![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
থাকি আমি নিজের ভুবনে, এক হেঁটে বেড়ানো আমার নেশা। যোজন যোজন দূরের নখত্রলোক আমার আবাস।
তিথির মনটা আজ ভালো নেই।গতরাতে সে ভীষণ খারাপ এক দুঃস্বপ্ন দেখেছে। স্বপ্নে তাকে কালো কিটকিটে রঙের এক বিড়াল তাড়া করেছিল।চাইলেই সে বিড়ালটাকে এক ঝাটকায় তাড়িয়ে দিতে পারতো কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও সে বিড়ালটাকে তাড়াতে পারেনি।
নাসির সাহেব বারান্দায় বসে আছেন এক কাঁপ ঠাণ্ডা চা নিয়ে।আজ তার বিশেষ এক দিন, প্রতি সপ্তাহে এই বিশেষ দিনটি আসে। তিনি একজন সিরিয়াল কিলার।প্রতি সপ্তাহের বুধবারে তিনি একজনকে খুন করেন।তিনি বসে বসে প্ল্যান করছেন কিভাবে আজ খুন করবেন,কিন্তু কিছুতেই উনার আজ ভালো লাগছেনা।তিনি এর আগে যত খুন করেছেন সব মহাউৎসাহে করেছেন, হাঁসতে হাঁসতে করেছেন। মানুষগুলোকে খুন করতে বিন্দু মাত্র তার দ্রিধা হয়নি,বরঞ্চ খুন করার সময় যত প্রকার কষ্ট দেওয়া যায় তার সর্বোচ্চ ভাবে কষ্ট দিয়ে খুন করেছেন।আজকের ব্যাপারটা আলাদা কারণ তিনি এর আগে যতজনকে খুন করেছেন সব ছিল কুখ্যাত ব্যক্তি, খুনি, ডাকাত সব খারাপ মানুষ।কিন্তু আজকে যাকে খুন করবেন সে অনেক ভালো একটা মানুষ, তার চেয়ে বড় কথা সে একজন মেয়ে।তিনি এর আগে কোনোদিন কোন মেয়েকে খুন করেননী।কিন্তু আজকে বাধ্য হয়ে তিনি সেই মেয়েকে খুন করবেন কারণ সেই মেয়েটি তার সম্মন্ধে অনেক কিছু জেনে গেছে। মেয়েটার নাম তিথি, পেশায় একজন সাংবাদিক।তাই তিনি ভাবছেন কিভাবে সবচেয়ে কম কষ্টে তিথিকে খুন করা যায়।
হ্যালো, কি করতেছ?
হুম হ্যালো, করতেছি কিছু একটা।মেয়ে মানুষের অনেক কিছুই থাকে যা তোমাকে বলা ঠিক হবেনা।
তুমি এমন করতেছো কেন?
তিথি কিছুনা বলে ফোনটা রেখে দিল।তার আজ ভীষণ মন খারাপ।গত রাতের স্বপ্ন সে কিছুতেই মন থেকে তাড়াতে পারতেছেনা।নাসির সাহেব সম্পর্কে চিন্তা করতেছে সে।লোকটাকে তার প্রথম যেদিন দেখা হয়েছিল ভালোই লেগেছিল।ইন্টারভিউ নিতে গিয়েছিল সেইদিন নাসির সাহেবের ঐখানে,নাসির সাহেব তখন অফিসে ছিলেননা।তার কেবিনে তিথি অপেক্ষা করতেছিল এবং সময় কাটানোর জন্য ডেক্সে পড়ে থাকা একটা পুরনো ম্যাগাজিন তুলে নেয়।ম্যাগাজিন থেকেই তার সব প্রশ্নের উত্তর সে পেয়ে যায়।তারপর থেকে সে কয়েকদিন নাসির সাহেবকে ফলো করে এবং তার সম্পর্কে অনেক কিছুই জেনে যায়।আজ সে তার রিপোর্ট সে যেই পত্রিকা অফিসে চাকরি করে সেটাতে ছাপানোর জন্য জমা দেবে।
নাসির সাহেবের প্ল্যান করা শেষ।তিনি এখন প্ল্যান মত তিথিকে খুন করতে যাবেন।সকাল ৮.৩০ মিনিটে তিথি রোজ অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়।তিনি এমন ভাবে তাকে খুন করবেন যাতে মানুষ দেখলে ভাবে নিতান্তই সড়ক দুর্ঘটনা।
তিথি হালকা লাল রঙের একটি শাড়ি পরেছে আজ।কপালে কালো রঙের একটি টিপ এবং চোখের পাতায় ঘন করে কাজল দিয়ে খুবই সুন্দর লাগছে তাকে।শুধু মনটাই ভালো নেই তার আজ।সেই কালো রঙের বিড়ালটা মনে মনে তাকে তাড়া করতেছে।নাসির সাহেবের সম্পর্কে তথ্যগুলো হলদে রঙের একটা ফাইলে করে সে সিএনজি খোঁজার জন্য বাড়ির বাইরে বের হলো।
নাসির সাহেব ঠিক এই সময়টার অপেক্ষা করছিলেন, তিথি বের হওয়া মাত্র নাসির সাহেবের দুইজন লোক প্যান্টের পকেটে বন্দুর তাক করে রেখে তিথির কাছে গিয়ে বললো যে আপা চুপচাপ গাড়িতে উঠেন।তিথি কোনদিনো চিন্তা করতে পারেনি যে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন সে হবে,ভয়ে সঙ্কোচে সে চুপচাপ তাদের সাথে গাড়িতে উঠলো।
তিথি যখন চোখ খুললো তখন দেখলো তার সামনে নাসির সাহেব বসে আছেন।নিজের মুখ থেকে তার ক্লোরোফর্মের ভ্যাপসা গন্ধ ভেসে আসতেছে।তার মনে পড়ে গেলো গাড়িতে উঠার সময় তাকে অজ্ঞান করা হয়েছিল।
নাসির সাহেব কোন ভনিতা না করেই বললেন, আজ তোমাকে একটা গল্প শোনাবো। গল্প শুনানোর পর তোমাকে ছেড়ে দিবো।
আপনি আমাকে খুন করবেননা? অনেকটা অবিশ্বাস্য ভঙ্গিমায় প্রশ্ন করে বসলো তিথি।
না আমি তোমাকে খুন করতে পারবোনা।
আপনি আমাকে খুন না করলেতো আমি পুলিশকে সব বলে দিবো।
অনেকটা তাচ্ছিল্ল আর প্রশান্ত ভাবেই হেঁসে উঠলো নাসির সাহেব।না তুমি বলবানা আমার কথা কাউকে আমি তা জানি।
এইরকম কথা এবং হাঁসি শুনে তিথির ভিতরটা হঠাৎ করেই কেন জানি ভঁয়ে কেঁপে উঠলো।
চলবে.............
©somewhere in net ltd.