নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হৃদয় খাতার ছেড়া পাতা...

পুরো পৃথিবীটাই মায়ার বেড়াজালে আবদ্ধ। এই মায়ার বেড়াজালের ভীতরেই রয়েছে সকল সুখ-দুঃখ ।এই বেড়াজাল এর বাইরে যেতে ইচ্ছে করে।কারন এর বাইরে সুখ আছে কিনা জানি না তবুও যেতে ইচ্ছে করে এইভেবে যে অন্তত সেখানে কোন দুঃখ তো নেই ।

নিশ্চুপ আওয়াজ

নিশ্চুপ আওয়াজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট গল্প-"যদিও প্রচারেই প্রসার তবুও..."

২৯ শে অক্টোবর, ২০১২ দুপুর ১:০৭

বৃষ্টি ঝরছে। বৃষ্টির সাথেই অঝর ধারায় ঝরছে মাহিন এর চোখ এর জল। মাহিন এর আশেপাশে আজকে অনেকেই আছে ,যাদেরকে মাহিন প্রায়ই দেখতে চায় কিন্তু পায় না। যেমন ছোটমামা, খালাতো ভাই পিয়াশ সহ আরও অনেকে। তাদের কেউই এখন মাহিন এর কান্না দেখছে না । আর দেখবেই বা কিভাবে সবাই তো এখন ব্যস্ত,চিন্তিত। মাহিন এর চোখ এর জল আর বৃষ্টির পানি এক হয়ে বয়ে চলছিল হাসপাতাল এর পাশের রাস্তা ধরে দূরের মাঠের দিকে। সেখানে খেলা করছিল দুইটা ছেলে। তাদের খেলা দেখেই মাহিন এর মনে পড়ে যাচ্ছে ওর ভাইয়ার সাথে খেলার কথা, মজার মজার সব ঘটনা, কথাবার্তা সহ নানান স্মৃতি। স্মৃতির ভেলায় ভেসে বর্তমানে আসতেই মাহিন এর মনে পড়ে গেল গতবারে ভাইয়াকে নিয়ে একটি মাটির ব্যাংক কিনেছিল মাহিন। সেইটি এবার কয়েন এ পূর্ণ করেছে মাহিন। কিন্তু দেখতে পেলনা তুহিন (মাহিন এর বড় ভাই)।



তুহিন মরনব্যাধি ক্যান্সার এ আক্রান্ত। ছয় মাস আগেও যে ছেলেকে দেখে কিছুই বুঝা যায়নি যে সে অসুস্থ ,মাত্র ছয়মাস এর মধ্যেই সেই ছেলে মরতে যাচ্ছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না মাহিন । সেই সময় থেকেই পেটে ব্যথা অনুভব করত তুহিন কিন্তু ব্যপারটাকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি তুহিন সহ ফ্যামিলির কেউই। তাই আজকে এই অবস্থা । টিউমারটা অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন প্রচণ্ড ব্যথায় কথাই বলতে পারে না তুহিন।



হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে দুইদিন হল। আজবিকেলে তুহিনের অপারেশন করা হবে। অপারেশন এ তুহিন বাঁচবে কিনা তা ডাক্তাররা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেননি। অপারেশন ও কেমোথেরাপি করাতে ১০- ১২ লাখ টাকা লাগবে বলেছে ডাক্তার। তুহিন এর বাবা সরকারি চাকরি করে ।তাই এত টাকা তার কাছে নাই ।গ্রামের জমিজমা বিক্রি করে ৫ লাখ এর মত জোগাড় করতে পেরেছে তুহিন এর বাবা । টাকার অভাবে ছেলে মারা যাবে তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না তুহিন এর বাবা মা সহ ফ্যামিলির কেউই। অনেকদিন থেকে সে মাহিন এর সাথেও ঠিকমত কথা বলেননি। শুধু কোলে নিয়ে অঝর ধারায় কেঁদেছেন। বাবার সাথে সাথে কাঁদত মাহিন ও। মাহিনকে সান্তনা দিতে দিতে আরও জোরে কেঁদে উঠতেন ওদের এর বাবা । আর তা দেখে নীরবে চোখের জল ফেলতেন ওদের মা। আগে থেকেই আল্লাহ ওয়ালা তাদের মা এখন আর জায়নামজ থেকে খুব বেশি উঠেন না। আল্লাহ্‌ এর কাছে ছেলের রোগমুক্তির জন্য প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছু করার ছিল না গৃহিণী মার।



ভার্সিটির মেধাবী ছাত্র হিসাবে তাকে সাহায্য করার জন্য ভার্সিটির কিছু সংগঠন সহ ভার্সিটির বাইরের কিছু সংগঠন এগিয়ে এসেছে। এগিয়ে এসেছে তুহিন এর স্কুল, কলেজ ও ভার্সিটির বন্ধুরা। তাদের তিনজন হাসপাতালে আজকে সকাল থেকেই আছে। আর প্রতি মুহূর্তেই কেউ না কেউ একজন আসছে , খবর নিচ্ছে, চলে যাচ্ছে। অনেকদিন পর দেখা হলেও আজকে আর কেউ ‘আরে দোস্ত কি খবর ,কতদিন পরে দেখা’ বলে এগিয়ে যাচ্ছে না।শুধু মাহিন এর কথাই জিজ্ঞেস করছে সবাই। দূর থেকে এসবই লক্ষ্য করছিল তুহিন এর ছোট মামা।



তুহিন এর ছোট মামা সবার সাথেই অনেক বন্ধুসুলভ। তুহিন এর বন্ধুরাও ছোটমামার কাছে অনেক প্রিয়। তাই আজ বন্ধুরা সবাই ছোট মামার কাছে গিয়ে মামার সাথে কথা বলে তার হাতে দের লাখ টাকার মত তুলে দিয়ে বলল , “টাকাগুলোর কথা তুহিনকে জানাবেন না । ও আবার এগুলো নিয়ে টেনশন করবে ,আমারা ওর জন্য কষ্ট করছি বলে ।” টাকাগুলো হাতে নিতেই মামার গলাটা ভার হয়েগেল। এখন কিছু বলতে গেলেই চোখ দিয়ে পানি বেরিয়ে আসবে। তাই কিছু না বলে ওদের কয়েকজনের মাথায় হাত বুলিয়ে একটা মুচকি হেসে তুহিন এর কেবিন এর দিকে যেতে লাগলেন। যাবার পথে বারবার জোরে জোরে কাশছিলেন যাতে করে গলাটা হালকা হয়। কিন্তু কিছুদুর যেতেই আর কান্না বন্ধ রাখতে পারলেন না যখন মাহিন এর কথা মনে পড়ল। ওর ভাইয়ার চিকিৎসার জন্য টাকা লাগবে শুনে ও মাটির ব্যাংকটা ভেঙে মামার কাছে ৭৩৬ টাকার কয়েন নিয়ে এসেছিল। এই টাকার কথা ও কাউকে জানাতে না করেছিল।



তুহিন এর কেবিন এর সামনে এসে অনেক মানুষ দেখে চোখ মুছতে মুছতে কেবিন এর ভিতরে গিয়ে মামা দেখল যে তুহিনকে বসানোর চেষ্টা করছে ওর বাবা । কারণ যেসব সংগঠন তুহিন এর সাহায্যের জন্য টাকা দেয়েছে তারা তুহিন এর সাথে ছবি তুলবে।এই ছবি ছাপা হবে সংবাদপত্র সহ নানা ম্যাগাজিন ও লিফলেট এ। তাদের ব্যবহার এমন যেন অপারেশন এর পর তুহিন বাঁচে না মরে কোন ঠিকনাই তাই আগেই ছবি তুলতে হবে। ওদের কাছ থেকে এতগুলো টাকা নিয়েছেন তাই তুহিন এর বাবা ছবি তুলতে নাও করতে পারলেন না। তুহিন বসতে কষ্ট হচ্ছিলো দেখে আড়ালে দাড়িয়ে তুহিন এর মা কাঁদছিলেন। আর মাহিন একবার এর হাত ধরছে আরেকবার অন্য আরেকজনের হাত ধরছে , ভাইয়ার কাছে যাচ্ছে আবার ভাইয়ার কুকানোর শব্দ শুনে দৌড়ে দূরে সরে যাচ্ছে আর মনে মনে ভাবছে কিছুক্ষন পরে লোকটা মারা যাবে ছবিটা না তুললে কি হয়। একই সময়ে মামা চিন্তা করছে কাউকে সাহায্য করা, দান করার উদ্দেশ্য শুধুই তাকে সাহায্য করা হওয়া উচিত, অন্যকিছু নয় । মাহিন ও তুহিন এর বন্ধুদের সাহায্যের টাকায় ছিল শুধুই তাদের তুহিন এর প্রতি ভালোবাসা, সাহায্য করার ইচ্ছা। অথচ এই সংগঠনগুলো টাকা দিয়ে সাহায্য করছে ঠিকই কিন্তু তারা এটাকে প্রচারের মাধ্যম হিসাবে বেছে নিয়েছে। এমনটা মোটেও ঠিক নয়।



এমন সময় পাশের মসজিদে যোহর এর আজান শুরু হল। তুহিন এর বাবা চিন্তা করছিলেন এদের বিদায় দিয়ে তিনি নামাজটা পড়তে যাবেন। ছবি তোলার সময় অনেক মানুষের কথার ও আজান এর শব্দে প্রচণ্ড ব্যথায় তুহিন এর কুকানোর শব্দ কেউ শুনতে পায়নি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.