল্লা কান ধরে ঘুরাবে। মামার কি জানি এক বন্ধু RAB এ চাকরি করেন তিনিও নাকি থাকতে চেয়েছেন।
হঠাৎ করে পিয়াসী চমকে উঠলো, দূরে একটা RAB এর গাড়ি দেখা যাচ্ছে, আর তাদের সামনে ৩ টা ছেলে কান ধরে খালি পায়ে রাস্তায় হাঁটছে। তা দেখে পিয়াসীর খুশি হওয়ার কথা কিন্তু সে চমকে উঠলো কারন যে ৩ টা ছেলে কান ধরে আসছে তারা সেই বখাটেরা না। এরা আলাদা কেউ। তার চেয়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো, মদ্ধের ছেলেটাকে সে চিনে। ২ দিন আগে তার বাবা মারা গেছে।এতো বড় ভুল মামা করলো কীভাবে?
ছলেটার নাম সৌরভ, খুভ শান্ত স্বভাবের। সহজে কারো সাথে কথা বলতে চায়না। তাকে যদি একশ টা প্রশ্ন করা হয় উত্তর দেয় সর্বোচ্চ দুইটা থেকে তিনটার। রোজ সকালের মত আজো সে ম্যাথ প্রাইভেট পড়তে যাচ্ছিল। কিন্তু সমস্যাই পড়লো রাস্তার ধারের চায়ের দোকানের সামনে এসে। তিনজন গুণ্ডা টাইপের ছেলে হঠাৎ করে তকে পিছন থেকে ডাক দিলো। সৌরভ বুঝতে পারলো কোন একটা সমস্যাই মধ্যে পড়তে যাচ্ছে সে।
দুইদিন আগে তার বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে।তার বাবাকে বাঁচানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছিল তারা।গ্রামের সব জমি-জমা বেঁচে ভারতের মাদ্রাজে নিয়েগিয়েছিল তার বাবাকে।মাদ্রাজের ডাক্তারেরা অনেক চেষ্টা করেছিল কিন্তু তারা পারেনি। থাইল্যান্ডে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিল তাদের।কিন্তু এতদিনে সব টাকা পয়সা শেষ হয়েগিয়েছিল তাদের। উপাই না দেখে দেশেই ফেরত আনলো।একমাস পর রক্ত বমি করা শুরু করলো তার বাবা। হঠাৎ একদিন ম্যাথ প্রাইভেট থেকে ফিরে দেখে বাসার মধ্যে কি একটা জটলা লেগেছে। দৌরে ভিতরে গেলো সে।না এতক্ষণে সব শেষ হয়ে গিয়েছে। তার মা এবং ছোট বোন বাবার মাথার সামনে নির্বাক হয়ে বসে আছে। তার মায়ের চোখ থেকে গড়গড় করে পানি পরছে। তার বোনের বয়স ২ বছর,নাম জোছনা।সে যেদিন হয় সেদিন আকাশে অনেক জোছনা হয়েছিল। তাই বাবা শখ করে তার নাম রেখেছিল জোছনা। সে কিছুই বুঝেনা , তাই তার মায়ের কোলে চুপচাপ বসে আছে, মাঝে মধ্যে মায়ের আঁচল নিয়ে খেলা করতেছে।বাসায় এতো ভীর সে কোনোদিনও দেখেনি, তাই এতগুলো মানুষ দেখে সে মজাই পাচ্ছিল।
সৌরভ খুব শক্ত একটা ছেলে। ক্লাসে পড়া না পারলে স্যারের যখন মারতো , অন্য ছেলেরা তখন চিল্লাই চিল্লাই গোটা স্কুল মাথায় তুলতো। সৌরভ নিসচুপ সব মার সহ্য করতো। স্যারের তা বিয়াদবি হিসেবে দেখে পাঁচ-দশেক মার বেশিই দিত তাকে। কিন্তু একদিনও তার চোখ থেকে এক ফোটাও পানি বেড় করতে পারেনি তারা।তাই কারনে অকারণে তাকে স্যারেরা মারতো শুধু তাকে কাঁদানোর জন্য।
বাবার মৃত্যুতে একফোঁটাও চোখের জল ফেলেনি সে, এমনকি এতই স্বাভাবিক হিসেবে নিয়েছিল যে তারপরদিন সে স্কুলে গিয়েছিল। তাকে দেখে তার বন্ধুরা কেদেছিল, কেঁদেছিল তার স্যারেরা। তাকে বুকে জড়ায় ধরে কেঁদেছিল তাদের হেড স্যার। তবুও একফোঁটা জল তার চোখ থেকে পরেনি।
আজকেও সে ম্যাথ প্রাইভেট যাচ্ছিল সকাল বেলা। গুন্ডা টাইপের ছেলে তিনটা তাকে সহ আরো দুইজনকে রাস্তা দিয়ে যাওয়া মেয়েদের টিজিং করতে বললো। তারা নিরুপাই ছিল। যে মুহূর্তে তারা এই কাজ করছিল তখনই পিছনে RAB এর গাড়ি থেকে একজন চিল্লাই উঠলো, এই কান ধর। গুন্ডা টাইপের ছেলে তিনটা সঙ্গে সঙ্গে কেটে পড়লো......
................................................................চলবে
©somewhere in net ltd.